হারিয়েছি নামপরিচয় পর্ব -০৯

#হারিয়েছি_নামপরিচয়
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা মনি

রোদেলা বউ সেজে এই বাড়িতে এসেছে। সাথে একটি ছেলেও দাড়িয়ে আছে। মেঘলা বলে ওঠে,
‘রোদ,,,’

রোজিনা মেঘলার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘এই মেয়েটা তোমার যমজ বোন না? এখানে এইরকম বউ সেজে এসেছে কেন?’

মেঘলা কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছিল। সে শুধু বিস্ময়ের সাথে রোদেলার দিকেই তাকিয়ে ছিল। রোদেলার পাশের ছেলেটি বলে,
‘আমরা বিয়ে করেছি বড় আম্মু। ও আমার বিবাহিত স্ত্রী।’

সঙ্গে সঙ্গে মেহের বলে,
‘এটা তুই কি কাজ করলি মুবিন? আমাকে না জানিয়ে এভাবে বিয়ে করে নিলি। হায় হায়, এই দিন দেখার জন্য আল্লাহ আমায় বাচিয়ে রেখেছিল। কত কষ্টে তোদের দুই ভাইবোনকে আমি বড় করেছি। আর তুই নিজের জিবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আমায় না বলে নিয়ে নিলি। আল্লাহ আমায় তুলে নেও আল্লাহ, আমি আর বাচতে চাইনা।’

মুন্নি এসে মেহেরকে সামলায়।
‘আম্মু তুমি এমন করছ কেন? আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলছি। ভাইয়া তুই আমায় বল তো সত্যিটা। এভাবে বিয়ে করে নিলি কেন? অন্তত আমাকে তো বলতে পারতি।’

‘জানানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না তাই জানাই নি। তাছাড়া আমরা একে অপরকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসি। মাঝখানে আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল কিন্তু এখন সব ঠিক আছে। তাই আমরা আর দেরি না করে বিয়ে করে নিলাম।’

মেঘলা রোদেলার সামনে আসে। রোদেলা মেঘলাকে দেখে কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু সবার সামনে বলতেও পারছিল না। মেঘলার মনে জমে থাকা সব প্রশ্নের উত্তর আজ তার জানতে ইচ্ছা করছে। রোদেলা কিছু একটা মনে করে বলে,
‘রোদ তোকে বলেছিলাম না আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি, মুবিনই হলো সেই ছেলে।’

রোদেলার মুখে এই নাম শুনে মেঘলা অবাক হয়ে রোদেলার দিকে তাকায়। এতক্ষণ মেঘলা খেয়াল করে নি। এখন দেখছে যে, রোদেলা একদম তার মতোনই সেজে আছে। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মেকআপ বিহিন চেহারা। রোদেলাকে দেখে একদম মেঘলাই মনে হচ্ছে। রোদেলা মেঘলার কানের কাছে এসে বলে,
‘আজ থেকে শুধু তুই না মেঘ, আমিও হারিয়েছি নামপরিচয়।’

১৭.
মেঘলা নিজের রুমে এসে বসে আছে। একটু আগে রোদেলার বলা কথাটা এখনো তার কানে বাজছে। মুন্নির ভাই মুবিন রোদেলাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেছে। মেহের যদিওবা বলেছে এই বিয়ে মানবে না সেই নিয়ে মুবিনের কোন ভাবান্তর নেই।

মেঘলার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু হিসাব সে মিলাতে পারছে আবার কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মেঘলা এতটুকু বুঝতে পারছে যে, রোদেলা ও মুবিন অনেক আগে থেকেই একে অপরকে ভালোবাসত। এই কারণেই হয়তো বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে রোদেলার মন খারাপ ছিল, আর তাই হয়তো বিয়ের দিন সে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হলো রোদেলা কেন তার ভালোবাসার কথাটা কাউকে বলল না। এছাড়া রিফাত তো রোদেলাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিল। রিফাত কি জানত না যে রিফাত রোদেলাকে ভালোবাসে? যদি নাও জেনে থাকে তবুও যখন বিয়েটা ঠিক হলো তখন কি মুবিন তাকে বলেনি যে সে রোদেলাকে ভালোবাসে।

সব প্রশ্নফুলো মেঘলার মাথায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছিল। মেঘলা বুঝতে পারছিল না কিভাবে নিজের সব প্রশ্নের উত্তর পাবে।

আচমকা কেউ মেঘলার দরজায় নক করে। মেঘলা দরজা খুলে রোদেলাকে দেখতে পায়। রোদেলাকে দেখে এতদিনের জমা অভিমানগুলো আবার তাজা হয়ে উঠে। তাই সে রোদেলার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। রোদেলা বাইরে থেকে বলছিল,
‘দরজাটা খুলে দে মেঘ। তোর সাথে আমার অনেক জরুরি কথা আছে। জানি আমার উপর তোর অনেক রাগ। তবুও আমাকে নিজের কথাগুলো বলার সুযোগ অন্তত দে।’

মেঘলা দরজাটা খুলেই রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাদতে থাকে।
‘তুই কেন এমন করলি রোদ? তোর জন্য আমার পুরো জিবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো। আমার নামপরিচয়, স্বপ্ন সব বিসর্জন দিতে হলো। আজ আমায় এখানে রোদেলা সেজে থাকতে হচ্ছে। আমি এসব অভিনয় আর করতে পারছি না। তুই তো জানিস ছোটবেলা থেকে আমি মিথ্যা বলতে পারি না আর নাতো পছন্দ করি। আজ দেখ প্রতি মুহুর্তে আমায় মিথ্যা বলে যেতে হচ্ছে।’

রোদেলা মেঘলার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘আমি জানি তোর সাথে অনেক অন্যায় হয়েছে। আমি জানতাম না, আমি পালিয়ে গেলে মা-বাবা এমন কিছু করবে। যদি জানতাম তাহলে আমি নিজের সাথে তোকেও নিয়ে পালিয়ে যাইতাম।’

‘তুই যদি মুবিনকে আগে থেকে ভালোবাসতি তাহলে বললি না কেন? বললে তো এত কিছু হতো না।’

‘বলি নি তার কিছু কারণ ছিল। কয়েক মাস আগে কিছু মান-অভিমান থেকে আমাদের ব্রেকআপ হয়েছিল। তারপর থেকে কোন যোগাযোগ ছিল না। যখন আমার বিয়ের কথা ওঠে তখন আমি একপ্রকার জেদ করেই হ্যা করে দেই। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি মুবিনকে কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। আমি নিজের বিয়ের কার্ড মুবিনকেও পাঠিয়েছিলাম। বিয়ের দিন আমাকে ফোন করে সে অনেক কান্নাকাটি করে। বলে আমাকে না পেলে সে বাচবে না, নিজেকে শে’ষ করে দিবে। মুবিন সেইসময় খুলনাতে ছিল। তাই আমাকে বলে পালিয়ে খুলনা চলে যেতে। সেইসময় আমি আর নিজেকে আটকাতে না পেরে,,,’

মেঘলা রোদেলাকে উপহাস করে বলে,
‘তুই শুধু নিজের কথাই ভেবেছিস রোদ। আর কারো কথা ভাবিস নি।’

‘হ্যা আমি জানি আমি স্বার্থপর। এই জন্য তো আমার তোকে এত ভালো লাগে। তুই কতোটা নিঃস্বার্থ, কতটা ভালো মেয়ে। আমি সবসময় তোর মতো হতে চেয়েছিলাম জানিস তবে আমি পারি নি তোর মতো হতে। আর আজ ভাগ্যই আমাকে সেই সুযোগ করে দিল। আজ আমাকে যে মেঘলার অভিনয় করতে হবে।’

১৮.
দুই বোনের মধ্যে অনেকক্ষণ কোন কথাবার্তা হয় না। দুজনেই নিরব থাকে। একটু পর রোদেলা বলে,
‘আমি যখন শুনলাম তুই এই বাড়িতে রোদেলা হয়ে আছিস তখন থেকেই আমার কেমন যেন লাগল। মনে হলো তোকে অনেক বিপদে ফেলে দিয়েছি। অন্যদিকে মুবিনও যত দ্রুত সম্ভব আমাকে বিয়ে করতে চাইছিল। তাই আমি বিয়েটা করে নেই একটা শর্তে। যে আমাকে মেঘলা পরিচয়ে এই বাড়িতে আনতে হবে। আমি চাই নি তোর জন্য কোন অসুবিধা তৈরি করতে তাই মেঘলা হয়ে এই বাড়িতে এসেছি। তবে একটা কথা, আমার মনে হয় তোর এসব মিথ্যা বেশিদিন চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তোর এখন উচিৎ হবে যতদ্রুত সম্ভব সব সত্য বলে দেওয়া।’

‘আমিও চাই সব সত্য বলতে। তার আগে আমার কিছু সময় চাই।’

‘তুই রিফাতকে ভালোবেসে ফেলেছিস তাইনা?’

মেঘলা চুপ থাকে। রোদেলা মৃদু হেসে বলে,
‘তুই আমার যমজ বোন মেঘ। তোর চোখ দেখেই অনেক কিছু বলে দিতে পারি। আমার পরামর্শ তুই যত দ্রুত সম্ভব সব সত্য বলে দে। তাহলে তোকে আর আমাকে এসব নাটক করে যেতে হবে না।’

রোদেলা কথাটা বলে চলে যায়। মেঘলা বসে বসে রোদেলার বলা কথাগুলাই ভাবতে থাকে। এমন সময় রিফাতও ঘরে চলে আসে। রিফাতকে এই সময় আসতে দেখে মেঘলা অবাক হয়।

‘আজ এত তাড়াতাড়ি এলেন যে? এমনি তো রাত করে বাড়ি ফেরেন।’

‘এখন ফেরার কোন ইচ্ছা ছিল না। আম্মুর ফোন পেয়ে চলে আসলাম। মুবিন নাকি বিয়ে করেছে তাও আবার তোমার যমজ বোন মেঘলাকে।’

‘হুম।’

‘ওদের নাকি অনেক দিনের সম্পর্ক আর আমি কিছু জানতাম না। তুমিও কি জানতে না।’

‘না।’

রিফাত কিছু একটা ভেবে বলে,
‘আজ আমার সাথে ঘুরতে যাবে রোদেলা? তোমাকে নিয়ে অনেক দিন থেকে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
>> বাড়িতে অনেক মেহমান এসেছে।তাদের সামনে বেশিক্ষণ গল্প লিখতে পারি নি। তাই পর্বটা ছোট হয়ে গেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here