হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা পর্ব ১০+১১

#হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা
#part :10+11
#writer:Jeba

🌼
হিয়ার গালে আচমকা থাপ্পড় বসিয়ে দিল সায়ন।হিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,,,,,,

-সায়ন তুই আমাকে মারলি?
-হুম।বেশ করেছি মেরেছি।আজ পর্যন্ত নিজের জীবনে কোনো ব্যাপারে ঠিক ডিসিশন নিতে পেরেছিস? রিহান এর ব্যাপারে এতো ভেবেও জীবনের ভুল ডিসিশন টাই নিলি।আর ও তোকে দিনের পর দিন ভুল বুঝে হিংস্রতা দেখিয়েছে।আর ভালোবাসার অভিনয় করে তোকে নিজের জালে ফাঁসিয়েছে।কেনো হিয়া মানুষ চিনতে এতো ভুল কিভাবে করিস তুই?এতো বোকা কেউ হয়?আর রিহান কে ছাড়ব না আমি।ওর সাহস হলো কি করে বিনা দোষে তোকে এতো কষ্ট দেওয়ার?

হিয়ার কান্নার বেগ বাড়িয়ে বলতে লাগল,,,,
-প্লিজ সায়ন তুই ওকে কিছু বলিস না।ওর ভালোবাসা নাহয় মিথ্যে ছিল কিন্তু আমার ভালোবাসা তো সত্যি।আর আমার বিশ্বাস ও ওর ভুল টা বুঝতে পারবে।ওর হিংস্রতার আড়ালে থাকা ভালো চেহারা টা ও দেখতে পাবো।

-তোর মনে হয় রিহান বুঝবে তোর মন টা?ওকি বুঝবে তোর ভালোবাসা টা?ওকি কখনও বুঝতে পারবে যে প্রিয়ার মৃত্যুর জন্য তুই দোষী না?ও কি বুঝতে পারবে ওর মতো ঐ রাতে তুই ও তোর প্রিয় মানুষ তোর মাকে হারিয়েছিলি?

-আমার বিশ্বাস ও সব বুঝবে আর ফিরিয়ে নিতে আসবে আমাকে।

-ও তো একবার ও ফোন করে জানতে চাই নি তুই কোথায় আসিছ।কেমন আসিছ।

-ও যে হিংস্রতার আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে।যেইদিন হিংস্রতা কে ঝেরে ফেলে দিয়ে নিজের আসল জীবন টা উপলব্ধি করতে পারবে ঐদিন আমার মনটা বুঝতে পারবে ও।

-ওর হিংস্রতায় তোর খুব কষ্ট হয় তাই নারে?

-হুম,,,যাকে আমরা এতো বেশি ভালোবাসি তার কাছ থেকে ভালোবাসার বদলে যদি হিংস্রতা পাই তখন মনে হয় হিংস্রতার কাছে হেরে যাচ্ছে আমাদের পবিত্র ভালোবাসা টা।

-হুম তাই।আচ্ছা তুই রুমে গিয়ে শুয়ে পড়।অনেক রাত হয়ে গেছে।

-হুম।।।।।

সায়ন এর কথায় হিয়া নিচে চলে গেল।সায়ন দোলনায় বসে বলতে লাগল আনমনে,,,,,

তুমি খুব লাকি রিহান যে আমার হিয়া কে পেয়েছ তুমি।বড্ড ভালোবাসে মেয়ে টা তোমাকে।তোমার জায়গায় আমি হলে এইভাবে নিজের কাছে ধরা দেওয়া ভালোবাসা কখনও ফিরিয়ে দিতাম না।তোমাকে খুব আনলাকি ও বলতে ইচ্ছে হচ্ছে কারণ হিয়ার ভালোবাসা টা কে না বুঝে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিলে তুমি।হয়তো একদিন বুঝবে কিন্তু ঐদিন হয়তো সময় টা পাল্টে যাবে তোমার কাছে কিছুতেই ধরা দিবে না।


🌼
সকাল বেলা হামিদ সাহেব মানে হিয়ার বাবার সামনে বসে আছে রিহান ।
সারারাত ঘুমোতে পারে নি রিহান।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে তার।সারা রাত ভেবেছে হিয়ার বলা কথাগুলো।বিনা কারণে আর কাউকে শাস্তি দিতে চাই না সে।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হামিদ সাহেব বললেন,,,,,

-কেমন আছো বাবা?
-জ্বী বাবা ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
-এইতো ভালো।তোমাকে দেখে মনটা আরো ভালো হয়ে গেল।হিয়া কে নিয়ে আসলে না যে?মেয়েটার সাথে কালকে কথা বললাম।কেমন যেন অন্য রকম লাগছিল ওর কথা গুলো।আমার মেয়ে টা ভালো আছে তো?
-ভালো আছে বাবা।আপনি একদম চিন্তা করবেন না।আসলে ও হসপিটালের কাজে আর আমি আমার বিজনেস এর কাজ নিয়ে একটু বিজি আছি।আর খুব শিগ্রই ওকে নিয়ে একসাথে আসব আপনাকে দেখতে।আজ আপনার কাছে একটা জরুরি কাজে এসেছি।

-কি কাজ বাবা?

-আসলে বাবা কাজ বলতে আমি আপনার কাছ থেকে কিছু জানতে চাই।

-কি জানতে চাও বলো বাবা?

-হিয়ার মা মানে মা কবে মারা গিয়েছিলেন বাবা? (ইতস্তত বোধ করে প্রশ্ন টা করল রিহান )

-হঠাৎ এমন প্রশ্ন বাবা?

-বাবা আমি চাইছিলাম মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে এতিমখানায় বাচ্চাদের খাওয়াবো ।এতে ঐদিন টাই হিয়ার মনে মাকে হারানোর চাপা কষ্ট টা একটু হলেও হালকা হবে।

হামিদ সাহেব রিহান এর মাথায় হালকা ছুঁয়ে দিয়ে বলল,,,,,

-সত্যিই আমি আমার মেয়ে টার জন্য খুব ভালো একটা ছেলে পেয়েছি।আমার মেয়ে টা অনেক ভাগ্যবতী।হিয়ার মা তিন বছর আগে জানুয়ারি মাস এর বিশ তারিখ মারা গিয়েছিল।

হিয়ার বাবার কথায় রিহান এর মাথায় যেনো পাহাড় ভেঙে পড়ল এমন মনে হতো লাগল তার।সাথে সাথে তার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।হামিদ সাহেব দেখার আগেই রিহান চোখে জল মুছে বলল,,,,

-আচ্ছা বাবা নিজের খেয়াল রাখবেন।আর খুব শিগ্রই আমি হিয়া কে নিয়ে আসব।

-ঠিক আছে বাবা তোমরাও ভালো থেকো।

🌼
গাড়ি নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় আসল রিহান।খুব জোরে একটা চিৎকার দিলো সে।এই চিৎকার টা হিংস্রতার নয়।এই চিৎকার টা আজ বিনা দোষে কাউকে দেওয়া কষ্টের চিৎকার।

কিভাবে পারলাম আমি বিনা দোষে হিয়ার মন নিয়ে খেলতে?কিভাবে পারলাম ওকে ভালো না বেসে ওর ভালোবাসার বিশ্বাস খুন্ন করতে?হিয়া তাহলে সত্যি বলছিল আর আমি ওকে বিশ্বাস না করে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছি।একটা বার ও বুঝতে চাই নি প্রিয়ার মৃত্যুর জন্য কি সত্যিই ও দায়ী ছিল।ও তো আমার মতো ঐ রাতে তার প্রিয় মানুষ টা কে হারিয়েছে।প্রিয়ার ভালোবাসায় এতো হিংস্র হয়েছিলাম যে সত্য মিথ্যার যাচাই করতেই ভুলে গেছিলাম।হিয়া কি ক্ষমা করবে আমায়?নিশ্চয়ই করবে।আর আমি ওকে আমার মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয়ে আর কষ্ট দিবো না।হিয়ার বাবা যেহেতু বলেছে ও আমার সাথে আসে নি কেন তার মানে হিয়া ওর বাবার ওইখানে যায় নি।কিন্তু গেল কোথায়?

🌼
চলবে,,,,,,,
#হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা
#part:11
#Writer:Jeba

🌼
হিয়ার কেবিনে বসে হিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে রিহান।কেবিনে ঢুকে হিয়া রিহান কে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেল।রিহান হিয়ার দিকে এগিয়ে এসে বলল,,,,

-কেমন আছো হিয়া?
-যার গায়ে মিথ্যে অপবাদ লাগানো হয় সেই মানুষ টা আর কেমন থাকবে?

কথাটা বলে হিয়া চলে যাচ্ছিল তখন হিয়ার হাত টা ধরে নিল রিহান।

-হাত ছাড়ুন,,,
-ছেড়ে দিবো।আগে আমার কথা গুলো বলতে দাও।
-কি আর বলবেন আপনি?বলবেন যে আমিই সত্যিকারে দায়ী প্রিয়ার মৃত্যুর জন্য?
-না।আজ তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।
-কিসের ক্ষমা?
-এই যে আমি তোমাকে এতোদিন ভুল বুঝে কষ্ট দিয়েছি।
-ওহ আচ্ছা,,,,আর?

হিয়া কে চেয়ারে বসিয়ে হিয়ার সামনে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল রিহান।তারপর বলতে শুরু করল,,,,

-জানি তুমি আমায় কখনও ক্ষমা করবা না।কারণ আমি সত্যি টা উপলব্ধি না করে তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি।হিংস্রতা দেখিয়েছি তোমার সাথে।এমনকি বিশ্বাস ও করে নি যে ঐ রাতে তোমার মা মারা গিয়েছিল।সত্যি আমি এতোটাই হিংস্র হয়ে গিয়েছিলাম প্রিয়ার ভালোবাসায় সত্য টাই মানতে চাই নি।তুমি খুব ভালো হিয়া।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করেছি এক বছর আট মাস ধরে।উদ্দেশ্যে একটাই ছিল তোমাকে ভালোবাসার জালে ফেলে বউ বানিয়ে নিজের মনের মধ্যে জমে থাকা সব হিংস্রতা তোমার উপর ঝেরে ফেলা যেনো তিলে তিলে একটু একটু করে প্রতিনিয়ত কষ্ট পাও তুমি ।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম ।জানি তুমি ক্ষমা করবা না কিন্তু আমি আজ তোমাকে সব কষ্ট করে নিজের একটা ভুল শুধরাতে চাই।


-কি শুধরাতে চাও তুমি রিহান?
সায়নের কথায় রিহান হাল্কা হেসে সায়নের দিকে তাকালো।রিহান একটা কাগজ হিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো।হিয়া রিহান এর হাত থেকে কাগজ টা নিয়ে খুলে যা দেখল তা দেখে হিয়ার কাছে পুরো পৃথিবী টা উল্টো মনে হতে লাগল।পুরো মলিন হয়ে আসল হিয়ার মুখ টা।

রিহান হিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করল,,,,

-জানি খুব অবাক হচ্ছো।আর এইটা ও জানি তুমি মন থেকে খুব ভালোবেসেছ আমাকে।কিন্তু আমি হতভাগা দিন দিন অভিনয় করেছি তোমার সাথে।তোমাকে আজও ভালোবাসতে পারি নি নিজের মন থেকে।এতোদিন যা ছিল সব ছিল হিংস্রতা।আজ থেকে তোমার জন্য মনের মধ্যে থাকবে সম্মান।আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারি নি তাই তোমাকে নিজের সাথে আর একটা মিথ্যে সম্পর্কে বেঁধে রাখব না।আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি ।আজ সব হিংস্রতা থেকে মুক্ত করে দিয়েছি তোমাকে।

রিহান এর কথা শুনে চমকে উঠল সায়ন।আর হিয়া যেনো জমে বরফ হয়ে গিয়েছে।খুব কান্না পাচ্ছে তার কিন্তু অভিমানে আজ কানতে ও পারছে না সে।খুব অভিমান হচ্ছে আজ তার রিহান এর প্রতি।একবার যদি বলতো রিহান হিয়া তোমাকে ভালোবাসি তাহলে সব ভুলে সে রিহানের হাত টা ধরে তার বাড়িতে চলে যেতো সে।কিন্তু রিহান আজ জানিয়ে দিল ভালোবাসে না সে হিয়া কে।তবে কি ভুল ভেবেছিল সে যে হিংস্রতার আড়ালে লুকিয়ে ছিল ভালোবাসা? ভুলই ভেবেছিল সে নইলে কি আজ ডিভোর্স দিতো রিহান তাঁকে ।


🌼
একটা আওয়াজ ও করছে না হিয়া।টেবিল এর উপর থেকে কলম নিয়ে সাইন করে দিলো ডিভোর্স পেপারে।
তারপর কাগজ টা বাড়িয়ে দিলো রিহানের দিকে।রিহান কাগজ টা হাতে নিয়ে বলল,,,,
-ক্ষমা করে দিও পারলে।আর আজ থেকে নিজের একটা নতুন জীবন শুরু করো।আর যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যেতে চাই,,,,তোমার পাশে থাকা বেষ্ট ফ্রেন্ড টা খুব ভালোবাসে তোমায়।।।।।


চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here