হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা পর্ব ৮

#হিংস্রতার আড়ালে ভালোবাসা
#part :8
#writer:Jeba

প্রিয়ার নাম টা শুনে হিয়া থমকে গেলো।আর সে সবচেয়ে বেশি অবাক হচ্ছে রিহান এর কথাটা শুনে যে তার জন্য রিহান আর তার পরিবারের সুখ হারিয়ে গেছে।কিন্তু হিয়ার জানা মতে সে কোনো ধরনের ক্ষতি করে নি রিহানের আর তার পরিবারের।আর প্রিয়া নাম টা তার কাছে অচেনা নয় কারণ প্রিয়া যখন প্রেগনেন্ট ছিল তখন হিয়া ই প্রিয়ার চেক আপ করত।

রিহান এর বউ ছিল প্রিয়া?রিহান এর বউ প্রিয়া হলে ও আমাকে কেন বিয়ে করল?আমি কিভাবে ওর সুখ কেড়ে নিলাম? প্রিয়া থাকতে ও কেনো আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করল?কিন্তু প্রিয়া আর ওর বাচ্চা কোথায়? এই বাড়িতে আসার পর একদিন ও তো দেখি নি।(মনে মনে বলল হিয়া )

হিয়া আমতা আমতা করে বলল রিহান প্রিয়া আর ওর বেবি কোথায়?
রিহান জোরে একটা হাসি দিয়ে বলল,,,
-তুই জানিস না আমার প্রিয়া কোথায়?
-না।
-আরে তুই তো আমার প্রিয়া কে অনেক দূরে ঠেলে আমার থেকে,,,,
-মানে?
-তুই চাইলে আমার প্রিয়া কে বাঁচাতে পারতি।আরে তুই তো ডাক্তার নামের কলঙ্ক।
-কি বলছো তুমি?প্রিয়া কে বাঁচাতে পারতাম মানে?
-তিন বছর আগে বেবি হওয়ার সময় ও আমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে গেছে।ঐদিন তোর অনেক প্রয়োজন ছিল।রাত বারো টায় যখন প্রিয়ার পেইন উঠে তখন ওকে তোদের হসপিটালে নিয়ে যায়।হসপিটালে গিয়ে জানতে পারি শুধু মাত্র দুইজন ডাক্তার ই আছে ডিউটি তে।প্রিয়া এই দুইজন ডাক্তার এর উপর জানিনা কেনো যে ভরসা পাচ্ছিল না।ও আমার হাত ধরে বলতে লাগল প্লিজ ডাক্তার হিয়া কে ফোন দাও।আমার কথা বললে ওনি আসবে।প্লিজ,,,,,,
প্রিয়ার বেবি টা নরমালি হওয়া পসিবল ছিল না।তোকে আমি আধা ঘন্টা লাগাতার কল করেই গিয়েছি কিন্তু তুই ঐদিন একটা কল ও রিসিভ করছ নি।অবশেষে না পেরে ঐ দুইজন ডাক্তার প্রিয়া কে ওটিতে নিয়ে গেল।আর দুই ঘন্টা পর ফিরে আসল আমার প্রিয়ার মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে ।আমার প্রিয়ার ভরসা টা সেদিন শুধু তোর উপর ছিল।কি এমন হতো একবার ফোন টা রিসিভ করলে? প্রিয়া ভেবেছিল ওর ডেলিভারির জন্য তুই বেষ্ট ডাক্তার।সত্যিই তুই বেষ্ট কিন্তু মন থেকে অনেক অনেক খারাপ তুই।আমি আমার প্রিয়া কে হারিয়েছি শুধু তোর জন্য।


রিহান এর কথা শুনে একটা বড় সড় ধাক্কা খেল হিয়া।প্রিয়া বেবি হওয়ার সময় মারা গেছে কিন্তু তাতে তো কোনো দোষ নেই হিয়ার।ঐদিন হিয়া ও যে হারিয়েছে তার মা কে।মাকে হারানোর শোকে তার কোনো দিকেই খেয়াল ছিল না।ঐদিন মোবাইল টা ও ধরে দেখে নি সে।যে তার মাকে হারায় সেই বুঝে মা হারানোর কষ্ট।রিহান আমাকে এতো বড় ভুল বুজে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এমন করেছে?আমি তো সেইদিন নিজেরই খেয়াল ছিল না।আর আমি তো ইচ্ছে করে এমন করি নি।যদি জানতে পারতাম ঐদিন প্রিয়ার আমার প্রয়োজন ছিল ছুটে আসতাম আমি।কারণ ডাক্তার হিসেবে যতটুকু পারি একটা মানুষের জীবন বাঁচানো আমার দায়িত্ব আর বাকি টা আল্লাহর ইচ্ছে।যেইভাবে হোক ওকে বুঝাতে হবে যে আমি ইচ্ছে করে এমন করি নি।ঐদিন রিহান যেমন প্রিয়া কে হারিয়েছে আমি আমার মাকে হারিয়েছি।রিহানের ভুল ভাঙাতে হবেই আমার।(মনে মনে বলল হিয়া)


হিয়া রিহানের দিকে তাকিয়ে দেখল রিহান অনবরত চোখের জল ফেলছে।আজ জীবনে প্রথম সে কোনো ছেলেকে কাঁদতে দেখেছে।হিয়ার রিহান এর কান্না দেখে মনে হচ্ছিল কেউ তার হৃদয়ে অনবরত আঘাত করে যাচ্ছে।পরক্ষণেই সে মনের অজান্তেই হিয়া বলে উঠল,,,,,তুমি খুব লাকি প্রিয়া।রিহান আজও তোমার জন্য চোখের জল ফেলে।


রিহান চোখের জল মুছে রুম থেকে বের হয়ে যাবে সেই মুহূর্তে হিয়া রিহান বলে ডাক দিল।
রিহান হিয়ার ডাকে হিয়ার দিকে ফিরে দাঁড়াল।হিয়া ও রিহান এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,


-আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই রিহান।
-কি আর বলবি তুই।তুই চাইলে সেদিন আসতে পারতি।আমার প্রিয়ার ভরসা টা রাখতে পারতি।
-তুমি আমাকে ভুল বুঝছ রিহান।যেই কারণে আমাকে হিংস্রতা দেখাচ্ছ তোমার সেই কারণ টাই ভুল।ডাক্তার হিসেবে আমার প্রথম দায়িত্ব মানুষের বিপদে পাশে থাকা।ঐদিন যদি আমি জানতে পারতাম প্রিয়া তার শেষ ভরসা টুকু আমার উপর রেখেছিল তাহলে ছুটে চলে আসতাম আমি বিশ্বাস করো।
-তুই আসবি কিভাবে? তুই তো ফোন না রিসিভ করে আরামে ঘুমাচ্ছিলি।
-ভুল বুঝছ তুমি রিহান ঐদিন আমার কাছে আমার মোবাইল টাই ছিল না।আর সবচেয়ে বড় কথা প্রিয়ার সাথে যা হয়েছে আল্লাহ তা’আলার মর্জি তে হয়েছে।আর,,,,,,,


হিয়া কথাটা বলার সাথে সাথেই রিহান হিয়া একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।হিয়া আর তার চোখের জল আটকে রাখতে পারল না।দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল আর বলতে লাগল চিৎকার করে,,,,

-তুমি যেমন তোমার প্রিয়া কে হারিয়েছ তেমন আমিও আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আমার মাকে হারিয়েছি।মাকে হারিয়ে আমি একদম নিঃশ্ব হয়ে পড়েছিলাম।কে ফোন করেছে কি করেছে কোনো খেয়ালই ছিল না আমার।আর তুমি ভালো করেই জানো প্রিয় মানুষ হারানোর কষ্ট টা কেমন?

হিয়ার কথায় রিহান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,,,
-নিজের দোষ টা ডাকার জন্য মিথ্যে কথা বানিয়ে বলে ফেললি?তুই আসলে একটা খারাপ মেয়ে একটা খা*********
-রিহান……….
-চুপ একদম চিৎকার করবি না।
-বিশ্বাস করো সত্যি কথা বলছি আমি।
-তোকে বিশ্বাস করি না আমি।তোর জন্যই আজ এতোটা হিংস্র হয়ে উঠেছি।


রিহান এর কথায় হিয়া নিজের চোখের জল মুছে বলল,,,,
-যেদিন আমার কথা তোমার বিশ্বাস হবে।যেদিন আমি তোমার কাছে নির্দোষ প্রমাণিত হবো সেদিন আমি নিজ ইচ্ছায় তোমার বাড়িতে ফিরে আসব।সেদিন থেকে তারপর তুমি আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিও যদি আমার বলা কথাগুলো মিথ্যে প্রমাণিত হয়।আমি কিছু বলব না তোমাকে।আমি যদি সত্যি প্রিয়াকে হারানোর জন্য দোষী হয়ে থাকি তাহলে সারাজীবন তোমার হিংস্রতা মেনে নিতে রাজি আছি।ভালো থেকো।

কথাগুলো বলে হিয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়ল।হিয়া যাওয়ার পর রিহান এর শূন্যতা ফিল হতে লাগল।মেয়ে টা কি সত্যিই বলছে?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here