হিয়ার মাঝে পর্ব -০৬

#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ৬
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

১১,
” কিছু করবোনা৷ আপনি ফোন টা দিন।”

হিয়া ইহসাসের কথায় তার ফোন টা ইহসাসকে দেয়। ইহসাস ফোন নিয়ে ওন করতেই হিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

” লক কে খুলে দিবে মিস? ”

” দিচ্ছি, দিন। ”

হিয়া গা ছাড়া ভাব নিয়ে ফোনের লক খুলে দেয়। ইহসাস একটু অবাক হচ্ছে হিয়া এতো সহজে ফোন তাকে দিচ্ছে বলে। কিন্তু হিয়ার ফোন হাতে নিয়েই হত’ভম্বের ন্যায় দাড়িয়ে আছে ইহসাস। হিয়া ফোনের লক খুলে দিয়েছে ঠিকই! কিন্তু ফোনের ল্যাঙ্গুয়েজ সেটিংস এটা কোন দেশের ভাষা, কিছু বুঝতে পারছেনা ইহসাস। ইহসাসের হতভম্ব চাহনীতে মুচকি মুচকি হাসছে হিয়া। ইহসাস হিয়ার দিকে তাকাতেই হিয়া এমন ভাবে তাকায় যেনো সে কিছুই বুঝতে পারছেনা।ইহসাস তবুও ফোন ঘেঁটে গ্যালারিতে ঢুকে, সেখানে তার কোনো পিকই নেই৷ পরে গ্যালারি লক এপস দেখতে পেয়ে সেখানে ঢুকে কিন্তু সেখানে তো পাসওয়ার্ড লাগবে৷ ইহসাস থমথমে গলায় বলে,

” এজন্য এতো ইজিলি ফোন টা আমায় দিচ্ছিলেন তাইনা? এজন্য বলি একটা মেয়ে এতো সহজে ফোন কেনো দিলো আমায়৷ ”

” হিয়া এতো বোকা নয় মিঃ বেয়াই সাহেব৷ আপনার সুন্দর সুন্দর হা করে খাওয়া দাওয়া করার ছবি রয়েছে আমার কাছে। ভেবেছিলাম বুঝতে পারেননি, ছবিন তুলেছি৷ তবুও সাবধানের মা”র নেই৷ এজন্য টুক করে গ্যালারি লক এপস নামিয়ে ট্রান্সফার করে নিয়েছি সেখানে।”

ইহসাস থ মে’রে যায় হিয়ার কথা শুনে। সে দুকদম এগিয়ে হিয়ার একদম কাছাকাছি দাড়ায়। হিয়া এবার স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে যায়৷ ইহসাসকে নিজের এতো কাছে দেখে হার্টবিট এর শব্দ যেনো বাইরে থেকেই শুনা যাবে এমন অবস্থা। ইহসাস হিয়াকে বলে উঠে,

” মিস বেয়াইন সাহেবা, যথাসম্ভব সম্মানের সহিত বলিতেছি, আমার ছবিগুলো ডিলিট করে দিবেন ফোন থেকে। নয়তো? ”

” নয়তো কি হ্যাঁ? ”

হিয়া তোতলানো সুরে ইহসাসকে প্রশ্ন করে। ইহসাস কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু হাসলো। সেই হাসিতে যেনো শ’য়তানি মাখা। এরপর হিয়ার দিকে আর একটু এগিয়ে যায়। হিয়া পিছুতে গিয়ে ছাদের রেলিং এ ঘিষে দাড়ায়। ইহসাস হিয়ার এই অবস্থা দেখে মনে মনে মজা পাচ্ছে। সে হিয়াকে আর একটু ঘাবরে দেওয়ার জন্য হিয়ার আর একটু কাছে দাড়ায়। দুজনের মাঝে দূরত্ব যেনো দেড়-দুই ইঞ্চির৷ হিয়া এবার ভ’য় না পেয়ে জোড়ালো গলায় বলে,

” আপনার কাজই কি মেয়েদের কখনও দেওয়ালের সাথে, কখনও ছাদের রেলিং এ চে”পে ধরা হুহ? ”

” না মিস বেয়াইন সাহেবা। আপনার ভীত মুখে লজ্জার আভা দেখে সুন্দরই লাগছে আপনাকে। বিদেশের মাটিতে বেড়ে উঠা শ্যামবতী কন্যা, তার কোমড় ছড়ানো চুল, রাতের আবছা আলো। প্রেমে পরে যাচ্ছি তো বেয়াইন সাহেবা৷ অথচ দেখুন, এই আবরার ইহসাস এহসান কখনও সেভাবে মেয়েদের প্রতি আর্কষিত হওয়ার কথা ভাবেওনি। ”

ইহসাসের উত্তরে মুখের কথা ফুরিয়ে যায় হিয়ার। তার দুলাভাইয়ের সব গুলো ভাই-ই কি এমন নির্লজ্জ! কেউ মায়ের সামনেই বউয়ের কলঙ্ক হতে চায় তো কেউ দুদিনের পরিচয়েই প্রেমে পরে সেই কথা মুখের উপর বলে দেয়। এরা কি খেয়ে এমন নির্লজ্জের মতো বড়ো হয়েছে! আপাতত এগুলো কথাই মাথায় ঘুরছে হিয়ার। সে নিষ্পলক ইহসাসের দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছিলো। তখন ইহসাস হিয়ার চোখে প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

” এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছেন বেয়াইন সাহেবা? প্রেমে পরে যাবেন তো! ”

” আচ্ছা আপনারা কি খেয়ে এতো বেশরম চরিত্রের অধিকারী হয়েছেন বলুন তো?”

হিয়ার এমন উদ্ভট প্রশ্নে ইহসাস এক ভ্রু উচিয়ে তাকায় হিয়ার দিকে। হিয়া এবার চট করে ইহসাসকে ধা”ক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এরপর নিজে দীর্ঘ করে কয়েক বার নিঃশ্বাস নেয়। এতোক্ষণ যেনো নিঃশ্বাস টা আটকে ছিলো তার। চুলে হাত দিয়ে দেখে খোপা খুলে গেছে, যার ফলে ইহসাস তার চুল কত টুকু বলতে পেরেছে৷ খোপা করতে পটু নয় হিয়া। যার ফলে সহজে খুলে যায়। সবসময় তো হেয়ার ব্যান দিয়ে চুল আটকে রাখে। খুজে পায়নি অপটু হাতে খোপা করে ছাদে চলে এসেছে। এরপর খুলে গেছে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। এখন ইহসাসের কথা শুনে খোপা করে নেয় সে। ইহসাস হিয়ার এই অবস্থা দেখে মজা করে বলে,

” এখনও ভালো না বাসতেই একটু কাছে দাড়ালেই এমন হাসফাস অবস্থা আপনার মিস হিয়া। যদি বিয়ে করে বউ বানিয়ে ফেলি, কাছে যাই। কি হবে আপনার?”

” ওহ গড থ্যাংকস এতো তাড়াতাড়ি আমার জামাই পাঠানোর জন্য। ”

ইহসাসের কথায় হিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে। ইহসাস বুঝতে পারলো না এটা কি হলো। সে ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করে,

” মানে? ”

১২,

” মানে আপনার মা’থা। বিয়ে করবেন আমায়? তাড়াতাড়ি করে ফেলুন প্লিজ। আমার আর ঐ সাদা বরফের দেশে ফিরতে ইচ্ছে করছেনা। বিয়ে হলে তবু বাংলাদেশেই থাকতে পারবো। ”

ইহসাস যেনো নিজের জা’লে নিজেই জড়িয়ে গেলো। সে করলো মজা, এ মেয়ে তো সোজা বিয়েতে রাজী হয়ে তাকে সা’জা দিতে চাইছে। ইহসাস যখন হিয়ার উত্তরে থম মে’রে দাড়িয়ে আছে, হিয়া ইহসাসের হাত থেকে ফোন টা ছো মে”রে নিয়ে নেয়। তারপর হনহনিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য হাঁটতে ধরে। ইহসাস তখন একটু জোড়ে বলে,

” আরে মিস বিয়াইন আমার ছবিগুলো তো ডিলিট করুন৷ ”

হিয়া তখন পিছ ফিরে উত্তর দেয়,

” ডিলিট করবো, কিন্তু একটা শর্তে? ”

” কি শর্ত? ”

” বাবাকে বলে বাংলাদেশে ঘুরার মতো জায়গা গুলোয় নিয়ে ঘুরে দেখাতে হবে, সাথে থাকবে আফরা, নাতাশা আপু, আমার আপু, দুলাভাই। ”

” এ্যহহ?”

” এ্যাহ নয় হ্যাঁ। ”

” পারবোনা, আপনার বাবাকে বলুন গিয়ে। ”

” তাহলে ছবিগুলো আপনার বোন, কাজিন আর সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিই হ্যাঁ? ”

ইহসাসের এবার মে*জাজ খারাপ হয়। একবার যদি উল্টাপাল্টা ছবি নাতাশার চোখে পরে, মান সম্মানের দ’ফারফা করে দিবে৷ সে গোমড়ামুখে উত্তর দেয়,

” কিন্তু আপনার বাবা? তাকে কিভাবে রাজী করাবো? ”

” সেটা জানলে আপনাকে কি এভাবে ব্ল্যাকমেইল করি? ”

হিয়া কথাটা বলেই চলে যায়৷ ইহসাস নিজের চুল টেনে ধরে আপনমনে বিরবির করে, ‘ এ কোন পাগলির পাল্লায় পরলাম আল্লাহ। ‘

হিয়া সিড়ি বেয়ে নিচে নামতেই মুখোমুখি হয় রায়ার। সেও কেবলমাত্রই ছাদের দিকে যেতে ধরেছে। রায়ার মুখোমুখি পরায় হিয়া অপ্রস্তুত হয়ে যায়।জোড় করে হাসার চেষ্টা করে৷ রায়া হিয়ার চো’রা চো’রা চাহনী দেখে জিগাসা করে,

” এতোক্ষণ ছাদে ছিলি? ”

” হ্যাঁ আপু। কিন্তু তুমি ছাদে যাচ্ছিলে নাকি?”

” তোকে আর ইহসাসকে কোথাও নজরে পরছিলো না। সারাবাড়ি খুজে না পেয়ে ছাদে যাচ্ছিলাম। তুই তো ছাঁদ থেকে আসলি। ইহসাস ওখানে আছে?”

রায়ার কথা শুনে ফাঁকা ঢোক গিলে হিয়া। ইহসাস আর সে যে ছাদেই ছিলো, জানলে কি ভাববে তার বোন৷ হিয়ার নিরবতায় রায়া বোনের দিকে সন্দেহের চাহনীতে তাকিয়ে বলে,

” কিরে চুপ করে আছিস কেনো? উত্তর দে। ”

রায়া কথাটা বলতেই ইহসাস তখুনি তাড়াহুড়ো করে সিড়ি দিয়ে নামছিলো। রায়া সেদিকে তাকিয়ে হিয়ার দিকে তাকায়। হিয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। ইহসাস রায়া আর হিয়াকে সিড়ির সম্মুখে দেখে হাটার গতি কমিয়ে দেয়। তার ভাবী আবার ভুলভাল কিছু ভাবছে না তো তাদের নিয়ে। রায়া বোনকে প্রশ্ন করে,

” তোরা দুজনেই ছাদে ছিলি। প্রায় একঘন্টার উপরেও হবে তোরা ছাদে। অথচ সবাই নিচে ড্রইং রুমে আড্ডা দিচ্ছিলো। কি করছিলি তোরা ছাঁদে? ”

” আরে ভাবী কি করবো? নতুন বেয়াইন, ঐ একটু আলাপ পরিচয় হলো একটু ভালো করে। গল্পগুজব করলাম নিজেদের জীবন নিয়ে। ”

ইহসাস চট করে এসে রায়ার প্রশ্নের উত্তর দেয়। রায়া দুজনকেই তীক্ষ্ণ চাহনীতে দেখে বলে,

” ইহসাস তোমাদের শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাত তো কম হয়নি, ডিনার টেবিলে এসো। খেয়ে শুয়ে পরবে চলো। ”

রায়া কথাটা বলেই চলে যায় হিয়ার সামনে থেকে। ইহসাসও ভাবীর পিছু পিছু যায়। হিয়া হাফ ছেড়ে বাঁচে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয়, লুইস আর ভাইয়ার কথা সে কিভাবে রায়া কে বলবে! রায়া জানলে কি প্রতিক্রিয়া হবে তার! অনেকটা কষ্টে যে তার বোন স্বাভাবিক আচরণ করছে, সেটা কি থাকবে! নাকি আবার কান্না শুরু করবে! যদি ওভার রিয়েক্ট করে আপু! এতগুলো চিন্তা হিয়ার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পা’গল পা’গল লাগছে নিজেকে৷ সময় আর পরিস্থিতি এতো বা”জে যাচ্ছে কেনো তার? নিজে এই ঝা’মেলার জন্য কখনও সম্পর্কে জড়ালো না, শেষে বোনের করা সম্পর্ক নিয়ে ঝা’মেলা পোহাতে হচ্ছে। উফ বিরক্তিকর। তিক্ত কণ্ঠে কথাটা বলেই হিয়া মায়ের ডাকে দ্রুত ডাইনিং রুমের দিকে যায়।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here