#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ১২
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
২৬,
সকালে ঘুম ভাঙার পর উঠতে ধরে উঠতে পারেনা রায়া। তাকে পেঁচিয়ে ধরে শুয়ে আছে রাদ। এখনও ঘুমন্ত সে। রাদ দুহাতে রায়ার কোমড় পেঁচিয়ে আছে। এক হাত কোমড়ের নিচ দিয়ে, অন্য হাত কোমড়ের উপরে দিয়ে দু-হাতের আঙুলে আঙুল পেচিয়ে শক্ত করে ধরে আছে তাকে । রায়া ছুটার জন্য চেষ্টা করেও পারছেনা। এই লোক ঘুমের মধ্যেও এতো শক্ত করে কিভাবে ধরে আছে! বুঝে আসছেনা রায়ার। সে মাথা ঘুরিয়ে এতোক্ষণ রাদকে দেখছিলো আর হাতের বন্ধন থেকে ছোটার চেষ্টা করছিলো। পারলোনা বলে সে এবার মোচর ঘুরে রাদের দিকে মুখ ফিরে শুয়ে পরলো। দুই বালিশের মাঝে ফোন রাখা দেখে ফোন হাতে নিলো। সময় দেখলো, সাড়ে ছয়টা বাজে। এতো তাড়াতাড়ি তার ঘুম ভাঙলো! ভাবতেই অবাক লাগলো তার নিজের কাছে। সে রাদের গালে আস্তে আস্তে চা’পড় দিলো। রাদ পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাতেই রায়াকে তার এতো কাছে দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসলো। রায়াও উঠে রাদের পাশেই বসে। বালিশের পাশে রাখা ওরনা গায়ে জড়িয়ে উঠতে উঠতে বলে,
” শুয়ে পরলাম মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে, উঠলাম আপনার হাতের বন্ধনের মাঝে। কখন ধরলেন এভাবে? ”
রাদ রায়ার প্রশ্নে মাথা চুলকায়। আসলেই কখন হলো এটা! সে তো শুধু রায়ার ঘুমন্ত মুখ টা দেখছিলো রাত জেগে। কিন্তু কখন কোল বালিশ সরে গিয়ে সে রায়াকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে ধরে ঘুমালো! তার নিজেরও মনে পরছে না। রাদ তুতলিয়ে উত্তর দেয়,
” আমি জানিনা, মনে পরছেনা৷ ”
” মিথ্যা বলছেন না তো?”
” আপনাকে কেনো মিথ্যা বলবো? আর ধরলেও বেশ করেছি। বিয়ে করা বউ আপনি আমার। জীবনে ২৮টা বছর সিঙ্গেল থেকে বউ পেলে বউকে ধরবো না তো কোলবালিশকে ধরবো?”
রায়া রাদের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এই লোকের লজ্জা নেই জানে, কিন্তু সবসময়ই এমন নির্লজ্জ হতে হবে! কে বলে রেখেছে এই লোককে। রাদ রায়াকে ওভাবে তাকাতে দেখে বোকা বোকা হাসি দিয়ে জিগাসা করে,
” এভাবে কি দেখছেন আপনি?”
” আপনি আমার ৩বছরের বড়, আমার নাকি স্বামী হোন! তাহলে আপনি আপনি করে সম্মোধন বন্ধ করুন। আম্মু আমায় প্রশ্ন করে এটা নিয়ে। ”
রাদ পুরোই তব্দা খেয়ে যায়। যে বেফাঁস কথা বলেছে! তাতে কোথায় রায়া তাকে ঝা’ড়ি দিবে। সেখানে রায়া তাকে আপনি সম্মোধন নিয়ে কথা বলছে। সে রায়াকে প্রশ্ন করে,
” আম্মু কখন বললো? ”
” কাল যে এসে বললেন, আম্মু ডাকে। গিয়ে কথা বলতে বলতেই আম্মু জিগাসা করেছিলো, আমাদের মাঝে সব ঠিক কিনা! কিছু এবনরমাল কিনা! আপনি আমাকে তুমি না আপনি বলে সম্মোধন করেন এটাও খেয়াল করেছেন উনি।”
” আমাদের মাঝে সব ঠিক কিনা! এই কথার উত্তরে কি বলেছেন আপনি?”
রায়া রাদের এই প্রশ্নে দমে যায়। রাদ আগ্রহ নিয়ে রায়ার প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা করে৷ কিন্তু তার আগ্রমে এক বালতি পানি ফেলে রায়া চুল বাঁধতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসে পরে। রাতে চুল খুলে ঘুমানোর স্বভাব তার। বেণুনী বা খোপা যেটায় করুক, ঘাড়ের নিচে শক্ত শক্ত অনুভব হয় বলে চুল খুলেই ঘুমায় সে। চুলে হালকা জট লেগে গেছে। সে চিরুনি দিয়ে সেগুলো ছাড়াতে থাকে। গত কয়েকদিনের সাজগোজে একদম চুলের দফা রফা করে দিয়েছে পার্লারের মেয়েরা। রায়া রাগে গজরাতে গজরাতে চুলের জট ছাড়াচ্ছিলো। রাদ গায়ের উপর থেকে কাথা সরিয়ে নেমে পরে। স্যান্ডেল পায়ে দিতে দিতে রায়াকে ফের প্রশ্ন করে,
” বললেন তো কি বলেছেন?”
” কি আপনি আপনি করছেন আপনি? আগে তুমিতে নামুন, আমি উত্তর দিচ্ছি। ”
রায়া বিরক্ত হয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে রাদের দিকে ফিরে কথাটা বলে৷ রাদ রায়ার বাচ্চাদের মতো বিরক্ত হতে দেখে হাসে। সে রায়ার কাছে গিয়ে দাড়ায়। রায়া সন্দিগ্ধ চাহনীতে রাদকে জিগাসা করে,
” আপনার মতলব কি? হুটহাট এমন সামনে চলে আসেন কেনো দুমদাম? ”
২৭,
রাদ উত্তর দেয়না রায়ার কথার। সে রায়ার দুই গালে হাত রেখে বলে,
” তোমাকে ভালোবাসি বউ। আমার মন ভে’ঙোনা৷ মন ভাঙার কষ্ট-টা তুমি ভালো জানো। সেই কষ্ট আমায় দিও না।”
বলেই রাদ ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। রায়া স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রয়। রাদকে তো সে তেমন ভাবে কিছু বলেনি। শুধু বলেছিলো সে বিয়েতে রাজী ছিলো না। তবে কি রাদ তার ফোন থেকে কিছু বুঝতে পেরেছে! কাল তো রুমে এসে দেখেছে ফোন রাদের হাতে। রায়াকে দেখে ফোন রেখে দিয়েছিলো রাদ। এরপর ডিনার করতে গিয়ে ফোনের দিকে খেয়াল করেনি রায়া। এসে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। ফোনের কথা মাথায় আসতেই রায়া ফোন খুজতে থাকে বিছানায়। তখন তো রাদের ফোনে টাইম দেখেছিলো। রাদ ফ্রেশ হয়ে এসে রায়াকে বিছানা হাতরাতে দেখে জিগাসা করে,
” কিছু খুঁজছো?”
” হ্যা। আমার ফোন।”
” ওয়ারড্রবের উপর আছে৷”
রাদের উত্তরে রায়ার হাত থেমে যায়। সে সোজা গিয়ে ওয়ারড্রবের উপর থেকে ফোন টা নেয়। ফোন হাতে নিতেই দেখে বাবার অনেকগুলো মিসড কল,হিয়ার কল আর মেসেজ৷ হিয়ার মেসেজ ওপেন করে দেখতেই রাদের উদ্দেশ্যে রায়া বলে,
” বাবা-মা আজ আসবে এখানে। ”
রাদ টিশার্ট গায়ে জড়াচ্ছিলো। সে ঐ অবস্থাতেই বলে,
” জানি, গতকাল বাবা তোমায় ফোনে না পেয়ে আমায় ফোন করে জানিয়েছে। ”
” একবারও বললেন না তো!”
” আমি ভেবেছিলাম তুমি জানো।”
” ওহ। ”
রায়া ছোট্ট করে উত্তর দেয়। রাদ টিশার্ট পরে ফোন হাতে নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। যাওয়ার সময় বলে যায়,
” ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। ভাবী বোধ হয় একাই নাস্তা বানাচ্ছে সকালের। চাচীর প্রেশার একটু বেড়ে গিয়েছে। আমাদের বাসায় কাজের লোক নেই। যা করার আম্মু, চাচী আর ভাবী মিলেই করে৷ আম্মা একটু দেরি করেই উঠেন উনার পায়ের ব্যথার জন্য। তুমি গিয়ে সাহায্য করতে পারবে ভাবীকে? ”
” আমি কোনো রান্নাই জানিনা। ”
রায়া মাথা নিচু করে উত্তর দেয়। রাদ দরজার কাছে দাড়িয়ে রায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
” সমস্যা নেই। ভাবীর সাথে থাকতে থাকতে শিখে যাবে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো। আর ঘুমাতে ইচ্ছে করলে ঘুমাতে পারো। অনেকটা সকালেই উঠে পরেছো আজ। ”
” সমস্যা নেই, আমি ফ্রেশ হয়ে যাচ্ছি।”
রাদ মুচকি হেসে চলে যায়৷ রায়া ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। ফ্রেশ হয়ে সেও নিচে নেমে আসে। ড্রইং রুমে রায়ার শ্বশুর মশাই আর চাচা শ্বশুর একসঙ্গে সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন আর পেপারের পাতা উল্টাচ্ছেন। রায়া তাদের সালাম দিয়ে বলে,
” শুভ সকাল বাবা, শুভ সকাল চাচ্চু৷ ”
” শুভ সকাল আম্মু। ”
উনারা সমস্বরে উত্তর দেন। রায়া জাহিদুল সাহেবকে প্রশ্ন করেন,
” বাবা আজকে আব্বু আসবে। কিছু জানেন কি? ”
” হ্যাঁ আম্মু কথা হয়েছে। শাহীন আসবে সে উপলক্ষে রাদ আর ইহসাসকে বাজারেও পাঠিয়ে দিয়েছি। আর সকালেই আসতে বলেছি। এখানে এসে ব্রেকফাস্ট করবে। তুমি ফ্রেশ হয়েছো? ”
রায়া মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝায়। রুবেল সাহেব পেপার সেন্টার টেবিলে রেখে বলেন,
” এতো সকালে উঠলে কেনো আম্মু? একটু ঘুমাতে! ”
” চাচ্চু! এখন সকাল সকাল ঘুমাতে বলেন। ক’দিন পর বউ পুরাতন হলে আপনিই বলবেন বউ এতো বেলা করে ঘুমায়। ”
আনিকা হাতে কফির মগ নিয়ে আসতে আসতে পিছন থেকে কথাটা বলে। রুবেল সাহেব আনিকায় কথায় হেসে উঠেন। তিনি উত্তরে বলেন,
” আনিকা মামনি তো বিয়ে করে এবাড়িতে এসেছো চারবছর হলো! কখনও এমন বলতে শুনেছো বড় আম্মু? ”
” না, তা শুনিনি। কারণ আমি লেট করে উঠিইনি। মজা করলাম চাচ্চু। কিছু মনে করবেন না। ”
জাহিদুল সাহেব আর রুবেল সাহেব হাসলেন আনিকার কথায়। রায়া ড্রইং রুমের এক কোণায় দাড়িয়ে ওরনা আঙুলে পেচাচ্ছিলো। আনিকা সেদিকে খেয়াল করে রায়াকে বলে,
” ধরো, তোমার কফি৷ সকালে উঠে নিশ্চয় কফি খাওয়ার অভ্যাস তোমার?”
” জ্বি ভাবী। কিন্তু আপনি কেনো আনলেন? আমি কফি বানাতে পারি।”
” সমস্যা নেই, আজ আমি করে দিলাম। কাল তুমি বানিয়ে সবাইকে খাইয়ে দিও।”
রায়া আনিকার কথার উত্তরে মুচকি হাসে। আনিকা তার শ্বশুর মশাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
” বাবা তাওই মশাইয়ের কাছে ফোন দিন তো। শুনুন উনারা বেরিয়েছেন কিনা? ”
চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম। মাইগ্রেন নিয়ে সাফার করছি একটু। এজন্য ছোটো হয়ে যাচ্ছে। স্যরি।