#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ২৯
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৬৪,
সময়টা রাতের ২টো বাজে। ছাদের মিটিমিটি আলোয় ছাদে রাখা দোলনায় বসে আছে হিয়া। এটা তার বদঅভ্যেস। রাত বিরেতে মন খারাপ হলেই সে যেখানেই থাকুক, ছাদে উঠে বসে পরে। মন খারাপের গল্প গুলো আলো আধারের রাত্রীর মাঝে বিলিয়ে দেয়। আজ ভীষণ মন খারাপ হিয়ার। রাত পেরুলে দিন, এরপরই বিকেলে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। রাদ আর রায়া গিয়ে তাকে রেখে আসবে। সারারাতের জার্নি, দিনে একটু রাদের মামার বাসায় রেস্ট নিয়ে রাতের ফ্লাইটে সোজা কানাডায়। আগের সেই একঘেয়ে জীবনের সাথে আবার অভ্যস্ত হতে হবে। বাংলাদেশে কাটানো দিনগুলো সে ভুলবেনা। ঘোরাফেরা, আরাফাত, আফরা, রায়হানের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া দিনগুলো সে ভুলবেনা৷ সাথে এই বাড়ির মানুষগুলোকেও সে ভুলবে না। বড্ড অমায়িক মানুষ তার আপুর শ্বশুরবাড়ির। এতোটা মিল, সুখ, শান্তি বরাবর আজকাল কোনো পরিবারে দেখা যায় না। তাদের মাঝে সব থেকে বেশি হয়তো বিশেষ একজনকে মিস করবে হিয়া। বিশেষ একজন! শব্দটা হিয়া আনমনে ভাবলেও মষ্তিষ্কে তীক্ষ্ণ ভাবে গেথে পরলো হিয়ার। আসলেই বিশেষ মানুষ! হবে হয়তো। হিয়া হাটুর উপর হাত দিয়ে মাথা চেপে বসে আছে। আজ আকাশের বিশালতায় অন্ধকারে মন খারাপের গল্প উড়িয়ে দিয়েও তার মনের শান্তি আসছেনা। জীবনটা এমন কেনো! কিছু চাইতে বা পেতে গেলে ভয় আর দ্বিধায় পু”ড়তে হয় তাকে।
“এতোরাতে ছাদে আসতে ভয় লাগেনা তোমার?”
কারোর গলার স্বর শুনে মাথা তুলে তাকালো হিয়া। আবছা আলোয় দেখলো ইহসাস দাড়িয়ে টাউজারের পকেটে হাত গুজে। ইহসাসকে এতো রাতে ছাদে দেখে কিছু টা অবাক হয় হিয়া। সে ফোনে সময় দেখে নেয়। ২ঃ৪৭বাজে। সে আলতো স্বরে বলে,
“আপনি এতোরাতে এখানে?”
“সেই প্রশ্ন তো আমারও হিয়া।”
হিয়া উঠে দাড়ায়। আস্তে হেঁটে ছাদের রেলিং ঘেষে দাড়ায়। এরপর বলে,
“মানুষের কিছু বদঅভ্যেস থাকে। ধরতে পারেন এই রাত হলে মন খারাপ থাকলে ছাদে আসা আমার বদঅভ্যেস।”
ইহসাস নিঃশব্দে হেঁটে এসে হিয়ার পাশে দাড়ালো। এরপর পকেট থেকে হাত বের করে রেলিং উপর হাত দিয়ে ভর দিয়ে দাড়ালো। এরপর বললো,
“কিছু বদঅভ্যেস কে প্রশয় দিতে হয়না হিয়া। ”
“বাদ দিন। আপনি নিজেও তো এসেছেন।”
“আমি উঠেছিলাম তোমার সাথে কিছু কথা বলার জন্য। কিন্তু তোমার রুমের সামনে গিয়ে দেখলাম রুমের দরজা হাট করে খোলা। আর তুমিও রুমে নেই। নিচে গিয়ে চেইক করলাম। সেখানেও তুমি নেই৷ এজন্য ধাড়ণা করলাম হয়তো ছাদে থাকবে। আবার নাও থাকতে পারো, যেহেতু রাত অনেক। সন্দেহ মিটাতে আসলাম ছাঁদে। কিন্তু আশা ছিলো না তুমি এখানে থাকবে!”
“ওহহ।”
“হিয়া!”
ইহসাস কিছু টা কাতর স্বরে কষ্ট নিয়ে হিয়াকে ডাকে। ইহসাসের এমন কণ্ঠে ডাক শুনে সে ইহসাসের দিকে তাকায়। ইহসাস তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। আবছা আলোয় ওদের দুজনের চোখাচোখি ভালো করেই হলো। হিয়া বললো,
“কিছু বলবেন?”
“চলে যেয়ো না।”
“বললেই কি যাওয়া বাদ দেওয়া যায়! আমার গন্তব্য ওটা৷”
“তুমি জানো আমি তোমায় ভালোবাসি।”
“ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায় মিঃ ইহসাস?”
“আমার নাম ইহসাস হিয়া, অর্থটা উপলব্ধি। সেই আমি উপলব্ধি করতে পারবোনা নিজের অনুভূতি! এতোটা অবুঝ নই আমি হিয়া।”
“আচ্ছা বুঝলাম।”
“উত্তর দিলে না?”
“কীসের?”
“বললেনা ভালোবাসো কিনা!”
“কি জানি! আমি তো আর ইহসাস নই, যে নিজের অনুভুতি বুঝতে পারবো।”
“হেয়ালি করো না হিয়া। আমি তোমার মতামত জেনে আমি বাবা মাকে বিয়ের কথা বলবো।”
“একটা গল্প শুনবেন?”
“বলো!”
“একটা মেয়ে আজ থেকে ২০বছর আগে জন্ম নিয়েছিলো জানেন। বাবা মায় চাননি সে আসুক। মেয়েটার বাবা মা তার বড়ো ভাই আর বোনকে নিয়েই হ্যাপি ছিলো। মেয়েটা এসে তাদের হ্যাপি ফ্যামিলির মাঝে বারতি সন্তান হলো। মায়ের কাছে তার জন্য সময় ছিলো না, বাবার কাছেও না।মেয়েটা বাসার মেইডদের কাছে বড়ো হতে লাগলো। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে বাবা মায়ের এই তার প্রতি অবঙ্গা বুঝতে পারলো। এরপর নিজের একাকিত্ম মানতে না পেরে যখন বাবা মায়ের কাছে প্রশ্ন করলো। তাদের উত্তর ছিলো মেয়েটা তাদের আনএক্সপেক্টেড চাইল্ড। যে ছিলোই আনএক্সপেক্টেড, সে কি করে বাবা মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার আশা রাখে। মেয়েটার সব আবদার জমা হতো বড়ো বোনের কাছে। বড়ে বেনও তো ব্যস্ত মানুষ। চাইলপও সব আবদার মিটাতে পারতো না। মেয়েটা অভ্যস্ত হয়ে যায় নিজের একাকিত্বে। কারোর কাছে কিছু চাইতো না, আশা রাখতো না। কারণ সে জানে, সে কিছু চাইলে হয়তো জিনিসটা হারিয়ে যায় নয়তো ফুরিয়ে যায়। তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস সে কখোনোই পায় না৷ সে কি করে কাউকে ভালোবাসতে পারে বলুন! সে তো ছোটো থেকে একা থেকেই অভ্যস্ত। ভালোবাসা অনুভূতি টা তার বোঝার মতো মন টা তার ভিতরে নেই। তার ভিতরের অনুভূতিরা মৃ”ত প্রায়। সে আশা করেইনি কখনও যে তাকে কেউ ভালোবাসবে!”
৬৫,
একদমে কথাগুলো বলে থামলো হিয়া। ইহসাস মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো। এরপর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
“বুঝতে পেরেছি মেয়েটার মনে হারানোর বা না পাওয়ার ভয় টা আছে। তবে সে যদি অনুমতি দেয়, তবে তাকে নিজের করে হারানোর ভয় টা দূর করে দিতে রাজী ছেলে টা। তার একাকিত্বের সঙ্গী হতে, তার সব আবদার মেটানোর চেষ্টা করতে ছেলেটা একপায়ে রাজী৷”
“মেয়েটা কে বুঝতে পেরেছেন?”
ইহসাস হিয়ার এই কথায় হিয়ার বাহুতে হাত দিয়ে হিয়াকে নিজের দিকে ঘোরায়। এরপর বলে,
“চাঁদের কলঙ্ক থাকে, চাঁদকে চিনতে মানুষ ভুল করেনা।”
“চাদের অস্তিত্ব তো সেই কিছু সময়ের জন্য। এরপর তো সে দিনের আলোয় মিলিয়ে যায়।”
হিয়া ইহসাসের চোখে চোখ রেখে কথাটা বললো। ইহসাস হালকা হেসে বললো,
“দিনের আলোয় চাঁদ হারাবে, হারাক না। তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে হারিয়ে যেতে দিবো। সে হারাবে ভালোবাসার আলোয়।”
“কথাগুলো সিনেমা বা উপন্যাসে মানায় ইহসাস সাহেব। বাস্তব জীবনে নয়!”
“হোক না কিছু ভালোবাসা উপন্যাসের পাতা। মানুষ পড়বে, ভালোবাসতে শিখবে, আর নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে আগলানোর।”
হিয়া ইহসাসের হাত সরিয়ে দেয় নিজের বাহু থেকে। হাটা ধরে নিচে যাবে বলে। যেতে যেতে বলে,
“রুমে যান, ঘুমিয়ে পরুন।”
“আমি আমার উত্তর পেলাম না হিয়া!”
“উত্তরটা হিয়ার হিয়ারও অজানা।”
“তবে আমি অপেক্ষা করতে রাজী হিয়া।”
“দেখা যাক কি হয়৷”
হিয়া কথাটুকু বলেই ছাদ থেকে বেরিয়ে গেলো। ইহসাস ওখানেই নিজের স্থানে দাড়িয়ে বড়ো করে নিঃশ্বাস নিলো। এরপর বিরবির করে বললো,
“আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা সত্যি। আর এই ভালোবাসা আপনাকে আমার বাঁধনে বাঁধবে হিয়া৷ আই প্রমিজ, আমি আপনাকে ঠিক আমার করে নিবো। শুধু উপরওয়ালা আমার সহায় হলে হয়।”
পরেরদিন সকালবেলায়,
নাস্তার টেবিলে বসেছে এহসান পরিবারের সবাই, সাথে বসেছে হিয়া। সবাই মাথা নিচু করে খাচ্ছে। জাহিদুল সাহেব পরোটা ছিড়ে সবজি দিয়ে মুখে দিতে দিতে বললেন,
“হিয়া মা!”
হিয়া উনার মুখে নিজের নাম শুনে মুখ তুলে তাকালো। সে মুখে স্যান্ডউইচের বাইট দিয়েছে মাত্র। না চিবিয়েই সে কোনো রকম বললো,
“জ্বি আংকেল?”
এহসান পরিবারের সবাই খাওয়া রেখে জাহিদুল সাহেব কি বলেন তা শোনার জন্য উনার মুখপানে তাকিয়ে আছে। উনি মুখের খাবার শেষ করে বললেন,
“তোমরা এভাবে খাওয়া বন্ধ করে তাকিয়ে আছো কেনো? খাও! আমি হিয়ার সাথে কথা বলবো, তোমাদের সাথে না।”
উনার কথায় সবাই নিজেদের খাওয়া শুরু করলো আগ্রহ দমন করে। হিয়া জাহিদুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে মুখের খাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে শেষ করার। কিন্তু উনি কি বলবে এই চিন্তায় খাবার গলা দিয়ে নামছে না। গতকাল রাতে ইহসাসের সঙ্গে তাকে দেখেছেন নাকি উনি! এই ভয়েই হিয়ার আত্মা ভেতরে যেনো শুকিয়ে গেছে। কারণ সে ছাদ থেকে নামার সময় দেখেছিলো, উনাদের রুমের দরজা খোলা। জাহিদুল সাহেব সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বললো,
“আর কিছুদিন থেকে গেলে হয়না মা?”
হিয়া হাফ ছেড়ে বাচে। ইহসাসের এতোক্ষণ হেল দোল ছিলো না কোনো। এইম প্রশ্নের উত্তরে হিয়া কি বলে! এই আশায় সে করুণ চোখে হিয়ার দিকে তাকায়। আর ইহসাসের এই করুণ চাহনী লক্ষ্য করছে টেবিলে বসা আরও একজোড়া চোখ। রায়া খাবার চিবুতে চিবুতে দেখছে ইহসাসকে। বোঝার চেষ্টায় আছে হিয়ার জন্য ইহসাসের অনুভূতি। ইহসাসকে দেখার পাশাপাশি রায়া হিয়ার দিকে তাকায়। হিয়া ইহসাসের চাহনী লক্ষ্য করে সেই কখন চুপসে মাথা নিচু করে বসে আছে। মানা করতে যেনো বুক কাপছে হিয়ার। রায়া যা বোঝার বুঝে নেয়। সে যে দহনে পু”ড়ছে রোজ। সেই দ”হনে বোনকে পু”ড়তে কিছুতেই দিবেনা। সে খাওয়ার মাঝেই হিয়া জাহিদুল সাহেবের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই বলে,
“বাবা আমার একটা কথা বলার ছিলো।”
“কি কথা রায়া মা?”
জাহিদুল সাহেব প্রশ্ন করলেন। রাদের বোধগম্য হচ্ছে না রায়া কি বলবে! হিয়াও বোনের দিকে তাকায় কি বলে এটা শোনার আশায়। রায়া ইহসাস আর হিয়াকে এক নজর দেখে বলে উঠে,
“ইহসাস আর হিয়ার বিয়ে হলে কেমন হবে বাবা?”
রায়ার এই কথায় উপস্থিত সকলে যেনো বিস্ময়ের ঘোরে চলে গেছে। হিয়ার তো বোনের কথায় বিষম শুরু হয়ে গেছে। এটা কি বললো রায়া!
চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। বড়ো করে দিলেও যে রেসপন্স, ছোটো দিলেও সেই একই। একঘন্টায় বড়োজোর ১২০০+শব্দ টাইপ সম্ভব হয়। ঠিক করেছি বাকি পর্ব এভাবেই দিবো। আসসালামু আলাইকুম।