হৃদমাঝারে পর্ব -১৭

#হৃদমাঝারে – [১৭]

১২,
অর্ণার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন তারপরেই অর্ণার বিয়ে। শিকদার বাড়ি জুরে খুশির আমেজ। আজ রাতে রওনাক তার বন্ধুদের মিলে ডিনারপার্টির আয়োজন করেছে। কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে সবাই মিলে ডিনার করবে আজ। অর্ণা রেডি হচ্ছে, কিছুক্ষণ পর রওনাক ওকে নিতে আসবে। নীল কালারের শাড়ি, গলায় কানে সামান্য জুয়েলারি। মাথার চুলগুলো খোলা আর দু-হাতে নীল চুড়ি। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে পিংক কালারের লিপস্টিক। মাশাআল্লাহ বেশ লাগছে অর্ণাকে। আয়না নিজেকে আরো একটা পরিদর্শন করে বিছনা থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাওনাকের নাম্বারে কল করলো,

– হ্যাঁ রওনাক, কতদূর তুমি?

– এইতো পৌঁছে গেছি। তুমি বাসার সামনে এসো।

কল কেটে দেয় অর্ণা। তারপর মুনের নাম্বারে ডায়াল করে। পরপর দুইবার রিং হয়ে যাওয়ার পরেও যখন মুন কল রিসিভ করলো না তখন বিরক্ত হয়ে মুখ দিয়ে একটা বিরক্তিকর শব্দ বের করে। মোবাইলটা হ্যান্ড পার্সের ভিতরে রাখতে রাখতে বলে,

– এই মেয়েটার কোনদিনও কান্ডঞ্জান হবে না। আরে ভাই সারাক্ষণ কি শুধু পেশেন্ট আর নার্সিংহোম নিয়ে পরে থাকলে হবে। নিজেরও তো একটা লাইফ আছে। নিজের সখ আহ্লাদ বন্ধুই সব বাদ দিয়ে কি শুধু পেশেন্ট নিয়ে পরে থাকলে হবে। নিজের মনে বকবক করতে করতে চলে যায় অর্ণা।

বাসার সামনে এসে দাঁড়াতেই একটা রেড কালারের গাড়ি এসে থামে ওর সামনে। অর্ণা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাড়িটার দিকে। গাড়ি থেকে একটা সুদর্শন যুবক বের হয়ে আসে। সাদা শার্টের উপর নীল কালারের কোট। মাথায় স্পাইক করা চুল হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি। অর্ণা যুবকটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যুবকটাও অর্ণার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। দুজন যেন দুজনের চোখে হাড়িয়ে যায়। ঘোরের মাঝে কখন যে যুবকটা অর্ণার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতেই পারে নি। যুবকটা অর্ণার খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। তার উত্তাপ নিঃশ্বাস পরছে অর্ণার মুখে। হুস ফিরে অর্ণার। পরপর কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে আমতা আমতা করে বলে,

– ভিতরে যাবে না তুমি রওনাক?

– আজ নয়, একেবারে বর সেজে তোমার বাসায় যাব আর তোমাকে নিয়ে পালাবো। স্মিত হেসে বলে রওনাক।

রাওনাকের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় অর্ণার গালদুটো। লজ্জারাখা মুখ করে বলে, কি যে বলো না তুমি রওনাক।

– তোমাকে নিয়ে পালাতে চাইছি তাই এতো লজ্জা পাচ্ছো। অর্ণা, এখনি এত লজ্জা পেও না। কিছু তো রেখে দাও আমাদের বাসর রাতের জন্যে। অর্ণার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয় রওনাক। আর অর্ণা লজ্জায় নিজের মুখ লুকাতে ব্যাস্ত।

নিজেদের ব্রাঞ্চে বসে কাজ করছিলো ফারহান। আজকাল ওর কাজের প্রেশার একটু বেশী। এনআর নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে প্রায় সব প্রমান হাতে পেয়েগেছে। এখন শুধু ডক্টর ইমরান খানকে এরেস্ট করার পালা। পলাশ এসে দাঁড়ালো ফারহানের সামনে। ফারহান লেপটপে চোখ রেখে বলল,

– কিছু বলবে পলাশ?

– স্যার, এনআর নার্সিংহোমের চেয়ারম্যান ডঃ আনোয়ারা শিকদার বেচে আছে।

– হোয়াট?? পলাশের দিকে মুখ করে তাকায় ফারহান। তুমি কি বলছো জানো?

– জ্বি স্যার। আর এটাও জানি সে এখন কোথায়?

– ওকে। তাহলে তাকে নিয়ে এসো।

পলাশ চলে যাওয়ার জন্যে সামনের দিকে পা বাড়াতেই পিছন থেকে ফারহান ডেকে উঠে। পলাশ ফারহানের দিকে ঘুরে তাকাতেই ফারহান বলে,

– আমি একটু বাহিরে যাব, তুমি যাবে আমার সাথে?

– কোথায় স্যার?

– ডিনারে।

– স্যার আপনি যাবেন ডিনারে। একা? না মানে আপনি তো আবার মেয়েদের থেকে দূরে থাকেন তাই বলছি গার্লফেন্ড তো নাই তাই আমাকে নিয়ে যাবেন। সরি স্যার, আমরা তো সেইম লিঙ্গ, আমি কোম্পানি দিলে এটা আপনার ভালো লাগবে না।

– পলাশ। ধমকে উঠে ফারহান। তোমাকে যেটুকু বলেছি সেটাই করো। সব সময় এত বেশী বকো কেন? রওনাক ডিনারের আয়োজন করেছে।

– ওকে স্যার। চলুন তাহলে।

সবাই একটা রেস্টুরেন্টে এসে একত্রিত হয়। রওনাক ফারহান পলাশ ফারহানের দুই কাজিন। শুধু মুনই আসে নি। ফারহান এদিক ওদিক তাকাচ্ছে তো আবার আড় চোখে অর্ণার দিকে তাকাচ্ছে। আচ্ছা মুন আসছে না কেন? তাহলে কি ম্যাডাম আসবেন না। অর্ণাকে জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সরাসরি জিগ্যেস করতেও পারছে না। তখনি রওনাকে বলে উঠলো,

– এই তোমার বোনটা এখনো আসছে না কেন? মুনকে একটা কল করো তো?

রওনাকে কথামতো অর্ণা মুনের নাম্বারে কল করে। রিং হতেই ওপাশ থেকে মুন কলটা রিসিভ করে। অর্ণা বলে উঠে,

– তুই কখন আসছিস? দেখ আমরা সবাই কিন্তু পৌঁছে গেছি। শুধু তোর জন্যে খাবার অর্ডার করতে পারছি না।

– সরি বোন। আমি আসতে পারবো না রে। একটা জরুলি কাজে আটকে গেছি।

– আসতে পারবি না মানে কি? তুই তো বললি সময়মতো পৌঁছে যাবি।

– আমার একটা জরুলি কাজ পরেগেছে তাই আসতে পারবোনা।

অর্না আর কিছু না বলে কলটা কেটে দেয়। কলটা এতক্ষণ লাউডস্পিকারে ছিলো তাই সবাই সবটা শুনতে পেয়েছে। ফারহান নিজের মনে মনে বলে উঠে,কি এমন জরুলি কাজ ম্যাডামের যে আসতেই পারবে না। তাকে একপলক দেখার জন্যে আমি সব কাজ ফেলে চলে আসলাম আর সেই আসবে না।

রওনাক খাবার অর্ডার করলে ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে যায় তারপর সবাই মিলে একসাথে খাওয়া শুরু করে। খাওয়া প্রায় শেষ এমনি সময় পলাশের চোখ পরে রেস্টুরেন্টের গেটের দিকে। মুন আসছে সাথে আরো একটা মেয়ে। পলাশ খাওয়া বাদ দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। না মুনের দিকে নয় সে তাকিয়ে থাকে মুনের সাথে থাকা মেয়েটার দিকে। টপ আর জিন্স প্যান্ট পরা মেয়েটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে। পলাশকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারহান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। তারপর ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় ফারহান। অস্ফুটভাবে বলে, মেহরিমা।

– এভাবে কি দেখছো ফারহান? খাবারটা শেষ করো?

– মেয়েটা!

– হুম মেয়েটা সুন্দর স্মার্ট সেটা আমিও দেখতে পাচ্ছি। তাই বলে তুমি এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি? আগে খাবারটা শেষ করো। চাপা গলায় বলল ফারহান।

– না স্যার। ফারহানের আরো কাছে গিয়ে বসলো পলাশ। তারপর ফিসফিস করে বলল, স্যার আমি ওই মেয়েটাকে দেখছিলাম। আপনি জানেন স্যার এটাই সেই মেয়ে! ডক্টর ইমরান খানের বাড়িতে যে আমাদের হেল্প করছিলো।

– তুমি তো বলেছিলে সে একটা কাজের লোক ছিলো।

– সেটাই তো আমিও ভাবছি। বাড়িতে কাজের লোক আর এখানে মালকিন! আশ্চর্য, স্যার আমার মাথায় কিছুই ডুকছে না।

– তোমার এই ছোট মাথায় এত চাপ নিপ না পলাশ। আমি দেখছি। তুমি খাও তো এবার।

পলাশ আবার খাওয়া শুরু করে। ফারহান রওনাককে উদ্দেশ্য করে বলে,

– হেই রওনাক তুই এখানে বসে ডিনার করবি আর তোর শালিকা ওখানে একা বসে থাকবে ব্যাপারটা খারাপ দেখায় না বল?

ফারহানের কথা শুনে সবাই মুনের দিকে তাকায়। অর্ণা তো রেগে একাকার। টিসু দিয়ে হাত পরিষ্কার করে মুনের সামনে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে,

– এই তোর ইম্পরট্যান্ট কাজ।

অর্ণার কথা শুনে পাশ ফিরে তাকায় মুন। তারপর আমতা আমতা করে বলে, না আসলে, হয়েছে কি?

– কি হয়েছে বল। আমাকে কেন মিথ্যে বললি।

– অর্ণা আমি এখানে একটা কাজে এসেছি। তুই যা না তোর নিজের কাজ করো। প্লিজ অর্ণা এখানে সিনক্রিয়েট করিস না।

মুনের কথা শুনে অর্ণা রেগে সেখান থেকে চলে যায়। তারপর মুন দু-কাপ কফি অর্ডার করে মেয়েটার সাথে কথা বলতে থাকে। ফারহান ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলার ফাঁকেফাঁকে আড় চোখে মুনের দিকে তাকাচ্ছিলো। এদিকে মুনের কথা বলা শেষ হলে মেয়েটা চলে যায় আর মুন এসে দাঁড়ায় অর্ণার সামনে। মুনকে দেখে অর্ণা অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।

চলবে,,,,,,, [ইনশাআল্লাহ]

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here