#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০২
#মোহনা_হক
‘রুয়াতের আর আয়াজের বাগদান সম্পন্ন হবে আজ। সে হিসেবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। হান্নান সাহেব ফজলুল চৌধুরীর কথাটি মেনে নিলেন যেহেতু তিনি আর আয়াজ তার আবদারটি রেখেছে।
অবশ্য ফজলুল চৌধুরী মেহরুবা ফাইরোজের কাছেও জিগ্যেস করেছেন তিনিও সম্মতি দিয়েছেন। তাই তারা শুভ কাজের প্রমাংশ সেরে ফেলতে চান আগেই। সবার মনেই খুশির জোয়ার বইছে। হান্নান সাহেবের কষ্ট হলেও তিনি কাউকে বুঝতে দেয়নি।’
‘সন্ধ্যায় আরহাম মায়া চৌধুরী কে নিয়ে মজুমদারদের বাসায় আসে। আয়াজ চায় তার জীবনের এই শুভ মুহূর্তে তার মা যেনো তার পাশে থাকে।’
‘মায়া চৌধুরী এসেই সবার আগে রুয়াতের কাছে গেলো।’
‘রুয়াত তার মায়ের ঘরের এক কোণায় চুপ মেরে বসে আছে। সবাই সবার মতামত নিয়ে রাজি হলো কিন্তু যে সংসার করবে তাকেই কিছু জিগ্যেস করলো না। নাহ এই বাসায় রুয়াতের কোনো দাম নেই আজ বুঝলো সে। আজই কেনো বাগদান সম্পন্ন হতে হবে। দু’টো দিন পরে হলে কি হতো? তখন আয়াজের কথার যথাযথ উত্তর দিলে হয়তো আজ এমন দিন দেখতে হতো না। আনমনে বসে এসব ভাবছে রুয়াত।’
-‘ আসবো রুয়াত?’
‘কারও কন্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকালো। মায়া চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। হড়বড় করে উঠে দাঁড়ালো সে। অপ্রস্তুত হয়ে বললো-‘
-‘আসসালামু আলাইকুম। আসুন আন্টি।’
‘মায়া চৌধুরী হেসে ভিতরে ঢুকলেন। হাতে কিছু ব্যাগ। রুয়াতের জন্য সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে এনেছেন। তার একমাত্র আদরের ছোট ছেলের বউ বলে কথা।’
-‘কেমন আছো মা?’
-‘ ভালো আছি আন্টি। আপনি কেমন আছেন?’
-‘এইতো মা ভালো আছি। মুখটা এতো শুকনো শুকনো লাগছে কেনো বলো তো? খাওয়া দাওয়া করো না ঠিক মতো?’
‘রুয়াত মাথা নিচু করে ফেললো। মায়া চৌধুরী রুয়াতের বিষয়ে আগে থেকেই অবগত তিনি। মেয়েটা যে বড্ড সহজ সরল লাজুক স্বভাবের এটা তিনি জানেন। একদিকে তার ছেলে গম্ভীর টাইপের আর অন্য দিকে তার বউ কথা কম বলা।
এ দু’জনের আসলে ভবিষ্যতে হবে কি, তা বোঝা দায়।’
-‘ অনেকদিন তো হয়েছে আমাদের বাসায় যাও না। কেনো যাওনি?’
‘রুয়াত নিচু স্বরে উত্তর দিলো।’
-‘আন্টি সামনে তো পরীক্ষা। তাই কোথাও তেমন একটা যাওয়া হয়না।’
‘মায়া চৌধুরী হেসে বললেন-‘
-‘পরীক্ষার পর যাবে তো?’
‘রুয়াত মাথা তুলে তাকালো মায়া চৌধুরীর দিকে। তার আসলে এই মুহুর্তে কি বলা উচিৎ ভেবে পাচ্ছে না।’
-‘পরীক্ষার পর তো আমাদের বাসায় একেবারের জন্য চলে যাবে। থাক এর উত্তর আমিই নাহয় বলে দিলাম।’
-‘জ্বী। ‘
‘মায়া চৌধুরী কিছু বলবেন তার আগেই ইনিমা এসে হাজির। তার কোলে আবার জাফরি পুচকে ও আছে।’
-‘মা আপনি কিছু না খেয়ে একদম উপরে চলে এসেছেন রুয়াতের সাথে কথা বলার জন্য। আসুন কিছু খাবেন চলুন।’
‘মায়া চৌধুরী ইনিমার কোল থেকে জাফরি কে নিলো।’
‘-আমার নতুন পুএবধুর সাথে একটু আলাপ করছিলাম। আর জাফরি তোমার কোলে কেনো? ওর বাবা কোঁথায়? এ কেমন বাবা যে নিজের মেয়ে কে কোলে নেয় না। সে কি দেখছে না তুমি কাজ করছো। ওকে নিয়ে কি পারো এতোকিছু করতে?
-‘না মা আসলে সে তো অফিস শেষ করে আপনাকে নিয়ে সোজা এ বাড়িতে চলে এসেছেন। টায়ার্ড হয়তো। অবশ্য বলেছে মেয়েকে তার কোলে দেওয়ার জন্য আমিই দেইনি। রেস্ট করুক একটু।’
‘মায়া চৌধুরী রুয়াত কে নিয়ে নিচে আসলো। নিচে সবাই বসে কথা বলছে। হঠাৎ আয়াজের চোখ গেলো রুয়াত ও তার মায়ের দিকে। তাড়াতাড়ি নিজের ফোনটা বের একটা এতো সুন্দর মুহুর্তের একটা ছবি তুলে ফেললো। কি সুন্দর করে তার প্রেয়সী নামছে। মেয়েটা কে খুব বেশি সুন্দর মনে হলো আয়াজের কাছে। মায়া মায়া প্রেয়সী তার।’
‘আয়াজ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশ থেমে আরহাম আস্তে করে বললো-‘
-‘এভাবে তাকিয়ে থাকিস না। নজর লাগবে তো আমার শালীকার।’
‘আয়াজ আরহামের কন্ঠস্বর শুনে তাকালো সেদিকটায়। ভাইয়ের এসব কথায় বিরক্ত সে।’
-‘আগে তোমার একমাত্র শালীকা ছিলো। তখন দেখা হলেও কখনো কথা বলতাম না। কিন্তু এখন সে আমার বাগদত্তা। তাকাতে পারিই আমি।’
‘আরহাম মুখটা ঘুরিয়ে ফেললো। এখনো বাগদত্তা হয়নি তার আগেই এসব বলে বেড়াচ্ছে।’
-‘এখনো হয়নি। তাই আগে আগে এসব বলে বেড়িও না বুঝেছো। যখন হবে তখন বলবে। তুমি দেখছি কেমন জানি। ‘
‘আয়াজ অতিমাত্রায় বিরক্ত তার ভাইয়ের এরকম অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে। এমনিও আরহাম তার পিছনে সারাক্ষণ পড়ে থাকে। এখনো ছাড় দিলো না। ঘরের শত্রু বিভীষণ। ‘
-‘তোমার মনে হচ্ছে না তুমি বেশি কথা বলছো? যাও এখন গিয়ে তোমার শালীকা কে এনে আমার পাশে বসাও।’
-‘শুনো এমপি সাহেবে এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা দেখানো উচিৎ না। পরে হিতে বিপরীত হলে তোমারই দোষ।’
-‘বেশি কথা বলছো আজকাল। আর আমার প্রেয়সীর সামনে এমপি সাহেব বলবে না। তার আবার পলিটিক্যাল কোনো বিষয় পছন্দ না। এমনিও সে রাজি না।’
‘আরহাম আয়াজ একটু জ্বালানোর জন্য বললো-‘
-‘তাহলে তুমিই জোর করে এমন করছো বুঝেছি এখন। এতো বড় একজন সম্মানীর ব্যক্তি হয়ে লাভ কি হলো? নিজের প্রেয়সীর কাছেই তো মান সম্মানটা রাখতে পারলে না।’
‘আরহাম উঠে রুয়াত ঠিকই আনলো কিন্তু আয়াজের পাশে বসতে না। উল্টো তার পাশে বসালো। আয়াজ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। তার ভাই যে এমন করবে মোটেও ভাবেনি। তাহলে উপরোক্ত বাক্যটিই সঠিক ঘরের শত্রু বিভীষণ। ‘
‘দীর্ঘ দু বছর সাত মাস ভালোবাসার পর আজ আয়াজ রুয়াত কে তার বাগদত্তা হিসেবে পেয়েই গেলো। নিজেকে বড্ড সুখী মানব মনেহচ্ছে।’
‘আয়াজ একটু রুয়াতের সামনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বললো-‘
-‘রিংটা কিন্তু আমার নামে পড়ানো হয়েছে। এই দু মাসে নিজেকে প্রস্তুত করে নিবেন রুয়াত ফাইরোজ তয়ত্রী। ‘
‘ অতঃপর রুয়াতের হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। আয়াজের বলা কথাগুলো ভাসছে রুয়াতের কানে। সব ঘোলাটে লাগছে তার কাছে।
সেই রিংটার দিকে এক নাগাড়ে চেয়ে আছে। যার সাথে কখনো কথাই হয়নি, যে কখনো কথা বলতে আসেনি, আজ হঠাৎ তার নামে রিং পড়িয়ে দিলো। আশ্চর্যজনক ঘটনা। রুয়াতের ক্ষুদ্র মনে হাজার হাজার অনুভূতি এসে জমা হচ্ছে। এক অন্য রকম অনুভূতি। যা আগে কখনো হয়নি। রুয়াতের মনে সৃষ্টি হওয়া অনুভূতি কি তাহলে আয়াজের জন্যই। সে এখন অন্য কারো ভবিষ্যৎ সম্পদ। কাল ও তো জানত না যে আজই তার জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হবে। আয়াজ তাকিয়ে আছে
তার প্রেয়সীর দিকে। মনের দিক থেকে বলতে গেলে আজ সে ভীষণ খুশি। নিজের ভালোবাসা কে পাওয়ার মতো অমৃত শান্তি আর কোথাও নেই। একদিন রুয়াতের ও তার মতো এমন ভালোবাসা জন্মাবে। রুয়াত ফাইরোজ ও একদিন আয়াজের ভালোবাসায় মত্ত থাকবে।’
‘রুয়াত রিংটার দিকে তাকিয়ে একবার আয়াজের দিকেও তাকালো। লোকটার নামে সে আজ রিং পড়েছে। আয়াজের দিকে তাকালেই বুকটা ধক করে উঠলো তার। প্রেয়সীর এহেন চাহনি সহ্য হলো না প্রেমিক পুরুষের। মাতাল করা চাহনি তার প্রেয়সীর। চোখটা সরিয়ে ফেলছে সে।’
‘হান্নান সাহেব কাউকেই যেতে দিচ্ছেন না রাতের খাবার না খাওয়া ছাড়া। তাই সবাই ঠিক করেছে রাতের খাবার খেয়েই তবে যাবে। কিন্তু এদিকে আয়াজের তো তার কাজ ফেলে এভাবে এতোক্ষণ বসে থাকা ঠিক না। সে বসেও থাকতে পারছে না। অনেকক্ষন ধরে কেউ একজন কল দিয়েই যাচ্ছে। তবে সময় পাচ্ছে না রিসিভ করার। এতো মানুষের সামনে সে কলটা রিসিভ করতে পারছে না। সে খুব ভালো করেই জানে এখন ইমারজেন্সি কিছু না হলে কল আসবে না। একবার সবার দিকে তাকিয়ে বাসার বাহিরে চলে আসলো সে।’
‘সাহেদ কল দিচ্ছে। আয়াজের সব গোপন খবর সে ই বহন করে। আয়াজ নিজেকে তটস্থ রেখে কলটা রিসিভ করলো-‘
-‘সাহেদ কিছু হয়েছে কি? কেনো কল দিচ্ছো বার বার?’
‘অনেকক্ষণ যাবত চেষ্টা করার পর স্যার কল ধরেছে। ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। গোপন সূত্রে কিছু জানতে পেরেছে।’
-‘স্যার আপনি এখন কোথায়?’
-‘ একটু গুরুত্বপূর্ণ কাজে আছি। কি হয়েছে বলবে তো?’.
‘সাহেব ব্যস্ত স্বরে বললো-‘
-‘স্যার ইকরামুল তাহের নতুন কিছু করবেন। অপর দলের লোকেরা কিছু ভাবছেন। যার সর্ব প্রথম প্রভাব পড়বে আপনার উপর। নিজেকে হেফাজতে রাখার চেষ্টা করুন।’
‘প্রথমে সাহেদের কথা শুনে কপাল ভাঁজ পড়লো তার। এরকম অনেক দোলের লোকেই তাকে তার জায়গা থেকে সরানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু বরাবরের মতো ফল শূন্যই এসেছে। রাজনীতি তে প্রথম প্রথম যোগ দেওয়ার অপর দলের প্রভাব খুব বাজে ভাবে পড়লেও এখন দ্বিধাবোধ করে না এসব বিষয় নিয়ে। বার বার এমন আক্রমণে এখন পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছে তার মন, শরীর। এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না এখন আর।’
-‘তুমি নিশ্চিন্তে থাকো সাহেদ। আমার কিছুই করতে পারবে না তারা। আর ইকরামুলের এখনো এতো বড় সাহস হয়নি যে আয়াজ কে কিছু করবে। করলেও তাকে একদম গোড়া থেকে উপড়ে ফেলবো।’
‘জাতির কাছে আয়াজ ত্বায়ীম চৌধুরী একজন সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ। কিন্তু যারা তার ক্ষতি করতে চায় তাদের কাছে ভয়ংকর দানবের মতো। কেউ যদি মুখে মধু অন্তরে বিষ ঢালতে চায় তাহলে সে ও ঠিক তাই করে। কাউকে এক চুল পরিমাণ ছাড় দেয়না।’
‘সাহেদের মন শান্ত হতে পারছে না। কিছুটা রহস্যময় থেকেই গেলো। কিন্তু আয়াজের এমন কান্ডে সে খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো। বার বার আক্রমণ করার পর ও স্যার তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন। পরে তো তাদের দলের লোকদের জীবন বাঁচানো দুষ্কর হয়ে যাবে। শুধু যে আয়াজের উপর ইফেক্ট পড়ে তা না আয়াজের পুরো দলের উপর পড়ে।’
-‘স্যার কালকের মিটিং এ থাকবেন?’
-‘অবশ্যই থাকবো।’
-‘আচ্ছা ঠিক আছে স্যার।’
‘আয়াজ ফোন রেখে দিলো। কখনো দু দন্ড শান্তিতে থাকতে পারে না সে। এই রাজনীতি করে অ’কারণেই কিছু কিছু মানুষের চরম শত্রু হয়ে গিয়েছে। আজ তার এমন একটা বিশেষ দিনে এই খবর শুনতে হলো। যদি ইকরামুল তাহের কোনো কিছু করার চেষ্টা করে তাকে কখনো ছেড়ে দিবে না। সব সময়ের মতো চুপ করে থাকবে না। লোভ জিনিসটা মানুষের খুব বেশি। এই লোভের জন্য মানুষ কতো খারাপ খারাপ কাজ করে ফেলে। আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে মানুষই একমাত্র জীব যে অন্য কোনো মানুষের ভালো চায় না। ভালো দেখতে পারে না। এক ঘন নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো আয়াজের।’
‘সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো। তবে ইনিমা আর জাফরি থেকে গেলো। তারা কিছুদিন থেকে তারপর যাবে। সবাই হাসি মুখে বিদায় নিলো। রুয়াতের কাছ থেকেও সবাই বলে গেলো। কিন্তু আয়াজ কিছু বললো না। এটা আসলে বুঝতে পারলো না রুয়াত। হান্নান মজুমদার ও তার স্ত্রী কে ও বললো সে। তবে তার হবু স্ত্রী কে কিছু না বলে চলে গেলো।’
‘আয়াজ কখনোই চায় না রুয়াত কে তার জন্য বিব্রতবোধ অবস্থায় পড়ুক। সে খুব ভালো করেই জানে রুয়াত এখন তার সাথে মোটেও কথা বলতে চাইবে না। উল্টো লজ্জা পাবে। যদি আলাদা একান্ত কিছু মুহুর্ত তাদের দেওয়া হতো তাহলে কথা বলা যেতো। সবার সামনে আলাদা করে রুয়াতের কাছ থেকে বিদায় নিবে এটা তার নিজের কাছেও ভালো লাগবে না। আর সে জায়গায় মেয়েটার থেকে কথা বলা আশা করা দায়। কখনো রুয়াতের সাথে কথা না বললেও মাঝে মাঝে যখন তাদের বাসায় যেতো চুপচাপ করে তার বোনের আশেপাশে ঘুরঘুর করত। এসব বিষয় খুব ভালো করেই খেয়াল করত সে। এদিক বিবেচনা করে তাই আর রুয়াতের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া হয়নি।’
(*)
‘আজ তিনদিন পর রুয়াত কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলো। তার কলেজ যেতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু একদিকে তার অনেক পড়া মিস হয়ে যাচ্ছে আরেক দিকে তার প্রিয় বান্ধুবী জ্বালিয়ে মারছে কলেজে আসার জন্য। নিজের মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করেই কলেজ যাওয়ার জন্য রওনা হলো।’
‘কলেজে এসে প্রথমেই ক্লাস রুমে ঢুকে পড়লো রুয়াত। অতঃপর কলেজের শেষ প্রান্তে একটা বেঞ্চির উপর বসলো। অপেক্ষা করতে লাগলো নিমির জন্য। ‘
‘বেশ কয়েক মিনিট পর নিমির দেখা পেলো। দৌড়ে আসছে সে এদিকটায়। নিমিকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো রুয়াত।’
‘দৌড়ে আসার কারণে নিমি হাঁপাচ্ছে। কোমড়ের দু পাশে হাত রেখে হাঁপাচ্ছে মেয়েটা।’
-‘এ কেমন বান্ধুবী তুই? দেখছিস আমি দৌড়ে আসছি তাও একবারও গেলি না।’
‘রুয়াত হাসছে নিমি যতোবার তাকে দেখে দৌড়ে আসে ততবারই এ কথা বলে।’
-‘কেমন আছিস বল?’
‘নিমি মন খারাপ করে বললো-‘
-‘ভালো নেই রে। সময় মতো পড়ি নাই দেখে এখন এতো পড়া একসাথে লোড নিতে পারছি না।’
‘রুয়াত নিমির কাঁধে হাত দিয়ে বললো-‘
-‘আস্তে আস্তে পড়িস। দেখবি সব লোড হয়ে যাবে।’
‘নিমি ব্যস্ত কন্ঠে বললো-‘
-‘আচ্ছা তোর বোনের দেবর ওই এমপি আছে না? তার কি এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে?’
‘রুয়াতের ভ্রু কুচকে এলো। হঠাৎ তার কথা জিগ্যেস করছে কেনো?’
-‘তার যে এনগেজমেন্ট হয়েছে তুই কিভাবে জানিস?’
-‘আরে তাকে তো আমি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে ঝুলিয়ে রেখেছে। তিনি যে পোস্ট দেয় সেটা আমি দেখি। পরশুদিনই দেখলাম এটা। তার সাথে যার এনগেজমেন্ট মেয়েটা কেমন দেখতে আসলে?’
‘রুয়াত এখন বিপাকে পড়ে গেলো। ভেবেছিল পরে জানাবে নিমি কে। এখন দেখছে সে আগেই জেনে বসে আছে।’
-‘মেয়েটি আমি।’
‘নিমির মাথায় যেনো ছাদ ভেঙ্গে পড়লো রুয়াতের কথায় শুনে। আসলেই কি নিমিকে তার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে?’
-‘তুই কি আসলেই আমাকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবিস? সত্যি করে বল তো। আর তুই তো বলেছিস সে কখনো তোর সাথে কথাই বলেনি তাহলে?’
-‘আমিও জানতাম না। যেদিন দেখতে আসে ওইদিনই জানতে পারি। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে সব কিছু হয়েছে। আপুর থেকে শুনেছি ওনি নাকি আমাকে ভালোবাসে। তবে এর সত্যিটা আমি জানি না। তুই প্লিজ রাগ করিস না।’
-‘আচ্ছা বিয়ের দাওয়াত দিলেই হলো। কিন্তু তাদের মতো মানুষদের জীবনের যে কতো ঝুঁকি আছে তুই সেটা জানিস? আর তুই তো বলতি পলিটিক্যাল মানুষদের তোর পছন্দ না। তারা সারাদিন এসব নিয়েই পড়ে থাকে। জীবনের বাকি সময় এভাবেই কাঁটিয়ে দেয় তারা। তাদের বন্ধুর চেয়ে শত্রু বেশি।’
‘রুয়াত সাথে সাথে তার হাতের রিংটার দিকে তাকালো। সে কি কোনো ভুল করলো আয়াজের সাথে তার জীবনটা জড়িয়ে?’
#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৩
#মোহনা_হক
-‘রুয়াত চল দোস্ত আর দু মিনিট পর ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। পরে ক্লাসরুমে ঢুকলে স্যার অনেক কথা শোনাবে।’
‘নিমির কথায় রুয়াত নড়চড়ে উঠলো। জীবন শুরু হওয়ার আগেই যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে আসলে ঠিক কেমন লাগবে?’
-‘আচ্ছা নিমি তোর কি মনেহয় না আমার সাথে অন্যায় হচ্ছে? আমি শুধু তাকে একটির উত্তর দিতে পারিনি বলে সে আমার সাথে জোর করবে? এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে?’
‘রুয়াত সব বলেছে নিমি কে কিছু সময় আগে। নিমি রুয়াত কে শান্ত করার জন্য বললো-‘
-‘যেখানে সে তোকে ভালোবাসে তাহলে তো আর কিছু করার নেই। যদি তাকেও জোর করা হতো তাহলে হিসেবটা অন্য রকম ছিলো। হয়তো তখন দেখা যেতো বিয়ের পর ও তুই শান্তি পাবি না । তোরা তোদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারবি না। অবহেলা করবে সে তোকে। কিন্তু এখানে তো হিসেব উল্টো দাঁড়াচ্ছে। মানুষের মন পরিবর্তন হতে কতক্ষণ? দেখবি এমন না না করতে করতেই কবুল বলে দিবি। আর যেহেতু আয়াজ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে তাহলে সেটা নিশ্চিন্তে ভালো হবে। আর যারা পলিটিক্স করে তারা কি বিয়ে করে না? তাদের কি বউ নেই সন্তান নেই? আচ্ছা একবার ভাব তো তাদের বউরা তাহলে কিভাবে আছে। হ্যাঁ আমি প্রথমে বলেছিলাম অন্য কথা এখন বলছি তোর সব কিছু ভালোই হবে দেখে নিস। আর কোনো বাবা মা তাদের সন্তানের খারাপ চায় না। হয়েছে এখন উঠে পড়। অনেক তো বসে বসে দুঃখ বিলাস করেছিস।’
‘রুয়াতের থেকে নিমি কোনো রেসপন্স পেলো না। নিমির এখন মনে হচ্ছে যেনো রুয়াত কে বলি দেওয়া হবে তাই এমন করছে সে। হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো।’
-‘শুন একটা কথা বলি তুই ওনার সাথে কথা বলে দেখ। কথা-বার্তায় যদি খারাপ কিছু পেয়ে থাকিস তাহলে তোর বাবা মা কে জানাবি। আর আমার মনেহয় ওনি অনেক ভালো মানুষ। বাকিটা তোর ইচ্ছে।’
‘রুয়াত তার দৃষ্টি নিচু করে ফেললো। সেদিন সামান্য উত্তর দিতে পারেনি, আবার কথা বলবে। থমথমে অবস্থা। মনের ভিতর উত্তাল ঝড় বইছে।’
-‘কি করে কথা বলবো আমি? আমার তো কথা মুখ দিয়ে বেরই হবে না। সংকোচবোধ কাজ করবে। আর যোগাযোগ করার ও কোনো মাধ্যম নেই। না আছে তার ফোন নাম্বার আর না আছে কিছু।’
‘নিমি কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর দু আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বললো-‘
-‘এক কাজ কর। তোর আপুকে বল। তারপর মিট কর তার সাথে।’
‘রুয়াত চোখ বড় বড় করে তাকালে নিমির দিকে। সে নাকি মিট করবে। হায় এমন দিন এখনো আসেনি। আসবে ও না বোধহয়। ‘
-‘তুই কি পাগল হয়েছিস নিমি? আমি কিভাবে? না না আমি এসব পারবো না।’
‘নিমি হাল ছেড়ে দিলো। ‘
-‘পারবি না যেহেতু তাহলে টেনশন করছিস কেনো? আবার এখানে বসে বসে ভাবছিস। নিজেকে আবার নিজেই বলছিস তোকে ঠকানো হচ্ছে। পাগল আমি হইনি রে তুই পাগল হয়েছিস। প্লিজ বোন আমার চল ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
‘নিমির কথাটা পুরোপুরি ফেলে দেয়নি রুয়াত। মাথায় কিছু একটা আসছে। তবে বান্ধুবী কে বলে নি। আবার নিমির কথা অপ্রয়োজনীয় হিসেবে ধরেনি। যদি চেষ্টা করে তাহলে তো দোষ নেই। অবশ্যই একবার চেষ্টা করা উচিৎ তার। রুয়াত উঠে নিমির সাথে ক্লাসরুমে চলে গেলো। অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে এখন না গেলে তো স্যার আর ক্লাসে ঢুকতেই দিবে না।’
‘দুপুর দু’টো বাজে। তাও সূর্যের তেজ কমছে না। যেনো এরকম তপ্ত দুপুরে পৃথিবী গরম হয়ে গিয়েছে। এরকম গরম রুয়াতের পছন্দ না। মুখ জ্বলছে তার। এক প্রকার বিরক্ত লাগছে। একটা হাত গালে রাখলো, না অনেক বেশিই গরম। নিমির থেকে বিদায় নিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে পারলেই হলো। এ গরমে বাহিরে থাকা যাবে না। নাহয় কিছু সময় বাদে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।’
‘বাসায় এসে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। ফ্যানের বাতাস ও গায়ে লাগছে না। ‘
উচ্চস্বরে তার মা কে বললো-‘
-‘মা একটু ঠান্ডা পানি দাও।’
‘ছোট মেয়ের আওয়াজে তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে আসলেন মেহরুবা। আর ঠান্ডা পানি খেয়ে রুয়াত চোখ বুজে আছে। মেয়ের পানি খাওয়া শেষ হওয়ার পর পরক্ষণেই স্থান পরিবর্তন করলেন তিনি।’
‘ রুয়াত রুমে ঢুকেই দেখলো তার একমাত্র বোনের মেয়ে ছোট্ট জাফরি কে। পায়ের উপর পা তুলে ফোন দেখছে। রুয়াত ভাবলো জাফরির মতো বয়সে মোবাইল কি জিনিস সেটা জানত না আর তার বোনের মেয়ে একদম পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল দেখছে। রুয়াতের নিজের মোবাইল থাকা সত্ত্বেও সে দেখে না। মোবাইলের প্রতি এখনো তার কোনো ইন্টারেস্ট জন্মায়নি। আর এই যুগের বাচ্চা ছেলে মেয়ে হতে শুরু করে বয়স্ক লোকদের ও আজকাল মোবাইল ছাড়া চলে না। নিজেকে অন্য জগতের প্রানী মনে হচ্ছে রুয়াতের।’
(*)
‘এলাকার চেয়ারম্যান, সকল নেতা, ছাএলীগের সম্পাদক, সহ সম্পাদক, ব্যবসা সমিতির লিডার সবাই উপস্থিত আজ। মাসের শেষ সময়ে এমন একটা মিটিং হয়। প্রতি মাসে কে কি করেছে সব হিসেব তোলা হয়। আর সে কাজগুলো এমপি দেখাশোনা করে। যা কয়েক বছর ধরে আয়াজই দেখে আসছে।’
‘সবার মুখোমুখি বরাবর আয়াজ বসে আছে। তার পাশেই সাহেদ দাঁড়ানো। একজন কে ছাড়া এই মিটিং শুরু করা হবে না। সে হচ্ছে ইকরামুল তাহের। বর্তমান ব্যবসা সমিতির লিডার ও চেয়ারম্যান তিনি। মূলত তার জন্যই সবাই অপেক্ষা করছে। আয়াজের সাথে পার্সোনালি মন মালিন্যর ব্যাপার থাকলেও সবার সামনে সে তা প্রকাশ করেনি কখনো। হাসিমুখে কথা বলে। আয়াজ খুব ভালো করেই অবগত যে তাকে তার জায়গা থেকে সরানোর মতো দুঃসাহসের পরিকল্পনা একমাত্র ইকরামুল তাহের ছাড়া আর কেউ করার সাহস পাবে না। আরও কয়েকমাস পর ইলেকশন। চেয়ারম্যান পদ থেকে এবার এমপি পদে দাঁড়াবে ইকরামুল। আর আয়াজ থাকলে কোনোমতেই তাকে জায়গা থেকে সরানো যাবে না। তাই গোপনে পরিকল্পনা অব্যহত রাখছে ইকরামুল। কিন্তু সব খবর আয়াজ জেনে বসে আছে।’
‘ইকরামুল তাহের এই মিটিং এ সব সময় দেরি করে আসেন। এতে সবাই খুব বিরক্ত। শুধুমাত্র আয়াজের চোখমুখে নিস্তব্ধতা। তার যেনো ভালো লাগছে এভাবে বসে থাকতে। অতঃপর ইকরামুল তাহেরের আগমন ঘটলো। তিনি আসার সাথে সাথেই মিটিং শুরু করে দিলো। এক এক করে সবাই সবার কথা বললো আয়াজের কাছে। কিন্তু ইকরামুল তাহের চুপ মেরে আছে। এ বিষয় বিশেষ করে খেয়াল করছে আয়াজ। মিটিং শেষ হলে যে যার মতো চলে যায়। শুধু বসে আছে ইকরামুল তাহের। ‘
‘আয়াজ পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলো ইকরামুল কে।’
-‘কি তাহের সাহেব এখানে বসেই কি রাত পার করবেন নাকি?’
‘ইকরামুল আয়াজের প্রতি ক্ষোভ থাকলেও তা প্রকাশ করলো না। এক বড়সড় হাসি দিয়ে বললো-‘
-‘মাএই তো সন্ধ্যা সাতটা বাজে। আপনার অফিসে সবাই আসলো চা কফি কিছু খাওয়ালেন না যে?’
‘আয়াজ হেসে দিলো।
-‘সাহেদ তাহের সাহেবের জন্য কড়া লিকারের একটা চা দিতে বলো। কফিতে ভেজাল থাকে বেশি।’
‘ইকরামুল তাহের হেসেই রইলেন। তবে আয়াজের চোখমুখে কঠোরতা। কাঠের চেয়ারটায় নিজ হাতের আঙুল দ্বারা ঠক ঠক আওয়াজ করতে লাগলো। সাহেদ চা এনে ইকরামুল তাহেরের সামনে এনে রাখল। সাদরে চায়ের কাপটা মুখ ধরলো। গরম ধোঁয়া উঠছে সদ্য আনা চা থেকে। ফুঁক দিতে ভুলে গিয়েছে তাই জিহ্বা তৎক্ষনাত জ্বলে উঠলো। তিরিক্ষি মেজাজে আবার কাপটা রেখে দিলো।’
‘আয়াজ শান্ত স্বরে বললো-‘
-‘শুনলাম এবার এমপি পদে দাঁড়াবেন নাকি?’
‘ইকরামুল থতমত খেয়ে গেলো। তার এই খবর আয়াজ জানে কিভাবে ভেবে পাচ্ছে না। কার থেকে শুনেছে। কে এই খবর দিয়েছে। এই নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলো। চেহেরায় সন্দিহান অবস্থা। ‘
-‘কে বলেছে? আমি তো নিজেই জানি না। আপনি কার থেকে শুনেছেন?’
-‘এসব কথা বাতাসের সাথে আশেপাশে ছড়িয়ে যায়। রটানোর কি মানুষের অভাব পড়েছে নাকি?’
‘ইকরামুল এবার মেজাজ দেখালো। কারও এমন ভাবলেশহীন কথাবার্তা পছন্দ করে না। নিজেকে খুব বড় মাপের মানুষ ভাবে। তার আশেপাশের মানুষদের নিতান্তই তুচ্ছ ভাবে সে। আর আয়াজের এ কথাটা তার শরীরে যেনো আগুন ধরিয়ে দিলো। নিশ্চয়ই লোক লাগিয়েছে আয়াজ তার পিছনে। ‘
-‘কে কিভাবে কথা বের করে সেটা ভালো করেই জানা আছে। গোপনে গোপনে তো লোক লাগায় তাই না এমপি সাহেব?’
‘বলেই হেসে দিলো ইকরামুল। আয়াজের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। কথাটা যে আয়াজের উদ্দেশ্যই বলা হয়েছে খুব স্পষ্ট ভাবে বুঝে গিয়েছে সে। হুটহাট মাথা গরম করলো না আর।’
-‘অস্বীকার করলেন কেনো প্রথমে? এখন তো নিজেই নিজের কাছে ছোট হয়ে গেলেন।’
‘ইকরামুল দাঁড়িয়ে গেলো। অপমান করা হলো তাকে। এভাবে ইকরামুল কে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে আয়াজ বললো-‘
-‘উত্তেজিত হবেন না। এখানে আসলে অবশ্যই মনে রাখবেন যে এটা আমার অফিস।’
‘ইকরামুল এবার বেশ জিদ দেখিয়ে আয়াজের অফিস ত্যাগ করলো। ইকরামুল যাওয়ার সাথে সাথে একটা অমায়িক হাসি ফুঁটে ওঠলো আয়াজের। সাহেদের উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘সাহেদ ইকরামুল নাকি এবার এমপি পদে দাঁড়াবে। এটা হাস্যকর না?’
‘স্যারের কথায় না চাইতেও হাসলো সাহেদ। কি যে বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে তার স্যারের মাথায় একমাত্র তিনিই ভালো জানেন।’
(*)
‘পড়া শেষ করে জাফরির পাশে এসে শুয়ে পড়লো রুয়াত। রাত এগারোটার বেশি বাজে। কিছুক্ষণ আগে ইনিমা এসে খাইয়ে দিয়েছে জাফরি কে। রুয়াতের কারণে আর মোবাইল দেখতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু জাফরি এমন কান্না শুরু করেছে পরে বাধ্য হয়ে মোবাইল দিয়েছে ইনিমা। এক নাগাড়ে কার্টুন দেখে যাচ্ছে জাফরি। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই নিমির কথাটা মনে পড়ে গেলো রুয়াতের। আবার উঠে বসে পড়লো সে। আয়াজের সাথে যোগাযোগ করার উপায় একমাত্র জাফরি। সেই পারে রুয়াতের সাথে আয়াজের কথা বলিয়ে দিতে। তার আপুকে অবশ্য বলা যাবে না নাহলে অনেক পঁচাবে সে। তিল থেকে তাল বানিয়ে ফেলার মতো ক্ষমতা তার বোনের আছে।’
‘ রুয়াত জাফরি কে শোয়া থেকে কোলে নিয়ে নিলো। জাফরি তার মিম্মিমের এরুপ আচরণে বিরক্ত। শুয়ে শুয়ে কি সুন্দর কার্টুন দেখছিল।’
‘রুয়াত বেশ আহ্লাদী কন্ঠে বললো-‘
-‘জাফরি ময়না মিম্মিমের একটা কাজ করে দিতে পারবে?’
‘জাফরি সাথে সাথে নাকোচ করে দিলো। মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সে করতে পারবে না। বাচ্চা হলে কি হবে বেশ পাকনা বুড়ি।’
‘রুয়াত আবারও বললো-‘
-‘প্লিজ জাফরি বাবু তুমি না গুড গার্ল। মিম্মিমের কাজটা করে দিলে তোমার জন্য কাল অনেক বড় বড় চকলেট এনে দিবো। যদি না করো তাহলে কিন্তু মিম্মিম আর কক্ষনো তোমাকে আদর করবে না চকলেট ও দিবে না।’
‘জাফরি রাজি হলো। চকলেটের প্রতি তার দুর্বলতা বেশি। বিশেষ করে বাচ্চাদের এই জিনিস অনেক ভালো লাগে। তারা পছন্দ ও করে এটা।’
-‘শুনো জাফরি তুমি এখন তোমার চাচ্চু কে কল দিবে। দিয়ে বলবে আমাদের বাসার নিচে আসতে।’
‘জাফরি তাই করলো। সোজা তার চাচ্চুর কাছে কল দিলো। গাড়িতে চোখ বুজে বসে আছে আয়াজ। সব কাজ শেষ করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। হঠাৎ কারও কল আসায় চোখ খুলে ফেললো। ভ্রু কুচকে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকালো। ‘Jafrir Ammu’ লিখাটা ভাসছে। আয়াজ ভেবেছে হয়তো তার ভাবি কল দিয়েছে। তাই রিসিভ করলো। কিন্তু রিসিভ করার পর জাফরির আওয়াজ শুনতে পেলো সে।’
-‘চাচ্চু এখন আমাদের বাসায় আসো।’
‘রুয়াত অধির আগ্রহে বসে আছে। কিন্তু জাফরি তো ঝামেলা করে ফেললো। জাফরি কে আস্তে করে আবার সঠিক কথা বলে দিয়েছে।’
-‘ না বাসায় এসো না। বাসার নিচে আসো। মিম্মিম বলছে।’
‘রুয়াত চোখ বড় করে ফেললো। এই যা বলে দিলো কথাটা। এইজন্য বাচ্চাদের দিয়ে কোনো কাজ করাতে নেই।’
‘আয়াজ প্রথমে রাজি হলো না। কিন্তু রুয়াতের কথা বলায় রাজি হলো। হঠাৎ কেনো রুয়াত এতো রাতে তাকে যেতে বলেছে এটাই বোঝা মুশকিল। ড্রাইভার কে বললো গাড়ি যেনো রুয়াতদের বাসার দিকেই যায়।’
‘রুমে পায়চারি করছে রুয়াত। মনে শান্তি নেই। একটু পর আয়াজ চলে আসবে। কি কথা বলবে সেগুলোই মুখস্থ করছে। কেউ যদি জানে নিশ্চয়ই রুয়াত কে বেহায়াপনা মেয়ে ভাববে। হান্নান সাহেব ওর তার স্ত্রী ঘুমিয়ে গিয়েছেন। আর রইলো ইনিমা, সে যদি একবার জেনে যায় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইনিমা আপাতত অন্য রুমে বসে বসে তার বরের সাথে কথা বলছে রুয়াতের ফোন দিয়ে। কিভাবে বাসা থেকে বের হবে আর আয়াজের মুখোমুখি হবে সেটা নিয়েই চিন্তিত রুয়াত। মিম্মিমের এরুপ কান্ড জাফরি শুয়ে শুয়ে দেখছে।’
‘গাড়ির আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই রুয়াতের বুকটা কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে আজই সে উপরে চলে যাবে। আরো একবার হর্ন দিলো। তাড়াহুড়ো করে জাফরি কে কোলে নিয়ে নিচে আসলো। এতো বেশি হর্ন দিলে তো তার বাবা মা জেগে যাবে। আর বাবা মা জেগে গেলো হবে এক সমস্যা। কোনো কিছু না ভেবেই মাথায় কাপড় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলো। ‘
‘গাড়ির একদম সামনে আয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি এখন মোবাইলের দিকে। ড্রাইভার কে বলে দিয়েছে একটু হেঁটে আসতে। জাফরি তার চাচ্চুকে দেখেই ডাক দিলো। আয়াজ মাথা তুলে দেখলো রুয়াত ও জাফরি দাঁড়িয়ে আছে। রুয়াতের কোলের জাফরি। মোবাইলটা পাঞ্জাবীর পকেটে পুড়ে নিলো সে। আয়াজ সোজা তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর রুয়াতের কোল থেকে জাফরি কে নিলো। কয়েকটা চুমু বসিয়ে দিলো ছোট্ট জাফরির গালে। আর জাফরি সে তো মহাখুশি তার চাচ্চু কে দেখে ওমনিই গলা জড়িয়ে ধরলো। আর এদিকে রুয়াতের ভয় ক্রমাগত বেড়ে চলছে। আয়াজের সামনে তো ঠিকই আসলো কিন্তু আয়াজ কিছু জিগ্যেস করলে কি উত্তর দিবে? এখন এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মনে হলো আয়াজ কে এখানে আসার কথা না বলাই ভালো ছিলো। কেনো যে নিমির কথাটা শুনতে গেলো। হাসফাস করতে লাগলো একপ্রকার। ‘
‘আয়াজ জাফরি কে আদর করা শেষে তার প্রেয়সীর দিকে তাকালো। চেহেরা দেখে ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে ভয়ে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।’
‘কয়েক মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পর ও রুয়াতের কিছু বলার সাহস জোগাড় হলো না। এভাবে এতো রাতে দাঁড়িয়ে থাকতেও ভালো লাগছে না আয়াজের।’
‘গম্ভীর কন্ঠে বললো-‘
-‘এভাবে আমাকে দাঁড়িয়ে রাখার জন্য নিশ্চয়ই ডাকো নি? কেনো ডেকেছিলে বলো। বাসায় যেতে হবে আমার। টায়ার্ড লাগছে।’
‘রুয়াত মাথা তুলে তাকায় আয়াজের পানে। প্রথম দিন কথা বলার সময় আপনি বলে সম্মোধন করেছে, এখন আবার তুমি বলছে।’
-‘আ আপনি তো আমায় তুমি করে কখনো বলেন নি?’
‘আয়াজের মনে খুব আনন্দ হচ্ছে। রুয়াত ভয়ে কথা গুলিয়ে ফেলেছে। কেনো জানি খুব ভালো লাগলো তার। তার প্রেয়সীকে সে আপনি বলবে তুমি বলবে সব বলবে।’
‘এটা বলার জন্য ডেকেছো?’
‘রুয়াত মাথা নাড়লো দু’দিকে। মুখ দিয়ে শব্দ করলো না। আয়াজ একটু ধমকের সুরে বললো-‘
-‘এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ঢং করতে পারবো না আমি। এক কথা ক’বার বলতে হয় তোমায়? এতো রাতে ডেকে এনে এখন নাটক দেখাচ্ছো?’
‘রুয়াত ভয় পেলো। জাফরি বেচারা একবার চাচ্চুর মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার মিম্মিমের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। মাসুম বাচ্চাটি অবুঝের মতো রইলো।’
‘রুয়াত অস্পষ্ট সুরে বললো-‘
-‘আপুর কাছ থেকে শুনেছি আপনি আমায় ভালোবাসেন। এ কথাটা কি সত্যি?’
‘আয়াজ বুঝে গেলো রুয়াতের কথা। কি সাংঘাতিক এতো রাতে ডেকে এনেছে এ কথা বলার জন্য। তবে আয়াজ সত্যি কথা বললো-‘
-‘ হ্যাঁ তোমাকে তোমার আপু যে কথাটা বলেছে সেটা একদম সত্যি কথা।’
‘রুয়াত আর কথা বাড়াতে চাইলো না। এখানে আর এক মুহুর্ত ও থাকা যাবে না। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। হাত পেতে বলল-‘
-‘জাফরি কে দিন। বাসায় যাবো।’
‘আয়াজ হেসে দিলো। মাথায় এক সয়তানি বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছে। এতো রাতে ডেকে এনেছে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে নাকি?’
‘আয়াজ রুয়াতের কব্জি ধরে টান দিলো। মেয়েটি কে টেনে তার সামনে দাঁড় করালো। পিঠ বরাবর হাত দ্বারা তাদের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে দিলো। আচমকা এমন হবে একদমই ভাবে নি রুয়াত। সর্বাঙ্গ শরীর কেঁপে উঠলো মুহুর্তেই।’
‘আয়াজ জাফরির দিকে তাকিয়ে বললো-‘
-‘তোমার মিম্মিম এতো রাতে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। এমনি এমনি ছেড়ে দিবো নাকি তাকে বলো তো জাফরি?
‘আবার পরক্ষণেই রুয়াতের দিকে তাকালো।
-‘কি জাফরির মিম্মিম এতো রাতে দেখা করতে এসেছেন আপনার হবু বরের সাথে। কিছু না করে ছেড়ে দিবো ভাবছেন?’
#চলবে….
#চলবে….
[আসসালামু আলাইকুম। আজকের গল্পে হয়তো কিছু কিছু ভুল থাকতে পারে কারণ একবার লিখার পর ডিলিট হয়ে গিয়েছিলো তাই আবার তাড়াহুড়ো করে লিখেছি। আর আয়াজ যেহেতু রাজনীতি করে সেহেতু পলিটিক্যাল কিছু লাইন উল্লেখ করা থাকবে গল্পে। আচ্ছা নাম নিয়ে অনেকের সমস্যা হচ্ছে দেখলাম কিন্তু এখন তো নাম দিয়ে ফেলেছি তাই চেঞ্জ করতে পারছি না। চেঞ্জ করলে অনেকে বিপাকে পড়তে পারে। আমার ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]