হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস পর্ব -২৪+২৫

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_২৪
#মোহনা_হক

জাফরি এখন অনেকটাই সুস্থ। আয়াজ সোফায় বসে মোবাইল দেখছে তার তার কোলেই জাফরি বসে আছে। রুয়াত আর ইনিমা দু’জন সকালের খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত। মায়া চৌধুরী ও তাদের কাছে রয়েছেন। ফজলুল চৌধুরী এখনো ঘুমাচ্ছে। আরহাম ঘুমের কারণে ঢুলতে ঢুলতে এসে আয়াজের পাশে বসেছে। তাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে যেনো কতো রাত ঘুমায়নি। আয়াজ একবার আরহামের দিকে তাকিয়ে আবার মোবাইল নজর দিয়েছে।

-‘আয়াজ ইকরামুলের নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে?’

আরহামের এরূপ কথায় আয়াজ তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়।

-‘তুমি জানো কিভাবে?’

টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আরহাম আবার আগের জায়গায় আসে।
-‘এতো সিরিয়াস অবস্থা করেছিস কেনো? আদোও বাঁচবে তো? বাহিরের মানুষেরা যদি জানে তুই এমন করেছিস তাহলে এবারের এমপি পদের নমিনেশন দিবে না তোকে।’

তাচ্ছিল্য হাসে আয়াজ।
-‘এটা তো কিছুই না। সামনে আরও অনেক কিছু বাকি আছে। তুমি শুধু দেখতে থাকো। আর নমিনেশন? সেটা আমি পেয়ে গিয়েছি। এতো বোকা মনে করেছো আমায়?’

ভাইয়ের কথায় অবাক আরহাম। উৎসুক স্বরে বলে-
-‘তোর মাথায় এতো বুদ্ধি আসে কোঁথায় থেকে?’

উত্তর না দিয়ে আয়াজ সোফায় মাথা হেলিয়ে দেয়। আর এদিকে উত্তরের আশায় আরহাম তাকিয়ে আছে। একসময় আরহাম উত্তর না পেয়ে ভেঙচি দিলো৷ কিন্তু আয়াজ কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ করলো না।

-‘দেবর সাহেব আর জাফরির বাবা তোমরা এসে নাস্তা করো। আর ডাকতে পারবো না কিন্তু।’

ইনিমার এক পাশে রুয়াত দাঁড়িয়ে। জাফরি কে আয়াজ খাইয়ে দিচ্ছে। সেদিকটায় তাকিয়ে আছে রুয়াত। আরহাম এখন খাবে না বলে দিয়েছে। মায়া চৌধুরী আর আয়াজ খেতে বসলো। চুপচাপ খেয়ে আয়াজ উঠে পড়ে৷ হাত ধোঁয়ার সময় একবার রুয়াতের দিকে নজর পড়ে তার। রুয়াত আর ইনিমা পরে নাস্তা করে নেয়। আরহামের জন্য অপেক্ষা করেনি ইনিমা। তার শরীরের যে কন্ডিশন টাইম টু টাইম খাবার খেতে হয়। মাত্রই কয়েক মাস হয়েছে এখন’ই এই অবস্থা। পরে তো আরও কতো কিছু বাকি আছে। জাফরির অসুস্থতার জন্য ইনিমা তার নিজের যত্ন ঠিক করে নিতে পারেনি। তার কারণে শরীরটা ইদানীং খুব খারাপ লাগছে।
আয়াজ ড্রয়ার থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ বের করছে। একটু পর সে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। রুয়াত রুমে আসে। আয়াজ এখন বেডে বসে কাগজগুলো এক একটা করে চেক করে নিচ্ছে।

-‘অফিসে যাবেন না?’

কাগজগুলো আয়াজ একটা ব্যাগে রেখে দিলো। আয়নার সামনে এসে চুল ঠিক করছে।
-‘আজ অফিস নেই।’

চকিত নজরে তাকায় রুয়াত এমপি সাহেবের দিকে।
-‘যাবেন না তাহলে আজ?’

আয়াজ রুয়াতের সামনে এসে দাঁড়ায়। কোমড় জড়িয়ে ধরে। কেঁপে ওঠে মেয়েটা। বারবার বারণ করার পর ও কেঁপে ওঠে । এমন স্পর্শ তো সহ্য হয় না হুটহাট! রুয়াতের কান্ডে আয়াজ আরেকটু চেপে ধরে। ভ্রু কুচকে তাকায় জড়িয়ে ধরা মেয়েটার দিকে।

-‘তুমি চাও আমি বাসায় থাকি?’

রুয়াত এক হাত আয়াজের বুকে রাখে।
-‘আপনার কাজ আছে। আমি চাই না আমার জন্য আপনার কাজের কিছু হোক।’

-‘তুমি বললে আমি সব কাজ ফেলে রেখে দিতে রাজি প্রেয়সী। আয়াজের শুধু তুমি হলেই চলবে।’

রুয়াতের দু গালে হাত রাখে আয়াজ। চোখ বন্ধ করে আছে মেয়েটা। অতঃপর আয়াজ রুয়াত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। প্রেয়সীর ঘাড়ে মুখ বুজে। প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে ঘাড়ে। রুয়াত এক হাত দিয়ে আয়াজের পাঞ্জাবী খামচে ধরে।

-‘থাকবো বাসায়?’

নরমস্বরে আয়াজ কথাটি বলে। রুয়াতের বুক কেঁপে ওঠে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ বারংবার কেঁপে ওঠছে। চেয়েও কথা বলতে পারছে না। আয়াজ রুয়াত কে ছেড়ে দেয়। দ্রুত নিঃশ্বাস ওঠানামা করছে প্রেয়সীর। হাসে ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষ। এইটুকুতেই এই অবস্থা। আবারও রুয়াতের গালে হাত রাখে। আরেক হাত পিঠে রেখে তাদের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়।

-‘আর কাঁপতে হবে না। আমি আসছি। বাসায় এসে যতোবার কেঁপেছো ততবার এর হিসেব নিবো। শাস্তি তোলা রাখলাম।

দ্রুত পায়ে হেঁটে আয়াজ বের হয়ে আসলো রুম থেকে। বুকে হাত চেপে দাঁড়িয়ে আছে রুয়াত। মানুষটা আশেপাশে থাকলে সবকিছুই ঘোলাটে লাগে রুয়াতের। কিছু না কিছু করেই ছাড়বে। রুয়াত একবার বেডের দিকে তাকায়। অনেকগুলো কাগজ অগোছালো করে রেখে গিয়েছে আয়াজ। সেগুলো গুছিয়ে নিচে আসে। আয়াজ চলে গিয়েছে অনেক্ক্ষণ হয়েছে। ফজলুল চৌধুরী এক এলাহী কান্ড বাঁধিয়ে ফেলেছেন। আজ তিনি আর আরহাম কেউই আজ কোঁথাও যাবেন না বলে দিয়েছেন। অনেক বড় একটা কেক নিয়ে আসে। রুয়াতের হাতে আরহাম কেকটা দিলো। সে শুধু বোকার মতো চেয়ে আছে। মায়া চৌধুরী আসে নিচে৷ ইনিমা আসেনি এখনো। আজ মুলত আরহাম আর ইনিমার ষষ্ঠতম বিবাহ বার্ষিকী। রুয়াত অধর কাঁটে। কিভাবে যেনো আজকের তারিখটা ভুলে গিয়েছে। ইনিমা নিচে আসে। আরহামের কান্ডে রাগ উঠছে তার। খুব বিরক্ত লাগছে এসব। তবুও শ্বশুড় শ্বাশুড়ির সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে ইনিমা।

মায়া চৌধুরী আর ফজলুল চৌধুরী বেশ খুশি। মায়া চৌধুরী বলেই দিয়েছেন আজ তিনি সব রান্না করবেন। দু বউয়ের ছুটি আজ। যদিও দু’জন পাশে পাশে থেকেছে। রুমে এসে ইনিমা মুখটা বেজার করে রেখেছে। তার এসব কিছুই ভালো লাগছে না। আরহাম কে মনে মনে শত গালি দিয়ে চলছে।

.

সভায় আজ গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলছে। একটু পরে রাজনৈতিক মিছিলে আয়াজ যোগ দিবে। মিটিং অলরেডি শেষের পথে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান অভিযোগ তুলেছেন। কেনো বারবার আক্রমণ আসছে এতো বড় নেতাদের উপর। সবার মাঝখানে একমাত্র আয়াজ’ই মিটমিট করে হাসছে আড়ালে।
বাহির থেকে আওয়াজ আসছে। সব ছেলেগুলো এসে পড়েছে যারা আজ আয়াজের সঙ্গ দিবে। আয়াজ উঠে দাঁড়ায়।

-‘ এসব মিটিং কাল করবো। মিমাংসা কাল করা হবে। আর আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিবে ইকরামুল তাহের। ওনি সুস্থ হোক। আমার মিছিলে আপনারাও শামিল হবেন চলুন।’

সবাই আয়াজের সাথে চললো। শামসুজ্জামান থতমত খেয়ে গেলো। কখনো আয়াজের কাছ থেকে যথাযথ একটা উত্তর ও পেলো না। যাই সভার মধ্যে টুকটাক কথা বলতে পারে আয়াজের সাথে একাকী থাকলে কখনো কথা বলার সাহস হয় না। শামসুজ্জামান নিজের শার্টের কলার ঠিক করলেন। অতঃপর রওনা হলেন মিছিলের উদ্দেশ্যে।

সামনে ইলেকশন এটা নিয়েই ব্যস্ত আয়াজ। ইলেকশনের আগে প্রচারের কাজটা খুব দরকার। মাঝে মাঝে মিছিলে আয়াজ যোগ দেয়। আর বেশিরভাগ সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা বা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর মিছিল করে। আজ আয়াজ করছে।

.

কয়েক মিনিট যাবত ইনিমা দুঃখী দুঃখী মুখ করে বসে আছে। সে কোনোমতেই শাড়ি পড়বে না। এসব বিরক্ত লাগছে তার। আরহাম কে তো আনলিমিটেড গালি দিয়েই চলছে। রুয়াত চুপচাপ বসে আছে। জাফরিও তার মিম্মিমের কোলে চুপটি মেরে বসেছে। মায়ের রাগের সময় সে কোনো কথা বললেই পিঠে কয়েকটা পড়ে।

-‘আপু ভাইয়া যেহেতু বলেছে তাহলে একটু পড়ো না শাড়ি।’

ইনিমার শরীর দূর্বল। আর আরহামের এমন পাগলামো সহ্য হচ্ছে না একদমই।

-‘জানিস আমার কতো খারাপ লাগছে? আরহাম কি এসব বোঝে? মানছি আমাদের বিবাহ বার্ষিকী সে কি চোখে দেখে না আমি কতো অসুস্থ? জ্ঞানহীন মানুষ কোথাকার।’

এসময়ে প্রচুর মুড সুইং হয় ইনিমাই বলেছে তাকে। একবার ভালো লাগবে তো আবার খারাপ লাগবে। কিন্তু আরহাম তো শখ করেই এনেছে। হয়তো এখন ছোটখাটো আয়োজন করাতে রাগ লাগছে আবার না করলেও ইনিমার মন খারাপ হয়ে যাবে এইভেবে আরহাম ছোট্ট একটা আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে।

-‘আপু পাঁচ মিনিটের জন্য পড়ো। ভাইয়া কতো খুশি হয়ে করছে এসব। মানুষটা কষ্ট পাবে তো। আচ্ছা আমি তোমায় হেল্প করি? কি কালার শাড়ি পড়বে বলো? আমি বের করে দিচ্ছি।’

মন শান্ত হয় ইনিমার। উঠে আলমিরা থেকে কালো রঙের শাড়ি বের করে। আরহাম চেয়েছে শাড়ি পড়তে তাই পড়ছে। রুয়াত টুকিটাকি সহযোগিতা করেছে ইনিমা কে। শাড়ি পড়ে যেনো আরও অস্থির লাগছে তার। নিজ ইচ্ছেতেই ইনিমা হালকা সাজে। এই বলেছে শাড়ি পড়বে না। আবার এখন সেজেছে ও। রুয়াত মুচকি হাসছে। বোনের এমন কান্ড মজাই লাগছে তার।

-‘আপু আমি একটু রুমে যাচ্ছি জাফরি কে নিয়ে।’

পিছন ফিরে বোনের দিকে তাকায় ইনিমা।
-‘কেনো?’

-‘একটু তোমার দেবর কে কল দিবো। আসছে না যে।’

-‘ওহ্ আচ্ছা। যা।

রুয়াত আর জাফরি রুমে আসে। সবেমাত্র রাত আটটা বাজতে চললো। কাল তো এসেছিলো অনেক রাত করে। আজ কি আসবে এতো তাড়াতাড়ি? রুয়াত কিছুক্ষণ ভাবলো। কল দিবে নাকি দিবে না।

-‘জাফরি তোমার চাচ্চু কে এখন কল দিলে সে কি রেগে যাবে?’

বাচ্চা মেয়ে কি বুঝে মাথা নাড়ালো। তবুও একটু আধটু সাহস পেলো রুয়াত। আয়াজের নাম্বারে কল দিলো। কিন্তু ধরলো না। উল্টো কেঁটে দিলো। রুয়াতের মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। নিচে আয়াজের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো রুয়াত। তবে কি আয়াজ এসেছে! আরহাম যেনো তার সাথেই কথা বলছে। রুয়াত অবাক হয়ে জাফরির দিকে তাকায়।

আয়াজের পিঠে হালকা থাপ্পড় মারে আরহাম। হাতে তার কিছু ব্যাগ। আর মুখে হাসি।

-‘এতো কিছুর দরকার ছিলো না ছোট ভাই।’

ভ্রু কুচকে ভাইয়ের পানে চায় আয়াজ। এগুলো পেয়ে খুশি হয়ে যে আরহাম এমনটা বলেছে খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছে সে।

-‘নাটক বন্ধ করো। তোমার কাহিনী আমি বুঝি না বলছো?’

আরহাম হাসে। মায়া চৌধুরী ও হেসে উঠলেন দুই ছেলের খুনশুটি দেখে। অবশ্য আরহামের এসব কথা বলতে ভালোই লাগে। সে বলে মজা করে অথচ তার ভাই শুধু শুধু রেগে যায়। রুয়াত নিচে আসে। আয়াজ একবার তার প্রেয়সী কে দেখে নেয়। চোখের শান্তি তার প্রেয়সীর মুখখানা।

-‘আয়াজ যা বাবা ফ্রেশ হয়ে আয়।’

গম্ভীরমুখে আয়াজ বলে-
-‘বাবা কোঁথায়? এসব অনুষ্ঠান শেষ হলে বাবা আর ভাইয়া আমার এক্সট্রা রুমে এসো।’

আরহাম মাথা নাড়ায়। মায়া চৌধুরী উত্তর দেয়।
-‘তোর বাবা বাসায়৷ রুমে আছেন তিনি। আচ্ছা আমি বলে দিবো।’

আয়াজ আরেকবার তার প্রেয়সীর দিকে তাকায়। তার দৃষ্টি ও আয়াজের দিকে। ইশারা করে রুমে আসতে। রুয়াত জাফরি কে মায়া চৌধুরীর কাছে রেখে উপরে আসে। ওয়াশরুম থেকে আওয়াজ আসছে। নিশ্চয়ই আয়াজ এখন শাওয়ার নিচ্ছে। আলমিরা থেকে আয়াজের কাপড় বের করে বেডে রাখে। তোয়ালে পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় আয়াজ। যেটা বলেছে সেটাই ঠিক। মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে সে। তড়িঘড়ি করে মুখটা ঘুরিয়ে নেয় রুয়াত। বুক কাঁপছে তার। ভীষণ লজ্জাও লাগছে। ভ্রু কুচকে আয়াজ তার কাপড় পড়ে। এভাবে বউ কে লজ্জা দিতে ইচ্চুক নয় সে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে নিচ্ছে। নির্বাক দর্শকের মতো শুধু তাকিয়ে আছে রুয়াত। আয়নায় আয়াজের প্রেয়সীকে দেখা যাচ্ছে।

রুয়াতের কাছে এসে দাঁড়ায় আয়াজ। চোখ মুখে গম্ভীরতা। ভড়কে যায় রুয়াত। এমনটা করার কারণ বুঝে উঠতে পারছে না।

-‘আমি বাসায় থাকি কতক্ষণ?’

ঢোক গিলে রুয়াত। আয়াজ কিন্তু তার উত্তর পায়নি। কব্জি ধরে টেনে আনে তার কাছে।

-‘কথা নাই কেনো? আমি যতক্ষণ বাসায় থাকবো ততক্ষণ আমার সামনে থাকবে। এই কথার হেরফের করে আমার মেজাজ বিগড়ে দিবে না।’

মাথা নাড়ায় মেয়েটা। রুয়াতের হাত মুঠোয় পুড়ে আয়াজ। দু’জনেই নিচে আসে। সবাই নিচে আছে। ইনিমা ও এসেছে। এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে ইনিমা আর আরহাম। যেনো কয়েক ঝাড়ি খেয়ে চুপ হয়ে আছে আরহাম। দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রুয়াত হাসে। হালকা হাসির শব্দ শুনে আয়াজ তাকায় তার পাশে থাকা মেয়েটির দিকে। দৃষ্টি অনুসরণ করে আয়াজ ও তাকায় সেদিকটায়। তার ও হাসি এসে গেলো। আরহাম অসহায় এর মতো দাঁড়িয়ে আছে।
ইনিমা আর আরহাম জাফরি কে তাদের মাঝে রেখে কেক কাটে। রুয়াত একবার আয়াজের দিকে তাকায়। তার হাত এখনো আয়াজের হাতে। মানুষটা সামনে তাকিয়ে আছে। রুয়াত একবার তার হাতের দিকে তাকায় অতঃপর আবার তার মনের প্রেমিকের দিকে তাকায়। মনের প্রেমিক এইজন্যই কারণ কখনো সে আয়াজ কে সরাসরি প্রেমিক বলে অখ্যায়িত করেনি। তাই মনের প্রেমিক হিসেবে ধরে নিয়েছে সে।

রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রুয়াত। ফজলুল চৌধুরী, আরহাম আর আয়াজ অন্য একটা রুমে। ইনিমার থেকে জিগ্যেস করেছে তারা নাকি কিসব নিয়ে আলোচনা বলছে। তাই রুয়াত আর কথা বাড়ায়নি। একা একা দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। রাতের খাবার খেয়ে তারা অন্য রুমে বসে কথা বলছে। ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মনেহচ্ছে বৃষ্টি হবে কিছুক্ষণ পর। হঠাৎ জঠরে কারও হাত পেয়ে কেঁপে ওঠে রুয়াত। পিছন ফিরে দেখে আয়াজ দাঁড়িয়ে আছে। তার গালের সাথে গাল লাগিয়ে আছে। আয়াজের হাতের উপর হাত খামচে ধরে। চোখ বন্ধ করে ফেলে।

-‘আমার জন্য অপেক্ষা করছো?’

মুখ দিয়ে কথা বলবে সে শক্তিও যেনো নেই। তাও আমতা আমতা করে বলে-
-‘ক কখন এসেছেন রুমে? আওয়াজ শুনতে পায়নি যে?’

হালকা হেসে আয়াজ রুয়াতের ঘাড়ে তার অধর ছুঁয়ে দেয়।
-‘উহুম প্রেয়সী কথা ঘুরাবার চেষ্টা করবে না। সকালের সেই কথাটা আমি ভুলিনি।’

রুয়াত কে ঘুরিয়ে তার সম্মুখে দাঁড় করায়। এক হাত গ্রিলে রাখে। অন্য হাত প্রেয়সীর কোমড়ে। এই তো এখনই যেনো রুয়াতের শরীরের প্রতিটি অংশ ধ্বসে পড়বে এমন ছোঁয়ায়। চোখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুয়াতের অধর দখল করে নেয় আয়াজ। আয়াজের চুলে এক হাত রুয়াতের। অন্য হাত দিয়ে খামচে ধরে ঘাড়। ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। শরীর জুড়িয়ে যায়। প্রেয়সীর শিরা উপশিরা কেঁপে ওঠছে বারবার। কিছু সময়ের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়। আয়াজ ছেড়ে দেয় রুয়াত কে। রুয়াতের বাহুতে হাত রাখে। হাঁপিয়ে ওঠেছে দু’জনে।

মাতাল ভরা কণ্ঠস্বর আয়াজের। রুয়াতের নেশা যেনো তাকে তড়িৎ চৌম্বুকে মতো করে টানছে। চেয়েও নিজেকে আজ সংযত রাখতে পারছে না। অনুভূতিরা যেনো তীব্রভাবে হানা দিচ্ছে।

-‘বড্ড প্রেম পাচ্ছে প্রেয়সী। সকালের শাস্তি ভোগ করতে হবে এখন।’

রুয়াত কে কোলে তুলে নেয় আয়াজ। বেডে শুইয়ে দেয়। নিজের টি-শার্ট খুলে সোফায় রাখে। চোখে মুখে খুশির ঝলক। রুয়াতের দু’পাশে হাত রেখে অনেকটাই ঝুঁকে আসে। মারাত্মক রূপ যেনো ভর করেছে রুয়াতের উপর। নিঃশ্বাস উপচে পড়ছে রুয়াতের চোখ মুখে। লোকটি কে প্রত্যাখান করার সাহস নেই তার। ভালোবাসায় মেতে উঠে এমপি সাহেব। মৃদু শব্দ করে ওঠছে মেয়েটা। চুপিসারে সায় দেয় রুয়াত। দু’জন দু’জনায় মত্ত। রুয়াতের চোখ থেকে সুখের পানি পড়তেই আয়াজ তা মুছে ফেলে। এটা নিত্যদিনের কাজ। ক্লান্ত হয়ে আয়াজ শুয়ে পড়েছে প্রেয়সীর বক্ষে। রুয়াত হাত রাখে প্রেমিকের পিঠ বরাবর। নিভু নিভু হয়ে আসছে আয়াজের চোখ। বেসামাল স্বরে বলে-

-‘তোমার সঙ্গ পেলে কেনো দেহ শিউরে ওঠে? বলো না প্রেয়সী!’

#চলবে….

[আসসালামু আলাইকুম। ব্যস্ততার কারণে কাল গল্প চেয়েও দিতে পারিনি। এবার থেকে নিয়মিত গল্প পোস্ট দিবো। ইন শা আল্লাহ। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_২৫
#মোহনা_হক

-‘রুয়াত মা আয়াজ উঠেনিএখনো?’

সোফায় বসে ইনিমা আর রুয়াত একসাথে বসে কথা বলছিলো। মায়া চৌধুরীর কথা শুনে মাথা তুলে তাকায় তার দিকে। দেয়াল ঘড়িতে একবার তাকালো এগারোটা ত্রিশ বাজে। আয়াজ কখনো এতো সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকেনি। উঠে দাঁড়ায় রুয়াত।

-‘মা আসার সময় ওনাকে দেখেছিলাম ঘুমাচ্ছে।’

ভ্রু কুচকে এলো মায়া চৌধুরীর। এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছে? কাল রাতে তো ফজলুল চৌধুরী আর আরহাম কে বলেছিলো আজ প্রচারের কাজে বের হবে। তাহলে এতক্ষণ ঘুমাচ্ছে কেনো?

-‘ওকে তুলে দাও যাও।’

মাথা নেড়ে রুয়াত উপরে চলে যায়। ফজলুল চৌধুরী এসেছে বসেছেন বাড়ির বড় বউয়ের পাশে। ইনিমা মুচকি হাসলো তার শ্বশুড় কে দেখে। রুয়াত রুমে এসে দেখে আয়াজ উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে। আয়াজের পিঠে
হাত দিয়ে গলার আওয়াজ হালকা উঁচু করে বলে-

-‘শুনছেন উঠুন।’

রুয়াতের কণ্ঠস্বর শুনে আয়াজ মাথা তুলে তাকায়। চোখগুলো একটু একটু লাল হয়ে আছে। সারা মুখে গম্ভীরতা। ঘুম ঘুম স্বরে বলে-

-‘কয়টা বাজে?’

-‘এগারোটা বাজতে চললো। আসলে মা বলেছে আপনাকে ঘুম থেকে তুলে দিতে।’

আয়াজ তার এক হাত কপালে রাখে। এতো সময় ঘুমিয়েছে। কাল রাতে তো একটুও ঘুমায়নি। রুয়াত উঠে আয়াজের পাঞ্জাবী বের করে দেয়।

-‘এখানে আসো রুয়াত।’

ধীর পায়ে রুয়াত আয়াজের সামনে দাঁড়ায়।
-‘জড়িয়ে ধরো একটু আমাকে।’

স্বাভাবিক কন্ঠস্বর আয়াজের। রুয়াত ও কিছু বললো না। আয়াজ কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। প্রেয়সী কে বুকে জড়িয়ে ভালো লাগছে আয়াজের। অন্য রকম ভালো লাগা। রুয়াত কে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রেখে ছেড়ে দেয় আবার। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুয়াত রুমে নেই। মেয়েটা কে একদমই শান্ত ভেবেছিলো আয়াজ। এখন দেখছে দু দন্ড কোঁথাও শান্ত হয়ে থাকে না। কাল সুন্দর করে বলে দিয়েছিলো যে আয়াজ যতক্ষণ বাসায় থাকবে ততক্ষণ তার চোখের সামনে থাকতে। কালকের কথা বোধহয় আজকের দিনটা শুরু হতেই না হতে ভুলে গিয়েছে। আয়াজ রুয়াতের নামিয়ে রাখা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে নেয়। উপরে কালো রঙের কটি। হাতে ঘড়ি। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে একদম পরিপাটি হয়ে নিচে আসে সে। সোফায় পায়ের উপর পা তুলে আরহাম মোবাইল দেখছে। তার গায়েও সাদা পাঞ্জাবী আর উপরে কালো রঙের কটি। দু’ভাই সেম সেম পড়েছে। রুয়াত টেবিলে নাস্তা এনে রাখার সময় একবার আয়াজ আর আরহাম কে খেয়াল করে। এরা কি আজ শোক পালন করতে যাবে নাকি আজ? মুচকি হাসে রুয়াত। আয়াজ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আর পাশের সোফায় আরহাম বসে। রুয়াত আবার ইনিমার কাছে আসে। রুয়াত এখনো জানে না যে তারা কোঁথায় যাচ্ছে। কিন্তু ইনিমা কে আরহাম বলেছে তারা আজ কোঁথায় যাবে। আয়াজ আর আরহাম এক সাথে নাস্তা করে নেয়। ফজলুল চৌধুরী আর মায়া চৌধুরী ইনিমা রুয়াতের সাথে খেয়ে নিয়েছে। আয়াজের পাশে রুয়াত দাঁড়িয়ে আছে।

দু ছেলে আর বাবার তিনজনের একই রকমের পোশাক। রুয়াতের জানার কৌতূহল বেশ কিন্তু সবার সামনে চুপ করে আছে। তারা আসলে যাবে কোঁথায়? মায়া চৌধুরী দু ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ফজলুল চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। প্রতিবার ইলেকশনের সময় একবার না একবার আয়াজের সাথে তারা দু’জন ও মিছিল বা বিভিন্ন সভায় যোগ দেয়। কাল এগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছিলো। ফজলুল চৌধুরী ছেলের কথায় যান সব সময়। নাহলে তার ছেলে আবার রাগ করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আরহাম কে রাজি করাতে আয়াজের কোনো কষ্ট করতে হয় না। রাজনীতির টুকটাক বিষয়ে সে জড়িত। যদিও কখনো এতো মূল্য দিয়ে কাজ করেনি।

-‘মায়া হয়েছে তোমার? আমাদের কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে।’

মায়া চৌধুরী সবার আড়ালে নিজের ওড়না দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে নেয়। গতবার কি কাহিনীটাই না হলো। ছেলে কে এসব থেকে সরে আসার কথা বলতে পারবে না। যেনো সে সাহসটুকু ও নেই তার।

-‘সাবধানে থেকো তোমরা। আর আরহাম শুন আয়াজের মাথা হুটহাট গরম হয়ে যায়। ওকে সামলে নিস।’

আরহাম তার মাকে এক পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বলে-
-‘তুমি এতো চিন্তা করো না মা।’

আয়াজ একবার রুয়াতের দিকে তাকায়। এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে প্রেয়সী কে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার থেকে বিদায় নিতে। অদম্য ইচ্ছেটা কে বির্সজন দিয়ে দিলো। রুয়াত অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বের হয়ে আসে বাসা থেকে। বাসার বাহিরে তিনটার মতো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আয়াজরা চলে যাওয়ার পর গাড়িগুলো ও তাদের পিছন পিছন চলে যায়। জাফরি কে ঘুম পাড়িয়ে ইনিমা রান্নার কাজে নিচে আসে। এসে দেখে রুয়াত একা একা সবজি কাঁটছে। ইনিমার আগমনে রুয়াত তার দিকে তাকায়।

-‘আপু আজ ওনারা কোঁথায় গিয়েছে জানো কিছু?’

অবাক হয়ে ইনিমা রুয়াতের দিকটায় তাকালো।
-‘তুই জানিস না কিছু?’

দু’দিকে মাথা নাড়ায় রুয়াত। ইনিমা বেশ অবাক হয়। আয়াজ কি কিছু বলেনি রুয়াত কে।
-‘সামনে তো ইলেকশন তাই তারা প্রচার করবে আজ। আয়াজ এ ব্যাপারে তোকে কিছু বলেনি?’

রুয়াতের মন খারাপ হয়ে যায় পরক্ষণেই মনে আসে আয়াজ জানে রুয়াত এসব পছন্দ করে না। তাই হয়তো বলেনি রুয়াত কে। কিন্তু আয়াজের সাথে সম্পৃক্ত কিছুই এখন আর রুয়াতের অপছন্দ নয়। রাজনীতি জিনিসটা এখন খুব সহজ স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিচ্ছে। প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যেও যদি আয়াজ তাকে তার প্রাপ্য সময়টুকু দিতে পারে তাহলে সে মানুষ টা নিঃসন্দেহে ভালো। আর মানুষটার কাজ ও। এখনো আয়াজের নামে তেমন খারাপ কিছুই শোনেনি। এমনটা না যে রাজনীতি করাটা কে পছন্দ করে! শুধুমাত্র স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিচ্ছে সে। রুয়াত তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে। রান্না শেষ হলে উপরে চলে আসে। একেবারে শাওয়ার নিয়ে নেয়। কাল বৃষ্টি হয়েছিলো কিন্তু আজ আবার গরম পড়ছে। আয়নার সামনে বসে বসে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকাচ্ছে। তখনই জাফরি দৌড়ে আসে। রুয়াত জাফরির হাত ধরে বলে-

-‘কি হয়েছে জাফরি বাবু? তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছো কেনো?’

হাঁপাতে লাগলো জাফরি। যেনো এটুকু দৌড় দিয়েই অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
-‘নানুভাই এসেছে। নিচে আসো।’

রুয়াতের চোখ মুখে খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। নানুভাই মানে হান্নান সাহেব। তাড়াতাড়ি করে নিচে এসে দেখে ঠিকই তার বাবা এসেছে। রুয়াত তড়িঘড়ি করে তার বাবার পাশে দাঁড়াতেই হান্নান মজুমদার মেয়েকে বুকে টেনে নেয়। মায়া চৌধুরী এতক্ষণ হান্নান মজুমদারের সাথেই কথা বলছিলেন। একদম হুট করে এসে চমকে দিয়েছে সবাই কে। রুয়াত তার বাবা কে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

-‘ মা আসেনি?’

চারপাশ উঁকি দেয় রুয়াত। মেহরুবা আসেনি বাসা খালি পড়ে থাকবে সেজন্য। তার খুব ইচ্ছে হয়েছে দুই মেয়েকে প্রাণ ভরে দেখবে আর ঠিক একারণেই পাঠিয়েছে হান্নান মজুমদার কে। রুয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

-‘না আসেনি।’

হান্নান মজুমদার জাফরি টেনে কোলে নেয়। এখন আর জাফরি কারও কোলে উঠতে চায় না। তাও সবাই জোর করে কোলে নেয়। সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খায়। হান্নান মজুমদার প্রথমে নাকোচ করে দিলেও দু মেয়ের জোরাজুরিতে আবার খেতে বসলেন। খাবার খেয়েই রওনা দিয়েছিলেন তিনি। ইনিমা চা বানানোর কথা বললে এর আগেই রুয়াত বলে উঠে সে চা বানাবে। তাই ইনিমা আর কিছু বলেনি। রুয়াত চা বানিয়ে এনেছে। হান্নান মজুমদার, মায়া চৌধুরী, ইনিমা সবাই বসে বসে চা খাচ্ছে। রুয়াত চা খায় না বেশি। যখন মাথাটা একটু ব্যাথা করে তখন খায়। হঠাৎ হান্নান মজুমদার বলে উঠে।

-‘আপা আমি কেনো এসেছি সেটাই তো বলা হয়নি! আসলে মেহরুবার ইচ্ছে হয়েছে তার মেয়েদের দেখবে। তাই আমায় পাঠিয়েছে। আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে দু তিনদিন মেয়েরা আমাদের কাছে থাকবে।’

-‘আরে ভাই এসব কি বলছেন? আমি তো রাজি আছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সামনে ইলেকশন আর এসময়ে আয়াজের কাজের চাপ খুব বেশি থাকে। রুয়াত যদি পাশে থাকে তাহলে ছেলেটা একটু ভরসা পাবে।’

রুয়াত একবার মায়া চৌধুরীর দিকে তাকাচ্ছে আবার হান্নান মজুমদারের দিকে তাকাচ্ছে। মা কে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। যেনো কয়েক বছর দেখা হয়না।

-‘এক মেয়ে যাবে আরেক মেয়ে যাবে না। মেয়ের খারাপ লাগার আগে আমার খারাপ লাগা শুরু হয়ে যাবে।’

মায়া চৌধুরী দেখলেন হান্নান মজুমদারের মুখটা ছোট হয়ে গিয়েছে কথাটা বলতে গিয়ে।
-‘আমি আয়াজ কে বুঝিয়ে বলবো। সমস্যা নেই রুয়াত ও যাবে আপনাদের সাথে।’

হান্নান মজুমদার খুশি হয়ে গেলেন। মায়া চৌধুরীর কথা মতো ইনিমা আর রুয়াত চলে গেলো তাদের জামা কাপড় গোছাতে। মনে মনে একটু আধটু ভয় কাজ করছে আয়াজ কে না বলে যাচ্ছে সে বাড়িতে। রুয়াত তার ভয়টা কে একপাশে রাখলো। দু দিনের বেশি থাকবে না। আয়াজ রাগ করলে ঠিক মানিয়ে নিবে। রুয়াত রেডি হয়ে তার ব্যাগ নিয়ে ইনিমার রুমে আসলো। ইনিমা জাফরি কে রেডি করাচ্ছে। রুয়াতের দিকে একবার তাকায় ইনিমা।

-‘আপু তোমার দেবর কে না বলে যাচ্ছি। ওনি যদি কিছু বলে?’

ইনিমা জাফরির চুল আঁচড়ে দিচ্ছে।
-‘আয়াজ মোটেও সেরকম নয়। কিছু বলবে না দেখে নিস। আর আরহাম ও তো জানে না। মা ঠিক ম্যানেজ করে নিবে দেখিস।’

বেডে এসে বসে রুয়াত। মোটেও শান্তি লাগছে না তার। বরং বেশ অস্থির অস্থির লাগছে। ইনিমা আর জাফরির রেডি হওয়া শেষে তারা তিনজন নিচে নামে। হান্নান মজুমদার মায়া চৌধুরীর থেকে বিদায় নেয়। মেয়েদের নিয়ে চলে আসে। মায়া চৌধুরী কে ও বলা হয়েছিলো তিনি বলেছেন পরে এক সময় আসবে।

বাসায় এসে রুয়াত ভীষণ খুশি। সারাক্ষণ মায়ের পিছন পিছন ছিলো। তার আর এই স্বভাব গেলো না। রাত বারোটা পর্যন্ত আড্ডা দিলো সবাই। ইনিমার শরীর খারাপ থাকায় ইনিমা আগেই ঘুমিয়ে পড়ে। রুয়াত পুরো আড্ডা চলাকালীন সময়ে বসেছিলো।
রুমে এসে হাত মুখ ধুয়ে নেয়। নাহলে গরমে গালের উপরের চামড়ায় জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রুয়াত নিজেকে একবার দেখে নেয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে আয়াজের দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন। মুচকি হাসে রুয়াত।

.

বাসায় এসে আয়াজ রুয়াত কে পায়নি। না আছে রুয়াত না আছে ইনিমা। আরহাম ও ইনিমা কে খুঁজে পাচ্ছে না। আয়াজ ফ্রেশ হয়ে মায়া চৌধুরীর রুমে আসে। তিনি শুয়ে আছেন।

-‘মা ঘুমাচ্ছো?’

মায়া চৌধুরী উঠে বসে ছেলের কথা শুনে।
-‘না বাবা আয়। ঘুমায়নি।’

আয়াজ তার মায়ের পাশে এসে বসে।
-‘বাসায় আজ কাউকে দেখতে পারছি না যে? তারা কোঁথায়?’

-‘আজ হান্নান সাহেব এসেছিলো। ওনি ওনার মেয়েদের নিয়ে গিয়েছেন। আমিও অনুমতি দিয়েছি।’

মায়া চৌধুরীর কথায় আয়াজের ভ্রু কুচকে আসে। রুয়াত ও বাড়িতে গিয়েছে অথচ সে জানে না। রুয়াত কি একবারও বলার প্রয়োজন বোধ করলো না? আয়াজ আর কিছু বললো না। মায়া চৌধুরীর মেডিসিন গুলো চেক করে চলে আসে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। টায়ার্ড সে। শুয়ে পড়ে। রাতে খাবার মতো মুড নেই। আরহাম খাওয়ার সময় আয়াজ কে কল দেয় কিন্তু সে বলে দিয়েছে খাবে না। পাশের জায়গাটা খালি। প্রেয়সী কে মনে পড়ছে খুব। আয়াজ আর নিজের রাগ পোষণ করলো না। রুয়াতের নাম্বারে কল দেয়।

রুয়াত এখনো ঘুমায়নি। ঘুম আসছিলো না। হঠাৎ আয়াজের কল পেয়ে ওঠে বসে। ভয় হচ্ছে প্রচুর। আয়াজ যদি কিছু বলে? বুক ধুকপুক শুরু হয়েছে। কল রিসিভ করে সে। সাথে সাথে আয়াজের গম্ভীরমুখের কথা শুরু।

-‘তুমি যে গিয়েছো আমায় বলেছো? কল দেওয়ার ও প্রয়োজন মনে করোনি?’

ঢোক গিলে রুয়াত।
-‘বাবার সাথে এসেছি। সত্যিই আমি কল দিবো ভেবে রেখেছি। এক্ষুনি দিতাম।’

অপাশ থেকে আয়াজ চুপ। রুয়াত আবারও বলে-
-‘শুনুন না রাগ করেছেন? খেয়েছেন আপনি?’

আয়াজ ছোট করে বলে-
-‘নাহ্।’

ভ্রু জোড়া মিলিয়ে যায় রুয়াতের।
-‘কেনো? খেয়ে আসুন যান।’

-‘ভালো লাগছে না। আমি সত্যিই রেগে আছি। তুমি একবার আমায় কল দিয়ে বলতে। বলেছো? আমাকে মানুষ বলে মনে করো না তুমি?’

-‘আমার কি বাবার সাথে আসার অধিকার নেই?’

-‘কখন বলেছি অধিকার নেই? তোমাকে আমি সম্মান করি। তোমার সব চাওয়া পাওয়া কে প্রাধান্য দেই৷ তারপরও এসব বলছো?’

রুয়াত মোবাইলটা কান থেকে সরিয়ে নেয়। পরক্ষণে আবার কানে নেয় মোবাইল।
-‘ভালোবাসি এমপি সাহেব। খুব বেশি।’

এই কথা শোনার জন্যই যেনো আয়াজ অপেক্ষা করছিলো৷ সব রাগ যেনো উবে গিয়েছে।
-‘বিশ্বাস করো এই কথাটি যদি সামনে থেকে বলতে আজ তুমি

আয়াজের কথা শেষ করতে দিলো না রুয়াত। সে ভালো করেই অবগত যে আয়াজ এখন কি বলবে।
-‘খেয়ে আসুন। যান।’

-‘খুব মনে পড়ছে তোমায়৷ এখন মনে হচ্ছে কি তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। প্রতিটি মুহুর্তে এখন আমার প্রেয়সী কে মনে পড়ছে।’

রুয়াতের মনটা কেঁপে ওঠে। মানুষটা কে ছাড়াও তার থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
-‘আমার ও আপনাকে খুব মনে পড়ছে এমপি সাহেব।’

আয়াজ হাসে প্রেয়সীর কথা শুনে।
-‘উহু মনে পড়ছে বললে হবে না। কাল বাসায় আসতে হবে। তোমাকে আদর দেওয়া ছাড়া ঘুমোতে পারি না আমি।’

রুয়াতের গালে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। পাগল পুরুষ একদম।

#চলবে….

[আসসালামু আলাইকুম। সবাই বেশি বেশি রেসপন্স করার চেষ্টা করবেন🥺। আমার ভুলত্রুটি বরাবরের মতো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here