#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৮
#মোহনা_হক
-‘রুয়াত দরজা খোল। কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোকে। এভাবে কি কেউ দরজা বন্ধ করে রাখে?’
‘অস্থির হয়ে বসে আছে রুয়াত। ভেবে পাচ্ছে না দরজা খুললে তার বোন আয়াজ কে দেখে কি মনে করবে। দরজা তো বন্ধ করেছে আয়াজ তাহলে ওকে বলবে কেনো? কিন্তু তার যে বোন নিশ্চয়ই তাকে চেপে ধরে বসে থাকবে কিছু শোনার জন্য।’
‘রুয়াত কে এভাবে ভয় পেতে দেখে ভ্রু কুচকালো আয়াজ।’
-‘তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?’
‘মাথা তুলে একবার আয়াজ কে দেখলো রুয়াত।’
-‘আপু যে ডাকছে দরজা খুলুন আগে।’
‘আয়াজ দরজা খুলে দিলো। দরজা খোলার পর আয়াজ দেখে বেশ অবাক হলো ইনিমা। এসেছিলো বোন কে ডাকতে এখন এসে দেখে তার দেবর ও উপস্থিত এখানে।’
‘ইনিমা হেসে বললো-‘
-‘তুমি কখন এলে?’
-‘বেশিক্ষণ হয়নি।’
-‘এখানে কেনো?’
‘আয়াজ পিছন ফিরে একবার রুয়াত কে দেখে নিলো। জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একদম মেয়েটা।’
-‘আপনার বোন কে একটু দেখতে এসেছিলাম। আর হ্যাঁ দরজাটা আমিই বন্ধ করেছিলাম। আসছি আমি।’
‘ব্যাস এইটুকু বলেই আয়াজ চলে গেলো। আয়াজ দরজা বন্ধ করেছে কথাটা ইনিমা কে বলে দিলো। কারণ রুয়াত এ নিয়ে চিন্তা করছে না জানি ইনিমা তাকে কি বলে। তাই কথাটি বলেই বের হয়ে গিয়েছে রুম থেকে। রুয়াত আয়াজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যাক একটু হলেও বেঁচে গিয়েছে সে।
‘ইনিমা রুয়াতের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো-‘
-‘কি বলেছে আয়াজ তোকে?’
‘রুয়াত বোনের দিকে তাকালো। সে জানে তার বোন অন্য কিছু ভেবে বসে আছে এখন শুধু রুয়াতের মুখ থেকে শোনার জন্য অধীর আগ্রহে আছে।’
-‘কিছু বলেনি।’
‘ইনিমা রুয়াতের গাল ধরে বললো-‘
-‘মিথ্যে বলিস না।’
‘রুয়াত জানে তার বোন আজ না বললে ছাড়বে না, তাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলে দিলো ইনিমা কে। অবাক হয়ে শুনছে রুয়াতের কথা কারণ তার দেবরের যে এতো প্রে’ম তা রুয়াতের সাথে বিয়ে ঠিক না হলে জানা হতো না।’
‘শাড়ির যে জায়গায় আয়াজ ধরেছে ওই জায়গা দেখিয়ে রুয়াত বললো-‘
-‘দেখো এখানটায় তোমার দেবর ধরেছে। এবারও কি মনে হচ্ছে আমি একটা কথাও মিথ্যে বলেছি?’
‘ইনিমা হেসে রুয়াতের কাঁধ জড়িয়ে ধরলো।’
-‘না বোন বিশ্বাস করেছি। আমি শুধু এই কথাই ভাবি আয়াজের এখনই এই অবস্থা বিয়ের পর জানি কি হবে।’
‘ইনিমার বলা কথা কেনো জানি ভীষণ লজ্জা পেলো রুয়াত। আজ আয়াজের কার্যকলাপের জন্য লজ্জা পাচ্ছে সে।’
-‘হয়েছে তুমি রেডি হবে না? এভাবে মেয়ের পাশে দাঁড়াবে?’
‘ইনিমা এখনো রেডি হয়নি। এতো কাজের চাপ ছিলো আজ। তাই আর রেডি হওয়া হয়নি তার।’
-‘আরে আর বলিস না কাজ করতে করতে আমার দিন যায় আর আসে। অন্য দিনের তুলনায় আজ বেশি কাজ পড়ে গিয়েছে। এখনই রেডি হবো।’
‘ইনিমা তড়িঘড়ি করে রেডি হওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রুয়াত তার বোন কে সাহায্য করলো। ইনিমা ও তার বোনের সাথে মিল রেখে হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে। আবার রুয়াতের মতো সেজেছে। বোঝার উপায় রাখছে না কে ইনিমা আর কে রুয়াত। কিন্তু ইনিমা একটু মোটা হওয়াতে বোঝা যাচ্ছে।’
(*)
-‘মা তুমি আজ রুয়াত কে জোর করে আমাদের বাসায় রাখবে।’
‘ছেলের কথায় সায় দিতে পারছে না মায়া চৌধুরী। যদি হান্নান সাহেব না রাখতে চান তখন কিভাবে রাজি করাবে আয়াজ কে। আর রুয়াত ও থাকতে চাইবে কিনা সন্দেহ।’
-‘আহা আয়াজ যদি রুয়াত না থাকতে চায়?’
‘আয়াজ চোখমুখ শক্ত করে বললো-‘
-‘ও থাকবে। তুমি শুধু হান্নান আঙ্কেল কে ম্যানেজ করবে।’
‘মায়া চৌধুরী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-‘
-‘আমি ওনাকে বলবো। ম্যানেজ করার ও চেষ্টা করবো। তুমি এমন করো না এখন।’
‘আয়াজ শান্ত হলো।’
-‘আর শুনো রুয়াত কে তুমি তোমার আশেপাশে রাখবে। অনেক মানুষই থাকবে। ও যেনো একা একা কোঁথাও না যায়।’
‘মায়া চৌধুরী অবাক হলেন ছেলের কথায়। তার ছন্নছাড়া ছেলেটা আজ রুয়াতের জন্য ভালোবাসা দেখাচ্ছে। আশ্বাস দিলেন ছেলেকে। কারণ তার ছেলে নাহলে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। মেয়েটা কে অনেক ভালোবাসে। নাহলে কি আর মায়ের সামনে এসব বলে। মুচকি মুচকি হাসলেন। আয়াজ নিজের কথাগুলো বলে চলে গেলো। মূলত এর জন্যই আসা মায়ের কাছে।’
‘জাফরির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সব মানুষ এসে পড়েছে। একটু পরেই মূল অনুষ্ঠান শুরু হওয়া বাকি। এর ফাঁকে আয়াজ একটু রেডি হয়ে নিলো। পাঞ্জাবি ছেড়ে আজ অন্য কিছু পড়লো। ব্ল্যাক কালারের ব্লেজার পড়ে নিলো। চুলগুলো সুন্দর করে জেল দিয়ে সেট করে নিলো। রেডি হওয়া শেষে নিচে নামলো। বেশ কিছু মানুষের সাথে গিয়ে কথা বলছে কারণ তারা আয়াজের থেকে একটু উপরের প্রফেশনে আছে। বেশ মানুষ এসে হাত মিলালো আয়াজের সাথে। ভদ্রতা নম্রতা সহকারে কথা বলছে আয়াজ।’
‘রুয়াত, ইনিমা আর জাফরি নামছে। আয়াজের কথা বলার মাঝেও নজর পড়লো রুয়াতের দিকে। তার সুন্দর প্রেয়সী। রুয়াত কে দেখলেই সুখের হাসি ফুটে ওঠে। চোখ সরিয়ে নিয়ে পুনরায় কথা বলছে মানুষের সাথে। সবার সাথে কথা বলা শেষ করে আয়াজ আরহামের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।’
‘আরহাম তার ভাইকে দেখে একটু হাসলো।’
-‘তোর প্রেয়সীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালি না?’
‘প্রতিউত্তরে হাসলো আয়াজ।’
-‘সময় হলে ঠিকই দাঁড়াবো। কিন্তু তুমি আপাতত জোর করে দাঁড়া করিয়ে রাখবে তোমার শালীকা কে এখন। আমাই গিয়ে দাঁড়ালে সে আবার অন্য কিছু মনে করবে। এখন যাও ওকে নিয়ে আমার পাশে এনে দাঁড়া করাও।’
‘আরহাম ভেঙচি কাটলো।’
-‘আমি এসব কাজ করি না।’
‘আয়াজ হেসে বললো-‘
-‘তোমার ব্যবসা লাটে উঠিয়ে দিবো।’
‘আরহাম ঘাবড়ে গিয়ে তাকালো তার ভাইয়ের দিকে। বিশ্বাস করতে পারছেনা আয়াজ কে। হয়তো উঠিয়েও দিতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি করে রুয়াতের হাত ধরে এনে আয়াজে পাশে দাঁড় করালো। রুয়াত বুঝতে পারলো না কেনো আরহাম এমন করলো।’
‘রুয়াত অবাক হয়ে চেয়ে রইলো শুধু। আরহাম রুয়াতের হাত ধরে বললো-‘
-‘শুনো শালীকা তোমাকে একদম নিরাপদ জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছি। তোমার পাশে যিনি আছেন তিনি খুবই সম্মানীয় ব্যক্তি। তার অনেক পাওয়ার। তুমি আয়াজের পাশে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।’
‘আবার পরক্ষণেই আয়াজের কানে গিয়ে বললো-‘
-‘আমার ব্যবসার দিকে আর নজর দিস না। তোর পাশে যিনি আছেন তার দিকে দিলেই হবে।’
‘কথাটি আরহাম এতো আস্তে বললো রুয়াত ও শুনতে পেলো না দু’জনের কথপোকথন। আরহামের কথা বলা শেষ হলেই সে চলে যায়। রুয়াত মাথাটা উচু করে আয়াজ কে দেখলো। অবশেষে পাঞ্জাবী ছেড়ে অন্য কিছু পড়েছে। রুয়াতের চেয়ে থাকা দেখে আয়াজ ও তাকালো। দু’জনেত চোখাচোখি হয়ে গেলো। দৃষ্টি সরিয়ে নেয় রুয়াত।’
-‘শাড়ি পড়ে কি আমায় মাতাল করতে এসেছো এখানে?’
‘আচমকা আয়াজের শব্দ শুনে তাকায় সেদিকটায়। একটু নিচু স্বরে বললো-‘
-‘আপনি মাতাল হবেন জানলে পড়ে আসতাম না।’
‘আয়াজ অবাক হয়ে চরম পর্যায়ে। কথাটা কি সত্যিই রুয়াত বলেছে? বিশ্বাস হচ্ছে না।’
-‘তোমার কি জ্বর এসেছে?’
‘রুয়াত মাথা নাড়িয়ে বললো-‘
-‘না তো।’
-‘উন্নতি হচ্ছে তাহলে আয়াজের বউয়ের।’
‘আয়াজের বউ কথাটি শুনে শিউরে ওঠে রুয়াত। এই প্রথম অপ্রত্যাশিত কিছু শুনেছে সে। আয়াজ রুয়াত কে তার মায়ের কাছে দিয়ে আসলো। জাফরির কেক কাটা শেষ করে সবাই খাওয়া দাওয়া শুরু করলো। আর সবকিছুর দেখাশোনা করতে আয়াজ ব্যস্ত হয়ে পড়লো। দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে রুয়াত। হঠাৎ হঠাৎ তার ভাবনার মাঝে আয়াজ চলে আসে। তাহলে কি সে মানুষটার মায়ায় পড়ে যাচ্ছে?’
‘হান্নান মজুমদার বাসায় যাওয়ার জন্য তোরজোড় শুরু করলো। মায়া চৌধুরী রুয়াতের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এখনো বলেনি হান্নান মজুমদার কে। রুয়াত চুপিসারে দাঁড়িয়ে আছে শুধু।’
‘মায়া চৌধুরী রুয়াতের হাত ধরে হান্নান মজুমদারের সামনে নিয়ে গেলেন।’
-‘বেয়াই সাহেব আজ আপনার ছোট মেয়েটা আমার বাসায় থাকুক। ওর যত্নের কোনো কমতি রাখবো না কথা দিলাম।’
‘হান্নান মজুমদার মনে মনে রাজি না। কিন্তু তাও বললো-‘
-‘না আপা মেয়েটা তো কয়েকদিন পরেই আপনার কাছে চলে আসবে। আমি এখন চাই মেয়েটা আমার কাছে থাকুক। তখন তো চাইলেও রাখতে পারবো না।’
‘মায়া চৌধুরীর খারাপ লাগলো হান্নান মজুমদারের শেষের কথা শুনে। তার ছেলের আবদার একদিকে আরেকদিকে এমন কথা কথা।’
-‘আজকের দিনটা শুধু। কাল আয়াজ দিয়ে আসবে ওকে।’
‘ইনিমা এসে তার বাবার হাত ধরে বললো-‘
-‘বাবা আজ রুয়াত থাকুক।’
‘মায়া চৌধুরী আর ইনিমা ফিরিয়ে দিতে পারলো না হান্নান মজুমদার। হয়তো আরও কিছু বললে বেমানান হয়ে যাবে। মেয়েটা কে এভাবে ছাড়তে মন চায় না। যেহেতু এ বাড়িতে ইনিমা আছে তাই মেয়েকে রেখে আসছে। শুধু ইনিমার উপর ভরসা করে।’
‘হান্নান মজুমদার ছোট মেয়ের মাথায় চুমু খেলেন। আদুরে স্বরে বললেন-‘
-‘সুন্দরমতো থেকো আম্মা। বাবা আসছি হ্যাঁ।’
‘বাবার কথা শুনে নোনাপানি ছলছল করে এসে পড়লো রুয়াতের চোখে। তার বাবার এরকম নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। বরাবরের মতো রুয়াত তার বাবার এমন কথা শুনলে কেঁদে ফেলে। মেয়েকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন হান্নান মজুমদার। বেশ কিছু সময় পর তারা চলে গেলো। আয়াজ আর আরহাম গিয়ে তাদের পৌঁছে দিলো।’
‘রুয়াত ইনিমার সাথে বসে কথ বলছে। সাথে মায়া চৌধুরী ও ফজলুল চৌধুরী আছে। কিছুক্ষণ আগে আয়াজ আর আরহাম ফিরেছে বাসায়। আরহাম আর উপরে যায়নি। এখানেই বসে গল্প শুরু করে দিয়েছে। আরহামের কোলে জাফরি দুষ্টুমি করছে বসে বসে। আয়াজ তার ব্লেজার খুলে একটা টি-শার্ট পড়ে নিচে আসলো। রুয়াতের পাশে এসে বসে গেলো।’
‘ফজলুল চৌধুরী বেশ হাসির কথা বলছে। আর মায়া চৌধুরী কে বারবার কিছু না কিছু বলে রাগাচ্ছে।’
-‘আমি তো আগে আরহামের মা কে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। তাকে তার বাপের বাড়িতেও থাকতে দিতাম না।’
‘ফজলুল চৌধুরীর কথায় যেনো আরও রেগে গেলে মায়া চৌধুরী। ‘
-‘কথায় লাগাম দাও। এখানে তোমার ছেলে, ছেলের বউ, নাতনি রয়েছে ঠিকভাবে কথা বলো।’
‘রুয়াত হেসে দিলো এমন মিষ্টি ঝগড়া দেখে। পাশ থেকে সোফায় আধশোয়া আয়াজ তাকাচ্ছে তার প্রেয়সীর দিকে। মেয়েটা হাসলেই মুখে হাত দিয়ে ফেলে।’
‘মায়া চৌধুরী রেগে উঠে চলে গেলো। সাথে সাথে ফজলুল চৌধুরী ও উঠে চলে গেলো। আজ তার বারোটা বেজে যাবে। তিনি তো শুধু হাসানোর জন্য এসব বলেছে।’
‘আয়াজ আরহামের উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘ভাইয়া তোমার একটুও লজ্জা লাগলো না বাবার কথা শুনে?’
‘আরহাম ভ্রু কুচকে বললো-‘
-‘কেনো লজ্জা লাগবে? তেমন তো কিছুই বলেনি।’
‘আয়াজ তার চোখগুলো ছোট ছোটো ফেললো।’
-‘তোমার তো লজ্জা নেই লাগবেও বা কিভাবে?’
-‘তুই এখন যা শুরু করেছিস বিয়ের পর বাবার মতো ও এমন করবি তুই। তোর যদি এতোই লজ্জা থাকতো তুই উঠে যেতে পারলি না?’
‘ইনিমা দাঁত কেলিয়ে হাসছে। এ দু’জনের ঝগড়া এতো ভালো লাগে তার। আরহাম বেখেয়ালিতে মাঝে মাঝে উল্টো পাল্টা বলে ফেলে। যার কারণে পরে ইনিমা আরহাম কে রাগায় এসব বলে।’
‘আয়াজ রুয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
-‘বিয়ের পর কি করবো সেটা তোমার শালীকা দেখতেই পাবে। আমার লজ্জা নেই বলেই বসেছিলাম। তুমি তো শুধু হেসেছিলে। আমার মুখে তো একটুও হাসি ছিলো না। তার মানে কি তুমি মজা নিয়েছো?’
‘আরহাম উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। দু’হাত তুলে বড় একটা
মোনাজাত ধরলো। আর বিড়বিড় করে বলা শুরু করলো-‘
-‘আল্লাহ এই নির্লজ্জ ছেলেকে একটু রহমত দিও যাতে আর আমার পিছনে না লাগতে আসে।’
‘আয়াজ হাসছে ভাইয়ের কান্ড দেখে। সাথে সাথে সবাই হেসে দিলো। আরহাম এতো মজা করতে পারে। সারাক্ষণ দু’ভাইয়ের এভাবে খুনশুটি লেগেই থাকে। আরহাম যে এতো রসিকতা করতে পারে তা আয়াজকেও হার মানায়। তবে দু’জন দু’জন কে বড্ড ভালোবাসে।’
‘আরহাম একটা দরকারে ইনিমা কে নিয়ে উপরে চলে আসলো। আয়াজ জাফরির সাথে খেলছে। রুয়াত দূরে সরতে গেলেই হাত ধরে ফেললো আয়াজ।’
-‘কোঁথায় যাচ্ছো?’
-‘না মানে যাচ্ছি না।’
‘আয়াজ রুয়াতের হাত টেনে ধরলো। জাফরি আয়াজের বুকে মাথা দিয়ে দেখছে। আয়াজ জাফরির উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘তোমার মিম্মিম কেনো তোমার চাচ্চুকে বুঝতে চায় না বলো তো।’
‘জাফরি যেভাবে ছিলো সেভাবেই রইলো। আয়াজের কথায় ঠোঁট উল্টে ফেললো। অর্থাৎ সে জানে না। রুয়াত জাফরিকে দেখে আয়াজের দিকে তাকালো।’
‘আয়াজ রুয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো-‘
-‘তোমার কাছে আমি আমার গম্ভীরতা, কঠোরতা, আগুনের ন্যায় ভয়ংকর রূপ সব বিলীন দিলাম প্রেয়সী। ‘
#চলবে….
#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_০৯
#মোহনা_হক
‘সেই সাতসকালে রুয়াত রেডি হয়ে বসে আছে। হান্নান মজুমদার এর ফাঁকে কয়েক হাজার কল দিয়ে ফেলেছেন। তাই খুব তাড়াতাড়ি রেডি হয়েছে। কিন্তু যিনি পৌঁছে দিয়ে আসবেন তার খবর নেই। আয়াজ এখনো ঘুমাচ্ছে। কাল রাতে আবার কি কাজে বাহিরে গিয়েছিল ফিরতে প্রায় চারটার মতো বেজেছে। এজন্য এখনো ঘুমাচ্ছে। মায়া চৌধুরী দু’বার গিয়েও ফিরে এসেছেন। আর কি করার রুয়াত বসে বসে অপেক্ষা করছে।’
‘ফজলুল চৌধুরী রুয়াতের পাশে এসে বসলেন। মাথায় হাত দিয়ে বললেন-‘
-‘আজ থেকে যাও না মা।’
‘রুয়াত হাসলো। আজ থাকা কোনো ভাবেই সম্ভব না। বাবা বারবার কল দিচ্ছে তার উপর কিছুদিন পর এক্সাম। এখানে থাকলে কোনো কিছুই হবে না।’
-‘আঙ্কেল আজ তো থাকা সম্ভব নয়। বাবা কল দিচ্ছেন যাওয়ার জন্য। ‘
‘ফজলুল চৌধুরী হাসলেন রুয়াতের কথা শুনে। মেয়েটা একটু নিচু স্বরে কথা বলে সব সময়। আর তার সাথে সব সময় হেসে কথা বলে। জিনিসটা ফজলুল চৌধুরীর ভীষণ ভালো লাগে। আয়াজের জন্য এমন একজন কে প্রয়োজন ছিলো। যাক সে নিজেই খুঁজে এনেছে।’
-‘তুমি যে কবে আঙ্কেল ডাকা ছেড়ে বাবা ডাকবে সে অপেক্ষায় আছি। অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। তোমরা দু’বোন একসাথে বাবা ডাকবে। সুন্দর শোনা যাবে।’
‘রুয়াত মুচকি হাসলো। ফজলুল চৌধুরী খুব ভালো একজন মানুষ। ইনিমার বিয়ের পর থেকে রুয়াত কে
মা ছাড়া কথা বলেন না। আর ওনি সব সময় বলতো ইনিমা তার বড় মেয়ে রুয়াত হচ্ছে ছোট মেয়ে।’
‘ফজলুল চৌধুরী গলার আওয়াজ একটু উচুস্বরে বললেন-‘
-‘মায়া আয়াজ এখনো উঠেনি?’
‘মায়া চৌধুরী দৌড়ে আসলেন। আয়াজ কে দু’বার ডাকা হয়েছে কিন্তু সে ঘুমাচ্ছে দেখে আবার চলে এসেছেন। আর ডাকতে যায়নি। আবার একদিকে রুয়াত অপেক্ষা করছে। আরহাম দিয়ে আসতে চেয়েছিল মায়া চৌধুরী রাজি হয়নি। আবার নাহলে আয়াজ বলবে তুমি আমাকে ছাড়া ওকে দিয়ে আসতে বলেছো কেনো। এই কথা ভেবেই আর মায়া চৌধুরী রুয়াত কে আরহামের সাথে দেননি।’
-‘আয়াজ ঘুমাচ্ছে তো। ও কাল রাতে বাহিরে গিয়েছিল চারটার সময় বাসায় এসেছে। এখন মাএ সাড়ে সাতটা বাজে। এজন্য তুলিনি। আচ্ছা আমি ওকে ডাকছি। রুয়াত মা তুমি একটু অপেক্ষা করো।’
‘রুয়াত মাথা নাড়লো। মায়া চৌধুরী আবারও তাড়াহুড়ো করে ছুটলো আয়াজের রুমে। ফজলুল চৌধুরী উঠে গেলেন। ইনিমা এসে রুয়াতের পাশে বসে কথা বলছে। জাফরি তো রুয়াত কে যেতে দিবে না বলছে। ওর মিম্মিম ওকে মায়ের হাতের মাইর খাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেয়। আর মিম্মিম চলে গেলে তো আর
কেউ বাঁচাবে না।’
‘আয়াজ ঘুমাচ্ছে। মায়া চৌধুরী এসে ডাকলেন। মায়ের কথায় আয়াজের ঘুম চলে গেলো। কিন্তু হঠাৎ মাথা এতো ভার হয়ে এলো যে সে মাথাই তুলতে পারছে না। শরীর ও কেমন জানি হয়ে আছে। আর মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না তার জ্বর এসেছে। আয়াজ ধীর গতিতে উঠে বসলো। ছেলের এরকম অবস্থা বুঝতে পারলেন না। ভেবেছে হয়তো ঘুম কম হয়েছে তাই এরকম হচ্ছে।’
-‘বাবা রুয়াত বসে আছে রেডি হয়ে। হান্নান মজুমদার বারবার কল দিচ্ছেন। আমি তো কাল বলেছি তুই গিয়ে দিয়ে আসবি।’
‘আয়াজ উঠে দাঁড়ালো।’
-‘ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
‘মায়া চৌধুরী চলে গেলেন। আয়াজ ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো। আজ অনেক কাজ আছে এভাবে বসে থাকলে সবকিছু পড়ে থাকবে। নিজেকে সব সময় স্ট্রং রাখতে হবে। দ্রুত রেডি হয়ে নিচে নামলো। প্রথমেই চোখ পড়লো রুয়াতের দিকে। ইনিমা আর রুয়াত কথা বলছে। আয়াজ কে দেখা মাত্রই জাফরি দৌড়ে চলে আসলো। আজ আর কোলে নিলো না। মাথা একদম ব্যাথায় ফেটে পড়ে যাচ্ছে।’
‘মায়া চৌধুরী আয়াজের উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘নাস্তা করবি না বাবা?’
‘আয়াজ উত্তর দিলো।’
-‘অফিসে করে নিবো। আর রুয়াত তাড়াতাড়ি এসো আমি বাহিরে আছি।’
‘বলেই আয়াজ বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। রুয়াত সবার থেকে হাসি মুখে বিদায় নিলো। ইনিমা কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কিছু সময়। আসার সময় জাফরি বাবুটা কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। রুয়াতের ভীষণ মায়া হলো বাচ্চাটার জন্য। আসার সময় কোলেও নিয়েছিল। এর মাঝেই আয়াজ গাড়ির হর্ণ দিলো। তাই আর বেশিক্ষণ দেরি করলো না। বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।’
‘রুয়াত গাড়িতে এসে পিছনের সিটে বসে পড়ার আগে আয়াজ বললো-‘
-‘সামনে এসে বসো।’
‘রুয়াত তাই করলো। ড্রাইভিং সিটে আয়াজ বসে আছে। আজ মনেহয় ড্রাইভার নিবে না। গাড়ি স্টার্ট দেওয়া হলো। রুয়াতের মনে একটাই প্রশ্ন আসছে আয়াজ একটাও কথা বলছে না আজ। এ কথা ভাবতে তাকায় ভাবতেই আয়াজের দিকে। আয়াজের দৃষ্টি সামনের দিকে। রুয়াতের একটু সন্দেহ হলো আয়াজ আজ কথা বলছে না কেনো। আনমনে গাড়ি চালাচ্ছে সে। আর এইদিকে মাথা ব্যাথা বেড়েই চলছে। এক সময় আয়াজ কথা বললে বিরক্ত হতো এখন কথা বলছে না দেখে মন খারাপ হচ্ছে রুয়াতের। ভিতর ভিতর অস্থির লাগা শুরু করলো। আবারও তাকালো আয়াজের দিকে। না এবারও তাকাচ্ছে না আয়াজ।’
‘রুয়াত আয়াজের উদ্দেশ্যে বললো-‘
-‘শুনছেন?’
‘আয়াজ কিছু বললো না। বিষয়টা মোটেও ভালো লাগেনি রুয়াতের। এরকম করার মানে বুঝছে না। কাল তো ঠিকই কথা বলেছিলো আজ বলছে না কেনো? না একটুও ভালো লাগছে না তার। আবারও বললো-‘
-‘কিছু হয়েছে আপনার?’
‘আয়াজ কথা বললো এবার। তবে রুয়াতের দিকে না তাকিয়েই।’
-‘মাথা ব্যাথা করছে।’
‘রুয়াত খেয়াল করলো আয়াজের কন্ঠস্বর অন্য রকম শোনাচ্ছে।’
-‘একটু আমার দিকে তাকাবেন?’
‘আয়াজ তার প্রেয়সীর এতো সুন্দর আবদার ফেলতে পারলো না। গাড়িটা মাঝ রাস্তায় থামিয়ে দিলো। তারপর তাকালো রুয়াতের দিকে।’
-‘তাকিয়েছি। এখন?’
‘রুয়াত ঘাবড়ে গেলো। তার চোখে একটা জিনিস পড়েছে আয়াজের চোখ অতিরিক্ত লাল হয়ে আছে। যা আগে কখনো দেখেনি। কিন্তু আমতাআমতা করে বললো-‘
-‘এভাবে তাকাতে বলি নি।’
‘আয়াজ দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। পূনরায় আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। রুয়াত আয়াজের থেকে শেষের কথার কোনো উত্তর পেলো না।’
-‘আপনার এমন চোখ লাল হয়ে আছে কেনো?’
-‘জ্বর এসেছে।’
‘রুয়াত সাথে সাথে আয়াজের হাত ধরলো। সত্যিই শরীরটা খুব গরম হয়ে আছে। এই জ্বরের মাঝে ও তাকে দিয়ে আসা লাগবে এমন কোনো কথা আছে। এইদিকে আয়াজ অবাক রুয়াত নিজ থেকে হাত ধরেছে বলে। একটি কথা মন প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করে যা হয় ভালোর জন্যই হয়। হয়তো এই জ্বর রুয়াত আর আয়াজের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে দিবে। রুয়াত পরিবর্তন হবে। আয়াজের ভালোবাসা বুঝবে সে।
-‘আপনার এতো জ্বর তাও কেনো দিয়ে আসছেন আমায়? আমি তো আরহাম ভাইয়ার সাথে চলে আসতে পারতাম।’
‘আয়াজ তার কপালের এক সাইড ঘষে দিলো।’
-‘আমাকে ছাড়া আর কাউকে তোমার জন্য অন্তত ভরসা করি না।’
‘রুয়াত অস্থির। প্রথম এরকম মুহুর্তের সম্মুখীন হয়েছে সে। কেনো যে আয়াজের প্রতি তার এমন অবস্থা হচ্ছে ভেবে পাচ্ছে না।’
-‘বেশি মাথা ব্যাথা করছে?’
‘হাসলো আয়াজ প্রেয়সীর এহেন প্রশ্নে।’
-‘তুমি আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিলে সব ব্যাথা সেরে যেতো।’
‘অধর কামড়ে ধরে কিছুটা ভাবলো রুয়াত। পরক্ষণেই আবার বললো-‘
-‘চুলে হাত বুলিয়ে দিবো?’
‘আয়াজ রুয়াতের পানে চায় একবার। এ দেখি রুয়াতের নতুন রূপ। একটু সুস্থ থাকলে জ্বালানো যেতো। এখন মন ও চাচ্ছেনা প্রেয়সীর সাথে কিছু করতে।’
-‘দরকার নেই।’
‘বারবার রুয়াতের হৃদয় পুড়ছে আয়াজের এমন বিহেভিয়ার দেখে। কেনোই বা এমন হচ্ছে জানা নেই। নিজেই তো একটু আগে বললো এখন আবার নাকোচ করে দিলো! রুয়াত চুপটি করে বসে রইলো। কারও মধ্যেই আর কোনো রকম কথা হলো না। আয়াজ রুয়াতের বাসার সামনেই গাড়িটা রেখেছে। রুয়াত গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। এক মিনিট ও অপেক্ষা করলো না। কিন্তু আয়াজ নামে নি।’
-‘বাসায় আসবেন না?’
‘আয়াজ সরাসরি বলে দিলো।’
-‘না। আমার কাজ আছে।’
-‘আপনার না মাথা ব্যাথা, জ্বর বাসায় চলুন আমি কফি বানিয়ে দিবো। আর মা আমায় বকবে যদি শুনে আপনি বাসায় আসেননি।’
‘ভাবলেশহীন আয়াজ বললো-‘
-‘অন্য একদিন যাবো। আন্টিকে বলে দিও তাহলেই হবে।’
‘ব্যাস গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো আয়াজ। রুয়াত ও সে স্থান ত্যাগ করলো। ক্রলিং বেল চাপ দিয়েই মেহরুবা দরজা খুলে দিলো। রুয়াত হাসিমুখে বাসায় ঢুকলো। কিন্তু ঠায় মেহরুবা ফাইরোজ দাঁড়িয়ে রইলেন। রুয়াত তার মায়ের এহেন কান্ড দেখে প্রশ্ন করলো।’
-‘মা দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?’
-‘তুই কার সাথে এসেছিস?’
‘মাথা থেকে হিজাব খুলতে ব্যস্ত রুয়াত।’
-‘আপুর দেবর পৌঁছে দিয়ে গিয়েছে।’
-‘ও আসেনি বাসায়? হ্যাঁ রে তুই বলিস নি বাসায় আসারা কথা?’
‘রুয়াত স্থির হয়ে দাঁড়ালো।’
-‘আমি বলেছিলাম ওনার নাকি কাজ আছে তাই চলে গিয়েছেন।’
-‘বুঝেছি তুই ও জোর করিস নি।’
‘মায়ের কথায় বিরক্ত হলো রুয়াত। সে তো বলেছে আসার কথা এখন যদি না আসতে চায় তাকে কি জোর করে আনবে। রুয়াত আর কথা বাড়ালো না মায়ের সাথে কিছু না বলে সোজা উপরে চলে গেলো।’
(*)
‘সাহেদের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে আয়াজ। তাদের প্ল্যান সাকসেসফুলি এগুচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইকরামুল তাহের তার যাবতীয় কুকর্ম গুলোর হদিস নিমিষেই মাটির সাথে মিশে ফেলার চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে। এর কারণেই আয়াজের লোকদের একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
-‘স্যার আমরা যে এতোবড় কাজ করছি ইকরামুল তাহের জানলে আমাদের লোকদের শেষ করতে তার দু মিনিট ও লাগবে না।’
‘আয়াজ হেসে বললো-‘
-‘ইকরামুল কে ও শেষ করতে আমার দু মিনিট সময় লাগবে না। আর তোমাদের সেফটির দায়িত্ব আমার। শুধু তোমরা খেলবে নাকি আমার মাঠে নামা লাগবে না?’
‘সাহেদ বুঝলো আয়াজ খুব ভেবেচিন্তে এরকম কাজে নেমে পড়েছে। কিন্তু এখানে তো তার বিপদ আসতে
পারে সে খেয়াল কি রেখেছে?’
-‘স্যার আপনার উপর আমার ভরসা রয়েছে। আমি আপনাকে আমার থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। স্যার আমার লাইফের সেফটির জন্য আপনাকে বিপদে ফেলতে চাই না। আপনি শুধু ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন এটাই চাই।’
‘এতোকিছুর মাঝেও কিছু কিছু মানুষের জন্য হয়তো আয়াজ এরকম একটা প্রফেশনে টিকে আছে। নিজের প্রতি বিশ্বাস, কঠোর পরিশ্রম, মানুষের ভালোবাসা আর সাহেদের মতো মানুষদের ত্যাগের জন্যই সে আজ এই পর্যায়ে। কিছু মানুষের এমন ভালোবাসা আসলেই ভুলবার যোগ্য নয়।’
‘আয়াজ সাহেদের কাঁধে হাত দিয়ে বললো-‘
-‘স্যার কে এতো ভালোবাসো অথচ বিয়ে করেছো এই কথাই বলো নি।’
‘সাহেদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এ কথা স্যার জানে কিভাবে? সম্পুর্ণ গোপনে বিয়েটা করেছে কারও জানার কথা না। এমন কি সাহেদের পরিবার ও না। কিন্তু স্যার জানে কিভাবে সেটাই ভাবছে সাহেদ।’
-‘স্যার আপনি কিভাবে?’
‘টেবিলের উপরে থাকা পানির গ্লাস থেকে পানি খেলো আয়াজ।’
-‘ইকরামুলের গোপন খবর সব জানি। আর তুমি আমার এতো কাছে থাকো। তোমার গোপন খবর জানবো না?’
‘সাহেদ মাথা চুলকালো। লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো-
-‘স্যার ওর বাবা জানলে কখনোই রাজি হবে না তাই শুধুমাত্র কাজি অফিসে গিয়ে বিয়েটা করেছি। আমার পরিবারের কেউই জানে না।’
-‘ভিতর ভিতর এতো বড় ক্রাইম করে বসে আছো?’
‘আয়াজ সাহেদের মাথায় হাত দিয়ে বললো-
-‘উত্তম কাজ করেছো। শুভকামনা রইলো তোমাদের আগামী দিনের জন্য। সুখে থাকো দু’জন। ‘
‘সাহেদ বেশ খুশি হলো আয়াজের কথায়। আয়াজ কে তার বড় ভাইয়ের মতোই সম্মান করে। সে স্টুডেন্ট লাইফ থেকে আয়াজের সাথে যুক্ত আছে সে। নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে আয়াজ কে। তার এই পেশা কে।’
(*)
‘রাত এগারোটা টা বেজে পঞ্চাশ। প্রায় বারোটার কাছাকাছি। রুয়াত এখনো ঘুমায়নি। এতোক্ষণ ধরে সব নোটগুলো তুলেছিলো নিজের খাতায়। আজ নিমির থেকেই এসব নোট নেয়। পরদিন আবার ফেরত দিতে হবে নিমি কে। তাই এতো তাড়াহুড়ো করে লিখেছে। রুয়াত পড়ার টেবিল থেকে উঠে বারান্দায় গেলো। ঘুম চোখে নেই তার। শুধু সকালে আয়াজের এভাবে নেতিয়ে যাওয়া দৃশ্য ভাসছে চোখের সামনে। লোকটার অনেক জ্বর ছিলো। মেডিসিন খেয়েছে কিনা জানে না রুয়াত। ভালো লাগছে না রুয়াতের। আয়াজ কে কল দিতে মন চাচ্ছে। কিন্তু আবার কিছু কথা ভেবে কল দিতে পারছে না৷ আর এতো রাতে আয়াজ কে কল দিবে যদি সেরকম কিছু ভাবে তখন! এইদিকে আবার মন কে শান্ত রাখতে পারছে না। নিজের উপর চরম বিরক্ত রুয়াত। কিভাবে যেনো আয়াজ তার জীবনের সাথে মিশে যাচ্ছে তুলোর মতো। হঠাৎ হঠাৎ আয়াজ কে নিয়ে হাজার জল্পনা কল্পনা ভেবে ফেলছে। অনিচ্ছায় আয়াজ এসে পড়েছে তার জীবনে। মানুষটার সকালে জ্বর ছিলো। আদোও কমেছে নাকি এ জ্বর কে তুচ্ছ করে আর মেডিসিন খায় নি।’
‘আর ভাবতে পারছে না। ফোনটা হাতে নিয়েও আবার রেখে দিয়েছে। সাহসে দিচ্ছে না আয়াজ কে কল দিতে। আবার এইদিকে মন কে ও শান্ত রাখতে পারছে না। আবারও ফোনটা হাতে নিলো রুয়াত। একরাশ সাহস নিয়ে কল দিয়ে দিলো। বুক কাঁপছে তার। সেথায় হাত চেপে ধরে আছে। বেশ কয়েকবার রিসিভ করার পর আয়াজ কল রিসিভ করলো। তা দেখে রুয়াতের ভয় ক্রমশ বেড়ে গেলো।’
‘ঘুম ঘুম কন্ঠে আয়াজ বললো-‘
-‘হু বলো রুয়াত।’
‘ব্যাস রুয়াতের বুক কাঁপা আরও বেড়ে গেলো। এভাবে ঘুমো স্বরের কথা শুনে মাথা খারাপ হয়ে যাবে যেনো তার৷ উত্তর না দিয়ে মুখের উপর কাঁথা দিয়ে বসে আছে।’
‘আয়াজ একটু বিরক্ত হলো। ফোন দিয়েছে ভালো কথা এখন কথা বলছে না কেনো? আরামের ঘুম হারাম করার জন্যই এই রুয়াতই যথেষ্ট তার জন্য। ‘
-‘নিশ্চয়ই চুপ থাকার জন্য কল দাওনি!’
‘রুয়াত ফোনটা একটু দূরে সরালো। জোরে একটা শ্বাস নিলো। আবারও ফোনটা কানের কাছে এনে রাখলো।’
-‘জ্বর কমেছে আপনার? মেডিসিন নিয়েছেন?’
‘উপুড় হয়ে শুয়ে আছে আয়াজ। একদিকে এসির ঠান্ডা বাতাস আরেকদিকে প্রেয়সীর নরম স্বরের কথা। উফ শান্তি।’
-‘উহু।’
‘ভ্রু কুচকালো রুয়াত। তার ভাবনাই ঠিক আয়াজ মেডিসিন খায়নি। কাজের প্রতি এতো কেয়ার কিন্তু নিজের প্রতি কেয়ারের কৌটা শূন্য।’
-‘কেনো?’
-‘তোমাকে খুব মনে পড়ছে প্রেয়সী। আমার হৃদয় ঠান্ডা করার জন্য তোমায় চাই।’
#চলবে….
[আসসালামু আলাইকুম। আমার গল্পকে আমি আমার মন মতো করে সাজিয়ে লিখতে চাই। আশাকরি আপনারা বুঝবেন। তাই সবার কাছে অনুরোধ রাখলাম কেউ গল্পের শেষ পর্যন্ত না পড়ে উল্টো পাল্টা বলবেন না। আর অনেকে বলেন তাড়াতাড়ি গল্প দিতে আমার তো কিছু কাজ থাকে🥺 আর আমি লিখতেই পারিনা দিনের বেলায়। রাতেই লিখতে বসি। তাই গল্প রাতেই পাবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
[আসসালামু আলাইকুম। আমি আমার গল্পটা কে নিজের মতো করে লিখতে চাই কিন্তু অনেকের কিছু কিছু কথায় তা পারি না একদমই। রুয়াত কে নিয়ে বা’জে কিছু বলবেন না। আমি চাই সে ধীরে ধীরে আয়াজের ভালোবাসা বুঝুক। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]