হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস পর্ব -১০+১১

#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_১০
#মোহনা_হক

‘রুয়াত নিস্তব্ধ। একটা মানুষ অসুস্থ কিভাবে এসব কথা বলতে পারে ভেবে পায় না সে। আবারও ফেঁসে গেলো নিজের কাজে৷’

-‘মেডিসিন খেয়ে নিবেন রাখছি।’

‘কল কেটে দিলো রুয়াত। ভালোর কথা জিগ্যেস করতে গিয়েছিলো সে লোকটা এভাবে তাকে
লজ্জা দিবে ভাবতে পারেনি। কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো।’
‘আয়াজ আনমনে হাসছে। চোখে ভীষণ ঘুম আর হৃদয়ে প্রেয়সীর ছোটাছুটি। শুধু তাকে পাওয়ার অপেক্ষা। এ অপেক্ষার যেনো শেষ হচ্ছে না। বড্ড বেশিই ভালোবাসে। আয়াজের পাল্লায় পড়ে রুয়াতের মন পরিবর্তন হওয়া শুরু করেছে। প্রতিদিন রাতে রুয়াতের জন্য তার হৃদয় পুড়ে। মেয়েটা কে কেনো এতো ভালোবাসে জানা নেই। এর উত্তর নেই। তার হৃদয়ের আনাচেকানাচে শুধু প্রেয়সীর আভাস।’

‘সকাল আটটায় রুয়াতের ঘুম ভাঙে তাও তার মায়ের ডাকে। চোখ খুলেই তার মাকে প্রথম দেখেছে। মেহরুবা কে দেখে ঘুম থেকে উঠে রুয়াত হেসে দিয়েছে।’

-‘আজ মন কি বেশি ভালো নাকি?’

‘রুয়াত হাসি বন্ধ করে দিলো।’
-‘কয়টা বাজে এখন?’

‘মেহরুবা রুয়াতের কলেজ ড্রেস আলমিরা থেকে বের করতে করতে বললো-‘
-‘আটটা বাজে। কলেজ যাবি না?’

‘রুয়াত মাথা নাড়লো। এখন থেকে কলেজ কন্টিনিউ যেতে হবে। নাহলে পড়া তো মিস করবে সাথে আরও অনেক কিছু বাকি রয়েছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে পড়লো রুয়াত। নাস্তা খেয়েই ছুটেছে কলেজের উদ্দেশ্যে। নিমি বারবার করে বলেছে আজ যাতে তাড়াতাড়ি বের হয় বাসা থেকে। রুয়াত পড়াশোনা নিয়ে আগে থেকেই সিরিয়াস। কিন্তু নিমি দু’দিন হলো সিরিয়াস হয়েছে।’

‘কলেজ এসে মাঠের এক বেঞ্চির উপর বসে আছে রুয়াত। নিমির এখনো আসার খবর নেই। দিন দিন অনেক ধোঁকা দিচ্ছে রুয়াত কে। এভাবে একা একা বসে থাকা যায় নাকি? বিরক্ত লাগছে রুয়াতের। আর কখনো নিমি তাড়াতাড়ি আসার কথা বললে আসবে না। মাথা নিচু করে মাঠের দিকে তাকিয়ে আছে। কলেজের অনেক স্টুডেন্টও এসে পড়েছে শুধু নিমিই উধাও। একা একা বিড়বিড় করছে আর নিমিকে বকছে রুয়াত। প্রায় একঘন্টা পর নিমি আসলো। দৌড়ে যে ক্লাসে ঢুকেছে তা খেয়াল করেছে রুয়াত। এখন ক্লাসে ব্যাগটা রেখেই দৌড় দিবে রুয়াতের কাছে। যে কথা সে কাজ। মেয়েটার অভ্যাস আর চেঞ্জ হলো না। এভাবে মাঠের মধ্যে দৌড়ালে কেমন দেখা যায়। শতবার বলার পর অভ্যাস পাল্টাতে পারলো না।’

-‘দোস্ত কেমন আছিস? আগেই সরি বলছি কারণ তুই রাগ করে বসে আছিস। আরে ভাইয়া আজ বাসা থেকে বের হতে দেয় নাই বলেছে তার সাথে যেনো আমি কলেজ আসি।’

‘রুয়াত মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এমন বহুত অযুহাত দিয়েছে সে। আর বিশ্বাস করবে না।
‘রুয়াতের এহেন কান্ড সহ্য হলো না নিমির। আজ একটাও মিথ্যে বলেনি সে। এটা ঠিক প্রতিবার মিথ্যে বললেও আজ সত্যি কথাটিই বলেছে। এখানে তো সে সম্পুর্ণ নির্দোষ।’

‘নিমি রুয়াতের হাত ধরে তারই সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।’
-‘এবার ক্ষমা করে দে বান্ধুবী। তুই কথা না বললে আমার ভীষণ কষ্ট হবে। এবারের মতো। আর যদি কখনো তোকে অপেক্ষা করাই তাহলে তুই আমার সাথে কথা বলিস না।’

‘রুয়াত নিমির বাহু ধরে উঠিয়ে তার পাশে বসালো। এইতো মেয়েটার এসব কথা শুনলে সে একদম গলে
তরল পদার্থের ন্যায় হয়ে যায়। কারও প্রতি রাগ বেশিক্ষণ পুষে রাখতে পারে না।’

-‘সব সময় এসব বলিস। এটাই কিন্তু লাস্ট। আর এমন সুযোগ দেওয়া হবে না। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে।’

‘যাক বান্ধুবী কে তো অবশেষে রাজি করাতে পেরেছে তাতেই খুশি। নিমি জানে রুয়াত ঝাপটে ধরা পছন্দ করে না তাও সেভাবেই ধরলো। মেয়েটা রাগ করলে একদম ম’রে’ই যেতো। রুয়াতের কলেজে যেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই তেমনই নিমির ও নেই।’

-‘আচ্ছা রুয়াত তোর ওনি কেমন আছে?’

‘ভ্রু কুচকে রুয়াত নিমির দিকে তাকালো। আজকাল নিমি কেনো জানি আয়াজের কথা একটু বেশিই জিগ্যেস করছে। কাল ও করেছিলো।’
‘রুয়াত ছোট্ট করে উত্তর দিলো।’
-‘ভালো।’

‘নিমি মিনমিন করে বললো-
-‘ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিস।’

‘নিমি আস্তে বললেও রুয়াত শুনে ফেলেছে।’
-‘কোনো একদিন।’

‘বেশ খুশি হলো নিমি। ভেবেছে রুয়াত মানা করে দিবে কিন্তু না সে মানা করলো না উল্টো রাজি হয়ে গেলো।
বেল বাজতেই দু’জন ক্লাসে ঢুকলো। আবার টানা কয়েক ঘন্টা বসে বসে ক্লাস করতে হবে।

(*)

-‘স্যার ইকরামুলের কুকীর্তির বিষয়ে আমরা না গেলেই ভালো হবে।’

‘আশরাফের কথায় চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো আয়াজের। এতো ভয় করলে যুদ্ধ জয় করবে কিভাবে?’

-‘এতো ভয় পাচ্ছো কেনো আশরাফ?’

‘আয়াজের কথায় ভয়ে মিইয়ে গেলো আশরাফ। একদিকে ইকরামুলের ভয় আরেকদিকে স্যারের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। আশরাফ ইকরামুলের থেকে টাকা খেয়েছে, কিন্তু আয়াজ ও তার জন্য কম করেনি। দুঃসময়ে, তার বিপদে সব সময় আয়াজ কে পাশে পেয়েছে। দোটানায় ভুগছে আশরাফ।’

-‘স্যার এখানে আমাদের জীবন নিয়ে টানাটানির ব্যাপার আছে। এসব বাদ দিলে হয়না?’

‘রাগ হচ্ছে আয়াজের। নিজেকে সংযত রেখে বললো-
-‘তুমি থেকো না। ইচ্ছে হলে চলে যেতে পারো। তোমার মতো এমন লোক রেখে আমার কোনো কাজে আসবে না।’

‘উপস্থিত সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু আশরাফের মাথা উঁচু। কখনো আয়াজের চোখ দিকে
তাকিয়ে কথা বলেনি আশরাফ। আর সেই আজ মুখে মুখে কথা বলছে। অবাক হয়ে শুধু চেয়ে আছে আয়াজ।’
‘আশরাফের বর্তমান কাজ হচ্ছে আয়াজের যাবতীয় গোপন খবর প্রচার করা ইকরামুলের কাছে। চাইলে এখনই বের হয়ে আসতে পারতো কিন্তু একজনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এর জন্য অনেক টাকা পায় দিনকে দিন। যা কখনো শোধ করতে পারবে না। ‘

-‘স্যার আমি আপনার হয়ে কাজ করবো।’

-‘উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বলছি আমার দলের হয়ে কাজ করতে পারলে থাকো নাহয় বের হয়ে যাও। আর যদি শুনি আমার দলের কোনো লোক কাজের হেরফের করছে বা ভয়ে কাজ করবে না, আমার গোপন তথ্য অন্য কারো কাছে প্রচার করবে তার পরিমাণ খুব খারাপ হবে। খুব খারাপ।’

‘চিল্লিয়ে উঠলো আয়াজ। সব নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সব সময় স্যারের রাগ দেখা হতো অন্য কারণে। এবার রাগ দেখেছে দলের লোকের জন্য।
‘আশরাফ নত হয়ে আছে। একবার যদি স্যার এসব জেনে যায়, যাই করুক তাকে আর বাঁচিয়ে রাখবে না। লোভের কারণে আজ তার এই পরিনতি। জীবদ্দশায় ভুগছে সে।’

‘বের হয়ে আসে কক্ষ থেকে। নিজের অফিসে এসে মাথা হেলিয়ে দেয় চেয়ারে। সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও সাহেদ চলে আসে আয়াজের পিছন পিছন। তার কাজ হচ্ছে আয়জের সাথে থাকা।

-‘স্যার বের হবেন?’

‘মাথা উঠিয়ে টাইম দেখে। আজ কোঁথাও যাবে না। সন্ধ্যার পর যাওয়ার কথা আছে এক জায়গায়। সেখানই যাবে।’

-‘সন্ধ্যার পর।’

‘সাহেদ বের হয়ে আসলো। সে জানে এখন স্যার একটু রেস্ট করবে তাই থেকে কোনো কাজ নেই।’

(*)

‘দুপুরে ক্লাস শেষ হলো তাদের। কলেজ ছুটি। নিমি আর রুয়াত ঠিক করলো আজ ঝালমুড়ি ফুসকা খাবে। আর কাল আয়াজ বলেনি দেখা করতে আসবে আজ। ঝালমুড়ির দোকানে ঝালমুড়ি ওর্ডার দিলো নিমি।’

-‘আপুরা কেমন আছেন?’

‘রুয়াত পিছন ফিরে চায়। ওইদিনের ছেলেটা আবারও এসেছে আজ। নিমি ছেলেটা কে দেখেই চ’টে যায়।’

-‘আজ আবার এসেছো বিরক্ত করতে? তোমার কি লজ্জা নেই?’

‘রুয়ায় থামালো নিমি কে। মেয়েটা একটু বেশিই করছে। শান্ত কন্ঠে বললো-‘

-‘কি কারণে এসেছো?’

‘ছেলেটা হাসলো। যাক কেউ অন্তত তার কথা শুনতে চেয়েছে।’
-‘আমি আপনাদের বন্ধু হতে চাই আপু।’

‘নিমি যেনো আরও রেগে উঠলো। কিন্তু রুয়াত ভদ্রতা দেখিয়ে বললো-
-‘দেখো তুমি আমাদের ছোট। আমরা এমন কাউকে বন্ধু বানাতে পারবো না। রাগ করো না। দুঃখিত এবার তুমি আসতে পারো।’

‘ছেলেটাও সুন্দর করে চলে গিয়েছে। আর কোনো কথা বলেনি। কিন্তু নিমি শুরু করেছে কেনো বকা দেয়নি ছেলেটা কে। রুয়াত কোনো মতে নিমি কে বুঝিয়েছে। ঝালমুড়ি ফুসকা খাওয়ার পর রুয়াত বাসায় চলে আসে। বাহিরে প্রচন্ড গরম পড়েছে। বেশিক্ষণ বাহিরে থাকা যাবে না।’

‘আজ রুয়াতের ফুপি এসেছে। সাথে তার ছেলে মেয়ে ও এসেছে। বাসায় মেহমান আসলে রুয়াত লুকিয়ে থাকে। আজ বাসায় ঢুকতে না ঢুকতে ফুফাতো ভাই আদিবের সাথে দেখা হয়। মূলত আদিব আর ইনিমার বয়স একই। রুয়াত কে দেখামাত্র আদিব হাসে।’

-‘কেমন আছো রুয়াত?’

‘রুয়াত মাথা নিচু করে বাসার ভিতরে ঢুকে। ছোট্ট করে উত্তর দেয়-
-‘ভালো আছি।’

‘ফুপির সাথে টুকটাক কথা বলে উপরে চলে যায় রুয়াত। অনেক ক্লান্ত সে।’

‘রাত নয়টা। রুয়াত রুমে বসে পড়ছে আর হাঁটছে। অনেক চেষ্টা করার পর ও পড়া মুখস্থ হচ্ছে না। একবার বারান্দায় আসছে আবার রুমে আসছে। বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে ছিলো রুয়াত। হঠাৎ মোবাইলে কল আসাতে রুমে আসে সে। স্ক্রিনে আয়াজের নাম্বার। রুয়াত বুঝতে পারছে না অসময়ে আয়াজের থেকে কল আসার কারণ। একবার রিসিভ করেনি। ভেবেছে আর কল দিবে না কিন্তু আবারও কল আসলো। অনেক কিছু ভাবার পর কল রিসিভ করে।’

‘কল রিসিভ করার সাথে সাথেই এক গম্ভীর পুরুষালী স্বর শোনা যায়।’
-‘আমি তোমার বাসার নিচে। এক্ষুনি দেখা করো।’

‘ব্যাস এটুকু বলে কল কেটে দেয় আয়াজ। রুয়াত বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে আছে। দেখা করো বললেই কি দেখা করতে হবে নাকি। আর করবেও বা কিভাবে নিচে সবাই বসে কথা বলছে। জায়গা নড়চড় করলো না। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। টুংটুং আওয়াজে দৃষ্টি মোবাইলের দিকে যায়। আয়াজ মেসেজ পাঠিয়েছে নিচে আসার জন্য। কি করবে ভাবতে পারছে না। সবার সামনে থেকে বের হবে কিভাবে? কেউ না কেউ কিছু জিগ্যেস করে ছাড়বে। কিন্তু না যেও তো উপায় নেই। মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় ঘোমটা টানলো। হাতের মোবাইল বুকে চেপে নিচে আসলো। বাবা মা ফুপি কেউ নেই। রান্নাঘর থেকে মেহরুবা আর রুয়াতের ফুপির গলার স্বর শোনা যাচ্ছে। সোফায় আবিদ ভাইয়া বসে আছেন। সে যদি কিছু জিগ্যেস করে তাহলে কি উত্তর দিবে?

‘সাহস করে রুয়াত দরজায় পা রাখে। ওমনি আবিদ বলে উঠলো-
-‘কোঁথায় যাচ্ছো রুয়াত?’

‘দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে রুয়াত। এমন মনে হচ্ছে যেনো কিছু চুরি করেছে আর ধরা খেয়েছে। আমতা আমতা করে বললো-
-‘একটু কাজ আছে বাহিরে যাচ্ছি।’

‘ব্যস্ত হয়ে আবিদ বলে-
-‘আমি আসবো কি?’

-‘না আসার দরকার নেই।’

‘রুয়াত বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে। আবিদ শুধু চেয়ে আছে। রুয়াত কখনো মুখ ফুঁটে কথা বলেনি কারও সাথে। যদি তারা নিজ থেকে কেউ বলে তাহলেই মুখে কথা ফুটে নাহলে কারও সাথে কথা বলতে দেখেনি রুয়াত কে। একটু বেশিই চুপচাপ মেয়েটা।’

‘আয়াজ বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। রুয়াত আয়াজের সামনে এসে দাঁড়ায়।’
-‘কলেজ গিয়েছিলে আজ?’

‘মাথা নাড়ায় রুয়াত। মুখে কিছু বলেনি।’
-‘মুখে বলো।’

‘কথাটা একটু জোরেই বললো আয়াজ। আজ অনেক রাগ নিয়েই এখানে এসেছে সে। তবে অবুঝ মেয়েটি জানেনা কেনো আয়াজ তার সাথে জোরে কথা বললো।’

-‘জ্বী গিয়েছিলাম।’

‘আয়াজ রুয়াতের হাত ধরে। একহাত পিছন দিক থেকে পেচিয়ে ধরেছে। অতঃপর আবারও বলে-
-‘কিছু প্রশ্ন জিগ্যেস করবো। একদম সোজাসাপ্টা উত্তর দিবে। যদি আমার এক কথা দু’বার বলা লাগে তাহলে দেখবে আসল আয়াজ কেমন। দেরি করে উত্তর দিলে তোমার আর আমার মাঝের দূরত্ব কমবে। মিথ্যে বললে যে হাত পিছনে আছে সে হাতে ব্যাথা পাবে। আর সত্যি কথা বললে হাতে অধর ছুঁয়ে দিবো।’

#চলবে…#হৃদয়জুড়ে_প্রেয়সীর_আভাস
#পর্ব_১১
#মোহনা_হক

‘নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুয়াত। তাকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে নিলো আয়াজ। অনেক সময় হয়ে গিয়েছে রুয়াত চুপ হয়ে আছে। বিষয়টা খুব সহজে হজম করতে পারলো না আয়াজ।’

-‘কথা বলছো না কেনো? রাজি তুমি?’

‘রুয়াত ঘাবড়ে গেলো। কি উত্তর দিবে। আর প্রশ্নগুলোই বা কি। সব যেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার।’

-‘হাতে এখনো ব্যাথা পাওনি। তাই কথা বলছো না?’

‘জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো-
-‘করুন প্রশ্ন। আমি রাজি।’

‘ভ্রু কুচকালো আয়াজ। অবশেষে কথা বললো।’
-‘কলেজে তোমার সাথের মেয়েটি কে ছিলো?’

‘উত্তর দিতে বেশিক্ষণ সময় নিলো না রুয়াত। কিন্তু ভাবার কথা আয়াজ এসব জানে কিভাবে?’
-‘আমার ফ্রেন্ড। নিমি।’

‘আয়াজ রুয়াতের হাত আলগাভাবে ধরলো। রাগ কন্ট্রোল করা দরকার। আবার কিসব ভেবে আগের মতো হাতটা ধরলো। রুয়াত চোখ তুলে আয়াজের দিকে তাকায়। লোকটার এরূপ ব্যবহারের কারণ জানে না সে।’

-‘আজ যে ছেলের সাথে কথা বলেছো সে কে ছিলো?’

‘রুয়াত শুধু অবাক হয়ে চেয়ে আছে। আয়াজ কি তাকে সন্দেহ করছে? তার পিছনে কি আবার লোক লাগিয়েছে? এতোটা বাজে ভাবে আয়াজ তাকে?’
‘রুয়াতের উত্তর দিতে দেরি হয়েছে বলে আয়াজ তার আর রুয়াতের মাঝের দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। নড়চড়ে উঠে রুয়াত। আশেপাশে তাকায় মেয়েটা।’

-‘ কথা না বললে আরও দূরত্ব কমিয়ে দিবো। যা আপনার পছন্দ হবে না।’

-‘আপনি আমায় সন্দেহ করছেন?’

-‘না। আমি শুধু জানতে চাচ্ছি। ‘

-‘একটা ছেলে ছিলো। আমার আর নিমির ফ্রেন্ড হতে চেয়েছিলো।’

‘থামে রুয়াত। পরক্ষণেই আবার বলে-
-‘তারপর আমি মানা করে দিয়েছি।’

‘আয়াজের রাগ কমে। ভুবন ভুলানো হাসি দেয়। এবার রুয়াতকে একটা জিনিস দেওয়া দরকার। সত্যি কথা বলেছে সে। রুয়াত কে কখনো সন্দেহ করার প্রশ্নই আসে না। শুধু জানতে চেয়েছে ছেলেটি কে। এমপির হবু বউয়ের সাথে কথা বলতে এসেছে একটু তো সাহস আছে বলতে হবে।’

-‘মাথা তুলে আমার দিকে তাকাও।’

‘মাথা নিচু করে রাখা রুয়াত মাথা উপরে তুলে। তার কিছু বলার নেই। মনটা একদম বিষিয়ে গিয়েছে। আয়াজ কেনো তাকে এসব জিগ্যেস করেছে বুঝে গিয়েছে।’

-‘আমি প্রথমেই বলেছি সত্যি কথা বললে তোমার হাতে অধর ছুঁয়ে দিবো।’

‘সর্বাঙ্গ শরীর কেঁপে ওঠে রুয়াতের। তা দেখে হেসে ওঠে আয়াজ। রুয়াতের হাত সামনে এনে ধরে। যেহেতু মেয়েটা ভয় পাচ্ছে সেহেতু কোনো কিছুই করলো না। রুয়াতের মুখপানে তাকিয়ে দেখে কাঁদছে সে। অবাক হয় আয়াজ। রুয়াতের ভালো লাগবে না দেখে কিছু করলো না এখন দেখছে অকারণেই কাঁদছে মেয়েটা।’

-‘কাঁদছো কেনো? আমি কিছু করিনি তো।’

‘নিশ্চুপ সে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। শুধু অঝোরে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হঠাৎ রুয়াতের কাঁদার মানে বুঝলো না আয়াজ। মেয়েটির গালে হাতের নরম স্পর্শ ছুঁয়ে দিয়ে বলে-

-‘কি হয়েছে তোমার? আমায় বলো। এই আর তোমায় মানা করেছি না আমার সামনে কাঁদবে না?’

‘কান্নারত অবস্থায় রুয়াত বলে-
-‘আপনি আমায় সন্দেহ করেছেন তাইনা! এজন্য এমন রাগ দেখিয়েছেন।’

‘আয়াজ চোখ ছোট ছোট করে ফেললো। তার মনে এসব কিছুই আসেনি আর বোকা মেয়ে উল্টো পাল্টা ভেবে বসে আছে। নিজ হাতে রুয়াতের চোখের পানি মুছে দেয়। এখানে আসার প্রথম কারণ আজ একবারও রুয়াতের সাথে দেখা হয়নি। যেনো তার হৃদয় অশান্ত হয়ে আছে একবার প্রেয়সীর মুখখানা দেখার জন্য। বাকি সব পরে।’

-‘প্রথমত আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। দ্বিতীয়ত ছেলেটি কে সেটা জানার জন্যই এখানে আসা। এমপির হবু বউয়ের সাথে কথা বলতে আসবে এতো সহজ?’

‘রুয়াত তাকায় আয়াজের দিকে।
-‘কেনো? কেউ কি আমার সাথে কথা বলতে আসতে পারবে না? আর আপনি লোক লাগিয়েছেন আমার পিছন?’

‘হাসে আয়াজ। বোকা মেয়ের বোকাসোকা কথাবার্তা। তবে এখানে একটি কথাও ভুল নেই। সবগুলোই সঠিক।’

-‘উহু বাহিরের মানুষের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ তোমার। এখন কেউ জানে না আমাদের ব্যাপার যখন জানবে তখন কোনোমতেই কথা বলা যাবে না। আর লোক লাগিয়েছি তোমার সেফটির জন্য। ভুলভাল ভেবে বসে থেকো না।’

-‘আপনার রাজনীতির আমি কেনো কষ্ট করবো?’

‘গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। রুয়াতের এ কথার কোনো যুক্তি নেই। একদম অযুক্তিযুক্ত কথা বলেছে সে।’

-‘কোঁথায় কষ্টের কথা উল্লেখ করেছি আমি?’

‘অধর কাঁটে রুয়াত। ঠিকই তো আয়াজ একবারও কষ্ট শব্দটি বলেনি।

-‘রুয়াত ফাইরোজ তয়ত্রী আপনার তো খুব সাহস বেড়েছে রাতে একজন এমপিকে কল দিয়েছেন আপনি।’

-‘আমি শুধু আপনার খোঁজ নেওয়ার জন্য কল দিয়েছি। আমার আর কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না।’

-‘চলে যাবো আমি?’

‘রুয়াতের মন চাচ্ছে বলতে না। কিন্তু বললেই তো আবার চেপে ধরবে।’
-‘কাল বাসায় আসেননি। মা আমায় বকেছে।’

‘সটান হয়ে দাঁড়ায় আয়াজ।’
-‘আজ যেতে পারি।’

‘রুয়াতের নজর আয়াজের দিকে। খুব স্নিগ্ধ লাগছে আয়াজ কে। আবার তৎক্ষনাত চোখ সরিয়ে নেয়।’
-‘আপনি বাসায় আসলে মা বাবা খুশি হবে।’

-‘আর তুমি?’

‘এমন কথার উত্তর নেই আসলে। আর কখনো দিতেও পারবে না সে।’

-‘তোমার উত্তর চাই না। শুধু একটা কথাই মনে রাখবে তোমার নজর শুধু আমাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। দু’বার বলা হবে না তোমায়। আশাকরি বুঝেছো।’

‘মাথা নাড়ায় রুয়াত। আয়াজ পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করে হাঁটা শুরু করেছে। পিছন পিছন হাঁটছে রুয়াত। আয়াজের বড় বড় পায়ের সাথে পাল্লা দিতে পারছে না। গুটিশুটি পায়ে হাঁটছে। একবার পিছনে তাকায় আয়াজ। পথ শেষ হলে আয়াজ থামে রুয়াতের বাসার সামনে। দরজার পাশেই রুম থাকাতে ভিতরের সব দেখা করা যায়। সোফায় এক অপরিচিত পুরুষ দেখে ভ্রু কুচকে আসে তার। মজুমদারদের বাসায় ছেলে। প্রাপ্তবয়স্ক। মাথা নিচু করে হাঁটায় রুয়াত ধাক্কা খায় আয়াজের সঙ্গে। লজ্জায় ছিটকে সরে যায়। যেনো এক লোহার সাথে ধাক্কা খেয়েছে।’

‘পাশ ফিরে রুয়াতের দিকে তাকায় আয়াজ। আস্তে করে বলে-
-‘তোমাদের বাসার এই ছেলে কে?’

-‘ফুপির ছেলে। ওনারা এসেছেন আজ।’

‘সামনের দিকে পা বাড়ায় আয়াজ। আদিব মাথা তুলে দেখে। আয়াজ কে সামনাসামনি দেখছে। ইনিমার বিয়ের সময় সে ছিলো না। সে সুবাদে দেখাও হয়নি। আর সব সময় আয়াজ কে টিভি দেখেছে। বাস্তবে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি। নিজের চক্ষু কে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই ফাঁকে তাড়াতাড়ি পা ফেলে রান্নাঘরে যায় রুয়াত। আবিদ অপ্রত্যাশিত হেসে আয়াজের সাথে হাত মিলালো।’

-‘আমি আবিদ। ইনিমার ফুপাতো ভাই।’

‘আয়াজ হাসে। রুয়াত গিয়ে মেহরুবা কে ডেকে আনে। হান্নান মজুমদার ও এসেছেন। সবাই প্রায় অবাক আয়াজ হঠাৎ এসেছে বলে। এমনিও আসে না। সবার সাথেই কথা বলেছে আয়াজ। রুয়াতের ফুপি ও এসেছেন আয়াজ কে দেখতে। সবার মাঝে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে রুয়াত। সবার সাথে কি ভালো ভালো কথা বলছে। আর সব বকা তাকেই দেওয়া হয়।মেহরুবা নাস্তা দেয় আয়াজ কে। মেহরুবা বেশ খুশি আয়াজ আসাতে। যখন ইনিমার সুবাদে তার সাথে পরিচয় তখন ভুলেও আসত না। আজ এসে একদম সারপ্রাইজড করে দিয়েছে মেহরুবা কে। হান্নান মজুমদার জোর করে আয়াজ কে রাতের খাবার খেয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে কোনোমতেই রাজি হলো না। বাসায় যেতে হবে তার। সবার সাথে কথা বলতে বলতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আজ ড্রাইভার বা গার্ড কাউকে নিয়ে আসেনি। অপর পক্ষ থেকে যেকোনো রকম অ্যাটাক আসতেই পারে। তবে সব সময় না। আর সে যে এখানে এসেছে কারও জানার কথা ও না। যদি কেউ জেনে যায় তখন সমস্যা হতে পারে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে আয়াজ বাসায় যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। একবার রুয়াতের দিকে তাকায়। রুয়াত ও তার দিকে তাকিয়েছিলো। নজর সরিয়ে আয়াজ বের হয়ে পড়ে বাসা থেকে আদিব তার সাথে গিয়েছে।’

‘রুমে এসে শুয়ে পড়ে রুয়াত। তার ফুপাতো বোন তুলিও তার সাথে এসেছে। রুয়াতের পাশে শুয়ে পড়ে সে। বেশ কৌতূহল নিয়ে জিগ্যেস করে-

-‘আয়াজ ভাইয়া কি সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে না রুয়াত আপু?’

‘রুয়াত পাশ ফিরে দেখে তুলি শুয়ে আছে তার সাথে। তুলির চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো-‘
-‘সবার সাথেই কথা বলেন।’

-‘ওহ্।’

‘রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে যায় রুয়াত। অভ্যাস আছে তার। মাঝে মাঝে এমন করে সে। মেহরুবা ডাকতে এসেছেন। রুয়াতের থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে চলে যায়। এখন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও রুয়াত উঠবে না জানে। মেয়ের এরূপ কান্ডে বিরক্ত প্রায় তিনি। সব সময় নিজের খাওয়া দাওয়া নিয়ে ছেলেখেলা করে। জিদ দেখিয়ে চলে যান তিনি।’

‘হুড়োহুড়ি করে সাতসকালে ঘুম থেকে ওঠে রুয়াত। আজ ভীষণ দেরি হয়ে গিয়েছে। একপ্রকার তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে কলেজ এসেছে। হান্নান মজুমদার পৌঁছে দিয়েছেন রুয়াত কে। দু দিন পর তাদের বিদায়। তাই কলেজ কে সাজানো হচ্ছে। রুয়াতের মনে হলো এইতো সেদিন কলেজে ভর্তি হলো। দু দিন পর বিদায় হয়ে যাবে। দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ কলেজের সাথে। রুয়াত কলেজের সাজানো দেখতে দেখতে ক্লাসরুমে ঢুকে। সারা ক্লাস চোখ বুলিয়েছে। নিমি কোঁথাও নেই। ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে নিমি আজ তার জায়গায় বসেছে। দূর থেকে নিমি তার চকচকে দাঁত গুলো দেখে হাসি দিয়েছে। রুয়াত ও মুচকি হাসে৷ আবার হাসি বন্ধ হয়ে যায় নিমির কর্মকান্ডে। মানা করার পর দৌড়ে আসছে। মেয়েটা আর বড় হলো না।

‘নিমি বেশ একটা জমজমাট খবর নিয়ে এসেছে এখানে। কিন্তু কথাটা বলার আগেই ধমক দেয় রুয়াত।’

-‘কতবার বলেছি আমায় দেখলে দৌড়ে আসবি না। দরকার হলে জোরে হেঁটে আসবি। কখনো যদি আবার দেখি দৌড়ে এসেছিস আমি কিন্তু তোর সাথে কথা বলবো না।’

‘মন খারাপ হয় নিমির। সে কোনো কথা না বলেই আবার উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করেছে। রুয়াত বুঝেছে নিমি রাগ করেছে। নিমি কে জড়িয়ে ধরে বলে-

-‘আমি তোর ভালোর জন্য বলেছি নিমি। রাগ করিস না।’

‘নিমি হেসে দেয়। সে একটু অভিনয় করেছে। রুয়াতের হাত চেপে ধরে বলে-

-‘আরে বাদ দে। আমি এতো রাগ করতে পারি না। তোর সাথে তো একদমই না। আমি কি কখনো তোর সাথে রাগ করেছি নাকি। আচ্ছা জানিস এবার আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে কে আসবেন?’

‘দু দিকে মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ সে জানে না।’

‘নিমি বেশ আগ্রহ নিয়ে বলে-
-‘তোর হবু বর এমপি সাহেব থাকছেন এবার প্রধান অতিথি হিসেবে। ‘

#চলবে..

[আসসালামু আলাইকুম। অসুস্থতার জন্য তাড়াতাড়ি দিতে পারিনি। কালকের পর্বে ধামাকা থাকবে🤧। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here