#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২১
নতুন কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছে আজ নূর।কিন্তু সেই কোচিংয়ের শিক্ষকই যে ফাহিম তা জানতো না নূর। বেশ অবাক হয়েছে প্রথমে সাথে ভালোও লেগেছে ওর।ফাহিমকে অনেক ভালো লাগে নূরের।শুধু মেয়ে মানুষ বলেই মনের কথা বলতে পারে না। পাছে না আবার ফাহিম ওকে নির্ল’জ্জ না দাবি করে বসে।এদিকে ফাহিম পড়া বুঝানোর সময় হঠাৎ ওর নজর পরে নূরের উপর। নূরকে তো খেয়ালই করিনি ও।আশ্চর্য বিষয়?চোখ কোথায় ছিলো ওর?তবে বেশিক্ষন নূরের দিকে তাকিয়ে থাকলো না ফাহিম।দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।নাহলে আবার অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরা খারাপ কিছু না ভেবে বসে।পুরো ক্লাসে দু তিনবার চোখাচোখি হয়ে যায় নূর আর ফাহিমের। ক্লাস শেষ করে ফাহিম চলে যেতেই হুরমুর করে বের হয়ে আসে নূর।দৌড়ে যায় ফাহিমের কাছে।একেবারে ফাহিমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকে।এদিকে ফাহিম হকচকিয়ে যায় আচমকা নূরকে এইভাবে সামনে আসতে দেখে।ভ্রু-কুচকে ফাহিম এইবার বলে,
-‘ কি ব্যাপার?তুমি হঠাৎ আমার সামনে এসে দাড়ালে কেন?’
নূর খানিক সময় নিলো স্বাভাবিক হতে।তারপর বলে,
-‘ আমি যে আপনাকে এতো ডাকলাম শুনলেন নাহ কেন?’
ফাহিম চারপাশে তাকালো।এইভাবে প্রথম দিনেই কথা বলতে দেখলে আবার কেউ খারাপভাবে।তাই ফাহিম ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ দেখো এইখানে আমি কোচিং করাই।এই কোচিংয়ে আমাদের ব্যাক্তিগত বিষয়ে কোন কথা না হলেই আমি খুশি হবে। মানে এটা আমাদের দুজনের জন্যেই ভালো হবে।এইখানে আমাদের সম্পর্ক শুধু তুমি আমার ছাত্রী আর আমি তোর শিক্ষক।’
নূর ভাবতেই পারেনি ফাহিম এমনভাবে কথাগুলো বলবে। সে তো এখনও কিছু বলেইনি।তার আগেই এতোগুলো কথা বলে দিলো লোকটা?তাকে কি ছ্যা’ছড়া মেয়েদের মতো মনে হয়?নূরের রাগ লাগলো।তবে অভিমানটাই হলো বেশি।ও ধীরে বলে,
-‘ সরি স্যার।আর এমন হবে না।আমি আগামীতে খেয়াল রাখবো, আসি।’
নূর আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলো।ফাহিম নূরের কথায় সস্তি পেলো। যাক,মেয়েটা বুঝলো তাহলে।কিন্তু ভীতরে ভীতরে ফাহিমের কোথায় যেন একটু খারাপ লাগছে।মেয়েটাকে কি একটু বেশিই বলে ফেললো আগেভাগে?মেয়েটা তো তাকে কিছু বলেও নি।তবে ও যা বলেছে তা দুজনের ভালোর জন্যই বলেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফাহিম। তারপর নিজ কাজে চলে গেলো।
____________
ক্লান্ত দেহ নিয়ে ভার্সিটি থেকে ফিরেছে আরাবী।বসার ঘরে থাকা সাথি বেগম পূত্রবধুকে দেখেই বলেন,
-‘ আরাবী ক্লান্ত দেখাচ্ছে।আগে ফ্রেস হয়ে আসো।আমি লেবুর শরবত পাঠাচ্ছি।’
আরাবী ক্লান্তস্বরে বলে,
-‘ যাচ্ছি মা।’
আরাবী চলে গেলো।তবে যেতে যেতে কানে মিথিলার তীরিক্ষপূর্ণ কথাও তার কানে এলো।তবে সেসবে কান দিলো না আরাবী।তার এখন ঠান্ডা একটা গোসল নেওয়া দরকার।ভীষণ ক্লান্ত ও আজ।
রুমে গিয়ে আগে গোসল নিলো আরাবী।টেবিলের উপর শরবতের গ্লাস দেখেই মুঁচকি হাসলো।সাথি বেগমের মতো একজন শাশুড়ি পেয়ে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় আরাবীর। তার শাশুড়ীকে দেখলে জানতেই পারতো না শাশুড়ীরাও বুঝি এতো ভালো হয়।নাহলে তার বিবাবিত বান্ধবীদের মুখে তো শুধু শাশুড়ীদের বদনামই শুনে ও।শরবতটুকু খেয়ে আয়ানার সামনে চলে গেলো চুল মুছার জন্যে।আরাবী যখন নিজের কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো।আচমকা এমন হওয়ায় হাত থেকে তোয়ালে পরে গেলো আরাবীর।পিছনে ঘুরেই যাকে দেখতে পেলো ভাবতেই পারিনি আরাবী।জিসান এসেছে ওর রুমে।তাও বি’শ্রি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আরাবীর রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।এতো সাহস এই ছেলের।ওর বেডরুম অব্দি চলে এসেছে।আরাবী শক্ত কণ্ঠে বলে,
-‘ কি সমস্যা?কি চাই আপনার?আর আমার রুমে প্রবেশ করার অনুমতি কে দিয়েছে আপনাকে?’
জিসান কুটিল হেসে বলে,
-‘ আমার কি চাই বুঝতে পারোনি তুমি?আমার তো তোমাকে চাই জানেমন।জায়ান সালা ঘরের ভীতর এমন হট,সুন্দরী বউ রেখে অফিসে যায় কিভাবে?আমি তো হলে সারাদিন তোমাকে নিয়ে আদর সোহাগে ব্যস্ত থাকতাম।’
আরাবীর ঘৃনার গা গুলিয়ে আসলো।আরাবী বুদ্ধি খাটিয়ে অতি সন্তর্পণে নিজের ফোনের ভিডিও অন করে ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা ফুলের টবের পিছনে রেখে দিলো।যাতে এখানে এখন যা যা হয় সব রেকর্ড হয়ে যায়।এই জিসানকে তো শাস্তি দিতেই হবে।নিজের কাজ শেষ করে আরাবী এইবার দুহাত বুকে বেধে দাড়ালো। বললো,
-‘ তো একটা বিয়ে করে নিন না।অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিচ্ছেন কেন?’
-‘ কি করবো বলো।অন্যের বউ যদি এতো সেক্সি আর হট বডি ফিগার নিয়ে চোখের সামনে ঘুরঘুর করে তাহলে যে কন্ট্রোল হয় নাহ।’
আরাবীর শরীর রাগে ফে’টে যাচ্ছে।দাঁতেদাঁত চেপে বলে,
-‘ নিজের ভালো চাইলে এখান থেকে চলে যাহ।নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।’
জিসান হাসলো।আরাবীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
-‘ তোর এতো তেজ? এতো তেজ তো আজ আমি মাটির সাথে মিশিয়েই ছাড়বো।’
আরাবীর কাছে জিসান এসে ওর গায়ে হাত দেওয়ার আগেই। আরাবী সজোড়ে লা’থি মেরে দিলো জিসানের গোপনাঙে। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো জিসান।আরাবী জিসানের হাত ধরে মুচড়ে দিলো।চেয়েও চিৎকার করতে পারলো না জিসান।কারন তার আগেই আরাবী জিসানের মুখে ফেলে রাখা তোয়ালেটা উঠিয়ে গুজে দিয়েছে।আরাবী জিসানের গালে সজোড়ে থা’প্পড় মেরে বলে,
-‘ তোর এতো বড় সাহস তুই আমায় এইসব কথা বলিস।আমি আরাবী শুধু আমার স্বামির কাছে নম্র,ভদ্র,লাজুক। নাহলে আমি মেয়েটা মোটেও ভালো নাহ।আমার দিকে কুদৃষ্টি দিলে সেই চোখ আমি গে’লে দিবো।’
আরাবী জিসানের হাতে পাশে রাখা হিল জুতো দিয়ে ইচ্ছে মতো বা’রি দিলো।হাতটা রক্তা’ক্ত করে ছাড়লো আরাবী।নিজের মনের ঝাজ মিটিয়ে তারপর ছাড়লো জিসানকে।জিসান ব্যাথায় আর্তনাদ করছে।আরাবী ওর চুল মু’ঠি করে ধরে ওর রুমের বাহিরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আরাবী চাপা স্বরে দরজার ওপাশে থাকা জিসানকে রাগি গলায় বললো,
-‘ এই শিক্ষা মনে থাকলে আর কোনদিন আমি কেন আর কোন মেয়ের দিকেও তাকাবি নাহ।’
__________________
রাতে যখন জায়ান অফিস থেকে ফিরলো আরাবীর থমথমে মুখশ্রী দেখে ভ্রু-কুচকালো। সারাটাক্ষন আরাবীকে এমন ভার মুখ নিয়ে থাকতে দেখে শেষে আর না পেরে প্রশ্ন করলো,
-‘ কি হয়েছে?’
আরাবী বিছানা করতে করতে উত্তর দেয়,
-‘ কি হবে?’
-‘ সেটাই তো বলছি।কি হয়েছে বলতে।এটা বলো না যে কিছু হয়নি।কারন আমার কাছে মিথ্যে বলে লাভ নেই।আমি জানি কিছু তো একটা হয়েছে।তাই তাড়াতাড়ি বলো। ‘
আরাবী এইবার থপ করে বিছানায় বসে পরলো।এতোক্ষনে জমিয়ে রাখা কান্নাগুলো যেন হঠাৎই ঠেলেঠুলে বেড়িয়ে আসলো।বলে না প্রিয় মানুষের সামনে হাজার চাইলেও নিজেকে শক্ত রাখা যায় না।তাদের সামনে দূর্বল হয়ে পরি আমরা।আরাবীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।আর হাজার হোক সে একটা মেয়ে।তাকে এমন পরপুরুষের মুখ এমন বি’শ্রি কথা শুনলে তো ওর খারাপ লাগবেই।আরাবীকে হঠাৎ এমন কাঁদতে দেখে অবাক হলো জায়ান।আরাবীর এমন কান্নায় যেন ওর কলিজা তীরের মতো বি’ধছে।ঝাঝ’ড়া করে দিচ্ছে হৃদপিণ্ডটা।জায়ান তড়িঘড়ি করে আরাবীর পাশে এসে বসলো।টেনে আরাবীকে বুকে নিলো।অস্থির কণ্ঠে বলে উঠলো,
-‘ কি হয়েছে আরাবী?কাঁদছ কেন?আমাকে বলো।আমি সব ঠিক করে দিবো।তবুও কাঁদে না তো।আমার কষ্ট হচ্ছে।’
আরাবী ঝাপ্টে ধরলো জায়ানকে।মনের কষ্টগুলো উজাড় করে দিলো প্রিয় মানুষটার কাছে।তার বক্ষপিঞ্জরার মাঝে চুপটি করে মিশে রইলো।জায়ান ও কিছু বললো না সময় দিলো আরাবীকে।খানিক সময় পর আরাবী নিজের ফোনটা এনে সেই ভিডিও রেকর্ডটা অন করে জায়ানের হাতে দিলো।জায়ান অবাক হলো এমন একটা সময়ে হঠাৎ আরাবীকে এমন ভিডিও রেকর্ড দেখানোর জন্যে।পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ভিডিও রেকর্ডটা দেখে জায়ানের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।রাগে শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ কেঁপে কেঁপে উঠছে।চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো জায়ানের।চোখজোড়া লাল হয়ে গেলো জায়ানের।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো জায়ান।আজ একটা অঘটন তো ওর দ্বারা হবেই হবে।
#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২২
জায়ানকে এমন ভয়া’নকভাবে রেগে যেতে দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।আরাবী জায়ানকে কিছু বলবে তার আগেই জায়ান বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।বাঘের ন্যায় গর্জন করে উঠে বলে,
-‘ সাহস কি করে হয় ওর।সাহস কি করে হয়?আমার বউ,ও আমার বউকে এসব কথা বলার সাহস কি করে হয়?ওর জিভ আমি টেনে ছি’ড়ে ফেলবো।’
জায়ান রেগেমেগে কক্ষ থেকে বের হতে নিবে তার আগেই আরাবী জায়ানের হাত টেনে ধরে।ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো,
-‘ প্লিজ,যাবেন নাহ। আমি ওকে মে’রেছি তো।অনেক মে’রেছি।যাবেন নাহ।’
জায়ান আরাবীর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
-‘ তো?তুমি মে’রেছো এতে আমি কি করবো?সেটা তোমার ভাগের ছিলো।তুমি তোমার জন্যে লড়েছ।এইবার আমি আমার বউয়ের জন্যে করবো,বুঝেছো?’
আরাবীর জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিলো।জায়ানকে বুঝাতে চেষ্টা করলো,
-‘ শুনুন নাহ।তারা তো চলেই যাবে।আমার মনে হয় না আজ যা মার খেয়েছে এরপর আর কোনদিন আমি কেন আর কোন মেয়ের দিকে তাকাবে।আপনি থামুন।এমনিতেই ফুপি আমায় পছন্দ করেননা বেশি একটা।আপনি এখন এমন করলে কিভাবে কি হবে বলুন তো?’
জায়ান যেন আরাবী এমন কথায় কিছু বুঝবে তো দূরের কথা।আরও রেগে গেলো।দাঁড়িয়ে থাকা আরাবীকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো।জায়ানের শক্তপোক্ত হাতের থাবায় আরাবী ব্যাথা পেলো।তবুও কিছু বললো নাহ।জায়ান আরাবীকে বিছানায় ধপ করে ফেলে দিলো।তারপর এক পা ফ্লোরে রেখে আরেক পা বিছানায় উঠালো।এক হাত আরাবীর কাধের পাশে রেখে আরেক হাত দিয়ে আরাবীর গাল চেপে ধরলো।চি’বিয়ে চি’বিয়ে বলে উঠলো,
-‘ কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার।বউটা তুমি আমার।বিয়ে করেছি আমি তোমাকে।অন্য কেউ করেনি যে অন্যের কথা ভেবে আমি আমার বউয়ের সাথে হওয়া অন্যায় দেখেও মুখ বুজে সহ্য করে নিবো।আমি জায়ান সাখাওয়াত কথাটা ভুলে যেও নাহ।’
কথাগুলো বলেই জায়ান উঠে চলে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হলো।আরাবী দ্রুত উঠে দাড়ালো।ছুটে গেলো জায়ানের কাছে।যে করেই হোক এই পাগলকে থামাতে হবে।নাহলে ভয়ং’কর প্রলয় এসে যাবে।আরাবী এইবার জায়ানকে ঝাপ্টে ধরলো জায়ানকে।একেবারে সাপের মতো দুহাতে পেঁচিয়ে ধরলো।এদিকে আরাবী এমন করায় হতভম্ব জায়ান।শান্তভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।আরাবী দেখলো জায়ান ওকে জড়িয়ে ধরছে না।তাই নিজেই আবার জায়ানের হাত দুটো টেনে ওর কোমড়ে রাখলো।জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো।তাও বেশ বেগ পেতে হয়েছে আরাবীর।কারন জায়ান অনেক লম্বা।আরাবী পা উঁচিয়ে জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরেছে।তাও বেশ কষ্ট হচ্ছে।জায়ান তখনও নির্বিকার।সহ্য করতে না পেরে আরাবী বলে,
-‘ আমি দাড়াতে পারছি না দেখছেন নাহ?আপনি এতো লম্বা আমি কি আপনাকে ধরতে পারি?উপরে তুলুন আমায়।’
ভ্রু-কুচকালো জায়ান আরাবীর কথায়।মেয়েটার মাথায় চলছে কি? কি করতে চাইছে এই মেয়ে?এর মাঝে আরাবীর কণ্ঠ আবার,
-‘ কি হলো তুলুন?’
জায়ান আরাবীর কোমড়ে একহাতে আঁকড়ে ধরেই ওকে উপরে তুলে নিলো।আরাবী দাঁত বের করে হাসি দিলো।জায়ান ভ্রু-কুচকে বলে,
-‘ কি করতে চাইছো তুমি?’
আরাবী হি হি করে হেসে বললো,
-‘ আপনাকে সিডিউস করছি।’
জায়ান হা হয়ে রইলো আরাবীর কথায়।যে মেয়েকে আদরের সময় বলে কয়েও একটা চুমু দেওয়াতে পারে না। আর সে নাকি আজ ওকে সিডিউস করছে।জায়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে মুখ অন্যপাশে ফিরিয়ে নিলো।তারপর শব্দ করে হেসে দিলো।আরাবী ঠোঁট ফুলালো জায়ানকে হাসতে দেখে।রেগে বলে,
-‘ হাসছেন কেন হ্যা?এখানে হাসার কি আছে?’
জায়ান হাসি থামালো। আরাবীর কোমড় টেনে ওকে আরেকটু উপরে উঠিয়ে নিয়ে বলে,
-‘ সিডিউস বুঝি এভাবে করে?’
-‘তাহলে কিভাবে করে?’
-‘ আমি কিভাবে করি তোমায় রাতে?’
জায়ানের এমন একটা কথা বলবে ভাবতেই পারেনি আরাবী।লজ্জায় মুখশ্রী রক্তিম আভা ধারণ করলো।জায়ানের ঘাড়ে খামছে দিয়ে বলে,
-‘ ছিহ অস’ভ্য।’
-‘ছি কি? সিডিউস কিভাবে করতে হয় বললাম।’
-‘ লাগবে না সিডিউস করা।ছাড়ুন আমায়।’
আরাবী মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো।জায়ান ছাড়লো না।আরও শক্ত করে ধরলো।আরাবীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-‘ সিডিউস করতে এসেছো এখন তো সেটা না করা পর্যন্ত আমি ছাড়ছি না তোমায়।’
জায়ানের ফিসফিসানো কথাগুলো শুনে পুরো শরীর মৃদ্যু কেঁপে উঠলো।লজ্জায় হাঁসফাস করে উঠলো আরাবী।নিজের করা ট্রিকে যে নিজেই এইভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতে পারেনি আরাবী।আরাবীর মাথা নিচু করে করুন গলায় বলে,
-‘ ছাড়ুন নাহ।’
-‘ উঁহু। ছাড়বো না।’
-‘ আচ্ছা আর করবো না তো!’
-‘ চুমু চাই আমার।’
চোখ মুখে লজ্জার আস্তরনে ঢেকে গেলো আরাবীর।নিজের জালে নিজেই যেন জড়িয়ে গেলো মেয়েটা। জায়ানের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে নিদারুণ একরাশ মুগ্ধতা তার প্রেয়সীর জন্যে।যেন প্রেয়সীর ঠোঁটের সিক্ত চুমুর জন্যেই অপেক্ষা করছে।সেইভাবেই আরাবীকে ধরে রাখলো। আরাবী সময় নিলো।চোখ বুজল।ধীরে এগিয়ে নিলো ঠোঁটটা জায়ানের ঠোঁটের কাছে।তবে ওকে আর কিছু করতে হলো না।পপরমুহূর্তেই জায়ানের নরম,গরম ঠোঁটের প্রগাঢ় স্পর্শ অনুভব করলো নিজের ঠোঁটের ভাজে।ভালোবাসাময় উষ্ণ ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত জায়ান।উন্মাদ হয়ে যায় ছেলেটা আরাবীর কাছে আসলেই।থরথর করে কাঁপতে থাকা আরাবীর ছোট্ট শরীরটা জায়ান ভালোভাবে আগলে নিলো।যত্ন করে রাখলো নিজের বক্ষের মাঝে।যেন মেয়েটা একটু খানিও ব্যাথা না পায়।বেশ সময় নিয়ে ছাড়লো জায়ান আরাবীকে।জায়ানের গরম নিঃশ্বাসগুলো আরাবীর নত করে রাখা রক্তিম মুখশ্রীতে আছড়ে পরছে।জায়ান ধীরে বলে,
-‘ এতো নরম শরীর।পুরোই তুলোর মতো।ধরতেও পারি না ঠিকঠাক।ধরলেই মনে হয় এই বুঝি ব্যাথা পেলে।’
হাসল আরাবী।লাজুক হাসি।জায়ান আবার বলে,
-‘ কি আছে তোমার মাঝে?’
জবাব নেই আরাবীর।জায়ানের হাত আরাবীর গালে আদুরে স্পর্শ করলো।
-‘ বলো না কিছে? ‘
-‘ জা..জানিনাহ।’
আরাবীর কম্পিত কণ্ঠস্বর।
-‘ কেন জানো না? কেন তোমার কাছে এলেই আমি এলোমেলো হয়ে যাই।উম আরাবী তোমায় ছাড়া আমার একমুহূর্ত চলে না।অফিসে আমি যাই ঠিকই।তবে মন আমার তোমার কাছে পরে থাকে।আমার কি হবে আরাবী?তুমি তো পাগল বানিয়ে ছাড়লে।লোকে এখন আমায় পাগল বলবে। লোকে বলবে বউয়ের প্রেমে পরে জায়ান সাখাওয়াত পাগল হয়ে গিয়েছে।’
জায়ানের এমন কথা শুনে আরাবী খিলখিল করে হেঁসে দিলো।জায়ান চেয়ে চেয়ে দেখলো প্রাণপ্রিয়ার সেই মনখোলা হাসি।এমন একটা মেয়েকে কি ভালো না বেসে থাকা যায়?উঁহু,কখনও না।সেও পারেনি।ভীষণ ভালোবাসে ও আরাবীকে।এমন মেয়েটাকে ছাড়া এখন একমুহূর্তের জন্যেও শ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে যাবে ওর জন্যে।জায়ানকে এমন ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকে দেখতে দেখে আরাবী হাসি থামালো।কোমল নরম হাত দ্বারা জায়ানের গাল স্পর্শ করে তার চিকন মেয়েলী কণ্ঠে বলে,
-‘ কি দেখেন এতো?’
-‘ আমার মাঝে কি এমন আছে?কেন এতো ভালোবাসেন আমায়?আমি তো আপনার মতো অতো সুন্দরও নাহ। ‘
আরাবীর এই কথায় রেগে গেলো জায়ান।শক্ত কণ্ঠে বললো,
-‘ তার মানে তুমি বুঝাতে চাইছো জায়ান সাখাওয়াতের পছন্দ ভালো না।’
-‘ আমি সেটা কখন বললাম আজব?’
আরাবীর অবাক কণ্ঠস্বর।জায়ান ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে,
-‘ এইযে তুমি বললে তুমি নাকি সুন্দর নাহ।আমি তোমায় কি দেখে ভালোবাসলাম।এইটা কেমন কথা আরাবী? আমাকে রাগাও কেন তুমি?তুমি জানো যে আমি আর যাই হোক তোমার উপর রাগ দেখাতে পারি না।রেগে আমি পুরো পৃথিবী ধ্বং’স করে দিতে পারলেও। তোমাকে কিছু বলতে পারি নাহ আরাবী।’
জায়ানের হৃদয় নিগরানো প্রতিটি কথায় আরাবীর চোখ ভরে উঠলো।ও ঝাপ্টে ধরলো জায়ানের গলা।ফিসফিস করে জায়ানের কানে কানে বললো,
-‘ ভালোবাসি।আপনায় প্রচন্ড ভালোবাসি আমি।শুনছেন আপনি আপনার কাঠগোলাপ আপনাকে ভালোবাসে।’
#চলবে_____________