হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব -২৩+২৪

#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৩
রকিং চেয়ারে বসে উপন্যাস পড়ছিলেন জাহিদ সাহেব।ঠিক তখনি চা নিয়ে হাজির হলেন লিপি বেগম।স্বামির হাতে চায়ের কাপ দিয়ে তিনি বিছানায় বসলেন স্বামির মুখোমুখি হয়ে।জিহাদ সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্ত্রীর দিকে চাইলেন।ভ্রু-কুচকে আসলো তার।সন্দিহান কণ্ঠে বলে উঠলেন,
-‘ কি হয়েছে ফাহিমের মা? কিছু বলবে?’

লিপি বেগম যেন এই প্রশ্নে খুশি হলেন।গদগদ হয়ে বলে,
-‘ হ্যা,হ্যা অনেক দরকারি কথা এটা।’

-‘ কি কথা বলো।’

লিপি বেগম খানিক আমতা আমতা করলেন। খানিক ভাবনা চিন্তা করে বলে উঠলেন,
-‘ সাখাওয়াত বাড়ির ছোটো ছেলেকে তো চিনো ও-ই।’
-‘ হ্যা,ইফতি কেন?’
-‘ আমাদের মেয়ে ফিহার জন্যে ইফতিকে কেমন লাগে তোমার?’

লিপি বেগমের আচমকা এমন একটা কথা শুনে আশ্চর্য হলেন জিহাদ সাহেব। তবে স্ত্রীর এই প্রস্তাবটা তার কাছে বেশ ভালো লাগলো।ইফতি ছেলেটাকে তারও ভালোলাগে।তিনি বললেন,
-‘ ভালো, খুব ভালো।তবে বলছিলাম কি মাত্রই তো আরাবীটাকে বিয়ে দিলাম।ফিহাটার বিয়ে আরও কয়েকদিন পর দিতে চাইছিলাম।’

লিপি বেগম রেগে গেলেন।তাও বহু কষ্টে নিজেকে দমিয়ে নিয়ে বলে,
-‘ ফিহাও তো বড় হয়েছে। ছোটো নেই আর।মেয়েটার জন্যে ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারলে চিন্তা মুক্ত হতাম।আর তাছাড়া সত্যি কথা এটা হলো আমাদের ফিহা নিজেও ইফতিকে পছন্দ করে।ও নিজেই আমাকে এই কথা বলেছে।তাই তো আমি তোমাকে বলতে এলাম।’

মেয়ে ইফতিকে পছন্দ করে শুনে আশ্চর্য হলেন জিহাদ সাহেব।অবাক কণ্ঠে বলেন,
-‘ এ তুমি কি বলছো লিপি?’
-‘ আমি সত্যি কথাই বলছি।এটা জেনেই তো আমি তোমার কাছে জলদি জানাতে আসলাম।’

জিহাদ সাহেব স্তব্ধ হয়ে কতো সময় বসে রইলেন।বেশ খানিক চিন্তা ভাবনা করে বললেন,
-‘ আচ্ছা ঠিক আছে।মেয়ে যখন পছন্দ করে এখানে আর কিইবা বলব আমি।ঠিক আছে কাল তো শুক্রবার কাল নাহয় আমরা আরাবীদের দাওয়াত করি।তারপর নাহয় এই কথা উঠাই?’

খুশি হয়ে লিপি বেগম বলেন,
-‘ ঠিক আছে।তুমি আর ফাহিম সকাল সকাল বাজার করতে চলে যেও।আর এখনই ফোন দেও সাখাওয়াত বাড়ি।দাওয়াত করো তাদের।’

এই বলে লিপি বেগম চলে গেলেন জিহাদ সাহেব ফোন লাগালেন নিহান সাহেবের কাছে।প্রথমে কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করে নিলেন।তারপর কাল স্বপরিবারে তাদের কাল দাওয়াত করলেন। এটা একটা বাবার জন্যে ভালো খবর। যে এতো ভালো একটা পরিবারে আরেকটা মেয়েকেও তিনি বিয়ে দিতে পারবেন।দুবোন একসাথে থাকবেন।তবে কেন যেন তিনি শান্তি পাচ্ছেন নাহ। আরাবীর সময় যেমনটা খুশি হয়ে গিয়েছিলেন।আজ তেমন অনুভূতি হচ্ছে না।মনের মাঝে অজানা একটা ভয় হচ্ছে।মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে।কিছু একটা ঘটনা ঘটার পূর্বাভাস পাচ্ছে মন।
_______________
জায়ানের মুখ থেকে যেন হাসির রেখা সরছে না।আর জায়ানের সেই হাস্যজ্জ্বল চেহারা দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে আরাবী।কাল রাত যে কিভাবে কথাটা বলে ফেলেছিলো ও কে জানে? কাল রাত থেকে লোকটা এইভাবে ওর দিকে তাকিয়ে।আর সুযোগ পেলে কাছে এসেই বলছে, ‘ আবার বলো না আরাবী ভালোবাসি।’ সাথে তো লোকটার বেফাস কথা আছেই।আরাবী লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়। এইযে খেতে বসেও ওর কানে ফিসফাস করছে।কেমন দেখায় নাহ?সবার সামনে লজ্জায় পরছে আরাবী। খেতে খেতে হঠাৎ মিথিলা বলে উঠলো,
-‘ কি শুরু করলে তোমরা? শশুড় শাশুড়ি কাউকে দেখছি মানো নাহ।এভাবে বেহায়াপনার কোন মানে হয় নাহ তো? মা বাবা কি কোন শিক্ষা দেইনি তোমাকে?নাকি তোমার বাবা মা-ও এমন স্বভাবের।লজ্জা শরমহীন। ‘

সবাই চমকে উঠলো এমন একটা কথায়।আরাবীর খারাপ লাগলো।এভাবে সবার সামনে এসব বলার তো কোন মানে নেই তাই নাহ? আর বাবা মায়ের কথা তোলায় বেশ রাগ লাগলো আরাবীর। শাশুড় শাশুড়ির উদ্দেশ্যে বেশ শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,
-‘ মাফ করবেন বাবা, মা।আমি এখন একটু বেয়াদবি করবো।কারন এখানে আমার বাবা মায়ের কথা তোলা হয়েছে।আমি সব সহ্য করতে পারলেও আব্বু আম্মুর নামে কেউ কিছু বললে সহ্য হয় নাহ।’

সাথি বেগম চোখের ইশারায় সম্মতি দিলেন।নিহান সাহেব কিছুই বললেন নাহ।চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।আরাবী এইবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মিথিলার দিকে।গম্ভীর গলায় বলে উঠে,
-‘ তা কি যেন বলছিলেন ফুপু শাশুড়ি আম্মা।আমার বাবা মা আমায় ঠিকভাবে শিক্ষা দেই নি?’

মিথিলা ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে।আরাবী আবার বলে,
-‘ নিজের স্বামির সাথে কথা বললে নির্লজ্জ হয়ে যায় আমি জানতাম নাহ তো? তাহলে কি আমার এখানে বসা দুই মা আমার আম্মু এমনকি আপনিইও কি নির্ল’জ্জ?কারন আপনারাও তো স্বামির কথা বলতেন।
আমি আমার স্বামির সাথে কথা বলছি বুঝেছেন?স্বামির সাথে।কোন পরপুরুষের সাথে নাহ যে আমি লজ্জায় ম’রে যাবো।তাহলে বলবো আপনি আপনার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেননি।যে কি-না একজন বিবাহিত পুরুষকে সবার সামনে নির্ল’জ্জের মতো জড়িয়ে ধরতে চায়। আবার অন্যের স্বামিকে ভালোবাসিও বলে।আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি বলেছি।পরেরবার ভেবে চিনতে কথা বলবেন।আমি কিন্তু মুখ বুজে সব সহ্য করা মেয়ে নই।আমার সাথে অন্যায় করলে প্রতিবাদ আমি কর‍তে জানি। ‘

সাথি আর মিলি বেগমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।মিথিলা তাদেরও এমন লজ্জা দিতো সবার সামনে। নতুন নতুন যখন তারা তাদের স্বামিদের সাথে কথা বলতো।আজ শান্তি লাগছে।নিহান সাহেব আর মিহান সাহেবের ঠোঁটের কোণেও মৃদ্যু হাসি।নিজের পুত্রবধুর প্রতিবাদি রূপ দেখে তাদেরও বেশ ভালো লাগলো। এদিকে আরাবী বসতে নিবে তার আগেই জায়ান ওর হাত টেনে ধরলো।সবার উদ্দেশ্যে গম্ভীর গলায় বলে উঠে,
-‘ আমরা উপরে যাচ্ছি।’

জায়ান আরাবীকে নিয়ে চলে গেলো।এদিকে মিথিলা রাগে ফোঁসফোঁস করছে।রেগে বড় ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
-‘ দেখলে ভাই।তোমার ছেলের বউ আমায় কিভাবে অপমান করলো।’

নিহান সাহেব টিশ্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো,
-‘ আমার ছেলের বউ যা করেছে আমি মনে করি ঠিক করেছে।তুই নিজেকে পরিবর্তন কর মিথিলা।বিদেশে থাকিস তুই।এটুকু তো বুঝিস যুগ পরিবর্তন হয়েছে।আর এই যুগের ছেলেমেয়েদের চিন্তা ভাবনা আমাদের থেকেও ভিন্ন।’

নিহান সাহেব উঠে চলে গেলেন।আহানা করুন কণ্ঠে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ মা ছেড়ে দেও না।কেন এমন করছো? জায়ান তো সুখে আছে।এতেই হবে।এসব বাদ দেও মা।’

———————-
আরাবী রেগে আছে।কথা বলছে না জায়ানের সাথে।জায়ান আদুরেভাবে আরাবীকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,
-‘ কি হলো?কথা বলছো না কেন?’

আরাবী রেগে বলে,
-‘কথা বলব নাহ।’
-‘ কেন বলবে নাহ?’
-‘ আপনার জন্যে সব হয়েছে।’
-‘ আশ্চর্য! আমি কি করলাম?’

আরাবী জায়ান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
-‘ আপনাকে আমি বার বার বলছিলাম তখন এমন করবেন নাহ। এমন করবেন নাহ।আপনি আমার কথা শুনলেন নাহ।এখন দেখুন তো সকাল সকাল কি একটা পরিস্থিতি হলো।’

জায়ান হেসে আরাবীর কাছে এসে আরাবীর কোমড় আকঁড়ে ধরে নিজের কাছে আনলো।আরাবীর কপালে আদুরে চুমু খেয়ে নিলো। এতে যেন সব রাগ গলে পানি হয়ে গেলো আরাবীর।জায়ান আরাবীর গালে স্পর্শ করে বলে,
-‘ তখন যদি আমি এমন না করতাম।আমার বউটার এই প্রতিবাদি রূপটা কি আমি দেখতে পেতাম? বলো?পেতাম।উফ,আমারও প্রেমে পরলাম বউ তোমার উপর।আবারও ঘা’য়েল হলাম।’

আরাবী মুঁচকি হাসলো।জায়ানকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
-‘ বেশ কথা জানেন আপনি। আপনি খুব খারা’প। খুব খা’রাপ।’

জায়ান শব্দ করে হাসলো।জায়ানের শরীর দুলছে হাসির কারনে।আরাবীর অপলক তাকিয়ে রইলো জায়ানের সেই দিক।জায়ান হাসি থামিয়ে তাকায় আরাবীর দিকে। আরাবীকে এইভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
-‘ কি দেখছো?’

আরাবী জায়ানের বুকের বা-পাশে হাত রেখে বলে,
-‘ দেখছি আমার সুদর্শন স্বামিকে।’

#চলবে______________#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৪
একটুপরেই মৃধা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবে সাখাওয়াত বাড়ির লোকজন।জায়ান গোসল নিচ্ছে।এই ফাঁকে শাড়িটা রুমের মধ্যেই পরে নিচ্ছে আরাবী।চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ লেপ্টে আছে মেয়েটার।জায়ান আরাবীকে আজ শাড়ি পরতে বলেছে।তাও নিজে বেছে একটা নীল রঙ্গের জামদানি শাড়ি বের করে দিয়েছে।আরাবীও খুশি মনে রাজি হয়ে গিয়েছে।ভালোবাসার মানুষটা যখন যা চায় তখন তাই করতে ভালোবাসে।কিন্তু এখন আরাবীর এতো বিরক্ত লাগছে শাড়িটা পরতে।শাড়ির কুচিগুলো কিছুতেই ঠিক করতে পারছে না মেয়েটা।ঠিক সেই মুহূর্তেই একজোড়া হাত এসে স্পর্শ করলো ওর শাড়ির কুঁচিগুলো।সুন্দরভাবে ভাঁজে ভাঁজে গুছিয়ে নিয়ে হাতে দিলো আরাবীর।জায়ান চোখে মুখে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আরাবীর দিকে।লজ্জা পেলো আরাবী জায়ানের কাছ থেকে সরে গিয়ে কুঁচিগুলো গুজে নিলো।পিছন থেকে জায়ানের বিরক্তভরা কণ্ঠ শোনা গেলো।
-‘ আহা, দেখছিলাম তো আমি।’

আরাবী মুঁচকি হেসে বলল,
-‘ পরে দেখিয়েন।আমি এখনো পুরো তৈরি হইনি।হিজাব বাঁধা বাকি আছে।’
-‘তো পরে আসো।আগে আমি দেখে নেই একটু।’

বাচ্চাদের মতো আবদার জায়ানের।আরাবী শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে। হিজাব বাধায় মনোযোগ দিলো।মানে জায়ানের কথাকে পুরোপুরি ইগনোর করলো আরাবী।জায়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-‘ ইগনোর করা হচ্ছে বুঝি?’

আরাবী হিজাবে পিন গাঁথছিলো। সেইভাবেই বলে উঠলো,
-‘ এখানে ইগনোর করার কি আছে? সবাই রেডি হয়ে গিয়েছে বোধহয়।আমিই লেইট।’

জায়ান এসে পিছন থেকে আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো।হকচকিয়ে গেলো আরাবী।অবাক হয়ে বলে,
-‘ আরেহ, কি করছেন? ছাড়ুন তো।’
-‘ আহ, এতো ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেন?রাতেও তোমাকে কতো ভুলিয়ে ভালিয়ে কাছে আনা লাগে।’

আরাবী লজ্জায় হতভম্ব। জায়ানকে ঠেলে সরিয়ে দিলো তৎক্ষনাত। বিরবিরিয়ে বলল,
-‘ অস’ভ্য, অস’ভ্য।চরম অস’ভ্য।’

জায়ান প্যান্টের পকেটে হাত গুজে সটান হয়ে দাড়ালো।নির্বিকার ভঙিতে বলল,
-‘ অস’ভ্য আমি হয়েছি কার জন্যে?তোমার জন্যে।সো এখন এসব সহ্য করতেই হবে।কিছু করার নেই।’

আরাবী আর কিছুই বলল নাহ।সে জানে এই ঠোঁটকা’টা লোকটাকে থামানো কারো পক্ষে সম্ভব নাহ।তাই অহেতুক কথা বাড়ালো নাহ।আরাবী ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে বলল,
-‘ চলুন আমি রেডি।’

জায়ান এসে আরাবীর হাত মুঠোয় পুরে নিলো।তারপর বেড়িয়ে পরলো রুম থেকে।নিচে এসে দেখে সবাই তৈরি।জায়ান বলে উঠল,
-‘ চলো যাওয়া যাক।’

সাথি বেগম বললেন,
-‘ দারা বাবা।জিসান তো এখনও এলো।নাহ।’

জায়ান ভ্রু-কুচকালো। রাগি স্বরে বলে,
-‘ ওকে কে নেবে? ওকে কি আমি যেতে বলেছি?’

জায়ানের মুখে এমন কথা শুনে বেশ অপমানবোধ করলেন মিথিলা।আরাবীর দিকে রাগি চোখে তাকালো।উনি মানেন যে এখানে আরাবীই কিছু একটা করেছে। মিথিলা বলেন,
-‘ আমার সাথে এসেছে জিসান।ওকে এইভাবে অপমান করা মানে আমাকেও অপমান করা।জিসান না গেলে আমি অথবা আহানা কেউ যাবো নাহ ভাইয়া।এই আহানা চল উপরে।এমনিতেও এই মেয়ের বাবার বাড়ি যাওয়ার কোনরকম ইচ্ছা ছিলো না আমার।সে তো ভাইয়া এতো করে বলেছে তাই না করতে পারিনি।’

জায়ান কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরাবী জায়ানের হাত ধরে থামিয়ে দিলো।মাথা দুলিয়ে না করলো কিছু বলার জন্য।নিহান সাহেব বললেন,
-‘ আহা,মিথিলা ছাড় তো।ওর কথায় রাগ করিস নাহ।’

মিথিলা নাক ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালো।এমন সময় নেমে আসলো জিসান।ওর অবস্থা দেখে সবাই অবাক।হাতে ব্যান্ডেজ করা আবার খুরিয়ে খুরিয়ে হাটছে।আরাবী অনেক হাসি পেলো জিসানকে দেখে।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো নিজেকে ও।এদিকে কাল থেকে রুম থেকে বের হচ্ছিলো না জিসান।তাই ওর এই অবস্থা কেউ দেখেনি।মিথিলা দৌড়ে আসলো জিসানের কাছে।অস্থির হয়ে বললেন,
-‘ জিসান বাবা কি হয়েছে তোর?এইগুলো কিভাবে হলো?’

জিসান আমতা আমতা করল।তাও কোনরকম বলল,
-‘ কাকিমা বাথরুমে পরে গিয়েছিলাম কাল। তাই সামান্য ব্যাথা পেয়েছি।’
-‘ এটা সামান্য মনে হয় তোর? ইস,কতোটা ব্যাথা পেয়েছিস।তোর মা আর বাবা জানলে আমি কি জবাব দিবো বলতো?তারা তো আমার ভরসাতেই তোকে এখানে পাঠিয়েছে।’
-‘ চিন্তা করো না তো তুমি।আমি ঠিক আছি।’

মিহান সাহেব বলেন,
-‘ জিসান? ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই তোমায় চলো।’
-‘ তার দরকার নেই ছোটো মামা।আমি ঠিক আছি।হালকা ব্যাথা পেয়েছি।’

জিসানের নাকচ শুনে নিহান সাহেব বলেন,
-‘ তা বললে হবে বাবা? একটু চেক-আপ করিয়ে নিয়ে আসি চলো।’
-‘ নাহ বড়ো মামা তার দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।আপনারা যান। ভাবিদের বাড়িতে।আমি এখানেই থাকবো।এই অবস্থায় সেখানে যাওয়া ঠিক হবে নাহ।’

মিথিলা জিসান যাবে না শুনে বলেন,
-‘ তুই না গেলে আমিও যাবো নাহ।তুই একা একা এখানে কিভাবে থাকবি বলত?’
-‘ আহা কাকিমা যাও তো তুমি।আমি ঠিক আছি।এমনিতে আমি বাডি থাকবো না।একটু পর আমি এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্যে বের হবো যাও তুমি।’

অবশেষে জিসানের কথাই সবাই মেনে নিলো।জায়ান তো অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে শুধু আরাবীর জন্যে।মেয়েটা তাকে পিছন থেকে খামছে ধরে আছে।অবশেষে সবাই রওনা হলো।
__________________

মৃধা বাড়িতে আজ আলিফাও এসেছে।ফাহিম আর জিহাদ সাহেব ওকে আসতে বলেছেন। আলিফাকে তারা নিজেদের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। আরাবী আসবে শুনে ওকেও আসতে বলেছেন তারা।আলিফা টেবিলে পানির জগ ভরে এনে রাখলো।এমন সময় কলিংবেল বেঁজে উঠলো।লিপি বেগম শরবত বানাচ্ছিলেন তিনি বলেন,
-‘ আলিফা যা তো দরজাটা খুল।তারা বোধহয় এসে পরেছে।’

আলিফা লিপি কথা মতো দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজা খুলেই দেখলো সাখাওয়াত বাড়ির সবাই হাজির।আলিফা সবাইকে সালাম জানালো।তারপর সরে গিয়ে সবাই ঘরের ভীতর প্রবেশ করার জায়গা করে দিলো।ইফতি ঢুকতে নিয়েই আলিফার ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।ইফতি সুযোগ বুঝে আলিফা চোখ মেরে দিলো।আলিফা হা করে রইলো অবাক হয়ে।এতোগুলো মানুষের সামনে কিভাবে এরকম করতে পারলো লোকটা?কেউ দেখল কি ভাবতো?আলিফা বিরবির করল,
-‘ অস’ভ্য কোথাকার।’

জিহাদ সাহেব আর ফাহিম সবাইকে সাদরে আসন গ্রহন করতে বললেন।কুশল বিনিময় হলো সবার সাথে।আরাবী গিয়েই বাবার বুকে ঝাপিয়ে পরলো।লেপ্টে রইলো বাবার বুকে। তো এই বাবাকে ছেড়ে আবার ফাহিমের বুকে গিয়ে লেপ্টে পরে।না চাইতেও চোখের কোণ ভিজে উঠছে মেয়েটার।মনে হয় কতোদিন দেখেনা বাবা,ভাইকে।কিন্তু কিছু করার নেই।মেয়েদের ভাগ্যই এমন।ফাহিম বুঝিয়ে শুনিয়ে বোনকে জায়ানের পাশে বসিয়েছে। আরাবীকে জায়ানের কাছে বসাতে গিয়ে চোখ যায় নূরের দিকে।মেয়েটা মাথা নিচু করে বসে আছে।কোচিংয়ে সেদিনের ঘটনার পর থেকে মেয়েটা ভুলেও ওর দিকে তাকায় নাহ।শুধু পড়া বুঝানোর সময় যা একটু চোখাচোখি হয়।তাও নূর স্বর্বচ্চ চেষ্টা করে ফাহিমকে এড়িয়ে চলার জন্যে।ফাহিম ভাবলো একবার নূরের সাথে কথা বলবে।মেয়েটা কি রাগ করলো?কিন্তু ও যা বলেছে নূরের ভালোর জন্যেই বলেছে।

এদিকে আলিফার সাথে কথা বলার জন্যে পেট ফেটে যাচ্ছে আরাবীর।কালকের ঘটনা আলিফাকে না বলতে পারলে ওর হবেই না।আরাবী জায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে,
-‘ কালকে যে আমি এতো সাহসী একটা কাজ করলাম।সেটা আলিফাকে না বলতে পারলে আমার পেটের ভাত হজম হবে না।আমি একটু যাই?’

জায়ান অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকালো।আরাবীর এমন বাচ্চামো কথা শুনে কি বলবে ভেবে পেলো না। তাই সম্মতি দিয়ে দিলো আরাবীকে।আরাবী সম্মতি পেয়ে উঠে চলে গেলো আলিফার কাছে।আলিফার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।দুই বান্ধবী চুটিয়ে কথা বলবে এখন।

#চলবে___________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here