#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৯
আলিফাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ইফতি।সে একনাগাড়ে ফোন দিয়ে চলেছে আলিফাকে।কিন্তু মেয়েটা ফোন ধরলে তো?অসহ্য রকম বিরক্ত হয়ে যে ইফতি কি করবে ভেবে পায় না।শেষে না পেরে আলিফার ছোটো বোন আহিয়ার ফোন লাগালো ইফতি।একটু পরেই ফোন রিসিভ হলো অপাশ থেকে।ইফতি গম্ভীরস্বরে বলে,
-‘ হ্যালো আহিয়া?আমি তোমার দুলাভাই বলছি।’
আহিয়া আচানক এমন একটা শুনে ভড়কে গেলো।অবাক স্বরে প্রশ্ন করে,
-‘ দুলাভাই মানে?’
-‘ দুলাভাই মানে তোমার একমাত্র বোনের জামাই হবো আমি।সেই হিসেবে তো আমি তোমার দুলাভাই তাই নাহ।এখন বলো এই মাথামোটা মেয়েটা কই?’
আহিয়ার অবাকের রেশ এখনও কাটেনি।তাও আর বেশি কিছু প্রশ্ন করল নাহ।বোনটার ইদানিং কি জানি হয়েছে।দিনের প্রায় চব্বিশ ঘন্টা রুমবন্দি হয়ে থাকে।কারনটা পুরো না বোঝলেও একটু আধটু বোঝেছে আহিয়া।তাই ও বলে,
-‘ আপু তো নিজের রুমে।ইদিনিং আপুর না জানি কি হয়েছে কারো সাথে কথা বলে না।সারাদিন রুমবন্দি হয়ে থাকে।’
দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইফতি।বলে,
-‘ তোমাদের বাড়িতে এখন কে কে আছে?’
-‘ আব্বু অফিসে। আম্মু স্কুলে।আপাতত বাড়িতে আমি আর আপু ছাড়া কেউ নেই।’
-‘ বেশ। আমি তোমাদের বাড়িতেই আসছি।গেট খুলে দিও কলিংবেল বাজালে।’
-‘ আচ্ছা ভাইয়া।’
ইফতি ফোন কেটে সোজা আলিফাদের ফ্লাটে চলে গেলো।কলিংবেল বাজাতেই আহিয়া এসে দরজা খুলে দিলো।ইফতি দুটো চকোলেট দিলো আহিয়াকে।খুশি হয়ে আহিয়া বলে,
-‘ ধন্যবাদ ভাইয়া।’
-‘ মেনশন নট।আমার একমাত্র সালিকার জন্যে এটুকু কিছুই না।তা আমার বউটা কোন রুমে।’
-‘ আমার সাথে আসুন ভাইয়া।’
আহিয়া ইফতিকে নিয়ে আলিফার রুমের সামনে গেলো।দু তিনবার রুমের দরজায় নক করল।কোন জবাব এলো না। এদিকে রুমের ভীতরে সুয়ে থাকা আলিফা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আছে এভাবে বার বার দরজায় নক করায়।শেষে না পেরে বিরক্ত হয়ে বলে,
-‘ কি সমস্যা?দরজা ধাক্কাধাক্কি করার মানে কি?’
-‘ আপু দরজাটা খুল।একটু দরকার আছে।আমার বাথরুমের লাইট জ্বলছে না।আমি গোসল করব আপু।দরজাটা খুল।’
আলিফা বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর গিয়ে দরজা খুলে দিলো।আলিফা দরজা খুলতে দেরি হুরমুর করে ইফতির রুমে প্রবেশ করতে দেরি নেই।ইফতি আলিফাকে টেনে রুমের ভীতরে এনে দরজা আটকে দিলো।এদিকে একটা ঘোরে ছিলো আলিফা।আচমকা ইফতিকে দেখে কি রিয়েকশন দিবে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। একটু পর সবটা বুঝতে পেরেই চেচিয়ে উঠে আলিফা,
-‘ আপনি?আপনি এখানে কেন?আর আমার রুমে ঢোকার পারমিশন কে দিয়েছে?’
ইফতি গিয়ে সোজা আলিফার বিছানায় বসে পরল।ভাবলেশহীনভাবে বলে,
-‘ আমার বউয়ের রুমে আমি প্রবেশ করব।এতে কারো পারআমিশন নেওয়ার দরকার আছে নাকি?’
ইফতির মুখে বউ ডাক শুনে কেমন যেন লাগল আলিফার।কেঁপে উঠলো মনটা কেমন যেন।তাও সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ করল নাহ আলিফা।রুক্ষ কণ্ঠে বলে,
-‘ কে বউ?কি বলছেন আপনি?মাথা ঠিক আছে আপনার?মুখে লাগাম টানুন।’
-‘ আমার মাথা ঠিকই আছে।শুধু তোমার মাথায় গোবড়ে ঠাসা তা বেশ বুঝতে পারছি আমি।’
প্রচন্ড রাগ লাগছে আলিফার।বলা নেই কওয়া নেই হুট করে হাজির হয়েছে লোকটা।এখন আবার কি উল্টাপাল্টা বকবক করছে।এমনিতেই ইফতিকে দেখেই কান্না পাচ্ছে আলিফার।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে।আলিফা বলল,
-‘ দেখুন এখন আমি ঝগড়া করার মুডে নেই।প্লিজ চলে যান আপনি।’
ইফতি উঠে দাড়ালো।আলিফার কাছে এসে আলিফার একহাত ধরে টেনে নিজের কাছে আনলো ও।তারপর আলিফার একটা হাত আলিফার পিঠের পিছনে মুচড়ে ধরলো।ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো আলিফা।ইফতি দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
-‘ কি সমস্যা তোমার?ফোন ধরছো না কেন আমার? ভালোবাসি আমি তোমায়।বোঝনা কেন এটুকু?আমি জানি তুমি বোঝো তবুও কেন এমন করছো?তুমিও আমায় ভালোবাসো আমি জানি।তাও কেন এতো দূর দূর করছো আলিফা?আমার মাথা খারাপ করো না আলিফা পরিমান খারাপ হবে।আজ এইটুকুই বললাম।পরবর্তীতে আবার এমন করলে এর থেকে বেশি করবো আমি।তাই সাবধান।’
ছেড়ে দিলো ইফতি আলিফাকে তারপর চলে যাওয়ার জন্যে অগ্রসর হলো।এদিকে ইফতির মুখে ভালোবাসি শুনে সারাশরীর কাঁপছে আলিফার।আচমকা আবারও ইফতি ওর সামনে আসে। আঙুল উঁচিয়ে শাষানোর স্বরে বলে,
-‘ নেক্সট টাইম যেন আমার ফোন প্রথমবারেই রিসিভ হয় আলিফা।আর তৈরি হয়ে থেকো আমার বউ হবার জন্যে।’
ইফতি এগিয়ে গিয়ে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো আলিফার কপালে।সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো আলিফার।আবেশে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।সময় নিয়ে চোখ খুলতেই আশেপাশে কোথায় দেখতে পেলো না ইফতিকে।একটু আগে কি বলে গেলো লোকটা?তৈরি থাকতে তার বউ হওয়ার জন্যে?কি করবে লোকটা?কি করতে চাইছে?লোকটার বউ হবে তো ফিহা?তাহলে ওকে তৈরি হওয়ার কথা বলল কেন? উফ,মাথাটা আর চলছে না আলিফার।ধপাস করে বিছানায় সুয়ে পরল ও।
——————
এলোমেলোভাবে রাস্তায় হাটছে আরাবী।জীবনের মোড় যেন একনিমিষেই বদলে গেলো ওর।হঠাৎই একটা দমকা হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিয়ে গেলো ওকে।জীবনেও যেটা কখনও ভাবতেও পারিনি আরাবী আজ ওর সাথে সেটাই হলো।যাকে ছোটো থেকে নিজের পরিবার বলে জেনেছে তারা নাকি ওর পরিবার নাহ।যাদের ছোটো থেকে আম্মু,আম্মু ডেকেছে তারা ওর বাবা মা নাহ।যেই বাবার বুকে মাথা রাখলে জগতের শান্তি পেয়ে যেতো আরাবী।আজ থেকে আর সেই মানুষটার মুখ দেখতে পারবে না ও।যাকে ভাই বলে জেনে এসেছে।যেই ভাই তার মাথায় হাত রাখলে ভরসা পায় আরাবী আজ থেকে আর তাকে ভাই বলে ডাকতে পারবে না।মায়ের মমতা ছোটো থেকে যেটুই পেয়েছে ও আজ থেকে তার কিছুই পাবে না।সব সব কিছু হারিয়ে ফেললো আক আরাবী।কিছুই রইলো না ওর।এতিম ও আজ থেকে।নাহ নাহ আজ থেকে না এতিম তো ছোটো থেকেই।সে তো বাবা বলে এতোদিন জেনে এসেছে যেই লোকটাকে সেই লোকটা ওকে আশ্রয় দিয়েছে।ভালো জীবন দিয়েছে।নাহলে যে জীবটা ওর কেমন হতো মাথায় আসতেই শরীর কেঁপে উঠছে ওর।সে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে ওই মানুষটার উপর।আরাবী দিশেহারা পথিকের মতো গন্তব্যহীন হাটছে।চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্টি।হঠাৎ জায়ানের কথা মনে পরলো আরাবীর।লোকটা কি ওকে অবহেলা করবে?যদি জানতে পারে ও এতিম।ওর কোন বাবা মায়ের পরিচয় নেই।আরাবী নিজস্ব কোন পরিচয় নেই।কি করবে আরাবী যদি জায়ান ওর মতো এতিম মেয়েকে মেনে না নেয়? ভাবতেই হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসছে আরাবীর।হঠাৎ মানুষের চিৎকার চেঁচাচেচির ওর কানে ভেসে আসতেই চোখের জল মুছে আশেপাশে তাকায় আরাবী।বোঝল ও রাস্তার মাঝখানে এসে পরেছে।সেইজন্যই মানুষ চিল্লাচ্ছে।ভয়ে রূহ কেঁপে উঠলো আরাবীর।যতো যাই হোক ও মরতে চায় না।জায়ানের সাথে বেঁচে থাকতে চায় ও।এখনও যে অনেক কিছু বাকি।কিন্তু ভাগ্য বোধহয় তা চায় না।তাই তো আরাবী রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার আগেই একটা দ্রুতগামী গাড়ি এসে সজোড়ে ধাক্কা মারলো আরাবীকে।আরাবীর ছোট্টো শরীরটা ছিটকে পরলো রাস্তার কিনারায়।আরাবীর র’ক্তে ভেসে গেলো রাস্তা।আরাবী নিভুনিভু চোখে তাকিয়ে।ওর চোখের সামনে ধোয়াশা দেখতে পাচ্ছে ও।আর সেই ধোয়াশার মাঝে ভেসে উঠলো জায়ানের ছবি।আরাবী বাঁচতে চায়। কিন্তু তা বোধহয় বিধাতা চান নাহ।তাইতো এইভাবে সবটা ঘটে গেলো।আরাবী জোড়েজোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।বেঁচে যাওয়ার জন্যে আশার আলো খুঁজে চলেছে।কিন্তু তা আর হলো না।আস্তে আস্তে ওর চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো।গভীর শ্বাস নিয়ে আরাবী শেষবার বলে উঠলো,
-‘ আ..আমি আপনার সাথে বাঁচতে চাই জায়ান।’
#হৃদয়াসিক্ত_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩০
হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে এসে পৌছালো জায়ান।বিধস্ত অবস্থা ওর।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে ক্রমাগত।দৌড়ে সোজা করিডোরে বসা ফাহিমের কাছে গিয়ে থামলো।ফাহিম জায়ানকে দেখেই উঠে দাড়ালো।জায়ান অস্থির গলায় বলে,
-‘ আরাবী?আরাবী কোথায়?’
ফাহিম যথাসম্ভব নিজেকে সামলে রেখেছে।ও ভেঙে পরলে কিভাবে হবে?বাকিদের সামলাবে কে তাহলে?ফাহিম বলল,
-‘ আরাবীকে অটিতে নেওয়া হয়েছে।’
জায়ান ধরা গলায় প্রশ্ন করে,
-‘ ওর অবস্থা এমন কিভাবে হলো ফাহিম?ও তো তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলো।আমি নিজে ওকে বাড়িতে দিয়ে এসেছিলাম।বলেছিলাম বিকেলে আমি নিতে আসবো।তাহলে ওর এক্সিডে’ন্ট কিভাবে হলো?’
-‘ আমি জানি না ভাইয়া। শুধু জানি কোচিং থেকে ফেরার সময় দেখি রাস্তায় অনেক ভীড়। আমি বাইক থেকে নেমে ভীড় ঠেলে গিয়ে দেখি আমার বোনটা রক্তা’ক্ত অবস্থায় রাস্তায় পরে আছে।দ্রুত ওকে নিয়ে হাসপাতালে এস পৌছাই।এরপরেই আপনাকে ফোন দিয়ে জানাই।’
ধপ করে চেয়ারে বসে পরলো জায়ান।দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো।কিভাবে কি হয়ে গেলো।সকালেই তো ও হাসিখুশি মেজাজে দেখলো মেয়েটাকে।আর এখন কিনা?ভাবতে পারছে না জায়ান।কিছুতেই পারছে না।মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজটা টে’নে বের করে নিয়ে আসছে।যন্ত্র’নায় বুকটা হাশফাশ করছে।জায়ানের চোখ থেকে একফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।কেউ দেখার আগেই সেটা সবার অগোচরেই মুছে ফেললো।ফাহিম জায়ানের কাধে হাত রাখল।ওর নিজেরও কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু সেটা দেখাতে পারছে না।ফাহিম বলে,
-‘ চিন্তা করবেন না ভাইয়া।আমাদের আরাবীর কিছুই হবে নাহ।’
জায়ান থম মেরে বসে রইলো।প্রায় আধাঘন্টা পরেই পরিবারের সবাই এসে হাজির হলো।না চাইতেও আসতে হলো লিপি বেগম আর ফিহাকে।কারন তাদের তো সাখাওয়াত পরিবারের কাছে ভালো সাজতে হবে।জিহাদ সাহেব মেয়ের অবস্থা শুনে প্রায় অচেতন অবস্থায় পরে আছেন।তাকে সামলাচ্ছেন মিহান সাহেব।পরিবারের সবাই কাঁদছে।এর একটু পরেই আলিফা আসলো।ইফতি তাকিয়ে আলিফার দিকে।মেয়েটা কেঁদেকেটে একাকার অবস্থা করে ফেলেছে।ফাহিম চুপচাপ এককোনায় দাঁড়িয়ে।নূর এতোদিনের অভিমান সব এক জায়গায় ঠেলেঠুলে সরিয়ে এগিয়ে গেলো ফাহিমের কাছে।হাত রাখলো ফাহিমের কাঁধে।ফাহিম তাকালো পিছনে ঘুরে।নূর দেখলো ফাহিমের চোখজোড়া ভনায়ক লাল হয়ে আছে। কান্না আটকে রাখার জন্যেই এমনটা হয়েছে।নূর মোলায়েম স্বরে বলে,
-‘ নিজেকে সামলান এতো সহজে ভেঙে পরবেন না।আংকেলের অবস্থা একবার দেখুন।আপনাকেই তো তাকে সামলাতে হবে তাই নাহ?ইনশাআল্লাহ ভাবির কিছু হবে না।’
ফাহিম তাকিয়েই রইলো নির্নিমেষ।কেন যেন নূরের কথায় ফাহিম ভরসা পেলো অনেকটা।মনের মাঝে সাহসের সঞ্চায় হলো।
এদিকে সাথি বেগম কান্নার মাঝেই বার বার লিপি বেগমের দিকে তাকাচ্ছেন।তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন এই লিপি বেগম আর ফিহার মাঝে কিছু একটা গন্ডগোল আছে।নাহলে এইভাবে নিজের মেয়ে আর বোনের এক্সি’ডেন্টের কথা শুনলে কেউ এতোটা শান্তভাবে থাকতে পারতো নাহ।এইযে তারা কান্না করছে।এইগুলা সব লোক দেখানো।তা বেশ বুঝতে পারছেন তিনি।কারন তিনিও যে মা।মায়েরা সব বোঝে।
তিনঘন্টা পর অটির দরজা খুলে বের হয়ে আসলো ডাক্তার।এই তিন ঘন্টা পর জায়ান নড়লো।সোজা গিয়ে দাড়ালো ডাক্তাদের কাছে।তার কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলো,
-‘ ডক্টর?ওর অবস্থা কেমন এখন?’
ডাক্তার বলেন,
-‘ পেশেন্টের অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল।পেশেন্ট হয়তো কিছু নিয়ে প্রচন্ড মানষিক আঘাত পেয়েছেন। তার উপর এতো বড় একটা এক্সিডে’ন্ট।মাথায় আঘাত পেয়েছে গুরুতরভাবে।ডান হাতটা ভেঙে গিয়েছে।পা দুটোতেও মারাত্মক আঘাত পেয়েছে।আপাততো শুধু আল্লাহকে স্মরণ করুন।চব্বিশঘন্টা আমরা তাকে অবজারভেশনে রাখবো।চব্বিশঘন্টা পর জ্ঞান না ফিরা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না।’
সব শুনে জায়ান বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।কি হয়ে গেলো এসব?যেখানে ভালোবাসার মানুষটার সামান্য কষ্টও জায়ান সহ্য করতে পারে না।আজ তো মানুষটার গোটা শরীরটা আঘাতে জর্জরিত।ছেলের অবস্থা দেখে এগিয়ে আসলেন নিহান সাহেব।ভরশা দিয়ে বলেন,
-‘ বউমা ঠিক হয়ে যাবে বাবা।’
জায়ান যেন বাবাকে পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারলো না।বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।নিহান সাহেব তার ঘারে আভাস পেলেন কিছু উষ্ণ জলের।তিনি বুঝলেন ছেলে তার নিশব্দে কাঁদছে।তিনি ছেলের পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেন।বলেন,
-‘ ভেঙে পরিস না বাবা।তুই এমন করলে কি হবে?বউমার খেয়াল তো তোরই রাখতে হবে।’
-‘ ওকে তাড়াতাড়ি ঠিক হতে বলো বাবা।ওকে এই অবস্থায় আমি দেখতে পারছি না।সহ্য হচ্ছে না আমার।’
-‘ ধৈর্য ধর বাবা।সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এদিকে মেয়ের শরীরের এই অবস্থা জেনে উঠে দাড়ালেন জিহাদ সাহেব।তিনি আজ আর তার হিতাহিতজ্ঞানে নেই।সোজা হেটে গেলেন লিপি বেগম আর ফিহার কাছে।বিনাবাক্যে সজোড়ে চ’র মেরে দিলেন লিপি বেগমের গালে।এরপর ফিহাকে।হঠাৎ জিহাদ সাহেব এমন করায় চমকে উঠলো সবাই।ফাহিম দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলো।কাঁপতে থাকা জিহাদ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে সামলে নিলো।এদিকে লিপি বেগম অবাক হয়ে বলেন,
-‘ তুমি আমায় মারলে?’
এই কথায় যেন আরও রেগে গেলেন জিদাদ সাহেব।দাঁতেদাঁত চিপে বলেন,
-‘ হ্যা মারলাম।কিন্তু মন ভড়লো না আরো মারতে ইচ্ছে করছে।’
তারপর ফিহার দিকে তাকিয়ে বলে,
-‘ আর তুই?আমার ঘৃনা হচ্ছে নিজের প্রতি এটা ভেবে যে আমি তোর জন্মদাতা।জন্মের সময় তোকে মে’রে ফেললেই ভালো ছিলো।তোর মতো কুলঙ্কার সন্তান যেন আল্লাহ্ কারো ঘরে না দেন।’
-‘ বাবা!’
-‘ চুপ বাবা ডাকবি না তুই আমায়।আমি তোর বাবা নই।আজ থেকে আমার দুটো সন্তান।তুই আমার জন্য মৃ’ত।’
ফাহিম এতোক্ষনে মুখ খুলল,
-‘ কি হয়েছে বাবা?কেন এমন করছো তুমি?’
ফাহিমের থেকে সরে আসলেন জিহাদ সাহেব।বলেন,
-‘কেন এমন করছি?জিজ্ঞেস কর তোর মায়ের কাছে কেন এমন করছি।’
ফাহিম তাকালো ওর মায়ের দিকে।
-‘ মা!’
লিপি বেগম গালে হাত দিয়ে কাঁদছেন।জিহাদ সাহেব রাগি গলায় বলেন,
-‘ ওদের জন্যে।শুধুমাত্র ওদের জন্যে আমার মেয়েটার এই অবস্থা হয়েছে আজ।কেন আমি আমার মেয়েটাকে আটকালাম নাহ।ওকে বুকের মাঝে আগলে নিলাম না।আমার মেয়েটা আজ মৃ’ত্যুর সাথে লড়ছে শুধুমাত্র ওদের জন্যে।ফাহিম ওদের বল আমার চোখের সামনে থেকে সরে যেতে।সহ্য হচ্ছে না ওদের আর আমার।’
জায়ান এতোক্ষন চুপ থাকলেও এইবার আর পারলো না।আরাবীর এই অবস্থা কেন হয়েছে তা ওকে জানতেই হবে।আর সেই কারনের পিছনে যে এই মা মেয়ের হাত আছে বেশ বুঝতে পারছে জায়ান।ওদের অনেক আগে থেকেই সন্দেহ করতো জায়ান।কিন্তু পাকাপোক্ত কোন কিছু চোখের সামনে না পরায় কিছু বলতে পারতো না।তবে আজ আর জায়ান পিছপা হবে না।ওর কাঠগোলাপের এমন অবস্থার যেই করেছে বা যার কারনেই হয়েছে তাদের কাউকেই ছারবে না ও।সে যেই হোক না কেন।কাউকে রেহাই দিবে না।ঠিক যতোটা কষ্ট ওর কাঠগোলাপ পেয়েছে তার থেকে চারগুন বেশি ভুগবে তারা।জায়ান এগিয়ে গেলো জিহাদ সাহেবের কাছে।তারপর গম্ভীর গলায় বলে,
-‘ বাবা আজ আরাবীর জন্যে হলেও আমায় সবটা সত্যি সত্যি বলুন বাবা।আমি সব জানতে চাই।কি কারনে আজ আরাবীর এই অবস্থা হয়েছে।আমি সব জানতে চাই।’
জিহাদ সাহেব জায়ানের প্রশ্ন শুনে একটুও ঘাবড়ালেন না।অনেক হয়েছে আর লুকাবে না কারো কাছে কিছু।সব সত্যি বলে দিবে।হোক সে আরাবীর জন্মদাতা না।তাই বলে কি সে আরাবী তার মেয়ে নাহ?আরাবী তার মেয়ে।কিন্তু আজ এই অ’মানুষ দুটোকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে হলেও সবাইকে এই সত্যি বলতে হবে আজ তাকে।জিহাদ সাহেব বড় করে শ্বাস নিলেন।তারপর কাঁপা গলায় বলে উঠেন,
-‘ আরাবী আমার আসল মেয়ে নাহ।দত্তক নিয়েছি আমি ওকে।ও আমার পালক মেয়ে।’
#চলবে___________