হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব -১৩

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৩

ইনহাজ ওহি ছাদে চলে আসলো।ছাদেই এনগেজমেন্ট হবে।আহিয়ার বাবার একমাত্র মেয়ে বলেই এতো আয়োজন।ওহির মনটা খারাপ হলো।আর তার বাবা।নিজের বাবার কথা মনে করতেই ঘৃনা হলো তার।তার জন্য একটা মানুষ সুইসাইড করেছিলো।আর একজন বেঁচেও মরার মতো বেঁচে আছে।

আহিয়া কমলা রঙের একটা লেহেঙ্গা পরেছে।পাশেই মাহির কমলা রঙের পাঞ্জাবি পরে বসে আছে।দেখতে দুজনকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।ওহিকে দেখে ওরা দাঁড়িয়ে যায়।ওহির চোখে পানি।ওরা দুজন অবাক হয়ে ওহির দিকে তাকিয়ে থাকে।ওহি দৌড়ে এসে দুজনকে জড়িয়ে ধরে।মাহির অস্থির হয়ে বলে,,

-“কি হয়েছে ওহি তোর কাঁদছিস কেনো?কেউ কিছু বলেছে তোকে।”

-“না আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে তোদের দুজনে জড়িয়ে ধরে।”

ওহি কথাটা বলেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।আশেপাশের সবাই হাসছে ওহির বাচ্চামো দেখে।ওহি আরো জোরে জোরে কাঁদতে থাকে।আহিয়া বলে,,

-“দোস্ত ইনহাজ ভাইয়া একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে দেখ”

ওহি কান্না থামিয়ে আশেপাশে ইনহাজকে খুঁজতে থাকে।ওহি না পেয়ে ইনহাজকে খুজতে চলে যায়।আহিয়া মাহির দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।ওহি ইনহাজকে খুজতে খুজতে এসে দেখে ও সত্যি একটা মেয়ের সাথে হেসে কথা বলছে।ভীষণ রাগ হয় ওহির।ও ইনহাজের কাছে এসে বলে,,

-“এই মেয়ে এই আশেপাশে কি আর ছেলে ছিলো না যে আমার বরের সাথে হেসে কথা বলতে হচ্ছে।সমস্যা কি হ্যা আপনার।বেহায়া মেয়ে আমার বরের দিকে তাকালে চোখ গেলে দেবো।সয়তান অসভ্য।”

ওহি মেয়েটাকে উল্টোপাল্টা বলেই যাচ্ছে।ইনহাজ না পেরে ওহিকে থাপ্পড় মেরে বসে।ওহি টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়।চোখে পানি টলমল করছে।ইনহাজ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।ওহি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে দাড়ায়।কান্না চেপে বলে,,,

-“আপনি আমায় মারলেন মিস্টার খান”

-“হ্যা মেরেছি।বেশ করেছি মেরে,বেহায়া ও না তুমি না হলে বেহায়ার মতো আমার পেছনে পরে থাকতে না।”

ওহি ভাঙা গলায় বলে,,
-“নিজের স্বামীর পেছনে পরে থাকা বেহায়া পানা!ঠিক আছে মিস্টার খান আমি আপনায় আর জ্বালাবো না আপনি মুক্ত”

ওহি দৌড়ে চলে যায়।ইনহাজ ওহির যাওয়ার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-“এভাবে না বললেও পারতে ইনহাজ।মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে।আর কেউই তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না”

-“আপনি কিছু মনে করবেন না আপু ও একটু বাচ্চা স্বভাবের।ওকে এভাবে না বললে আপনাকে অনেক অপমান করতো তাই থাপ্পড়টা মেরেছি।সমস্যা একটু পর এমনিতেই অভিমান ভেঙে নিজেই চলে আসবে”

ইনহাজ কথাটা বললেও সে টেনশনে আছে।সে যার সাথে কথা বলছে সে হলো তার চাচাতো ভাইয়ের ওয়াইফ।কি কারণে সেও এখানে দাওয়াতে এসেছে।তাই কথা বলছিল।কিন্তু ওহি যে এইগুলো বলবে ভাবতে পারেনি।রাগের মাথায় মেরে বসেছে।

ওহি আহিয়ার রুমে লাইট অফ করে বসে আছে হাঁটুতে মুখ গুঁজে।এখন এইখানে কেউ আসবে না সবাই উপরে নাচ গানে ব্যস্ত।ওহি হঠাৎ বুঝতে পারে সে হাওয়ায় ভাসছে।ভয় পেয়ে যায়।তাকে কেউ কোলে নিয়ে বেডের দিকে এগোচ্ছে।ওহি নামার জন্য ছটফট করছে।লোকটা ওহিকে বেডে শুইয়ে দিয়ে ওর মুখের কাছে নিজের মুখ নেয়।লোকটার গরম নিশ্বাস ওহির মুখে আছড়ে পরছে।

ওহি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।লোকটা হালকা হাসে।সে বলে,,

-“তোমার শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ বের হচ্ছে।যা আমায় প্রতি নিয়ত মাতাল করে তুলছে কি করবো ওহিরানী”

লেকটার কথায় ওহি ঘোরে চলে যায়।নেশালো কন্ঠে বলা কথাগুলো এখনো কানে বাজছে ওহির।ওহি ঘোরে মধ্যে থেকে বলে,
-“ককককে আপনি!”

লোকটা কথা বলে না।ওহির গলায় মুখ গুঁজে দেয়।ওহি কেঁপে উঠে।ওহির এতো কাছে কখনো কোনো ছেলে আসেনি।ইনহাজ এসেছে তাও কোমড় জড়িয়ে ধরা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলো।কিন্তু এই লোকটা তার অতিরিক্ত কাছে চলে এসেছে।লোকটাকে ওহির ভীষণ চেনা মনে হচ্ছে।কে হতে পারে?ইনহাজ!তা তো কখনোই সম্ভব নয়।

ওহি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু সে ব্যর্থ।লোকটা গলা ছেড়ে দিয়েছে।ওহি চিল্লাতে চায় তখনই লোকটা তার ঠোঁট দুটো মিলিয়ে দেয় নিজের ঠোঁটের সাথে।ওহি থমকে যায়।ইনহাজের আগে কেউ তাকে স্পর্শ করছে ভাবতেই গা ঘিনঘিন করে উঠে।নিজেকে ছাড়াতে চাই ওহি।কিন্তু লোকটার শক্তির সাথে পেরে উঠে না।

কিছুক্ষণ পর লেকটা নিজেই চলে যায় উঠে।ওহি এখনো স্থির হয়ে শুয়ে আছে।তার সাথে কি হয়েছে ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।নিজের স্বামীর আগেই তাকে অন্য কোনো পর পুরুষ স্পর্শ করেছে ভাবতেই ওহির নিজের প্রতি ঘৃনা লাগে।

ইনহাজ ওহিকে খুজতে খুজতে ওহির রুমে আসে।ওহিকে এলোমেলো অবস্থায় দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসে।ওকে দেখে ওহি হামলে পরে ওর বুকে।ইনহাজ হাসে।অদ্ভুত সেই হাসি!কিছুক্ষন পরে সে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।তারপর পাগলের মতো বলে,,

-“ছুবেন না আমায়।আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম।অন্য পুরুষ আমায় ছুঁয়েছে।আমি আমি কি করবো এখন”

-“কে তোমায় ছুঁয়েছে ওহি।কি বলছো তুমি”

ওহি নিজের গলা আর ঠোঁট দেখিয়ে বলে,,
-“এই যে দেখুন এইখানে আর এইখানে ওই লোকটা আমায় ছুঁয়েছে।আমি কি করবো বলুন না।আমি নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি।”

ইনহাজ ওহিকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলে,,
-“হুশশ কে বলেছে তুমি অপবিত্র!তুমি পবিত্র।তোমাকে কেউ ছুঁয়ে দেয়নি বিশ্বাস করো।”

ওহি ইনহাজের বুকেই ঢলে পরে।ওহিকে চুপ হয়ে যেতে দেখে ইনহাজ বাঁকা হাসে।ওহির শাড়ি ঠিক করে দিয়ে ওকে কোলে তুলে বেরিয়ে পরে আহিয়াদের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

মাহির আর আহিয়া অনেকক্ষণ ধরে ওহিকে না দেখায় দুজন ফোন করে ওহিকে।ওহির ফোন রিসিভ করে ইনহাজ বলে,,

-“আম সো সরি মাহির এন্ড আহিয়া। ওহি অসুস্থ হয়ে পরায় ওকে নিয়ে বাড়ি চলে এসেছি।তোমরা মন খারাপ করো না।আর টেনশন করো না ওহি ঠিক আছে”

ইনহাজ ফোন রেখে দেয়।ইনহাজ ওহির কান্নামাখা মুখের দিকে তাকায় ভীষণ খুশি লাগছে তার।সে ওহিকে কোলে তুলে রুমের দিকে পা বাড়ায়।রুমে এনে ওহির গলার কানের গহনা খুলে ওকে শুইয়ে দেয়।নিজে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ইনহাজে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে।উফ ওহিকে দেখলে তার কি যেনো হচ্ছে।শুধু নেশা ধরে যায়।

এ নেশা সিগারেট মদের উপরে।এই নেশায় সে বন্ধি হতে চায়।আর এটা সম্ভব ও না।ওহির দিকে এক পলক তাকিয়ে বেলকনিতে চলে আসে ইনহাজ।সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে।

২৩.
ওহির সেন্স ফিরতেই সে নিজেকে অন্ধকার রুমে আবিষ্কার করে।ভয় পেয়ে যায় ওহি।ভীষণ ভয় পায়।ও বিছানার ছাদর খামচে ধরে।ওহি চেঁচাতে থাকে ইনহাজ ইনহাজ বলে।ইনহাজ নেলকনিতেই ছিলো ওহির চেচামেচি শুনে ওহির কাছে চলে আসে।ওহি দৌড়ে ইনহাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

ওহির মনে এখনো সেই ঘটনা দাগ কেটে রয়েছে।ও ভুলতে পারছে না।ও কাঁপছে ভীষণভাবে।ইনহাজ না চাইতেও ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে।ওহি বলে,,

-“আআআমায় ওওওয়য়য়াশরুমে নননিয়ে চচচলুন।”

ইনহাজ কথা না বাড়িয়ে ওহিকে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে আসে।ওহি ওয়াশরুমে এসেই ঝর্না ছেড়ে দেয়।সাবান দিয়ে নিজের গলা ঠোঁট ডলতে থাকে।ইনহাজ ওহির দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।সাদা শাড়ি ভিজে শরীরের সাথে মিশে আছে।শরীরের প্রতিটা ভাজই দেখা যাচ্ছে প্রায়।

ইনহাজ চোখ বুঝে নেয়।সে ওহির দিকে তাকিয়ে দেখে ওহি ডলতে ডলতে গলা আর ঠোঁট লাল বানিয়ে ফেলেছে।ঝর্না অফ করে ওহিকে টেনে নিজের দিকে আনে।ওহি কোনো কথা শুনতে চায় না।সে পাগলের মতো করতে থাকে।শেষে উপায় না পেয়ে ইনহাজ ওহির কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে এনে কিস করতে থাকে ঠোঁটে।ওহি শান্ত হয়ে যায়।

ওহি শান্ত হতেই ইনহাজ ওকে ছেড়ে হনহন করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়।কিছুক্ষণ পর একটা ড্রেস দিয়ে বলে চেঞ্জ করে আসতে।ওহি চেঞ্জ করে বাইরে আসে।দেখে ইনহাজ অলরেডি চেঞ্জ করে বসে আছে।

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here