হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব -১৪

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৪

২৪.
ওহি ঘুম ভাঙতেই সে নিজেকে ইনহাজের রুমে দেখতে পায়।ওহি উঠে বসে রুমে কেউ নেই।কালকে রাতের সব কথা মনে করে ওহি।ইনহাজের স্পর্শ আর কালকে রাতের লোকটার স্পর্শ অনেকটা মিল।কালকে রাতে ওয়াশরুমে ইনহাজ যখন তাকে স্পর্শ করেছিলো তখন তার দুটো স্পর্শই এক লেগেছে।

ওহি মনে মনে আজকে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।আর না অনেক সয্য করেছে সে।ভালোবাসে বলে কি তার আত্মসম্মান নেই।এতোদিন অনেক সয্য করেছে আর না।দূরে থেকেও ভালোবাসা যায়।সে নাহয় দূরে থেকেই ভালোবাসলো ইনহাজকে।

ইনহাজ ওহির জন্য খাবার নিয়ে রুমে ঢোকে।ওহির কাছে খাবার এনে বলে,,

-“খেয়ে নাও”

ওহি নিজের মতো বসে থাকে।ইনহাজ রেগে যায়।ওহিকে টান মেরে দাড় করায়।ওহি কোনো মতে নিজেকে সামলায়।ওহি নিজেও রেগে যায়।নিজেকে ছাড়িয়ে ইনহাজকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে।ইনহাজ কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।ইনহাজ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওহির দিকে।
ওহিকে আজ ভিন্ন রকম লাগছে।ওহি ইনহাজের কলার চেপে ধরে বলে,,

-“আপনার জন্য আমার লাইফটা শেষ হয়েছে।আমার সাথে আজ যা কিছু হচ্ছে সব আপনার জন্য।কালকে এতো নাটক করার প্রয়োজন কেনো পরলো।আমি তো আপনার বউ চাইলেই নিজের অধিকার খাটাতে পারতেন তাহলে কেনো আমায় ভয় পাওয়ালেন আতঙ্কে ফেললেন।জানেন আমি নিজেকে কতটা ঘৃনা করতে শুরু করেছিলাম।আপনি স্পর্শ করার আগে অন্যকেউ আমায় স্পর্শ করেছে ভাবতেই মরে যেতে ইচ্ছা করতো।”

ওহি থেমে আবার বলে,,
-“আপনি আমার সাথে ওগুলো করলেন আর পরে এমন ভাব ধরলেন আপনি ওখানে ছিলেন না ছিহ মিস্টার খান।জানেন কালকে থেকে এখন পর্যন্ত আমার মনে হচ্ছে মরে কেনো গেলাম না আমি।আপনার মতো লোককে ভালোবেসেছি ভাবতেই ঘৃনা লাগছে আমার”

ইনহাজ রেগে যায়।ওহির চুলের মুঠো শক্ত করে ধরে বলে,,

-“বেশ করেছি যা করেছি।তোকে একশোবার আমি কষ্ট দেবো।তোকে কষ্ট দিলে আমি মানসিক শান্তি পাই।তোকে চাইলেই আমি প্রকাশ্যে স্পর্শ করতে পারতাম কিন্তু তখন তো এই মজাটা পেতাম না।”

ওহি ইনহাজের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।চিল্লিয়ে বলে,,,

-“তুই মানুষ না জানোয়ারের সাথে তোকে তুলনা করা যায় না।অনেক হইছে আর না।আমি আজই এখান থেকে চলে যাবো”

ইনহাজ ওহির যাওয়ার কথা শুনে আরো রেগে যায়।সে ভাবতেই পারছে না ওহি চলে যাবে তার কাছ থেকে।ওহির গাল চেপে ধরে বলে,,,

-“তুই আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করিস না।একেবারে মেরে ফেলবো”

ওহি ভীষণ রেগে যায়।ও কালকের পর থেকে এখন কোনোমতেই ইনহাজের সাথে থাকবে না।তাই সে যা হয়ে যাক না কেনো!ওহি ইনহাজের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।ইনহাজ ওহিকে ছেড়ে নিজের হাত ধরে বিছানায় বসে পরে।ওহি ইনহাজের দিকে ঝুঁকে বলে,,

-“আমায় অসহায় মনে করেছেন আপনি!এতোদিন ভাবতাম না আপনি একদিন না একদিন ভালো হবেন কিন্তু জীবনেও ভালো হবেন না আপনি।অমানুষই থেকে যাবেন।ভালোবাসি বলে এতোদিন সব সয্য করেছি কিন্তু এখন আর না।আমি আজকেই এখান থেকে যাবো তবে যদি আপনায় আমাকে মারতেও হয় তাতেও হাত কাঁপবে না।আপনার মতো জানোয়ারের বেঁচে থাকা উচিত না।”

ওহি দরজা খুলে বাইরে যেতে নেয়।কিন্তু তার আগেই ইনহাজ ওকে থামিয়ে দেয়।দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে,,,

-“অনেক তেজ তোর।এই তেজ আমি দুই মিনিটে ভেঙে দিতে পারি।কিন্তু তোর মতো মেয়েকে স্পর্শ করতেও ঘৃণা লাগে”

-“তো স্পর্শ করছেন কেনো?ছেড়ে দিন আমায় চলে যাচ্ছি।আমার তেজ আপনি আজীবনেও ভাঙতে পারবেন না।একমাত্র একটা জিনিসই আমায় ভাঙতে পারবে তা হলো ভালোবাসা।আর আপনি আমায় ভালোবাসেন না তা আমি খুব ভালো করে জানি”

-“তাই আমি এখনই তোর তেজ ভেঙে দিচ্ছি।”

ওহিকে কোলে তুলে নেয়।ওহি বুঝতে পারে ইনহাজ ওর সাথে কি করতে চাইছে।ওহি ইনহাজের থেকে ছুটতে চায়।বুকে কিল ঘুসি মেরে যাচ্ছে।ইনহাজ ওহিকে শুইয়ে দিয়ে ওর উপর আধশোয়া হয়ে কিস করতে থাকে।ওহি কি করবে ভাবছে তখনই একটা বুদ্ধি মাথায় আসে।ও ইনহাজের পেটে লাথি মারে ইনহাজ ছিটকে দূরে সরে যায়।

ওহি এই সুযোগে দৌড়ে পাশের রুমে এসে দরজা লক করে দেয়।ইনহাজ পেটে হাত দিয়ে বসে আছে।ওহি দরজা ছিট কিনি মেরে বসে আছে।ওহি কাঁদছে।ওর লাইফটা কেনো এমন হলো।ও তো ইনহাজ নামের কাউকে চিনতো ও না।ইনহাজকে ওর গিরগিটির থেকেও অদম মনে হচ্ছে।এই ভালো তো এই অমানুষ পাশান,জানোয়ারের মতো ব্যবহার করছে।

ওহি রুম ঘেটে নিজের ফোনটা পায়।কালকে ভুল করে রেখেছিল এই রুমে।ও ফোন করে আরিশকে কল করে।আরিশ মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।ফোন রিসিভ করে বলে,,

-“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন”

ওপাশ থেকে ফুপিয়ে কাঁদার শব্দে আরিশ উঠে বসে।তারপর ফোনে ওহির নাম দেখে অস্থির হয়ে বলে,,

-“কি হয়েছে ওহি তোর কাঁদছিস কেনো?”

-“ভভভভভাইয়া আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।আমি আর থাকতে পারছি না প্লিজ নিয়ে যাও আমায়।নাহলে মরে যাবো আমি”

-“কি হইছে ওহি তুই এমন কথা বলছিস কেনো?ওই কুত্তার বা** তোকে কিছু করেছে”

-“তুমি আমায় নিয়ে যাও ভাইয়া যত দ্রুত সম্ভব।নাহলে উনি আমায়..”

-“আমি আসছি চিন্তা করিস না”

কল কেটে আরিশ জামা পরে বেরিয়ে পরে ইনহাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।ইনহাজের বাড়ি এসে গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে ভেতরে ঢোকে।ওহিকে ফোন করে নিচে আসতে বলে।ওহি দরজা খুলে নিচে ছুট লাগায়।সিড়ির কাছে আসতেই ইনহাজ ওহিকে ধরে ফেলে।আরিশের দিকে তাকিয়ে ওহির কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।ওহি ছুটার চেষ্টা করছে।

আরিশ ওহির দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।মুখটা শুকিয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো পরনের জামাটার অবস্থা ও ভালো না।নিজের আদরের বোনকে এই অবস্থায় দেখে আরিশের বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে।ওহির মুখ কাছে এনে আরিশের সামনে ওহিকে রুডলি কিস করে ইনহাজ।

আরিশ রাগে চোখ বুজে ফেলে।তারই সামনে তার বোনকে কিস করছে এই ছেলে।ওহি ধাক্কা মারে ইনহাজকে। ইনহাজ কিছুটা দূরে সরে যায়।দৌড়ে আরিশের কাছে চলে আসে।আরিশ রাগে থরথর করে কাঁপছে।ওহি আরিশকে জড়িয়ে ধরে।আরিশ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

ওহির অবস্থা বেশি ভালো না।আরিশ ওহিকে কোলে তুলে নেয়।বাড়ি থেকে বের হতে নিলে ইনহাজ থামিয়ে দিয়ে বলে,,,

-“কোন সাহসে আমার বউকে নিয়ে যাচ্ছেন আপনি”

-“আমার বোন তোমার সাথে থাকতে চায় না।আর আমি ওকে তোমার সাথে থাকতেও দিতে চাই না।অনেক কষ্ট সয্য করেছে ও আর না।আমার বোনের আশেপাশে যেনো ফারদার তোমায় না দেখি”

আরিশ বেরিয়ে যায় ওহিকে নিয়ে।ইনহাজের বুকে চিনচিন ব্যাথা করছে।ওহি চোখ বুঝে ভাইয়ের বুকে লেপ্টে ছিলো।ইনহাজের অদ্ভুত লাগছে।রাগ হচ্ছে ভীষণ ওহির উপর।কেনো তাকে ছেড়ে গেলো।আবার কিছুক্ষণ পর ভাবে তাকে ছেড়ে যাওয়াই উচিত সে যা করছে।ইনহাজ রাগে বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙতে থাকে।

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here