হৃদয়ের আঙ্গিনায় তুমি পর্ব -০২

#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২

[অনেকেই বলছেন ওইফা নামটা অদ্ভুত তাই ওইফা নামটা পরিবর্তন করে ইশরাত ওহি রাখা হয়েছে]

-“কেনো কেনো কেনো আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছি না আজকে কতো বড় একটা কাজ করে ফেললাম আমি সিট!”

ইনহাজ দেওয়ালে ঘুষি মেরে কথাগুলো বলে।সে নিজের প্রতি প্রচন্ড বিরক্ত।কি করে সে গরম কফির মগে ওহির হাতটা চুবিয়ে সে বুঝতেই পারছে না।রাগ উঠলে কিছু মাথায় থাকে না তার কি করছে সে।ইনহাজ নিজের রেস্ট রুম থেকে বের হয়ে ওহির কাছে চলে যায়।ইনহাজ ওহিকে কষ্ট দিতে চায় কিন্তু শারিরীক ভাবে নয় মানসিকভাবে।

ওহি ঘুম থেকে উঠেছে বেশ কিছুক্ষণ।ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে বসে ভাবছিলো তার আর ইনহাজের প্রথম দেখা হওয়ার কথা।তার স্পষ্ট মনে আছে সেই দিনের কথা।

৪.
ওহি ক্লাস রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে তার বান্ধবী আহিয়ার সাথে।তখনই মাঠ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ পায় দু’জন।দু’জনই কৌতুহল নিয়ে মাঠে আসে।আশে পাশে শুনে জানতে পারে ইনহাজ জুহাইন খান আসছে।তারা বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামায় না।
কারণ তারা তো চেনেই না এই ইনহাজ জুহাইন খান আসলে কে! ওহি আর আহিয়া ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। নতুন একদিন মাত্র তিনদিন ক্লাস করেছে।ওরা তেমন কিছুই চেনে না নিজেদের মধ্যে কথা বলার মাঝে তিনটা গাড়ি ঢোকে ভার্সিটিতে।যা দেখে সবাই ইনহাজ ইনহাজ করে চেঁচাতে থাকে।

যেনো মনে হচ্ছিল কোনো সেলিব্রিটি এসেছে।ওহি প্রচন্ড বিরক্ত হয়।সে ভেবেছিলো কিছু হয়তো হয়েছে এখন দেখে কোনো ছেলেকে নিয়ে।ছেলে থেকে শুরু করে মেয়েরা তো আছেই সবাই ইনহাজ ইনহাজ করছে।ওহি মনে মনে আওড়ায়,

-“এই ইনহাজ জুহাইন খানটা আবার কে?”

মাঝের গাড়ি থেকে একজন সুদর্শন পুরুষ নেমে আসে।যাকে দেখতে হিরোদের থেকে কোনো অংশে কম নয়।সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছিলো।চোখে চশমা ছিলো আর পরনে কালো শার্ট আর কালো জিন্স।যা দেখে মেয়েরা ফিদা হয়ে যায়।ওহি আশেপাশের সবার কথা শুনে বুঝতে পারে ইনহাজ একজন পলিটিশিয়ান।আজকে ইনহাজের তাদের প্রিন্সিপালের সাথে মিটিং আছে।তাই সে এখানে।আর সে এই ভার্সিটিতেই মাস্টার্স করছে।পুরো ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশ।

কিছু মেয়ে ইনহাজের সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসে।কিন্তু সে সেগুলো পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।যা দেখে আহিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে ওহিকে বলে,,,,,

-“লোকটা সুন্দর বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি!এভাবে মেয়েগুলোকে পাত্তা না দিয়ে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি।এতো অহংকার ভালো না।”

ওহি এতোসময় ফোন ঘাটছিলো।ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে বলে,,

-“উফ তুই এইসব ফালতু লেইম বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিস কেনো!লোকটার ও ভীষণ ভাব সাথে মেয়েগুলোও বেহায়া।এইসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ক্লাসে চল গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে ”

আহিয়াকে হাত ধরে টেনে ওহি ক্লাসে নিয়ে যায়।ক্লাস শেষ করে বের হয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে বসে দু’জন।ক্যান্টিনে কফি খেয়ে এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কিছু ক্ষন কথা বলে ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার জন্য বের হয়।ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময়ই সে কিছু একটায় বেঁধে ইনহাজের গায়ের উপর পরে।ইনহাজ তখন ফোনে কথা বলছিলো কারো সাথে।হঠাৎ কেউ তার গায়ে পরায় ফোনটা হাত থেকে পরে যায়।

দ্রুত সরে আসে ওহি।কিছুটা লজ্জা আর অস্বস্তিতে সে আহিয়াকে নিয়ে চলে আসে সেখান থেকে।ইনহাজ বোকার মতো চেয়ে থাকে ওহির পানে।রাফিন ছুটে এসে বলে,

-“স্যার আপনার কোথাও লাগেনি তো দাড়ান মেয়েটাকে দেখাচ্ছি মজা”

ইনহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“তার প্রয়োজন নেই এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিলো”

৫.
-“ওহি”

ইনহাজের ডাকে অতীত থেকে ফিরে আসে ওহি।ইনহাজকে দেখে অভিমান,ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেয় সে।ইনহাজ ওহিকে বলে,,

-“দেখো রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।তাই উল্টাপাল্টা করে ফেলেছি।তুমি ভেবো না আমি তোমায় সরি বলতে এসেছি!”

ওহি তাচ্ছিল্য হাসলো।অতঃপর বললো,,,
-“আমি জানি মিস্টার খান আপনি সরি বলার মতো মানুষ নন।আর আমি আপনাকে নিয়ে ভাবি না”

ইনহাজ বাঁকা হাসলো তারপর ওহির দিকে ঝুঁকে বলল,,
-“বেশি ভাবতে যেও না হারিয়ে যাবে আমার মাঝে”

ওহি ভড়কে গেলো।নিজেকে সামলে ইনহাজকে ধাক্কা দিয়ে তার থেকে সরিয়ে বলে,,,
-“জীবনেও আপনার মতো মানুষের মাঝে আমি হারাবো না”

ইনহাজ ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো।ওহি ইনহাজকে এইভাবে হাসতে দেখে বিরক্ত হলো।ইনহাজ ওহিকে বলে,,,

-“নিচে চলো খাবে।সকাল থেকে না খাওয়া,খেয়ে নিবে চলো।না খেয়ে অসুস্থ হলে আমার সাথে লাগবে কি করে”

ওহি পাত্তা দেয় না ইনহাজের কথায়।সে নিজের মতো বসে থাকে।ইনহাজ কিছুক্ষণ ওহির গতিবিধি পর্যবেক্ষন করে। ওহির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়।ওহি নেমে যাওয়ার চেষ্টা করে। ইনহাজ হাতের বাঁধন হালকা করতেই ওহি ভয়ে ইনহাজের গলা জড়িয়ে ধরে।ইনহাজ বাঁকা হাসে ওহির কান্ডে।সে নিচে নিয়ে গিয়ে তাকে টেবিলে বসিয়ে দেয়।খাবার সামনে দিয়ে খেয়ে নিতে বলে।

খাবার দেখে নাক সিটকায় ওহি।টেবিলে সালাদ সুপ,সাথে পাস্তা সাজানো আছে।যা ওহি পছন্দ করে না মোটেও।সে নাক মুখ কুঁচকে বলে,,

-“এই খাবার কোনো মানুষ খায়”

ইনহাজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় ওহির কথায়।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“তো কি এই খাবার গরু ছাগল খায় ইডিয়েট”

ওহি সরু চোখে ইনহাজের দিকে তাকিয়ে বলে,,
-“হ্যা খায় আপনার মতো গরু ছাগল”

ইনহাজ রেগে যায় ওহির কথায়।ইনহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,,
-“গরু ছাগল যখন খায় তাহলে খেতে হবে না যাও।খাওয়ার হলে খাও নাহলে যেতে পারো রুমে”

ওহির খুব ক্ষিধে পেয়েছে।তাই সে কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নেয়।ইনহাজ ওহির আড়ালে বাঁকা হাসে।ওহি খেয়ে উপরে রুমে চলে যায়।ইনহাজ খেয়ে সোফায় বসে পরে,একটা ওয়াইনের বোতল নিয়ে এসে বসে।সে প্রায়ই খায় এগুলো।কষ্টগুলো দূর করতে।

ওহির নতুন জায়গায় ঘুম আসছিলো না তাই সে রুম থেকে বের হয়।বিশাল বাড়ি ইনহাজের এখনো ঘুরে দেখা হয়নি।ওহি ভাবছে,আচ্ছা ইনহাজ কেনো তার পরিবারের সাথে থাকে না।তার বাবাকে কেনো পছন্দ করে না সে।ওয়াফা নিচে নামতেই ইনহাজকে ড্রিংক করতে দেখে।মদের বিশ্রি গন্ধ নাকে এসে লাগে ওহির।নাকমুখ কুচকে তাকায় সে ইনাহজের দিকে সে ইনহাজের দিকে এগিয়ে যায়।

ইনহাজ ওহির দিকে তাকায়।ওহি চমকে ওঠে ইনহাজের চোখ দেখে।অসম্ভব লাল হয়ে আছে।তার ভয় লাগে।সে তবুও ইনহাজের কাছে গিয়ে ওর থেকে কিছুটা দূরে বসে বলে,,

-“আআ..পনি এই বিশ্রি জিনিস খাচ্ছেন কেনো?”

ইনহাজ ওহির দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,
-“এইগুলো আমার কষ্টগুলো দূর করার জন্য খাচ্ছি।”

ওহি অবাক হলো।ইনাহজকে দেখে কেনো দিক থেকেই মনে হয় না সে এমন।নতুন রূপ দেখলো সে ইনহাজের।ওহি বেশি ক্ষন থাকে না ইনহাজের কাছে।তার ভয় লাগছিলো যদি ইনহাজ তার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে।তাই রুমে এসে দরজা লক করে ঘুমিয়ে পরে।

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here