#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩
৪.
রোদে আলো চোখে পরতেই পিটপিট করে তাকালো ওহি।নিজেকে ইনহাজের রুমে আবিষ্কার করলো।উঠে বসে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো।নাহ কোথাও ইনহাজ নেই।স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ওহি।ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো। বিয়ের পর থেকে ওহি ইনহাজের জামাকাপড় পরছে।ওহির বিরক্ত লাগছে।একটা মানুষের কি কান্ডজ্ঞান নেই নাকি।
জোড় করে বিয়ে যখন করে এনেছে তখন তার প্রয়োজনীয় সবকিছু এনে তো দিবে।ওহি ফ্রেশ হয়ে ওড়না পেচিয়ে রুম থেকে বের হয়।ইনহাজ টেবিলে বসে আছে।ওহি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,,
-“মিস্টার খান আপনি এতোটা কিপ্টা তা তো ভাবিনি”
ইনহাজ ওহির কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।ওহির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলে,,
-“মানে কি বলছো তুমি”
ওহি ইনহাজের সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলল,,,
-“আপনি জোর করে বিয়ে করে এনে সেই এক কাপড় পরিয়ে রেখেছেন।কালকে তো আবার নিজের টিশার্ট পরতে দিয়েছেন।”
ইনহাজ ওহির কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“স্টুপিড!কাবার্ড খুলে দেখেছো একবারও হ্যাঁ।”
ওহি বিরক্ত হয়ে বলে,,,
-“তো আপনি বলেননি কেনো আমাকে?আর যখন ড্রেস ছিলো তো টি শার্ট কেনো দিয়েছিলেন পরতে”
ইনহাজ বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,,
-“তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে তখন ড্রেসগুলো আনা হয়েছে ইডিয়ট”
ওহি আমতা আমতা করে বলল,,”ওহ”
ওহি খাবারের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়।আবারও কাস্টার্ড আর সুপ সাথে দুধ।সে নাক মুখ কুঁচকে ইনহাজকে বলে,,,
-“মিস্টার খান আপনি কি আমাকে এই খাবার খাইয়ে মেরে ফেলতে চাইছেন”
ইনহাজ ওহির দিকে তাকালো।বোঝার চেষ্টা করলো কি বলছে ও।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“এইসব হেলদি ফুড এগুলো খেলে মানুষ মারা যায় না। শরীরের জন্য ভালো”
ওহি আমতা আমতা করে বলে,,,
-“ধূর যাই হোক আমি এগুলো খাই না প্লিজ সার্ভেন্টকে বলুন আমাকে পরোটা ভেজে দিতে।”
ইনহাজ বিরক্তি নিয়ে সার্ভেন্টকে ডেকে ওহি যা খাবে তাই করে দিতে বলে।সার্ভেন্ট কিছুক্ষণ পরে ওহির বলা খাবারগুলো নিয়ে আসে।ওহি খুশি হয়ে খেতে থাকে।ইনহাজের খাওয়া শেষ হতেই সে উঠে উপরে চলে যায়।ওহি ও দ্রুত খেয়ে নেয়।এই টিশার্ট পরে থাকতে পারছে না আর।বিরক্ত লাগছে।রুমে এসে দেখলো ইনহাজ নেই। সে কাবার্ড খুললো জামা নিতে।কাবার্ড খুলে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওহি কিছু সময়।
একটু আগে তার মোটেও ইনহাজকে কিপ্টা বলা ঠিক হয়নি।এখানে শাড়ি থেকে শুরু করে ওহির প্রয়োজনীয় প্রায় সবই ছিলো।সে ওখান থেকে একটা কালো রঙের থ্রি পিছ বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো চেঞ্জ করতে।কিছুক্ষণ বাদে বের হতেই সে ইনহাজকে দেখতে পেলো।ইনহাজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পারফিউম লাগাচ্ছে।
ইনহাজ আয়নার ভেতর থেকে এক পলক তাকালো ওহির দিকে।তারপর নিজের কাজে আবার মন দিলো।ওহি ভালোভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো।নাহ সব ঠিক আছে।
ওহি ইনহাজের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল,,
-“আমি বাসায় যেতে চাই”
ইনহাজ চুল ঠিক করছিল।ওহির কথায় থেমে যায়।ওহির দিকে তাকিয়ে বলে,,
-“তুমি নিজের বাড়িতেই আছো।আর কোথায় যাবে?”
ওহির রাগ হয় ইনহাজের আজাইরা কথা শুনে।ওহি রাগি কন্ঠে বলে,,,
-“আমি আমার বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলছি মিস্টার খান”
ইনহাজ আবারও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল।কোনো উত্তর দিলো না।ওহির রাগ আরো বেড়ে গেলো।ওহি ইনহাজের কাছে গিয়ে ওর কলার চেপে ধরে বলে,,
-“সমস্যা কি আপনার আমি কিছু বলেছি আপনায়।জোর করে বিয়ে করেছেন আর এখন বাবার বাসায়ও যেতে দিতে চাইছেন না।আমার প্রশ্নের জবাব দিন”
ইনহাজ ভীষণ রেগে যায়।সে ওহির কাছ থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নেয়।ইনহাজের কলার ধরা মোটেও পছন্দ না।ইনহাজ ওহির বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে চিল্লিয়ে বলে,,,
-“তোমার বড্ড সাহস।সেদিন বলেছিলাম না কলার ধরা আমার পছন্দ না তারপর ও তুমি তাই করলে এখন তোমার সাথে কি করা যায় বলো তো”
ওহি ভয় পেলো।কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে।বাহু চেপে ধরায় ব্যাথা পাচ্ছে অনেক।চোখে পানি চলে এসেছে।ইনহাজকে ছাড়ানো চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় ওইফা।সে ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে,,
-“প্লিজ ছেড়ে দিন আমার লাগছে খুব”
ইনহাজ আরো জোরে চেপে ধরল।ওহি ‘আহ’ বলে চেঁচিয়ে উঠলো।ইনহাজ ওকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে রুম থেকে চলে গেলো।ওহি বসে কাঁদতে থাকে।আর বিড়বিড় করে বলে,,
-“আপনি মানুষ নন মিস্টার খান একটা অমানুষে পরিনত হয়েছেন”
ইনহাজ বেরিয়ে নিজের রেস্ট রুমে যায়।সেখানে বসে নিজের মাথা ঠান্ডা করে।এরপর বাঁকা হেসে ওহির কাছে চলে আসে।ওহি কাঁদছিলো তখনও বসে বসে।ইনহাজ ওহির কাছে এসে আলতো স্বরে বলল,,,
-“আমি নিয়ে যাবো তোমায় রেডি হও”
ওহি কাঁদা ছেড়ে ইনহাজের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।ওহি দুই হাত দিয়ে বাচ্চাদের মতো করে চোখ মুছে বলল,,
-“সত্যি আপনি আমায় নিয়ে যাবেন।মিস্টার খান?”
ইনহাজ রুম থেকে বের হতে হতে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
-“৫ মিনিটের ভেতরে রেডি হয়ে নিচে নামো”
ইনহাজ রুম থেকে বের হয়ে যায়।ওহি খুশি হয়।সে চুল ঠিক করে পার্স নিয়ে নিচে চলে আসে।ইনহাজ সোফায় বসে গম্ভীর মুখে ফোন টিপছে।ওহি ভেংচি কাটে ইনহাজের আড়ালে।ইনহাজের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,
-“হয়ে গিয়েছে চলুন”
ইনহাজ এক পলক ওহির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।ফোন পকেটে পুরে হেঁটে বাইরে চলে যায়।ওহি বিরক্ত হয় ভীষণ।সেও বাড়ির বাইরে আসে।বাইরে এসে চমকে ওঠে।কালো পোশাক পড়া গার্ডরা সব বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে।ওহি ভড়কে যায় এতো গার্ড দেখে।ভেতর থেকে মোটেও সে টের পায়নি যে এতোগুলো গার্ড বাড়িটা সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত।
ওহির সামনে কালো রঙের একটা গাড়ি এসে থামে।কাঁচ নামিয়ে ইনহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলল,,,
-“উঠে এসো”
ওহি উঠে বসে।ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়।ওহির বুক ধুকবুক করছে।সে জানে তার বাবাই কেমন রাগি মানুষ।কি করবে সে।ইনহাজও সুবিধার নয়।ওহিদের বাড়ি যত কাছে আসছে ওহির ভয় বেড়ে যাচ্ছে।শান্তির নিরের সামনে গাড়ি থামে।ইনহাজ নেমে ওহিকে টেনে নামায় গাড়ি থেকে।
ওহি কাচুমাচু হয়ে ভেতরে ঢোকে।আশরাফ রহমান ড্রয়িংরুমে বসে চা খাচ্ছেন আর পেপার পরছেন।ওহি ভেতরে ঢোকে সাহস করে।ওহি ভয় পাচ্ছে কারণ সে পুরো দুইটা দিন বাড়ি ফেরেনি।কিন্তু তার বাবাই কি তাকে খোঁজেনি নাকি।অবাক বিষ্ময় ভয় মিশ্র অনুভূতি নিয়ে সে বলে,,,
-“বববববববাবাই”
#চলবে~