#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪
আশরাফ সাহেব পেপার রেখে সামনে তাকান।দরজায় ইনহাজ আর ওহিকে দেখে রেগে যায় সে।আশরাফ সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে পরেন।হুংকার ছেড়ে বলে,,,
-“কোন সাহসে তুমি আমার বাড়ি এসেছো এই ছেলেকে নিয়ে”
আশরাফের চিৎকারে ওহির মাও বের হয়ে আসে।ওহি চমকে উঠে।কি বলছে তার বাবাই।সে বাবাইয়ের দিকে এগিয়ে যায়।সে কেনো এই কথা বলছে।কিছুই বুঝতে পারছে না। ওহি অবাক হয়ে বলল,,
-“কিসব বলছো তুমি বাবাই”
ইনহাজ বাঁকা হাসে।সে এটাই চাইছিলো।আশরাফ রহমান বলেন,,,
-“বুঝতে পারছো না তুমি আমার শত্রুকে ভালোবেসে বিয়ে করে এখন নেকা সাজতে আসছো”
ওহি থমকে যায়।কি বললো তার বাবাইয়ের শত্রু ইনহাজ!সে ভালোবেসে বিয়ে করেছে ইনহাজকে এই কথা কে বলেছে তার বাবাইকে।সে পেছনে ঘুরে একবার তাকায় ইনহাজের দিকে।ইনহাজ হাসছে।ওহি বুঝতে পারে সব কিছুই ইনহাজ করেছে।ওহি বাবাইয়ের কাছে গিয়ে করুন কন্ঠে বলে,,
-“বিশ্বাস করো বাবাই আমি উনাকে ভালোবাসি না।আর না উনাকে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছি উনি আমায় জোড় করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে”
ওহির বাবাই মেয়েকে থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠালেও পারলো না।তার একটা মাত্র মেয়ে যে।আর সেই কিনা শেষ পর্যন্ত তার সবচেয়ে অপছন্দের ছেলেকে বিয়ে করলো।আশরাফ সাহেব চিল্লিয়ে বলেন,,,
-“বেরিয়ে যাও।আর কখনো এই বাড়ির ত্রিসীমায় যেনো আমি না দেখি তোমায়”
ওহি তার বাবাইয়ের দিকে তাকায়।সে এই লোকটাকে চেনে না।তার বাবাই কখনো তাকে এভাবে বলতে পারে না।ওহি কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।ওহির মা পেছন থেকে ডাকলেও ওহি শুনেনি।ইনহাজ একবার আশরাফ রহমানের দিকে তাকিয়ে চলে আসে।ওহি গাড়িতে বসে কাঁদছে।ইনহাজ পাশে বসে।
সে কান্নারত মুখে ইনহাজের দিকে তাকায়।ইনহাজ এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।ওহি ভাঙা গলায় বলে,,,
-“কে..নো কর..লেন মি..স্টার খা.ন আ..মার সা..থে এ..মন”
ইনহাজ ফোন টিপতে টিপতে স্বাভাবিক ভাবে বলে,,,
-“আমি কি করেছি তোমার সাথে”
ওহি অবাক হয়।একটা মানুষ এতো কিছু করার পরও কীভাবে সে স্বাভাবিক থাকে।তার কি একটুও দয়ামায়া হয়নি।হঠাৎ করেই ওইফা ইনহাজকে মারতে মারতে বলে,,
-“আপনি পাশান একটুও দয়ামায়া নেই আপনার।ভীষন খারাপ আপনি।আপনাকে আমি জীবনেও ক্ষমা করবো না”
ইনহাজ ভড়কে যায়।ওহি অস্বাভাবিক আচরণ করছে।ইনহাজ ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে।ওহি তার ভেতরেই ইনহাজের বুকে ঢলে পরে।ইনহাজ ওহির মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে।সেই তো সবাইকে বলেছে যে সে আর ওহি একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে।এতেই আশরাফ রহমান খেপে গিয়েছে।
৫.
ওহি চোখ খুলে নিজেকে ইনহাজের রুমে পেলো।তখনকার কথা মনে পরতেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।ইনহাজ সামনের সোফাতেই বসে ফোন টিপছিলো।ওহির কান্না শুনে ওর কাছে এগিয়ে যায়।ওকে টেনে তুলে বলে,,,
-“এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছো কেনো?”
ওহি চোখ মুছে নেয়।তারপর বলে,,
-“কেনো করলেন আমাকে বিয়ে।উত্তর দিতেই হবে আপনাকে”
-“আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই”
-“আপনি বলতে বাধ্য আমার জীবনটা কেনো নষ্ট করলেন মিস্টার খান।আমার বাবার সাথে আপনার কিসের শত্রুতা”
ইনহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,
-“বললাম না তোমায় আমি কাউকে বলতে বাধ্য না”
ওহিও বলে,,
-“ওকে আমি নিজেই সব কিছু বের করবো বলতে হবে না আপনাকে কিছু”
ইনহাজ বেরিয়ে যায় রুম থেকে।ওহি ও ফ্রেশ হয়ে নেয়।রুমটাকে ভালোভাবে দেখে নেয়।বেডের উপরের দেয়ালে ইনহাজের বড় একটা ছবি ঝুলানো।ইনহাজ ফরমাল লুক আছে।ওহি ইনহাজের সাথে এই দুই দিন থেকে যা বুঝতে পারলো তা হলো ইনহাজ খুব পরিষ্কার পরিছন্ন একটা লোক।সব কিছু গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে।ওহি বাড়িটা ঘুরে দেখতে বের হয়।সে আশেপাশে সব কিছু দেখে নেয়।
পালানোর রাস্তা নেই।তার এখানেই থাকতে হবে ইনহাজ নামক পাশান লোকটার সাথে।যার দয়ামায়া বলতে কিছুই নেই।অন্যকে কষ্ট দিয়ে সুখী হয়।ওহির নিজের বাবাইয়ের প্রতিও অভিমান হলো।আচ্ছা তার ভাইয়ু কোথায়?
৬.
রাত দশটা।ওহি বসে বসে বোরিং হচ্ছে।ইনহাজ তার ফোনটাও এখনো দেয়নি।ভার্সিটিতেও যেতে পারছে না।কালকে আবার পরীক্ষা আছে তার।আচ্ছা ইনহাজ কি তাকে যেতে দেবে!সে নিচে নামে।বাইরে বৃষ্টি হবে হয়তো।শীতল হাওয়া বইছে।জানালা সব খোলা বাতাস আসছে।হঠাৎ করে বৃষ্টির সাথে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকে।ওহি ভয় পেয়ে যায়।সে ভীষণ ভয় পায় বাজ পরার শব্দে।
কারেন্ট চলে যায়।ভয় পায় ওহি।ওখানেই বসে পরে।ইনহাজ লক খুলে বাড়িতে ঢোকে।কারেন্ট নেই।সে লাইট জ্বালায় ফোনের।সামনে ওহিকে এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পায়।ওহি চোখ তুলে তাকায়।সামনে ইনহাজকে দেখে দৌড়ে তাকে ঝাপটে ধরে।হুট করে এমন হওয়ায় ইনহাজ বিব্রত হয়।
ইনহাজ ওহিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।ইনহাজ বলে,,
-“কি সমস্যা তোমার এমন জড়িয়ে ধরেছো কেনো?”
ওহি ইনহাজকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,
-“আমি অন্ধকারে ভীষণ ভয় পাই।আপনি প্লিজ আমায় ছাড়বেন না”
ইনহাজ বিরক্ত হয়ে বলল,,,
-“না ছাড়লে রুমে কিভাবে যাবো আমি”
ইনহাজের কথায় ওহি ছেড়ে দেয় ওকে।অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।তারপর নিজেকে নিজেই মনে মনে বকা দেয়।সে কার সাথে অভিমান করছিলো যার তার অভিমান কেনো মরে গেলেও কিছুই যাবে আসবে না।কথাটা ভেবেই তাচ্ছিল্য হাসে ওহি।
ইনহাজ ওহিকে বলে,,
-“আমার পেছনে পেছনে আসো”
ইনহাজ কয়েক কদম চলে গেলেও ওহি নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ইনহাজ বিরক্ত হয়।ইনহাজ ভ্রু কুচকে ওহির কাছে গিয়ে বলে,,,
-“কি হলো তুমি এখানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?”
ওহি কোনো কথা বলে না।ইনহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি এরপর কোনো কিছু হলে আমার কিছু করার নেই”
ইনহাজ হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।ওহি ভয় পায়।সে দৌড়ে ইনহাজের পেছনে চলে যায়।তারপর ইনহাজের পেছন পেছন যায়।ইনহাজ রুমে এসে তার পরনের ভেজা শার্ট খুলে ফেলে।ওহি চোখ বড়বড় করে তাকায়।তারপর চিল্লিয়ে পেছনে ঘুরে যায়।
ওহি দু হাত দিয়ে চোখ ঢেকে বলে,,
-“ছিহ ছিহ আপনার লজ্জা নেই একটা মেয়ের সামনে এমনভাবে এসেছেন।”
ইনহাজ ভ্রু কুচকে তাকায়।ওহি এখনো ওভাবেই আছে।ইনহাজ বাঁকা হেসে ওহির কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,
-“লজ্জা নারীর ভূষণ পুরুষের না।আর আমি বাইরের মেয়ের সামনে শার্ট খুলিনি নিজের বিয়ে করা বউয়ের সামনেই….”
ওহি সামনে ঘুরে ইনহাজের মুখ চেপে ধরে।অতঃপর বলে,,,
-“আপনি ভীষণ অসভ্য মিস্টার খান।ছিহ লজ্জা বলতে কিছুই নেই আপনার।কোনো কিছুই দেখছি মুখে আটকায় না”
ইনহাজ নাক মুখ কুচকে তাকায় ওহির দিকে।ওহি মুখ ছেড়ে দেয় ইনহাজের।ওহি পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়।কারণ ইনহাজ এখনো শার্ট ছাড়া দাঁড়িয়ে আছে।ইনহাজের বেশ মজা লাগছে ওহিকে অস্বস্তি দিয়ে।ইনহাজ কার্বাড থেকে টি শার্ট আর হাফ প্যান্ট বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
চলবে~