#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৮
রাত বারোটা।ইনহাজ বসে আছে একটা রুমে।রুমটা সম্পূর্ণ একটা মেয়ের ছবি দিয়ে ভরা।ইনহাজ একটা ছবি হাতে কেকের সামনে বসে আছে।আজকে যে মেয়েটার জন্মদিন।ইনহাজ কাঁদছে।ওহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ইনহাজের দিকে।ওহি ভাবে,সে কি এই মেয়েটাকে ভালোবাসে!ভালোবাসলেই বা আমাকে কেনো বিয়ে করবে।
ওহির সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।তার ভেতরই সে দেখতে পায় ইনহাজ একটা ছুড়ি নিয়ে কেক কাটছে আর বলছে,,,
-“হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ মাই ডেয়ার লাভলি সিস্টার।হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।”
কেক কাটা শেষ হলে কিছু একটা ভেবে তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।সে বলে,,,
-“ভাই তোকে রক্ষা করতে ব্যার্থ আমার বনু কিন্তু যার জন্য তুই আমার কাছে নেই তাকে আমি ছাড়বো না কিছুতেই ছারবো না”
ওহি আর কিছু দেখে না।সে দরজার আড়াল থেকে সোজা রুমে এসে শুয়ে পরে।ওহি ভাবছে,,
-“তাহলে কি আমার ভাইয়ুর জন্যই মিস্টার খানের বোনের কিছু হয়েছিল।কিন্তু আমার ভাইয়ু তো এমন না।সে তো ইফা নামের একটা মেয়েকে ভালোবাসতো।কিন্তু মেয়েটা নাকি সুইসাইড করেছিলো কোনো কারণে।”
ওহি মাথা চেপে ধরে কিছু ভাবতে পারছে না সে।অন্যদিকে ইনহাজ রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাদে চলে আসে।আজকে ওর পিচ্চি বোনটার জন্মদিন।খুব ভালোবাসে ওকে।কিন্তু ওই নেই আজকে ওর সাথে।আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,
-“জানি না আমি ওহির সাথে অন্যায় করছি কিনা কিন্তু ওহিকে কষ্ট দিলে খারাপ লাগলেও মানসিক শান্তি পাই আমি।”
ইনহাজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।ভালো লাগছে না তার এই বাড়িতে থাকতে।কিছুই ভালো লাগছে না।সেদিন ইনানের কথাগুলো মনে দাগ কেটে দিয়েছে।ইনান কি তবে ঠিক বলেছে।এখন ওহিকে কষ্ট দিতেও ভালো লাগে না।কিন্তু এটা সম্ভব নয় কিছুতেই।ওহি ভাবছে আগের কথা।কিভাবে তার আর ইনহাজের শত্রুতা শুরু হয়।
__
সেদিনের পর থেকে প্রায়ই ওহির ইনহাজের সাথে দেখা হতো।ওহি ইনহাজকে দেখে ভেংচি কাটতো প্রতিবার আর ইনহাজ রাগি চোখে তাকিয়ে থাকতো।কয়েকবার ইনহাজ ওহিকে অপমানও করেছে।এভাবেই দুই মাস কেটে যায়।ওহি একদিন আহিয়ার সাথে ভার্সিটির পেছনে আসে।আর তখনই সে দেখতে পায় ইনহাজ একটা মেয়েকে কিস করছে।ওহি ভিডিও করে নেয় সেইটা।ও প্রথমে ভেবেছিলো ইনহাজকে এটা দেখিয়ে ভয় দেবে আর মজা নিবে কিন্তু কে জানতো সে ওকে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করবে।ওহি এমন কিছু হবে কল্পনা ও করেনি।
ওহি ভিডিওটা ইনহাজকে দেখিয়ে বলে,,,
-“এই যে মিস্টার খান এখন আমি এই ভিডিওটা ভাইরাল করে দেবো।তখন ব্রেকিং নিউজ কি হবে জানেন?হবে যে দ্যা গ্রেট পলিটিশিয়ান ইনহাজ জুহাইন খান ভার্সিটির পেছনে একটা মেয়েকে কিস করেছে।উফ কি যে দারুন হবে না।”
ইনহাজ গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
-“মজা লাগবে না তোমার।প্রচুর মজা লাগবে।সামনে তোমার জন্য কি অপেক্ষা করছে তা দেখার জন্য প্রস্তুত তো মিস ওহি”
ওহি সেদিন ইনহাজের কথায় পাত্তা দেয়নি।হয়তো এটাই ওহির জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।ওহি মজা করেই বানিয়েছিলো ভিডিওটা।ও কখনোই পাবলিশ করতো না।জাস্ট ইনহাজকে ভয় দেখাতেই করা।কিন্তু ও কি জানতো এর মাশুল ওকে বিয়ে পর্যন্ত নিবে।আর ইনহাজ যে ওকে শুধু এই কারণে বিয়ে করেনি তা খুব ভালো করেই এখন সে জানে।
১৪.
ওহি নিচে আসতেই ইনহাজকে সোফায় বসে কফি খেতে দেখতে পায়।ওহি ইনহাজের দিকে এক পলক তাকিয়ে খাবার টেবিলে বসে খেতে থাকে।ইনহাজ ওহিকে বলে,,
-“আজকে আমার আসতে দেরি হবে।তুমি তোমার মাহির আর আহিয়ার সাথে কাটাতে পারো দিনটা”
ওহি অবাক হয়।সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ইনহাজের দিকে তাকিয়ে থাকে।ইনহাজ ওহিকে ওইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকিয়ে বলে,,
-“হুয়াট”
ওহি দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।খেয়ে উঠে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলে,,
-“হঠাৎ আজকে ওদের সাথে থাকার পারমিশন দিলেন যে।আপনি তো আমাকে একাও কোথাও যেতে দেন না”
-“আমাকে রাগিও না।আজকের দিনে আমি তোমার সাথে রাগ করে কথা বলতে চাইছি না সো কথা না বলে ভার্সিটিতে যাও”
ওহি ভার্সিটিতে চলে আসে।বেশি কথা বললে আবার নাও যেতে দিতে পারে।ওহি ভার্সিটিতে এসে মাহির আর আহিয়াকে কথাটা বললেই ওরা ভীষণ খুশি হয়।ওহি ওদের কালকে রাতের কথা খুলে বললে ওরা অবাক হয়।তিনজন মিলে আরিশের সাথে কথা বলবে বলে ঠিক করে।আরিশ ওহিকে ভীষণ ভালোবাসে।ওহি বললে অবশ্যই আসবে।
ওহি আরিশকে ফোন করে বলে,,
-“ভাইয়ু আমার না তোকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে প্লিজ আমার সাথে একটু দেখার কর”
আরিশ বোনের কথায় না করতে পারে না।সে বলে,,
-“কোথায় আসতে হবে বল আসছি আমি”
ওরা একটা পার্কের কথা বলে।ওরা তিনজন পার্কে চলে আসে।বসে বসে আরিশের অপেক্ষা করছে।আরিশ আসতেই ওহি দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আরিশকে।আরিশও বোনকে জড়িয়ে ধরে।যখন সব কিছু হয়েছিলো তখন সে এখানে ছিলো না।বন্ধুদের সাথে ট্রিপে গিয়েছিলো।ওহি আরিশ বসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলো।তারপর ও আরিশকে বলে,,,
-“ভাইয়া তোমার না একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো। আচ্ছা মেয়েটাকে তুমি কবে বিয়ে করবে”
আরিশের চোখ দুটো হঠাৎ অস্বাভাবিক হয়ে যায়।লাল হয়ে গিয়েছে।সে নিজের কান্না আটকে বলে,,
-“ও বেঁচে নেই ওহি ওকে আমি হারিয়ে ফেলেছি তাও বাবার জন্য উনার জন্যই আজকে আমার ভালোবাসা আমার কাছে নেই।”
ওহি থমকে যায়।সে বলে,,
-“বাবা!ভাইয়া তুমি আমায় প্লিজ সব খুলে বলো।”
-“আমি আর ইফা দুজন দু’জনকে খুব ভালোবাসতাম।ও তোর বয়সিই।আমি যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ও তখন তোর মতোই সবে কলেজে উঠেছে।আমি একদিন বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলাম সেদিনই ওর সাথে আমার এক্সিডেন্ট হয়।ও সামনে চলে এসেছিলো বাইকের,ওকে বাঁচাতে গিয়েই আমার একটু চোট লেগে যায়।মেয়েটা আমার কাছে এসে অনেক ক্ষমা চায়।সে দেখেনি এমন অনেক কথা বলছিলো।আর আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।প্রথম দেখায় অনেক ভালো লেগে গিয়েছিলো।এরপর থেকে ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।পরে ছয় মাস পর সাহস করে প্রপোজ করেছিলাম।ও রাজি হয়েছিলো।তারপর থেকেই আমাদের পথচলা।আজ থেকে ৯ মাস আগে ও হারিয়ে যায় আমার কাছ থেকে।
কারণটা হলো বাবা।বাবা একদিন দেখে ফেলেছিলো ওর সাথে আমাকে।বাবাকে ওর পরিচয় বলতেই বাবা রেগে যায়।ওর বাবা দাদা সবাই ছিলো পলিটিশিয়ান।আর বাবা মোটেও পছন্দ করতো না।অনেকবার পায়ে ধরেছিলাম লাভ হয়নি।তারপর আর কি ওকে ছাড়ার জন্য শেষবার ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম ও বলেছিলো আজকে তোমাকে অন্যরকম কেনো দেখাচ্ছে।আমি কিছু বলেনি ঘোরা ফেরা শেষে আমি ওকে অনেক অপমান করি।অনেক আর ও আমায় চিৎকার করে সেদিন বলেছিলো প্লিজ তুমি যেও না।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।কিন্তু আমি কাপুরুষের মতো ছেড়ে এসেছিলাম।আর ও এই কষ্ট সয্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছিলো।
আরিশ কাঁদছে ওহিকে জড়িয়ে ধরে।ওহি আহিয়া মাহিরও কাঁদছে।এখানে না ইফার দোষ ছিলো আর না আরিশের।সব দোষ তার বাবার।সে কখনোই ক্ষমা করবে না তার বাবাকে।ওহি আরিশের চোখ মুছে দিয়ে বলে,,
-“জানিস ভাইয়া আমি ভেবেছিলাম ইনহাজ অনেক খারাপ।কিন্তু আজকে বুঝলাম ইনহাজ কেনো আমার সাথে এমন করছে।কিন্তু আমি ইনহাজকে ঠিক পথে আনবোই”
আরিশ ইনহাজের নাম শুনে চমকায়।সে ওহিকে বলে,,
-“ইনহাজ তার মানে তোর সাথে ইনহাজের বিয়ে হয়েছে।ইফার ভাইয়ের সাথে।আম্মু যে বলল তুই কাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস””
ওহি অবাক হয়ে বলে,,
-“তুমি জানো না ভাইয়া এইকথা।ইনহাজ আমায় তুলে নিয়ে বিয়ে করেছে।”
আরিশ বোনকে ভালোভাবে দেখে বলে,,
-“ও তোকে কিছু করেনি তো।ইফা বলেছিলো ইনহাজ নাকি ওকে নিয়ে অনেক পসেসিভ।আর নিশ্চয়ই এর জন্য ও তোকে কিছু করেছে তোর আর ওর সাথে থাকা লাগবে না তোকে নিয়ে আমি এই শহর থেকে চলে যাবো বনু।কিন্তু ওর কাছে যেতে দিবো না”
ওহি চোখ মুছে হেসে বলে,,
-“তা হয় না ভাইয়া।আমি এতোদিন চাইতাম চলে যেতে উনাকে ছেড়ে কিন্তু আমি এখন কোনোমতেই যাবো না।এগুলো আগে জানলেই ওনার সাথে আগে কখনোই খারাপ ব্যবহার করতাম না।আমি উনার সাথেই সারাজীবন থাকব”
মাহির বলে,,”কিন্তু ওহি…”
-“কোনো কিন্তু না মাহির আমি উনার সাথেই থাকবো তাতে উনি আমায় যতো কষ্ট দেন না কেনো”
১৫.
ওহি বাসায় এসে দেখে ইনহাজ এখনো আসেনি।ভাইয়ের সাথে অনেক সময় পার করেছে আজকে।সে সেই রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই ইফার হাসোজ্জল ছবিগুলোতে তার চোখ পরে।ইফা কোথাও হাসছে কোথাও রাগ দেখাচ্ছে।ওহি ইফার একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,
-“ইফা জানো আমার ভাইয়া এখনো তোমাকেই ভালোবাসে।ভীষণ ভালোবাসে। এই তো দেখো বাবাইয়ের সাথে এখন থাকে ও না।তুমি কেনো এমন করলে”
কোথা ইনহাজ এসে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গাল চেপে ধরে বলে,,
-“কোন সাহসে তুমি এই রুমে এসেছো”
-“আমার অধিকার আছে সব জায়গায় যাওয়ার আপনার ওয়াইফ আমি।অবশ্যই আমার সাহস এবং অধিকার দু’টোই আছে।আর ননদ এর রুমেই তো ঢুকেছি”
ইনহাজ ধাক্কা মেরে ওহিকে দূরে সরিয়ে বলে,,
-“ফারদার তুমি এই রুমে প্রবেশ করবে না”
বলেই ওহিকে টেনে বের করে নিজেও বের হয়ে রুম লক করে দেয়।ওহি ইনহাজকে বলে,,
-“এই যে মিস্টার খান আমার খিদে লেগেছে খাবো আমি”
-“তো খাও আমি মানা করেছি।”
-“উহু আমার আপনার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে খাইয়ে দেবেন না”
ইনহাজ অবাক হয় ওহির ব্যবহারে।সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো।চুপচাপ খেয়ে নাও।তেমার সাহসটা একটু না অনেক বেড়েছে”
ইনহাজ কথাটা বলেই হনহন করে চলে যায়।ওহি হাসে।সে ইনহাজকে জ্বালিয়ে ভীষণ মজা পাচ্ছে।সেও রুমে চলে আসে।এসে দেখে ইনহাজ ওয়াশরুমে।ও নিচে চলে আসে।সার্ভেন্টরা রান্না করে রেখে গিয়েছে।সবকিছু গরম করে টেবিলে রাখে।ইনহাজ ততক্ষণে নিচে নেমে এসেছে।
ওহি আর ইনহাজ খেতে বসে।ওহি বিভিন্ন ভাবে ইনহাজকে জ্বালায়।ইনহাজ বেচারা সয্য করতে না পেরে অর্ধেক খেয়ে চলে যায়।ওহি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।রুমে এসে দেখে ইনহাজ শুয়ে পরেছে।সে ইনহাজের কাছে এসে ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে।
চলবে~