#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ২২
• শান্ত পরিবেশ, শুধু মাঝে মাঝে কয়েকটা যানবাহনের শব্দ কানে আসছে তাও আবার ক্ষীণ । সুদেষ্ণা এখনো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে হিমাদ্রর দিকে। হিমাদ্রকে এবার বেশ ধৈর্য্যহারা দেখালো , হিমাদ্র একটু সময় নিয়ে বললো,,,,,,
“বললে না যে,,,,,?
সুদেষ্ণার ধ্যান এবার বোধ হয় ভাঙ্গলো। সুদেষ্ণার ভাবতেই অবাক লাগছে যে, এতক্ষণ সে নির্লজ্জের মতো চেয়েছিলো মানুষটার দিকে । সুদেষ্ণা তাকালো সামনে বসে থাকা সুপুরুষটির দিকে সে এখনো উওরের আশায় তার দিকেই চেয়ে আছে। সুদেষ্ণা নিজের লজ্জাকে পাশে রেখে জিজ্ঞেসা করলো,,,,,,
“কী ??
“রিভেঞ্জ নিচ্ছো?
সুদেষ্ণা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকালো হিমাদ্রর দিকে, এই ছেলে বলে কি । মাথায় এর নির্ঘাত সমস্যা আছে তা নাহলে এরকম কথা বলতো না। সুদেষ্ণা নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বললো,,,,,,,
“এরকম মনে হওয়ার কারন ??
হিমাদ্রির কে বিচলিত দেখা গেলো না , সে বোধ হয় জানতো সুদেষ্ণা এই প্রশ্ন করবে । হিমাদ্র একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললো,,,,,,,
“ওই যে তুমি যতোবার আমাকে প্রেম নিবেদন দিয়েছো আমি এরিয়ে গেছি । তোমার ভালোবাসাকে আমি দেখেও দেখিনি। তাই,,,,,,?
সুদেষ্ণা এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো হিমাদ্রর দিকে, বেশ সময় নিয়ে গরগর করে বলতে লাগলো,,,,,,,
“আগের সুদেষ্ণা হলে হয়তো রিভেঞ্জ নিতো বা হয়তো নিতো না,,,,,,তা আমি জানি না। এখন আমি বলবো , আমার আপনার দিয়ে কিছু আসে যায় না। আপনি যা খুশি তাই করুন । আপনার জীবন , কাকে ভালো লাগছে আর কাকে লাগছে না এটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এতে আমি রিভেঞ্জ নেওয়ার কিছু দেখছি না।
“আমার আগের সুদেষ্ণাই যে পছন্দের। যে মেয়েটি আমার বাড়িতে রোজ চিঠি দিতো , যে মেয়েটি আমার জন্য পাঞ্জাবি পাঠিয়েছিলো ।,,,,,,বলেই হিমাদ্র মিটিমিটি হাঁসতে লাগলো ।
সুদেষ্ণা এবার আকাশ থেকে পড়লো, এই কথা গুলো তো হিমাদ্রর জানার কথা নয়,,,,,তবে। এই কথা গুলোই যথেষ্ট ছিলো সুদেষ্ণার মুখ বন্ধ করতে। বেচারা লজ্জায় আর মাথা তুলছে না । তার সাথে হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক আওয়াজ তো আছেই। সুদেষ্ণার ইচ্ছা করছে এক ছুটে বাড়ি চলে যেতে।
হিমাদ্র হয়তো তার অবস্থা বুঝতে পেরেছে তাই কথা ঘোরানোর জন্য বললো,,,,,, “তোমাকে যে কথাগুলো বলতে ডাকলাম । এবার সুদেষ্ণা মুখ তুলে তাকালো হিমাদ্রর দিকে। হিমাদ্র সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো,,,,,,,,,,
“তুমি হয়তো জানো না আমার একটা বড়ো দাদা আছে…. হিমালয় রায় চৌধুরী। যে এখন বেঙ্গালুর থাকে নিজের স্ত্রী এবং ছেলের সঙ্গে । এবার তুমি ভাবছো আমি এই কথা গুলো তোমাকে কেন বলছি ,,,,,,,,,
সুদেষ্ণা হালকা ঘার নেড়ে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো হিমাদ্রর দিকে ।
হিমাদ্র একটু সময় নিয়ে ধীর আওয়াজে বললো,,,,,,“ তোমার দিদি আর আমার দাদা একে অপরকে ভালোবাসতো । বলেই সুদেষ্ণার প্রতিক্রিয়া দেখতে ওর দিকে তাকালো।
সুদেষ্ণার ভ্রু দুটো কুঁচকে গেলো বিস্ময়ে । সুদেষ্ণার জানা মতে তার দিদিভাইয়ের তো কারোর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল না,,,,,,,তবে । সুদেষ্ণার হঠাৎ মনে পড়লো, একদিন বিকেলে ছাদে বসে তার দিদিভাই প্রেম বিষয়ক কথা বলছিলো । তাহলে কী দিদিভাইয়ের সত্যি সম্পর্ক ছিল হিমালয় রায় চৌধুরীর সঙ্গে ।
হিমাদ্র আবার বলতে শুরু করলো,,,,,,“ আমার দাদা আর তোমার দিদির প্রেম শুরু হয় কলেজ লাইফ থেকে। তারা একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলো । প্রথমে তাদের বন্ধুত্ব হয় তারপর ভালোলাগা আর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। আমাদের বাড়িতে দাদার সম্পর্কের কথা সবাই জানতো , তবে সুতৃষ্ণাদি কে সামনে থেকে আমি বাদে কেউ দেখিনি। দাদা সুতৃষ্ণাদির কথা বাড়িতে জানিয়েছিলো আর বাড়িতে বলেছিলো একটা চাকরি পাওয়ার পর সুতৃষ্ণাদির বাড়িতে যাবে বিয়ের কথা বলতে । তখন সব কিছু বেশ ভালোই চলছিল তারপর হঠাৎ একদিন দেখলাম দাদার অবস্থা ভালো না। চোখের নীচে কালি, অগোছালো চুল , প্রানবন্ত ছেলেটা আর কথা বলছে না কারোর সাথে । আমরা সবাই ভাবলাম সুতৃষ্ণাদির সাথে হয়তো ঝামেলা হয়েছে , তারা তাদের ঝামেলা মিটিয়ে নেবে । তারপরের দিনও দাদার একই অবস্থা দেখে কিছু জিজ্ঞাসা করার পরও দাদা কাউকে কিছু বলেনি, নিজেকে বেশ কয়েক দিন ঘরবন্দি করে রেখে ছিলো । তারপর দরজা ভেঙ্গে দাদার ঘরে ঢোকার পরে দাদাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাই । দাদার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন মা কে জরিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আর বলতে লাগলো ‘আমি সুতৃষ্ণাকে ছাড়া বাঁচবো না’ । বাচ্চাদের মতো আবদার করতে লাগলো ‘আমাকে সুতৃষ্ণাকে এনে দাওনা মা’ ।ওই ঘটনার পর সুতৃষ্ণাদির সঙ্গে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করার পরও তা হয়ে ওঠেনি। তারপর আমরা জানতে পারি সুতৃষ্ণাদির বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদের হাঁসি-খুশি পরিবারের অবস্থা বাজে হয়ে উঠলো সাথে আমার দাদার অবস্থাও ।
হিমাদ্র এবার থামলো , তার চোখ দিয়ে অশ্রু গুলো মুক্তর মতো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। সুদেষ্ণাও নিঃশব্দে কাঁদছে। সুদেষ্ণা হিমালয়ের কষ্ট অনুভব করতে পারছে , নিজের প্রিয় মানুষকে না পাওয়ার যন্ত্রনা যে কী কষ্টের তা বোঝে সুদেষ্ণা। সুদেষ্ণা নিজের চোখের জল মুছে হিমাদ্রর হাতের ওপর আলতো স্পর্শ করলো ।
হিমাদ্র আবার বলতে শুরু করলো,,,,,,, “বেশ কিছু বছর দাদার অবস্থা ভালো ছিলো না। তারপর ট্রিটমেন্ট করানোর পর দাদা এখন ঠিক আছে। এখন সে একটা সাংসারিক মানুষ। দাদা এখন খুশি আছে নিজের জীবনে । জানো তো সুদেষ্ণা, এই সব কিছুর জন্য আমি সুতৃষ্ণাদিকে দায়ী ভাবতাম । বলেই সুতৃষ্ণার দিকে তাকালো হিমাদ্র,,,,,,,,।
আমি দাদার অবস্থা দেখার পরই বুঝতে পেরেছিলাম এই সব প্রেম ভালোবাসা আসলেই কিছু হয় না। তারপর থেকেই আমি মেয়েদের থেকে দূরে থাকতাম রিয়া ছাড়া। এখন অবশ্য ওই ধারনা পাল্টেছে । এখন অবশ্য সুতৃষ্ণাদির বাধ্যকতা বুঝতে পেরেছি । এই সব কথা গুলো আমার তোমাকে জানানো প্রয়োজন মনে হলো তাই জানালাম । এবার বাকিটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। এই বলে হিমাদ্র তাকালো সুদেষ্ণার দিকে,,,,,,,।
চলবে,,,,,,,
(বাকিটা কালকে দেওয়ার চেষ্টা করবো)