#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ১০
• সূচনা হলো নতুন এক সকালের , বন্ধ ঘরের জানালা দিয়ে একফালি সোনালী রোদ্দুর এসে পড়ছে মেঝেতে । আলোর প্রতিফলনের জন্য ঘরের সাদা দেয়াল , বিছানা হলুদ দেখাচ্ছে। ঘড়িতে এখন সকাল ৮ টা বেজে ৫ মিনিট, সুদেষ্ণা বাথরুমে ব্রাশ করছে আর গানের তালে দুলছে তার ছোটো দেহ,,,,,,,,
তোমার প্রজাপতির পাখা
আমার আকাশ-চাওয়া মুগ্ধ চোখের রঙিন স্বপ্ন মাখা
তোমার চাঁদের আলোয়
মিলায় আমার দুঃখসুখের সকল অবসান ।।
গানের ভলিউম এতই বেশি যে ঘরের বাইরে শোনা যাচ্ছে আওয়াজ । বাড়ির সবাই জানে তাদের গুনের মেয়ে দরজা বন্ধো করে নাচ করছে । সুদেষ্ণার এই অভ্যেস থেকে সবাই অবগত , সুদেষ্ণা মাঝে মধ্যেই ঘরের দরজা বন্ধ করে গান চালিয়ে নাচ করে । কিন্তু আজকের কারনটা ভিন্ন , সুদেষ্ণার কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান আছে আজকে । গত দুই দিন ধরে তার এই নাচ , গান চলছে । তার বন্ধুরা নাচে তার নাম দেওয়ায় ভীষন বিরক্ত হয়েছিল । কলেজের সিনিয়রা যারা এই দায়িত্বে ছিলো তাদের জানিয়েও কোনো সাহায্য পায়নি সুদেষ্ণা । প্রথমে নাকোচ করলেও পরে বাধ্য হয়ে মেনে নেয় । সুদেষ্ণা নাচ করতে পারে না এমন নয়, সুদেষ্ণা খুব ভালো নাচ করে এমন প্রশংসা অনেকেই করেছে । সুদেষ্ণা আগে নাচ শিখতো , কিন্তু পড়াশোনার চাপে একটা সময় নাচ ছেড়ে দিতে হয়েছে। তারপর থেকেই নাচের প্রতি তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না, কিন্তু এখনো গান শুনলে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না সুদেষ্ণা।
________________________________________________
এখন ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট, প্রথম বর্ষের সমস্ত ছাএ ছাএীরা মেইন ক্যামপাসে উপস্থিত । এখনো অনুষ্ঠান শুরু হয়নি । পুরো ক্যাম্পাস খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, বিভিন্ন রঙিন ফুল দিয়ে । সুদেষ্ণা এবং তার বন্ধুরাও বসে আছে পিছনের সারির চেয়ারে। সুদেষ্ণার দৃষ্টি কলেজের গেটের ওপর স্থির , আর সবার দৃষ্টি সুদেষ্ণার ওপর নিবন্ধ ,,,,,,,,,।
মোহিত ভ্রু কুঁচকে বললো,,,,,,,,, ভাই তোর চোখ ব্যাথা করছে না ??? সেই কখন থেকে এক ভাবে গেটের দিকে তাকিয়ে আছিস ।
সুদেষ্ণা বিরক্তি নিয়ে তাকালো মোহিতের দিকে,,,,,,,, কোনো উওর না দিয়ে আবার গেটের দিকে তাকালো।
অনিক সুদেষ্ণাকে উদ্দেশ্যে করে বললো,,,,,,,,আরে তুই চিন্তা করছিস কেনো,,,,,,,?? হিমাদ্র ভাই আসবে তো । তারাই তো আমাদের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে,,,,, তারা না এলে হয় নাকি ।
অনু বললো „„„„„„„ সুদেষ্ণা জানে হিমাদ্র ভাই আসবে , ওর আসল চিন্তা অন্য জায়গায়,,,,,,। আমারা শনিবার যখন কেনা কাটা করতে গিয়েছিলাম তখন অনু হিমাদ্র ভাইয়ের জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে ছিলো এবং দেওয়াও হয়ে গেছে কিন্তু বেচারার চিন্তা হচ্ছে হিমাদ্র ভাই পড়বে কিনা ।
মেয়েদের কোথাও যাওয়ার কথা হলেই তারা কী পড়বে , কী সাজবে এই সব চিন্তা উড়ে এসে জুড়ে বসে। তারপর কেনাকাটার ঝামেলা তো আছেই। কিন্তু ছেলেদের অতোসব ঝামেলা থাকে না , তারা যা সামনে পায় তাই পড়ে । সুদেষ্ণারা কলেজে অনুষ্ঠানের কথা যখন জানতে পারলো তো কেনাকাটা করতে যাবে ঠিক করে । ছেলেরা যাবে না জানায় । তো শনিবার সুদেষ্ণা, অনু,স্নেহা , কেয়া মিলে গেছিলো । কেনাকাটা করতে করতে সুদেষ্ণার কালো রঙের একটা পাঞ্জাবি পছন্দ হয়ে যায়, তাতে সাদা রঙের হাতে আঁকা ডিজাইন । পাঞ্জাবিটা দেখেই হিমাদ্রর ছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে , তাই সুদেষ্ণা হিমাদ্রর জন্য কিনে নেয় পাঞ্জাবিটা। তারপর একটা বাচ্চা ছেলের হাত দিয়ে হিমাদ্রর বাড়ির দারোয়ানকে দেওয়া করায় পেকেটটা , ভিতরে অবশ্যই হিমাদ্রর নামের চিরকুট ছিলো। সে নিশ্চয়ই পাঞ্জাবিটা পেয়েছে, কিন্তু পড়বে কিনা ভাববার বিষয়।
এই সব ভাবনার মধ্যেই মাইকের আওয়াজ কানে এলো , হিমাদ্রর দলের একজন বক্তিতা দিচ্ছে। সমস্ত স্যার-মিস উপস্থিত আছেন । অনুষ্ঠান হবে শুরু হলো মাএ । সুদেষ্ণার চোখ তখনো কলেজে গেটের দিকে ,,,,,,,, ঠিক তখনই হিমাদ্র আর রুদ্রিক দা প্রবেশ করলো । হিমাদ্র ব্লু রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে, পেশিবহুল শরীরে দারুন মানিয়েছে । কিন্তু তাকে দেখে সুদেষ্ণার একটু কষ্ট হলো , তার দেওয়া পাঞ্জাবিটা তো পরতেই পারতো । তারপর সুদেষ্ণা নিজের মনকে বোঝালো , অচেনা মানুষের দেওয়া জিনিস কেউ ব্যবহার করে না । তার জায়গায় সুদেষ্ণা থাকলে সেও ব্যবহার করতো না । সুদেষ্ণার মন খারাপ একটু কমলো, তারপর তার সুপুরুষের দিকে তাকালো,,,,,,,,হিমাদ্র হাতে করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এগিয়ে গেলো স্টেজের দিকে, পেছনে রুদ্রিকদা ও গেলো ।
প্রথম বর্ষের ছাএ-ছাএীদের গোলাপ ফুল দিয়ে বরন করা হয়েছে । সুদেষ্ণা অবশ্য ফুল নিইনি, কেনোনা ওর গোলাপ পছন্দ নয় । তার প্রিয় ফুল পদ্ম আর শালুক। সবার বরনের পর অনেক গুলো স্যার বক্তিতা দিলেন । তারপর হিমাদ্রর দলবলের কয়েকটা দাদাও ভাসন দিয়েছে। হিমাদ্রও দিয়েছে , তার বেলায় সুদেষ্ণা চোখ , কান খোলা রেখে শুনেছে।
স্টেজে এবার গান শুরু হলো , তাদেরই ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে গিটার নিয়ে গান গাইছে,,,,,,, অরিজিৎ সিং এর “দিল সম্বহল যা যরা” „„„„„„„ চারিদিকে সবাই হাততালি দিচ্ছে আর গানের তালে দুলে গান গাইছে । সুদেষ্ণার হাত-পা হঠাৎ কাঁপতে লাগলো , সে হিমাদ্রর সামনে কীভাবে নাচ করবে । বুকে মাদল বাজছে,,,,,,, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। যত সময় যাচ্ছে বুকের শব্দটা ততো তীব্র হচ্ছে,,,,,,,, ধীরে ধীরে গানের পালা শেষ হয়েছে এবার নাচের পালা । বক্তিতার পরে ব্রেক দেওয়া হয়েছিল কিছু সময়ের জন্য , তারপর তো কবিতা, আবৃত্তি হলো । তারপর গান হলো , এবার নাচ হবে,,,,,,,,,
গান শেষ হওয়ার পরেই মাইকে সুদেষ্ণার নাম ডাকা হয়,,,,,, এবার স্টেজে নৃত্য পরিবেশন করতে আসছেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুদেষ্ণা দও,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,
( পারিবারিক কিছু অসুবিধার জন্য আমি গল্প লিখতে পারিনি, তার জন্য আমি ভীষন দুঃখিত। আমি এখন প্রতিদিন গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো , ধন্যবাদ 💜।