# হৃদয়ের _ অন্তরালে _ তুমি ♥♥
# পর্ব : ০৩
# লেখক : আয়ান আহম্মেদ শুভ
** পুকুর পাড়ে আসতেই মাহির দেখতে পেলো মালিহাকে কোলে নিয়ে বসে আছে একটা মেয়ে । এই মেয়ে টা হলো ওই দিন যে মেয়েটা মাহিরের কোল থেকে মালিহাকে নিয়ে গিয়েছিলো সেই মেয়ে । মাহিরের চোখ ছলছল হয়ে গেছে । মাহির দৌরে চলে যায় ওই মেয়েটির কাছে । মেয়েটির কাছে যেতেই মাহির কোলে তুলে নিলো মালিহাকে । মাহির এতোটা সময় খুব চিন্তায় থাকার পরে এখন একটা সস্থির নিঃশ্বাস নিলো । মাহির মেয়েটির দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে বললো
— আপনার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই ? হ্যাঁ কোনো ওকে এখানে নিয়ে আসছেন ? বাড়ির কাউকে বলছেন যে মালিহা আপনার কাছে আছে 😠 ।। স্টুপিট গার্ল । জানেন কতটা টেনশনে ছিলাম আমি 😬 ননসেন্স ।। দিন ওকে আমার কাছে
— ওই আন্নে আরে কিতা কন হ্যাঁ । আই এতো ইংলেজি বুঝি না । কিন্তু এইডা ঠিকই বুঝি যে আন্নে আমারে খারাপ কথা কইছেন
— ধূর যত্তসব খ্যাত
— এই খ্যাত কারে কন ? আই কিন্তু আন্নেরে খাইলামু । হেই কখন থেইক্কা উল্টা পাল্টা কথা কইতে আছেন
— উল্ট পাল্টা মানে ? ওহহহ হ্যালো আপনার কোনো ধারনা আছে আমি কতটা টেনশনের ভিতর পরে গেছিলাম
— ওহহহ আচ্ছা চিন্তায় হরিগেছিলেন । এই বাচ্চাডার লাই আন্নের আদু কোনো চিন্তা আছেনি ? যদি থাইকতো তাইলে এমন করি ঘুমাইতে ন ফারিতেন
— উফফফফ আপনি তো ভিষন পেন ফুল একটা মানুষ । যত্ত সব আজে বাজে তর্ক করেন
— তক্ক আমি না আন্নে করেন । ফালতু বেডা
— শাট আপ , ইস্টুপিড গার্ল । আর কখনও আমার মেয়েকে আপনি কোলে নিবেন না । মাইনডিট
** মাহির ও ওই মেয়েটির কথার মাঝখানে চলে এলো মাহিরের মা বাবা । মাহিরকে ঝগড়া করতে দেখে মাহিরের বাবা বললো
— কি হয়েছে মাহির এই ভাবে কথা বলছিস কেনো ওর সাথে ? ( বাবা )
— দেখো বাবা এই বিয়াদব মেয়েটাকে দেখো । সকাল বেলা আমার রুমে ঢুকে আমাকে না জানিয়ে আমার মেয়েকে চুরি করে নিয়ে এসেছে এই স্টুপিড মেয়েটা । আর এখন যতসব বাজে তর্ক করছে আমার সাথে ( আমি )
— ওই মিয়া আন্নে আরে চোর কইছেন ? আন্নের সাহস তো কম না ( মেয়ে )
— আপনি তো চোর না সাথে খ্যাত ও । আর বাবা এই সব কাজের লোকদের তুমি এতোটা পশ্রয় দেও কেনো ? এদের বেশি পশ্রয় দিলে মাথায় উঠে যায় ( আমি )
মাহিরের কথা শুনে মেয়েটি মাথা নিচু করে ফেললো । আসলে মাহির এতোক্ষন যা যা বলেছে মেয়েটি শুধু মাত্র মজা ভেবেছে । কিন্তু মাহির মেয়েটিকে ছোট করে কথাটা বলায় মেয়েটি ভিষন কষ্ট পেলো । মাহিরের বাবা মাহিরের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
— চুপ কর মাহির । কাকে কি বলছিস তুই ? তুই জানিস এই মেয়েটা কে ? যাকে তুই মূর্খ , কাজের লোক , স্টুপিট বলছিস ও হলো ইতি । তোর সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু ইতি
* বাবার মুখে ইতির নাম শুনে ভিষন অবাক হয়ে যাই আমি । আসলে অনেক বছর ওর সাথে দেখা হয় নাই । তাই ওকে ভূলে গেছি । সেই জন্যই চিনতে পারি নাই । তবে কিছু বছর আগে শুনেছি ঢাকায় পড়াশোনার জন্য গিয়েছে ও । বাবার কথা শুনে পরে গেলাম ভিষন লজ্জায় । আমি মাথা নিচু করে আছি । আমার নিরবতা দেখে ইতি বললো
— আপনি হয় তো খুব বেশি শিক্ষিত । তাই বলে সবাই কে অপমান করে কথা বলার কোনো অধিকার আপনার নাই ।
— ইতি…………………..
* ইতি আমার কথা না শুনেই হনহন করে চলে গেলো পুকুর পাড় থেকে । হয়তো অভিমান করেছে আমার কথায় । যাই হোক আমি আমার মেয়েকে পেয়েছি এটাই আমার কাছে অনেক । কে রাগ করলো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না ।
✒ ওই দিকে উজ্জলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জরিয়ে পরলো মহূয়া । তবে মহূয়া চায় এখন যেনো উজ্জল তাকে বিয়ে করে । তাই মহূয়া উজ্জলকে বললো
— উজ্জল
— হুমমমমম
— দেখো মাহির তো ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে এখন আমাকে কবে বিয়ে করবে তুমি ?
— আচ্ছা বিয়ে করার দরকার কি ?
— মানে ? কি বলছো এসব ?
— আমি বলছি বিয়ের আগেই তো সব পাচ্ছি । তাই বিয়ের কি প্রয়োজন ?
— উজ্জল তুমি কি আমার সাথে মজা করচ্ছো না কি সত্যি সত্যি আমাকে ঠকাচ্ছো ?
— আরে সুইট হার্ট তোমাকে ঠকাচ্ছি না । আমি কি তোমাকে ঠকাতে পারি ? আমি তো মজা করছি তোমার সাথে
— প্লিজ উজ্জল এমন মজা আমার ভালো লাগে না প্লিজ
— ওকে সরি বাবা এখন চলো একটু রোমান্স করি ।
— আজ না উজ্জল আমি একটু অসুস্থ
— ওহহহ ওকে তুমি থাকো আমি বাহিরে যাচ্ছি
** উজ্জল রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো বাহিরে । মহূয়া এখন উজ্জলের বাড়িতেই থাকে । উজ্জল চলে যাবার পরে মহূয়া সোফায় বসে বসে ভাবচ্ছে । আচ্ছা উজ্জল কি সত্যি আমায় বিয়ে করবে ? নাকি ফিরিয়ে দিবে আমায় ? না উজ্জল এমনটা করতে পারে না । কারন উজ্জলের কথাতেই ওর ভরসায় আমি মাহিরের সাথে প্রতারনা করেছি । উজ্জল আমার সাথে কোনো দিনই প্রতারনা করবে না । কিন্তু উজ্জলকে বিয়ের কথা বললেই ও অন্য বিষয়ে কথা বলে । এই কথাটা এড়িয়ে যায় কেনো ? যাই হোক রাতে ওকে জ্বিগাসা করবো । এখন ও কোথায় গেলো ? একটু কল দিয়ে দেখি কোথায় আছে ?
✒ মাহির মালিহাকে নিয়ে পুকুর পাড় থেকে বাড়িতে ফিরে এলো । সেই বাড়ি ফেরার পর থেকে মাহিরের যে কি হলো মাহির নিজেও জানে না । ভিষন অন্যমনস্ক হয়ে পরে মাহির । মাহিরের ভাবনার কেন্দ্র বিন্দু হলো আজ ইতির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো । আচ্ছা ইতির সাথে যে আমি এমন ব্যবহার করলাম আদু কি এটা ঠিক ছিলো ? মেয়ে হয়তো বড্ড আঘাত পেয়েছে আমার কথায় । আচ্ছা আমি কি বা করতাম আপনারাই বলুন !!! একে তো মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না । অনেকটা টেনশনে পরে গিয়েছিলাম আমি । তার উপর ওকে দেখলাম আমার মেয়েকে নিয়ে বসে আছে পুকুর পাড়ে । আমাকে বলেও নিতে পারতো তো । তার উপর আবার তর্ক । উফফফ সব মিলিয়ে মাথাটা ভিষন খারাপ হয়ে যায় আমার । তাই তো ওকে ওভাবে বললাম । তবে যাই হোক আমার এরকম রাব বিহাব করা মোটেও উচিত হয় নাই । এই অনউচিত কাজটার জন্য আমার উচিত ওকে সরি বলা । হুম তাই বলবো । কিন্তু ইতি গেলো কই ?
** মাহির নিজের রুম থেকে বের হবে ঠিক ওই মূহুর্তে মাহিরের মা মাহিরকে ডাকলো । মাহির ছুটে গেলো মা এর রুমের দিকে । মাহির মাকে বললো
— হ্যাঁ মা তুমি কি আমায় ডেকেছো ?
— হ্যাঁ বাবা মালিহাকে খাওয়ানো শেষ । এখন তুই ওকে নিয়ে যা তোর রুমে । ঘুমাবে হয়তো
— হুম মা খাবার খাওয়ার পরে ও ঘুমাবেই
— একদম তোর মতন হয়েছে
— হুম
— শোন বাবা তোর সাথে আমার একটু গুরুত্বপূর্ন কথা ছিলো
— হ্যাঁ মা বলো
— তুই কি চাকরি টাকরি কিছু করবি না ? দেখ বাবা আমাদের একমাত্র ছেলে তুই । আর ঐ দিকে তোর বাবারও বয়স হয়েছে । সংসার চালেতে টাকার প্রয়োজন হয় । তাই বলছিলাম
— আর বলার কি আছে হুমমম চাকরি করবো তো মা । কিন্তু চাকরির চিন্তার থেকেও বড় চিন্তা মালিহাকে নিয়ে । ও কার কাছে থাকবে ? আর তোমার ও তো বয়স হয়েছে । মালিহার খেয়াল রাখা তোমার পক্ষে অসম্ভব প্রায়
— হুম তাও ঠিক কিন্তু কে রাখবে ওর খেয়াল ?
— আমিও মা সেই চিন্তাই করি । আমার মতো করে ওর খেয়াল কে রাখবে ?
— বাবা যদি কিছু মনে না করিস ইতি কিন্তু মালিহার খেয়াল রাখতে পারে । সকালে তো তুই দেখলিই মালিহাকে ইতি কতটা পছন্দ করে
— হুম কিন্তু ইতি কি রাজি হবে আমার মেয়ের খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিতে ?
— আমার বিশ্বাস আছে যদি তুই ওকে বলিস তবে ইতি রাজি হবে । তাছাড়া তুই যখন ছিলিস না তখন ইতিই তো আমাদের খুব খেয়াল রাখতো
— আচ্ছা মা আমি ওর সাথে কথা বলবো কিন্তু ও আছেটা কই ?
— উমমম আমার মনে হয় পুকুর পাড়েই আছে । তুই গিয়ে দেখ
— আচ্ছা মা তুই তা হলে মালিহাকে তোমার কাছেই ঘুম পারাও । আমি গিয়ে দেখি ইতি কই আছে
— আচ্ছা
✒ মাহির মা এর রুম থেকে বেরিয়ে পুকুর পাড়ে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো । মাহির হাঁটচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । অনেক দিন পর মাহিরে মুখে এমন হাসির রেখা দেখা গেলো । মাহিরের হাসির কারন হলো ইতি । ইতি সেই বাচ্চা মেয়েটাই আছে যার রাগ হলে পুকুর পাড়ে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো । ইতির সাথে মাহিরের প্রায় সারা দিনই ঝগড়া হতো । তখন ইতি ঠিক এই কাজটাই করতো । যাই হোক মাহির পুকুর পারে এসে দেখে ইতি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে । মাহির ইতির দিকে সামান্ন এগোতেই শুনতে পেলো ইতির কন্ঠের শব্দ । ইতি বলছে
— এতো বছর পরে ফিরে এসে আমাকে আজে বাজে কথা শোনালো । ও আমাকে চিনতেও পারে নাই । পারবে কি করে ? এখন তো আর ইতির কথা মনে নাই তার । সে তো মহূয়া মহূয়া করেই জিবন শেষ করে ফেলছে । ওই মহূয়ার বাচ্চা মহূয়ার কথাই ওর মনে থাকে সব সময় । আমার কি কোনো দাম আছে নাকি ওর কাছে । আল্লাহ একটু ওর মেয়েটাকে কোলে নিয়ে এখানে এনেছি বলে এমন ভাবে বললো আমায় । আমি আর কি করবো ওর মেয়েকে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারি না । সো কিউট বেবি । মালিহাকে ইচ্ছে করে সারা জিবনের জন্য আমার কাছে নিয়ে আসি । না না তা করা যাবে না । মাহির যেই জিনিস । আজ একটু নিজের কাছে এনেছি বলে আমাকে চোর বললো 😭😭😭 ।। কত বাজে কথাও শোনালো । আমি ননসেন্স না ওয় নিজে ননসেন্স
✒ ইতির কথা গুলো শুনে মাহির ইতির পিছন থেকে খিল খিল করে হেসে ফেললো । ইতি পিছন ফিরে মাহিরকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো । মাহির বুঝতে পারলো যে এখনও জনাবা অনেকটা অভিমান নিয়ে বসে আছে । মাহির ইতিকে বললো
— ওই সরি রে সকালের ব্যবহারের জন্য
–…………………… ( চুপ )
— ওই তোকে বলছি চুপ করে আছিস কেনো ?
— এমনি আর আপনাকে সরি বলতে হবে না । যান এখান থেকে আমাকে একা থাকতে দিন
— অভিমান কি বেশি হয়েছে ?
— জানি না
— আচ্ছা না জানলে নাই । তোর জন্য একটা কম খরচে বেশি লাভের অফার এনেছি
— কিতা ??
— মালিহাকে দেখা শোনার দায়িত্ব । কি পারবি তো ওকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতে , স্নেহ করতে ? পারবি ওর খেয়েল রাখতে ?
— পারবো না মানে একশত বার পারবো বরং তোর থেকে বেশি খেয়াল রাখতে পারবো ওর
— সত্যি তুই আমাকে বাঁচালি
** ইতির সাথে আরও কিছু সময় কথা বলার পরে মাহির বাড়িতে চলে এলো । মাহির বাড়ি এসে কিছু কাজ সেরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো । সকালে চাকরি খুঁজতে যাবে ।
* সকালে মাহির ঘুম থেকে উঠে ভিষন অবাক হয়ে গেলো । কাল সকালের মতো আজও মাহির চমকে গেলো । তবে কাল সকালের থেকেও আজ বেশি অবাক হলো । মাহির দেখলো তার পাশে………………………
# চলবে……………………
( সরি বিলম্ভ করে দেওয়ার জন্য । আসলে কিছু কাজ থাকে আমার সেই জন্য ঠিক টাইমে গল্প দেওয়া হয়ে উঠে না । তবে ট্রাই করি । গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি সকলের থেকে । বেশি বেশি রিসপন্স করুন আর পাশেই থাকুন )
# Happy Reding ♥♥