হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ২২

#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

পর্ব-২২

#ফাবিহা_নওশীন

🍂🍂🍂
অবশেষে গাড়ি থামলো একটা বাংলোর সামনে।শুভ্রা গাড়ির গ্লাস ভেদ করে বাইরেটা দেখে চমকে উঠে।হৃদ ওকে বাড়িতে না এনে ওকে একটা বাংলোতে কেন আনলো।।
এতক্ষণ হৃদের রণমুর্তি দেখে চুপ থাকলেও আর চুপ করে থাকতে পারছেনা।
শুভ্রা মুখ খোলে নিচুস্বরে বললো,
—–আমরা এখানে কেন এসেছি?

হৃদ কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ির দরজা খোলে বের হয়ে শুভ্রার পাশের দরজা খোলে বললো,
—–নাম।

শুভ্রা নামছেনা তাই হৃদ শুভ্রাকে টেনে বের করে নিয়ে যাচ্ছে।শুভ্রার পড়নের শাড়ি পায়ে বেধে বারবার পড়ে যেতে নিচ্ছে কিন্তু হৃদের টানার গতি সে সুযোগ দিচ্ছে না।

হৃদ শুভ্রাকে ভিতরে নিয়ে একপ্রকার ছুড়ে মারে।শুভ্রা তাল মেলাতে না পেরে ফ্লোরে ছিটকে পড়ে যায়।এতে করে দু’হাতে পায়ে প্রচন্ডভাবে ব্যথা পায়।শুভ্রার চোখে পানি চলে এসেছে।উঠার শক্তি পাচ্ছেনা।

হৃদ টেবিলে একটা লাথি মারে টেবিল বিকট শব্দে ভেঙে যায়।
তারপর চিতকার করে বললো,
—–ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলি,,এই তোর ফ্রেন্ড? অরিত্র? যে কিনা আমার নিষ্পাপ বোনের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।
ছিহ ছিহ শুভ্রা!!ছিহ!!

শুভ্রা উঠে হৃদের বরাবর দাড়িয়ে বললো,
—–আমি ওর সাথে দেখা করতে যাইনি।আর না ও আমার বন্ধু।

হৃদ দাতে দাত চেপে বললো,
—–রাইট ও তোর বন্ধু না।ও তোর বিশেষ কেউ তাই তো?

শুভ্রা চিতকার করে বললো,
—–হৃদ!!

হৃদ শুভ্রার গলা চেপে ধরলো।
—–আবার চিতকার করিস?তুই কি করে এটা করতে পারলি?
আমার ভালোবাসার এই মূল্য দিলি?এত ঘৃণা করিস আমাকে?এতটাই যে আমার সাথে সাথে আমার বাচ্চা বোনটাকেও ছাড় দিলিনা।আমি নাহয় তোর শত্রু তোর কাছে অপরাধী কিন্তু রোজ কি করেছে?ওকে কেন এভাবে কষ্ট দিলি?ও তো তুই বলতে জান।ও যখন জানবে কি হবে জানিস?
জানিস তুই?

হৃদ শুভ্রাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।শুভ্রা গলায় হাত দিয়ে কাশতে শুরু করলো।ওর নিশ্বাস আরেকটুর জন্য বের হয়ে যেতো।

শুভ্রা হৃদের কথা শুনে কাদতে লাগলো।শুভ্রার কান্না দেখে হৃদের মাথায় আগুন ধরে গেলো।
হৃদ শুভ্রাকে তুলে ধরে দাড় করিয়ে দুবাহু চেপে ধরলো।তারপর বললো,
—–নেকা কান্না কেন করছিস?কেন হ্যা?
এই অরিত্রই তোর সেই প্রেমিক তাইনা?এর সাথে মিলেই তোর ভিতরে জমানো প্রতিশোধ নিয়েছিস তাই না?শান্তি পেয়েছিস? বল শান্তি পেয়েছিস?

শুভ্রা হৃদকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।তারপর বললো,
—–তুমি হার্টলেস এটা জানতাম কিন্তু এতটা নিচ মানসিকতার মানুষ এটা জানতাম না।তুমি আমার সম্পর্কে এসব ভাবছো কি করে?হ্যা তোমার প্রতি আমার একটা ক্ষোভ আছে তাই বলে আমি রোজের লাইফ নিয়ে খেলবো?

—–তুই তাই করেছিস।এতটাই যখন ঘৃণা করিস তাহলে আমাকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলতি শান্তি পেতাম কিন্তু এখন,,,
এখন আমার ভিতরের সব জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।কিন্তু মারা যাচ্ছিনা।এর চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয় শুভ্রা।তুই আমাকে মেরে ফেলতি।আমি কি করে মেনে নেবো তুই…
না আমি মানতে পারছিনা।
হৃদ মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরে এদিক সেদিক পাগলের মতো দেখছে আর হাটছে।শুভ্রা নিজেকে সামলে নিচ্ছে।হৃদ যে রাগের মাথায় বড়সড় গন্ডগোল পাকাবে বুঝতে পারছে।
হৃদ কিচেনে গেলো।শুভ্রা হৃদের পেছনে পেছনে যাচ্ছে।হৃদ কিচেনের সব ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে।
কিছু একটা খোজছে।
শুভ্রা বারবার হৃদ হৃদ বলে চিতকার করছে।
হৃদ অবশেষে মাছ মাংস কাটার একটা বড় ছুরি খোজে পেলো।
শুভ্রা হৃদের হাতে ছুরি দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
—–হৃদ কি করছো?

হৃদ মুচকি হেসে বললো,
—–ভয় পাস না তোকে কিছু করবোনা।আর না তোকে ফাসাবো।আমি জাস্ট আমার আর রোজের অবস্থা মেনে নিতে পারছিনা।আমি এটা জেনে বাচতে পারবো না যে তুই আমাকে ভালোবাসিস না।তুই পুরো পরিবারের উপর বদলা নিতে চাস।আমি মানতে পারছিনা তুই এসব করেছিস।আমি এই শুভ্রাকে চিনিনা,জানিনা।শুভ্রা এমন হতে পারে না।কিছুতেই না।

শুভ্রা অনুনয়ের সুরে বললো,
—–হৃদ আমি আসলেই এমন নই।তুমি ভুল বুঝেছো আর ভুল করে রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছো।তুমি ওটা ফেলো তারপর আমার কথাগুলো শুনো।তাহলে তুমি সব বুঝতে পারবে।

—–নাহ,শুভ্রা।তোর আর নতুন করে কিছু বলার থাকতে পারে না।

—–আছে,বলার আছে।তুমি অরিত্রকে নিয়ে ভুল ভাবছো।ঘটনা অনুযায়ী ভাবাটা স্বাভাবিক।কিন্তু সবসময় চোখের দেখা ঠিক হয়না।চোখের দেখাতেও,শুনাতেও ভুল থাকে।আমাকে এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দেও।প্লিজ হৃদ প্লিজ।

—–অরিত্রের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক নেই,,তাহলে তুই কেন ওর হাত ধরেছিস?হাত ধরে কি গল্প করছিলি?

শুভ্রা চোখ বন্ধ করে চিতকার করে বললো,
—–স্টপ!হৃদ অনেক হয়েছে।আমি আর নিতে পারছিনা।আমি ওকে ভাই ডেকে এসেছি।
ওর সাথে আমার রোজ আর তোমার যে পরিত্র সম্পর্ক আমারও তাই।

হৃদ শুভ্রার কথা শুনে থমকে গেলো।শুভ্রা হৃদের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে ছুরি নিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,
—–তুমি যা ভাবছো তার কিছুই নয়।তুমি আমাকে আরো একবার ছোট করেছো হৃদ।আমি বন্ধুদের সাথেই দেখা করতে যাচ্ছিলাম।পথে আমি অরিত্রকে দেখতে পাই।তারপর ওর সাথে কথা বলার জন্য গাড়ি থেকে নেমে ওর পিছু নেই আর রোজের ব্যাপারে কথা বলি।

শেষের কথা শুনে হৃদ আবারো রেগে গেলো।চোখ ছোট ছোট করে দাতে দাত চেপে বললো,
—–ওই স্কাউন্ডারের সাথে তুই রোজের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিস? কি বলতে গিয়েছিস হ্যা?রোজের লাইফে ব্যাক করতে? নাহলে আমার বোন মরে যাবে।রোজ ওর জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে?

——আমি এসব কেন বলবো?আমি ওকে কক্সবাজার দেখেছিলাম।ও রোজকে ফলো করছিলো ইভেন এখনো ও রোজের ব্যাপারে খোজখবর নেয় তাই বলতে গিয়েছিলাম কেন করছে এসব?ওর মোটিভ জানতে গিয়েছিলাম।

—–ওই কুকুরের বাচ্চা এখনো রোজের পেছনে পড়ে আছে?ওকে এবার আর আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবেনা।
আর তুই..কক্সবাজারে ওকে দেখেছিস?আমাকে জানাস নি?কেন বলিস নি তুই হ্যা?

—–হৃদ কারণ আমি ব্যাপারটা শিওর হতে চেয়েছিলাম।আমার একটা ডাউট ছিলো।আর আজকে কথা বলে সেটা দূর হয়েছে।অরিত্র আজো রোজকে ভালোবাসে।

হৃদ তাচ্ছিল্য করে বললো,
—–এটা তোকে অরিত্র বলেছে?

শুভ্রা মাথা নিচু করে ফেললো।তারপর বললো,
—–না তবে আমি বুঝেছি।আমি ওর চোখ দেখে বুঝেছি।

—–বাহ!!আজকাল মানুষের চোখ দেখে এতোকিছু বুঝতে পারে শুভ্রা!ইন্টারেস্টিং।

শুভ্রা হৃদের দিকে তাকাতেই হৃদ বললো,
—–তুই ওর সাথে আজকের পর আর কথা বলবিনা।আর না এই ব্যাপারে কোনো ইন্টারফেয়ার করবি।

—–আমি সত্যি বলছি অরিত্র কিছু একটা লুকাচ্ছে।ও এখনো রোজকে ভালোবাসে।

—–হ্যা আর এটা তুই ওর চোখ দেখে বুঝেছিস!
হৃদ শুভ্রার দুবাহু চেপে ধরে কাছে এনে বললো,
—–নে দেখ,,আমার চোখ দেখ।দেখ কিছু বুঝতে পারছিস কিনা।
শুভ্রা হৃদের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।

হৃদ ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–কি বুঝতে পারলিনা তো?পারবিওনা।তুই যদি চোখের ভাষা বুঝতে পারতি তাহলে আমার চোখের ভাষা কেন বুঝিস না।কেন বুঝিস না তুই আমাকে কষ্ট দিচ্ছিস।কেন বুঝতে পারছিস না আমি তোকে কতটা ভালোবাসি?যদি বুঝতে পারতি তাহলে তুই কিছুতেই আমার সাথে এতবড় গেম খেলতে পারতিনা।আমাকে না ভালোবেসে থাকতে পারতিনা,কিছুতেই না।
ভালোবাসার কাছে তোর রাগ, অভিমান, ক্ষোভ হেরে যেতো।

শুভ্রা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো হৃদের থেকে।তারপর বললো,
—–আমি তোমার চোখের ভাষা বুঝতে পারি কিন্তু তুমিই আমাকে বুঝতে পারোনি।আমি কি চাই সেটা তুমি কখনো বুঝেছো?বুঝার চেষ্টা করেছো?সবসময় নিজের মতো সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছো।
হ্যা আমি ভালোবাসি,,ভালোবাসি তোমাকে।আজো ভালোবাসি আগামীতেও বাসবো কিন্তু অতীত আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনা না আমার জীবনের কেটে যাওয়া ভুমিহীন সাতটি বছর।আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা আর না একসেপ্ট করতে পারবো।

হৃদ জোরপূর্বক মলিন হেসে বললো,
—–সব মেনে নিলাম।তুই যাতে খুশি।বাট আমি এটাই বলবো যে আমি তোর সাথে কোনো অন্যায় করিনি।

শুভ্রা রেগে গিয়ে হৃদের বুকে ধাক্কা মেরে বললো,
——অন্যায় করোনি?জন্মের পর থেকেই তোমার কাছে অবহেলিত হচ্ছি।ছোট থেকেই খেলার সাথী হিসেবে তোমাকেই চিনেছি,কিন্তু এর বদলে পেয়েছি অবহেলা,বকুনি আর মার।
তারপর যখন বুঝতে শিখেছি ১২বছর বয়স থেকে তোমাকে ভালোবেসেছি।কিন্তু কি পেয়েছি অপমান, অবহেলা, লাঞ্চনা,মার।
এগুলো অন্যায় নয়,,শুধু বলে দিতে ভালোবাসো না এসবের কি দরকার ছিলো?
এগুলো অন্যায় নয়?

শুভ্রা হৃদকে আবারো ধাক্কা দিলো।হৃদ কয়েকপা পিছিয়ে গেলো।তারপর বললো,
—–তুই তো জানিস কেন করেছি?

—–হ্যা জানি।তবে সেটা পুড়ে ছাই হয়ে যাবার পর জেনেছি।২২বছর বয়সে জেনেছি।
আমি তো সারাজীবন জেনে এসেছি হৃদ নামের ব্যাক্তিটি আমাকে একবিন্দুও ভালোবাসেনা,আমাকে সহ্য করতে পারেনা।এটাই জেনেছি,মেনেছি,কষ্ট পেয়েছি কিন্তু তুমি আজীবন ইনফ্যাক্ট বিদেশে গিয়েও এটা জেনেছো শুভ্রা নামের এক সহজ সরল বোকাসোকা মেয়ে আছে যে তোমাকে ভালোবাসে,তুমি বলতে পাগল।
আমি কি পেয়েছি?
এই যে দেখো রোজের অবস্থা।ওর পাশে সবাই আছে,ওর জন্য কত কি করছে।ও অনেকটা নরমাল হয়ে গেছে।কিন্তু আমি?আমার পাশে কে ছিলো?আমি দীর্ঘ ৭দিন ঘরবন্দী ছিলাম তারপর নিজের পাশে নিজেই থেকেছি।

হৃদ শুভ্রার দিকে এগিয়ে বললো,
—–তুই জানিস তুই কতটা অবুঝ ছিলি।তোকে দূরে রাখতেই এসব করেছি।

—–আমি কি দূরে ছিলাম?আমাকে দূরে রাখতে পেরেছিলে?

—–না হাজার চেষ্টা করেও পারিনি তাই তো একেবারে দূরে চলে গিয়েছিলাম।

—–বেশ করেছিলে।তাহলে কেন ফিরে এলে?
শুভ্রা কাদতে কাদতে বসে পড়ল।

—–না ফিরে এলে খুশি হতি?

শুভ্রা অভিমানে বলে ফেললো,
—–হ্যা,হ্যা।

হৃদ শুকনো হেসে বললো,
—–তোকে একটা কথা বলি,
তুই তখন অনেক ছোট ৩বছর বয়স,আমিও খুব বড় না মাত্র ৬বছর বয়স।মাম্মা বেষ্ট বিজনেস ওমেন অফ দ্যা ইয়ার এওয়ার্ড পেয়েছিলো।আমরা সবাই গিয়েছিলাম ওই প্রোগ্রামে।মাম্মা সেখানে ছোট্ট একটা বক্তব্য রেখেছিলো যার পুরোটা জুড়ে পাপা ছিলো,তার স্বপ্নের কথা ছিলো।আমার সবকিছু মনে নেই।তবে এর সারসংক্ষেপ ছিলো এই যে,
“মাম্মা অনেক অবহেলিত ছিলো কিন্তু তার চোখজুড়ে স্বপ্ন ছিলো।যেখানে সে ডানা মেলে উড়তে চেয়েছিলো আর সেটা পাপার জন্য সম্ভব হয়েছিলো।পাপা শুরু মাম্মার ভালোবাসার মানুষই ছিলো না,মাম্মার চোখে সবচেয়ে সম্মানিত পুরুষ ছিলো।”
আমি বুঝতে পেরেছিলাম সব মেয়ের একটা স্বপ্ন থাকে সংসারের বাইরেও একটা জগৎ চায়।স্বামী,বাবার পরিচয়ের বাইরেও একটা পরিচয় চায়।নিজের পরিচয়।তাই আমি চেয়েছিলাম তোর একটা নিজস্ব স্বপ্ন থাকুক।সেই স্বপ্নের জগৎ জুড়ে তোর বিচরণ থাকুক।লাভ ইজ দ্যা পার্ট অফ লাইফ।নট লাইফ।তুই লাইফে কিছু একটা কর।কিন্তু তুই এতটা পাগল হয়ে পড়েছিলিস যে ঘরকুনো হয়ে পড়েছিলি,,আমার ঘর তোর দুনিয়া ছিলো।৪০এর বেশি নাম্বার তোর আসতোই না।আর যত উল্টো পাল্টা আবদার।
এই যে সেদিনের পর থেকে তুই ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড কখনও হোস নি।নাচের জগতে এত নাম করেছিস,ড্রান্স স্কুল খোলেছিস,মডেলিং করছিস।এসব কিভাবে হলো?এগুলো তোকে তৃপ্তি দেয়না?
এমন নয় আমি তোকে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে দিয়েছি।আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষা করেছি।তোর পড়াশোনা শেষ হয়েছে,ফিরে এসেছি,বিয়ে করেছি।
মনে রাখিস আমি তোর জন্য সব ছেড়েছি কিন্তু তুই আমার জন্য তোর রাগ,অভিমান,ক্ষোভ ছাড়তে পারিস নি।
তোর জন্য এতকিছু করেও তোর চোখে অপরাধী হয়েই রইলাম।কি আর করা?

হৃদ কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বাইরে চলে গেলো।শুভ্রা ওভাবেই বসে আছে।হৃদের বলা কথাগুলো ভাবছে।

কিছুক্ষণ পর শুভ্রার ফোনে একটা মেসেজ এলো।শুভ্রা দেখলো হৃদের ভয়েস মেসেজ,,
“শুভ্রা তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য সরি।আসলে অরিত্রের সাথে তোকে ওভাবে কথা বলতে দেখে ভুল ভাবতে বাধ্য হয়েছিলাম।এর জন্য আমি লজ্জিত।পারলে ক্ষমা করে দিস।ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসছে তোকে বাসায় পৌছে দেবে।”

~~~~

শুভ্রা বাসায় ফিরে আর রুম থেকে সারাদিন বের হয়নি।খায়নি।রুমে শুয়ে শুয়ে হৃদের বলা কথা গুলো ভাবছে।
“ভালোবাসা ভালোবাসা করে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।পুরো দুনিয়া ভুলে গিয়েছিলাম।ভালোবাসার বাইরেও কিছু আছে ভুলেই গিয়েছিলাম।যে মানুষটার জন্য আমি দুনিয়া চিনেছি তাকেই কষ্ট দিচ্ছি?আমি ভুল করেছি।রাগ,জেদে অন্ধ হয়ে গিয়েছিস শুভ্রা।”
শুভ্রা ফোন বের করে হৃদকে ফোন করলো কিন্তু হৃদের ফোন বন্ধ।রাত হয়ে এসেছে কিন্তু বাড়িতে ফিরেনি।শুভ্রা হৃদের অফিসে ফোন করে জানতে পারলো অফিসে আজ যায়নি।

শুভ্রা ভয় পেয়ে গেলো।ওর হৃদের জন্য অনেক টেনশন হচ্ছে।শুভ্রা আবারো হৃদকে ফোন করছে কিন্তু অফ বলছে।
শুভ্রা তাড়াতাড়ি বাড়ির সবাইকে হৃদের বাড়িতে না ফেরার কথা জানালো।অফিসে যায়নি এটাও জানালো।
সবাই শুভ্রার মতো অস্থির হয়ে পড়েছে।বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছে কিন্তু হৃদের খবর কোথাও পাচ্ছেনা।

রাত১টা।
সবাই এখনো হৃদের জন্য অপেক্ষা করছে।শুভ্রা কেদে কেদে চোখ ভাসাচ্ছে হৃদের মাম্মা শুভ্রাকে প্রশ্ন করলো,
—–তোর সাথে কি হৃদের কিছু হয়েছে?

শুভ্রা চোখের পানি মুছে কাচুমাচু করে বললো,
—–সকালে একটু ঝগড়া হয়েছিলো।

হৃদের মাম্মা বুঝতে পারলো হৃদ রাগ করেই বাড়ি ফিরছেনা।রাগ কেটে গেলে বাড়িতে ফিরে আসবে।কিন্তু তবুও নিজেকে শান্ত করতে পারছেনা।এতো রাত হয়ে গেছে যদি কোনো বিপদ হয়।
অপরদিকে শুভ্রা কেদেই যাচ্ছে।
ওর ভয় হচ্ছে।হৃদ শেষের কথাগুলো যেভাবে বলেছিলো,কেন জানি ওর মনে কু ডাকছে।

শুভ্রা পিটপিট করে চোখ খোলে দেখে সকাল হয়ে গেছে।সোফায় মাথা হেলিয়ে শুয়ে আছে।শুভ্রা কখন ঘুমিয়ে গেছে হুশ নেই।শুভ্রা উঠে বসে পড়ল।ওর ব্রেইন ওকে একটা কথাই জানান দিচ্ছে সেটা হৃদ।
শুভ্রা হৃদের নাম ধরে ডেকে উঠলো।
—–হৃদ!! হৃদ!!

শুভ্রার মাম্মা শুভ্রার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
—–কি হয়েছে?

শুভ্রা বিচলিত হয়ে বললো,
—–হৃদ ফিরেছে মাম্মা?

শুভ্রার মাম্মা মাথা নিচু করে বললো,
—–না,,তোর বাবাই,পাপা হৃদকে খোজতে গেছে।

শুভ্রা আবারো কেদে দিলো।
—–হৃদ তুমি কোথায় চলে গেলে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here