হৃদয়ের সম্পর্ক পর্ব ১

#হৃদয়ের_সম্পর্ক (পর্ব ০১)
#গল্পের_পাখি (শেফা)
·
·
·
তুমি কি আমাল মাম্মাম হবে?
.
.
নদীর ধারে বসে ছিলাম একা নিজের মনকে একটু সময় দেওয়ার জন্য। কতগুলো বছর শুধু সবার মনের খেয়ালই রেখে গেছি, কিন্তু নিজেকে কখনোও সময় দেয়নি আমি। হঠাৎ ওড়নাতে টান পরায় পিছনে ঘুরে দেখি একটা চার বছরের বাচ্চা আমার ওড়না ধরে টানছে।
.
সে দেখতে খুবই কিউট, চুল গুলো সোনালী রং এর কিন্তু কোঁকড়া। চোখ দুটো ভাসা ভাসা, যেন এখনই টুপ করে চোখ থেকে পানি পরবে। তাকে পরখ করে ভালো করে দেখার আগেই আমাকে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে জাপটে ধরলো। বললাম,
কে তুমি পিচ্চি বাবু?
.
আমি আয়াত….
.
তুমি এখানে একা একা কি করছো ? কার সাথে এসেছো বাবু ?
.
পাপাল থাতে, আমাকে বকা দিথে পাপায়…
.
ওলে বাব্বাহ, তো একা কেন এখানে তুমি ?
.
আমি দোওলে তলে আতথি, আল খুঁজে পাবে না ।
.
না বাবা ওমন করতে নেই, তোমাকে খুঁজছে হয়তো ! চলো দেখি তোমাকে দিয়ে আসছি। ( নিজের থেকে ছাড়িয়ে)
.
না না না না না, পাপায় বকে…(চোখ থেকে বড় বড় দুটো মুক্তো দানা ফেলে)
.
না বাবা তোমাকে যেতে হবে, নাহলে তোমার মাম্মাম কাঁদবে তো !
.
মাম্মাম তোহ নাই, পাপায় বলে।
.
নাই ! আচ্ছা তোমার পাপার কাছেই না হয় চলো। নাহলে তোমার পাপা মনে ব্যাথা পাবে তো।
.
উমম ওক্কে তলো, তুমি কিন্তু পাপায় কে বলে দিও যেন আল না বকে আমাকে। (নাক থেকে শর্দি টেনে)
.
আচ্ছা,,,,, (চোখ মুখ মুছে দিয়ে হাত ধরে উঠালাম)
.
.
আমার হাত ধরে লাফাতে লাফতে পথের ধারে আসলো, এতো ক্ষনে আমিও তাকে দেখলাম। সাদা ফর্সা গায়ের রং, মায়াবি চেহারার অধিকারি সুদর্শন একটা বাচ্চা। বড় হলে দেখতে খুব হেন্ডসাম হবে। মাথায় হাত দিয়ে ওর চুল গুলো এলোমেলো করে দিলাম। বিনিময়ে আমাকে একগাল হাসি দিল, কিন্তু ওর চোখ দুটো বললো, এতো মমতার হাত আমার মাথায় আগে কেউ কখনো রাখেনি।
.
হঠাৎ কি হলো আমার হাত ছেরে পিছনে গিয়ে পা দুটো চেপে ধরে লুকালো। বুঝলাম সে হয়তো কিছু থেকে আড়াল হতে চাই, কি থেকে তা দেখার জন্য সামনে তাকাতেই দেখি এক পুলিশ ইউনিফর্ম পরা ইন্সপেক্টর। তার চেহারায় ভয় পাওয়ার মতো কিছু দেখলাম না। লম্বা চওড়া ফিগারের এক সুদর্শন পুরুষ। আমার সামনে এসে দাড়িয়ে মাথার ক্যাপটা খুলে হাতে নিল। দেখলাম তার চুলও কোঁকড়া তবে কালো। ভারি গলায় বললো,
— আয়াত সামনে এসো।
.
— না পাপায় পঁতা ।
.
— তুমি নিজে থেকে সামনে আসবে নাকি আমি তোমাকে সামনে আনবো ?
.
মুখে আঙ্গুল পুরে ধীর পায়ে সামনে আসলো, আর আমার হাত চেপে ধরলো। আমিও কাহিনী বুঝলাম, এটা এই আয়াতের বাবা। আমি ওনাকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলার আগেই আয়াতের অন্য হাত ধরে টানতে লাগলো তার বাবা, আর আয়াতও আমার হাত ছারবে না বলে কান্না করতে লাগলো।
.
কি বিরক্তি কর বিষয়। আমি এবার মুখ খুললাম,
— এভাবে টানাটানি না করে বাচ্চা টাকে বুঝায়ে নিয়ে গেলেই তো হতো।
.
মুহূর্তে তার সাদা মুখ লাল হয়ে গেল, ভ্রু দুটো এমন ভাবে কুঁচকালো যেন কোনো বলিষ্ঠ শিকারীর ধনুক। আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি শিশু পাচারকারী। সে শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় বললো,
— বাড়িতে গিয়ে বুঝায়ে দিবো।
.
— আশ্চর্য ছোট একটা বাচ্চার সাথে কেউ এমন করে ?( একটু জোর গলায় বললাম)
.
আমার কথায় তার কুঁচকানো ভ্রু সোজা হয়ে গেল। সে বললো,
— আয়াত, আমাকে না বলে এভাবে দৌড়ে আসা তোমার ঠিক হয়নি, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় যেতে হবে, চলো।
.
তার শান্ত কথায় আয়াতের কান্না থেমে গেল, আমার দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে কিছু ক্ষন তাকায়ে আমার হাত টা ছেড়ে দিলো। আর মাথা নিচু করে বাবার কথায় সম্মতি জানালো। ওর বাবা আমার দিকে একবার তাকিয়ে ওর হাত ধরে যাওয়ার জন্য পিছন ঘুরতেই, খুব দ্রুত আয়াত তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমাকে জাপটে ধরলো, আর কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— তুমি কি আমাল মাম্মাম হবে ?
.
.
ওর কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। ইন্সপেক্টর সাহেব কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে আয়াত কে আমার থেকে ছাড়িয়ে ডিরেক্ট কোলে তুলে নিলো এবং হাটা শুরু করলো। আর আয়াত তার বাবার কাঁধে মাথা রেখে আমাকে অপলক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। বিষয়টা এতো দ্রুত হলো যে আমার মস্তিষ্ক কিছু ভাবার সময়টুুকুও পেল না।
.
ফিরে আসলাম নদীর ধারে, সন্ধ্যার লালিমায় আমার দশদিক রক্তিম হয়ে ফুটছে। নদীর পানি গুলোতে সূর্যের নিভে যাওয়া আলো পরে জলন্ত লাভার মতো লাগছে।
.
মনে মনে বললাম, যদি আমার মিসক্যারেজ না হতো তাহলে আমার ও আয়াতের বয়সি একটা দুষ্টু সন্তান থাকতো।
·
·
·
চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here