#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_১২
লেখনীতেঃ ভূমি
কেঁটে গেল চার চারটা দিন।অস্থিরতা শব্দটা সাংঘাতিক।আর সেই অস্থিরতাটা যদি সৃষ্টি হয় সদ্য অনুভূতি জম্মানো কোন এক লোকের জন্য তাহলে বোধ হয় আরো সাংঘাতিক।অনুভূতিটা না যায় প্রকাশ করা আর না যায় বুঝানো।অদ্রিজা তপ্তশ্বাস ফেলল।সত্যিই কি রক্তিমকে ভালো টালো বেসে ফেলেছে সে?বুঝে উঠল না।তবে সেই মানুষটিকে দেখার জন্য ছটফট করে উঠল মন।বুকের ভেতর চাপা অস্থিরতাটা জ্বলন্ত হয়ে বেদনায় পরিণত হলে মুহুর্তেই।যে কয়দিন রক্তিমকে চেনে সে কয়দিনে রক্তিমকে দেখেনি এমন কোন দিন ছিল না।কিন্তু এই চারদিন একবারও দেখা হয়নি রক্তিমের সাথে তার।ভার্সিটি আসা যাওয়ার পথে রাস্তার এপাশ ওপাশ এত অস্থির ভাবে তাকিয়ে থেকেও বিশেষ কোন লাভ হয় নি তার।রক্তিমকে কোথাও দেখতে পায় নি সে।সকালের আকাশে সদ্য উঠা সূর্যের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল অদ্রিজা।নিজের ভেতরের অস্থিরতাটাকে না মানাতে পেরেই কল দিল রক্তিমের নাম্বারে।রক্তিম কল রিসিভড করল না।পরপর পাঁচবার কল দেওয়ার পর কল রিসিভড হলো।অদ্রিজা অস্থিরতায় হাঁসফাস করে উঠল।কি বলবে বুঝে না উঠেই হাত কচালাতে লাগল। এই শীতের সকালেও কপাল ঘেমে উঠল অজানা অস্বস্তিতে।কয়েকবার সরু শ্বাস ফেলে দুই এক মিনিট পরও যখন কিছু বলতে পারল না তখন ওপাশের মানুষটা ঘুমালো কন্ঠে শুধাল,
‘ কেঁটে দিব?’
অদ্রিজা চকচকে চোখে তাকাল।এবারও বুঝে উঠল না কি বলবে।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকেই কপালের ঘামটা হাতের তালুতে মুঁছে নিয়েই জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাল।জানালার গ্রিল হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতেই কাঁপা গলায় বলল,
‘ ন্ না।’
রক্তিম বোধ হয় হাসল।মৃদু গলায় বলে উঠল,
‘ তাহলে বলুন।’
অদ্রিজা থমকে গেল।কি বলবে?কোন কথা কি আদৌ বলার আছে?যে যুবকটিকে এতদিন ঘৃণা দিয়ে এসেছে সেই যুবকটির সাথে কি হঠাৎ করেই প্রণয়ের কাব্য শুরু করা যায় নাকি?অদ্রিজা সেভাবেই চুপ রইল।ওপাশের মানুষটার পরিষ্কার কন্ঠ ভেসে আসল এবার,
‘ রাখছি অদ্রিজা।’
অদ্রিজা বোকা বোকা চাহনিতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইল
রক্তিম কলটা কেঁটে দিয়েছে। তৎক্ষনাৎ তীব্র বেদনায় নুঁইয়ে গেল বিশ বছর বয়সী যুবতী মনটা।রক্তিম নামক পুরুষটির উপর অভিমানটা গিয়ে জড়ো হলো মনের আনাচে কানাচে।চোখজোড়া টলমলে হয়ে উঠল মুহুর্তেই।ঠোঁট উল্টে এদিক ওদিক তাকাতেই মনের ভেতর উঁকি দিল রক্তিমের সাথে কথা বলার অদম্য জেদ।মোবাইল হাতে নিয়ে আবারও কল লাগাল একই নাম্বারে।ওপাশের ব্যাক্তিটা এবার কল রিসিভড করতে দেরি করল না।বিরক্তি নিয়ে ঘুমালো কন্ঠে বলল,
‘ কি সমস্যা অদ্রিজা?ঘুমের মধ্যে বারবার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন কেন?’
অদ্রিজা চুপ রইল।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ ওহ।ঘুমোচ্ছেন?’
‘ ঘুমোচ্ছি তা বুঝেননি নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছেন অদ্রিজা?’
অদ্রিজা থমমত খেয়ে গেল।কাঁপা কন্ঠে বলল,
‘ ন্ না, ভেবেছিলাম এখনও আপনি ঘুমোন না।তাই।কিন্তু এখন তো দেখছি দিব্যি ঘুমান।’
ওপাশের মানুষটা আওয়াজ করে হেসে উঠল।অদ্রিজা কল্পনা করল রক্তিম নামক যুবকটির চমৎকার হাসিটা।ট্যারাব্যাকা দাঁতগুলোর দৃশমান হওয়া।চমৎকার হাসিতে সেই রক্তিম কল্পনায় ভেসে উঠতেই কেঁশে উঠল অদ্রিজা।রক্তিম বলল,
‘ আপনি নামক অসুখ থেকে মুক্তি পেয়েছি বলে কথা।তাছাড়া ড্রিংক করা আর সুইটহার্টের আদরের সুফল ও বলতে পারেন!’
অদ্রিজার মুখচোখ হঠাৎ এই কঠিন হয়ে উঠল।কঠিন কন্ঠে বলল,
‘ ছিঃ!আবার কোন মেয়েকে প্রেমিকা বানালেন? কোন মেয়ের সাথে সময় কাঁটিয়েছেন? ড্রিংক করেছেন? আবার গর্বের সাথে বলছেন ও? ‘
‘ তো?’
অদ্রিজা চুপ থাকল।মুখচোখ লাল করে রাস্তায় ছুটে চলা গাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।রক্তিম আবারও বলল,
‘ আপনি আমায় ভালো টালো বাসতে শুরু করে দেন নি তো অদ্রিজা?’
অদ্রিজা আগের মতোই দৃঢ় গলায় শুনাল,
‘ আপনাকে?আপনাকে ভালোবাসা যায় নাকি রক্তিম?’
রক্তিম পিচেল গলায় বলল,
‘ যারা ভালোবেসেছে তাদের থেকেই জানতে হবে।বলুন?’
অদ্রিজা রাগে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল।রক্তিমের সাথে কথা বলার এতক্ষনকার ইচ্ছেগুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ভেঙ্গে পড়ল মুহুর্তেই।কলটা কেঁটেই রাগে ফোসফাঁস করে বাইরে তাকাল।রক্তিমের প্রতি জম্ম নিল চরম রাগ আর ক্ষোভ।মন থেকে বলে উঠল মুহুর্তেই, ” লোকটা খারাপ।পৃথিবীর সবথেকে খারাপ লোক। না তাকে ভালোবাসা যায় আর না সে কোনদিন কাউকে ভালোবাসতে পারবে অদ্রিজা।” কথাগুলো ভেবেই ছোট্টশ্বাস ফেলল অদ্রিজা।পেঁছন থেকে অদ্রিজার মা বলে উঠল,
‘ অদ্রি?কার সাথে কথা বলছিলি?ভার্সিটি যাবি কি?’
অদ্রিজা হঠাৎ চমকে উঠল।পেঁছন ফিরে চকচকে চাহনিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ত্ তুমি কখন আসলে আম্মু?’
অদ্রিজার মা মুচকি হাসল। হাতে একটা বড় লিস্ট করা কাগজ এনেই অদ্রিজাকে দেখিয়ে বলল,
‘ মাত্র এলাম।দেখ তো বাজারের লিস্টটা ঠিক আছে কিনা।পাশে কি কি রান্না হবে তাও লেখা আছে।দেখ তো জামাইয়ের পছন্দের খাবার গুলো আছে কিনা।আর কিছু থাকলে বল।’
অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
‘ মানে?এই লিস্ট?খাবার? কিছুই তো বুঝলাম না আম্মু।’
অদ্রিজার আম্মু মিষ্টি হাসল।মেয়ের বিছানাটা গুঁছিয়ে নিতে নিতেই বললেন,
‘ তোর বিয়েটা এমনভাবে হুট করে হয়েছে কোন আয়োজনই হয়নি অদ্রি।তোদের বিয়ের আয়োজনটা বড় করে করতে পারব কিনা জানা নেই তবে জামাইকে তো একবেলাও খাওয়ানো হলো না।তাই ভাবলাম একদিন ভালোভাবে জামাইয়ের সব পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবো।আর তুই ও তো এই এক কয়দিন আছিস।ভালোই হবে বল?’
অদ্রিজা আনমনে মাথা নাড়াল।মায়ের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসেই লিস্টটা হাতে নিল।ভালোভাবে দেখে নিতে নিতেই বেরিয়ে এল রুম থেকে।
.
ভার্সিটির মাঠে উজ্জ্বল চকচকে রোদ।অদ্রিজা নেহা সহ আরো দুই তিনজন যুবতী মাঠের বামপাশটায় গাছের ছায়ায় বসা।অদ্রিজা সরু চাহনিতে এপাশ ওপাশ তাকাতেই গেইট পেরিয়ে ভার্সিটিতে ঢোকা দিহানকে চোখে পড়ল। পাশ ফিরে নেহার দিকে তাকাতেই নেহাকেও সেদিক পানে তাকিয়ে থাকতে দেখল অদ্রিজা।নেহার দিকে ফিরেই মুচকি হাসল।ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ এখনো বলিসনি তুই যে দিহানকে ভালোবাসিস?’
নেহা হকচকিয়ে পাশ ফিরে চাইল।দাঁত বের করে খিলখিলিয়ে হেসেই বলল,
‘ দূর!দিহান শুধু ক্রাশ।আর কিছু না।আর রোজই তো কত শত ক্রাশ খাই আমি বল দ্রিজা।সে আর এমন কি?বল।’
অদ্রিজা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল।কনুই দিয়ে নেহার পেটে ঘুষি দিয়ে মুখে দুষ্টু হাসি ঝুলাল। বলল,
‘ তাই নাকি?’
নেহা চোখ টিপল।ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
‘ অবশ্যই!দিহান কি হট আর হ্যান্ডসাম দেখেছিস?সো ক্রাশ না খেয়ে উপায় আছে বল?’
অদ্রিজা হাসল।বলল,
‘ ওহ।ওহ।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম সেইদিন হসপিটালর এক রূপবতী কন্যা কান্না করতে করতে নুঁইয়ে পড়েছিল।চোখমুখ লাল করে কান্না করতে করতে বলেছিল,” দ্রিজা?আমি দিহানকে ছাড়া বাঁচব না।দিহান ঠিক হয়ে যাবে তো?” কে বলেছিল শুনি?তোর ভূত?’
নেহা চোখ ফিরিয়ে একবার অদ্রিজা তো একবার দিহানের দিকে তাকাল।মুখচোখ লজ্জ্বায় লাল করে ফেলতেই অদ্রিজাও মুচকি হাসল।ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ কবে থেকে লজ্জ্বাবতী হলি?’
নেহা ঠোঁট টিপে হাসল।বুকের বা পাশে হাত রেখে অদ্রিজার থেকেও নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ঐ ছেলেটা এত্ত কেন জোস দোস্ত?তারে দেখলেই হৃদয়ের এইখানে লাগে ।হৃদয়ের ভেতর ধড়পড় শুরু হয়ে যায় আমার।কথা আসে না মুখে।তার সাথে কথা বলার এত ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও আমি তার সামনে গিয়ে দুই সেকেন্ডের বেশি কথা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি না।কি এক যন্ত্রনা বল তো।’
অদ্রিজা মৃদু হাসল।নেহা বুকের বা পাশে হাত রেখে সেভাবেই তাকিয়ে রইল দিহানের দিকে।কয়েক সেকেন্ড পর বসা থেকে উঠে পড়েই এগিয়ে গেল দিহানের দিকে। দিহানের পেঁছনে গিয়ে দাঁড়িয়েই মৃদু গলায় বলে উঠল,
‘ দিহান?’
দিহান পেঁছন ফিরে চাইল।নেহাকে দেখেই মুচকি হাসল।নেহার পেঁছনে তাকিয়ে একনজর মাঠে বসে থাকা অদ্রিজাকেও দেখে নিল।নেহার উদ্দেশ্যেই বলল,
‘ বল নেহা।’
নেহা মিষ্টি হাসল।মুচকি হেসেই বলল,
‘ কেমন আছিস দিহান?’
‘ হু, এই তো ভালো।তুই?’
নেহা উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল,
‘ আমিও ভালো।তোর ক্লাস শেষ? ‘
দিহান এবার হাসল।বলল,
‘ হ্যাঁ শেষ।আসি?’
নেহা কিছু বলল না।মৃদু হেসে মাথা নাড়াল।দিহান দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করল।আর নেহা সেদিক পানেই তাকিয়ে থাকল।
.
অদ্রিজা ভার্সিটির ক্যান্টিনেই বসে ছিল।পাশে নেহাও বসা ছিল।হঠাৎ নিজেদের সামনের চেয়ারটাতে এসে বসল একটা মেয়ে। সুন্দর ধবধবে শরীর।চোখমুখের মায়ায় যে কোন ছেলেই আকৃষ্ট হবে। লম্বা চুলগুলো খোলা রাখা।মেয়েটাকে দুয়েক নজর তাকিয়ে দেখেই চিনতে পারল অদ্রিজা।মেয়েটা সেদিনকার মেয়েটাই।তানিশা।অদ্রিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে তাকাতেই তানিশা বলে উঠল,
‘ তুমিই অদ্রিজা।তাই তো?’
অদ্রিজা দ্বিধান্বিত চাহনিতে তাকাল।মেকি হেসে বলল,
‘ হ্যাঁ, আমিই অদ্রিজা।’
তানিশা মুচকি হাসল।বলল,
‘ আমি তানিশা। রক্তিমের প্রাক্তনও ধরতে পারো আবার নাও ধরতে পারো কারণ ও আমায় কোনদিন ভালোবাসে স্বীকারই করেনি।বলেও নি ভালোবাসে।বোধ হয় আমারই ভুল ছিল। শুরু থেকেই।’
অদ্রিজা ছোট ছোট চোখে তাকাল।তানিশা আবার ও বলল,
‘ রক্তিমের কে হও তুমি?রক্তিমের সাথে সেদিন দেখলাম।আবার নদীর পাড়েও দেখলাম তোমার সাথে।তুমি ওর বর্তমান প্রেমিকা?’
অদ্রিজা ইতস্থত চাহনিতে তানিশা আর নেহার দিকে তাকাল।অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ জ্বী?’
তানিশা হাসল।বলল,
‘ রক্তিমের প্রেজেন্ট গার্লফ্রেন্ড তুমিই?’
অদ্রিজা কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকল।তারপর সোজা কন্ঠে বলল,
‘ না।গার্লফ্রেন্ড নই আমি উনার।’
‘ তাহলে?কে হও তুমি ওর?’
অদ্রিজা কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো।রক্তিমের কি হয় সে?এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে বুঝে উঠল না সে।সরু চাহনিতে তানিশার দিকে তাকাতেই তানিশা আবারও বলল,
‘ প্লিজ রক্তিম নামক বিষাক্ত মানুষটার ফাঁদে পা দিও না অদ্রিজা।পরে ভুগবে। রক্তিমের কাজই হলো মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলা!দেখবে তোমার অনুভূতি নিয়েও খেলবে।প্লিজ ওর সাথে জড়িয়ো না।একেবারেই না।’
কয়েক সেকেন্ড থেমে তানিশা আবারও বলল,
‘ আমি আর রিমু বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম অদ্রিজা।এই ভার্সিটিতেই পড়তাম।তারপর রক্তিমের সাথে আলাপ হলো।দুইজন বান্ধবীই তখন রক্তিমের প্রেমে আপ্লুত।রক্তিম কোনদিন আমাদের দুইজনের কাউকেই “ভালোবাসি” বলে নি। তবুও আমরা কি পাগল বলো তো।আমরা সেই ছেলেটার প্রেমে হাবুডুুবু খেয়ে নিজেদের অস্তিত্বটাই হারিয়ে ফেললাম।দুইজন বান্ধবীর সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল।কিন্তু রক্তিম?সে নাকি আমাদের কাউকেই ভালোবাসেনি।’
অদ্রিজা তপ্তশ্বাস ফেলল।অগোছাল মনটাকে গুঁছিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলল,
‘ আ্ আপু?আপনি কিংবা রিমু, আপনাদের সাথে শারিরীক সম্পর্ক ছিল রক্তিমের?ছিল?’
তানিশা চকচকে তাকাল।তাচ্ছিল্য নিয়ে হেসে বলল,
‘ যে মানসিক ভাবেই একটা মানুষকে ভেঙ্গে চূড়মার করে দিতে পারে তার কি শারিরীক ভাবে সুযোগ নিতে হয় অদ্রিজা?রক্তিম কোনদিন আমাদের হাতও স্পর্ষ করেনি।তাতে কি হবে? মনের দিক দিয়েই আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে ও।এই যে আমার কালকে হলুদ? তবুও আমি তাকে ভুলতে পারছি না।তাকেই ফলো করছি।তাকেই আড়াল থেকে ভালোবেসে চলেছি।তুমিও যাতে সেই কঠিন কষ্টটা ফেইস না করো তাই সাবধান করতে আসলাম। রক্তিম নামক মানুষটার ফাঁদে পা দিও না অদ্রিজা।’
অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আর এক মুহুর্তও না বসে উঠে দাঁড়াল।মৃদু গলায় বলল,
‘ ভবিষ্যৎ এবং বিবাহিত জীবনের জন্য শুভকামনা আপু।আসছি।’
কথাটা বলেই উল্টোদিক ফিরে পা বাড়াল অদ্রিজা।পেঁছন পেঁছন হুড়মুড় করে দৌড় লাগাল নেহাও।
#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_১৩
লেখনীতেঃভূমি
অদ্রিজার বাড়ি থেকে ভার্সিটির দূরত্বটা পনেরো বিশ মিনিটের।অদ্রিজা হেঁটেই বাড়ি ফিরছিল।পড়ন্ত বিকালের সব ক্লান্তি এসে ভর করল যেন তার মধ্যে। সরু চাহনিতে বার কয়েক দেখে নিল রাস্তার পাশের খোলা পার্কটা।সবুজ ঘাসের চওড়া মাঠ।মাঠের চারপাশে ইট সিমেন্টের বাঁধা কয়েকটা বসার জায়গা, আর মাঝখানে কয়েকটা লোহার দোলনা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দোলনা গুলোতেই উচ্ছ্বাসের সাথে চড়ছে। অদ্রিজা মুচকি হাসল।পার্কের পাশে আইসক্রিমওয়ালা, বাদাওয়ালা দেখে লোভ সামলানো গেল না।এক হাতে আইসক্রিম আরেক হাতে বাদাম নিয়ে আরামে গিয়ে বসল মাঠের একপাশে।মাঠের মাঝখানে খেলতে থাকা ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়েই আইসক্রিম খেতে লাগল।অন্যদিনের তুলনায় আজ ছেলে মেয়ের সংখ্যা একটু বেশিই মাঠে।সাথে তাদের মা বাবা নেই।একা একাই খেলছে।অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকাল ওদের কোন অভিভাবককে দেখতে পাবে মনে করে।কিন্তু না।দেখতে পেল না।পাশ ফিরে লাল জামা পরা ছোট্ট মেয়েটাকে ডাক দিতেই মেয়েটা এসে দাঁড়াল তার সামনে।মুখে এক ঝুলি হাসি।অদ্রিজা খিলখিলিয়ে হাসল মেয়েটার হাসি দেখে।মৃদু গলায় বলল,
‘ তোমার নাম কি পিচ্চি?’
মেয়েটা হাসল।ছোট্ট ছটফটে দেহটা সেই হাসিতে উচ্ছ্বলিত হয়ে উঠল যেন।অদ্রিজার পাশে বসে পড়েই তার ছোট্ট পা জোড়া দুলাতে দুলাতে বলল,
‘ রিয়াসা।তোমার?’
অদ্রিজা মিষ্টি হাসল। বাদামের ঠোংগাটা মেলে ধরেই মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিল।ইশারা করল খেতে। মেয়েটা মিষ্টি হেসে হাত দিয়ে এগিয়ে নিতেই অদ্রিজা বলল,
‘ আমার নাম অদ্রিজা।’
মেয়েটা চোখ বড় বড় করে চাইল।অদ্রিজাকে সরু চাহনিতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করতে লাগল মুহৃর্তেই। মেয়েটার এমন কার্যকলাপের কিছুই বুঝল না অদ্রিজা।ভ্রু নাঁচিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটা হাসল।বলল,
‘ তোমার নাম অদ্রিজা?আমার ভাইয়ার প্রেমিকার নামও অদ্রিজা।অদ্রিজা…’
মেয়েটা পুরো কথাটা শেষ করতে পারল না।পেঁছন থেকে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠটা ভেসে উঠল,
‘ রিয়া কি করছো তুমি এইখানে?তোমায় না বলেছিলাম অপরিচিত কারো থেকে কিছু না খেতে।’
ছোট্ট মেয়েটা চকচকে চাহনিতে পেঁছন ফিরে চাইল। অদ্রিজাও অবাক হলো।পরিচিত কন্ঠস্বরটা শুনতে পেয়েই বিস্ময়ে কপাল কুঁচকে আসল।দ্রুত পেঁছন ঘুরতেই কাঙ্খিত মানুষটাকে দেখতে পেয়েই চকচক করে উঠল চোখ জোড়া।খুশিতে সাদা ধবধবে গাল গোলাপি হয়ে উঠল।অস্পষ্ট কন্ঠেই বলল,
‘ আপ্ আপনি এখানে?’
অদ্রিজাকে দেখে রক্তিমও অবাক হলো।তবুও নিজের অবাক হওয়াটা প্রকাশ করল না সে।কপালে জমা ঘামগুলো হাতের তালুতে মুঁছে নিয়েই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
‘ আগে বলুন, আপনি এখানে?’
অদ্রিজা চুপ রইল।এই কয়দিন রক্তিমকে না দেখার আকাঙ্খা মিটিয়ে নিতে ব্যস্ত হলো।মুগ্ধ হয়ে অগোছাল রক্তিমের দিকে তাকিয়ে রইল।কালো রংয়ের টিশার্ট আর জিন্স পরনে।অগোছাল চুল। চোখগুলো যেন কিছু বলে উঠল।অদ্রিজা হা হয়ে তাকিয়ে থাকার মাঝেই পাশের ছোট্ট মেয়েটা গিয়ে জড়িয়ে ধরল রক্তিমকে।তার তুলতুলে ফুলো গালে হাসি ঝুলিয়ে বলল,
‘ এই আপুটার নামও অদ্রিজা।তোমার প্রেমিকার নাম।’
রক্তিম মুচকি হাসল।মেয়েটার তুলতুলে ফুলো গাল হাতজোড়া দিয়ে স্পর্ষ করে দিয়ে বাঁকা হাসল।অদ্রিজাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ধরো এই আপুটাই তোমার ভাইয়ার প্রেমিকা।কি করবে তাহলে?’
মেয়েটা একবার রক্তিম তো একবার অদ্রিজাকে দেখলো।অনেক্ষন ধরে দুইজনের দিকে তাকিয়ে কি ভাবল কে জানে।তবে অনেকক্ষন ভাবার পরই হুট করে দাঁত বের করে হাসল।রক্তিমকে মাথা নিচু করতে ইশারা করেই কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়াল।রক্তিম মাথা নিচু করতেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ তাহলে পার্ফেক্ট হবে ভাইয়া।’
রক্তিম হাসল।মেয়েটাকে ইশারা করে খেলতে যেতে বলেই পা এগিয়ে অদ্রিজার কাছে এসে দাঁড়াল।অদ্রিজাকে সেভাবেই তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ টিপে বলল,
‘ চোখ দিয়েই গিলে টিলে ফেলবেন নাকি?’
অদ্রিজা চোখ নামাল।এপাশ ওপাশ তাকিয়ে হাঁসফাঁস করে উঠল।রক্তিম আওয়াজ করে হেসে উঠল অদ্রিজার সেই দশা দেখে। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
‘ চোর ধরা পড়লে যে অবস্থা হয় আপনার অবস্থা অনেকটা তেমন দেখাচ্ছে অদ্রিজা।’
অদ্রিজা কিছু বলল না।এক নজর রক্তিমের দিকে তাকিয়েই বেঞ্চটায় বসে পড়ল আগের মতোই।বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতেই সামনের দিকে তাকাল।তৎক্ষনাৎ বোধ হলো নিজের পাশাপাশি কোন পুরুষের উপস্থিতি।পাশ ফিরে তীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকাতেই রক্তিম হাসল।অদ্রিজার হাতের ঠোংগাটা থেকে বাদাম নিয়েই খোসা ছাড়িয়ে মুখে ফুরল সে।মুচকি হেসে বলে উঠল,
‘ আপনি আমায় ফলো টলো করে এখানে চলে আসেননি তো অদ্রিজা?’
অদ্রিজা কড়া চাহনিতে তাকাল।চটজলদি স্পষ্ট জবাব দিল,
‘ আপনাকে ফলো করব কেন আমি?আজব!আমার বাড়ির রাস্তা এই পথেই।আপনি বোধ হয় জানেন না রক্তিম। ‘
রক্তিম মৃদু গলায় বলল,
‘ জানি।’
অদ্রিজা কোন উত্তর দিল না।রক্তিম বাঁকা হেসেই চোখ টিপে আবারও বলল,
‘ আপনাকে দেখে প্রেম প্রেম ভাব পাচ্ছে অদ্রিজা।আপনাকে আজ বেশ সুন্দরও লাগছে। আপনি আমার সুন্দরী প্রেমিকার মতো বেঞ্চে আমার পাশেই বসে আছেন দেখুন?তাহলে প্রেম প্রেম ভাব পাওয়া কি অপরাধ? ‘
অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপেই বলল,
‘ শুধু অপরাধ না বিশাল অপরাধ।আপনার সুইটহার্টকে রেখে এভাবে অন্য একজনকে দেখে আপনার প্রেম প্রেম ভাব পেতে পারে না।’
‘ উহ!কি যে বলেন।সুইটহার্টের প্রেমে আমি সে কবে থেকে ডুবে আছি।আপনার প্রতি প্রাথমিক লেভেলের একটা প্রেম জম্মাচ্ছে, সুইটহার্টের প্রতি আমার যেমন প্রেম তেমনটা নয় অদ্রি…জা!’
অদ্রিজা কপাল কুচকে তাকাল।রাগে সাদা ধবধবে গাল লাল হয়ে উঠল মুহুর্তেই।রক্তিমের করা অপমানে তীব্র আত্নসম্মান তড়তড় করে জেঁগে উঠল যেন।নাক চোখ লাল করেই রক্তিমের দিকে কড়া চাহনিতে তাকাল সে।সেভবেই কড়া গলায় বলল,
‘ তো? সুইটহার্টের প্রেমেই মজে থাকছেন না কেন রক্তিম?অন্য একজনের সাথে পার্কের বেঞ্চিতে বসে ফ্লার্টিং করছেন?আমার সাথে?’
রক্তিম বাঁকা হাসল।ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘ আপনি জ্বেলাস অদ্রিজা?রিয়েলি?’
অদ্রিজা নিরব চাহনিতেই পারল না রক্তিমকে ধ্বংস করে দিতে।চোখের জ্বলন্ত রাগ দিয়ে রক্তিম নামক যুবকটিকে ভস্ম করে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হলো না।রাগে হাঁসফাঁস করতে করতেই বলে উঠল,
‘ আপনাকে নিয়ে জ্বেলাস হওয়ার কিছুই নেই।’
‘তাই নাকি?’
অদ্রিজার স্পষ্ট জবাব,
‘ ইয়েস!’
রক্তিম আওয়াজ করে হেসে উঠল।সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হলো রক্তিমের ঝকঝক করা ট্যারাব্যাকা দাঁত। মুখে অদ্ভুত সৌন্দর্য সেই হাসির সাথে তাল মিলিয়ে নেশার ঘোরে ঠেলে দিল অদ্রিজাকে।অদ্রিজা মুগ্ধ চাহনি নিয়ে তাকিয়েই রইল সেই হাসিটার দিকে।রক্তিম সেই মুহুর্তেই বলে উঠল,
‘তাহলে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আমার হাসিটা দেখছেন কেন অদ্রিজা?তখনও দেখছিলেন আমায়।তাছাড়া কে জানে, আমাকে এখানে দেখেই হয়তো পার্কে এসে বসে পড়লেন। আমার সাথে কথা বলার লোভে অথবা আমাকে দেখার লোভে।হতেই পারে!বলুন?’
অদ্রিজা বিরক্ত হলো।মুখ চোখ কুঁচকে রক্তিমের দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ আপনার সাথে দেখা বা কথা হওয়াটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট রক্তিম।এছাড়া কিছুই নয়।আর শুনুন? আমি আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড নই।এটুকুও ইন্টারেস্টেড নই। সো জ্বেলাস হওয়ার প্রশ্নই আসছে না রক্তিম।’
রক্তিম মুচকি হাসল।ফিসফিসিয়ে অদ্রিজার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ মিথ্যে বললেন।আপনি ইন্টারেস্টেড!খুব করে ইন্টারেস্টেড আমার প্রতি।’
অদ্রিজা ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকাল রক্তিমের দিকে।বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েই বলে উঠল,
‘ নো, আ’ম নট ইন্টারেস্টেড রক্তিম।বাই।’
অদ্রিজা পা বাড়াতেই নিচ্ছিল।পেঁছন থেকে বাম হাতটা ঝাপটে শক্ত করে চেপে ধরল রক্তিম।শান্ত শীতল কন্ঠে বলল,
‘ স্বীকার তো করছেনই না উল্টো চলে যাচ্ছেন?’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল। বলল,
‘ তাতে কি?আপনার সুইটহার্ট প্রেমিকার কি অভাব আছে রক্তিম?আপনি একটা কল দিলেই যে কোন একজন চলে আসবে আপনাকে টাইম দিতে।’
রক্তিম হাসল।অদ্রিজার হাতটা একটান মেরে বসিয়ে দিল নিজের পাশে।চারপাশে একনজর তাকিয়ে নিয়েই লম্বা শ্বাস ফেলল।কড়া কন্ঠে বলে উঠল,
‘ পারফেক্ট ওয়াইফ হয়ে যাচ্ছেন আপনি অদ্রিজা।আমি আপনাকে ওয়াইফ হিসেবে মানতে পারব না। এমন বিহেভিয়ার আমার সাথে করবেন না।আমি আপনার পার্মানেন্ট হাজব্যান্ড নই অদ্রিজা।’
অদ্রিজা হতবিহ্বল চাহনিতে তাকিয়ে রইল রক্তিমের দিকে।এতক্ষন হেসে হেসে কথা বলা লোকটার হঠাৎ কঠিন রূপ দেখে থমকে গেল সে।শুকনো ঢোক গিলে বলল,
‘ মানে?’
রক্তিম আগের মতোই কঠিন কন্ঠে শুধাল,
‘ মানেটা আপনি জানেন।জেনেও বুঝতে না চাইলে আমার কিছু করার নেই।কিছুই করার নেই।’
অদ্রিজা এবারও কিছু বুঝে উঠল না।মিনমিনে চোখে তাকিয়ে রইল রক্তিমের দিকে।তখনই সামনে এসে দাঁড়াল ছোট্ট তুলতুলে দেহের ছোট্ট প্রাণগুলো।তুলতুলে ফুলো মুখ গুলোতে হাসি ফুটিয়েই সবাই একসাথেই বলে উঠল,
‘ এটাই তোমার প্রেমিকা?’
অদ্রিজা থতমত খেয়ে তাকাল ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলোর দিকে।রক্তিমের সাথে তার সম্পর্কের সমীকরণ কি সেটা সে নিজেই জানে না।বাচ্চাগুলোকে আর কি উত্তর দিবে।আর বাচ্চাগুলোকে কে বলল তার ব্যাপারে?অদ্রিজা চকচকে চাহনিতে তাকাল সবার দিকে।প্রায় ত্রিশ পয়ত্রিশ জন ছেলে মেয়ে।বয়স সাত থেকে বারো কিংবা তেরো বছর বয়সী হবে।রক্তিম এইমাত্র অদ্রিজার সাথে কঠিন কন্ঠে কথা বললেও এবার মিষ্টি হাসল।মুখে দুর্দান্ত হাসি ঝুলিয়েই ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ একদমই না। ‘
অদ্রিজা হতাশ হলো।রক্তিমের প্রতি আবারও জম্মালো রাগ, ক্ষোভ।চোখজোড়ায় জ্বলন্ত অগ্নির ন্যায় রাগ জ্বলজ্বল করতেই রক্তিম মুচকি হাসল। অদ্রিজার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপনি আমার প্রেমিকা? আমি আপনার প্রেমিক?’
অদ্রিজা কড়া কন্ঠে স্পষ্ট জবাব দিল,
‘ একদমই না।’
কথাটা বলেই পা এগিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে লাগল অদ্রিজা।বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে গুলোকে অতিক্রম করে যাওয়ার পথেই তারা আঁকড়ে ধরল তার হাত জোড়া।এলোমেলো বাচ্চা কন্ঠে সবাই এক সাথে বলল,
‘ তুমিই ভাইয়ার প্রেমিকা।’
অদ্রিজা ছোট ছোট চোখ করে তাকাল।বলতে ইচ্ছে করল,” না, ঐ নিকৃষ্ট, অসভ্য লোকটার প্রেমিকা নই আমি।কোনভাবেই না।”কিন্তু বলতে পারল না তা।হাঁটু গেড়ে বসেই বাচ্চাগুলোকে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আমি নই।তোমাদের ভাইয়ার প্রেমিকা অন্য একজন।’
তবুও বিশ্বাস করল না তারা।খিলিখিলিয়ে হেসে উঠেই বলে উঠল,
‘ মিথ্যে বলছো।’
অদ্রিজা ছোট ছোট চোখ করে অসহায় ভাবে তাকাল। তারা সেভাবেই খিলখিলিয়ে হাসল।ওর হাত, মুখে হাত রেখে বলে উঠল,
‘ রাতে আমাদের পিকনিক আছে।আসবে তুমি?’
অদ্রিজা মৃদু হেসেই বলল,
‘ আমি তো আসতে পারব না পিচ্চিরা।রাতের বেলায় একা একা বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ আছে যে!’
বাচ্চাগুলোর তেমন একটা ভাবাবেগ হলো না।তারা অদ্রিজার কাছ থেকে ছুটে গেল রক্তিমের কাছে।কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলেই খুশিতে লাফিয়ে উঠল।ছোট্ট তুলতুলে শরীর গুলো নেচে উঠল আনন্দ আর খুশিতে।অদ্রিজা মুচকি হাসল।হাত দিয়ে ইশারা করে বিদায় জানিয়েই পা বাড়াল পার্কের বাইরে।পেঁছনের মানুষটার দিকে তাকিয়েই ছোট্ট শ্বাস ফেলল।আরেকটু কথা বলা কি যেত না?আরেকটু মন ভরে এই লোকটিকে দেখা কি যেত না?সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক কঠিনভাবে উত্তর দিল,” না, যেত না।ঐ খারাপ লোকটার সাথে আর এক মুহুর্তও সময় কাঁটানো উচিত নয়।”
.
সন্ধ্যার আকাশে ডুবুডুব সূর্য।নেহা আনমনেই রাস্তা ধরে হাঁটছিল।হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়াল দিহানের বাসার সামনে।বেলকনিতে দিহানের শার্ট আর টিশার্টটা দড়িতে ঝুলানো।শুকোতে দিয়েছে। নেহা মৃদু হাসল। কয়েক সেকেন্ড সেই বাসার সামনে দাঁড়িয়ে বাসায় উঁকিঝুঁকি দিয়েই মৃদু শ্বাস ফেলল।ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করেই কল দিল দিহানকে। দুবার রিং হতেই কল রিসিভড করল দিহান।নেহা যেন আর অপেক্ষা করতে পারল না।ওপাশের মানুষটা কিছু বলার আগেই বলে উঠল,
‘ দিহান?তুই কোথায় রে এখন?’
দিহান বোধ হয় ব্যস্ত ছিল।ব্যস্ততার ভঙ্গিতেই বলে উঠল,
‘ বাসায়ই আছি।কেন?’
নেহা মিষ্টি হাসল।তৎক্ষনাৎ বলল,
‘ তুই একটু বাসার নিচে নামবি দিহান।একটু কথা বলব।আমি তোর বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি।তুই নিশ্চয় আমাকে বাসার নিচে দাঁড় করিয়ে রাখবি না?নামবি?প্লিজ!’
দিহান রাশভারী গম্ভীর গলায় বলল,
‘ হঠাৎ কি পাগলামি শুরু করলি নেহা?তোর সাথে তো আজও ভার্সিটিতে কথা হলো আমার।আবার এখন বাসার সামনে আসলি কেন নেহা?কি দরকার?যা বলার কলেই তো বলতে পারিস।’
নেহার মুখটা কালো হয়ে গেল মুহুর্তেই।নিরাশ গলায় বলল সে,
‘ তুই কি একটু বেশিই ব্যস্ত দিহান?এটুকুও সময় হবে না তোর?আচ্ছা ঠিকাছে।সমস্যা নেই দিহান।আমি চলে যাচ্ছি।’
কথাগুলো বলেই দিহান কিছু বলার আগেই কল রাখল নেহা।প্রিয়জনের অবহেলায় টলমল করে উঠল চোখজোড়া।যাকে ঘিরে এত পাগলামি, যাকে এতটা ভালোবাসে সো কি আদৌ কোনদিন তাকে ভালোবাসবে?তাকে বুঝবে?তার পাগলামিকে সঙ্গ দিবে?কে জানে!
#চলবে….