১.
এক হাত দেওয়ালের সঙ্গে চেপে রাগান্বিত চোখে মাথায় রিভলবার ধরে আছে অনুরাগ ভাইয়া! ভাইয়া বলছি কেনো এখন তো উনি আমার ধর্মীয় স্বামী।
উনার রাগে জ্বলজ্বল চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এখুনি আমাকে সুট করে মাথার খুপরি উরিয়ে দেবে। উনাকে এমন রূপে দেখে একপ্রকার ভয়ে ঢোক গিলে কাদোঁ কাদোঁ চোখে তাকালাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি ধমকে বলে উঠল,
-“এইই তোর সাহস তো কম না। কতক্ষণ ধরে দরজা খুলতে বলছি তোকে? কথা কানে যাই না?”
উনার হাতে রিভলবার দেখে ভয়ে আমার আত্না শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম
ও -ও ওয়াশরুমে ছি- ছিলাম বুঝতে পারিনি।
-“মিথ্যা বললে একচড় মারবো। তুই ওয়াশরুমে ছিলি নাকি ইচ্ছে করে রুম লক করে রেখেছিস যাতে তোকে কিছু বলতে না পারি?”
ইচ্ছে করে লক করতে যাবো কেনো? আমি কি
এমন করেছি?
উনি আমার মুখের উপর কথা বলাটা মনে হয় পছন্দ করেননি। উনার মুখে রাগ স্পষ্ট হুট করে উনি আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলেন। আমি ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিলাম।
-” কেনো করলি এমনটা তৃষাতুর? বলেছিলাম না তোকে বিয়েটা না করতে তবে কেনো করলি? কেনো আমার সঙ্গে নিজের জিবনটা জড়াতে গেলি টেলমি ড্যামেট!!!”
ভাইয়া ব্যাথা পাচ্ছি ছাড়ুন আমাকে!
আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন আপনাকে আমি ইচ্ছে করে বিয়ে করিনি। আমাকে জোর করেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
-“জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ? কেনোরে তোর মুখ নেই বলতে পারিসনি চিৎকার করে এই বিয়ে আমি করবো না,আমাকে কেউ জোর করো না। তুই এতো ছ্যাচড়াঁ কেনো বিয়ের আগমুহূর্তে ও আমি তোকে ভালো মতো বুঝিয়েছি যে এই বিয়েটা আমার পক্ষে সম্ভব না তবুও তুই….”
উনার কথায় চরম রাগ হলো আমার। উনি আমাকে ছ্যাচড়াঁ বললেন তাও বিনা কারনে। উনার চোখে মুখে রাগ বিরক্তি পষ্ট সেগুলোর তোয়াক্কা না করে বলে উঠলাম,
আমাকে উল্টোপাল্টা বলার আগে আপনার বিবেকে বাধলো না যে আমি কোন পরিস্থিতিতে বিয়েটা করতে বাধ্য হলাম? বিয়ের আগমুহূর্তে আপনি নিষেধ করে খালাস হয়ে গেলেন একবারো বাবা,মা , আপনার বাবা,মা আত্নীয়স্বজনদের কথা ভেবেছেন? আজ যদি বিয়েটা না হতো তাদের মানসম্মান কোথায় দাড়াঁতো? তারপরেও আমি চেষ্টা করেছিলাম। আম্মুকে বলেছিলাম বিয়েটা আমি করবো না কিন্তু আম্মু আমাকে থাপ্পড় মেরে বলেছিল তোর বাবার হার্টের সমস্যা আজ যদি কোনরকম বাড়াবাড়ি হয়,আর তার জন্য যদি বাবার কিছু হয় তবে আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না। এরপর ও আমি ছ্যাচড়াঁ না?????
আচ্ছা মানলাম আমি ছ্যাচড়াঁ তবে আপনি কেনো না করেননি বিয়েতে? আপনি কেনো চিৎকার করে বললেন না আন্টিকৈ যে আম্মু আমি ওকে বিয়ে করবো না। কি হলো বলুন? সবসময় মেয়েদের কেই কেনো জবাবদিহি করতে হয়? আপনি তো চাইলে অন্যভাবে বিয়েটা আটকাতে পারতেন কিন্তু আটকান নি। কেনো ভাইয়া? তারমানে কি ধরে নিবো আপনি ও ছ্যাচড়াঁ?
-” ভুলে যাসনা তুষ আমি আব্বুর কথায় বিয়েতে সাই দিয়েছি।”
ওহহহ আপনার আব্বু আর বাকিদের আব্বু কি ডাস্টবিনের ময়লা? যে তাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে না? আর এটা ধরে আছেন কেনো সরাসরি সুট করে দিন তবেই তো আপনি বাচঁবেন আমার ও শান্তি হবে এই মিথ্যা বন্ধনে থাকতে হবে না। দিন ওটা আমাকে আমি নিজেই নিজেকে সুট করে দিচ্ছি।
– ” তুষ ছাড় বলছি! পাগলামি করিস না ছাড়।”
ঠাসসসস!
-“এই চড়টা আমার আরো আগে মারা উচিত ছিলো। এতো তেজ কোথায় থেকে
আসে তোর? এখুনি যদি কোন অঘটন ঘটে যেতো তবে কি হতো? তোর কি আমাকে জেলের ভাত খাওয়ানোর ইচ্ছে নাকি?”
আপনি আমাকে মারলেন? গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললাম
-” হ্যা মারলাম। দেখ এই বিয়েটা আমি মানিনা। আর এই বিয়ের কোনরকম গুরুত্ব নেই আমার কাছে। সো আমার থেকে দুরুত্ব বজায় রাখবি। আরেকটি কথা সময় হলে ডিভোর্স এগরিমেন্ট পেয়ে যাবি। ততক্ষণ পযর্ন্ত আমাদের ভিতরের কথা যেনো কেউ জানতে না পারে। আমাদের মাঝে কোন প্রবলেম নাই সবাই যেন এটাই জানতে পারে।”
অনুরাগ ভাইয়া গট ইট বলেই বেরিয়ে গেলেন এদিকে রুমে থেকে গেলাম আমি। চোখ ভর্তি পানি নিয়ে বিছানার পাশে হেলান দিয়ে বসে পরলাম সঙ্গে সঙ্গে পানি গুলো গাল বেয়ে ঝরে পরলো। সবসময় আমার সঙ্গেই এমনটা কেনো হয়। ভাইয়ার প্রতি তো শ্রদ্ধা বোধ ছিলো আমার। যথেষ্ট ভালো শান্ত শিষ্ঠ ছেলে। দুইমাস আগে যখন উনি অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসেন তখন সত্যি উনার প্রত্যেকটি আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছিল। সবাই উনার যতটা সুনাম করতো তার চেয়ে বেশি সুনাম ডিজার্ব করতেন উনি। হুম বরাবর একটু রাগি ছিলেন কিন্তূ যে কেউ উনাতে মুগ্ধ হতে বাধ্য ছিল। উনাকে সামনে দেখলে আমার হার্টবিট বেড়ে যেত এজন্য ইচ্ছে করে উনার থেকে দুরে দুরে থাকার চেষ্টা করতাম। অনুরাগ ভাইয়া প্রাই সময় আমাদের বাসায় আসতো তখন আমি নিজেই উনার থেকে ডিস্টেন্স বজায় রাখতাম
সবটা আজব লাগছে ঠিক না? আসুন ফ্লাসেব্যাকে ক্লিয়ার করছি বিষয়টি!
ফ্লাসব্যাক,
দুইমাস আগে রৌদ্র উতপ্ত দুপুরে কলেজ থেকে ফিরে শুনলাম অনুরাগ ভাইয়ার বাবা আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি এসেছেন। আমি শুনেই অনেক খুশি হলাম। তাই ওইভাবেই ঘামাক্ত কলেজ ড্রেসে উনাদের কাছে গেলাম। মাহিমা আন্টি আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
-“কেমন আছে আমাদর তুষ?”
ভালো আন্টি। তোমরা বলো কেমন আছো তোমরা?
-“আমরাও ভালো আছি মামুনি।”
তো বলো আজকে হঠাৎ মনে পরলো? সেই কবে থেকে বাসায় আসোনা মনে আছে? যাও রাগ করেছি।
আমার কথায় আয়মান আঙ্কেল আর মাহিমা আন্টি হুহা করে হেসে ফেলল।
-“তোমার প্রিন্সেস তো রাগ করেছে দেখো তৃণা।”
মাহিমা আন্টির কথায় আম্মু আব্বুও হেসে ফেলল।
তারপর বলল চেনো তো তোমরা ওকে। অনেক দিন হলো আসোনি এজন্য ওর অভিমান হয়েছে।
-” আচ্ছা অভিমান করোনা। এখন থেকে মাঝেমধ্যে আসবো আমাদের তুষের সঙ্গে দেখা করতে। এবার খুশি তো?”
খুওওওব বলেই হেসে ফেললাম।
হাসি ঠাট্টার মাঝে আয়ামান আঙ্কেল বলে উঠলো,
-” বন্ধু তূর্নব যে কারনে আমার আসা সেটা তো বলাই হলোনা।”
কি ব্যাপার বন্ধু কোন সমস্যা হয়েছে?
-” আরে না না সমস্যা না। আগামীকাল আমার ছেলে আসছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। জানোই তো দীর্ঘ ছয়বছর
ওকে দেখিনি আর তোমরাও তো অনেক বছর ধরে দেখোনি। তাই আমরা ঠিক করেছি কালকে একটা পার্টি রাখবো।”
বাহ্ ভালো হবে। সবাই দেখতে পাবে তোমার সাইনটিস্ট ছেলেকে। অনেক আগে দেখেছি তাকে ভূলেই গেছি চেহারা । সে কি মাথার ব্রেন সবসময় থানা ফাস্ট হতো। এমন ছেলে পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার বন্ধু।
-” তাই নাকি তোমার মেয়ে কম কিসে বন্ধু? ডাক্তারি পরবে। ডাক্তারদের মূল্য কতো জানি আমি। আমি ও একজন ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্যে ছিলোনা আমার। চেয়েছিলাম ডাক্তার হতে হয়ে গেলাম বিজনেস ম্যান। তবুও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো হয়েছে। ছেলেটাকে একজন নামী সাইনটিস্ট করতে পেরেছি।”
আমি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এই একটা ছেলের সুনাম। আরে ভাই সে ভালো পড়াশোনা করে সাইনটিস্ট হয়েছে। দেশের প্রধান মন্ত্রী তো হয় নি যে উনাকে নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা সবার। উফফফফ ভাল্লাগে না। তাকে নিয়ে এতো বাড়াবাড়ির কি আছে?
চেয়েছিলাম কথা গুলো জোরে বলতে কিন্তু মুখ দিয়ে বের হলো না। চুপচাপ আঙ্কেল আন্টিকে বাই বলে উপরে নিজের রুমে চলে আসলাম। কলেজ ড্রেসটা খুলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আসতেই আম্মু নিচে খেতে ডাকল।
আমি ও গেলাম। গিয়ে দেখি আঙ্কেল আন্টি চলে গেছে আমি রেগে বললাম আমাকে একবার বলে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না?
আমার কথায় আম্মু বললেন,
-” তোর আব্বু আর তোর আঙ্কেলের অফিসে কাজ আছে তাই চলে গেছে। তাছাড়া কালকে অনুরাগ ফিরছে বাসায় কতো মেহমান থাকবে পিপারেশনের ও একটা ব্যাপার থাকে তাই তোর আন্টি বাসায় চলে গেছে।”
কি অদ্ভুত তোমরা এমন ব্যাবহার করছো যে বাড়ির ছেলে না বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আসছে।
-” ভবিষ্যৎ ই তো। তুই জানিস ও কতো বড়মাপের মানুষ?দেশসেরা সাইনটিস্ট আমাদের অনুরাগ। চারিদিকে ওর কতো সম্মান হিসাব আছে? এমনকি ওর কাছে অনেক পাওয়ার আছে যেটা সরকার ওকে দিয়ে রাখছে। তুই যদি ডাক্তারিতে চান্স পাস তবে তোকে চাকরির ক্ষেত্রে সাফার করতে হবে না তুষ। ভাবতে পারছিস ওর ক্ষমতা।”
বাবাহ্ আমাদের অনুরাগ? ও এখন আমাদের অনুরাগ হয়ে গেলো তোমরাও না?
-“এইইই তোর মনে এতো হিংসে আসে কোথা থেকে? আগে এমন করতি না।”
ছোটবেলা থেকে অনুরাগ এই,অনুরাগ সেই, অনুরাগ এই করলো সেই করলো এসব বলে বলে মাথা এমন ভাবে খাইসো যে এখন মনে হচ্ছে আমি কে? আসলেই তো আমি কোন ক্ষেতের গাজর? দাও মাংসের তরকারিটা দেও এদিকে।
-” পারবো না নিজে নিয়ে খা। ”
এইইই আম্মু তুমি কি ওই ছেলের জন্য আমার উপর রাগ ঝাড়ছো? আজিব তো? দেওনা এদিকে বাটিটা চলে যাচ্ছ কেনো? কি অদ্ভুত সবাই
~ চলবে ইনশাআল্লাহ্
হয়তো_তোমারি_জন্য
সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা