হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 10]
মাহির ভাইয়া হসপিটালে এসেই অনুরাগ ভাইয়াকে দেখে। অনুরাগ ভাইয়া মাহির ভাইয়ার কাধে হাত রেখে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে একটু ধর্য্য ধর। এদিকে রক্তিম বর্ন চোখ নিয়ে মাহির বলে উঠে,
-“আজ আমার মেধার কিছু হলে ছাড়বো না ওকে।”
উহু ও আমার শিকার মাহির! তুই না ওকে শেষ আমি করবো!
অনুরাগ আর মাহির ভাইয়ার মধ্যেকার কথোপকথন কিছুই বোধগম্য হয় নি আমার। আমি দুইজনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম। এদিকে দীর্ঘ চারঘন্টা অপরেশন থিয়েটারের পাশে বসে অপেক্ষা করছিলাম আমরা। ডক্টর বের হতেই বলেন অপরেশন সাকসেসফুল। আমরা সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। সবাই মিলে কেবিনে যেতে চাইলে ডক্টর বললেন প্লিজ একজন একজন করে দেখা করুন। অনুরাগ ভাইয়া কিছু না বলে খবরটা শুনে চলে যাই। এদিকে মাহির ভাইয়া মেধার সঙ্গে দেখা করতে যাই। আমি বসে অপেক্ষা করছিলাম তখন ই মেধার আব্বু আম্মু ছুটে আমার কাছে এসে সবটা জানতে চাই আমি ও সবটা খুলে বললাম। উনাদের নিয়ে আমি কেবিনে গেলাম। মেধা একনো সেন্সলেস আঙ্কেল আন্টি তো কেদেঁই ফেলেছেন প্রাই আমি কোনরকম শান্ত করে চলেছি উনাদের।
____________
বস!!! লোকটিকে পেয়েছি।
জনের কোথায় অনিরুদ্ধ উত্তেজিত হয়ে বলে কোথায় সেই বাস্টার্ড?
জন লোকটিকে অনিরুদ্ধের পায়ের উপর ফেলে দেয়। এতে লোকটি মুখ থুবড়ে পরে অনুরাগের সামনে। জন তো ওকে প্রচুর মেরেছে তারসঙ্গে অনুরাগের হাতে রিভলবার দেখে ও বুঝে ফেলে ওকে আজ কেউ বাচাতে পারবে না। ও মিনতি করে বলে প্লীজ ছেড়ে দিন আমাকে!!
অনুরাগ ওর চুলের মুঠি ধরে মুখটা উচু করে বলে,
-“কার কোথায় গুলি চারিয়েছিস?”
লোকটি প্রথমে বলতে না চাইলে অনুরাগের রাগি চোখ দেখে বলে দেয়। একজন লোক ওকে পাঠিয়েছে অনিরুদ্ধ জুবায়ের কে মারতে। কিন্তু সে নামটা জানেনা লোকটির। কারন সে নাকি অন্ধকারে ছিলো। তার কাছে শুধু কিছু টাকা আর একটা ছবি দিয়ে মারার আদেশ দেওয়া হয়েছে। সবটা শুনে অনুরাগ চোখ বন্ধ করে রাগ দমন করার চেষ্টা করে। এই একমাত্র ব্যাক্তি ছিলো যে বলতে পারতো আদেশকৃত লোকটি জোহা নাকি কিন্তু সে নাকি দেখেইনি। রাগের মাথায় অনুরাগ চিৎকার করে বলে উঠে,
-” জোহা লুকিয়ে রয়েছে দেখেছো জন! আমি জানতাম এমন কিছু হবে। ওর প্লান আমি ধরতে পেরেছি এখন। ও আমাকে মেরে তৃষাতুরকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল!”
স্যার এখন উপায় কি? কিভাবে খুজে বের করবো ওকে?
জনের কথায় অনুরাগ রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
-” ও আমাদের সঙ্গে মাইন্ড গেম খেলতে চাইছে। কিন্তু ও ভুলে গেছে এই মাইন্ড গেমের উইনার আমি। এর আগে যেমন ওকে হারিয়েছি এবারো হারাবো। শুধু পদ্ধতি টা একটু আলাদা হবে। এমন অবস্থা ক্রিয়েট করবো ও নিজেই ধরা দিবে আমাদের জালে।”
অনুরাগের কথায় জন বলে উঠলো,
-“সব বুঝলাম স্যার কিন্তু এই টাকে কি করবেন।”
জনের কথায় অনুরাগ বলল এইটাকে আটকে রাখো পরবর্তীতে কাজে আসতে পারে বলে চলে যায়। এদিকে জন লোকটিকে হাত-পা মুখ বেধেঁ গোডাউনে ফেলে রাখে।
__________
এদিকে মেধার জ্ঞান ফিরে আসলে সবাই পুরোপুরি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। মেধার আব্বু আম্মু সবটা শুনে বুঝে ঠিক করে মেধাকে মাহির, তৃষাতুর, অনুরাগ এদের থেকে দুরে রাখবে। এদের জন্য আজ তাদের মেয়ে মরতে বসেছিল। প্রত্যেকটি বাবা মা চায় তাদের সন্তান ভালো থাকুক। তাই তাদের মনের অবস্থা আমরা বুঝতে পারলাম। তাই মেধার থেকে একটু একটু দুরে দুরে থাকার কথা ভাবলাম কিন্তু এতে আপত্তি করে মেধা নিজেই। ও হালকা রাগ দেখিয়ে বলে,
-” যা হবার হয়েছে আম্মু আব্বু। আমার জাইগায় তোমরা থাকলেও এমনটা হতো। তোমরাই তো বলো সবকিছু আল্লাহ্ লিখে রাখেন আর তার ইচ্ছেতেই সবটা হয় তবে আজ এতো কথা আসছে কোথা থেকে। সবটা আল্লাহর ইচ্ছে ভেবে নেও।”
মেধার কথায় আঙ্কেল আন্টি রাগ করে উঠলেন। উনাদৈর রাগ করাটা স্বাভাবিক। আজ মেধার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারতো কিন্তু সে বেচে গেছে। সবটা হয়েছে অনুরাগ ভাইয়ার জন্যই। আমার উনার মাঝের সব গুন ভিষণ ভালো লাগে। উনি আঙ্কেল আন্টিকে শুরু থেকে সব বোঝালেন এমনকি মাহির আর মেধার সম্পর্কে বলেন। একটা সময় পর আঙ্কেল আন্টি শান্ত হয়ে মানলেন। তারপর আমাদের কে বাসা যেতে বলেন।আমি আর অনিরুদ্ধ ভাইয়া চলে আসলাম। কিন্তু মাহির ভাইয়া আন্টিদের সঙ্গে থেকে গেলেন। মেধা যেতে বলেছিল কিন্তু শোনেনি মাহির ভাইয়া।
এইভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। মেধা এখন অনেকটা সুস্থ। মাহির ভাইয়া প্রতিদিন মেধাকে দেখতে আসে সঙ্গে ঘুরতে নিয়ে যায়। আঙ্কেল আন্টি সবটা মেনে নিয়েছে তাই মাহির ভাইয়াকে নিয়ে উনাদের কোন সমস্যা নেই। যতদিন যাই আমাদের বিয়ের দিনটা এগোতে থাকে। এরমাঝে আমার উপর একবার হামলা হতে হতে বেচে গেছিলাম কিন্তু আমাকে বাচাতে গিয়ে একটা ছেলে গুরুতর আহত হয়। এই ব্যপারটার পর আব্বু আম্মু,আয়মান আঙ্কেল, মাহিমা আন্টি অনেকটা চিন্তিত ছিলো। অন্যদিকে অনুরাগ ভাইয়ার সঙ্গে আমার দুরুত্ব বেড়েছিল। বেশকিছুদিন এভাবে কাটার পরে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতেই অনুরাগ ভাইয়া আমাকে ঘোরার নাম করে অন্যকোথাও নিয়ে গিয়ে বলেন এই বিয়েটা নাকি তিনি করতে পারবেন না। আমার উনার এমন ধরনের কথায় খারাপ লাগে আমি ও তখন উনাকে জানিয়ে দেই আমারো কোন ইচ্ছে নেই এই বিয়েটা করার। আমার কথায় উনার মুখের অনেকটা পরিবর্তন হয়। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমার কথায় উনি খুশি হয়েছিল নাকি দুঃখ পেয়েছিল। তারপর আমরা ঠিক করলাম সবাই কে জানাবো কিন্তু কেউ বলতে পারলাম না। কারন বিয়ের কাজ অনেক দুর পযর্ন্ত শুরু হয়ে গেছে। সমস্ত রিলেটিভ,মিডিয়া সবাই কে জানানো হয়ে গেছে।
এরপরই এলো সেই মাহিন্দ্রক্ষণ দিন।আমার আর অনুরাগ ভাইয়ার বিয়ের দিন। বিয়ের দিন পুরো একঘন্টার মতো গায়েব ছিলো অনুরাগ ভাইয়া। সবাই খোজাখুজি করেও পাইনি। এক ঘন্টা পরে মাহির ভাইয়া ফিরলে উনি সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করতে চাই। তারপর ই উনি আমাকে চওড়া গলাই রাগে টুইটম্বুর হয়ে বিয়েটা আটকাতে বলেন। কিন্তু আমি চেয়েও বিয়েটা আটকাতে পারিনি। যার ফলস্বরুপ আমি এখন উনার বিবাহিত স্ত্রী সঙ্গে ঘৃণার পাত্রী!!!
~চলবে ইনশাআল্লাহ্