হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[পর্ব – 12]
“হ্যালো অনিরুদ্ধ স্যার! আপনি ল্যাবের কাজ ফেলে আজকে এতোদ্রুত চলে আসলেন কেনো? ডাক্তার শাহরিয়ার আপনাকে খুজছিলো আপনি চলে আসার পর!”
জনের কথায় ইতস্তত হয়ে বললাম,
-” এমনি যথেষ্ট কাজ হয়েছে। টানা দশদিন ধরে যেই রিচার্স করছি সেটা আধা কমপ্লিট থাক। পরে সেটা আবার শুরু করা যাবে। একটানা কাজ করতে করতে আমি টায়ার্ড জন!”
জন ওই পাশে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো আমি ফোন রাখতে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে বলল,
-” আজকে জোহা আপনাকে আননন নাম্বার থেকে কল করেছিল ঠিক না স্যার? উনি ম্যামকে নিয়ে হুমকি দিয়েছে আপনাকে। আর খুব দ্রুত আপনার সামনাসামনি হবে এটাও বলেছে আমি সবটা শুনেছি। এজন্য আপনি ভয় পাচ্ছিলেন বাসার সবার জন্য তাই সবার সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটাবেন বলে ঠিক করেছেন আমি কি ঠিক বলছি স্যার?”
ওপাশ থেকে জোহার কথায় চমকে উঠলাম। আমার মনের খবর ও কিভাবে বুঝতে পারলো বুঝলাম না।
আমি একপ্রকার ধমকের সুরে বললাম,
-” জোহা ফোন দিয়েছিলো তুমি কিভাবে জানলে?”
-” সরি স্যার! আপনি যখন জোহার সঙ্গে কথা বলছিলেন আমি অফিসের ল্যান্ড লাইন থেকে সবটা শুনেছি। আর বাড়িতে চলে আসার কথা ম্যামকে আর আঙ্কেল আন্টিকে সময় দিবেন এইটা গেস করে বলেছি।”
জনের কথায় চোখ খুলে পরে যাওয়ার উপক্রম আমার। এতো ইন্টেলিজেন্ট নলেজ কোথায় রাখে এরা?
”জন তোমার মাথায় যে এতো বুদ্ধি আগে তো জানতাম না। চুরি করে অন্যের ফোনকল শোনা হচ্ছে নাকি আজকাল? ”
আমার কথায় জন হ্যাবলার মতো হেসে বলল,
-“সরি স্যার!আর হবে না স্যার! আসলে স্যার আমার একটা ফোন কল করার ছিল সেজন্য ফোন করতে গেছিলাম কিন্তু জোহা আর আপনার কথোপকথন শুনে থমকে সবটা শুনি। ওই ইবলিশটার হুমকি শুনে মনে হচ্ছিলো ওকে ওখানেই পুতে ফেলি স্যার। আর কি বললেন আমার বুদ্ধি সম্পর্কে জানতেন না? এটা কেমন কথা স্যার??? দেশ সেরা সাইনটিস্টের বডিগার্ড সঙ্গে পারসোনাল এসিস্টেন, একটু তো স্মার্ট হওয়া চাই স্যার!”
জনের কথায় হাসি পেলেও কড়া করে বললাম,
-” আগে তুমি আমাকে স্যার স্যার বলা বন্ধ করো জন! তবে যাইহোক জোহা ব্যাপারে এতো ভেবো না। সঠিক সময় আসতে দেও ওকে কুপোকাত করার অস্ত্র পেয়ে গেছি আমি।”
-“জ্বী স্যার”!
“আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি তবে ভালো থাকো।”
-“জ্বী স্যার “!
-জন!!!!
-“জ্বী স্যার!!!”
-‘উফফফ তোমাকে নিয়ে পারা গেলো না ফোন রাখোওও’!!!
– জ্বী স্যার!
আল্লাহ্ আমিই ফোনটা রেখে দিই নাহলে এই আধপাগলটা স্যার স্যার বলে বকতেই থাকবে।
ফোনটা সুইচঅফ করে রুমের লাইট জ্বলতেই দেখি তৃষাতুর সোফায় শুয়ে আছে। চোখে লাইটের আলো পরতেই ওর মুখে ঘুমের ভিতরেই বিরক্তির ছাপ। আমি লাইটটা অফ করে ওর গায়ে কম্বলটা দিয়ে দিলাম। এইকয়দিনে প্রজেক্টের কাজে ঠিক মতো ঘুমোতে পারেনি এজন্য ঘুমটা যেনো চোখে লেগে আছে। বেডে শরীর এলিয়ে দিতেই ঘুমটা জেকে বসল।
____________
নীল রঙের একটা থ্রী-পীচ পরে তৈরি হয়েছিলাম উনি এসে বললেন শাড়ী পরতে। আমাকে নাকি থ্রী-পীচ পরে বাচ্চা বাচ্চা লাগছে এইটা বলে উনি নীল রঙের একটা শাড়ী হাতে ধরিয়ে দেয়। প্রচুর বিরক্তি লাগছিল।রেডি হওয়ার পরে যদি কেউ বলে আবার রেডি হতে তবে কেমন বিরক্তি লাগে সেটা ওই মানুষ ছাড়া কেউ বুঝবে না। এখন কি করার নীল রঙের শাড়ী পরেই রেডি হচ্ছি। যদিও মেকআপ অতটা দেইনি তবুও মাশআল্লাহ্ ভালো লাগছে। উনি কিছু না বলে মুচকি মুচকি হাসছিলেন এদিকে একটু আগের কাজের জন্য আমি উনার উপর চরম বিরক্ত। উনি বললেন,
-” আমি নিচে যাচ্ছি। গাড়ী বের করতে হবে তুই আয়।”
উনি চলে যাওয়ার পরপরই আমি ও নিচে চলে আসলাম। বাইরে বেরুতে যাবো তখনই মাহিমা আন্টি পথ আটকে বললেন,
-” বাহিরে যাচ্ছিস সাবধানে যাবি। আর শোন অনিকে বলবি আস্তে গাড়ি চালাতে ও প্রচুর জোরে গাড়ি চালাই। আর এই টিফিন টা রাখ এখানে পরোটা আর অমলেট আছে খিদে পেরে খেয়ে নিস। ”
আন্টির কথায় উনি বলে উঠল,
-” আম্মু আমরা ঘুরতে যাচ্ছি হানিমুনে যাচ্ছি না যে খাবার প্যাক করে দিচ্ছো। আর এমনিতেও খিদে পেলে হোটেলে খেয়ে নিতাম ।”
অনিরুদ্ধ ভাইয়ার কথায় আন্টি বলে উঠলেন,
-” এই তুই চুপ থাক। এটা তোর জন্য না বুঝেছিস এটা আমার তৃষাতুর মায়ের জন্য।”
আন্টির থেকে টিফিন বাটিটা আর কফির ফ্লাক্সটা নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। এদিকে উনি গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন। বেশকিছুক্ষণ আমরা চুপ ছিলাম।কেউ কারো দিকে তাকাইনি কেউ কারো সঙ্গে কথা বলিনি। একসময় কখন যে চোখটা লেগে যাই বুঝতে পারিনি। চোখ খুলতেই দেখতে পাই অনুরাগ ভাইয়া আমার পাশে নাই। গাড়িটা কসিংরোডে পার করা আছে। আমি দরজাটা খুলে বের হতে যাবো কিন্তু পারলাম না। নিশ্চিত অনুরাগ ভাইয়া গাড়ির দরজা লক করে গেছেন। বেশকিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু উনার আসার নাম নেই । এদিকে ঘুম থেকে উঠে খিদেও পেয়ে গেছিলো তাই টিফিন বাটি থেকে পরোটা আর অমলেট নিয়ে খেতে লাগলাম। খাওয়া দাওয়া করে দশমিনিটের মতো আরো অপেক্ষা করলাম কিন্তু উনি আসলেন না। এখন আমার কান্না পাচ্ছে উনি আমাকে এভাবে একা রেখে কোথায় গেলেন? কিছুক্ষণ পরে একটা ছেলের সঙ্গে বেশ হাসতে হাসতে গাড়ির দিকে আসছিলেন উনি। ছেলেটা হয়তো উনার ফেন্ড হবে। উনি গাড়ির দরজা খুলে বললেন বের হয়ে আসো। আমি বের হতেই উনি ছেলেটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে বলল,
-” তৃষাতুর এইযে আমার ফেন্ড সৌম্য আহমেদ। আমার সঙ্গে অস্টেলিয়াতে থাকতো। আমি তো চলে এসেছিলাম পরে ও চলে আসলো । সৌম্য আমার ওয়াইফ তৃষাতুর চৌধুরী “।
লোকটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে হাই বলল আমি ও সালাম দিলাম। তারপর বেশকিছুক্ষণ কথা বলার পর আমরা তিনজনে বনলতা রেস্টুরেন্টে গেলাম কিছু খাওয়া দাওয়া করলাম,একটু ঘুরাঘুরি করার পর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যাওয়ার আগে সৌম্য নামের ছেলেটিকে বাসায় আসতে বললেন উনি। উনি ডাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন। আমি রেগেমেগে উনার দিকে ওইভাবেই তাকিয়ে রইলাম। সিট বেল্টটাও বাধিনি যাওয়ার সময় উনি বেধে দিয়েছিলেন সিটবেল্ট। রাস্তায় হুট করে ব্রেক কসায় মাথায় আঘাত লাগে আমার। উনি চিৎকার করে বললেন,
-” সমস্যা কি? সিটবেল্ট বাধতে জানিস না?”
রাগে আমি ও বললাম,
-” আপনি বলুন আপনার সমস্যা কোথায়? আমাকে গাড়ির ভিতরে বন্ধি করে কোথায় গেছিলেন আর এই ছেলেটাই বা ওইভাবে কথা বলছিলো কেনো? সব শুনেছি আমি উনি বলছিলো তোর বউ দেখতে তো ভালো কিন্তু বয়সটা অনেক কম মনে হচ্ছে। বিয়ে করার জন্য আর মেয়ে পাসনি! এসব কি হ্যা? এসব কি কথা বলুন আমাকে? আমি আরকিছুদিন পর 18 বছরে পরবো আর উনি আমাকে ছোট বলল কেনো? আর কোথায় গেছিলেন আপনি? আপনি জানেন আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে একা রেখে ভেগে গেছেন।
কান্না পাচ্ছিলো আমার তাই কেদেই ফেললাম।”
আমার কান্নার শব্দে উনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললেন,
-” এই কাদছিস কেনো তুই? আমি কি কান্না করার মতো কিছু বলেছি নাকি কি আসচর্য? থেমে যা প্লীজ তুই গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছিলি এদিকে আমার বন্ধু সৌম্যর সঙ্গে রাস্তায় দেখা এজন্য তোকে গাড়িতে লক করে ওর সঙ্গে কথা বলছিলাম একটু ঘুরাঘুরি করছিলাম। ভেবেছিলাম তোর ঘুম ভাঙবে না কিন্তু পরে দেখি উঠে গেছিস তুই। এই সরিরে প্লীজ থাম।”
উনার কথায় সবটা ক্লিয়ার হলো আমার। এদিকে আমাকে কাদতে দেখে উনার যে অবস্থা হচ্ছিলো এটা দেখে হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু হাসলাম না। তবে উনাকে যব্দ করার ওষুধটা পেয়ে গেলাম। আমি ওইভাবেই বলে উঠলাম,
-” আপনাকে মাফ করবো একটা সর্তে ”
-” কি সর্ত বল আমি সব সর্ত মেনে নিবো তবুও এইভাবে কাদিস না আশেপাশের সবাই কি ভাববে বল। সবাই ভাববে অনিরুদ্ধ জুবায়ের নিজের বউয়ের গায়ে হাত ওঠাই।”
-” আমাকে আইসক্রিম কিনে দিন। ওইযে পাশে আইসক্রিম বক্স আছে ওইখান থেকে।”
উনি আমার কথায় চোখ বড় বড় করে বললেন,
-” তুই রাস্তার আইসক্রিম খাবি? একদম না একটু আগে তুই চিকেন ফ্রাই খেয়েছিস এখন আইসক্রিম খেলে পেট ব্যাথা করবে আর এগুলো তো আনহাইজেনিক!”
আমি আবারো কাদতে কাদতে বললাম,
-” না আমি এগুলোই খাবো। আমার পেট ব্যাথা করবে না আপনি আইসক্রিম কিনে দিবেন কিনা সেটা বলেন ”
-” আরে কি মুসিবতে পরলাম আল্লাহ্! আচ্ছা চল তবুও কাদিস না।”
আমি মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম উনিও গাড়িটা রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন।
আমি উনার সঙ্গে যেতেই উনি নিষেধ করে বললেন,
-” তুই থাম আমি নিয়ে আসছি। আজকে প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করছে তোর রাস্তার ওইদিকে যাওয়ার দরকার নাই।”
আমি ও আচ্ছা বললাম। উনি রাস্তার ওইপাশ থেকে ইসারায় জিগ্যেস করলেন কোন ফ্লেবারের আর কয়টা?
আমি ও ইসারায় বললাম দুইটা আর স্টোবেরি ফ্লেবারের। ছোটবেলা থেকেই আমি আইসক্রিম পাগল। দুপুরের লান্চ করার পরপর আমার আইসক্রিম খাওয়ার স্বভাব। আইসক্রিম দেখলেই মনটা কখন খাবো কখন খাবো করে।
অনুরাগ ভাইয়া আইসক্রিম নিয়ে আসতেছিল। এদিকে কয়েকজন ছেলে হুট করে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে,
-” কাউকে খুজছো নাকি? বয়ফেন্ড নাই বলে একা একা ঘুরছো? ইসস এতো সুন্দর কচি একটা মেয়ের বয়ফেন্ড নাই তো আমরা কি সুযোগ পাবো?”
ছেলেটির কথা শুনে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম। ওদের মধ্যে বাকি দুইজন তবেরে বলে এগিয়ে আসতেই আমি পিছিয়ে গেলাম। যাকে চড় মারলাম ছেলেটি বাকি দুজন ছেলের উদ্দেশ্যে বলল,
-“তোরা থাম একে তো আমি দেখে নিচ্ছি”!
বলে এগিয়ে আসতে লাগলো এদিকে পিছনে যেতে যেতে আমার পিঠটা গাড়ির সঙ্গে ঠেকে গেছে। ছেলেটা তার হাতটা আমার দিকে বাড়াতে যাবে এমন সময়,,,,,,,
~চলবে ইনশাআল্লাহ
(