হয়তো_তোমারি_জন্য
#সামানিয়া_জামান_প্রজ্ঞা
[শেষ_পর্ব]
ভিডিওটা শেষ হতেই অনুরাগ স্ট্যান্ড করা ক্যামেরাটা ছুড়ে ফেলে দেয়। আর আশেপাশে কয়েকজনকে মারতে থাকে আর পাগলের মতো জিগ্যেস করতে থাকে তৃষাতুর কথায়? এসব কিছু জোহা দেখতে পাচ্ছিলো আজকে ওর মনের মাঝে অদ্ভুত শুখ অনুভব হচ্ছিলো। অনুরাগ লোকগুলোকে উধুম পেটাতে থাকে আর পাগলের মতো জিগ্যেস করে কোথায় তৃষাতুর কিন্তু কেউ বলতে পারেনি সবাই মার খেয়ে ওইখানে জ্ঞান হারায়। ওইখানে মেঝেতে বসে কাদঁতে থাকে। আজ ওর ভুলের জন্য তৃষাতুরকে ভুগতে হবে এটা ভেবেই ও জোরে চিৎকার করে বলতে থাকে কেনো আমি ওকে একলা ছেড়ে দিলাম!!!!
পরক্ষণেই সে হিংস্র মুখে সামের সিসিটিভি ফুটেজের দিকে ক্যামেরা স্ট্যান্ড সহ ছুড়ে মারে। সঙ্গে সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজটা নষ্ট হয়ে যাই। অপরপাশে অনিরুদ্ধের এমন আচরণে জোহা ভয় পেলেও পজেটিভলি এটা ভাবতে থাকে তৃষাতুরের জন্যই হয়তো রাগে এইটা করেছে। সে তৃষাতুরকে চ্যেয়ারে বেধে সবটা দেখাচ্ছিল। তৃষাতুর প্রচণ্ড কাদছিলো কিন্তু তার মুখে আওয়াজ না হওয়ার জন্য মুখে কাপড় বাধা ছিলো। ওই অবস্থায় নিশব্দে কেদেঁ যাচ্ছিলো তৃষাতুর!
অন্যদিকে অনুরাগ নিজেকে কন্ট্রল করে চোখের পানিটা মুছে শুকনো একটা হাসি দেয় সঙ্গে সঙ্গে মাহির ফোন দিয়ে জানাই তৃষাতুরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ও মাহির আর জনকে ঠিক সময়ে পৌছাতে বলে শহর থেকে একটু দুরে কোন এক পরিত্যক্ত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কারণ জোহা তৃষাতুরকে এই জাইগাতেই বন্দি করে রেখে। আরো একটা বিষয় এখানে ক্লিয়ার। অনিরুদ্ধ শুধু ঘড়িতে নয় বরং তৃষাতুরের ইয়ার টপের মধ্যেও একটা জিপিএস ট্রেকার লাগিয়েছিল। যেটা সম্পর্কে জোহা আর তৃষাতুর দুজনের কেউ অবগত নয়। এজন্য জোহার সামনে এক্টিং করলেও বাস্তবে সে এটাই চাইছিলো শুধু কোনো মতে জোহার কাছে পৌছানো।
অনিরুদ্ধ পরিত্যক্ত বাড়িটার কাছে চলে আসতেই খুব সাবধানে ভিতরে প্রবেশ করে সব পজিশন দেখে নিলো তারপর একটা একটা করে গার্ডদের কমান্ডো টেকনিকে মেরে সমস্ত ঘর চেক করতে লাগলো। একটা সময় পর একটা রুমে তৃষাতুরকে হাত পা বাধা চেয়ারে বন্দি অবস্থায় দেখতে পাই। সে বাহিরে একবার তাকিয়ে দেখে কেউ নাই তারপর রুমে ঢুকে।
তৃষাতুর অনিরুদ্ধকে দেখে আরো কাদতেঁ থাকে কিন্তু সেই শব্দ বাহির পযর্ন্ত ছিলোনা। সে তৃষাতুরের মুখের কাপড় সরিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে ভয় পেয়ো না আমি চলে এসেছিতো। তৃষাতুর যেন প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিয়ে অনিরুদ্ধকে জরিয়ে ধরল। এদিকে অনিরুদ্ধ ওকে শান্ত করে বলল,
-” আমি এসেছিতো কিছু হয়নি দেখো। এভরিথিং নরমাল! তুমি ঠিক আছোতো?”
আজ প্রথম অনিরুদ্ধ তৃষাতুরকে তুমি করে বলল তৃষাতুর ওকে জরিয়ে বলল,
-” হুম আমি ঠিক আছি। ”
-” আমাদের এখান থেকে যেতে হবে তাড়াতাড়ি চলো।ওরা এসে পড়ার আগেই পালাতে হবে।”
তারপর ওরা দুজনে পালাতে যাবে তখনই জোহা আর দলবল চলে আসে তারপর হাত তালি দিতে দিতে বলে,
-” আমি জানতাম অনিরুদ্ধ তুই আসবি। তৃষাতুর তোর জান। আর আমি যখন তোর জানে হাত দিয়েছি তখন যে করেই হোক তুই লোকেশন ট্রেক করে আসবি। কিন্তু মনে রাখিস এইটা আমার দুনিয়া এখানে তুই এসেছিস নিজের ইচ্ছে মতো কিন্তু আর বের হতে পারবিনা।” বলেই তৃষাতুরের হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে আর অন্যদিকে গার্ডদের বলে অনিরুদ্ধকে প্রচুর মারতে তারপর গুলি করতে।
এদিকে তৃষাতুর হাতটা ছাড়াবার চেষ্টা করছে আর কাদতেঁ কাদতেঁ অনিরুদ্ধকে মারতে নিষেধ করছে। এদিকে জোহার গার্ডগুলো রাইফেলের পিছন সাইড দিয়ে তমুল মেরে যাচ্ছে ওকে। তৃষাতুর জোহাকে ধাক্কা দিয়ে অনিরুদ্ধের কাছে আসলে পরক্ষণে জোহা ওকে পরপর দুইটা থাপ্পড় দেয়। এতে ওর ঠোঁটের পাশে কাটা জাইগায় আবারো রক্ত বের হয়। অনিরুদ্ধ প্রচুর শব্দ করে বলে জোহা ওকে ছেড়ে দে তোর যা সমস্যা সব আমার সঙ্গে আমাকে মার। জোহা হেসে বলে ওঠে,
-” ওহহ তো এদিকে একশন হলে অন্যদিকে রিয়েকশন ” তারপর আবারো তৃষাতুর কে থাপ্পড় দিয়ে বলে তোকে তো মারবোই সঙ্গে একেও মারবো। এদিকে থাপ্পড় খেয়ে তৃষাতুর চেয়ারের সঙ্গে বাড়ি খাই ওর মাথায় হালকা একটু আঘাত লাগে। জোহা ওর চুলের মুঠি ধরে আবারো ওঠাই এদিকে তৃষাতুর ব্যাথায় শব্দ করে কাদতেঁ থাকে আর অনিরুদ্ধকে ছাড়তে বলে। ওপরদিকে তৃষাতুরকে এইভাবে মারার জন্য অনিরুদ্ধ গর্জে উঠে বলে,
-” কুত্তার বাচ্চা তোর এমন ভয়ানক মৃত্যু দিবো যেটা দেখে সবাই শিউরে উঠবে আই প্রমিস!!!!”
এটা শুনে জোহা জোরে চিৎকার করে হেসে বলে,
-“টাইমটা দেখ। তোর টাইম খারাপ এরপর কিভাবে আশা করিস হাহা?”
অনিরুদ্ধ মার খেয়ে চোখ মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে গেছে সে তবুও হাসি মুখে বলতে লাগলো ঠিক বিশমিনিট পর সময়টা আমার হবে।
অনিরুদ্ধের এমন ভাবানতর কথা শুনে জোহা তৃষাতুরকে ছেড়ে অনিরুদ্ধকে প্রচুর মারতে থাকে। একটা সময় পর অনিরুদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে মেঝে পরে যাই। এদিকে প্রচুর ব্যাথা নিয়ে তৃষাতুর অনুরাগের কাছে এসে বলে,
-” তোমার কিছু হতে পারেনা। ওঠো অনুরাগ ভাইয়া। প্লীজ ওঠো ” এটা বলেই অনিরুদ্ধের চোখে মুখে চুমু দিতে থাকে। একটা সময় পর জোহা তৃষাতুরের চুলের মুঠি ধরে বলে এসো জান আজ আমাদের বিয়ে হবে। এইইই কে কোথায় আছিস কাজী ডেকে নিয়ে আয়। তৃষাতুর চুলেরমুঠি ছাড়িয়ে জোহার হাতে কামড় দিয়ে বলে,
-” তোকে মরে গেলেও বিয়ে করবো না বাস্টার্ড। ”
জোহা হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
-” এই রুপ সমানতালে এটিটিউডের উপর তো প্রেমে পরেছি। তোমাকে যে বিয়ে করতেই হবে হাহা।”
এই কে কোথায় আছিস ওই হারামজাদাকে মেরে লাশটা গুম করে দে। চলো বেবি কাজী চলে এসেছে আমাদের এখন বিয়ে হবে বলেই তৃষাতুরের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। এদিকে তৃষাতুর অনি ভাইয়া অনি ভাইয়া বলে ডাকতে লাগলো।
_____________
বিয়ে পড়ানো শুরু হওয়ার পর কাজী সাহেব তৃষাতুরকে কবুল বলতে বলে তৃষাতুর কবুল বলে না। প্রাই দীর্ঘক্ষণ এমনটা হওয়ার পরে জোহা তৃষাতুরকে ফোর্সফুলি কবুল বলাতে চাই। কিন্তু মার খেয়েও কবুল বলেনা তৃষাতুর। অন্যদিকে যাদেরকে অনিরুদ্ধকে মারতে পাঠিয়েছিলো তাদেরকে একে একে মেরে জোহার লোকেদেরউপর ফেলে অনিরুদ্ধ। অনিরুদ্ধকে দেখে তৃষাতুর জোহাকে ধাক্কা মেরে ওর পিছনে লুকিয়ে যাই। জোহা উঠে পরে তারপর সোজাসুজি অনিরুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করার জন্য হামলা করে। এখানে জোহা ও কমান্ডো ফর্সের সৈনিক না থাকলেও ট্রেনিংটা ভালো মতো জানে এজন্য অনিরুদ্ধ আর জোহার লড়াইটা সমানে সমানে ছিলো। দুজনে সমান ভাবে মার খাচ্ছিলো। যেহেতু অনিরুদ্ধ কিছুক্ষণ আগে সবার সঙ্গে লড়ছিলো আর কেউ ওকে পিছন থেকে হামলা করে তাই ও অনেকটা দূর্বল বোধ করছিল কিন্তু হাড় মানেনি। একটা পর্যায়ে মাহির আর জন সঙ্গে পুলিশ ফর্স আর অনিরুদ্ধের লোকজন চলে আসলে জোহার লোকজনদের এরেস্ট করে নিয়ে যেতে চায়। এদিকে আমার সঙ্গে মাহির ও যোগ দেয় তারপর দুজনে একসঙ্গে ওকে মেরে আধামরা করে দিই। লাস্টে মাহির নিজের গান বের করে সুট করে দেয় জোহাকে। আব্বু আম্মু তৃণা আন্টি তূর্ণব আঙ্কেল মেধা সকলে খবর পেয়ে চলে আসে। তৃষাতুর কান্না করতে করতে ওদের জরিয়ে ধরে সবাই ওকে শান্তনা দিতে থাকে। মাহির ঠিক আছে দেখে মেধা দৌড়ে একেওপরকে জরিয়ে ধরে। আজকে সবচেয়ে আনন্দের দিন মনে হচ্ছে আমার কাছে কারণ তৃষাতুরের আমাদের জীবনে আর কোন শত্রু থাকবে না। আর সবচেয়ে খুশির খবরতো তৃষাতুর ও আমাকে ভালোবাসে। এরপর সবাই মিলে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হই।
এরপর দুইমাস কেটে যায়। আমি আর মাহির বিজনেস পার্টনার হয়ে গেছি। সেদিন মাহির যেহেতু নিজ হাতে আইন নিয়ে মিহুর মৃত্যুর বদলা নিয়েছিল এজন্য ওর চাকরিটা চলে যায়। তারপর আমরা একসঙ্গে বিজনেস এ যোগ দেই। আমার বেশিরভাগ সময় ল্যাবেই কাটে এজন্য বিজনেসের দেখাশোনা মাহির নিজেই করে। আরেকটি কথা বলতে তো ভুলেই গেছি মেধা আর মাহির পরিবারের সবার উপস্থিতিতে বিয়ে করেছে। এদিকে আমার আর তৃষাতুরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে।
আজ ল্যাব থেকে বাসার উদ্দেশ্যে একটু তাড়াতাড়ি যাচ্ছি কারণ একটুআগে আব্বু আম্মু ফোন দিয়ে বলল তৃষাতুর নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি শোনা মাত্র ডাক্তারকে ফোন দিয়ে বাসায় যেতে বললাম। তারপর নিজেও বের হয়ে আসলাম। বাসায় যাওয়া মাত্র দেখলাম সবাই তৃষাতুরের রুমে মাথা নিচু করে বসে আছে। আমি যেতেই সবাই এমন একটা ভাব করলো না জানি কি হয়ে গেছে? আমি সবাইকে বারবার জিগ্যেস করছিলাম কেউ কিছু বললনা তারপর ডাক্তার বাবু হাসি মুখে আমাকে জরিয়ে বলল,
_” কনগ্রাচুলেশন মিস্টার অনিরুদ্ধ জুবায়ের! আপনি বাবা হতে চলেছেন।”
বাবা হতে চলেছি শোনা মাত্র আমার চোখ খুশিতে ঝলকিয়ে ওঠে। আমি দৌড়ে তৃষাতুরকে জরিয়ে ধরলাম। তৃষাতুর তো আনন্দে কেদেঁই ফেলেছে। কিন্তু পরক্ষণে আমার মুখটা ভারি হয়ে আসলো অজানা আশঙ্কাই। আমি ডক্টর কে বললাম ,
-“তৃষাতুরের তো আঠারো বছর বয়স হলো! ওর পেগনেন্সিতে কমপ্লিকেশন নেই তো ডাক্তার?'”
ডাক্তার একটু চিন্তিত মুখ নিয়ে বলল,
-” দেখুন যেহুতু উনার বয়স আঠারো সেহেতু একটু তো কমপ্লিকেশন থাকবে। কিন্তু আপনারা ওর প্রপার যত্ন নিলে সব কমপ্লিকেশন কাটানো যাবে।”
ডাক্তারের কথায় সবাই একটু নিশ্চিত হয়। ডাক্তার চলে যেতেই আমাদের টাইম দিয়ে বাসার সবাই নিচে চলে যায়। এদিকে আমি তৃষাতুরকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরলাম তারপর ভাবলাম আমাদের ছেলের নাম কি রাখা যাই? তৃষাতুর হেসে বলল,
-“ছেলে হবে তুমি কিভাবে বুঝলে?”
অনিরুদ্ধ মাথা চুলকে মুড বানিয়ে বলল,
-” গেস করলাম এই আরকি!”😅
তারপর হুট করে তৃষাতুর বলে উঠে,
-” কি থেকে কি হয়ে গেলো দেখো। তোমার আমার অকসাৎ বিয়ে, তোমার ভয়ংকর ইগনোর।সেই সময়টার কথা মনে পড়ছে তখন প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। তুমি যে কাউকে না জেনে শুনে হার্ট করে ফেলো। বিয়ের চার পাচ মাস হতেই আমি পেগনেন্ট অথচ এটাই জানিনা তুমি আমাকে ভালোবাসো কিনা? নাকি শুধু আমাকে পরিবারের জন্য মেনে নিলে?”
অনুরাগ মুচকি হেসে তৃষাতুর কে জরিয়ে বলল,
-” আমি তোমাকে ঠিক ছোটবেলা থেকে পছন্দ করতাম। তোমাকে ইগনোর করেছি কারণ আমার ভালোবাসার গভীরত্ব তোমাকে বুঝতে দিতে চাইনি। এখন কোন কথা হবে না শুয়ে পরো আমি খাবার আনছি।”
“অনুরাগের কথায় তৃষাতুর প্রচন্ড শক হয়ে যায়। সে জিগ্যেস করে ছোট থেকে পছন্দ করতেন ভালোবাসতেন কেমনে কি?”
তৃষাতুরের কথায় অনুরাগ মুচকি হেসে বলে,
-“সব কথার উত্তর হয় না। তবে #হয়তো_তোমারি_জন্যেই সব উত্তর সাজিয়ে রেখেছি এই মনে, পারলে খুজে নেও!! ”
অনুরাগের এমন ধাধার মতো উত্তরে তৃষাতুর কোন প্রতিক্রিয়া করলোনা। অনুরাগ মুচকি হেসে খাবার আনতে চলে গেল। এদিকে তৃষাতুর ও হেসে বলল, “সবকিছু ক্লিয়ার হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। কিছু রহস্য নাহয় রহস্যের মতো থাক। কিন্তু ভালোবাসা আমি পেয়েছি তার সেই অস্তিত্ব আমার গর্ভে। শুনো, ভালোবাসা আমি পেয়েছি হয়তো তোমারি জন্য!!!!!!!!!
সমাপ্ত
(