১৬ পৃষ্ঠায় পর্ব ১৩

#১৬_পৃষ্ঠায়
পর্ব – ১৩ #ধূসর_রঙের_শার্ট (প্রথম অংশ)
লেখিকা -‌ Zaira Insaan

নিরবতা ছেয়ে গেল নিনি তাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে আজ বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে এনোন কে। হঠাৎ-ই এনোন কোমড়ের স্পর্শ গাঢ় করে তাকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিল তারপর হাঁসফাঁস কন্ঠে বলল,, মাফ করে দিও আমাকে!”
নিনি চমকে উঠলো। অস্থিরতা ঘিরে ধরলো এনোন কে। হাঁসফাঁস করতে লাগল সে।
নিনি ছোট করে জবাব দিল ‘হু’।
আরো ভালোভাবে চেপে ধরল সে বলল,, তোমার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করেছিলাম I’m sorry!”
নিনি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,, আচ্ছা।”
ভ্রু কুটি করল এনোন তাকে আলতো ভাবে ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে বলল,, হু আচ্ছা এসব কি? মাফ করছো? নাকি…?” বলে থামলো এনোন।
নিনি মাথা নুয়ে রেখে আস্তে করে বলল,, করেছি।” এনোন কপাল কুঁচকালো।
নিনি বলল,, এসব বাদ দেন তো অতীত ভালো লাগে না আমার শুধু শুধু কোন দরকার আছে পুরোনো কথা মনে করার।”
এনোন শান্ত চোখে তাকালো নিনি চোখ সরিয়ে নিল। বেশিক্ষণ তাকাতে পারছে না সেই চোখে। এনোন তার গালে হাত রাখল নিনি চমকে উঠলো। বলল,, তোমার প্রতি আমার এক ভালোলাগা অনুভূতি কাজ করে।”
অবাক হলো নিনি। বিশ্বাস হচ্ছে না তার মনে মনে ভাবলো,, এতো পরিবর্তন?”
এনোন মুচকি হেসে কিছু বললে তার আগে নিনি বলল,, মদ খায়ছেন?” হালকা শব্দ তুলে হেঁসে দিল এনোন। নিনি দেখল হাসলে তাকে অপরুপ সুন্দর লাগে। বাম গালে হালকা টোল পড়ে যা চাপ দাঁড়ির জন্য বেশ সুন্দর করে ফুটে উঠেছে। তাকে হাসতে দেখে নিনিও মুখের হাসি চলে আসলো।
হাসি থামিয়ে এনোন বলল,, তুমি থাকতে মদের প্রয়োজন নেই আমার।”
এর মানে বুঝলো না নিনি ভ্রু কুটি করে বলল,, মানে?”
কোমড় আকড়ে ধরে কাছে টেনে আনলো তাকে। নিনি চমকে তার বুকে হাত রাখলো।
কাছে এনে এনোন আস্তে করে বলল,, চোখ বন্ধ করো।”
কপাল কুঁচকালো নিনি এনোন আবারো বলল,, করো!” ঢোক গিলে চোখ জোড়া বুঁজে নিল নিনি। দু এক সেকেন্ড অপেক্ষা করে নিজের মুখে নিঃশ্বাসের আবাশ অনুভব করলো এক চোখ হালকা করে খুলল। এনোন তার ঠোঁট জোড়ায় অনেক কাছে আসলো তাদের মধ্যে কিঞ্চিত দূরত্ব। নিনি হচকচিয়ে ভয়ে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভড়কে উঠলো এনোন।
নিনি রেগে ফুলে বলল,, খারাপ আপনি, অভদ্র!” বলে সে কাঁদো কাঁদো মুখ করে রেগে চলে গেল। নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগল তার হয়ত একটু বেশি করে ফেলেছে নিনির রিয়েকশন দেখে সে নিজেও চমকে উঠলো।
____________

নিচে নেমে এসে এনোন গম্ভীর হয়ে বলে,, আমি বাহিরে যাচ্ছি।”
সর্ণালি বলল,, নাস্তা খেয়ে যা এনোন।” এনোন ‘না’ বলে নিনির দিকে আড়চোখে তাকালো সে এখনো রেগে আছে তাকাচ্ছেও না সে এনোনের দিকে। এনোন গোপনে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে আর কাউকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল। সবাই নিনির দিকে তাকালো তার ব্যবহার ও অদ্ভুত দেখাচ্ছে।

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। এনোন এখনো ঘরে ফিরেনি। সর্ণালি চিন্তা করতে লাগলো। ফোনের পর ফোন দিতে লাগল সিনান। কল ঢুকছে না। সবার চিন্তা দেখে এবার নিনিরও চিন্তা হতে লাগল। দুশ্চিন্তা!
সকালে এনোনের সাথে করা ব্যবহার নিয়ে খারাপ অনুভব হতে লাগল তার। হয়ত ভুল হয়েছে। রুমে গিয়ে পায়চারি শুরু করে দিল সে। নখ দিয়ে আঙুল খামচাতে লাগল। খামচাতে খামচাতে এক পর্যায়ে মোটা চামড়া তুলে ফেলল তাও এতে ভূক্ষেপ হলো না তার। মোবাইল নিয়ে কল করলো সে। বন্ধ! এবার তার রাগ হতে লাগলো। রাগে কান্না চলে আসলো তার। আনমনে বলে বসল,, আসছেন না কেন আপনি!”

সময় পেরুতে লাগল। শহর নিস্তব্ধ হয়ে আসলো। রাত গভীরে ডুব দিল। উজ্জল সাহেব সেই কখন বেরিয়ে পড়ছেন এনোনের তালাশে। ঘরে হয়রানি হয়ে ফিরলেন তিনি নিনি রুম থেকে বের হলো। সবার দৃষ্টি কেড়ে নিল সে,
সর্ণালি গলা ভাঙা আওয়াজে প্রশ্ন ছুড়লেন,, এনোনের সাথে ঝগড়া হয়েছে তোমার?”
নিনি কিছু বলল না শুধু মাথা নিচু করে রাখল।
রাত পৌনে এক টায় ঘরে ঢুকলো এনোন। সবাই তার দিকে চমকে তাকালো সেও চমকালো সবাইকে জেগে থাকতে দেখে।
উজ্জল সাহেব রেগে বলেন,, কই ছিলি তুই?”
এনোন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,, বাহিরে ছিলাম।”
উজ্জল সাহেব জিজ্ঞেস করেন,, বাহিরে কোথায় ছিলি?”
এনোন এবার বিরক্ত হলো বলল,, দূরে কোথাও গিয়েছিলাম কেন কি হয়েছে?”
উজ্জল সাহেব এবার রেগে গেলেন বললেন,, ফোন করে দিলে কি হতো যে আসতে দেরি হবে তোর… সকালে এক তো নাস্তা না করে বেরিয়েছিস তার উপর আসার নাম ও নিচ্ছোস না, তোর মা বউ টেনশন করতেছে সেদিকে খেয়াল আছে!?”
এনোন তাকালো সর্ণালি ও নিনির দিকে। নিনি ভেজা চোখে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে এনোন দৃষ্টি সরালো।
সর্ণালি জিজ্ঞেস করেন,, খেয়েছিস কিছু?” এনোন ‘হুম’ শব্দ করে চুপ করে রইল।
উজ্জল সাহেব উপরে উঠতে যাবে তখন এনোন গম্ভীর স্বরে বলল,, কালকে আমি শহরে বাইরে যাব কাজে।”
উজ্জল সাহেব পেছনে ফিরলেন কপাল কুঁচকে বলেন,, কত দিনের জন্য বলে যা।”
এনোন বলল,, জানি না কাজ শেষ হলে তবেই ফিরবো।” বলে নিনির দিকে আড়চোখে তাকালো নিনি হা করে আছে।
সর্ণালি বলেন,, কিছু খেয়ে নে আয়।”
এনোন বলল,, না আমি খাব না।” বলে সোজা রুমের দিকে চলে গেল নিনির পাশ কেটে।

নিনি রুমে আসতেই দেখে এনোন শার্ট খুলছে। নিনি চোখ নামালো এনোন ভ্রু কুঁচকে আড়চোখে তাকালো একবার তারপর তোয়াল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। নিনি বাথরুমের দরজার দিকে বিড়বিড় করে বলল,, আমাকে ইগনোর করছে!?”
কিছুক্ষণ পরেই এনোন চুল মুছতে মুছতে ভেজা গায়ে বেরিয়ে আসলো। নিনি তার সামনে এসে দাড়ালো তারপর মাথা হালকা নিচু করে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,, আমিও যাব আপনার সাথে।”
“পারবো না” কথার পিঠে ফট করে বলল এনোন। যেন সে আগের থেকেই জানতো নিনি এটাই বলবে।
নিনি প্রশ্নাত্তুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,, কেন পারবেন না?”
এনোন উত্তর দিল না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল একবার এলোমেলো করছে আবার ঠিক করছে। নিনি রেগে নিঃশ্বাস ফেলল তারপর গিয়ে এনোন ও আয়নার মধ্যে যতটুকু ফাঁকা সেখানে মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালো বরাবর এনোনের সামনে। এনোন তাকে না দেখার ভান করেই নিজের মত আয়না দেখে যাচ্ছে।
নিনি কোমড়ে দুহাত রেখে অভিমান সুরে বলল,, আপনি আমাকে ইগনোর করছেন?”
এনোন তাকে না দেখেই বলল,, জানো যেহেতু তো এটেনশন নিচ্ছো কেন!”‌
ফসে উঠলো নিনি কোমড় থেকে হাত সরিয়ে পায়ের আঙুলে ভর করে তার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো সে শুধু এনোনের গলা পর্যন্তই হতে পারলো।
আগের মত দাঁড়িয়ে বলে মাথা নুয়ে দোষী গলায় বলল,, সকালের কান্ডে এমন করছেন আমার সাথে?”
এনোন তুচ্ছ ভাবে বলল,, লজ্জা করে না অভদ্র লোকের সাথে কথা বলতে?”
নিনি অবাক হয়ে তাকালো। এনোন আলমারি খুলে কালো গেঞ্জি নিয়ে সেখান থেকে সরে পড়ে নিল। নিনি সেখানে ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এনোন আর কিছু না বলে বেডের মাঝখানে বালিশ দিয়ে অপর পাশে শুয়ে পড়লো।
#১৬_পৃষ্ঠায়
পর্ব – ১৩ #ধূসর_রঙের_শার্ট (বাকি অংশ)
লেখিকা – Zaira Insaan

এনোন তুচ্ছ ভাবে বলল,, লজ্জা করে না অভদ্র লোকের সাথে কথা বলতে?”
নিনি অবাক হয়ে তাকালো। এনোন আলমারি খুলে কালো গেঞ্জি নিয়ে সেখান থেকে সরে পড়ে নিল। নিনি সেখানে ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এনোন আর কিছু না বলে বেডের মাঝখানে বালিশ দিয়ে অপর পাশে শুয়ে পড়লো।
নিনিও আর কথা কথা না বাড়িয়ে অভিমান নিয়ে শুয়ে পড়লো তারপর মুখ ও আওয়াজ ব্যঙ্গ করে বিড়বিড় করে বলল,, লজ্জা করে না অভদ্র লোকের সাথে কথা বলতে? হু দুনিয়ার নাটক!” বলে চোখ বন্ধ করলো। এনোন পেছনে ফিরে তাকালো তারপর আবার শুয়ে পড়লো।
____________

আঁধারের অবকাশ শেষ। নতুন দিনের নতুন প্রহর শুরু হয়েছে। তপ্ত রোদ মুখে পড়তেই মুখ বাজেভাবে কুঁচকে ফেলে নিনি।
“পর্দা সরিয়েছে কে?” বিরক্ত হয়ে বলে উঠে নিনি।
বিপরীতে কোন উত্তর মিলল না তার। হঠাৎ ই এনোনের কথা মনে পড়লো । ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে দাঁড়ালো পুরো রুমে খুঁজলো তাকে কিন্তু এনোন নেই! অশ্রুর ভিড় জমলো তার চোখে। এনোন না বলেই চলে গেল! বসে টপটপ করে পানি ফেলতে লাগলো সে। দরজার খোলার শুনে চোখ উঠে তাকালো, এনোন! মুখে হাসি ফুটে উঠে তার দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। ভড়কে উঠলো এনোন, হঠাৎ? হঠাৎ হঠাৎ কি হয় তার?

এনোন ধীরস্তে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,, কি হয়েছে?”

নিনি কান্নারত অবস্থায় ভাঙা ভাঙা আওয়াজে বলল,, আমাকে না বলে চলে গেলেন কেন?”

এনোন বলল,, ওহ্ পানি খেতে হলে তোমাকে বলে যেতে হবে বুঝি!”

দৃঢ় চমকালো নিনি। মাথা উঠিয়ে দৃষ্টি তার দিকে করে বলল,, মানে?”

“পানি খেতে গিয়েছিলাম নিচে”

বোকা বনে গেলো নিনি। দূরে সরে আমতা আমতা করে মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,, ওহ আচ্ছা, আমি ভেবেছিলাম আপনি চলে গেছেন।”‌

“ল্যাগেজ তো এখানে” বলে চোখে ইশারায় দেখালো নিনি কে।
আরো বেশি বোকা ও লজ্জা পেয়ে গেল নিনি। নিজেকে মনে মনে কয়েক ঝাঁক গালি মারলো।
এনোন আলমারি খুলে ধূসর রঙের শার্ট বের করে বাথরুমের দিকে যেতেই নিনি হড়বড়িয়ে কাছে এসে টেনে ধরলো সেই শার্ট টি। কপাল কুঁচকালো এনোন।

নিনি শার্ট নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে বলে,, ছাড়েন শার্ট।”

“কেন?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করল এনোন।

নিনি তার দিকে এক পলক তাকিয়ে শার্ট টানতে টানতে বলল,, কেন মানে কি? ছাড়তে বলছি!”

হুট করেই ছেড়ে দিল এনোন। পড়ে যেতে যেতে কয়েক কদম পিছিয়ে গেল নিনি। এভাবে হুট করে ছেড়ে দিবে জানতো না নিনি।

নিনি সেই শার্ট টি ঠিক করতে করতে বলল,, আরেকট শার্ট নেন, এটা আমার।”

ভ্রু জোড়া আরো বেশি কুঁচকে গেল এনোনের। নিনি কি বলছে তা আগাগোড়া কিছুই বুঝেনি সে।

এনোন কাছে এসে দাঁড়ায় বলে,, তোমার মানে?”

নিনি আড়চোখে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,, এ ধূসর রঙের শার্ট টা আমার ভালো লাগে তো এটা আমার, আপনি অন্য আরেক টা নেন।” বলে শক্ত করে চেপে ধরল সেই শার্ট।
এনোন তার দিকে হালকা ঝুঁকে শার্ট টি হাত দিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। ভালোভাবে চেপে ধরে আছে বুকের সাথে। তার বাচ্চা সুলভ আচরণ দেখে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল এনোন তার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরেকটা শার্ট বের করলো। নিনি পিটপিট করে তাকালো। তারপর শার্ট টি নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলল। বাথরুম থেকে গাঢ় নীল রঙের শার্ট পরিধান করে আসলো এনোন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো ঠিক করছে। নিনি এক কোণায় দাঁড়িয়ে তাকে এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে মন খারাপ হচ্ছে তার। এনোন তাকে না দেখলেও বুঝলো যে নিনি ওকেই দেখে চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক হতেই হাতে ল্যাগেজের হ্যান্ড ধরলো এনোন তারপর কোন কিছু না বলে দরজার কাছাকাছি আসতেই নিনি দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলো। অবাক হলো না এনোন সে অনেকক্ষণ যাবত খেয়াল করছে নিনি তার কাছে আসতে চাইলেও আসতে পারছিল না।

এনোন কে জড়িয়ে ধরতে না দেখে নিনি কানের কাছে এসে বলল,, ওমা! জড়িয়ে ধরেন।”

এনোন বলল,, তোমার কে তো আবার ছোঁয়া যাই না ছুঁলে তো অভদ্র ট্যাগ দিয়ে দিবা।” বলে তাকে দুহাতে শক্ত জড়িয়ে ধরল।
নিনি বুঝলো এনোন এখনো ওই বিষয়ে আটকে আছে কিন্তু পাত্তা দিল নিনি। সব ঠিক করে নিবে সে।
একটু দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে ‌নিনি বলল,, পৌঁছে কল দিবেন, সময় মত খেয়ে নিবেন, ফ্রি হলে কল দিতে থাকবেন আর সাবধানে থাকবেন।”

এনোন হয়রানি সুরে বলল,, একই ডায়লগ আবারো শুনতে হবে আমার।”

নিনি না বুঝে বলল,, মানে?”

এনোন ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,, নিচে গিয়ে মা ও একই ডায়লগ মারবে।”

‘ওহ’ বলে মুচকি হাসলো নিনি। দুজনেই নেমে যায়।

এনোন নেমে আসতেই সর্ণালি বলেন,, সব নিয়েছিস?”

এনোন ‘হ্যা’ বললেও। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিজ্ঞেস করলো সর্ণালি। এনোন বিরক্ত হলো না প্রত্যেক সময় করে।

এনোন যেতে নিলে উজ্জল সাহেব বলেন,, সুজন কে সহ নিয়ে যা ও তোকে দিয়ে আসবে।”

এনোন বলল,, না লাগবে না আমি একা যেতে পারবো।”

নিনি বলল,, আরে সুজন ভাই কে সহ নিয়ে যান উনি তোমাকে স্টেশন অব্দি দিয়ে নাহয় চলে আসবে।”

এক কথা সবাই বলল। সবার জোরাজুরিতে তে বাধ্য হয়ে আচ্ছা বলল এনোন। উজ্জল সাহেব কল করে ডেকে নিলেন সুজন কে। এনোন নিজেকে বাচ্চা ভাবতে শুরু করল বাচ্চাদের মত ট্রিট করছে এরা। এর আগেও অনেক বার একা গিয়েছিল তাহলে আজকে এরা এমন করছে কেন! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সুজন চলে আসলো।

সিনান উৎসুক কন্ঠে বলল,, এই তো সুজন ভাই চলে আসছে।”

এনোন ও সুজন একসাথে বেরিয়ে পড়লো। সবার কথামতে সুজন ড্রাইভ করবে আর এনোন পাশে বসবে। সুজন ড্রাইভ সীটে বসলো
এনোন সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে সর্ণালি কাছে আসতেই সর্ণালি বলেন,, পৌঁছে কল দিবি, সময় মত খেয়ে নিবি, ফ্রি হলে কল দিবি আর সাবধানে যাবি আর চোখ কান খোলা রাখবি।”
এনোন মাথা নাড়লো তারপর নিনির দিকে তাকালো নিনি হাসিমাখা মুখ করে আছে ‌তাকে দেখে সে নিজেও হেসে বেরিয়ে গেল।
_____________

এনোন চলে যাওয়াতে অনেকটা একাকী লাগতে লাগলো সবার। সবচেয়ে বেশি মনমরা হয়ে গেল নিনি। সে কবে রুমে গিয়েছিল আর বের হয়নি সে। বারান্দায় বসে এনোনের কথা ভাবতে লাগলো। রুমে এসে ঘড়ির দিকে তাকালো সবে মাত্র বিশ মিনিট হয়েছে তার যাওয়ার। আর এ মাত্রই তার সইছে না। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে উপুড় হয়ে শুয়ে মোবাইল টিপতে লাগল সে। কিন্তু সবকিছু যেন বোরিং লাগছে তার। মোবাইল রেখে নিচে নেমে গেল।

রান্নাঘরে ঢুকে সর্ণালির সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়ে বলল,, মা এগুলো দেন আমি এসব কেটে দেয়।”

সর্ণালি কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে,, কোন কিছু ভালো লাগছে না তাই না?”

পিলক চমকালো নিনি মেকি হেসে বলল,, কেমনে বুঝলেন?”‌

সর্ণালি রান্না করতে করতে বলেন,, যখন উনিও শহরের বাইরে যেতেন তখন আমার কোন কিছু ভালো লাগতো না তখন আমিও রান্নাঘরে এসে শ্বাশুড়ির হেল্প করতাম।”

বিপরীতে হালকা স্বশব্দে হাসলো নিনি। রান্নাঘরে কাজ সেরে ঘড়ির দিকে তাকালো মাত্র এক ঘন্টা হয়েছে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে রুমে চলে গেল নিনি। গোসল শেষে বাহিরে এসে আবারো ঘড়ির দিকে তাকালো পনেরো মিনিট হচ্ছে। প্রচন্ড বিরক্ত হলো নিনি। এ সময় গড়াচ্ছে না কেন? এত কাজ করার পরেও মাত্র এক ঘন্টা পনেরো মিনিট দেখাচ্ছে। মুখ দিয়ে বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করে আবারো নিচে নামলো সে। সর্ণালির সাথে কথা বলার ফাঁকে আড়চোখে ঘড়ির দিকে তাকালো মাত্র পাঁচ মিনিট হয়েছে। রেগে ঘড়ির কাছ থেকে চোখ সরালো সে। সর্ণালি সব খেয়াল করলেন আর মুচকি হাসলেন।

এমন সময় দৌড়ে আসলো সিনান সবাই উঠে দাঁড়ালো উজ্জল সাহেব বলেন,, কি হয়েছে তোর?”

সিনান কান্না করতে করতে বলল,, সুজন ভাইয়ের কল এসেছে, ভাইয়ার নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে উনাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছে সুজন ভাই আমাদের তাড়াতাড়ি আসতে বলছে।”

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো নিনির সবকিছু গোলমাল লাগছে তার। কথাটি শ্রবণ হলেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। উজ্জল সাহেব দ্রুত বেরিয়ে পড়লেন। সর্ণালি শকড্ খেয়ে সোফায় বসে পড়লেন। সিনান কান্না করতে করতে সামলানোর চেষ্টা করলো সর্ণালি কে। নিনি ঠাই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখে জমানো অশ্রুজল গুলো পড়ছে না।

উজ্জল সাহেব গাড়ি এনে তাদের ডাক দিয়ে বলেন,, তাড়াতাড়ি আসো।”

সবাই দ্রুত গাড়িতে উঠলো। সিনানের মেসেজে পাঠানো লোকেশন দেখে উজ্জল সাহেব কে বলল।
দ্রুত ড্রাইভ করছেন তিনি। এনোনের সাথে অতিবাহিত করা সকল মুহূর্ত গুলো মনে পড়তে লাগলো নিনির। বুক মোচর দিয়ে উঠলো হঠাৎ দুখরে কেঁদে ওঠে সে।
____________

গাড়ি বরাবর হসপিটালের সামনে থামালো উজ্জল।
গাড়ি থেকে নেমে তারা হসপিটালে ঢুকলো। মেসেজ দেখে কেবিনে রুমে ঢুকলো সুজন পাশে বসে আছে। তার পাশে পেশেন্ট বেডে বসে আছে এনোন।
সর্ণালি দৌড়ে এসে এনোন কে জড়িয়ে ধরল। কয়েক মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল এনোন। উজ্জল সাহেব ও সিনান তাকিয়ে দেখল ডান পায়ে প্লার্স্টাড করা ডান হাতের কব্জি বেন্ডেজ করা ও মাথায় লম্বা বেন্ডেজ করা।

উজ্জল সাহেব প্রশ্ন ছুড়লেন,, ড্রাইভ তো সুজন করেছিল তো এনোন কেমনে এতো ব্যথা পেল?”

সর্ণালিও ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওদের দুজনের দিকে। সুজন ও এনোন দুজনেই দৃষ্টি নামালো। উজ্জল সাহেব আবারো ধমকে প্রশ্নটি করতেই।

সুজন ভয়ে বলল,,‌ কিছু দূর যেতেই এনোন বলল সে নাকি ড্রাইভ করবে আমি মানা করার পরেও সে জোরাজুরি করতে লাগলো তো শেষ পর্যায়ে সে ড্রাইভ করলো।”

সবাই কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো এনোনের দিকে এমন কি নিনিও। এনোন কারোর দিকে তাকিয়ে মেঝেতে তাকিয়ে রইল।

সিনান বলল,, তো এক্সিডেন্ট কেমনে হলো?”

কথাটি কেউ উত্তর দিলো না। সুজন বলতে চাইলে এনোন ইশারা করে চুপ করতে বলল। সেসময় এনোন কে দেখে নিল নিনি।

পেছন থেকে নিনি বলল,, ইচ্ছে করে করিয়েছেন আপনি?”

সবাই অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। এর চেয়ে বেশি অবাক হলো এনোন ও সুজন।

উজ্জল সাহেব এদের দেখে ধমকে বলেন,, কেউ বলছো না কেন? বলো।”

ধমক শুনে সুজন মুখ ফঁসকে বলে দিল,, হ্যা।”

বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকালো এনোন। কপাল কুঁচকালো সবাই।

সর্ণালি বলেন,, কেন করেছিস এনোন?”

এনোন মুখের ভঙ্গি বিরক্ত করে বলল….

(চলবে…)

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here