#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২০
কি থেকে কি হয়ে গেলো।আজ কতোটা সুখী হতো তারা।
যেখানে আনন্দের বয়ে যাওয়ার কথা সেখানে
শুধু একরাশ ভয়,আতংক,অপরাধবোধ আর সবচেয়ে বড় ভালোবাসা হারানোর তীব্র আকাংখা।
বাড়ির সবাই এসেছে নিভৃতের বাবা,মা,কাকা,কাকি,দাদা,দাদি,নিঝুমের বাবা,মা, সোহা সবাই।
সবার মুখে আপনজনকে হারিয়ে ফেলার ভয় থাকলেও
আহানের বাবা, মা বেজায় খুশি।
নিঝুমের এই অবস্থার কথা শুনে তাদের থেকে বেশি খুশি মনে হয় আর কেউ নেই।
নিঝুমের বাবা আর মা’র পাগলপ্রাই হয়ে যাবার উপক্রম।
নিজের মেয়ের এই অবস্থা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে নাহ।
নিঝুমের মা’কে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।তিনি বার বার নিজের জ্ঞান হারাচ্ছেন।
নিঝুমের বাবাও ভেংগে পরেছেন।
নিভৃতের মা কান্না করছেন!
নিভৃতের বাবা, নিভৃতের দাদা,দাদুকে সামলাচ্ছেন।
দুজনেই বুড়ো মানুষ আর এরকম একটা খবর তারা মেনে নিতে পারছেন নাহ।
সবার একই প্রশ্ন কিভাবে হলো এমনটা?
কিন্তু নিভৃত কিছুই বলছে নাহ।
নিভৃত অ.টি এর সামনে বসে আছে।আর একদৃষ্টিতে অ.টির দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে আছে,চুলগুলো উষ্কখুষ্ক।
এখান থেকে কেউ তাকে উঠাতে পারছে নাহ।
নিঝুমকে অ.টি তে নেওয়ার পর থেকেই এরকম স্তব্ধ হয়ে বসে আছে নিভৃত।
নিভৃত ভাবছে অতীতের কথা কতই না সুন্দর অনুভূতি ছিলো তার সাথে নিঝুমের দেখা হওয়াটা।
মেয়েটা ভয়ে একটুও মাথা তুলে তাকায় নি।
এক দেখায় এতোটা পাগল করেছে নিভৃতকে যে সে ঘুমোতে পারতো না,খেতে পারতো নাহ,কিছুই করতে পারতো নাহ।
আর আজ সেই ভালোবাসার মানুষটিকে নিজ হাতে
মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে সে।
————–অতীত——————–
সেদিন ছিলো সোমবার নিভৃত।একটা বৃদ্ধাশ্রমে যাবার জন্যে রওনা হয়েছিলো।সেখানে আজ বৃদ্ধাদের সাথে সময় কাটাবে প্রাই যায় নিভৃত সেখানে।যথারিতি আজও যাচ্ছিলো।জ্যাম পড়ায় গাড়ি থামিয়ে বসেছিলো।
হঠাৎ নিভৃত এর গাড়ির কাচটা জোড়ালো আঘাতে ভেংগে গেলো।ফলে নিভৃত এর শরীরেও খানিক কাচের টুকরোগুলো ছিটকে আসলো।ভাজ্ঞিস নিভৃত আগেই হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিয়েছিলো নাহলে ওর নাক মুখে কাচ এর টুকরোগুলো ডুকে যেত।রোদের তাপ প্রখর হওয়ায় নিভৃত ভালোভাবে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না।নিভৃত ভাবছে কার এতো বড় সাহস যে নিভৃত রায়হান এর গাড়ির কাচে ঢিল ছুড়ে মারে। সে বাহির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলে,,
—“রাজ!! চল বাহিরে দেখে আসি কার এতো বড় স্পর্ধা যে আমার গাড়িকে উদ্দেশ্য করে ঢিল ছুড়ে।”
রাজ ছেলেটি ” জ্বি ভাই!” কথাটি বলেই একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে নেমে দাড়ায় গাড়ি থেকে।নিভৃত নিজের সানগ্লাসটা ঠিকভাবে পড়ে নিয়ে সেও গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়।রাফি ছেলেটি ইশারা করতেই ট্রাফিক পুলিশ ৫ মিনিট. এর মাঝে পুরো রাস্তাটা ফাকা করে দেয়।কারন কেউকি যেচে নিভৃতের রায়হানের মুখমুখি হতে চায়। সাধারন পাবলিক ওকে না চিনলেও পুলিশ অফিসার রা ভালোভাবেই চিনি জানে তাকে।তাই কেউ কি যেচে বুলেট খেতে চাইবে।উহু কিছুতেই নাহ।
———–
ভয়ে চোখ মুখ খিচে দাড়িয়ে আছে নিঝুম।ভয়ে তার গলা শুকিয়ে কাঠ।যখন তার বেস্ট ফ্রেন্ড রিধি বলেছে এটা নিভৃত রায়হান এর গাড়ি তখন থেকেই বেচারি ভয়ে শেষ।কি করবে মাথায় তার কিছু আসছে না। নিভৃত রায়হান হলো এই শহরের একজন নামকড়া বিজনেজম্যান। নিভৃত রায়হান পুলিশ, র্যাব সবাই চিনে গ্যাংস্টার নিভৃত।কারন সে একই সাথে বিজন্যাসম্যান হলেও গ্যাংস্টার জগতেও তার প্রভাব ব্যাপক।কিন্তু সে জন সাধারণ এর সামনে নিজের গ্যাংস্টার রূপ আনে না কখনোই। তবে যেচে কেউ তার সামনে যায় না কারন তার রাগ অনেক।নিভৃতের রাগের অতিরকিক্ত রাগের কারনেই সবাই তাকে দেখে ভয় পায়।দেখা যায় একটু সামান্য ভূল হলেও সে ঠুস করে গুল্লি করে ঠাস করে গায়েব ও করে দেয়।আর এমন একটা লোকের ওই গাড়ির কাচ সে ভেংগে ফেলেছে। নিঝুম ভয়ে ভয়ে বললো,
—“রিধিরে এইবার আমার কি হবে?”
রিধি বিরক্তি নিয়ে বলে,
—“,ইট ছুড়ার সময় দেখেশুনে ছুড়তে পারলি না?এখন তোর কারনেই দেখা যাবে আমাকেই শুট করে দিয়েছে।”
—“বাচালে দোস্ত এমন বলিস কেন?বুঝালেই সে বুজবে!”
—“হ্যা তো যাচ্ছিস না কেন?যা উনাকে বুঝা!”
—“,তুই আমার বন্ধু না শত্রু কোথায় আমাকে একটু সান্তনা দিবি তা না করে আমাকে উল্টো ভয়ের সাগরে চুবিয়ে মারছিস।”
—” হ্যা আর আমি তো ভয়ের জন্য ডিস্কো নাচ্ছি।”
ওদের কথার মাঝেই সামনে এসে দাড়ায় রাজ।তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
—” আপনারা ইট ছুড়ে মেরেছন?”
রাজ এর এহন প্রশ্ন শুনে নিঝুম আর রিধি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবারো রাজের দিকে তাকালো তারপর উপর নিচ মাথা নাড়ালো তার অর্থ এই যে হ্যা তারাই ছুড়েছে।
—“তা কেন ছুড়ে মেরেছেন?”আবারো প্রশ্ন করলো রাজ।
—“ইয়ে মানে স্যার ও..ওই যে হ..হয়েছে ক..কি…”
রিধিকে থামিয়ে দিয়ে রাজ আবারো বলে,,
—” এইরকম না করে সোজাভাবে উত্তর দিন! নাহলে স্যুট করে দেবো।”
এরকম কথা শুনে ভয়ে আর কিছু বলার সাহস করলো না রিধি।এইবার নিঝুম সাহস করে বলে,
—“ভা..ভাইয়া আ..আসলে ও না আ..আমি ইট ছু..ছুড়ে মে..মেরেছি ওকে ছেড়ে দ..দিন।”
ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে থাকে রাজ।তার মাথা আউট ওফ কোন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছে এইটুকু একটা মেয়ে সেকিনা ভাইয়ার গাড়িতে ইট ছুড়ে মারে।এতো সাহস কি করে হলো এদের।এখন আবার ভয়ে কাপছে।উহুম!নিশ্চিত কিছু ঘাপলা আছে।রাজ আবার কিছু বলতে যাবে পাশ থেকে নিভৃতের গম্ভীর আওয়াজ শুনা গেল,,
—“রাজ! ডোন্ট আস্ক এনিথিং টু হার!জাস্ট শ্যুট!”
ভাইয়ের কথায় খানিক অবাক হলো রাজ।ভাই এইসব মেয়েলি টাইপ বিষয় থেকে সবসময় দূরেই থাকে।কোন মেয়েকে উনি নিজের কাছে আসতে দেয় না।সেখানে উনি আজ আগবাড়িয়ে কথা বলছেন।অবাক হলো রাজ।কিন্তু ভাই যা বলেছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সে।তাই মাথা দুলিয়ে গান পয়েন্ট করলো নিঝুমের মাথা বরাবর।নিঝুম এখনো চোখ মুখ খিচে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।রিধি রাজ’কে নিঝুমের দিকে গান তাক করতে দেখেই একপ্রকার ছুটে গেল নিভৃতের দিকে। তারপর কান্না গলায় বলতে শুরু করে,,
—“ভাই..ভাইয়া ও..ওকে ছেড়ে দিন।ওর কোন দ..দোষ নেই। আমরা সিগ্নাল পড়ার কারনে স্কুটি ফুটপাতের কিনার ঘেসে দার করিয়ে ছিলাম আর ওই ফুটপাত দিয়ে কিছু বখাটে ছেলেরা যাওয়ার সময় নিঝুমের স্কার্ফ ধরে টান দেয়।ফলে নিঝুম রেগে গিয়ে পাশ থেকে ইটের টুকরো ওদের দিকে ছুড়ে মারে আর তা ভূল বশত আপনার গাড়ির কাচে গিয়ে লাগে।ভাইয়া এমনটা করবেন না প্লিজ।ওকে ছেরে দিন।”
রিধি কথাগুলো বলে করুন চোখে তাকালো নিভৃতের দিকে।নিভৃত একবার রিধিকে দেখে আশপাশ দেখলো তারপর তাকালো নিঝুমের দিকে।সাদা ফোতুয়া,নীল স্কার্ট,আর নীল স্কার্ফ গলায় পেচানো ঘন কালো কেশগুলো কোমড় অব্দি দুল খাচ্ছে।মাথা নিচু করে আছে বিধায় চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।বুকটা কেমন কেপে উঠলো।বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলো না চোখ সরিয়ে নিলো নিঝুমের উপর থেকে। রাজ কে বললো,,
—“রাজ লিভ হার! লেট্স গো!”
বোকা বনে তাকালো রাজ নিভৃতের দিকে। একবার বলছে শ্যুট করে দিতে আবার বলছে ছেরে দিতে।হলো কি ভাইয়ের?রাজ আর কথা না বারিয়ে চললো নিভৃতের পিছু পিছু।নিভৃত যেতে গিয়েও আর একবার তাকালো পিছু ফিরে নিঝুমের দিকে।তারপর রিধি’কে বললো,
—“নেক্সট টাইম বি কেয়ারফুল!আর যেনো তোমাদের আমার আশেপাশেও না দেখি।তাহলে এইবার বেচে গেলে ভেবেছ দেখে পরেরবার আর ছাড় দেবো না।”
বলেই গট গট পা ফেলে চলে গেলো সে।রাজ ও চলে গেলো ওদের দিক খানিক তাকিয়ে।
রিধিও গিয়ে নিঝুমকে টেনে ধরে স্কুটিতে বসালো তারপর নিজে বসে স্কুটি স্টার্ট দিলো।নিঝুম এখনো চুপ-চাপ বসে আছে। তারপর রিধিকে
বলে,
—“লোকটা কি ভয়ানক!কারন না শুনেই ডিরেক্ট হুকুম দিলো আমাকে শ্যুট করে দিতে।এই লোকের পিছে না-কি মেয়েরা পাগল।হুহ্ আসতো আজরাইল লোকটা।”
—“তুই তো তাকে দেখিস ওই নাই।মাথা নিচু করে ছিলি।তাহলে দেখতি কি মারাত্মক দেখতে।”
নিঝুম গেলো খেপে চেচিয়ে বলে,
—” স্কুটি থামা!
—“কেন?”
—“থামা বলছি!”
রিধি
স্কুটি থামিয়ে দিলো।নিঝুম নেমে আবারো বলে,
—“তুই নাম স্কুটি থেকে।”
রিধি ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে থেকে নেমে গেলো।তারপর নিঝুম নিজে স্কুটি স্টার্ট দিতে দিতে বলে,
—“ওই ভয়ানক লোকের প্রসংসা আর আমার সামনে করবি না।তোর পানিশমেন্ট এইটা যে আজ তুই হেটে হেটে হোস্টেলে যাবি।”
নিঝুম স্কুটি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।আর রিধি বোকা বনে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
নিঝুম স্কুটি চালাচ্ছে আর বিরবির করে রিধিকে আর নিভৃতকে গালি দিচ্ছে।চলন্ত স্কুটিতে বসে উড়ছে তার চুল আর উড়ছে তার স্কার্ফ।সেদিকে তাকিয়ে আছে নিভৃত।ফর্সা স্নিগ্ধ মুখ,নীল মায়াবী চোখ অসম্ভব সুন্দর লাগছে নিঝুমকে দেখতে।চলে গেলো নিঝুম নিভৃতকে পাশ কাটিয়ে।
আসলে নিভৃত পাশের একটা বৃদ্ধা আশ্রমে গাড়ি পার্ক করেছিলো।সে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গাড়ি থেকে লোকজন দিয়ে জিনিসপত্র নামাচ্ছিলো আর তখনি নিভৃতের কেমন যেন লাগলো বুকের বা-পাশে কেমন ঢিপ-ঢিপ আওয়াজ করছিলো।নিভৃত আশপাশ তাকিয়ে পিছে তাকাতেই দেখে নিঝুন স্কুটি চালিয়ে আসছে।কারন নিঝুমের হোস্টেল ও এই পথেই।
চোখ সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিভৃত তারপর নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২১
নিঝুম মাত্র গোসল সেরে এসে বসেছে।ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকিং করতেছিলো সে।হঠাৎ রিধি দৌড়ে এসে হাপাতে লাগলো নিঝুমের সামনে।মনে হচ্ছে তার এই শ্বাস নেওয়ার প্রসেসে যেকোন সময় তার ফুসফুস ব্লাস্ট হয়ে যেতে পারে।
নিঝুম বিরক্তিকর চাহনী নিক্ষেপ করলো রিধি’র দিকে।
-” এমন হাপানি রোগীর মতো করছিস কেন?”
-” একটা নিউজ শুনেছিস?” হাপাতে হাপাতে বললো রিধি।
-” তুই আগে পানি খেয়ে নেহ।এমন করতে থাকলে তুই বেলুন হয়ে উড়ে যাবি।”
বলেই পানির বোতল এগিয়ে দিলো নিঝুম।রিধি পানি’র বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে সমস্ত বোতল খালি করে দিয়ে ধপাস করে নিঝুমের পাশে সুয়ে পড়লো।
-” এইবার বল কি নিউজ?”
নিঝুমের কথায় আবারো লাফ দিয়ে বসে উষবা।এমনএকটা ভাব নিয়ে তাকালো মানে ওর এই নিউজটা হলো পৃথিবী’র অষ্টম আশ্চার্য কোনকিছু।
-” তোর মনে আছে ৩ দিন আগে তোর উরনা বখাটে ছেলেরা টান দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো।”
রিধির কথা শুনে কপাল কুচকে এলো নিঝুমের।এই মেয়ে সে তিনদিন আগের কথা আবার কেন তুলছে।
-” তো! সেটা চলে গেছে অনেকদিন তুই আবার সেই টপিক উঠাচ্ছিস কেন?”
-“আহা! শোন না?”
-” বল কি বলবি?”
-” ওই ছেলেদের জানিস কে মেরে হাসপাতাল পাঠিয়ে দিয়েছে?”
-” উফফ! তুই না বললে আমি জানবো কিভাবে আজাইরা পেচালপারা ওফ কর।”
-” আহা রাগিস না।ওদের মেরে হাসপাতাল পাঠিয়েছে স্বয়ং The Hidden lion mafia group।কান্ট ইউ ইমাজিন দিস?”
রিধির কথা শুনে কুচকে যাওয়া কপালটা আরো কুচকে এলো নিঝুমের। মানে এই মুহূর্তে ওকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ একজন ওকে জোর করে করলার রস খায়িয়ে দিয়েছে।ও বিরক্তি দিয়ে বললো,,
-” তো আমি তাতে কি করবো নাচবো?”
-” তুই ভাবতে পারছিস।সেই গ্রুপের মানুষ নাকি আমাদের জন্যে ওই ছেলেদের শাস্তি দিয়েছে।হাউ কিউট।”
-” কিউট না ছাই।তুই জানিস না ওরা কতো ভয়ানক।রাক্ষসের সাথে তুলোনা করে জনগন তাদের। কিভাবে মানুষদের মারে।এইসব কিছু আমি ঘৃনা করি।আরে শাস্তি দেওয়ার জন্যে পুলিশ আছে।তারা কেনো এসব করবে। কোনদিন যদি এই গ্রুপের লিডারের সাথে দেখা হয় তো সবার আগে ওকে থাপ্পর দিবো।আর তুই ওই বজ্জাতের হাড্ডি ওদের নামে গুনগান গাচ্ছিস আমার সামনে।সর এইসব লোকদের কথা আমার সামনে বলবি নাহ।
নিঝুমের কথায় রিধি মুখটা কাচুমাচু করে ফেললো।
অনেক্ষন নিরোবতার পর।
হঠাৎ রিধি লাফিয়ে উঠলো।নিঝুম ভয় পেয়ে বললো,
-“কিরে লাফাচ্ছিস কেন? ”
-” দোস্ত! দোস্ত! দোস্ত!”
-” কিচ্ছে?”
-” দোস্ত নিভৃত রায়হান আমার ফ্রেন্ড রিকু এক্সেপ্ট করেছে।সেই কবে রিকু দিয়েছিলাম। আজ এএক্সেপ্ট করেছে।
আহা! আজকেই সব গুড নিউজ আমার কাছে আসছে।
ইয়াহুউউউ!!”
-” হ্যা এইজন্যেই তো সেদিন ভয়ে কাপছিলি।বাদর মেয়ে তুই লাফানো থামা।” বিরক্তি নিয়ে বললো নিঝুম।
-” আরে সেটা তো কাপছিলাম উনার কিলার লুক দেখে।হাউ ড্যাসিং হি ইজ।”
-” আব্বে ব্রেক মার। এতো আকাশে উড়িস না পরে ধপাস করে মাটিতে পরলে কোমড় ভেংগে বসে থাকবি পরে তোর হিরো আর তোকে উদ্ধার করতে আসবে না।দেখে যাবে বলবে ‘ জাস্ট শ্যুট হার’ হাহ্ ”
-” তুই কি কোন ছেলেকে ভালো নজরে দেখবি না।”
-” না এইবার চুপ যা আর ভার্সিটির জন্যে রেডি হো।”
রিধি কথায় না পেরে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো।আর নিঝুম মুচকি হেসে তৈরি হতে লাগলো।
🖤
নিভৃত বসে আছে চেয়ারে হেলাম দিয়ে।দৃষ্টি তার ফোনে।
-” নিভৃত তোকে এইবার কে বাচাবে? শিকার যে নিজ ইচ্ছাই এখানে আসবে কে জানে?”
নিভৃতের দৃষ্টি তখনো ফোনে।লোকটি চিৎকার দিয়ে বললো,
-” সালা ভাব নিস একটা গুলিতে তোকে উড়িয়ে দেবো!”
এইবার নিভৃত উঠে দাড়ালো।সানগ্লাসটা চোখে লাগালো, ব্লাক এন্ড হুয়াইট কম্বিনেশনের মিক্সার করা শার্ট,ব্লাক ডেনিম প্যান্টে মারাত্মক লাগছে।দু হাত প্যান্টের পকেটে গুজে নিয়ে দারালো সে।লোকটা আবারো বললো।
-” এইভাবে হিরো হিরো পোজ নিয়ে দারালেই ভাব্বি আমরা তোকে ভয় পেয়ে চলে যাবো।আজ তোকে শেষ করেই যাবো সালা।”
নিভৃত বাকা হাসলো।
-” ফার্স্ট ওফ ওল আমার কোন বোন নেই যে ওকে বিয়ে দেওয়া যাবে।তো শুধুশুধু আমাকে সালা বলা ওফ কর।আর সেকেন্ড আমি কোন হিরো হিরো পোজ দেই না।ইট্স মাই পার্সোনালিটি, আর আমি হিরো না ভিলেন বুজেছিস।আর নিভৃত রায়হানকে মারবে এমন কেউ এখনো জন্ম নেয় নি।”
লোকটি হুংকার দিয়ে নিভৃতকে আঘাত করার আগেই। নিভৃত নিচে ঝুকে ওর পায়ের গোড়ালি থেকে চাকু বের করে সোজা লোকটির গলা বরাবর ছুরে মারতেই।লোকটি নিস্তব্ধ হয়ে যায় নিজের গলায় হাত দিয়ে দেখে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।কিছু বলবে তার আগেই লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পরে।নিভৃত সেদিকেই তাকিয়ে ছিলো এইবার তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো পিছনে ওই ব্যাক্টিটির সাঙপাঙ দের দিকে।হিংস্র সেই চাহনী পারলে এক্ষুনি এদের সবাইকে ধ্বংস করে দেয়। নিভৃতের এরকম হিংস্র চাহনী দেখে সবাই উল্টো দিকে দৌড়ে পালালো।
কিন্তু এতো সহজে কি নিভৃত এদের ছাড় দিবে।
ওরা পালাবে সেটা ও আগেই ধারনা করেছিলো তাই সব ব্যাবস্থা আগেই করে রেখেছে।
ওর লোকেরা আগেই ওকে ঘেরাও দিয়ে রেখেছিলো।
তাই তারা পালিয়ে যেতে পারিনি।
নিভৃতের লোক আগেই তাদের ধরে ফেলে।
আর সবাইকে একসাথে শ্যুট করে দেয়।
নিভৃত বাকা হেসে বললো,
-” কি মনে করিস জনগনের সামনে এতো সহজেই আমি ধরা দেবো।
আমি জনগনের কাছে শুধু একজন বিজনেসম্যান।
কিন্তু আমিই যে The Hidden Lion Mafia Group এর লিডার তা কেউ জানবে না।কখনোই না।
আর যে চেষ্টা করবে তার পরিনাম হবে মৃত্যু।”
————-
গাড়িতে বসে আছে নিভৃত আর রাজ একসাথে।
নিভৃত একমনে ফোন ঘাটছে।
রাজ ভেবে পাচ্ছে না।
আজ তিনদিন ধরে নিভৃতের কি হয়েছে।
কিসব উলটা পালটা কাজ কাম করে।
এই যে নিভৃত কখনোই দরকার ছাড়া এতো ফোন চালায় নাহ।আর সেই কি-না এতো মনোযোগ দিয়ে ফোন ঘাটছে
।কাজের মাঝে থেকে থেকে অন্যমনস্ক হয়ে যায়।
কিছু একটা নিয়ে ভাবতেই থাকে।
এইজন্যে রাজ খুব চিন্তিত তার ভাইকে নিয়ে।
রাজের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে নিভৃতের কথায়।
-” রাজ! ”
-“হ্যা ভাই!”
-” ফলো দ্যা স্কুটি!”
রাজ ভ্রু-কুচকে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।
তাকাতেই ওর চোখ দুটো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।কাপা গলায় রাজ বলে,
-” ভাই এরা তো সেইদিনের আপনার গাড়ির কাচ ভেঙ্গে দিয়েছিলো সেই মেয়েরা!”
-” হ্যা! তো?”
নিভৃতের এমন ভ্যাবলেসহীন কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো রাজ।মৃদ্যু আওয়াজে বলে,
-” ভাই আপনি ঠিক আছেন তো?”
-” হ্যা! আ’ম এবসুলুটলি ফাইন!নাউ ফলো দেম কুইক!” গম্ভীর আওয়াজে বললো নিভৃত।
ভাইয়ের কথায় নিঝুমের স্কুটিকে ফলো করতে থাকে রাজ।
তবে কপালে তার চিন্তার রেশ।
তার ভাই বদলে গেছে। নিভৃত কখনোই কোন মেয়ের প্রতি এতো ইন্টেরেস্ট দেখায় নি সে।
সেদিন ওই ছেলে গুলোকেও ভাই মেরেছে।
সেদিন আশ্রম থেকে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কাছে সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে ছেলেদের চেহেরা দেখে নিয়ে
ওই ছেলেগুলো খুজে বের করে নিজ হাতে মেরে দিলো।
কেন তার ভাই এমন করছে?
নাহ নাহ! তার ভাইকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
-” রাজ হ্যারি আপ।”
-” হ..হ্যা ভাই!” রাজ গাড়ি চালাতে লাগলো।
এদিকে নিভৃত একমনে তাকিয়ে আছে স্কুটি চালাচ্ছে নিঝুমের দিকে।
পার্পেল কালার গোলজামা, সাদা উড়না।
চুলগুলো উচুকরে ঝুটি করা।
সামনে ব্যাঙ্গস গুলো বাতাসে উড়ছে! স্নিগ্ধ মায়াবি মুখের দিকে তাকিয়েই থাকতে মন চায়।
আজ তিনদিন ধরে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছিলো।
তৃষ্ণার্ত চোখ জোড়া যেন যতো দেখছে এদের তৃষ্ণা আরো বেরে যাচ্ছে।
এ কি হলো তার? সেদিনের পর থেকে না খেতে পেরেছে ঠিক ভাবে না ঘুমোতে আর না কাজ করতে।
এই মায়াবী মুখটা প্রতিনিয়ত তাকে জ্বালাতন করে গেছে।
রিধি’র ফ্রেন্ড রিকু এক্সেপ্ট করে সেখান থেকে নাম ডিটেইল’স নিয়েছে বাকি গুলো ওদের লোক দিয়ে। খবর নিয়েছে নিভৃত নিঝুমের ব্যাপারে।
হোস্টেলের ঠিকানা জেনেই আজ ওকে একনজর দেখতে এসেছে।
চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমি জানি আমি পচা লেখিকা আপনাদের কষ্ট দেই।
তার জন্যে এতো গুলা সরি।
বিয়ে বাড়ি থেকে কাল রাত এসেছি।
অনেকদিন না লিখায় কেমন যেন হাত চলছে না।
জানি ছোট হয়েছে।
আগামী থেকে বড় করে দেবো।
আজ এতোটুকুই মেনেজ করে নিন প্লিজ।🥺
বিনিমহয়ে এতোগুলো ভালোবাসা😗
চলবে,,,,,,,,,
এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক তাই বাস্তবতা ভেবে উলটাপালটা কমেন্ট করবেন নাহ।
আমি নতুন লেখিকা ভুল হবেই।আমি আবার বলছি আমার দ্বারা ভুল হবেই।সো আমাকে খারাপ মন্তব্য করে মন খারাপ করে দিবেন নাহ।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর বিয়ে বাড়ি আমি কিছুই করতে পারছি নাহ।কাল সারারাত ঘুমোতে পারনি এক ফুটাও।আমাদের ঘুমোতে দেওয়া হইনি
ফলে মাথা ব্যাথায় শ্বাস আটকে আসছে।
তাও আমি ভোর ৫ টা সুয়ে মাত্র ৩ ঘন্টা ঘুমিয়েছি।আপনাদের জন্যে আমি মাথা ব্যাথা নিয়েও লিখেছি।
কাল গল্প দিতে পারবো নাহ।সরি।ভালোবাসা নিবেন।