ছুয়ে দিলে মন পর্ব শেষ

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি।
#পার্টঃ৩১(সমাপ্ত)
সব লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
যে করেই হোক আরাফাতকে ধরতে হবে।
আরাফাতের লোক চারিদিকে পাহারা দিচ্ছে।
মেয়েগুলোকে প্লেনে উঠানোর আশায় আছে সবাই।
একটু পর মেয়েগুলোকে নিয়ে আরাফাতের লোক প্লেনে উঠালো।
তখনি নিভৃতের লোক হামলা করলো।
দুদলের মাজে প্রচন্ড গুলাগুলি হয়।
একসময় এই গুলাগুলির মাজেই
আরাফাতের স্পট ডেট হয়।
বাকিলোকদের কেও মেরে ফেলে নিভৃতের লোক।
কাজ শেষে নিভৃতের লোক মেয়েগুলোকে নিরাপদ স্থানে পৌছে দিয়ে আসে।



আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
আমার সামনে বাড়ির সব লোক।
হঠাৎ তারা এখানে আসে।
আমি ভয়ে থরথর করে কাপঁছি।
কারন সবাই গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে।
এই জন্যেই এতো ভয়।

–” আহান কোথায় নিঝুম?” শাশুড়ি মায়ের কথায় কোন জবাব দিলাম নাহ।
কান্না চলে আসছে আমার।
আমরা কি একটু শান্তিতে থাকতে পারি নাহ?
সবসময় এরকম পরিস্থিতিতে কেন পড়তে হয় আমাকে।
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।
তাকিয়ে দেখলাম নিভৃত আসছে, সাথে রাজ আর রিধিও আছে।
আমার চোখ পানি দেখে উনি দ্রুত আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,
–” কি হয়েছে কাঁদছো কেন?”
আমি কিছুই বলছি নাহ দেখে
নিভৃত তার মাকে জিজ্ঞেস করে,

–” কি হয়েছে মা?ও কাঁদছে কেন?”
–” আহান কোথায়?আজ ২ দিন ধরে আহানের কোন খোজ নেই।তোর কাকা,কাকিমা
অস্থির হয়ে আছেন।
তুই কি ওকে পুলিশে দিয়েছিস?”
–” নাহ ওকে মেরে ফেলেছি।” উনার গম্ভীর গলায় বলা কথায় যেন সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলেন।
কি সুন্দর নির্দ্বিধায় বলে দিলেন।
মা হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরলেন।নিভৃতের ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসি।
আমি অবাক।কোন মা তার ছেলে খুন করেছে শুনে এতোটা খুশি কি করে হতে পারে।
মা বললেন,
–” ভালো করেছিস বাবা।
ওর মতো নরকিটকের সাজা এই একটাই হতে পারে।
ও যা অন্যায় করেছে তার কোন ক্ষমা নেই।”

আমি সবার দিকে তাকালাম।দাদা,দাদি, বাবা
সবার চোখে পানি কিন্তু ঠোঁটে হাসি।
বাড়ির একটা সন্তানকে হারানোর বেদঁনা একদিকে।
অন্যদিকে আহানের মতো একটা শয়তান মরে যাওয়ার প্রশান্তি।
কিন্তু শুধু কাকাই আর কাকিমার চোখেই হিংস্রতা দেখছি আমি।
কাকিমা হঠাৎ আগ্নীয়গিরির মতো আমার দিকে তাকালো।।তেজি গলায় বললো,

–” তোর জন্যে হয়েছে এইসব।
আমার ছেলেকে আমি হারিয়েছি তোর জন্যে।
তুই কলঙ্কিনি আমার! তুই সব ধ্বংস করে দিয়েছিস! তোকে মেরে ফেলাই ভালো।”

কাকিমা তেড়ে আসতেই আমি ভয়ে রিধিকে আকড়ে ধরলাম।
কাকিমা কিছু করার আগেই মা উনাকে একটা চড় মেরে দিলেন।
চেচিঁয়ে বললেন,

–” ভুলে যাস না নিঝুম আমার ছেলের বউ।
কিন্তু ওকে আমি ছেলের বউ না আমার মেয়ে মানি আমি।
আর তুই তোর এইসব জানোয়ার ছেলেমেয়ের জন্যে আমার মেয়েকে মারতে চাচ্ছিস?
সাহস কি করে হয় তোর?”

হঠাৎ কাকিমা নিচে বসে পড়লেন। হাউমাউ করে কাদঁছেন।
ছেলে হারানোর যন্ত্রনার তিনি আর্তনাদ করছেন।
আমার চোখ দিয়েও পানি ঝরছে।
একজন মায়ের সন্তানের জন্যে করা এই কান্না আমি সইতে পারছি নাহ।
আমি আস্তে করে উঠে দাড়ালাম।
কাকিমার কাছে যেতে নিতেই বাধ সাধলেন নিভৃত।
আমি করুন গলায় বললাম,

–” অল্প একটু নিভৃত।”

আমার কথায় নিভৃত দমে গেলেন।
আমি কাকিমার কাছে গিয়ে উনার বরাবর বসলাম।
আস্তে করে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।
বললাম,,

–” আমি জানি কাকিমা আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
সন্তান হারানোর কষ্ট আমি বুজি।
কারন আমিও আমার সন্তান হারিয়েছি।
কিন্তু ভেবে দেখুনতো আপনি আপনার সন্তান হারানোর জন্যে কতোটা কষ্ট পাচ্ছেন।
ঠিক ততোটাই কষ্ট কিন্তু সেই বাবা মা পেতো।
যে মেয়েগুলোকে আপনার ছেলে ধরে এনে পাচার করে দিতো।
একবার সেই মায়েদের আর্তনাদগুলো অনুভব করুন।”
কাকিমা আমাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলেন।
–” আমার ছেলে!
আমি কিভাবে থাকবো।
মেয়েটাও কি হলো কে জানে কাল হঠাৎ করেই
আমেরিকার ফ্লাইটে চলে গেলো।
আমার সন্তানগুলোই কেন এমন হলো।
আমি যে মা আমি কিভাবে থাকবো?”
আমি, মা,দাদি কাকিমাকে যথাসম্ভব সামলাতে চেষ্টা করতে লাগলাম।
কাকাই ও সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন।
কি আর করার?
উনারা নিজেদের কাজে অনুতপ্ত এতেই অনেক।
আর উনাদের কিইবা শাস্তি দিবো।
উনারা নিজের সন্তান হারিয়েছে।
এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কিছু না।


সবাই থেকে গেলেন আজ আমাদের বাড়ি।
কাকিমার শরীর ভালো নাহ।তাই উনাকে খাইয়ে দাইয়ে রুমে নিয়ে সুইয়ে দিয়েছি আমি নিজ হাতে।
সবাইকে জোর করে অল্প হলেও খাইয়ে দিয়েছি।
সব কাজ শেষে আমি রুমে আসলাম খাবার নিয়ে।
কারন উনিই খায়নি।
কি জানি একটা কাজ আছে বলে উপরে চলে গেলেন।
আমি রুমে গিয়েই
হঠাৎ উনার পিঠের দিকে নজর যেতেই বড় বড় চোখ করে তাকালাম।
একি উনার পিঠ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।আর উনি তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন।
আমি এলোমেলো পায়ে উনার পিছে গিয়ে দাড়ালাম।
আমি কাঁপা গলায় বললাম,

–” নিভৃত কি হয়েছে আপনার?আপনার পিঠ দিয়ে তো রক্ত ঝরছে।”
বলেই হুঁহুঁ করে কেদে দিলাম।
উনি সাথে সাথে আমাকে বুকে চেপে ধরলেন।
–” চুপ থাকো নিঝুম।আমার কিছু হয়নি।
আর এরকম ছোট খোটো ব্যাথা আমার প্রাই লাগে।”ন
–” এমন কেন আপনি?
আপনি জানেন না আপনি ব্যাথা পেলে আমার কষ্ট হয়।”
–” জানি তো! কিন্তু কিছু করার নেই নিঝুম অন্যায়কারীদের শাস্তি দিতে হলে নিজেদেরকেও একটু আধতু ব্যাথা পেতে হয়।
আমি মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালাম।কান্না কিছুতেই থামাতে পারছি নাহ।।
তারপর ফার্স্ট এইড বক্স এনে ভালোভাবে রক্ত পরিষ্কার করে দেখলাম বেশি একটা গভীর না ক্ষতো তবে রক্ত ঝরেছে প্রচুর।
আমি নাক টেনে কেঁদে কেঁদে ব্যান্ডেজ করে দিলাম।
তারপর উনাকে পেইনকিলার খাইয়ে দিয়ে।
একটা স্যালাইন গুলিয়ে খাইয়ে দিলাম।
কারন রক্ত প্রচুর যাওয়াতে শরীর দূর্বল হয়ে যেতে পারে।
কাজ শেষে একটা ভালো শার্ট এনে পরিয়ে দিলাম।
উনি আমার হাত টেনে ধরে উনার মুখোমুখি বসালেন।আমার চোখের পানি সযত্নে মুছে দিলেন।
আমি উনার বুকে আলতো করে মাথা রাখলাম।
এখানেই আমার সব শান্তির মূখ্য স্থান।
উনিও আমাকে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে আর কিছুই বলার নেই আমার।
–” এতোটা দূর্বল কেন তুমি?”
–” আপনাকে ভালোবাসি তাই।”
–” এতোটাও ভালোবেসে না। আমি যে এতো ভালোবাসার যোগ্য নাহ।”
–” আমার স্বামিকে আমি ভালোবাসবো তাতে আপনার কি?”
–” আচ্ছা আর বলবো নাহ।তুমি মন প্রান উজার করে ভালোবাসো।আর তোমার স্বামিও সেই ভালোবাসা গ্রহনের জন্যে সদা প্রস্তুত।”
আমি কান্নারত অবস্থায়ও হেসে দিলাম।
উনার বুকের সাথে মিশে রইলাম।
উনিও আমাকে আকড়ে ধরলেন।




সময় বহমান, সময় কারো জন্যে থেমে থাকে নাহ।
তাইতো দেখতে দেখতে ১ বছর কিভাবে কেটে গেলো জানলাম ওই না।
এই ১ বছরে নিভৃতের ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি।
বরংচ আরো উনি পাগলামিময় ভালোবেসেছেন।
মানুষ এতোটা ভালো কিভাবে বাসতে পারে।
উনাকে না দেখলে জানতাম নাহ।
ওহ হ্যা!! আমরা এখন সবাই একসাথেই থাকি।
একসাথে থাকার আনন্দটাই আলাদা।
কাকিমা,আর কাকাইও আমাকে এখন অনেক আদর করেন।



আজ সকাল থেকে উনার দেখা নেই।
আমি মন খারাপ করে বেডে বসে আছি।
কিছুক্ষন পর পর কেউনা কেউ এসে আমাকে কিছু কিছু খেতে দিয়ে যায়।
আর আমি তা লুকিয়ে রাখি।
আমার যে কিছুই ভালো লাগে না।
গাল ফুলিয়ে রাগী ফুসছি।
নিচেও যেতে পারবো নাহ।
এমন কি বেড থেকেও নামতে পারবো নাহ।
উনি না আসতে নিচে যেন না যাই এটা উনার আদেশ।
ভাবছেন তো কেন?
আমি অন্তঃসত্ত্বা! হ্যা! আমি আবারো মা হতে চলেছি।
নিভৃত যেন পুরাই পাগল হয়ে গিয়েছে।
আমাকে হেটে কোথাও যেতে দেয় নাহ।
সবখানে কোলে করে নিয়ে যাবে।
উনাকে আমি জ্বালাই প্রচুর।
এখন আমার ৫ মাস।
পেটটা হালকা ফুলেছে।এতেই যেন আমাকে গুলোমুলো লাগে দেখতে।
দরজা খুলার আওয়াজে আমি তাকাই নিভৃত এসেছে।
হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন,

–” ফ্রুটস গুলো খেয়েছো?”

আমি অসহায় চোখে তাকালাম টি-টেবিলের উপর।
সেখানে একটা আপেলের অর্ধেক খেয়েছি আমি।
আর একটুও খাই নি।
উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকালেন।
আমি ভয়ে ভয়ে প্লেট টা হাতে নিয়ে বললাম,

–” খাচ্ছি তো।” বলেই স্পিডে সব শেষ করে ফেললাম।
উনি আমাকে সব খেতে দেখে বললেন,

–” গুড গার্ল।”

কিন্তু আমার যে সব গুলিয়ে আসছে।
আমি মুখে হাত দিয়ে করূন চোখে তাকালাম।
উনি বুজতে পেরে আমাকে সাথে সাথে কোলে তুলে নিলেন।তারপর ওয়াসরুমে গিয়ে নামাতেই আমি গঢ়গঢ় করে বমি করে দিলাম।
প্রচন্ড দূর্বল লাগছে।উনি আমাকে ফ্রেস করিয়ে দিয়ে।
একগ্লাস স্যালাইন দিলেন।
আমিও খেয়ে নিলাম।নাহলে যে উনার ঝারি খেতে হবে।
খানিকবাদে উনি তৈরি হয়ে আমাকে নিয়ে নিচে নামলেন।
আজ সব তোড়জোড় করে অনুষ্ঠান চলছে।
কারন আজ যে রাজ আর রিধির বিয়ে।
দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা কেন করবো?
প্রথমে রিধির ফ্যামিলি একটু মানতে চাইনি।
নিভৃত সবাইকে বুজিয়ে বলাতে সবাই রাজি হয়েছে।
সব ব্যাবস্থা নিভৃত নিজের কাধেই নিয়েছে।
আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে সামনে এতো এতো খাবার রেখে দিলেন।পাশে দাদিকে বসিয়ে দিয়ে গেলেন।
কি আর করার আমি অসহায়ভাবে বসে রইলাম স্রেফ।
সুষ্ঠভাবে রাজ আর রিধির বিয়ে হয়ে গেলো।
রিধির বিদাও হলো।
আমি আর রিধি একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলাম।
বাড়ির সবাই এর মাজে আমার খেয়াল রাখতে ভূলেনি।
অনুষ্ঠান শেষে সব কাজকর্ম শেষ করে।
সবাই যার যার রুমে চলে গেলো।
নিভৃত আমাকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেস করিয়ে বিছানায় সুইয়ে দিলেন।
তারপর নিজে ফ্রেস হতে চলে গেলেন।
আমি খাটে চোখ বুজে হেলান দিয়ে আছি।
হঠাৎ পেটে একজোড়া হাতের শীতল স্পর্শ পেলাম।
আমি জানি নিভৃত এটা।
উনি আস্তে করে আমার শারীর আচঁল টা সরিয়ে দিয়ে।
আমার পেটে চুমু খেলেন।
তারপর আমার পেটে কান পেতে রইলেন।
এটা যে উনার নিত্যদিনের কাজ।
আমি উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।

–” বেবি বাবা তোমাকে অনেক আদড় দেবো ঠিক আছে।
বাবা একটুও কষ্ট দিবো নাহ তোমায়।
তুমিও মাম্মাকে কষ্ট দিবে না ওকে।
মাম্মা কষ্ট পেলে যে বাবাই কষ্ট পায়।”

উনার প্রতিদিনের পাগলামি এগুলো।
আর আমি উনার পাগলামি দেখি।
উনি উঠে এসে আমার কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিলেন।
আমি চোখ খুলে হাসি মুখে তাকালাম।
উনিও মিষ্টি হাসি দিলেন।
উনার এই হাসিটাই তো আমার সব ক্লান্তি,দূর্বলতার অবষান।
উনি আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলেন বললেন,

–” তোমায় আর আমার বেবির বিন্দুমাত্র কিছু হতে দিবো নাহ আমি।”
–” আমিও জানি আপনি আমাদের কিছু হতে দিবেন নাহ।”
–” এতোটা ভরসা করো?”
–” নিজের থেকেও বেশি।”
–” ভালোবাসি নিঝুম।”
–” আমিও ভালোবাসি।

উনি আমাকে নিজের মাজে আকড়ে ধরে গাইলেন
‘ মনের আকাশে রঙ্গিন প্রজাপ্রতি
উড়ে ডানা মেলে যখন
তুমি #ছুঁয়ে_দিলে_মন।’

সমাপ্ত।।।।।

কেমন হয়েছে সবাই জানাবেন।
গল্প শেষ তাই এইবার সবাই এইবার একটু মন্তব্য করবেন।
জানি ভালো হয়নি এন্ডিং।
কিন্তু আমার মনমানুষিকতা ভালো নেই।
তাই এই গল্পটা বেশি বড় করতে পারবো নাহ।
এই গল্পটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে।
তাই আগের পার্ট কেটে দিয়েছি।একেবারে সমাপ্ত পার্ট দিয়ে দিলাম।
প্লিজ কেউ আর কারন জিজ্ঞেস করবেন নাহ।
আল্লাহ্ হাফেজ।
নতুন গল্প নিয়ে আবার আসবো।
আশা করি সাথে থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here