ছুঁয়ে_দিলে_মন পর্ব ২৬+২৭

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৬
নিজের মাথার উপর ক্রমাগত কারো ঠোঁটের স্পর্শ আর জলের আভাস পেয়ে চোখ খুললাম আমি।
সব কিছু ঝাপসা লাগছে আমার কাছে। মাথাটা ভার হয়ে আছে।
উঠতে চেষ্টা করতেই শরীরে প্রচন্ড ব্যাথার কারনে উঠে বসতে পারলাম নাহ।পরে যেতে নিতেই একজোড়া হাত আমাকে আকড়ে ধরে।
আমি ঝাপসা চোখে তাকালাম।
নিভৃতের উদ্বিগ্ন মুখটা ভেসে উঠলো।তার চেহেরা’র একি হাল।
চোখ-মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে,চুল এলোমেলো,চেহারা’র লাবন্যতা নেই কোন,ডার্ক রেড ঠোঁটজোড়াও শুকিয়ে আছে।
আমার গালে আলতো স্পর্শ করে বলে চলেছে সে,

–” এই নিঝুম! ঠিক আছো তুমি?ব্যাথা পাওনি তো?
কেন উঠতে গেলে?”

হন্তদ্বন্ত হয়ে সে আমার সারা শরীর দেখছে কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কি-না।
আমি সোজা হয়ে বসতে চাইলে সে আমাকে বসাতে হেল্প করলো।
বসতে গেলেই পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম।
সাথে সাথে ‘আহ’ করে শব্দ করলাম।
আমার খেয়াল হলো! নিভৃত আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো।
আমার বাচ্চা? আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
আমি আমার পেটে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলাম,

-” আমার বাচ্চা! আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
আমার বাচ্চা!!”

জোড়ে চিৎকার করে কান্না করছি।নিভৃত আমাকে থামাতে চেষ্টা করছেন। আমার চিৎকারে প্রাই সবাই ছুটে কেভিনে আসলো।
আমি নিভৃতকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিলাম।
বললাম,

-” সরুন! ধরবেন না আপনি?আগে বলুন
আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন!
কেউ বলো আমার বাচ্চা!”

দু-হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলাম।
কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লাম। পেটে প্রচুর ব্যাথা করছে।
একহাতে পেট চেপে ধরলাম।
নিভৃত আবার আমাকে ধরতে আসলেই ছিটকে সরে গেলাম।

-” আমার বাচ্চা ঠিক আছে কি-না?
জবাব দিচ্ছেন না কেন? বলুন।”

আমি শুধু এই কথাই আওড়াতে লাগলাম।
আর কেভিনের ভীতরে যা সামনে পেলাম তাই ছুড়তে লাগলাম।
নিভৃত আবার আমাকে ধরতে আসলে কাঁচি দিয়ে আচড় কেটে দিলাম।উনার হাত দিয়ে গল গল করে রক্ত বের হয়ে গেলো।
উনার সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ নেই।উনি আবার আমাকে ধরতে আসলে আমি কাঁচিটা আমার গলায় ধরলাম।বললাম,

-” আমাকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।নয়তো আমি নিজেকে মেরে ফেলবো!” কাঁচি জোড়ে ধরায় আমার গলা হালকা কেটেও গিয়েছে।

হঠাৎ গালে সজোড়ে থাপ্পড়ের আভাস পেলাম।মা আমাকে থাপ্পরটা মেরেছেন আমার শাশুড়ি মা।
টেনে আমার হাত থেকে কাঁচিটা ফেলে দিলেন।
আমি গালে হাত দিয়ে কান্না করতে করতে বললাম,

-” মা!! মা আপনার আমাকে যতো মারার ইচ্ছা মারুন।
শুধু একবার বলুন না? আমার বাচ্চাটা ঠিক আছে কি-না বলুন না! ও মা আপনি না মা? আমার কষ্টটা তো বুজতে পারছেন?
আমার সন্তানের কিছু হলে আমি বাঁচবো না মা! বলুন নাহ।”

মা কিছুই বলছেন না।সবার দিকে তাকালাম সবাই কাঁদছেন।
কেনো কাঁদছেন?কাঁদবেন কেন? আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না কেন?
আমি জোড়ে হুংকার দিয়ে বললাম,

-” কি হয়েছে আপনারা কেউ কিছু বলছেন না কেন?
বলুউউউউউননননননন!!”

আমার চিৎকারে আম্মু চিৎকার করে বললো,

-” তোর সন্তানটা আর বেঁচে নেই নিঝুম! বেঁচে নেইইইইইইইই!”

এই একটা কথা যেন আমার দুনিয়া থমকে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিলো।
আম্মু মিথ্যে বলছে! আমার সন্তানের কিছু হবে না?
ও ঠিক আছে পুরো ঠিক আছে!
ও তো আমার গর্ভে ছিলো।ব্যাথা আমি পেয়েছি তো ওর কিছু কেন হবে? ওর মাম্মা তো ওকে প্রোটেক্ট করেছে।
আমি কাপা হাতটা আমার পেটে রাখলাম।
হালকা হেসে আমার গর্ভে আমার সন্তানের উদ্দেশ্যে বললাম,

-” বাবু দেখ তোর নানু কি বলছে?
বলছে তুই না-কি আর নেই? ওরা মিথ্যে বলছে তাইনা বেবি?
তুই কি তোর মাম্মাকে ছেড়ে যেতে পারিস?মাম্মা তো তোকে কতো ভালোবাসে তাই নাহ বেবি?
মাম্মা তো তোকে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছে তুই আর আমি মিলে সব পূরন করবো! ওদের কারো কাছে আমরা থাকবো না।
আমরা দূরে চলে যাবো অনেক দূরে সেখানে ওরা কেউ আমাদের খুজে পাবে না।ওরা সবাই পচাঁ।তাই নাহ?”

আম্মু আমার কাছে এসে আমাকে টেনে তার মুখোমুখি করে কান্না করতে করতে বললো,

-” পাগলামি করিস না মা! বেবি আর নেই!
সে আল্লাহ্ এর কাছে চলে গেছে।
প্লিজ থাম!”,

আম্মু’র কথাগুলো আমি মেনে নিতে পারতেছি না।
আমি সরে আসলাম আম্মু’র কাছ থেকে।
শাশুড়ি মায়ের কাছে গিয়ে উনার হাত দুটো আকড়ে ধরলাম।
করূনস্বরে বললাম,

-” মা! আপনি তো মমতাময়ী মা! আপনি তো বুজতে পারছেন
আমার কষ্টটা! বলুন না আমার আম্মু মিথ্যে বলছে!
আমার বেবি’র কিছু হয়নি!বলুন নাহ!
আমার না ভীষন কষ্ট হচ্ছে।আমি আমার আম্মুর এই মিথ্যে কথা মেনে নিতে পারছি না।
আপনি বলুন নাহ মা সত্যি কথাটা বলুন না।”

মা আমার কথার জবাবে মাথা নিচু করে নিলেন।
তার এরকম করাটা আমি মেনে নিতে পারলাম নাহ।
বুকের ভীতরটায় চিনচিনে ব্যাথা করে উঠলো।
একহাত বুকের বা-পাশে আর হাত পেটে চেপে ধরলাম।
কিছুতেই মানতে পারছি না আমার সন্তান আর নেই।
শরীর পুরো কাঁপছে, মাথাটাও ঘুরাচ্ছে,চোখে ঝাপসা দেখছি সব।
আর নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারলাম নাহ।
ঢলে পড়লাম! ঝাপ্সা চোখে শুধু এতুটুকু দেখলাম নিভৃত আমাকে দৌড়ে এসে ধরলো।
বলছেন,

-” এই নিঝুম! চোখ খুলো নিঝুম! নিঝুম! ”

আর কিছু শুনতে পেলাম না।নিস্তেজ হয়ে গেলাম।

___________________
নিঝুমকে জ্ঞান হারাতে দেখে নিভৃত দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরলো।ওর গালে হালকা চাপড় মেরে বলতে লাগলো,

-” নিঝুম! এই নিঝুম! চোখ খুলো নিঝুম!
এমনটা করো নাহ নিঝুম! আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও নাহ।
তোমার এই কষ্টগুলো আমার হৃদয়টাকে প্র‍তি মুহূর্তে ছিন্নভিন্ন করে দেয় নিঝুম!”

নিভৃত ঠুকড়ে কান্না করছে।মানুষ বলে ছেলে মানুষ না-কি প্রচুর কষ্টতেও কাঁদে নাহ।
তবে আজ নিভৃত কান্না করছে।
নিজের ভালোবাসার মানুষটির জন্যে কাদঁছে,
নিজেদের ভালোবাসার চিহ্ন নিজেদের সন্তান হারাবের শোকে কান্না করছে।
প্রতিটা মানুষ আজ এই দুটি ভালোবাসার মানুষের
দুঃক্ষে কাদঁছে।
নিভৃত নিঝুমকে কোলে তুলে নিলো।
তারপর ওকে বেডে সুইয়ে দিলো। নিঝুমের হাতের দিকে খেয়াল গেলো স্যালাইন লাগানো ছিলো নিঝুম বেড থেকে ছিটকে নেমে যাওয়ার সময় স্যালাইন খুলে গিয়েছিলো তাই রক্ত বেরোচ্ছে।
নিভৃত সযত্নে নিঝুমের হাত ব্যান্ডেজ করে দিলো।
গলায় আচঁড় লেগেছিলো সেখানেও মলম লাগিয়ে ওয়ানটাইম লাগিয়ে দিলো।
এদিকে যে নিজের হাত দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই।
নিভৃতের মা এগিয়ে এসে ছেলের কাধে হাত রাখলেন।
নিভৃত তাকালো নিজের মায়ের দিকে।
উনি বললেন,

-” বাবা তোর হাত থেকেও রক্ত বেরোচ্ছে! বাবা ব্যান্ডেজটা করে নেহ! আমরা ডাক্তারকে বলেছি উনি আসছেন নিঝুমের চেক-আপ করতে।তুই ব্যান্ডেজটা করে নেহ।”

নিভৃত অসহায় চোখে তাকালো।
কাপা গলায় বললো।

-” মা! মাগো! ওকে আমি কিভাবে সামলাবো মা!”
-” ঠিক হয়ে যাবে বাবা সব আল্লাহ ভরসা রাখ!”
-” কি ঠিক হবে মা! দেখলে না কি রকম পাগলামি করলো
মা? ও মানতেই পারছে না মা।
আমি ওকে কি দিয়ে কি বুজাবো মা। আমার যে আর সয্য শক্তিতে কুল পাচ্ছি নাহ।”
-” সয্য করতে হবে বাবা! করতে হবে।আল্লাহ যেহেতু
এই দুঃখ জনক পরিস্থিতি দিয়েছে।আল্লাহ্ তায়ালাই আমাদের পথ দেখাবেন।”

নিভৃতের নিজের মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
মায়ের কোলে মাথা রাখলে না-কি পৃথিবীতে সবথেকে বেশি শান্তি লাগে।
নিভৃত ও একটু শান্তি খুজছে। একটু শান্তি!
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৭
আজ প্রায় এক সপ্তাহ নিঝুম সুস্থ হয়েছে।
কিন্তু নিঝুম কারো সাথে কথা বলে নাহ।
একদম চুপচাপ বসে থাকে।যেখানে বসিয়ে দেয় সেখানেই বসে থাকে।একদৃষ্টিতে শুধু সামনে তাকিয়ে থাকে।
নিভৃত নিঝুমের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখে।
তবে ভেঙ্গে পরে খুব নিঝুমকে এইভাবে দেখলে তার কলিজাটা ছিড়ে যায়।
সন্তান হারানোর শোকে নিঝুম পাথর হয়ে গেছে।
সেদিন জ্ঞান ফিরার পর থেকে নিঝুম কারো সাথে কথা তো দূরে থাক,কান্না টুকুও করে নি ও।শুধু স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে।
সবাই ভীষন হতাস হয়ে পড়েছে ওর অবস্থা দেখে।
,,,,
খাবার হাতে রুমে প্রবেশ করলো নিভৃত।
ভীতরে ডুকে দেখলো নিঝুমকে ও যেভাবে রেখে গিয়েছিলো এখনি তেমনি আছে।হতাসের দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিভৃত।
খাবার হাতে নিঝুমের মুখোমুখী বসলো চেয়ার টেনে।
তারপর সযত্নে ওকে খাইয়ে দিলো।
ভালোভাবে ওর মুখ মুছে দিলো খাওয়া শেষে।
তারপর প্লেট টি-টেবিলের উপর রেখে দিলো।
নিঝুমকে ভালোভাবে বিছানায় সুইয়ে দিলো।
এরপর নিজে ফ্রেস হতে চলে গেলো।ফ্রেস হয়ে এসে দেখে নিঝুম একদৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।।
নিভৃত ওর পাশে এসে সুইয়ে পড়লো।তারপর নিঝুমকে নিজের বুকে টেনে নিলো।
ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
একসময় নিভৃতের চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি পড়তে লাগলো।এ কেমন পরিক্ষা নিচ্ছে আল্লাহ্ তাদের।
তারা কি একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে নাহ।
এক-হাতে চোখের জল মুছে নিঝুমের দিকে তাকালো।নিষ্প্রান নিঝুম কি সুন্দর চুপটি করে সুয়ে আছে তার বুকে।
নিভৃত ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্নাগুলো নিয়ন্ত্রন করতে চাইছে।
নিভৃত উঠে বসলো সাথে নিঝুমকেও ওর মুখোমুখী বসালো।
ধরাগলায় বললো,

–” আর কতো নিঝুম! আর কতো এভাবে নিষ্প্রান থাকবে?
আমাকে মারো,কাটো যা করার করো তবু কথা বলো।তোমার এই চুপ করে থাকা আমার কষ্ট,অপরাধবোধ দ্বিগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। কথা বলো নিঝুম কথা বলো!”

কিন্তু নিঝুম চুপ কোন অনুভূতি নেই তার মাজে।
মনে হচ্ছে জীবন্ত লাশ বসে আছে।
নিভৃত কাঁদতে কাঁদতে নিঝুমের কোলে মাথা দিলো।
ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে কান্না করছে সে।একসময় বললো,

–” কথা বলো নিঝুম! এতোটা কষ্ট কেন দিচ্ছো নিঝুম?
প্রতিশোধ নিচ্ছো নিঝুম? প্রতিশোধ! ”

নিভৃত উঠে বসলো নিঝুমকে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে রেগে বলতে লাগলো,

–” কথা বলো নিঝুম! খুব খারাপ হয়ে যাবে!
তুমি এভাবে চুপ করে থাকতে পারো নাহ! কথা বলোওওও!!”

নিভৃতের রেগে চিৎকার করে কথা বলায় নিঝুমের চোখ পানি এসে পড়েছে।যেন একটু হলেই গড়িয়ে পড়বে চোখের পানি।!

–” কাঁদো নিঝুম! কাঁদো।” জোড়ে বলো নিভৃত।

নিভৃতের এরকম কথায় আর কাজে একসময় নিঝুম হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো। এ যেন বুক ফেটে তার হাহাকার গুলো বের হয়ে যাচ্ছে।এতোদিনের জমানো কষ্টগুলো আজ অস্রু-ধারা হয়ে বেরিয়ে আসছে।
নিভৃত কিছুই বলছে নাহ! কাঁদুক আজ যতো ইচ্ছা কেঁদে নিক।
কষ্ট গুলো অস্রুর ন্যায় ঝরে যাক।
অনেকক্ষন কাঁদলো নিঝুম।
এইবার নিভৃত ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

–” হুস! আর কাঁদে নাহ! আর কাঁদে নাহ।চুপ করো
বেশি কান্না করলে খারাপ লাগবে!”
–” আমার বাচ্চা! নিভৃত আমার বাচ্চা! তুমি মেরে ফেললে কেন নিভৃত? কেন?”
–” আমি জানতাম না নিঝুম আমি জানতাম নাহ! জানলে কোন বাবা কি চায় নিজের সন্তানকে নিজ হাতে মেরে ফেলতে?চায় নাহ?আমিও চাইনি নিঝুম! আমিও চাইনি!”
–” তুমি একটা খুনি আহানকে কেন মারছিলে? তুমি একটা গ্যাংস্টার!”
–” হ্যা আমি গ্যাংস্টার আমি মানি! কিন্তু আমি কোন অন্যায় করি নাহ নিঝুম! যারা অন্যায় কাজ করে আর পুলিশ কিছু করতে পারে নাহ! আমি তাদের শাস্তি দেই কিন্তু খারাপ কাজ করিনা! ”

নিঝুম ঝটকা দিয়ে সরে গেলো।বললো,

–” আমি মানি নাহ! তুমি অন্যায় কাজ করো তুমি অপরাধি।”
–” আমার কথাগুলো একটিবার শুনো নিঝুম! একটি বার শুনো!
আমি তোমাকে সব বুজিয়ে বলছি তুমি সব বিশ্বাস করবে!প্লিজ নিঝুম প্লিজ।!”

নিঝুম চুপ করে রইলো। সবই তো খুয়ালো এইবার নাহয় শুনেই দেখুক নিভৃত তাকে কি দেখায়?কিছু তো নিশ্চয় আছে নাহলে নিভৃত এরকম বলতো নাহ।
নিঝুমের শরীর কাঁপছে দেখে নিভৃত তাকে ধরে বসালো।
ওকে একগ্লাস পানি খাইয়ে দিলো।
বললো,

–” আমি আজ যা যা বলবো সব মেনে নিবে! ভেঙ্গে পড়বে নাহ।
মনে রাখবে তোমার নিভৃত তোমার সাথে সবসময় আছে।”

নিঝুম কিছু বললো নাহ।নিভৃত নিজের ল্যাপটপটা নিয়ে আস্তে করে নিঝুমের পাশে বসলো।
ল্যাপটপ খুলে ওকে বিভিন্ন কিছু দেখাতে লাগলো।
আর ধীরেধীরে সব বলতে লাগলো।
সব বলা শেষে তাকালো নিভৃত নিঝুমের দিকে।
নিঝুমের চোখ দিয়ে টপাটপ অস্রু ঝরছে।
তার অজান্তে এতো কিছু হয়ে গেছে আর সে কিছুই জানে নাহ।
আর এই মানুষটা(নিভৃত) এতোদিন তাকে প্রোটেক্ট করার জন্যে এতো কিছু করলো আজ তাকেই সে এতোটা ঘৃনা করছিলো।
ভাবতেই নিঝুম চোখ বন্ধ করে নিলো।

–” আমি জানতাম না নিঝুম! জানতাম না আমাদের সন্তান আসতে চলেছে! সেদিন আহানকে নিজের চোখের সামনে দেখে নিজের ক্রোধ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারিনি! তাই এতো বড় একটা পাপ হয়ে গেছে আমার হাতে নিঝুম! পাপ হয়ে গেছে। ” নিভৃতের কথা শুনে নিঝুম নিজের চোখের জল মুছে বললো,

–” আহান কোথায়?” নিঝুমের প্রশ্নে নিভৃত নিজের চোয়াল শক্ত করে বললো,

–” ওকে তো নিকৃষ্ট শাস্তি দিয়েছি! ওর হাতের নখ উঠিয়ে ফেলেছি,ওর সারা শরীরে ব্লেড দিয়ে আচঁড় কেটে দিয়েছি।
সেখানে লবন ছিটিয়েছি, ওর চোখ উপ্রে ফেলেছি!
ওর হাত-পা কেটে আলাদা করে দিয়েছি তারপর ওকে ফুটন্ত এসিডে ছেড়ে দিয়েছি! ব্যস খেল খাতাম!”
–” ভালো করেছেন! ওই নরপিশাচ এর এটাই হওয়া উচিত ছিলো।”
কিছুক্ষন থেমে নিভৃতের বুকের মাজে ঝাপিয়ে পড়লো।
নিভৃতকে জড়িয়ে ধরে ধুকড়ে কেঁদে উঠলো।

–” আমি খারাপ নিভৃত! খারাপ! নিজের স্বামিকে আমি বিশ্বাস করিনি নিভৃত।আমি অযোগ্য স্ত্রী! আমাকে তুমি ক্ষমা করো।”
–” তুমি খারাপ না নিঝুম! আমি খারাপ আমি আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না নিঝুম! নিজ হাতে মেরে ফেলেছি!আমি অযোগ্য স্বামি, আমি অযোগ্য বাবা!”
–” আমরা কেউ অযোগ্য না নিভৃত।আমরা পরিস্থিতির শিকার।
আমাদের ভাগ্যে লিখা ছিলো এমনটা হওয়া।
এখানে আমাদের কারো দোষ নেই।”
–” তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো নিঝুম?”
–” আপনি তো আমার স্বামি! আপনাকে ক্ষমা কেন করবো?
আপনি তো কোন ভুল করেননি! পাপ করে আহান আর সে তার শাস্তি পেয়েছে,আজ ওর কারনেই আমাদের সন্তান আমদের মাজে নেই।”
–” তুমি এতোটা ভালো কেন নিঝুম?কেন এতো ভালো?
ভালোবাসি নিঝুম! ভালোবাসি।”
–” আমিও ভালোবাসি!”

নিভৃত নিঝুমকে নিজেত বাহুডোরে আবব্ধ করে নিলো।
নিঝুমও চুপটি করে রইলো নিজের স্বামির বুকে।
আজ কতোটা দিন পর শান্তিমতো নিশ্বাস নিচ্ছে সে।
তবে বুকটা যে সন্তান হারানোর তীব্র ব্যাথায় হাহাকার করে উঠে।
একজন মা নিজের সন্তানের মৃত্যুটা কি এতো সহজে মেনে নিতে পারে?
তবে নিজের স্বামির বুকে সেই কষ্ট নিবারন করার আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো নিঝুম।

চলবে,,,,,,,,,,,,

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
মিল করিয়ে দিলাম ওদের।সুন্দর মন্তব্য করবেন।নাহলে কিন্তু আবার ওদের আলাদা করে দেবো🤪।জাস্ট জোকিং😜
চলবে,,,,,,,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমা করবেন
কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here