ছুয়ে দিলে মন পর্ব ২৪+২৫

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৪
নিভৃত আজ পৌছালো বাংলাদেশে।
কাজ থেকে সস্থির নিশ্বাস ফেললো।
কোন কিছু না ভেবে রাজকে নিয়ে পৌছালো নিঝুমের বাড়িতে।
প্রেয়সীকে দেখার জন্যে যে আর তর সইছে নাহ।
আজ হালকা পাতলা কথা বলে নিয়ে।
তার কয়দিন পর বাবা মাকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলো।
পথের মাজে গাড়ি থামিয়ে অনেক জিনিস কিনে নিলো।
অবশেষে নিঝুমের বাড়ি পৌছালো।
রাজকে নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপতেই তার কিছুক্ষন পর একজন মহিলা এসে দরজা খুললো।
নিভৃত সালাম দিলো।
মহিলাটাও সালামের জবাব নিলো।
নিভৃত মহিলাটিকে চিনে সে নিঝুমের মা।নিঝুমের মা
বললো,

-” বাবা কে তুমি? চিনলাম না?”
-” আসলে আন্টি আমি রায়হান এম্পোয়ারের ওনার।”
-” মানে তুমি নিভৃত রায়হান?”
-“জ্বি!”
-” আহানের চাচাতো ভাই!”
-” জ্বি কিন্তু আপনি চিনলেন কিভাবে?”
-” কথা পরে হবে আগে ভীতরে আসো!”

নিভৃত মাথা ঝাকিয়ে ভীতরে সোফায় গিয়ে বসলো।
নিঝুমের মা সার্ভেন্ট’স কে খাবারের ব্যবস্থা করতে বলে।
নিভৃতের মুখোমুখী বসলো।
নিভৃত মুখটা কাচুমাচু করে বললো,

-” তা আন্টি বললেন না আপনি আহানকে চিনলেন কিভাবে?”
-” আরে আহানের সাথে তো আমার মেয়ের বাগদান হয়েছে।
কিছুদিন পরেই তাদের বিয়ে।”
-” বাগদান?বিয়ে?মানে বুজলাম না?” নিভৃতের বুকের মাঝে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
-” মানে ৬ মাস আগে আহান আর নিঝুমের বাগদান হয়েছে।
আর কিছুদিন পরেই ওদের বিয়ে।”

কথাটা যেন নিভৃতের কান ভেদ করে কলিজায় গিয়ে লাগলো।
কলিজা যেন কেউ টেনেহিছড়ে বের করে ফেলেছে।
এটা কি শুনলো ও? সে তো লোক লাগিয়ে নিঝুমের খবর রাখতো।
তবে এটা জানলো না কিভাবে?
নাহ এটা হতে পারে না নিভৃত সইতে পারবে না।
নিভৃতের চোখমুখ লাল হয়ে গেছে,কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে,চোখ জল টলমল করছে।
নিভৃত আর একমুহূর্ত দেরি না করে গটগট পা ফেলে
চলে গেলো সাথে রাজ ও চলে গেলো।
এদিকে নিঝুমের মা অনেকবার ডাক দিলো।
কিন্তু কেউ থামলো নাহ।
নিভৃতের মনে যে ঝড় বইছে তা যে নিভাতেই হবে।

—————————–

একটা লোক কে বেধরক হারে মারছে নিভৃত।মারতে মারতে পুরো অবস্থা খারাপ।
সাথে তো স্লাং উইজ ও করছে।

-” বল এইসব কে করেছে? বল?”
-” স্যার আমি আপনাকে সব খবর দিতাম।
কিন্তু এইসব জানতান না স্যার।”
-” বুজেছি এইভাবে হবে না। রাজ!”
-” জ্বি ভাই!” রাজ বললো।
-” ওর হাত পা বেধে টগবগে এসিডের মাযে ডুবিয়ে মার।”
-” ওকে ভাই।!”

এরকম ভয়ানক শাস্তির কথা শুনে লোকটা শব্দ করে কেদে উঠলো।

-” ভাই ভাই আমাদের ছেড়ে দিন!”
-” কেন ছাড়বো তুই তো কিছু বলবি না তাই তোকে মেরে ফেলবো।”
-” আমি সব বলবো প্লিজ আমাকে মারিয়েন না।”
-” আচ্ছা সব বলে দে আমিও ছেড়ে দিবো।”

লোকটা ভয়ের চোটে একে একে সব বলে দিলো।
নিঝুমকে কেন আহান বিয়ে করতে চাচ্ছে,
সাথে বাড়তি যা টুকটাক আহানের কাছে যা শুনেছে।
মানে আহান এর সাথে মিষ্টার আরাফাত এর সাথে কথা শুনেছিলো তাও বলেদিলো।
সবটা শুনতেই নিভৃত যেন দ্বিগুন ভয়ানক আর হিংস্র হয়ে উঠলো।
তবে তার আগে নিঝুমকে একেবারে নিজের করে নিতে হবে।
নিভৃত যাওয়ার আগে লোকটার মাথাবরাবর শ্যুট করে দিলো। বললো,

-” বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি একটাই মৃত্যু।”

এরপর নিভৃত ডিরেক্ট নিঝুমের ভার্সিটি গিয়ে ওকে তুলে এনে বিয়ে করে নেয়।
আর আহান যখন জানতে পারে নিভৃত সব জেনে গেছে।
তখন সে পালিয়ে যায়।
এরপরের কাহিনি তো জানেন আপনারা।

_____________ বর্তমান______________

নিঝুমের অপারেশন এর ৩ ঘন্টা হয়ে গেছে।
এই ৩ ঘন্টায় কেউ নিভৃতকে অটির সামনে থেকে সরাতে পারেনি।
অবশেষে অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে অপারেশন শেষ হলো।
ডক্টর বেড়িয়ে আসতেই নিভৃত উঠে দাড়ালো।
একছুটে ডক্টরের কাছে গিয়ে পাগলের মতো করে জিজ্ঞেস করছে,

-” আমার নিঝুম। ডাক্তার আমার নিঝুম! আমার সন্তান কেমন আছে। প্লিজ ডাক্তার বলেন।”

ডাক্তার অত্যন্ত শান্ত সুরে বললো,

-” মিসেস. নিভৃত রায়হান ঠিক আছে! অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ায় সে দূর্বল হয়ে আছে তাই সেন্সল্যাস আছে।
-” ডাক্তার আমার সন্তান?” কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলো নিভৃত।
-” সরি আমরা মিসেস.নিভৃত রায়হানকে বাচাতে পারলেও বেবিটাকে বাচাতে পারিনি। প্রচন্ড জোড়ে সে পেটে চাপ খেয়েছে।
তাই বাচ্চার সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে।”

কথাটা শুনতেই অতি কষ্টে চোখ বন্ধ করে নিলো নিভৃত।
সে নিজেই এই কথাটা সইতে পারছে না।
সেখানে নিঝুম মা হয়ে কিভাবে সয্য করবে?
এ কি পাপ করে ফেললো সে?
এতোটা জঘন্য পাপ করার চেয়ে তো মরে যাওয়াও ভালো।
না নিভৃত এই পাপের বোঝা বইতে পারবে না একদম না।
পাশ দিয়ে নার্স যাচ্ছিলো।
ট্রে তে করে ছুরি,কাচি মানে অপারেশনের জন্য যা যা লাগে সেসব নিয়ে।
সেখান থেকে নিভৃত একটা ছুরি উঠিয়ে নিলো।
সে আর বেঁচে থাকবে না এই পাপ সে নিতে পারবে না।
নিঝুমের চোখে সে সন্তান হারানোর দুঃখ দেখতে পারবে না।
সাথে তার জন্যে ঘৃনা।
নিভৃত হাতের রগে হেচকা টান মারে।
যার ফলে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।
এদিকে এই ঘটানাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে
সবাই শক্ড।
রাজ দ্রুত গিয়ে নিভৃতের হাত থেকে ছুড়ি নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু এতো সহজে কি পারে।
অবশেষে নিভৃতের বাবা আর রাজ মিলে ছুড়িটা ফেলে দেয়।
আর নিভৃতের বাবা তাকে ঠাস করে একটা চড় মারে।
চেচিঁয়ে বললো,

-” নিজেকে শেষ করে দিলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে হ্যা?সব ঠিক হয়ে যাবে? নিজের সন্তানকে তুই ফিরে পাবি বল ফিরে পাবি? পাবি না? এখন নিঝুমের তোকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন
সেখানে তুই নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছিস?”

নিভৃত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।এসব তার বাবা জানলো কিভাবে? নিভৃতের অবস্থা বুজতে পেরে তার বাবা আবার বললো,

-” আমি সব জানি রাজ আমাকে বলেছে।
এখানে তোর কোন দোষ নেই।আবার তুই একেবারেই নির্দোষ না।
এখন তুই ভাব তুই নিজেকে একেবারে শেষ করে দিয়ে শাস্তি দিবি।না-কি নিজের এই দোষের প্রাইশ্চিত্ত করবি?
এখন নিঝুমকে তোকে সামলাতে পারবে।
বেচারি এতো বড় ধাক্কাটা সামলাতে পারবে না।
আর ওকে আমরা সামলাতে পারবো না।
ওকে শান্ত করতে তোকে লাগবে।
আর তুই কি করছিস?সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে মরে যেতে চাইছিস?
তুই তো আমার নিভৃত না? আমার নিভৃত এতো দূর্বল না। সে যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারে। সাথে সবাইকে সামলাতেও পারে।”

বাবার কথায় হাটু গেড়ে বসে পড়ে নিভৃত।
বিকট এক চিৎকার দিলো।
তার চিৎকারে কেপে উঠলো পুরো হাস্পাতাল।
চিৎকার করে কাদঁছে নিভৃত।

-” আমি কিভাবে ওর সামনে যাবো বাব? কিভাবে?
আমি নিজেকেই সামলাতে পারছি না! ওকে কিভাবে সামলাবো?
আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।ও কিভাবে আমাকে ক্ষমা করবে?যার ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে এতো কিছু করলাম
আজ নিজের হাতেই সে ভালোবাসার মানুষটিকে এতো বড় আঘাত দিয়ে ফেললাম। আমি মানতে পারছি না বাবা।
নিজেকে পাপি মনে হচ্ছে। আমার দম আটকে আসছে বাবা।
দেখো আমি শ্বাস নিতে পারছি না বাবা।আমার কষ্ট হচ্ছে বাবা।
কিছু একটা করো বাবা।এতো কষ্ট কেন?ভীতরটা মনে হচ্ছে আগ্নীয়গিরির লাভার মাজে দগ্ধ হচ্ছে।
আমি সইতে পারছি না বাবা সইতে পারছি না।”

নিভৃতের এক একটা আর্তনাদে আজ প্রতিটা মানুষ কাদছে।
সবার চোখ জল।
ভালোবাসার মানুষের জন্যে এতোটা কষ্ট হয় তা নিভৃতকে দেখে তারা উপলব্ধি করছে।
পুরো হাস্পাতালের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে আছে।

চলবে,,,,,,

অতীতটা আরো সুন্দর করে তুলে ধরতে চাইছিলাম।
কিন্তু আপনাদের তো ধৈর্য নেই পড়ার।তাই শেষ করে দিলাম।
এতোদিন তো খুব লাফাচ্ছিলেন আপু নিভৃত কিভাবে নিঝুমকে চিনে?কিভাবে নিভৃত নিঝুমকে ভালোবাসলো।
যখন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইছিলাম সুন্দর করে।
তখন আপনারা উধাও।
আর কিছু বলবো না ধন্যবাদ আপনাদের।
শীঘ্রই শেষ হবে।আমি দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছি।
জানি গল্পটা এখন আর কারোই ভালো লাগছে না।
তাই আমিও আর বড় করতে চাইনা
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উর্মি
#পার্টঃ২৫
২ দিন যাবত নিঝুম অজ্ঞান।নিভৃত নিঝুমের হাত ধরে বসে আছে।
নিভৃত ধরতে গেলে পুরো না খাওয়া।
শুধু আজ সকালে রাজ আর ওর বাবা জোর করে অর্ধেক স্যান্ডউইচ খাইয়েছে সে-কি জোড়াজোড়ি।
তার নিঝুম না উঠা পর্যন্ত সে কিছু খাবে নাহ।
শেষে অর্ধেক খাওয়াতে সক্ষম হয়েছে।
এখন নিভৃতের মা ওকে এইযে বলছে গোসল করে আসতে কিন্তু
ও কিছুতেই যাবে নাহ।
দু-দিন যাবত গোসল ছাড়া আছে সে।শুধু রাজ এনে দিয়েছিলো
টি-শার্ট সেটা পড়েছে।কারন ওর আগের শার্টে রক্তে লাল হয়ে অবস্থা খারাপ ছিলো।

-” যা বাবা তুই গোসল করে আয়।” নিভৃতের মা বললো।
-” নাহ মা আমি কোথাও যাবো না নিঝুমকে ছেড়ে।” অটল গলা নিভৃতের।
-” প্লিজ বাবা যা! আমরা আছি তো।”
-“হ্যা ভাইয়া আপনি যান আমিও আছি নিঝুমের কাছে।” কেভিনে প্রবেশ করতে করতে বললো রিধি।
-” নাহ রিধি আমি আর ওকে এক মুহুর্তের জন্যেও একা ছাড়তে চাই না।”

অবশেষে অনেক জোড়াজোড়ি করেও তারা নিভৃতকে রাজি করাতে পারলো নাহ।সে বসেই আছে।
সবাই কেভিন থেকে চলে গেলো।

_______________________________

চেয়ারে হেলাম দিয়ে বসে আছে রিধি।
চোখ জল তার টলমল করছে।
নিজের বেষ্টফ্রেন্ড কে এইরকম পরিস্থিতেতে সে মেনে নিতে পারছে নাহ।
২ দিন যাবত সেও এখান থেকে যাচ্ছে নাহ।মাথাটা ব্যাথায় ধপধপ করছে তার।এক-কাপ কফি হলে ভালো লাগতো।।
কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছুই করতে ভালো লাগছে নাহ।
নিঝুমের কখন জ্ঞান ফিরবে সেই আশায় আছে ও।
হঠাৎ নিজের পাশে কাউকে বসতে দেখে মুখ তুলে তাকায় রিধি।

-” মন খারাপ করো নাহ প্লিজ।” করুন স্বরে বললো রাজ।
-” আ…আমি নিঝুমকে আগে বলে দিলে এইসব হতো নাহ।
আ..আমি ও..ওকে আগেই বুজিয়ে ব..বললেই হতো।” কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে আসছে তাই কথাগুলো বলতেও কষ্ট হচ্ছে রিধি’র।
-” তোমার কোন দোশ নেই ভাইয়াই তো তোমাকে মানা করেছিলো আর আমিও তোমাকে থ্রেড দিয়েছিলাম।”
-” তবুও আমিও দোশী।”
-” কেউ দোশ করেনি সব ভাগ্যের খেলা।আমাদের ভাগ্যে এসব লিখা ছিলো আর তাই হয়েছে।”
-” আমি মেনে নিতে পারছি না। ও উঠছে না কেন?” দুহাতে মুখ চেপে ধরে ধুকড়ে কেঁদে উঠলো।

রাজ দু-হাতে রিধিকে নিজের বুকের মাঝে আকড়ে ধরলো।
রিধিও রাজের বুকের মুখ গুজে কাঁদছে।

-” হুঁস!! কেঁদো না ;সব ঠিক হয়ে যাবে।” রিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো রাজ।

রিধি রাজের বুকের কাছের শার্ট খামছে ধরে কাঁদছে।
অনেকক্ষন কাঁদার পর থামলো রিধি।কিন্তু এখনো সে ফোঁপাচ্ছে।

-” হয়েছে তো আর কাঁদে নাহ।” রাজ দুহাতে রিধির চোখের জল মুছে দিলো।
-” আমি কাঁদলে আপনার কি? আপনি আমাকে এমনিতেও সয্য করতে পারেন নাহ?”
-” আমি কি বলেছি আমি তোমাকে সয্য করতে পারি নাহ?”
-” নাহ তা বলেন নাই। তবুও আপনি তো ওলওয়েজ আমাকে গুলি করে উড়িয়ে দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত থাকেন!” রিধি বললো।
-” শুধু আমার রাগ টাই দেখলে।আমার মনে যে তোমার জন্যে
এক আকাশ সমান ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি।সেটা দেখো না?” আদুড়ে কন্ঠ রাজের।

রিধি অবাক হয়ে তাকালো।চোখ তার রাজ্যের বিষ্ময়।।
এটা কি শুনলো সে?
সে ভুল শুনেছে না-কি সঠিক শুনেছে?
রিধি এখনো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
তা দেখে রাজ বলে,

-” কি হলো কিছু বলছো না কেন?”
– ” আ…আপনি কিছুই বল..বলেননি রাইট।আ..আমিই ভুল শুনেছি।”
– ” নাহ তুমি জা শুনেছ ঠিক শুনেছো।” গম্ভীর কন্ঠে বললো রাজ।
– ” হোয়াট,, আহহহহহহ! ” চিৎকার করে উঠলো রিধি।
–” সাট-আপ চিৎকার করছো কেন?” ধমক দিলো রাজ।
-” আপনি আমাকে ভালোবাসেন?” প্রশ্ন করলো রিধি।
-” হ্যা! ভীষন ভালোবাসি!” বলে উঠে রাজ।প্রেমময় কন্ঠ তার।

রিধি এখনো বড় বড় চোখ তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ রিধি কিছু না বলে হুট করে দৌড়ে চলে গেলো।
একদৌড়ে ওয়াশরুমে।
এদিকে রাজ হতভম্ব হলোটাকি?
রিধি এমন দৌড়ে চলে গেলো কেন?তবে কি রিধি তাকে ভালোবাসে নাহ?
ভাবতেই মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো রাজের।
পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে চোয়াল শক্ত করে বললো,

– ” তুমি আমাকে ভালোবাসলেও তুমি আমার;না বাসলেও তুমি
আমার। তোমাকে আমার হতেই হবে।আমি এতো উজার না যে
আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো কখনোই না।
বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোমাকে মেরে দিবো তারপর নিজেও মরে যাবো।”

এদিকে,,,,,
রিধি ওয়াশরুমে এসে বুকে হাত দিয়ে হাপাচ্ছে।
তার হার্ট প্রচন্ড জোড়ে বিট করছে।
রাজ তাকে ভালোবাসে। ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে।
সেই প্রথম দেখাতেই তো তার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো।
কিন্তু রাজ যেই হারে বন্ধুক নিয়ে ঘুরে সেই ভয়েই বলতে
সাহস পেতো না সে।
রিধি তো মনে করতে রাজ তাকে একদম পছন্দই করে নাহ।
কিন্তু আজ সে বলেছে ভালোবাসার কথা বলেছে।
এই মুহূর্তে তার চেয়ে খুশি আর কেউ নেই।
কিন্তু তবুও খুশি হতে পারছে নাহ।
আজ নিঝুম যদি সুস্থ থাকতো তবে কতোটা খুশি হতো।
রিধি পারছে না নিজের আনন্দ প্রকাশ করতে।
কার সাথে প্রকাশ করবে? তার প্রান প্রিয় বন্ধু যে আজ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে।
চাইতেও রিধি আজ আনন্দ প্রকাশ করতে পারছে নাহ।
চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
রিধি গিয়ে চোখ মুখে পানি দিয়ে আসলো।
আবার গিয়ে আগের জায়গায় বসে পড়লো।
তবে রাজ কে আশেপাশে আর দেখলো নাহ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিধি। চোখ বুজে সিটে হেলাম দিয়ে রইলো।

_____________________

-” চোখ খুলো নিঝুম! আর কতো ঘুমিয়ে থাকবে?
তোমাকে এভাবে দেখে যে আমার বুকের দহন আরো বেড়ে যাচ্ছে। আমি আমার আগের নিঝুমকে চাই।
কিন্তু আমি জানি তুমি চাইলেও আগের মতো হতে পারবে নাহ।
তোমার জ্ঞান ফিরার পর তুমি আমাকে ঘৃনা করবে।
তবুও তুমি চোখ খুলো। আমি ; আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলবো।
আমি জানি আমার নিঝুম আমাকে বুজবে! আমার নিঝুম তো
আমাকে অনেক ভালোবাসে।তার নিভৃতকে সে বুজবে।
কিন্তু এইবার আমার বুকে এই তীব্র ব্যাথা সইতে পারছি নাহ।
তুমি কিভাবে সয্য করবে?
আমি! আমি নিজের হাতে নিজের সন্তানকে মেরে ফেললাম।
এই পাপ থেকে আমি কিভাবে বের হবো?
আমার সন্তান! আমার অস্তীত্ব! আমি জানতেও পারলাম নাহ।
তার আগেই আমার সন্তানটাকে আমি মেরে ফেললাম।
কতোটা হ্যাপি থাকতাম আমরা।
আমাদের একটা পুচকে হতো।তার ছোট ছোট হাত-পা থাকতো।
আমাকে বাবাই আর তোমাকে মাম্মা বলে ডাকতো।
শেষ করে দিলাম সব শেষ করে দিলাম নিজের হাতে।”
নিঝুমের হাতটা কপালে ঠেকিয়ে হুঁহুঁ করে কেঁদে উঠলো নিভৃত।
যে ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকে না,সীমা থাকে না সেই ভালোবাসা হচ্ছে সত্যিকারের ভালোবাসা।যেমন সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা, মা-বাবার ভালোবাসা, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা।সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো কারো কাছে মাথা নত করে না। হাজার কষ্ট হলেও তারা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না।যত কষ্টই হোক না কেন সে তার ভালোবাসাকে আপন করে নিবেই,এবং তার এ ভালোবাসার জন্য যে কোনো ত্যাগ শিকার করবে। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা।বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়।আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়,বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিস্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি।আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে, যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় সময় খুবই আনন্দদায়ক হতে পারে,আর অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা।

-“কত বেশী ভালোবাসি আমি তোমাকে,
যেদিন পূথিবী ছেরে চলে যাব
বুঝবে সেদিন তুমি আমাকে,
তোমার আখির অগোচরে-আমি চলে যাব যেদিন,
সেদিন তুমি আমাকে শুধু ভালোবাসবে।
বিধাতা নিজের হস্তে আমার জন্য
সুন্দর করে বানিয়েছে তোমাকে,
সর্গথেকে পাঠিয়েছে পূথিবীতে
মনে হয় বুকের ভিতরে ছিলে লক্ষ জনমে,
বুঝবে যেদিন তুমি
পাগলের মতো ভালোবাসবে শুধু আমাকে।
দিল্লির সম্রাট শাহাজান,প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের জন্য
ভালোবাসার চিহ্নের জন্য গড়েছিলে তাজমহল,
সে কতনা পারে ভালোবাসার মমতাজ হতে।
মনের গহিনে লেখা যায় যার নাম
কারো সাদ্ধ হয়না মুছে দেয়া তার নাম,
পূথিবীতে ভালোবেসেছে যে জন-অশ্রæশিক্ত জ্বলে ভাসছে সেজন,
বুঝবে যেদিন তুমি আমাকে-সেদিন পাগলের মতো
ভালোবাসবে শুধু আমাকে।
©নয়ন রয়।।।”
একদৃষ্টিতে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে গাইলো নিভৃত।
নিঝুম কি পারবে নিভৃত ক্ষমা করতে।
তার ভালোবাসার মানুষটিকে বুকে আগলে নিতে পারবে? এতো বড় আঘাতটা কি সে মেনে নিতে পারবে? না-কি নিভৃতকে নিজের থেকে দূরে ঠেলে দিবে।
চলবে,,,,,,,,,,,,,
ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here