ছুয়ে দিলে মন পর্ব ২২+২৩

#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২২
.নিস্তব্ধ রাত চারিদিকে পিনপন নিরবতা।থেকে থেকে ঝি ঝি পোকাগুলো ডেকে উঠছে।
আকাশে চাঁদ মামা মেঘের আড়ালে কিছুক্ষন বাদে বাদেই মুখ লুকোচ্ছে। তারা’রা ঝিকিমিকি জ্বলছে; জোৎস্নামাখা পরিবেশ।
এক অন্যরকম ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো নিভৃতের মন।
আগে তো প্রকৃতিকে এতোটা ভালোলাগেনি তার।
তবে হঠাৎ কি হলো?কেন এতো রঙ্গিন লাগছে সবকিছু।
তবে কি ওর মনে প্রেমের রঙ লেখেছে।সেই রঙে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে চারপাশ।
ঘুম আসে না চোখে,চোখ বুজলেই সেই মায়াবী,কাজল মাখা হৃদয়হরণীর চেহারাটা ভেসে উঠে।
বুকের হৃদস্পন্দন বেরে যায়।
শরীর ঝিম ধরে থাকে।
কেন এমন হয়? তবে কি সে ভালোবাসতে শিখেছে?
সেই মায়াবীনিকে ভালোবাসে?
হ্যা! ভালোবাসে তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।
কিন্তু মস্তিষ্ক আবার মনকে প্রশ্ন করে ৫ দিনে কাউকে ভালোবাসা যায়?
মন জবাব দেয় কেন যায় না?
এক সেকেন্ডের দেখায় ও কাউকে ভালোবাসা যায়।
বুকের মাঝে এমনভাবে ঝেকে বসে যে সেই ব্যাক্তি ছেকে বসে যে তাকে আর মন থেকে সরনো যায় না।
আর এইভাবেই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
প্রেমে পড়ার শুরুর দিকে দোটনায় থাকা খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক একটি বিষয়। মনের মধ্যে বারবার একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়, আমি যাকে ভালোবাসি সেও কি আমাকে ভালোবাসে? একজনকে ভালো লাগার পর নিজের মনের কাছে জানতে চায়, এই অনুভূতি কি শুধুই ভালো লাগা, নাকি ভালোবাসা।
ভালোবাসা হৃদয়ের একটি অনুভূতি। ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব করা।
ভালোবাসা মনের একটি অনুভূতি। এ অনুভূতিটাও কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। এ ভালোবাসা শুধু মানুষে মানুষে নয়। সব জীব ও জড়ের প্রতিও হতে পারে। ভালোবাসা হবে নিখুঁত। যেখানে থাকবে সম্মানবোধ। কোনো প্রতারণা থাকবে না। আমি মনে করি, ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়। একদিনে দেখানোর মতো ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। প্রতিনিয়ত ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে হয়।
নিভৃত নিজের ফোনে নিঝুমের ছবির দিকে তাকালো।
একধ্যানে তাকিয়েই রইলো।
কি আছে এই মেয়েতে যাকে এক দেখায় নিভৃত এভাবে ঘায়েল হয়ে গেলো।
এখন যে এই মায়বিনীকে তার চাই চাই।
নিভৃত ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে
আবৃতি করলো,,

-” তুই কি আমার কবিতা হবে?
তোকে কবিতার মতো করে রাখবো;
হৃদ-মাঝারে।
তুই কি অন্ধকার রাতের জোৎস্না হবে?
তোকে ভ্রান্তির ছলেবলে ;
বিশালাকার কোনো স্হানে বসে;
জোতস্নার মতো করে দেখবো।
তুই কি আমার দুঃখের সাথী হবে?
তোকে প্রতিটি রাতের নীরব কান্না;
নীরব হাহাকারে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেওয়া;
সব বলবো, সব বলবো;
তুই শুধু বলবি,কেঁদো না। আমি তো আছি।”
®মামুনুর রশিদ।

ছবিটি বুকে চেপে ধরলো।
এক প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো মন।
তার ছবিটা বুকে রাখলে এতোটা শান্তি লাগে।
না জানি তার মায়াবিনীকে বুকে নিলে কতোটা শান্তি লাগবে।

ছবিটি বুকে জরিয়েই বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লো নিভৃত।

—————-
সকালে ঘুম থেকে উঠলো নিভৃত ভিষণ তারা তার।
হঠাৎ করেই রাজ কল দিয়ে জানায় যে তাকে ইন্ডিয়া
যেতে হবে ভীষন জরুরী।
সেখানে এ দেশের অসংখ্য মেয়ে পাচার করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এখনো অনন্যা দেশে পাঠনো হয় নি।
আর ওদের উদ্ধার করতে নিভৃতদের যেতে হবে।
যাওয়ার আগে একবার মায়াবিনীকে দেখে যেতে হবে।
নাহলে যে মনে শান্তি পাবে না।
ঝটপট রেডি হয়ে নিভৃত বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। ড্রাইভারকে রেখে সে নিজেই ড্রাইভ করতে শুরু করে দিল। সবার আগে নিঝুমের কলেজে গিয়ে গাড়ি থামাল।। কলেজের মাঠের দিকে নজর যেতে দেখে নিঝুম আর রিধি একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
একধ্যানেই তাকিয়ে রইলো নিভৃত নিঝুমের দিকে।
নিঝুম নীল জামা,সাদা কুটি,সাদা উড়না,জিন্স পড়া
,চোখে কাজল দেওয়া এতেই যেন স্বর্ব রাজ্যের মায়া এসে ভর করেছে নিঝুমের মুখপাণে।
প্রান ভরে দেখে নিচ্ছে নিভৃত তার নিঝুমকে।
কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছে না তার।
মনে হচ্ছে নিঝুমকে সে হারিয়ে ফেলবে।
কিন্তু তাকে তো যেতেই হবে।
না যেয়ে উপায় নেই।
তবে সে এইবার দেশে ফিরে আসলেই তার মায়াবিনীকে
নিজের করে নেবে।আর অপেক্ষা করবে না।
শেষবারের মতো নিভৃত নিঝুমকে দেখে চলে গেলো।
এয়ারপোর্টে এসেই নিভৃত ফ্লাইটে উঠে বসলো।
কিছুক্ষনের মাজেই প্লেন টেক-ওফ করলো।
কেমন যেন মোচর দিয়ে উঠলো তার বুকটা।
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো তার বুকচিরে।
———————

-” হা হা নিভৃত এইটাই সবচেয়ে বড় বোকামি করলি তুই!
এইবার তোর ভালোবাসাকে আমি আপন করে নিবো।
নিঝুমকে আমি বিয়ে করবো।
আর নিঝুমকে হারানোর শোকে তুই কাতর থাকবি।
আর এই সুযোগেই আমি তোকে ধ্বংস করবো।
তোর পাই পাই খোজ করি আমি।তুই যে প্রতিনিয়ত নিঝুমের খোজ খবর নিস এতেই আমি বুজতে পেরেছি তুই নিঝুমকে ভালোবাসিস।
আর আমি এটারই সুযোগ নিলাম।
অনেক হয়েছে নিভৃত রায়হান ।
আর না এইবার সব কিছু হবে আমার।
তুই সব কিছু পেয়েছিস সব সম্পত্তি,বিজন্যাস সব।
আর আমি আমি এগুলোর কিছুই পাই নি।
কেন?কেন? আমি কি এই বংশের ছেলে না?
আনিও তো এই বংশের রক্ত তবে কেন তুই একা সব পাবি?
তোকে আমি এতো আরামে থাকতে দিবো না।
মনে রাখিস। আমি আজকেই নিঝুমের বাড়িতে মাম্মা,আর বাবা কে পাঠাবো। খেলা এইবার অনেক জমবে নিভৃত।”

বলেই হাসতে লাগলো উচ্চস্বরে আহান।আহানকে এইভাবে হাসতে দেখে
এলিনা ন্যাকাকান্না করে বললো,

-” ভাই দিছ ইজ নট ফেয়ের হাহ্।
তুই নিভৃতকে কিছুই করবি নাহ।
আমি নিভৃতকে ভালোবাসি।
তুই আমাকে নিভৃতের সাথে বিয়ে দিবি তুই বলেছিস।
আমার নিভৃতের যেন কিছুই না হয়।”
-” ওহ জাস্ট সাট-আপ এলিনা। তোর এই ফালতু কথা ওফ রাখ।”
-” নোও ভাই! তুই যদি আমার NR কে কিছু করিস তো আমি সব ধ্বংস করে দিবো।জাস্ট ধ্বংস।” চিৎকার করে বললো এলিনা।
-” ওকে ওকে শান্ত হো তুই আমি নিভৃতকে কিছুই করবো না।
তোর নিভৃত তোকেই দিবো আমি।”

এলিনা আহানের দিকে রাগীদৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলো।
এদিকে আহান এলিনার যাওয়ার পাণে খানিক তাকিয়ে
বিরবিরিয়ে বলে,

-” নাহ জানি এই নিভৃতের মাজে কি দেখেছে আমার বোন।
নিভৃতের জন্যে এতো পাগল কেন এই মেয়ে।
এদিকে নিভৃত তো তাকে একদন্ডও পাত্তা দেয় না।
আর সে তার পেছনেই পরে আছে ডিসগাস্টিং।”

নাক ছিটকালো আহান।

——————-

-” আমাকে প্রোপোজ করবে তো এই চর থাপ্পর খাওয়ার অভ্যাস বানিয়ে নেও। ওকে। আমি নিঝুম আর নিঝুম এইসব প্রেম ভালোবাসা ছাছড়ামো পছন্দ করে না ওকে নাউ গেট আউট!” রাগী গলায় কথাগুলো বললো নিঝুম।

আর সামনে ছেলেটি মাথা নিচু করে কথাগুলো শুনে চলে গেলো।
কারন ছেলেটি নিঝুমকে প্রোপোজ করেছে আর সেইজন্যেই
ছেলেটাকে থাপ্পর খেতে হয়েছ তার হাতে।
এমনে নিঝুম খুব শান্ত,ভদ্র আর ভীতুও।
কিন্তু কেউ তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিবে তো সেই মুহূর্তেই সে রেফে রণচন্ডী রূপ ধারন করে।
তার কথামতো প্রেম ভালোবাসা বিয়ের আগে হারাম।
আর নিঝুম এসব মোটেও পছন্দ করে না।

রিধি গুটিগুটি পায়ে নিঝুমের কাছে এসে দাড়ালো।।আফসোসের স্বরে বললো,

-” ইসসস! এতো কিউট পোলাটাকে তুই এমনে থাপ্পর মেরে তার প্রোপোজাল রিজেক্ট করে দিলি।”
-” তুই তোর ফাউল প্যাচাল ওফ রাখ।”
-” তুই এমন কেন রে নিঝুম? আজকালকার জেনেরেশনে মেয়েরা
কতো প্রেম করে। ইনফেক্ট আমিও করেছি।
তোকে রিয়েল লাভ করতে কে বলেছে?কয়দিন প্রেম করবি ঘুরবি, খাবি
ব্যাস মন ভরে গেলে ব্রেক-আপ।
এইগুলোই তো লাইফে এঞ্জয় দোস্ত।”

– তুই কর তোর প্রেম আমি করবো না।
আমি এইসব দুদিনের প্রেম পিরিতি করবো না।
প্রেম করবো তবে বিয়ের পর নিজের স্বামির সাথে
সেখানে থাকবে না কোন বাধা থাকবে না কোন
মানুষের ভয়।
হালাল সম্পর্কে জরিয়েই আমাদের প্রেম শুরু হবে
বুজেছিস?”
-” ভালোবাসা আবার বিয়ের পর হয় না-কি?
বিয়ের পর প্রেম করে কিভাবে?”
-” আরে গাধি ভালোবাসা হওয়ার জন্যে কি বিয়ের আগে প্রেম করা লাগে না-কি গাধি।
ভালোবাসা তো এমনেই হয়ে যায়।
যেদিন কাউকে মন থেকে ভালোবাসবি সেদিন বুজবি!”
-” কিভাবে? আমি কাকে ভালোবাসবো।
আমি তো ভালোবাসা কি তাই বুজি না।”
-” যে ভালোবাসায় কোন স্বার্থ থাকে না,সীমা থাকে না সেই ভালোবাসা হচ্ছে সত্যিকারের ভালোবাসা।যেমন সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসা, মা-বাবার ভালোবাসা, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা।সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো কারো কাছে মাথা নত করে না। হাজার কষ্ট হলেও তারা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না।যত কষ্টই হোক না কেন সে তার ভালোবাসাকে আপন করে নিবেই,এবং তার এ ভালোবাসার জন্য যে কোনো ত্যাগ শিকার করবে। ভালোবাসা একটি মানবিক অনুভূতি ও আবেগকেন্দ্রিক একটি অভিজ্ঞতা।বিশেষ কোন মানুষের জন্য স্নেহের শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ভালোবাসা।তবুও ভালোবাসাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়।আবেগধর্মী ভালোবাসা সাধারণত গভীর হয়,বিশেষ কারো সাথে নিজের সকল মানবীয় অনুভূতি ভাগ করে নেয়া। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিস্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি।আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে, যে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অতিরিক্ত স্নেহ প্রায় সময় খুবই আনন্দদায়ক হতে পারে,আর অতি আনন্দদায়ক অনুভূতিই হলো ভালোবাসা।
সত্যিকারের ভালোবাসা হলো তাই, যে ভালোবাসা আপনাকে দুরে যেতে দিবে না, কিন্তু কাছে থাকলে ছোট ছোট ঝগড়া, দুষ্টুমি, খুঁনসুটি চলতেই থাকবে।আসলে ভাই পূর্ণাঙ্গ ভাবে আমি ভালবাসার মানে জানিনা।তবে ভালবাসার মানে মনে হয় এরকমই, কাউকে দেখে ভালো লাগা,কাউকে মন থেকে বিশ্বাস করা,তাকে না দেখলে ভীসন কষ্ট পাওয়া,তাকে এক নজর দেখার জন্য মন ছট ফট করে আবার দেখা হলে মুখে কথা আটকে যায়,তার জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে,তার কষ্টে নিজের কষ্ট হয়,এরই নামই মনে হয় ভালবাসা।ভালবাসা মানে ফিলিংস, অপ্রকাশ্য অনুভূতি।কেউ বলে ভালবাসা সীমাহীন।” কথাগুলো বলেই মুচকি হাসলো নিঝুম।
-” ওয়াও দোস্ত তুই এতো কিছু জানিস ভালোবাসা নিয়ে!” খুশিতে গদ গদ হয়ে বললো রিধি।
-” ইয়াপ! তাই বলছি এইসব প্রেম করা বাদ দে।
বিয়ের পর স্বামির সাথে প্রেম করিস চুটিয়ে।”
-” ওকে! বাট দোস্ত!”
-” কি?”
-” প্রেম করবো না।কিন্তু ক্রাশ তো খেতে পারবো।
প্লিজ দোস্ত রাগ করিস না।এটা ডেইলি রুটিন আমার।
প্রতিদিন একটা করে জোস জোস পোলাগো উপরে ক্রাশ না খেলে ভাল্লাগে না। ” কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো রিধি।
-” আচ্ছা!! লুচ্চি একটা!” হেসে ফেললো নিঝুম।

হঠাৎ নিঝুমের ফোন বেজে উঠলো।
নিঝুম ফোন ধরে দেখে ওর মা ফোন করেছে।
আর ওকে জলদি বাড়িতে যেতে বললো।
নিঝুম ও ওর মায়ের কথামতো রিধিকে নিয়ে
বাড়িতে চলে গেলো।
কিন্তু বাড়িতে পৌছে নিঝুম যা দেখলো তার জন্যে সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
#ছুঁয়ে_দিলে_মন
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৩
মাথা নিচু করে বসে আছে নিঝুম।
আজ তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।
হঠাৎ এমনটা কি হবে ও বুজে উঠতে পারেনি সে।
প্রচন্ড অবাক হয়েছিলো। মা ওকে আসতে বলে এইসব করবেন
তা আসা করেনি সে।

-” মা তোর কোন পছন্দ আছে বল মা।” বলে উঠলেন নিঝুমের মা।
-” না আম্মু আমার কোন পছন্দ নেই।”
-” তাহলে তাদের হ্যা বলে দেই।”
-” হুম।”
-” ভেবে চিন্তে বলিস মা। আমরা তোর উপরে প্রেসার দিতে চাচ্ছি না।
তোর মত না থাকলে না করে দে।”
-” নাহ মা এমনটা কিছু না।”
-” দেখ মা আমরা তোর ভালোর জন্যেই বলছি
ছেলের পরিবার খুব ভালো।তাই তো তোকে বিয়ে দিতে চাচ্ছি।”
-“হুম।!”

নিঝুমের মা চলে গেলেন।
এদিকে নিঝুমের মা কে বের হয়ে যেতে দেখে রিধি এইবার ঘরে ডুকলো।
নিঝুমের পাশে বসে ওকে বললো,

-” দোস্ত আর ইউ হ্যাপি?”
-” হ্যা! শুধু একটু শক্ড আসলে হঠাৎ এমন হয়ে যাবে
তাই প্রস্তুত ছিলাম না।”
-” ইটস ওকে দোস্ত! এমনে আমার হবু দুলাই কিন্তু হেব্বি হ্যান্ডসাম!”

রিধির কথায় নিঝুম হেসে ফেললো।
এই একটা মেয়ে যে তাকে সব সময় তাকে হাসিখুশি রাখে।
তাকে একটু মন খারাপ করতে দেয় নাহ।
নিঝুম হেসে রিধিকে জরিয়ে ধরলো।
রিধিও জরিয়ে ধরলো।

হঠাৎ নিঝুমের মা দৌড়ে এসে বললো,

-” নিঝুম তারাতারি শাড়ি পরে নেহ।
তারা আজকেই না-কি বাগদান সেরে ফেলতে চান।”
-” কিন্তু আন্টি হঠাৎ কিভাবে কি? আজকেই দেখতে আসলো
আর আজকেই বাগদান করবে?” অবাক হয়ে বললো রিধি।
-” করে নিক।সমস্যা কি?তারা বলছে এখন বাগদান করে রাখবে তার
পর ছয় মাস পর বিয়ে করে নিয়ে যাবে।”

নিঝুম ও আর কিছু বললো না।মা বাবা যা চায় তাই ভালো।
ওর যেহেতু কোন প্রেমিক নেই।তাই এই বিয়েতে দ্বিমত করে লাভ নেই।
কিন্তু কেন যেন নিঝুমের মন টানছে না।
মনে হচ্ছে কেউ তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।
অনেক দূরে হারিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কাকে হারাবে? ওতো কাউকে ভালোবাসে না।
নিঝুম আর কিছু ভাবলো না।রিধি তাকে শাড়ি পরিয়ে রেডি
করে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে গেলো।
আহানকে দেখে নিঝুমের ভালোই লাগলো।
কিন্তু মন থেকে কোন ফিলিংস আসলো না।
আসলে বাহিরের সৌন্দর্য দেখে যে কাউকে ভালোলাগতে পারে।
কিন্তু মন থেকে কোন প্রকার ভালোলাগা কাজ করছে না তার।
তবুও কিছু বললো নাহ। ঘোরোয়াভাবে বাগদান হয়ে গেলো
আহান আর নিঝুমের।

————————-৬ মাস পর———————-
এই ৬ মাসেও নিঝুম আহানকে মন থেকে মেনে নিতে পারে নি।
কেন যেন ওর আহানের প্র‍তি কোন প্রকার ফিলিংস কাজ করে না।
তবুও সব সজ্য করে নেয়।
মাজে মাজে খুব রাগ হয় নিঝুমের কারন আহান ওর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে
চায় যা ওর একদমই পছন্দ নাহ।
এইসব ওই অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিলো নিঝুম।
রিধি এসে ধপ করে ওর পাসে বসে পড়লো।
নিঝুম তাকালো ওর দিকে।
রিধি বলে,

-” কিচ্ছে দোস্ত!”
-” কিছু না।”
-” আহা বলনা কি নিয়ে এতো ভাবছিস?”
-” রিধি আমার না আহানের প্রতি কোন ফিলিংস কাজ করে না।
মানে ওকে আমি মন থেকে এখনো মেনে নিতে পারছি না।” করুনস্বরে বলে নিঝুম।
-” আহা! প্যারা নাই দোস্ত চিল। বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
বিয়ে নামক বন্ধনে আল্লাহ্ এর রহমত থাকে।
বিয়ের পর এমনেই ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যাবে।”
-” হুম তাই যেন হয় দোয়া কর।”
-” অবশ্যই।”
-” ওয়েট আ মিনিট দোস্ত!”
-” হুয়াট?”
-” আমি এতো সুন্দর লেকচার কি করে দিতে পারলাম?”
-” ফকিন্নি চুপ যা!”
-” ওয়াও রিধি আ’ম প্রাউড ওফ ইউ।”

রিধি আর নিঝুম একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।

——————————————-

এই ৬ মাসে দম ফেলবারও সময় পাই নি নিভৃত।
বিভিন্ন দেশে সে মিশনে গিয়েছে।
যেখানে মেয়ে পাচার,শিশু পাচার, ড্রাগ সাপ্লাই এর মতো বিভিন্ন বেআইনি
কাজের অবশান ঘটিয়েছে। সাথে বিজন্যাস ও সামলাতে হয়েছে।
দুটো একসাথে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে।
লোকদিয়ে পাঠানো নিঝুমের ছবি দেখে সে পার করেছে।
কিন্তু ৬ মাস যাবত তার প্রেয়সীকে কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে না।
চেয়ারে হেলাম দিয়ে বসে আছে নিভৃত।
মাথাটা ব্যাথায় ধপধপ করছে।
একনাগাড়ে কাজ করতে করতে ক্লান্ত সে।

-” মে আই কাম ইন ভাই।” রাজের কথায় তাকায় নিভৃত।বিরক্তিকর সুরে বললো,
-” তোকে কতোবার বলতে হবে রাজ।আমার ক্যাভিনে ডুকতে তোর পার্মিশন লাগবে না।”
-” তবুও ভাই।”
-” রাজ আমি বিবাহিত না যে তোর ভয় থাকবে যে ভীতরে কিছু পার্সোনালি আছে কি-না।বাট আ’ম সিংগেল তাই নক করার দরকার নেই।
বাট যখন তোর ভাবি আসবে তখন নাহয় নক করে ডুকিস!”

ভাইয়ের কথায় রাজের মুখ রসগোল্লা সাইজ হয়ে যায়।
এ-কি বললো সে।যে ভাইকে তার মা গত চার বছর ধরে বিয়ের কথা বলছে কিন্তু রাজি করাতে পারেনি। সে কি-না আজ নিজ ইচ্ছায় বিয়ের কথা বলছে।

-” এভাবে হা করে আছিস কেন?” নিভৃত বলে।
-” না ভাই কিছু না।” থতমত গলায় হলে রাজ।
-” কালকের টিকিট কনফার্ম করেছিস?”
-” হ্যা ভাই করেছি।”

রাজের কথায় মুচকি হাসে নিভৃত।নিভৃতকে এইভাবে বিনা কারনে হাসতে দেখে রাজ বললো,

-” কি হলো ভাই হাসছো কেন?”
-” কালকের দিনটা স্পেশাল আমার জন্যে।”
-” কেন ভাই?”
-” কাল তোর ভাবিকে দেখতে যাবো।”
-” কিহহহহহহহহহ!! ভাবিইইইইই মানে?” অবাক রাজ প্রচন্ড।
-” চেচাচ্ছিস কেন?”
-” আপনি আমার ভাই না!আপনি কে জলদি বলুন?”
-” হুয়াট এইসব কি বলছিস রাজ?”
-” নাহহ আপনি আমার ভাই না।আমার ভাই জীবনেও কোন মেয়ের ধারে কাছে যায় না।সে-কি আজ নিজ ইচ্ছায় বিয়ের কথা বলছে আবার
না-কি পাত্রিও ঠিক।”
-” সাট-আপ রাজ তোর আউল ফাউল কথা বাদ দে।”
-” তার মানে সত্যি আপনি কারো প্রেমে পড়েছেন?” রাজ বললো।
-” হ্যা! কেন আমি কি মানুষ না আমার কি হৃদয় নেই আমি কি কারো প্রেমে পড়তে পারি না?”
-” এমনটা না ভাই।”
-” তাহলে কেমন?”
-” আসলে ভাই আমি অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
কথাটা মানতে পারছিলাম না আর কি? তা আমাদের ভাবি কে?”
-” মনে আছে আমার গাড়ির কাচ ভেঙ্গে ফেলেছিলো একটা মেয়ে।”
-” ওহ হ্যা! সেই মেয়েই আমাদের ভাবি!”
-” কিন্তু ভাই কোনটা?”
-” ওইযে সাদা জামা পড়াছিলো আর মাথা নিচু করেছিলো।”
-” থ্যাংক গড। বাচালেন।”
-” কি?”
-” মানে পাশে আরেকটা ছিলো না।”
-” রিধি?”
-” ওই হ্যা! মেয়েটা বজ্জাতের হাড্ডি।”
-” তবে ভালো আছে।”
-” যা শয়তানের শয়তান।”
-” দেখিস আবার এই শয়তানের ওই প্রেমে পড়ে যাস না।”
-” কিযে বলেন ভাই।ওই মেয়ের প্রেমে তাও আমি ইম্পসিবল।”
-” হাহাহহাহা! আচ্ছা বাদ দে।চল কাজ কম্পলিট করি।কাল দেশে ফিরতে হবে।”
-” আচ্ছা!”

রাজ আর নিভৃত কাজের মনোযোগ দিলো।

———————————

-” আপনার ডিল ওকে স্যার৷ পেয়ে যাবেন নিঝুমকে।”
-“………”
-” নাহ নাহ! নিভৃত জানবে না।এই ৬ মাসেই আমি জানতে দেয়নি
নিভৃতকে যে নিঝুম এনগেজড! ওহ এখনো জানে নিঝুম সিংগেল।
ওকে বিভিন্নভাবে বিজি রেখেছি।আমি ইচ্ছে করেই মেয়ে পাচার আর শিশু পাচার এর ঠিকানা ওকে জানিয়েছি।যাতে ও ওইসব কাজে বিজি থাকে।আর আমি ওর নিঝুমকে বিয়ে করতে পারি।”
-“……….. ”
-“হ্যা হ্যা মিষ্টার আরাফাত আমি নিঝুমকে বিয়ে করলে তার কিছুদিন পরেই নিঝুমকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দেবো।ওকে আমি টাচ ও করবো না।আপনার জন্যে রেখে দেবো।”
-“…………”
-” ওকে স্যার রাখি।”

কান থেকে ফোন সরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আহান।
এতোক্ষন মি.আরাফাত এর সাথে কথা বলছিলো সে।
একদিন আহানের ফোনে কিছু মেয়েদের পিকচার্স দেখছিলো।
মেয়ে পাচারের জন্যে আর ভুলবশত নিঝুমের ছবি সে দেখে ফেলে।
আর সেই থেকেই সে আহানের কাছে এক কথা বলে যাচ্ছে নিঝুমকে
একরাতের জন্যেও তার বেডপার্টনার করতে চায়।
আহানও রাজি হয়ে যায় কারন এর বিনিময়ে তাকে মোটা অংকের টাকার অফার করা হয়েছে।
এই ৬ মাসে আহান অনেক সাবধানে সব করেছে।
নিভৃতকে কিছুই জানতে দেয়নি সে।
নিভৃত যেই লোকদিয়ে খোজখবর রাখতো
তাকে কিনে নিয়েছে যাতে নিভৃত কোন খোজ খবর না পায়
তার আর নিঝুমের ব্যাপারে।
আহান যা বলতো সে তাই করতো।
এইবার শুধু বিয়ে হওয়ার পালা।
বিয়েটা হয়ে গেলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
নিভৃতকে সহজেই ধ্বংশ করতে পারবে সে।
শয়তানি হাসি হাসলো আহান।

চলবে৷।।।।।।।

আমি আশাহত রেস্পন্স এতো কমে গেলো।ওয়াও হুয়াট আ সার্প্রাইজ।
আমি রেয়েলি হ্যাপি রেয়েলি ভেরি হ্যাপি।
আপনারা আমাকে এতো সুন্দর সার্প্রাইজ দিচ্ছেন দেখে আমি বাকরুদ্ধ🙂।
আর না মাত্র ২,৩ পার্ট করবো।
এন্ডিং আপনাদের পছন্দ হলো কি হলো না আই ডোন্ট কেয়ের।
এটাই আমার শেষ গল্প।
এটা শেষ করে গল্প জগৎ থেকে বিদায় নেবো।
আমার মন ভেঙ্গে গেছে একেবারে আর না।
ধন্যবাদ সবাইকে🙂🙂🙂।
চলবে,,,,,,,
ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here