#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৩৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ইশানি ম্যামের ডিভোর্স হয়নি। তারমানে ইশানি ম্যাম মিথ্যে বলে এসেছেন এতোদিন ধরে। ইশানি ম্যাম একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে-ই’ আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলেন। তারপর দ্রুত পা বাড়িয়ে চলে গেলেন। কোথায় গেলেন উনি। আমাকে ও যেতে হবে। আমিও ইশানির ম্যামের পিছনে যাওয়া শুরু করলে, পিছন থেকে রুদ্রিক আমার হাত ধরে ফেললো। আমি রুদ্রিকের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললাম,
—“রুদ্রিক তুমি আমার হাত ছাড়ো। আমাকে ইশানি ম্যামকে ধরতে হবে। ”
—“তুমি কোথাও যাচ্ছো নাহ কাজল। ”
রুদ্রিকের কড়া উত্তর।
—-“তুমি বুঝতে পারছো নাহ রুদ্রিক। ইশানি ম্যাম আমাদের থেকে কত বড় সত্য লুকিয়েছে। ইশানি ম্যাম এখনো বিবাহিত…
আমার কথায় বিঘ্ন ঘটিয়ে রুদ্রিক পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
—“তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি আসছি। ”
রুদ্রিক নীচে চলে গেলো। রুদ্রিকের আচরণ কেমন যেনো স্বাভাবিক লাগছিলো নাহ। আমিও রুদ্রিকের পিছনে পিছনে নীচে চলে এলাম।
অন্যদিকে,
ইশানি পিছনের গেট দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। এই মাত্র তার কাছে খবর এসেছে মাহির কম্পানির পাউয়ার নিয়ে নিয়েছে। মাহির এইরকম একটা স্টেপ নিলো কীভাবে? ইশানির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ইশানি গাড়ির স্প্রিড আরো বাড়িয়ে দিলো। যে করে-ই’ হোক অফিসে পৌঁছাতে হবে।
নীচে চলে আসতে-ই’ আরেকদফা অবাক হলাম।
আনন্দে ভরপুর বাড়ি যেনো মুহুর্তে-ই’ নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেছে। ভর সাহেব বার বার কাউকে ফোন করে যাচ্ছে। বড় ম্যামসাহেব ও খুব চিন্তিত। দিয়া ও সিথির মুখেও কোনো কথা নেই। সবাইকে এইরকম চুপ থাকতে আমি বলে উঠলাম,
—“কি হয়েছে আমাকে কেউ কিছু বলবে? ”
সিথি আমার কাছে এসে বলল,
—“কাজল সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমাদের কম্পানির
পাওয়ার ইশানি পিপির এক্স হাজবেন্ড মাহির আংকেল নিয়ে নিয়েছেন। ”
—“ওয়াট? ”
দিয়া পিপিও নক কামড়াতে কামড়াতে বললেন,
—“নাকবোঁচা এ্যাস্টিটেন্ট এর ফোন এসেছিলো। আমরা আজকে রিসিপশন এর জন্যে কেউ আজকে অফিসে যাইনি,কিন্তু লাজুক আজকে গিয়েছিলো। অফিসে গিয়ে তো সে অবাক। মিঃ মাহির আমাদের কম্পানির পাউয়ার নাকি নিজের নামে করে ফেলেছি। নিজেকে সে কম্পানির সিইউ দাবি করছে। ”
—“কিন্তু মাহির আংকেল কম্পানির পাউয়ার নিলো কীভাবে? ”
বড় সাহেব আমার কথা শুনে তাল মিলিয়ে বললেন,
—-“আমিও কিচ্ছু বুঝতে পারছি নাহ। মাহির এতোবছর কোথা থেকে হাজির হলো? ইশানির সাথে ডিভোর্স এর পর তো আমাদের কারো সাথে-ই’ তার যোগাযোগ ছিলো নাহ। ”
আমার প্রশ্নে রুদ্রিক দাঁতে দাঁতে বলল,
—“মিস ইশানি শেখ আবারো ধোঁকা দিয়েছেন। তার কোনো ডিভোর্স হয়নি। এতোবছর ধরে ওই মাহির আহমেদ এর সাথে উনার যোগাযোগ ছিলো। হাজবেন্ড ওয়াইফ মিলে এতোদিন ধরে প্ল্যান করেছে। কীভাবে সব প্রপার্টি নিজেদের নামে করা যায়। ”
আফজাল শেখ চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। তিনি কিছুতে-ই’ বিশ্বাস করতে পারছেন নাহ। তার বোন এইরকম একটা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে? সে কি জানে নাহ? কতটা কষ্ট করে এই কম্পানি সে তীলে তীলে গড়ে তুলেছে।
রুদ্রিক হয়তো তার বাবার অবস্হা কিছুটা হলেও তাই সে আফজাল শেখকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি হবে? আমাদের যত দ্রুত সম্ভব অফিসে যেতে হবে। ”
—-“তুমিও যাবে রুদ্রিক? ”
রুদ্রিক গম্ভীর হয়ে-ই’ বলল,
—-“এইসময় আমাদের সকলকে এক হতে হবে। যদিও আমি সবসময় বলি আপনার কম্পানিকে নিয়ে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই,কিন্তু আমি তো দেখেছি এই কম্পানিকে দাঁড় করানোর জন্যে আপনি কতটা পরিশ্রম করেছেন। এই কম্পানির জন্যে নিজের ছেলের পরোয়াও কখনো করেননি। ”
রুদ্রিকের শেষের কথা শুনে জেসমিনের চোখে পানি এসে পড়লো। কতটা ভিতরে কষ্ট রয়েছে তার ছেলের।
রুদ্রিকের কথা শুনে এইরকম একটা বিপদের মুহূর্তও আফজাল শেখ হাঁসলেন। তিনি জানেন তার ছেলে মুখে যত যা-ই’ বলুক, আসলে এখনো রুদ্রিক এই পরিবারকে আগের মতো-ই’ ভালোবাসে শুধু প্রকাশ করেনা।
রুদ্রিক আর সময় নষ্ট না করে দিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“দিয়া পিপি তোমরা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ো অফিসের উদ্দেশ্যে। দেখো সেখানের আপাতত কি অবস্হা এন্ড সাদি তুইও যা। ”
সাদি মাথা নাড়িয়ে বলে,
—-“আমরা নাহয় অফিসে যাচ্ছি,কিন্তু রুদ্রিক তুই কোথায় যাবি? তুই অফিসে যাবি নাহ?”
রুদ্রিক কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
—“নাহ তোরা আপাতত অফিসে যা। কি অবস্হা সেইটা দেখার চেস্টা কর। আমি একটা জায়গায় যাবো। আমি সময়মতো অফিসে চলে যাবো। ”
রুদ্রিকের কথা শুনে সবাই গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
সিথি আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল,
—“আমার বড্ড ভয় হচ্ছে রে কাজল। কি হবে কিচ্ছু বুঝতে পারছি নাহ। আমার তো ড্যাডের জন্যে ভয় হচ্ছে। যদি এইসব টেনশনে ড্যাডের কিছু হয় তাহলে? আমরা আমাদের কম্পানিটা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারবো তো? ”
সিথির আতন্ক কন্ঠে কথাটি বলল।
রুদ্রিকের কানে কথাটা আসতে-ই’ সে কিছুটা ভরসার সুরে-ই’ বলল,
—” কেউ যেনো শুধু শুধু ভয় না পায়। রাফসিন শেখ রুদ্রিক এখনো বেঁচে আছে। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক আবারো নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
রুদ্রিকের কথা সিথির কানে বেজে চলেছে। তাই ভাইয়ূ তাকে এই প্রথম ভরসা দিয়ে কোনো কথা বললো।
আমি রুদ্রিকের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে সিথির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
—“দেখেছিস? তোর ভাইও শেখ পরিবারের সাথে আছে। তাহলে কীসের ভয়? সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। বুঝেছিস,? ”
সিথি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ঘরে ঢুকে দেখি, রুদ্রিক কাউকে ফোন করে কিছু বলে দিচ্ছে। রুদ্রিক কি করতে চাইছে কি?
আমি এইবার মুখ খুললাম,
—“রুদ্রিক তুমি ঠিক ভাবছো আমাকে বলবে। ”
রুদ্রিক নিজের মানি ব্যাগটা পকেটে ঢুকিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বললো,
—“একটা জায়গায় যেতে হবে আমার। তুমি আপাতত এখানে থাকো। ”
—-“কিন্তু তুমি কোথায় যাচ্ছো। ”
রুদ্রিক আয়নার দিকে তাঁকিয়ে-ই’ হাল্কা সুরে বললো,
—“আপনজনের মুখোশে লুকিয়ে থাকা শত্রুর মুখ যখন বেড়িয়ে আসে তখন কেমন অবস্হা হয় কাজল? ”
—“তোমার কথাটি ঠিক বুঝলাম নাহ। ”
রুদ্রিক হাতের ঘড়িটা হাতে নিয়ে বললো,
—” মিস ইশানি শেখকে আমি নিজের বাবা-মায়ের থেকেও বেশি ভরসা করতাম,কিন্তু উনি আমার ভরসার মর্যাদা দিলেন ধোঁকা দিয়ে। যাদের সবসময় আমরা নিজেদের আপনজন ভাবি তারা যদি কখনো আমাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলে কিংবা ধোঁকা দেয় তখন কী তা মেনে নেওয়া যায়? ”
রুদ্রিকের বলা কথাগুলো শুনে আমি ঠিক কী বলবো বুঝে উঠতে পারছি নাহ।
—-“রুদ্রিক আর ইউ ওকে?”
রুদ্রিক আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে-ই’ তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেলো।
আমি এখন কী করবো? আমার কাছে সবকিছু-ই’ যেনো ধোঁয়াশা লাগছে। আমি সব প্রশ্নের উত্তর কোথায় পাবো এখন?
—“সব প্রশ্নের উত্তর রুদ্রিক-ই’ সময়মতো সবাইকে দিবে। ”
কথাটি বলে দিদুন রুমে প্রবেশ করলো।
অফিসে…..
ইশানি অফিসে ঢুকে দেখে সব স্টাফরা মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে তারা হয়তো বুঝতে পারছে নাহ কী থেকে কি হয়ে গেলো।
ইশানি আফজাল শেখের কেবিনে ঢুকে দেখে মাহির
আফজাল শেখের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
ইশানি ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
—“এইসব কি শুরু করেছো? তুমি মাহির? ”
মাহির উঠে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,
—“কেনো তুমি দেখতে পারছো নাহ? এই শেখ গ্রুপ অফ কম্পানি এখন থেকে আমার সরি আম মিস্টেক। এখন থেকে পুরো কম্পানি আমাদের।”
—-“এই কম্পানির পাউয়ার তুমি কীভাবে পেলে? ”
ইশানির কথা শুনে মাহির অট্টসুরে হেঁসে বললো,
—“কেনো ডার্লিং তুমি ভুলে গেলে? আমি তোমাকে অনেকগুলো ফাইল তোমার ভাইকে দিয়ে সাইন করাতাম। তুমিও কিছু না ভেবে সেই ফাইলগুলো বিনা প্রশ্নে সাইন করিয়ে নিতে এন্ড সবথেকে বড় কথা আমি সেই ফাইনসগুলো ছিলো কম্পানির হস্তান্তর করার সব দলিল। ”
মাহিরের কথা শুনে ইশানি কি রিয়েক্ট করবে সে বুঝতে পারছে নাহ। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।
মাহির ইশানি শেখের চোখের জলটুকু মুছিয়ে বলে,
—” ইশানি তুমি কাঁদছো কেন? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাইনা? তাহলে শুধু শুধু কাঁদছো কেন?”
তখনি আফজাল শেখসহ দিয়া লাজুক ও সাদি কেবিনে প্রবেশ করে।
আফজাল শেখ বললেন,
—“তোমরা দুজন কী ভেবেছো? তোমরা বিশ্বাসঘাতকতা করে আমার থেকে আমার কম্পানি কেড়ে নিতে পারবে। ”
মাহির বাঁকা হেঁসে বললো,
—“অলরেডী করেও ফেলেছি। এখন আপনারা চাইলেও কিচ্ছু করতে পারবেন নাহ। ”
দিয়া ইশানির দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
—“আমি সত্যি-ই’ ভাবতে পারছি নাহ আপাই। তুমি এতোটা নীচে কী করে নেমে গেলে? ”
ইশানি শেখ অসহায় দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাঁকালো।
মাহির আফজাল শেখের কাছে গিয়ে কটাক্ষ করে বলে,
—” এখন আপনারা যেতে পারেন। ”
তখনি একজন বলে উঠলো,
—“দাঁড়ান মিঃ আহমেদ এতো তাড়া কিসের? ”
সবাই তাঁকিয়ে দেখে একজন ভদ্র লোক দাঁড়িয়ে আছেন উকিলের পোষাকে।
মাহির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বললো,
—“আপনি কে?”
ভদ্রলোক উত্তর দিয়ে বললো,
—“আমি রাফসিন শেখ রুদ্রিকের আইনজীবি । আমি তিনি এখানে পাঠিয়েছেন। “#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি
#পর্ব- ৩৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
গাঁয়ে এখনো বৌ-ভাতের লেহেংগানিয়ে-ই’,রুদ্রিককে অনাবরত ফোন করে যাচ্ছি। রুদ্রিক ফোনটা-ই’ ধরছে নাহ। আমার বড্ড চিন্তা হচ্ছে। রুদ্রিক কোথায় গেলো? ফোনটা-ই’ বা ধরছে নাহ কেনো? আমাকে এইভাবে উত্তেজিত হয়ে যেতে দেখে দিদুন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–“এইভাবে উত্তেজিত হয়ে না দিদিভাই। রুদ্রিই দাদুভাই নিশ্চই কোনো কাজে আছে। ”
—“তা-ই’ বলে ফোনটাও ধরবে নাহ।”
কথাটি বলে আমি রুদ্রিকের নাম্বারে আবারো কল করলাম,কিন্তু এখন তো বন্ধ করে ফেলেছে।
আমি ফোনটা ফেলে দেই। দিদুন বললেন,
—“আমি বলে কী দিদিভাই তুমি একটু শান্ত হও। রুদ্রিক দাদুভাই সময়মতো ফোন করে দিবে। তুমি আগে নিজের গাঁয়ে লেহেংগাটা পাল্টে এসো।”
দিদুন আমার হাতে একটি শাড়ি দিয়ে, রুম ত্যাগ করেন।
আমিও শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যাই।
আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়োতে-ই’, মুসকান কোথা থেকে যেনো দৌড়ে চলে আসে। আমি মুসকানের কাছে গিয়ে দেখি মুসকানের ছোট্ট একটি চিরকুট রয়েছে।
আমি মুসকানের দিকে ঝুঁকে বলে উঠলাম,
–“মুসকান সোনা। তোমার হাতে কিসের চিঠি? ”
মুসকান আমার কথা শুনে, আদো গলায় বলল,
–“একটা আংকেল আমাল হাতে দিতে । তোমাকে দিতে বলতে।”
আমার জন্যে চিরকুট? কে দিয়েছে? আমি মুসকানের হাত থেকে চিরকুট নিয়ে নেই। আমি চিরকুটটি হাতে নিয়ে খুলে দেখি রুদ্রিকের লেখা চিরকুট । তাতে লেখা রয়েছে,
—“কাজল আমাকে ফোনে না পেলে তুই ‘বেলি কুঞ্জ ‘ চলে যাবি। সেখানে কিছু প্রুফ আছে মাহির আহমাদের বিরুদ্ধে। তুই সে প্রুফ গুলো আজকের জন্যে হলেও লুকিয়ে ফেলবি। আমার যতটুকু মনে
হচ্ছে মাহির আহমাদ কোনোভাবে বেলিকুঞ্জে যাওয়ার চেস্টা করবে এইসব প্রমান লুকানোর জন্যে। তুই তার আগে সব প্রমাণগুলো লুকিয়ে ফেলবি। আমার জন্যে চিন্তা করবি নাহ। আমি যেখানে-ই’ আছি। ঠিক আছি৷ ”
রুদ্রিকের লেখা চিরকুট পেয়ে মনে হলো কলিজায় পানি আসলো। বুঝতে পারছি নাহ রুদ্রিকের মনে এখন কি চলছে। নাহ এখন ভাবার সময় নেই।
আমি আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাতের পার্স নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
অন্যদিকে,
মাহির প্রশ্ন করে বললো,
—“আপনি রুদ্রিক শেখের আইনজীবি?
—-“জ্বী। ”
—-“আপনার এখানে কাজ কিসের? যেখানে আমার কাছে সব পেপার-ই’ রয়েছে। ”
—-“হুট করে একজন এর কম্পানি নিজের নামে বলে চালিয়ে দিলে-ই’ তো হবে নাহ। রাফসিন শেখ রুদ্রিক আপনার নামে ফ্রড কেস করেছেন। পুলিশ আগে সবকিছুর তদন্ত করে দেখবেন, তার আগে আপনি শেখ গ্রুপ অফ ইন্ড্রাস্টির পাউয়ার নিতে পারবেন নাহ। ”
আইনীজীবির কথা শুনে সবার মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।
কথাটি বলে রুদ্রিকের আইনজীবি ফারুক সাহেব কিছু পেপার মাহিরের হাতে তুলে দেয়। মাহির পেপার গুলো চেক করে দেখে, রুদ্রিক সত্যি কেস করেছে। ”
মাহির পেপারসগুলো দেখে বাঁকা হাঁসে। মাহির কিছুটা হেঁসে-ই’ বললো,
—-“ঠিক আছে আমি আপাতত পাউয়ার নিচ্ছি নাহ। পুলিশ তো তদন্ত করার জন্যে ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছে। যত-ই’ তদন্ত করুক এই কম্পানির পাউয়ার শেষে আমাকে দিতে-ই’ হবে,কেননা এই পেপারস গুলো আসল। সব থেকে বড় কথা আফজাল শেখের সাইন আছে। পেপার স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে,আফজাল শেখ নিজ ইচ্ছায় এই কম্পানির পাউয়ার আমাকে দিয়েছে। ”
আফজাল শেখ রাগে চিৎকার করে বললো,
—“একদম মিথ্যে বলবে নাহ মাহির। আমি তোমাদের কোনো পাউয়ার দে-ই’ নি। তোমরা ছলনা করে আমার থেকে কম্পানির পাউয়ার নিয়েছো। তোমাকে আর কি বলবো? যেখানে নিজের বোন-ই’ বিশ্বাসঘাতকতা করে। ”
ইশানি আফজালের দিকে তাঁকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো,
—“ভাইয়া…..
ইশানিকে থামিয়ে আফজাল শেখ বললেন,
—-“তুমি একদম কথা বলবে নাহ। নাহলে আমার হাত কিন্তু তোমার গালে চলে যাবে,নিশ্চই এই বয়সে আমার হাতে গালে থাপ্পড় খেতে চাইছো নাহ। ”
—-“রিলাক্স আফজাল সাহেব। এত্তো উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন কেন? আপনার বয়সের দিকেও একটু্ খেয়াল করুন। আপনিতেও কম্পানি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে পড়ে যদি হার্ট অ্যাটাক টাইপের কিছু হয়ে যায়…
মাহিরের কথা শুনে সাদ এইবার চরম রেগে তেড়ে এসে মাহিরের কলার চেপে ধরে বলে,
—“হাও ডেয়ার ইউ। আংকেলকে এইসব কথা বলার সাহস পান কোথা থেকে? ”
—-“সাদি কী করছো কী? ”
কথাটি বলে লাজুক এসে সাদিকে মাহিরের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।
সাদি রাগে ফুশছে। লাজুক সাদিকে শান্ত করে বলে,
—“এখন আমাদের মাথা ঠান্ডা রেখে সব কাজ করতে হবে। শান্ত হও। ”
মাহির নিজের কলার ঠিক করতে করতে সাদিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“এই বয়সে ছোট খাটো বিষয়ে উত্তেজিত হয়ে গেলে কি করে চলবে ইয়াং ম্যান। ”
সাদি রাগে ফুশছে
—-“কালকে আমি পাউয়ার নিয়ে-ই’ নিবো। এইসব কেস করে কোনো লাভ হবনা। আজকে-ই’ আপনাদের সময় দিলাম। নিজেদের অফিস শেষবারের মতো দেখে নিয়েন। চলো ইশানি। ”
মাহির কথাটি বলে ইশানির হাত ধরে বাইরে চলে গেলো।
মাহির চলে যেতে-ই’ রুদ্রিকের আইনজীবি মিঃ আফজাল শেখকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—“মি শেখ রুদ্রিক আমাকে দিয়ে কেস করিয়ে দিয়েছেন। কেস যখন করা হয়েছে তখন চিন্তা করবেন নাহ। এখনো হাতে ২৪ঘন্টা সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে রুদ্রিক কিছু না কিছু একটা করবে-ই’।”
আইনজীবির কথা শুনে আফজাল শেখ কিছুটা ভরসা পায়। তিনি জানেন রুদ্রিক এই কম্পানিকে বাঁচানোর জন্যে শেষ পর্যন্ত যাবে।
—-“ভাইয়ূ তুমি বরং এখন বাড়িতে যাও। আমি এবং লাজুক পুলিশ অফিসারের কাছে যাচ্ছি। ”
দিয়ার কথা শুনে লাজুক ও সায় দিয়ে বললো,
—-“হ্যা স্যার আপনি এখন চলে যান। এইসময় আপনার থাকাটা ঠিক হবেনা। আমি এবং দিয়া ম্যাম এইদিকটা দেখে নিচ্ছি। আমাদের উপর একটু আস্হা রাখুন। ”
লাজুকের কথায় আফজাল শেখ সম্মতি দিয়ে বললেন,
—“ঠিক আছে আমি বরং যাই। ”
লাজুক এইবার আইনজীবির কাছে গিয়ে বললেন,
—“আমরা পুলিশ স্টেশনে যাচ্ছি আপনিও কি যাবেন?”
—“জ্বী আমি যাচ্ছি কিছুক্ষন পরে। ”
—-“আমিও কি যাবো?
সাদির প্রশ্নে লাজুক বললো,
—” আপাতত আমরা বরং যাই। তুমি বরং আপাতত মায়া কুঞ্জে গিয়ে দেখো সেখানকার কি অবস্হা।”
সাদি মাথা নাড়ালো।
লাজুক ও দিয়া বেড়িয়ে গেলো। আফজাল শেখও চলে গেলেন।
__________
তনয় আজ সিলেটে চলে যাবে। তাই তনয় ও নিতিয়া বাসের জন্যে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষন পরে-ই’ বাস ছেড়ে যাবে। হাতে এখনো পাঁচ মিনিট সময় আছে। তনয় নিতিয়ার কাছে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো,
—“তুই বাসে উঠে পড়। আমি আসছি৷ ”
নিতিয়া মাথা নাড়িয়ে তনয়ের থেকে বোতলটা নিয়ে বাসে উঠে যায় । তনয় একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনে নিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে, স্মোক করতে থাকে । পিছন থেকে কেউ নিচু গলায় বললো,
—“তনয় ভাই’।
পরিচিত গলা শুনতে পেয়ে তনয় তাঁকিয়ে দেখে ছুটকি দাঁড়িয়ে আছে। এমা ছুটকির চোখে জল কেন?
___________
আফজাল শেখ চলে যেতে-ই’ আইনজীবি সাহেব ও বেড়িয়ে যান। আইনজীবি বাইরে এসে সরাসরি রুদ্রিকের নাম্বারে ফোন করে।
রুদ্রিক গাড়ি চালাচ্ছিলো আইনজীবি ফারুক সাহেবের নাম্বার দেখে রুদ্রিক গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়ে, ফোনটা রিসিভ করে।
—-“জ্বী ফারুক সাহেব ওইদিকের কতদূর অবস্হা? ”
—“মিঃ রুদ্রিক আপনার প্ল্যান অনুযায়ী ২৪ঘন্টা হাতে সময় নিয়ে নিয়েছি। মাহির আহমেদ এখন ২৪ ঘন্টার আগে পাউয়ার নিতে পারবে নাহ। ”
রুদ্রিক গাড়ি চালাতে চালাতে নিজের বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিয়ে বললো,
—“গুড ভেইরি গুড। থ্যাংকস আ লট মিঃ ফারুক। আমি এখন রাখছি। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক ফোন কেটে দেয়।
—-“মিঃ মাহির আহমেদ গেমের রুলস এইবার আপনাকে রাফসিন শেখ রুদ্রিক শেখাবে। ”
কথাটি বলে রুদ্রিক নিজের সানগ্লাসটা পড়ে নেয়। গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে। এখন তার গন্তব্য যশোর।
মাহির ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে বেড়োচ্ছে। তার বেড়োনোর মাঝে-ই’ ইশানি এসে বললো,
—“কোথায় যাচ্ছো তুমি? ”
—-” আমার মনে হচ্ছে রুদ্রিক কোনো গেম খেলছে। আমাকে এখুনি ‘বেলিকুঞ্জে’ যেতে হবে। ওইখানে কুঞ্জ নিশ্চই কোনো প্রমান রেখে গেছে। উফ আমার মাথায় আগে কেনো ‘বেলিকুঞ্জের ‘ নাম মাথায় এলো নাহ। আচ্ছা যা-ই’ হোক তুমি থাকো। আমি এখুনি যাচ্ছি। ”
কথাটা বলে মাহির তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেলো।
মাহির বেড়িয়ে যেতে-ই’ ইশানির মন কচকচ করতে লাগলো। সে বুঝে গেছে মাহির কাজ ঠিক করছে নাহ। এখন মাহিরের যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে?
অন্যদিকে,
আমি ‘বেলিকুঞ্জে’ গিয়ে দেখি, সবকিছু এলোমেলোভাবে রয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে টেবিলে থাকা কিছু ফাইলস চেক করলাম। এগুলো তো কুঞ্জ পিপির লিখা চিঠি ও সব ডাইরি। তারমানে এখানে এমনকিছু রয়েছে, যা মাহির আহমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে। বুঝতে পারলাম এগুলো এখানে থাকা বিপদজনক। আমি ফাইলগুলো হাতে নিলাম। তখনি বাইরে থেকে গাড়ির হর্ণ শুনা গেলো। এখন আবার এখানে কে এলো? আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে দেখলাম, মাহির আহমেদ গাড়ি থেকে বের হচ্ছে।
এখন কী হবে?
বাকীটা আগামী পর্বে..
চলবে কী?
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু ❤️)