“এ কেমন ভালোবাসা পর্ব -০১

স্বামীর ক্ষ*ত বি*ক্ষ*ত নিথর দেহর দিকে অস্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে দীপ্তি মৃদু হেসে বলে
– কেমন লাগছে অভি? জানতেই পারলে না কেনো? কীভাবে? মা*রা যাচ্ছো। এরকমটা কেনো করলে অভি? না হলে তো আমিও এতোটা নি*র্দ*য় হতাম না।
দীপ্তির ও সময় ঘনিয়ে আসছে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার। অনেক কষ্টে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও ভাবতে থাকে কতোই না সুন্দর আর হাসি খুশি পরিবার ছিলো ওর। কিন্তু এক বদ দমকা হাওয়ায় সব এলোমেলো হয়ে গেলো।

আমি মারশিয়া জাহান দীপ্তি। যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমি ইন্টারে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। যতেষ্ট সুন্দরী ছিলাম যেমন প্রেমের প্রস্তাব আসতো তেমন অনেক ভালো ঘর থেকে সমন্ধও আসতো। কিন্তু পরিবারের পছন্দে বিয়ে করবো তাই কখনো প্রেমে জড়ায়নি নিজেকে। ইসমাঈল একটা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। খুবেই সহজ সরল মানুষ। বাবা এক কথায় আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমিও রাজি ছিলাম। যেহেতু পাশাপাশি গ্রাম তাই ওকে ভালো করেই চিনতাম। বলতে গেলে ওকে অনেক পছন্দও করতাম। বিয়ের প্রস্তাব আসায় এক কথায় রাজি হয়ে গেছি।

সুখেই যাচ্ছিলো দিন গুলো। একদিন সব সুখের সীমা অতিক্রম করে আমাদের জীবনে ফুটফুটে একটা রাজকন্যার আগমন ঘটে । ইসমাঈল আর আমি অনেক অনেক খুশি ছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও সুখের কমতি ছিলো না। সুখে দুঃখে বিয়ের প্রায় ৫ বছর কেটে যায়। কিন্তু এ সুখ কারোর হইতো সহ্য হয়নি।

একদিন ইসমাঈল মেয়েকে নিয়ে বাজার গিয়েছে। কতো হাসি খুশিই না বাড়ি থেকে বের হয় বাবা মেয়ে দু’জনে । দুষ্টামি করে ইসমাঈলকে জড়িয়ে ধরে বলি
– দু’জনে আমাকে একা করে কেনো চলে যাচ্ছো?
ইসমাঈলও হেসে আমার নাকে নাক ঘষে বলে,
– তোমাকে একা করে দেখতে চাই তুমি কীভাবে থাকো আমাদের ছাড়া।
কিন্তু এ দুষ্টামি যে ফলে যাবে সেটা কে জানতো।

এক উন্মাদ ট্রাক ডাইভারের নির্মমতায় বাবা মেয়ে লা*শ হয়ে ফিরে আসে আমার কাছে । আমার চারদিকে যেনো অন্ধকার নেমে আসে। কোনো মতেই মানতে পারছিলাম না আদরের মেয়ে আর ভালোবাসার মানুষকে এভাবে হারিয়ে ফেলবো। দুই দিন আগেও তিনজনে কতো জায়গায় ঘুরাঘুরি করে আসলাম। সব কিছু এক নিমিষে শেষ হয়ে গেলো।
কয়েক মাস পাগল পাগল ছিলাম। এরপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি৷ তবে ওরা দু’জন প্রতিনিয়ত আমার স্বপ্নে সয়নে থাকতো।

এভাবে ১ বছর থেকে বেশি সময় কেটে যায়। এভাবে একা জীবন কি করে কাটাবো তাই আমার পরিবার, শ্বশুর বাড়ির সবাই চিন্তায় ছিলো। একদিন আমার এক ফুফু তাদের পাশের গ্রামের এক ছেলের জন্য আমাকে বিয়ে প্রস্তাব দেয়। বিয়ের আগে ফুফুদের বাড়িতে দু,একাবার গিয়েছিলাম ।
আমি কোন মতেই রাজি হচ্ছিলাম না। একতো ছেলে আমার সমবয়সী তার উপর আমাদের থেকেও স্বচ্ছল ওদের পরিবার। তার থেকেও বড়ো কথা ইসমাঈলকে ভুলে অন্য কাউকে ভালোবাসা আমার ধারা সম্ভব না।

ছেলে অবিবাহিত ভালো চাকরি করে দেখতে শুনতে অনেক হ্যান্ডসাম। নিজেই বিয়েতে রাজি কেউ জোর করেনি। এসব ভেবে দুই পরিবারের সবাই উঠে পড়ে লাগলো বিয়েটা দিতে। অনেক তর্ক বির্তকের পর রাজি হয়। বিয়ের দিনও ভাবিনি অভিকে আমি আস্তে আস্তে এতো ভালোবেসে ফেলবো। ওকে ভালোবাসতেই হবে ও সেরকম ছেলে। মাঝে মাঝে দেখতাম ঘরের অন্যদের সাথে রেগে যেতো তবে আমার সাথে কখনো রাগ করতো না। কখনো আমাকে বুঝতে দেয়নি আমি আগেও একটা সংসার করছি। এভাবে বিয়ের ২ বছর পার হয়ে যায়।

একদিন আমার শ্বাশুড়ি মা আমাকে কি একটা কথায় আবারও খোঁচা মেরে বলে। আমি উনার ছেলেকে তা*বি*জ করছি না হলে উনার ছেলে কি করে আমার মতো বিধবা মেয়েকে বিয়ে করে। উনি প্রায় কথাটা বলে আমার অনেক খারাপ লাগে। সেদিন আর চুপ থাকতে পারিনি উনাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিই। সে মুহূর্তে অভিও বাড়িতে আসে ওর মা কান্না করতে করতে বলে।
আমি না-কি উনার সাথে বাজে ব্যবহার করছি। অভির কয়েক দিন থেকে চাকরির সমস্যা দেখা দিচ্ছে তাই ও চিন্তায় ছিলো তার মধ্যে মায়ের কথায় আগুনে ঘি পড়ে।

আমি কিছু বলতে নিবো তখনি ও আমাকে থা*প্প*ড় মে*রে বসে। আমি ভাবতেও পারিনি অভি আমাকে এভাবে থা*প্প*ড় মা*র*বে আমি ওর এরকম রণমুর্তি দেখে চুপ করে যাই।
আমার আম্মা সব সময় একটা কথা বলতেন। একজন গরম হলে তখন অপর জনকে নরম হতে হয়। এতে ক্ষতি হয় না বরং ভালোই হয়। পরে না হয় সে ব্যাপারে কথা বলা যাবে। তাই পরে ওকে বুঝিয়ে বলবো ভেবে আমিও আর কিছু না বলে চুপ করে থাকি।

কিন্তু রাত অনেক হলেও অভি বাড়িতে আসছে না দেখে আমি চিন্তায় পড়ে যায়। এ ২ বছরে ওকে এতো রাত অবধি বাহিরে থাকতে দেখিনি। ফোনটাও বন্ধ। ৩,৪ বছর আগের ঘটনা মনে পড়ে যায়। ইসমাঈলও একদিন আমার কাছ থেকে চলো গিয়েছিলো। আমি সব রাগ অভিমান এক পাশে রেখে ওকে খুঁজতে বের হয়ে পড়ি।

বাড়ির পাশে এক পরিচিত সিএনজিওয়ালা ভাইকে দেখে ওর কথা জিজ্ঞেস করলে ও আমাকে ওদের বন্ধুদের আড্ডায় নিয়ে যায়। ও রাস্তার পাশে দাঁড়ালে আমি নদীর ধারে এগিয়ে যাই দেখি অভি সহ ওর বন্ধুরা সবাই মিলে বসে আছে।
একটু কাছে গিয়ে ওকে ডাকবো সে মুহূর্তে অভির মুখে আমার নাম শুনে থমকে দাঁড়ায়।

আর যে কথা গুলো শুনি তা শুনার জন্য আমি কোন ভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। এ কেমন ভালোবাসা? এ কেমন কাছে পাওয়া?। না-কি নিজের ইগো ধরে রাখার জঘন্য প্রচেষ্টা? এ অপরাধের কোন ক্ষমা হয় না। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিই যদিও হাত পা কাঁপতেছে। কিন্তু এখন কিছু করলে হিতে বিপরীত হবে। তাই পিছিয়ে পড়ি আর দূর থেকে অভিকে ডাক দিই অভি আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। আমি অতি কষ্টে মুখে হাসি এনে বলি
– বাসায় চলো আমার চিন্তা হচ্ছিলো তাই জামাল ভাইকে নিয়ে তোমায় খুঁজতে বের হইছি।
অভি অনেকক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করছে আমি কেনো একা বের হলাম। ও তো সময় করে চলে যেতো। এরকম পাগলামি যেনো আর না করি। আরও অনেক আদুরে শাসন করে পুরো পথে। আমি পুরোটা সময় নিশ্চুপ ছিলাম।

স্বামীর প্রতি বউয়ের এতো ভালোবাসা দেখে অভি সে থেকে গদগদ। রাতে আদরের সময়ও সে কথা অনেক বার বলছে। ও হইতো ভাবছে ওর নোংরা ভালোবাসা এভাবে জিতে যাবে ও ভাবেনি। তখনো আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে ওর অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছি। অত্যাচার হ্যাঁ এটা অত্যাচারই এটাকে কাল অবধি ভালোবাসা হিসেবে নিলেও আজকে অত্যাচার ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছি না। রোবটের মতো সারা রাত ওর অত্যাচার সহ্য করে কীভাবে কী করবো ভাবতে থাকি,,,,,

চলবে,,,

ছোটগল্প আগামী পর্বে সমাপ্তি

,,পর্ব-১
#এ_কেমন_ভালোবাসা?
,,জিনাত আফরোজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here