#শেষ_কান্না
#পর্ব_১১
#লেখা_Bobita_Ray
রায়হান বিড়বিড় করে বলল,
-“গলাটা খুব শুকিয়ে গেছে একটু পানি খেতে পারলে ভালো হতো!
জাহিদ সাহেব রাগে হিসহিসিয়ে বলল,
-“শালা ধর্ষক খাওয়াচ্ছি তোকে পানি।বলেই কাঠ দিয়ে টেবিলের সাথে রায়হানের মাথা জোরে চেপে ধরল।তারপর রায়হানের ঘাড়ে,পিঠে,পেটে,মুখে,বুকে,মাথায়
এলোপাথাড়ি মারতে লাগল একের পর এক।আচমকা আক্রমনে টু শব্দটি করার সময় বা শক্তি কোনটায় পেল না রায়হান।জাহিদ সাহেব ফুটন্ত টকবগে গরম পানি এনে বলল,
-”পানি খাবি? হাঁ কর?
রায়হান ভয়ে কেঁদে দিল।মিনমিন করে বলল,
-“আমাকে মারবেন না প্লিজ। একটা সুযোগ দিন আমি কথা দিচ্ছি। আমি ভালো হয়ে যাব।
জাহিদ সাহেব রায়হানের চুল শক্ত হাতে মুঠো করে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
-“তোদের মত ধর্ষকদের কোন সুযোগ দিতে নেই রে!তোরা যে সুযোগে সৎব্যবহার করবি না তার গ্যারান্টি কী? বলেই রায়হানের শার্ট,প্যান্ট একে একে খুলে ছুঁড়ে ফেলল। তারপর পুরো উলঙ্গ করে গরম পানি শরীরে ঢাকতেই রায়হান ভয়ে,ব্যথায়,লজ্জায়, চিৎকার দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।রায়হানের আর্তনাদে গভীর জঙ্গলের রঙ বেরঙের গাছের পাতা গুলোও ঝনঝন করে ওঠল।তবুও জাহিদ সাহেবের মন নরম হলো না।সে এক নাগারে রায়হানের শরীরে গরম পানি ঢালায় ব্যস্ত।কয়েক মিনিটেই রায়হানের সারা গায়ে বড় বড়ড় ফুসকা পড়ে গেল।রায়হানের মনে হচ্ছে ওর শরীরে কেউ গপগপ করে আগুনের বলকা ঢেলে দিচ্ছে ।অতিরিক্ত ব্যথায় কাঁদতে ভুলে গেছে।পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।ছটফট করতে করতে একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলল রায়হান।জাহিদ সাহেব বেতের কাঁটা দিয়ে একটা একটা করে ফুসকা গালতে লাগল।গরম পানি ঢালার কারণে রায়হানের পুরো শরীর আঁধা সেদ্ধ হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।সুন্দর মায়াবী চেহারা পাল্টে গিয়ে এক ভয়ংকর দানবের মত দেখতে লাগছে।জাহিদ সাহেব দু’হাতে রায়হানের গলা টিপে ধরল।রায়হানের হুঁশ ফিরতেই বাঁচার জন্য প্রাণপনে কৈ মাছের মত ছাটাছাটি পারল কিন্তু কোন লাভ হলো না।একসময় রায়হান নীরব হয়ে গেল।দাঁতের ফাঁক দিয়ে জিব্বার এক অংশ বেড়িয়ে এল।
গরম দেহ ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে গেল।জাহিদ সাহেব ছেড়ে দিতেই রায়হানের মাথাটা এক সাইডে ঝুঁকে পরল।প্রাণহীন নিথর দেহ পরে রইল! অতিরিক্ত রাগের বশে এত জোরে চোপে ধরেছিল যে রায়হানের প্রাণপাখিটা কখন উড়ে গেছে বুঝতেই পারেনি জাহিদ।জাহিদ সাহেব রায়হানের মৃত দেহের দিকে এক পলক আপাতমস্তক তাকাল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপন মনেই বিড়বিড় করে বলল,
-“আমি জানতাম থানায় নিয়ে গেলে তোর মত ধর্ষকের কোন শাস্তিই হতো না।খুব হলেও কয়েক বছরের জেল।তোদের মত কীট বেঁচে থাকলে ভবিষ্যতে যে আর কোন নিরিহ মেয়ে ধর্ষণ হবে না তার কী গ্যারান্টি।তাই তোকে বাঁচিয়ে রেখে কোন রিস্ক নিতে চাইনি।অন্তত একটা ধর্ষক তো পৃথিবির বুক থেকে কমল এতেই খুশি আমি।
তবে আমি কাউকে বলব না তুই রথীকে খুন করেছিস। আমি চাই না তোর অপকর্মের ফল তোর স্ত্রী সন্তান ভোগ করুক।গোটা পৃথিবি জানবে তুই হারিয়ে গিয়েছিস। শুধুমাত্র মাথার উপরে আকাশ,পায়ের নিচে জমিন,চারপাশে গাছপালা,জলন্ত আগুন,আর আমার মাঝেই তোর মৃত্যু ও মৃত্যুর আসল কাহিনী সীমাবদ্ধ থাকবে আজীবন।
***
রাত পেড়িয়ে ভোর হয়ে গেছে।অন্ধকার সরে গিয়ে একটু একটু করে দিনের আলো ফুটছে।শিউলি ফুলের গন্ধে চারপাশ ম ম করছে।অরু ঘুম থেকে ওঠে কাজুকে কোলে তুলে নিল।কাল সারারাত রায়হানের চিন্তায় এক ফোঁটা ঘুম হয়নি অরুর। শেষ রাতের দিকে চোখ লেগে এসেছিল।মাথাটাও ব্যাথা করছে।এদিকে রায়হানের চিন্তায় অস্থির লাগছে।মানুষটা সেই যে কাল রাতে গেল একটা ফোনও করল না। অজানা ভয়ে অরুর মনের ভিতর কু ডাকছে।অরু আর হাত-পা গুটিয়ে বিছানায় বসে থাকতে পারল না।তাড়াহুড়ো করে ওঠে গেল।
নতুন বৌ নিয়ে ঘুমিয়ে আছে রাকিব।এত সকালে কি রাকিবকে ডাকা ঠিক হবে?কিন্তু মনের ভিরতের ছটফটানি ক্রমশ বাড়ছে।রায়হান কোথায় আছে, কী করছে, কিছু হলো না তো! জানতে না পারলে একটুও শান্তি লাগবে না।রাকিব যদি একটু খোঁজ এনে দিতে পারে সে আশায় রাকিবের ঘরের সামনে পায়চারী করছে অরু।
ফুলমতি ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে অরুকে রাকিবের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কড়া কণ্ঠে বলল,
-“ঐ ছেমড়ি ওইহানে কি করস?তুর লজ্জা করে না দেওরের ঘরের সামনে দাঁড়াইয়া উঁকিঝুঁকি মারতে?
অরু ধীর পায়ে এগিয়ে এসে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল,
-“মা আপনার বড় ছেলে এখনো বাড়ি ফিরেনি।সেই যে কাল রাতে তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেল মানুষটা।
-“তয় ফুন দে?
-“ফোন দিয়েছি মা কিন্তু ওর ফোনটা বন্ধ। আমার খুব ভয় করছে মা।
ফুলমতি ঝাঁমটা মেরে বলল,
-“এত ভাব করুণ লাগবো না। আগলা পিরিত দেহায়! যা ঘরের কাম কর।পোলা আমার ছোডু না। সময় হইলে আইবোনে হুহ।ফুলমতি কথাগুলো বললেও মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।
অরু সকাল থেকেই কাজ করছে। কিন্তু কোন কাজেই মন বসছে না। বার বার উঠানের দিকে তাকাচ্ছে।সারাটাদিন এক প্রকার ছটফট করেই কাটল অরুর। মনের ভিতর অজানা ভয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।অশান্ত মন বলছে, রায়হানের অনেক বড় বিপদ হয়েছে! অস্থিরতা দমিয়ে রাখতে না পেরে সন্ধার দিকে রাকিবকে বলল,
-“রাকিব ভাই আপনার কাছে কি জাহিদ সাহেবের ফোন নাম্বার আছে?
রাকিব এক ঢোক পানি খেয়ে বলল,
-“হ্যাঁ আছে তো?
-“একটু ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন রায়হান কোথায়!
রাকিব অবাক হয়ে বলল,
-“কেন ভাইয়া বাসায় ফিরেনি?
অরু এবার বুকের মাঝে জমানো কষ্টগুলো চেপে রাখতে পারল না। ঝরঝর করে কেঁদে দিল।কাঁপড়ের আঁচল গালে চেপে ধরে বলল,
-“আমার খুব ভয় করছে রাকিব ভাই।কাল রাত থেকে ওর ফোন বন্ধ।ও কোথায় আছে,কেমন আছে?কিছুই জানি না!
রাকিব ভরসা দিয়ে বলল,
-”এত অস্থির হবেন না ভাবি। আমি জাহিদ সাহেবকে ফোন দিচ্ছি!
রাকিব বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে জাহিদের নাম্বারে ফোন দিল।দু’বার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে জাহিদ সাহেব রিসিভ করে বলল,
-“হ্যালো রাকিব?
-“জ্বী স্যার রাকিব বলছি! ভাই কোথায়?
জাহিদ সাহেব অবাক হওয়ার ভাণ করে বলল,
-“সে কি এখনো বাড়ি ফিরেনি?আজ ভোরেই না রওনা দিল। এতক্ষণ তো বাড়ি পৌঁছানোর কথা।
রাকিবের কপালে ভাঁজ পরল!চোখে মুখে চিন্তার আভা ফুটে উঠল।ফোনটা কানের সাথে চেপে ধরে বলল,
-“ভাবি খুব টেনশনে আছে স্যার।এদিকে ভাইয়ার ফোন বন্ধ।বুঝতে পারছি না এখন কি করব।কথা বলার সময় রাকিবের গলাটা ধরে এল।জাহিদ সাহেব বলল,
-“দেখ রাকিব।রায়হান কোথায় গেছে আমি জানি না।কাল আমার সাথে থানায় এসেছে তোমার বোনের কেস নিয়ে খানিকক্ষণ কথা বলেছি।বেশি রাত হয়ে যাওয়ার কারণে রাতটা এখানেই পার করে গেছে।ভোরের দিকে আমাকে বলে চলে গেছে।তোমার যদি আমার কথা বিশ্বাস না হয় খোঁজ নিয়ে দেখতে পার?
রাকিব থমথমে গলায় বলল,
-” না,না বিশ্বাস হবে না কেন?অবশ্যই বিশ্বাস করি।আচ্ছা এখন রাখি।
-“হুম!
অরু ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল,
-”জাহিদ সাহেব কি বলল রাকিব ভাই?
রাকিব ইতঃস্তত করে সংক্ষেপে জাহিদ সাহেবের বলা কথাগুলো অরুকে জানালো।অরু কথাগুলো শুনে শব্দ করে কেঁদে দিল।ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলল,
-“ওর কোন বিপদ হলো না তো রাকিব ভাই?
-“জানি না ভাবি।আল্লাহ্ ভরসা!
***
তিন মাস যাবৎ রায়হান নিখোঁজ।রাকিব এদিক-সেদিন খুঁজেছে। কিন্তু কোথাও খোঁজ মেলেনি রায়হানের।
অরু আজও রায়হানের জন্য অপেক্ষা করে। মনে প্রাণে বিশ্বাস করে একদিন হঠাৎ করেই যেমন রায়হান হারিয়ে গেছে। কোন একদিন হয়ত হঠাৎ করেই ফিরে আসবে।সে আশায় দিন গুনে অরু।অরু যে রায়হানকে কতটা ভালোবাসে, কতটা গভীর ভাবে অনুভব করে,তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে অরু।এদিকে এই বাড়িতে টিকায় দায় হয়ে গেছে অরুর।ফুলমতি সারাক্ষণ মরা কান্না কাঁদে আর অরুকে দোষারুপ করে।উঠতে,বসতে অরুকে অভিশাপ দেয়।রাকিবের দু’দিনের বৌ রিয়াও সারাক্ষণ আলাদা খাওয়ার জন্য রাকিবের কান মজায়। তার পক্ষে শাশুড়িকে নিয়ে খেলেও বড় জা আর তার মেয়েকে নিয়ে খাওয়া সম্ভব না।অরু সারাদিন গাধা খাটনি খেটেও শাশুড়ি,জা’য়ের মন পায় না।দু’জন মিলে এক জোট হয়ে কোমড়ে আঁচল গুঁজে অরুকে কটু কথা শোনায়।সারাদিন ভালো মন্দ রান্না করলেও অরুর ভাগে জোটে মাছের লেজা,কিংবা মাংসের পা,চামড়া অথবা ডাল।ফুলমতি তো অরুর খাওয়ার সময় প্রায়ই বলে,
-“খা জন্মের খাওয়া খা।আমার সোনার টুকরা পোলাডারে খাইছা তাতেও তোর পেট ভরে নাই।মাগির ঝি এহন আমার মাছের লেজা নিয়ে বইছে।এই ছেড়ি আহনের পর থেইক্কা আমার সংসারডারে ভাঁজা ভাঁজা কইরা ফালাইছে।প্রথমে আমার ম্যাইয়াডারে খাইছে তারপর আমার পোলাডারে খাইছে।এত হুগায় কুড়কুড়ি মনের ভিতরে কুনু সময় ভয় নিয়া চলে না।তুর জাইরা সন্তান জন্মাইছা না। তুর সন্তানের মাথা দিয়া ঝোঁল রাঁন্ধা খা।কথাগুলো বলেই মুখ ঝাঁমটা দিল ফুলমতি।অরুর চোখের কোণা বেয়ে দু’ফোঁটা নোনা জল ভাতের উপর গড়িয়ে পরল।এক লোকমা ভাত কেবলই মুখে নিয়েছিল। শাশুদির তিক্ত কথা শুনে ভাত আর গলা দিয়ে নামল না।পানি দিয়ে গিলে খেল।এখন যদি ভাতের উপর পানি ঢেলে ওঠে যায় তাহলে আরও কঠিন কথা শোনাবে ফুলমতি এবং সারাদিনের খাওয়াও বন্ধ করে দিবে। তা খুব ভালো করেই জানে অরু।প্রথম প্রথম একদিন ফুলমতির কড়া কথা শুনে রাগে ভাতে পানি ঢেলে দিয়েছিল অরু। সেদিন ফুলমতি অরুর চুলের মুঠি ধরে যা তা বলেছে,মেরেছেও খুব সারাদিনে খাবারও দেয়নি।কাজুটাও বড় হচ্ছে। বুকের দুধের পাশাপাশি তোলা লাগে।এদিকে রাকিবকে কোন বাড়তি টাকা খরচ করতে দেয় না রিয়া।বাধ্য হয়ে অরু কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাঁথা সেলাই করে বিক্রি করে মেয়ের দুধের টাকা জমায়।এভাবে কতদিন চলবে তা জানে না অরু।একদিন সন্ধ্যার একটু আগে কাজু দুয়ারে বসে হামাগুড়ি দিয়ে খেলছে।অরু রাতের খাবার রেডি করে পাশের বাড়ি কিছু টাকা পাবে তা আনতে গেল। কাজুকে বার কয়েক ডাকল। কাজু সারা দিল না।সে একমনে মাটি খাঁমচে খাচ্ছে।অরু সরল মনে শাশুড়িকে গিয়ে বলল,
-“মা! আমি পাশের বাড়ি যাচ্ছি।কাজুর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।ফুলমতি কোন কথা বলল না।মুখ ভার করে রইল। অরু দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে পা বাড়াল।
অরু দ্রুত পায়ে পাশের বাড়ি গেলেও আসার সময় বাঁধল আরেক বিপত্তি।তাহেরের মা অরুর হাত ধরে বলল,
-”বৌ’মা একটুখানিক পাশে বস তুমার লগে কতা কই এট্টু?
অরু জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বলল,
-“পরে এসে কথা বলব চাচী! মেয়েটা দুয়ারে খেলা করছে।আকাশ মেঘলা যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে!
-“কিচ্ছু হইবো না।তুমার শাশুড়ি দেখবোনে!তা বিয়া সাধীর কথা কিছু ভাবলা। ভরা যৌবন! একলা একলা কত্তদিন থাকবা।
অরু অপ্রস্তুত হয়ে গেল।আমতা আমতা করে বলল,
-“ইয়ে চাচী কাজুকে একা রেখে…
বলতে বলতেই ঝরঝর করে বৃষ্টি নামল।অরুর বুকটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠল। তাড়াহুরো করে আসতে চাইলে তাহেরের মা অরুর হাত চেপে ধরে বলল,
-“বৌ’মা বৃষ্টি আইতাছে তো।বৃষ্টি থামুক পরে যাও!
অরু আর কথা বাড়াল না।পরে আসব বলে বাড়ির পথে দ্রুত হাঁটা ধরল।বাড়ির সামনে গিয়ে দুয়ারে চোখ পড়তেই অরুর বুকের রক্ত ছলকে উঠল!হতভম্ব হয়ে এক জায়গা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। মনে হয় অদৃশ্য কিছু অরুর পা দু’টো টেনে ধরেছে।কাজু বৃষ্টিতে ভিঁজে কাঁদায় গড়াগড়ি খাচ্ছে আর ভয়ে ছোট ছোট হাত দিয়ে মাটি থাবড়ে চিৎকার করে কাঁদছে।সম্মতি ফিরে পেতেই অরু দৌঁড়ে গেল।বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরল।কাজুর সারাশরীর ঠাণ্ডা বরফ হয়ে আছে।অরু ভয়ে কেঁদে দিল।বলল,
-“কিছু হয়নি সোনা!এই তো মা এসে গেছে। বাবুটা বৃষ্টিতে কাক ভেঁজা হয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে।অরু তাড়াহুড়ো করে কাজুকে ঘরে নিয়ে গেল।কাজুর শরীর মুছিয়ে দিয়ে অরুও ভিজা কাপড় পাল্টে নিল।তারপর বাবুটাকে ভালো করে কাঁথায় মুড়ে বুকের সাথে চেপে ধরে শরীরের ওম দিল।বাচ্চাটা ভয়ে,শীতে এখনো থরথর করে কাঁপছে।অরু মনে মনে ভাবছে,
-“এরা কি আঁধোও মানুষকের কাতারে পরে?দুধের শিশুকেও হিংসা করে।কোলে না নিল অন্তত দুয়ার থেকে তো ওঠাতে পারত।কথাগুলো আপনমনে বিড়বিড় করে বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অরু!
সে রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর এল কাজুর!মেয়েটা ঘুমের ঘোরে কেঁদে কেঁদে ওঠছে।অরুর নিজেকে বেশামাল লাগছে।এদিকে রাত বাজে ৯ টা।বাহিরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে!রাকিব একটু আগে বৌ নিয়ে ঘর দরজা দিয়েছে!হয়ত এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে!শাশুড়ি মা’তে ডাকলে কি আসবে?নানান চিন্তায় অরু মাথায় তালগোল পাকিয়ে গেল।কাঁপা কাঁপা হাতে কাজুর মাথায় বার কয়েক জলপট্টি দিল।পাতলা কাপড়ে একটু দুধ গেলে ভিঁজিয়ে নিল। তারপর ফুঁ দিয়ে ঠাণ্ডা করে কাজুর মাথার মাঝ বরাবর দিল।সারাটা রাত অরু জেগে রইল।মেয়েটার জ্বর এই কমছে!এই বাড়ছে!
চলবে