শেষ কান্না পর্ব ১০

#শেষ_কান্না
#পর্ব_১০
#লেখা_Bobita_Ray

বিয়ে বাড়িতে এসে অরু কাজুকে নিয়ে এক কোণায় বসে আছে।বাচ্চাটা এত মানুষের ভীরে ভয় পেয়ে থেকে থেকে কেঁদে ওঠছে।অরুর খুব অস্বস্তি লাগছে।মনে হচ্ছে,না এলেই ভালো হতো।সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।অরুর দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না।
অনেকক্ষণ যাবৎ একটা মেয়ে দূর থেকে ফলো করছে অরুকে।অরুর সেদিকে ভ্রুঁক্ষেপ নেই।সে কাজুকে এটা-সেটা দেখিয়ে কান্না থামাতে ব্যস্ত।মেয়েটি কৌতুহল বশত এগিয়ে এসে পেছন থেকে অরুর কাঁধে হাত রেখে বলল,
-“তুমি অরু না?
অরু চমকে ওঠল।সামনে ঘুরে জয়াকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।অস্ফুট স্বরে বলল,
-“জ-য়া…
জয়া এক গাল হেসে বলল,
-“ঠিক ধরেছি। তা কেমন আছ অরু?
অরু হাসি হাসি মুখ করে বলল,
-“ভালো!তোমার খবর কী?
জয়া অরুকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে অবাক হয়ে বলল,
-“তোমার এই অবস্থা কেন অরু?আয়নায় নিজেকে দেখেছ একদম কঙ্কাল হয়ে গেছ।তোমার মনে আছে অরু, ক্লাস টেন এ থাকতে তুমি কত্ত স্মার্ট ছিলে।ক্লাসের ফাস্ট গার্ল ছিলে। তোমার মায়াবী চাউনীতে যে কত ছেলের রাতের ঘুম হারাম হয়েছে তা তুমিও জানো না।সবচে বড় কথা ঢাকা ছেড়ে এখানে কি করছ?আর পড়নে এসব কি? এত কম দামি শাড়ি পরেছ কেন?আংকেল আন্টি কোথায়? ওনারা আসেনি?
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে বড় করে একটা দম ছাড়ল জয়া।জয়ার কথাগুলো শুনে অরুর দু’চোখ ভিজে গেল।এই জয়া নামের মেয়েটা ছিল একদম গোবেট,মাথা মোটা ছাত্রী। পড়া না পাড়লে প্রায় দিনই স্যারের হাতে মাইর খেত।মাইর খাওয়ার ভয়ে প্রতিদিন পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বসত।অরুরা জয়াকে নিয়ে কত্ত মজা করত,কত্ত হাসাহাসি করত।আজ সেই মেয়েটা রাণীর হালে আছে আর অরু চাকরাণীর হালে কথাগুলো আপনমনে ভাবতেই গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অরু।ইতঃস্তত করে বলল,
-“আমার কথা ছাড়!তোমার খবর কি বলো?
জয়া ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি ফুটিয়ে বলল,
-“জানোই তো এস.এস.সি তে ফেল করেছিলাম।পরে আর কি! বাবা বিয়ে দিয়ে দিল।এখন চুটিয়ে সংসার করছি।
অরু বলল,
-“এই গ্রামে বিয়ে হয়েছে তোমার?
জয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
-“ধুর,না মাথা খারাপ! এখানে বিয়ে করব কেন?ঢাকায় বিয়ে হয়েছে।আমার ওনি পেশায় একজন শিক্ষক।এখানে ওনার নানুর বাড়িতে গতকাল বেড়াতে এসেছি।
-“ও!এইটা তোমার নানু শ্বশুড় বাড়ি?
জয়া মুচকি হেসে বলল,
-“না ওই যে পাশের বিল্ডিংটা দেখছ না। ওই টা ওনার নানু বাড়ি।পাশাপাশি বাড়ি তাই মেবি বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছে। নানুর সাথে নতুন বর দেখতে এলাম।আমার কথা ছাড় তোমার কথা বলো?এই বেশ কেন?
অরুর মুখটা মলিণ হয়ে গেল।লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। বলল,
-“ভাগ্যেকে বিশ্বাস করো তো জয়া?
-“ভাগ্য বলে কিছু নেই অরু।
অরু আনমনে বলল,
-“এই কথাটা আমিও এক সময় বিশ্বাস করতাম না।পরিস্থিতিতে পরে এখন মনে হয় ভাগ্যে বড়ই নিষ্ঠুর!
জয়া কৌতুহল বশত বলল,
-“খুলে বলো তো কী হয়েছে?
অরু দীর্ঘশ্বাস ফেলে, সংক্ষেপে জয়াকে অরুর সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনী এঁকে এঁকে সব খুলে বলল।সবটা শুনে রাগে জয়ার মুখ লাল হয়ে গেছে।অরুর হাত চেপে ধরে বলল,
-“মানুষ এতটা খারাপ কীভাবে হয়?তুমি এত অপমান,উপহাস,সহ্য করে কীভাবে পরে আছ দিনের পর দিন?এখনো সময় আছে অরু তোমার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাও।
-“কোন মুখে যাই বলোতো?
-“তবুও শত হলেও ওনারা তোমার বাবা মা।তোমার কষ্ট ঠিকই বুঝবে।এখানে তুমি কার আশায় পরে থাকবে?তোমার সো কল্ড হাজবেন্ড যদি ভালো হতো, সে যদি তোমাকে সাপোর্ট দিত। তাহলে একটা কথা ছিল কিন্তু….
-“আরে বাদ দাও তো।যা আছে কপালে। তুমি মন খারাপ করো না।
জয়া চোখের কোণা বেয়ে এক ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পরার আগেই অরুর আড়ালে মুছে নিয়ে হাসি মুখে বলল,
-“ভালো থেকো আসছি।
-“হুম

যে ঘরে নতুন বৌ বসে আছে সে ঘরের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল অরু।সবাই নতুন বৌ’কে কেন্দ্র করে কতশত গল্প করছে,মজা করছে,হাসাহাসি করছে,নতুন বৌ লজ্জায় মুখ টিপে হাসছে। অরুর নিজের বিয়ে নিয়েও একসময় কত স্বপ্ন ছিল,কত আশা ছিল, আর এখন…সবই অতীত।

অবশেষে রাকিব আর রিয়ার বিয়ে ভালো ভাবেই সম্পর্ণ হলো।যদিও গেইট ধরা নিয়ে মেয়ে পক্ষের সাথে ছেলে পক্ষের একদফা ঝগরা,মন কষাকষি হয়ে গেছে।ছেলেপক্ষ,যেহেতু আংটি পড়ানোর দিন সব মিটিয়ে রেখেছে। সেই হিসাব মতই গেইটে টাকা দিয়েছে। কিন্তু মেয়েপক্ষ, এটা মানতে নারাজ।তাদের দাবি তাদের চাহিদা মত টাকা দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে হবে।
তাছাড়া বাঙালী বিয়েতে ঝগরাঝাটি একটা রেকর্ড হয়ে গেছে।ঝগরাঝাটি ছাড়া আজকাল খুব কম বিয়ে সম্পর্ণ হয়।বিয়ে বাড়িতে কণেপক্ষের সাথে বরপক্ষের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগরাঝাটিও যেন অলিখিত ভাবে চুক্তি হয়ে আসছে বছরের পর বছর।
রিয়াকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় রিয়ার মা বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদল,মেয়ের মাথায় হাত রেখে এটা,সেটা বুঝাল।রিয়ার বাবা রাকিবের হাত ধরেও মেয়েকে দেখে রাখার কথা বলল।ছোট্ট মেয়েটাকে যেন তারা ভুল হলে শিখিয়ে পড়িয়ে নেয়।রাকিব মুচকি হেসে রিয়ার বাবাকে ভরসা দিল।তারপর রিয়াকে নিয়ে গাড়িয়ে ওঠে বসল।

রাত ৮টায় দিকে বাড়িতে এসে বাঁধল আরেক বিপত্তি।ইন্সপেক্টর জাহিদ সাহেব ফুলমতিদের বাড়িতে এসেছে।রায়হান জাহিদ সাহেবকে দেখে এগিয়ে এসে বলল,
-“কি ব্যপার স্যার, খুনির কোন খোঁজ পেয়েছেন কি?
জাহিদ সাহেব হাসল! বলল,
-“রায়হান সাহেব থানায় চলুন আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।এবার মনে হয় খুনিকে ধরে ফেলেছি বুঝলেন।
-“বেশ তো। আপনি একটু ওয়েট করুণ। আমি আসছি।
রাকিব এগিয়ে এসে বলল,
-“আমিও যাব।
জাহিদ সাহেব রাকিবের পিঠে মৃদু চাপড় মেরে বলল,
-“তোমাকে যেতে হবে না। নতুন বিয়ে করেছ ঘর সংসারে মন দাও।আর এই যে আমার ফোন! তোমার নাম্বারটা টুকে দাও?প্রয়োজনে কাল আমি ফোনে কথা বলে নিব।
-“আচ্ছা।

রায়হান ঘরে এসে লাল কটকটে শার্টটা খুলে রেখে একটা সাদা শার্ট গায়ে জড়াল।তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় কি মনে যেন ঘুরে দাঁড়াল।বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে একমনে বাম হাতের আঙুল চুষে খাচ্ছে কাজু।রায়হান একবার চারপাশে এক নজর চোখ বুলিয়ে হুট করে কাজুকে কোলে তুলে নিল।তারপর চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিল কাজুর সারা মুখ।কাজু ছোট ছোট হাতে রায়হানের ঠোঁটে আলতো করে ছুঁইয়ে দিচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে।রায়হানের খুব মায়া হল।মেয়ের আনন্দ দেখে খুশিতে রায়হানের চোখ ভিঁজে গেল। মিনিট পাঁচেক কোলে নিয়ে আদর করার পর আস্তে করে মেয়েটাকে বিছানায় শুইয়ে দিল।কাজুকে শুইয়ে দেওয়ার পরেই কাজু ঠোঁট বাকিয়ে কেঁদে দিল। রায়হান সেদিকে তাকাল না। নতুন করে আর কোন মায়ায় জড়াতে চায় না রায়হান।মেয়েকে পেছনে ফেলে গটগট করে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।রায়হান জানতেই পারল না এক জোড়া চোখ জানালায় গ্রীল দিয়ে তাদের বাপ মেয়ের খুনশুটিময় মধুর দৃশ্য দেখল।হ্যাঁ অরু দাঁড়িয়ে ছিল।রায়হান চলে যেতেই খুশিতে আঁচলের কোণা দিয়ে চোখের জলটুকু মুছে নিল অরু।

***
-“মানতেই হবে আপনি গভীর জলের মাছ রায়হান সাহেব?আমিই শুধু শুধু এতগুলো মাস বোকার মত অল্প জলে নেমে আপনাকে ধরার চেষ্টা করেছি।
কথাটা বলেই রায়হানের চারপাশে ঘুরতে লাগল জাহিদ সাহেব।
রায়হান ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
-”আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?
জাহিদ সাহেব হাসল।তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
-”আজ তো আপনি বলবেন আমি শুনব
?অনেকগুলো হিসাব যে এখনো বাকি আছে।
রায়হানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।অবাক হওয়ার ভাণ করে বলল,
-“আমি বলব মানে কী?
জাহিদ সাহেব মাথা চুলকে বলল,
-“তাই তো আপনি কী বলবেন?আমি কি ভাবছি রায়হান সাহেব, আপনার মেয়ে কি যেন নাম ওপপ, মনে পড়েছে কাজু রাইট?ওকে লোক লাগিয়ে কিডনাফ করালে কেমন হবে?
রায়হান রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করল।চিৎকার করে বলল,
-”বাষ্টার্ডের বাচ্চা তোর সাহস হয় কি করে আমার মেয়ের দিকে নজর দেওয়ার?
জাহিদ সাহেব মৃদু হাসল। তারপর রায়হানের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
-“আমি আপনাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার বদলে এই গভীর জঙ্গলে নিয়ে এসেছি কেন জানেন?সত্যিটা শিকার না করলে এখানেই মেরে পুঁতে রেখে যাব। কাক পক্ষীও টের পাবে না।বলেই অট্টহাসিতে মেতে উঠল জাহিদ সাহেব।রায়হান এক নজর চারপাশে ভীতু চোখে তাকাল।কেমন গা ছমছম করছে।চারপাশে এত অন্ধকার বোঝার জোঁ নেই এইটা কোন জায়গা।জাহিদ সাহেব বলল,
-“রথীকে আপনি কেন খুন করেছেন বলুন?
-“আমি রথীতে খুন করিনি।কতবার বলব এক কথা।
-“তাহলে এটা কি?জাহিদ সাহেবের হাতে ঘড়ি দেখে চমকে উঠল রায়হান। অস্ফুট স্বরে বলল,
-“এটা আপনি কোথায় পেয়েছেন?এটা তো আমার ঘড়ি।
-“এটা আমি জামসা গ্রামের পুকুরের পাড়ে পেয়েছি।তারমানে আপনি ঐ গ্রামে গিয়েছিলেন।এবার সত্যি সত্যি বলুন আপনি কেন খুনটা করেছেন?
রায়হান চিৎকার করে বলল,
-“বললাম তো আমি খুনটা করিনি।কেন এক কথা বার বার বলছেন?
জাহিদ কপোট রাগে রায়হানের নাক বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দিল। দু’হাতে রায়হানের কাঁধ চেপে ধরে কাঠের টেবিলে মাথা ঠুকতে ঠুকতে বলল,
-“বল কেন খুন করেছিস?এতক্ষণ অনেক ভালো ব্যবহার করেছি।কি ভেবেছিস তুই একটা নিষ্পাপ ফুটফুটে মেয়েকে কৌশলে ধর্ষণ করে মেরে ফেলবি আর কেউ জানতেও পারবে না!
রায়হানের নাক,মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে।জাহিদ সাহেব ছেড়ে দিতেই কাঁশতে লাগল রায়হান।জাহিদ এক জগ পানি রায়হানের মাথায় ঢালল।রায়হানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।মাথাটাও ঝিমঝিম করছে।কিন্তু হাত-পা শক্ত করে বেঁধে রাখার কারণে দু’হাতে মাথা চেপে ধরতে পারছে না।মনে হচ্ছে এখনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।জাহিদ সাহেব রায়হানের মুখোমুখি বসে ধীর গলায় বলল,
-“আমি খুব ভাল করেই জানি তুই এত সহজে মুখ খুলবি না।তোর মুখ খোলার ব্যবস্থা করে এসেছি।তোর বৌ আর বাচ্চা দক্ষিন দিকের বাম পাশের ঘরে থাকে তাই তো।কাল সকালে যদি বাচ্চাটা হারিয়ে যায়। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। কারো মনে সন্দেহও জাগবে না বাচ্চাটা কে চুরি করেছে।
রায়হান অস্ফুট স্বরে বলল,
-“না………
জাহিদ সাহেন স্মিত হেসে বলল,
-“আমি তো জানি, একমাত্র বাচ্চাটার প্রতি তোর দূর্বলতা প্রগাঢ়।

সত্যিই রায়হান বাবুটাকে খুব বেশি ভালোবাসে।কিন্তু রায়হানের মা ফুলমতি পছন্দ করত না রায়হান বাচ্চাটাকে কোলে নিক,আদর করুক।মায়ের ভয়ে সবসময় দূরে দূরে থাকত বাচ্চাটার কাছ থেকে।তবে যখনই সুযোগ পেত খুব করে,মন ভরে বাবুটাকে আদর করে দিত।রায়হান মাথা নিচু করে ক্রোধে জ্বলে উঠল।আচমকা চিল্লিয়ে বলল,
-“হ্যাঁ, হ্যাঁ রথীকে আমি খুন করেছি।নিজের হাতে গলা টিপে মেরেছি।শুধু তাই নয় রেপডও করেছি।
-”সেই কারণটায় তো জানতে চাচ্ছি?
রায়হান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করল,
-“আমি যাদের বাবা-মা বলে চিনি তারা আমার আপন বাবা নয়।তারা শুধু রথী আর রাকিবের বাবা-মা।বলতে গেলে আমার জন্ম হয়েছিল রাজপ্রাসাদে।খুব ধনী পরিবারে জন্ম নিয়েছিলাম আমি।কিন্তু ফুলমতির হাজবেন্ড মানে আমার সো কল্ড বাবা আমাকে চুরি করে এনেছে।আমার দাদি ছিল খুব কড়া ওনি বাবাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তার স্ত্রী’র যদি প্রথম পুত্র সন্তান না হয় তাহলে ছেলেকে তালাক দেওয়াবে।এদিকে বাবা মা’কে খুব ভালোবাসত।শুধু মাত্র বাচ্চার জন্য মাকে কিছুতেই ছাড়তে চায়নি।তাই তো খুব কৌশলে নিজের সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়েকে আমার বাবা মায়ের কাছে রেখে আমাকে চুরি করে এনেছে। বাবার মুখে শুনেছি, একদিনেই জন্ম নিয়েছিলাম আমরা কিন্তু ভাগ্য দোষে আজ আমি ফকির তার মেয়ে বড়লোক।আমরা কেউ অবশ্য এসব কথা জানতাম না।বাবা যেদিন মারা গেল সেদিন আমাকে কাছে ডেকে সব সত্যি শিকার করেছে।বার বার আমার হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছে।আমার মা ফুলমতি আজও জানে না আমি তার পেটের ছেলে না।শুধুমাত্র হাসপাতালের নার্স আর বাবা ছাড়া।সেই ক্ষোপটা গোপনে মনের ভিতরে পুষে রেখেছিলাম আমি।কিন্তু কাউকে বুঝতে দেইনি।
জাহিদ বিরক্ত হয়ে বলল,
-“এসবের সাথে খুনের কি সম্পর্ক?
রায়হান হাসল।বলল,
-“এত অধৈর্য হলে চলে স্যার?
-“ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে আসল কথা বল?
রায়হান আবারও বলতে শুরু করল,
-“আমি যেহেতু জেনেই গিয়েছিলাম ওরা আমার আসল বাবা-মা কিংবা ভাই বোন না।তাই আমি নানান বাহানায় রথীকে ছুঁয়ে দিতাম।রথী প্রথম প্রথম না বুঝলেও পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছিল এবং সবসময় দূরুত্ব বজায় রেখে চলত। দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকগুলো বছর। আমি ঢাকায় পড়তে গেলাম ততদিনে অরুর সাথে আমার প্রণয় হলো, প্রেম হলো, বিয়েও হলো। ভেবেছিলাম অরুকে বিয়ে করলে আমি সুখে শান্তিতে ঘরজামাই হয়ে থাকতে পারব।কিন্তু আমার বারা ভাতে জল ঢেলে দিল অরুর সো কল্ড বাবা।জোর করে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিল গ্রামে।গ্রামে এসে রীতিমত সংসারের গেড়াকলে পরে হিমশিম খাচ্ছিলাম আমি।তবুও দাঁতে দাঁত চেপে সংসারের হাল ধরেছিলাম।আমার মাঝে আবারও শয়তান ভর করল।অরু আমাকে প্রেগন্যান্সির জন্য ভালো সার্বিস দিতে পারত না।কিন্তু অবাধ্য মন যে মানে না।তাই একদিন জোর করে রথীর সাথে….এতটুকু বলেই থেমে গেল রায়হান।বড় করে একটা দম ছাড়ল।
জাহিদ সাহেব কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বলল,
-“তারপর কি হলো?
-“তারপর আমি বার বার রথীর হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছি।কিন্তু রথী খুব ভয় পেয়েছিল।কারণ ও জানত আমি ওর আপন ভাই। আপন ভাই হয়ে কীভাবে ওর সাথে নোংরামী করলাম। ও ভেবেই পাচ্ছিল না।আমিও দিশা-বিশা না পেয়ে বলে দিয়েছি।আমি অরুকে ভেবে ভুলে তোর সাথে সেক্স করেছি।কারণ তখন অরু আর রথী একঘরে ঘুমাত। আমি খুব কৌশলে রথীর মুখটা বেঁধে আমার ঘরে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং পুরো কাজটা অন্ধকারে করেছি।সেদিন রথী খুব কেঁদেছিল।ভয়ে, ঘেন্নায়,লজ্জায় ওর হাত-পা শিরশির করে কাঁপছিল।আমি ওকে ছুঁতে গেলে আমার হাত বার বার সরিয়ে দিচ্ছিল।তারপর থেকে রথী সবসময় মন মরা হয়ে থাকত।আমার সাথে কথা বলত না।আগের মত কারো সাথে মিশত না।কিন্তু ওর উদাসীনতা দেখে আমার ভিতরে ভয় হতে লাগল।এভাবে চলতে থাকলে তো যে কোনদিন মুখ খুলে দিবে রথী। তখন আমি কি করব? আমার মান সম্মান, মাথা গুঁজার ঠায় সব একসাথে হারাবে।ঝোঁকের মাথায় কাজটা করলেও পরে ভেবে ভেবে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।মাথা একদম কাজ করছিল না।তাই দু’তিন জন বকাটে ছেলের হাতে ওকে বিক্রি করে দিয়েছিলাম।৫হাজার টাকার বিনিময়ে।আর বলেছিলাম ওরা যেন অনেক দূরে নিয়ে রথীকে রেপড করে। আমার কথামত পরিস্থিতি অনেকটা অনুকূলে এসেছিল।কিন্তু নতুন শরীরের স্বাদ যে একবার পায় আরেকবার স্বাদ না নিলে কি ভালো লাগে বলুন স্যার?এই একটা কারণে ধর্ষক আর কুকুরের মাঝে কোন পার্থক্য নেই! কুকুর খুশি হয় মানুষের গু দেখলে, খাওয়ার জন্য জিব্বা বের করবেই। আর ধর্ষক খুশি হয় নিত্য নতুন শরীর পেলে। ছুঁয়ে দিতে না পারলেও জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে উপভোগ করবেই।তো যা বলছিলাম,খুব কৌশলে রথীকে কিডনাফ করালাম।বকাটে ছেলেগুলো একটা কমদামি হোটেল ভারা করে সারারাত রথীকে নিয়ে মাস্তি করল।সকালের দিকে আমাকে যখন ফোন দিয়ে বলল, মেয়েটাকে কি করবে?আমি বললাম সারাটাদিন ওর পাশেই থাক আমি আসছি।এদিকে বাড়িতে রথীকে খোঁজার নাম করে বেড়িয়ে গেলাম।তারপর অনেকদূরে নিয়ে গেলাম।রাতের আঁধারে আবারও মেতে উঠলাম নোংরামীতে।রথীর কোন হুঁশ ছিল না।একবার আমাকে দেখে বিড়বিড় করে বলেছিল, -“ভাইয়া রে আমাকে বাঁচা। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে ভাইয়া।আমি সশব্দে হেসে দিয়ে বলেছিলাম,-”তুই বাঁচলে যে আমি মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারব না।তারপর আর কিছু বলেনি রথী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল।আমিও কোন রিস্ক নেয়নি।কাঁপা কাঁপা হাতে গলা টিপে মেরে ফেলেছি রথীকে।ওর যখন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল আমি তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।তারপর ধান খেতের আশেপাশে লাইট মেরে খুঁজে দেখলাম একটা আঁধা ছিঁড়া বস্তা পরে আছে। সেই বস্তায় ওকে ঢুকিয়ে ভালো করে বেঁধে একটা মোটা লাঠি দিয়ে পানিতে গেড়ে রাখলাম।তারপর আমিও গোসল করে নিলাম। গায়ের শার্ট খুলে মাটিতে পুঁতে রেখে নতুন শার্ট গায়ে জড়িয়ে ভোরের বাসেই বাড়ির দিকে রওনা হলাম।কিন্তু এত সর্তক থাকার পরেও মস্তবড় ভুলটা করেই ফেলেছি। আমি উত্তেজনার বশে হাতের ঘড়িটা খুলে ঝোঁপঝাড়ে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম।সেই ঘড়িটায় আমার কাল হয়ে দাঁড়াল!ঘড়িটার সুত্র ধরেই আপনি এতদূর কেসটা এগিয়েছেন।
-“তুই খুব চালাক রায়হান।তবে শুধু ঘড়ির সূত্র ধরে নয়।তোর বোনও একটা খাতার শেষ পৃষ্টায় দু’লাইনের ক্লু রেখে গিয়েছিল।আর তুই যে রাকিবের আপন ভাই না কথাটা আমি রাকিবের কাছেই জানতে পেরেছি।
রায়হান চমকে উঠল, বলল,
-“রাকিবের তো জানান কথা না। ও কীভাবে জানল?
-“তোর মনে আছে?প্রথমদিন থানায় আমি যখন তোকে প্রশ্ন করলাম তোরা ক’ভাই বোন!তুই এক পলক রাকিবের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলি।সন্দেহটা আমার সেখান থেকেই শুরু।প্রথমে রাকিবকে সন্দেহ করেছিলাম।আচমকা প্রশ্ন করায় ও খুব চমকেও গিয়েছিল।কিন্তু তুই খুব স্বাভাবিক ছিলি।পরে সমস্ত তথ্য যোগার করে যা বুঝলাম।রাকিব এর কিছুই জানে না।তবে তোর বাবা মরে যাওয়ার দিন তোর হাত ধরে সব সত্যি শিকার করার সময় দরজার আড়াল থেকে রাকিবও শুনেছিল।ওকে একটু চাপ দিতেই ও সব শিকার করেছে।কিন্তু এতকিছুর পরেও তো কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়।তুই সব সত্যি জানার পর তোর আসল বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাসনি কেন?
-“আমি অনেক খুঁজেছি তাদের। ততদিনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে।
জাহিদ সাহেব বলল,
-“একটা নিরিহ মেয়েকে এই ভাবে খুন না করলেও পারতি রে।রথী তো আগুন সুন্দরীও ছিল না। আবার ছোট ছোট ড্রেস পরে শরীর দেখিয়ে ঘুরে বেড়াত না।তারপরেও ওর উপর তোদের লোভ কীভাবে হল আমি বুঝলাম না?
রায়হান উচ্চশব্দে হাসল। বলল,
-”কে বলল আপনাকে শুধুমাত্র মর্ডাণ ড্রেসআপের জন্য আজকাল নারীরা ধর্ষিতা হয়।আমি মনে করি, বর্তমান বাংলাদেশে ধর্ষিতা হওয়ার বা ধর্ষক বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ দরিদ্রতা।আপনি একটা জিনিস একটু ভালো করে ভেবে দেখুন তো,আজকাল সমাজে অধিক জনসংখ্যার ফলে কিংবা দরিদ্রতার কারণে মেধাবী ছাত্র গুলো শিক্ষিত হলেও শিক্ষার উপর ভিত্তি করে টাকার অভাবে ঘুষ দিয়ে ভালো চারকী পাচ্ছে না।এভাবে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ তরুণের তিলে তিলে গড়া স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।আর তাদের ভিতরে অবসাদ জাগ্রত হচ্ছে।এবং মাইন্ড রিফ্রেশ করার জন্য নানা রকম নেশাদ্রব্য গ্রহন করছে। নেশাদ্রব্য কেনার জন্য টাকা যোগার করতে গিয়ে গলির মোড়ে,কিংবা পাড়ার আনাচে-কানাচে রাতের আঁধারে চুরি-চামাড়ি কিংবা ডাকাতী করে খাচ্ছে অধিক তরুণ।এভাবের বর্তমান প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।অবশ্যই একজন বেকার ছেলের হাতে কোন মা বাবা মেয়ে দিবে না।ফলে তারা রাস্তাঘাটে মেয়েদের দেখলে ইভটিজিং করে কিংবা সুযোগ পেলেই বন্ধু-বান্ধব মিলে যৌথ ভাবে ধর্ষণ করে।খোঁজ নিয়ে দেখুন বেশির ভাগ ধর্ষক,হতদরিদ্র গাড়িচালক, পাড়ার বকাটে ছেলেপুলে।বড়লোক’রা তো ধর্ষক হয় না স্যার তারা তো টাকার বিনিময়ে মেয়ে ভাড়া করে গেট টুগেদার করে বা মাস্তি করে।
কথাগুলো একদমে বলেই বার কয়েক ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলল রায়হান।তারপর বিড়বিড় করে বলল,
-“গলাটা খুব শুকিয়ে গেছে।একটু পানি খেতে পারলে ভালো হতো!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here