#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৮
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
ফাহাদ সকাল সকাল অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। তার কারণটাও প্রিয়া।
প্রিয়া অফিসে আসে ১০ মিনিট আগে। প্রিয়াকে আসতে দেখেই ফাহাদ মনে মনে বলে,
“এই মেয়েটাকে দেখার জন্য আমি ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে অফিসে এসে বসে আছি আর মহারাণী আসলো মাত্র ১০ মিনিট আগে!”
ফাহাদ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা শুরু করলো প্রিয়াকে। কারণে-অকরাণে প্রিয়ার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। একটু পরপরই নিজের রুমে ডাকছে। এই ফাইল, ঐ ফাইল প্রিয়াকে দিয়ে ঘাটাচ্ছে সামনে বসিয়ে। আর সেসময়টুকুই আড়চোখে প্রিয়াকে দেখছিল ফাহাদ। প্রিয়া বিষয়টা খেয়াল করলেও প্রথম কয়েকদিন মনের ভুল বলে এড়িয়ে চললো। কিন্তু বিষয়টা এখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। অফিসের প্রায় অনেকেই বিষয়টাকে নিয়ে কানাঘুষা করছে। প্রিয়া একদিন ফাহাদকে বললো,
“স্যার একটা কথা বলবো?”
“হ্যাঁ শিওর।”
“আপনি আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন কেন?”
“সেকি? আমি কখন আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম?”
“দূর থেকে কোনো ছেলে ফলো করলে সেটা মেয়েরা বুঝতে পারে, আর আপনি এত কাছ থেকে আমায় দেখেন সেটা আমার চোখে পড়বে না?”
“তার মানে বলতে চাইছেন আমরা কাছাকাছি থাকি?”
“এমন কখন বললাম আমি?”
“বলেননি?”
“না।”
“আচ্ছা বেশ! তা কে বললো আমি আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি?”
“বলতে হবে কেন? আমি নিজেই দেখেছি।”
“তার মানে আপনিও আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন?”
“মোটেও না।”
“না দেখলে জানলেন কি করে যে আমি তাকাই?”
“চোখ পড়ে যায়। তাছাড়া অফিসের অনেকেই বিষয়টা নিয়ে খুব মাতামাতি করছে।”
“আপনার খারাপ লাগে তাতে?”
“অবশ্যই। যেখানে আমি কোনোভাবেই ইনভলভ্ নই সেখানে আমাকে নিয়ে কোনো কানাঘুষা হোক সেটা আমার একদম পছন্দ নয়।”
“ওকে ওকে রিলাক্স! এত রেগে যাচ্ছেন কেন?”
“আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার।”
“কি বুঝতে পারছি না আমি?”
“আপনি কিছুই বুঝতে পারেন না।”
“আমি অনেক কিছুই বুঝি। বরং আপনিই বুঝেন না।”
“ধ্যাত! আপনার সাথে কথা বলা আর কলাগাছের সাথে কথা বলা একই কথা।”
প্রিয়া রাগ করে চলে গেলো। আর ফাহাদ হেসে দিলো।
“মেয়েটাকে এতদিন চুপচাপ স্বভাবের মনে হলেও বেশ রাগ আছে দেখা যাচ্ছে।”
তার পরেরদিন থেকেই প্রিয়া অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। একদিন,দুইদিন করে পেড়িয়ে যখন সময়টা এক সপ্তাহে চলে যায় তখন ফাহাদের মনে ভয় ঢোকা শুরু করে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। তবে কি প্রিয়া চাকরীটা ছেড়ে দিলো! ভালোবাসা পাওয়ার আগেই কি হারিয়ে গেলো! নাহ্! এসব কিছুই ভাবতে পারছেনা ফাহাদ। এক অজানা ভয় মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।
ফাহাদ অফিস থেকে প্রিয়ার নাম্বার জোগার করে ফোন দেয়। কিন্তু অদ্ভুত! ফোন নাম্বারটা বন্ধ। হলো কি মেয়েটার। এবার ফাহাদের মনটা উতলা হয়ে পড়লো। কি করবে না করবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
রুমের মধ্যে একা একা পায়চারী করছিল। ফাহাদের মা এসে বললো,
“কি হয়েছে তোর? কয়েকদিন ধরেই তোকে অস্থির দেখাচ্ছে।”
ফাহাদ মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
“মা, আমি বোধ হয় প্রিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি।”
“মানে? কি হয়েছে?”
“আজ সাতটা দিন হয়ে গেলো প্রিয়া অফিসে আসেনা। কোনো খোঁজখবরই নেই। ফোন নাম্বারটা পর্যন্ত বন্ধ।”
“এত চিন্তা করিস না বাবা। হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে।”
“চিন্তা তো আমি করতে চাইনা মা। কিন্তু ওর অনুপস্থিতি কেন যেন আমায় বেশিই টেনশনে ফেলে দিচ্ছে। এক মুহুর্তে কাউকে এত ভালোবাসা যায় এটা আমি বিশ্বাসই করতাম না যদি না আমার সাথে হতো।”
“আল্লাহ্ সহায় আছে। খারাপ কিছু হবেনা দেখে নিস।”
“যদি সত্যিই হারিয়ে ফেলি?”
“ধুর পাগল! হবেনা এমন কিছু। তোর ভালোবাসা তুই ফিরে পাবি। ওর কোনো ফ্রেন্ডকে চিনিস না?”
“আমি তো তেমন করে কিছুই জানিনা ওর ব্যাপারে। শুধু জানি ওকে ভালোবাসি। এখন এটা ভালোবাসা নাকি আকর্ষণ এটা বোঝার জন্য নিজেই নিজেকে সময় দিচ্ছিলাম। আর এরমধ্যেই এই ঘটনা ঘটে গেলো। তবে ওকে অফিসের একটা মেয়ের সাথে বেশিই মিশতে দেখি। নাম মেবি পৃথা।”
“তাহলে ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো পারিস।”
“তাইতো! এটা তো আমার মাথায়ই আসেনি। টেনশনে মাথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো। কালই অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো।”
“পাগল ছেলে আমার। আচ্ছা শোন, মৃন্ময় এসেছে আজ।”
“কি বলো? কখন এসেছে?”
“বিকালে এসেছে। একটু আগে বাহিরে গেলো।”
“ওহ।”
মৃন্ময় আর ফাহাদ খালাতো ভাই। দুজনের সম্পর্ক শুধু ভাইর’ই নয় খুব ভালো বন্ধুও ওরা।
কিছুক্ষণ পরই মৃন্ময় ফোন দেয় ফাহাদকে।
“হ্যালো ফাহাদ।”
“হ্যাঁ বল।”
“অফিস থেকে ফিরেছিস?”
“আরো আগেই। তুই কোথায়?”
“বাহিরে আছি। আসছি এখনই।”
“আচ্ছা আয়।”
ফোন রেখে কপালে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে ফাহাদ। মনটা খুব অস্থির। যতক্ষণ না প্রিয়ার কোনো খোঁজখবর পাবে, প্রিয়াকে একটা নজর দেখতে পারবে ততক্ষণে পর্যন্ত শান্তি পাবেনা ফাহাদ। মলিন মুখে ঘরে প্রবেশ করে মৃন্ময়। মৃন্ময়কে দেখেই উঠে বসে ফাহাদ।
“কিরে মৃন্ময় শরীরের এই অবস্থা কেন তোর?”
“আর শরীর! শরীরে মন-প্রাণ না থাকলে কি শরীর ঠিক থাকে?”
“মানে?”
“একজনকে খুঁজছি। মনটা তার কাছেই।”
“কে? রিমি?”
“আরে না। আমার সেই প্রেয়সী।”
“যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল?”
“হ্যাঁ। ওকেই তো আমি ভালোবেসে প্রেয়সী বলে ডাকতাম।”
“চুপ কর শালা! তুই যেই কাজটা করেছিস মেয়েটার সাথে এরপরও কোন মুখে বলিস ভালোবাসার কথা?”
“আমি জানিরে ভাই। খুব বেশি ভুল করে ফেলছি। কিন্তু কি করবো বল? ওর থেকে দূরে গিয়েই তো ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পেরেছি।”
মৃন্ময়ের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফাহাদ। ভালোবাসা বুঝি এমনই। দূরে গেলেই ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করা যায়।
“তো কোথায় খুঁজছিস তাকে?”
“পৃথিবীটা গোল। একটা সময় ঠিকই পেয়ে যাবো।”
“ছবি আছে? থাকলে দেখা।”
“উঁহু! ছবি না। আমার প্রেয়সীকে সামনে এনে দেখাবো। দেখবি কত সুন্দরী সে!”
“তাই? ছবি না দেখালে নাই। আমারও এত ইন্টারেস্ট নেই অন্য কাউকে দেখার। তবে তোর প্রেয়সী যত সুন্দরীই হোক না কেন, আমার দেখা সেই সাদা পরীর মত সুন্দর নয়।”
“সাদা পরী কোথায় পেলি তুই? আর কথাবার্তা এমন কেন?”
“কেমন?”
“কেমন যেন প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।”
“ওরে এটা প্রেম নয়! ভালোবাসা। কিন্তু আমারও যে তোর মত দশা।”
“কেন? কি হয়েছে?”
“হারিয়ে ফেলেছি পরীটাকে।”
“কিভাবে?”
“নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ভালোবাসার কথা জানানোর আগেই পাখি ফুড়ুৎ। এখন তোর মতই দেবদাস হয়ে খুঁজছি।”
“হায়রে কপাল! দুই ভাইয়েরই ফুডা কপাল বুঝলি। আল্লাহ্ যে কবে পাইয়ে দিবে তাদের।”
“আশা ছাড়ছিনা। ভালোবাসার টানে হলেও খুঁজে বের করবোই।”
দুজনে গল্প করতে করতে শুয়ে পড়লো। রাতে খেলোও না। খাবে আরকি! দুজনেরই তো খুশিতে পেট ভরে গেছে। ভালোবাসার মানুষের কথা মনে পড়লে নাকি অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি হয় আর তখন খাওয়ার প্রয়োজন হয়না। পেট আপনাআপনি ভরে যায়। সে রাতে দুই ভাই মিলে জম্পেশ আড্ডা দিয়েছে। দুজনের আড্ডার মানুষটাই তাদের ভালোবাসা।
মানুষটা এক, অনুভূতিগুলো আলাদা। যেটা জানেও না দুই ভাই। কিজানি কি আছে কি কপালে!
.
.
পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে অফিসে গেলো ফাহাদ। অফিসে গিয়েই আগে পৃথাকে খুঁজলো। পৃথা তখনো অফিসে আসেনি। তাই তোয়াকে বলে রেখেছিল পৃথা আসলে জানাতে।অফিসে আসার পর পৃথার আর যাওয়া লাগেনি। ফাহাদই এসে পড়েছে। এই নিয়ে ১০ বার আসা-যাওয়া হয়ে গেছে। পৃথাকে দেখেই এগিয়ে গেলো ফাহাদ। পৃথা বললো,
“স্যরি স্যার। আমি এখনই যাচ্ছিলাম।”
“না সমস্যা নেই। আসলে একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছিলাম।”
“জ্বী স্যার বলুন।”
“আসলে…”
ফাহাদ আমতা আমতা করতে লাগলো। অবশেষে সব লাজ-লজ্জা কাটিয়ে বলেই ফেললো,
“প্রিয়ার কি হয়েছে? অফিসে কেন আসছেনা?”
পৃথার চেহারায়ও চিন্তিত ভাব আসলো। মলিন মুখে বললো,
“জানিনা স্যার। অনেকবার ফোন করেছি। ফোন বন্ধ পেয়েছি বারবার। আর ওর বাড়িও চিনিনা আমি।”
“ওহ।”
ফাহাদ চলে যাচ্ছিলো। আস্তে আস্তে সব আশার আলোই যেন নিভে যাচ্ছিলো। হুট করেই পৃথার মুখে শুনতে পেলো,
“প্রিয়া!!”
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকালো। হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে ফাহাদের। প্রিয়া এসেছে। ফাহাদের মত খুশি মনে হয় আর কেউ নেই আজ। পরক্ষণে আবার রাগও হলো। এতদিন কষ্ট দেওয়া! এর শাস্তি তো পেতেই হবে।”
ফাহাদের পিএ তোয়াকে ডেকে বললো,
“প্রিয়াকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও।”
“ওকে স্যার।”
কিছু সময় পর প্রিয়া ফাহাদের রুমে যায়। আজ কিছুই বলছেনা প্রিয়া। ফাহাদ ভেবেছিল সেদিনের মত হয়তো বাচ্চামো করবে, বকবক করবে কিন্তু এমন কিছুই করেনি প্রিয়া। শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো চঞ্চলতা নেই। আগের থেকে শুকিয়ে গিয়েছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। অজানা ভয়ে বুকে মোচর দিয়ে উঠলো ফাহাদের। কি হয়েছে প্রিয়ার!…..
চলবে…
#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৯
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদ বললো,
“এতদিন অফিসে আসেননি কেন?”
“সমস্যা ছিল।”
“কি সমস্যা?”
প্রিয়া এবার উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদ আবার বললো,
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। কি সমস্যা ছিল যে এতদিন অফিসে আসলেন না? একটা ফোন করে তো জানায় মানুষ? ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছিলেন আপনি। কি সমস্যা আপনার বলেন? আমার অফিসে কাজ করতে ভালো লাগেনা? নাকি আমায় বিরক্ত লাগে? আপনার দিকে তাকাই বলে খুব সমস্যা?”
ধমক দিয়েই কথাগুলো বললো ফাহাদ। ফাহাদের কথায় অধিকার স্পষ্ট। কিন্তু কিসের অধিকার সেটা বুঝেনা প্রিয়া। ফাহাদের ধমকে প্রিয়া কেঁদেই দিলো। ফাহাদ ঝাড়ি দিয়ে বললো,
“কিছু বললেই শুধু ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদে। এছাড়া আর কিছু পারেন না? কি হয়েছে সেটা তো বলবেন!”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“স্যরি স্যার। আর এমন হবে না। আমি ইচ্ছে করে এতদিন অনুপস্থিত ছিলাম না। দয়া করে শেষবারের মত একটা সুযোগ দিন প্লিজ।”
ফাহাদ মনে মনে বললো,
“আমি বলি কি আর সে বুঝে কি! ওরে জ্বালা আমি কি একবারও বলেছি যে অফিস থেকে বের করে দিবো! আমার যে টেনশন হয় সেটা এই মেয়ে বুঝবেনা। এত অবুঝ কেন এই মেয়ে!”
ফাহাদ যথাসম্ভব রাগ দমিয়ে বললো,
“আচ্ছা আপনি এখন যান।”
প্রিয়া চলে যাওয়ার পর ফাহাদ মাকে ফোন দিলো।
“হ্যালো মা।”
“হ্যাঁ বল।”
“পেয়ে গেছি মা পেয়ে গেছি।”
“কি পেয়ে গিয়েছিস?”
“আমার সাদা পরীকে পেয়ে গেছি মা।”
“অফিসে এসেছে?”
“হ্যাঁ মা।”
“তাহলে তো আমার ছেলেটা আজ খুব খুশি।”
“অনেক খুশি মা। কিন্তু কিছু একটা গন্ডগোল আছে মা।”
“কিসের গন্ডগোল?”
“প্রিয়ার চোখমুখ কেমন জানি। কি জানি হয়েছে, কিন্তু সেটা বলছেনা।”
“হয়তো পারিবারিক কিছু তাই তোকে বলেনি। তাছাড়া তুই ওর বস, তোকে কি আর সব বলবে নাকি!”
“তাহলে কি করে জানবো?”
“ওর কোন ফ্রেন্ড যেন আছে ওকে দিয়ে জিজ্ঞেস করা।”
“এটা করা যেতে পারে। কিন্তু মা পৃথা বিষয়টা কিভাবে নিবে সেটাই তো বুঝতেছিনা। অফিসের বস অফিসেরই একজনকে পছন্দ করে, ভালোবাসে বিষয়টা কেমন জানিনা?”
“এখানে কেমন জানির কি আছে? কে কিভাবে নিবে সেটা তার বিষয়। তোর কাজ হচ্ছে তুই কিভাবে প্রিয়ার সব ইনরফরমেশন নিবি। এখন ওর ইনরফরমেশন তো আর ও নিজে এসেই দিবে না তাই না? এজন্য অবশ্যই ওর কাছের কারো সাহায্য দরকার তোর। আর ওর কাছের কেউ বলতে তুই শুধু পৃথাকেই চিনিস। সো তোকে সাহায্য করতে পারলে পৃথাই পারবে। প্রয়োজনে ওকে সব জানা। ও তোকে সাহায্য করতে পারবে। ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য যা করা লাগবে করবি। যেটা সবাই দুদিন পর এমনিতেই জানবে সেটা না হয় দুদিন আগেই কেউ জানুক।”
“ওহ মা! সত্যিই তুমি বেষ্ট। এজন্যই বোধ হয় আমার কোনো বেষ্টফ্রেন্ড নেই। যার বেষ্টফ্রেন্ডের মত মা আছে তার আবার কোনো বেষ্টফ্রেন্ডের দরকার হয় নাকি। লাভ ইউ সো মাচ মা।”
“পাগল ছেলে আমার। লাভ ইউ টু। এখন যা, কাজে লেগে পড়।”
“যথাআজ্ঞা মেরি আম্মিজান।”
রেষ্টুরেন্টে অপেক্ষা করছে পৃথা। কিছুক্ষণ পরই ফাহাদ আসে। ফাহাদকে দেখে পৃথা দাঁড়িয়ে পড়ে। ফাহাদ মুচকি হেসে বলে,
“আরে বসো বসো। রেষ্টুরেন্টে এত ফর্মালিটি দেখাতে হবেনা।”
“সমস্যা নেই স্যার।”
ফাহাদ বসতে বসতে বললো,
“এখানে আসার জন্য কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
“না স্যার।”
“আসলে যে কথাগুলো বলবো সেগুলো অফিসে বলার মত নয়। তাই এখানে ডেকেছি।”
“সমস্যা নেই স্যার। আপনি বলুন।”
“একচুয়ালি কথা বলার টপিক হচ্ছে প্রিয়া!”
পৃথা মুচকি হেসে বললো,
“এটাই আন্দাজ করেছিলাম।”
“মানে?”
“না মানে প্রায়ই দেখতাম আপনি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রিয়াকে দেখেন।”
ফাহাদ লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকালো।
“আসলে কি জানো পৃথা, কখনো ভাবতেই পারিনি এভাবে কাউকে ভালোবেসে ফেলবো। সেই বৃষ্টিতে সাদা ড্রেসে আধভেজা অবস্থায় দেখে কি যে হলো আমার। এখন ধ্যানেজ্ঞানে শুধুই প্রিয়া।”
“তাহলে ওকে বলছেন না কেন?”
“বলবো। আসলে আমি সেরকমভাবে প্রিপেইড নই তো, তাই চাচ্ছিলাম একটু সময় নিতে।”
“ওহ্!”
“আচ্ছা এই ক’দিন ও অফিসে আসেনি কেন জানো?”
“না স্যার। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি বলেনি। বলেছে পরে বলবে। তবে মুখ দেখে মনে হয়েছিল যাই হোক না কেন ভালো হয়নি।”
ফাহাদ চিন্তিতস্বরে বললো,
“হুম!! এক কাজ করবে কাল কি হয়েছে তা জানার জন্য ওকে ফোর্স করবে। যেভাবেই হোক ওর থেকে কথা আদায় করবে। আর যখন জিজ্ঞেস করবে তখন আমায় বলবে আমি কল দিবো। তুমি শুধু ফোনটা লাইনে রেখো।”
“আচ্ছা।”
“আর হ্যাঁ, প্লিজ এসব কিছু আগেই কাউকে জানিয়ো না। এমনকি প্রিয়াকেও না।”
“ওকে স্যার।”
“থ্যাঙ্কিউ।”
.
.
ফাহাদ বাড়িতে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো। ফাহাদের বাবা তখন পত্রিকা পড়ছিলেন। পত্রিকার পাতা উল্টে বললো,
“কি ব্যাপার? খুব খুশি মনে হচ্ছে?”
“হুম আব্বু খুব খুশি।”
“তো কি কারণ শুনি? আমরাও একটু খুশি হই তোমার সাথে।”
“স্যরি আব্বু। এখন তো বলা যাবেনা। তবে সময় হলে অবশ্যই অবশ্যই জানাবো।”
“সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে?”
ফাহাদ কিছু বললো না। লাজুক হেসে উপরে চলে গেলো। মৃন্ময় তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান শুনছিল। ফাহাদকে দেখে মৃন্ময় বললো,
“একটু আগে বাড়িতে আসতে পারিস না?”
“কেন?”
“কেন আবার কি? আমার সাথে একটু সময় কাটাবি।”
“ধুর ব্যাটা! এতদিন পর আমার সাদা পরীটাকে পেয়েছি। ওকে না দেখে তোকে দেখবো?”
“কি সেলফিস রে! যাই হোক, অফিসে এসেছে?”
“হ্যাঁ রে। এজন্যই তো আজ এত খুশি আমি।”
“খুব লাকিরে তুই! তোর পরীকে তো তুই খুঁজে পেলি কিন্তু আমার প্রেয়সীকে যে আমি কবে পাবো কে জানে!”
“মন খারাপ করিস না। খুব শিঘ্রয়ই খুঁজে পাবি দেখিস।”
“তাই যেন হয়। তবে আমার ট্রিট চাই।”
“কিসের ট্রিট?”
“এই যে তোর পরীকে খুঁজে পেলি তাই।”
“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। ওকে খাওয়াবো। যত খেতে পারিস খাওয়াবো কিন্তু আজ না ভাই। কাল খাওয়াবো। আজ খুব টায়ার্ড আমি। কাল অফিস পাঁচটায় ছুটি দিবো। তখন বাহিরে যাবো কেমন? অফিস থেকে ৪০ মিনিট লাগে যেতে একটা রেষ্টুরেন্ট আছে। দারুণ সব খাবার পাওয়া যায়।”
“ওকে ডান।”
পরেরদিনঃ
লাঞ্চ টাইমে খুব ফোর্স করছে পৃথা প্রিয়াকে। ফাহাদ তখন ফোনের লাইনেই আছে। সব শুনছে। প্রিয়া বলতে নারাজ। বারবার কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে। পৃথা এবার ইমোশোনাল ব্লাকমেল করে বললো,
“তুই কি আমায় একটুও বিশ্বাস করিস না প্রিয়ু? আমার সাথে কি শেয়ার করা যায় না?”
“উল্টাপাল্টা ভাবিস নারে পৃথা। এই নতুন জগতে আমার বন্ধু বলতে শুধু তুই’ই আছিস আমার আপন। যাকে আমি সব শেয়ার করি। কিন্তু এই বিষয়টা তুই সহ্য করতে পারবিনা তাই আমি বলতে চাচ্ছিনা।”
“যেটা তুই সহ্য করতে পেরেছিস সেটা আমি পারবো না? তোর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুই সহ্য করতে পারলে আমিও পারবো। আফটারঅল তুই আমার ফ্রেন্ড। আমার বেষ্টফ্রেন্ড। প্লিজ বল কি হয়েছে?”
প্রিয়ার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। গলাটা ধরে আসছে। ধরা গলায় প্রিয়া বললো,
“সব শেষ গয়ে গিয়েছে রে পৃথা। নতুন জগতে নতুনভাবে বাঁচার সব আশা নিভে গিয়েছে সব। আমি সত্যিই একটা অলক্ষী।
ঐদিন অফিস শেষে বাড়িতে গিয়ে দেখি দুই ভাবীর বাবা-মা আর ভাই এসেছে। আমার দুই ভাবী সম্পর্কে আপন বোন। ছোট ভাইয়া আর ছোট ভাবীর রিলেশন ছিল। তখন প্রস্তাবের মাধ্যমেই বাড়ির দুই মেয়েকে আমার দুই ভাইয়ের বউ করে আনে। আমি তাদের সাথে কুশল বিনিময় করে আমার রুমে চলে যাই। ভাবীর ছোট ভাই আমায় আগে থেকেই পছন্দ করতো যেটা আমি জানতাম। তাই সবসময়ই এড়িয়ে চলতাম। আমার পিছু পিছু ভাবীর ছোট ভাই রামিম আমার রুমে আসে। খাটের উপর বসে বললো,
“কি খবর বিয়াইন সাহেবা! খবর কি তোমার?”
আমার খুব রাগ হয় তখন। সরাসরি একটা মেয়ের রুমে আসা আবার খাটে বসা বিষয়টা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু ভাবীর ভাই বলে কিছু বলিনি। মুখে হাসির রেখা টেনে বলেছিলাম,
“জ্বী ভালো।”
“মন খারাপ নাকি?”
“না।”
“তাহলে কথা বলছো না কেন?”
“একটু টায়ার্ড তো তাই। মাথা ব্যথা করছে।”
“আসো মাথা টিপে দেই।”
“আশ্চর্য! নিজের সীমা অতিক্রম করবেন না প্লিজ।”
“আরে আরে রেগে যাচ্ছো কেন? আমি তো মজা করলাম।”
“আপনি এখন আসতে পারেন।”
“প্রিয়া!”
“হু।”
“আর কতবার বলবো তোমায় ভালোবাসি?”
“আমি কতবার বলবো যে, আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।”
“প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!”
“আমি কিচ্ছু বুঝতে চাইনা। আমার এসব ভালোবাসার প্রতি কোনো ইনটেনশন নেই।”
“আমি তো তোমায় বিয়ে করতে চাই। দেখো তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।”
“আপনার সমস্যা থাকলেই বা আমার কি? আমার অতীতকে দূর্বলতা ভেবে আমায় বিয়ে করবেন এই আশা থাকলে প্লিজ সেটা ভুলে যান। আপনাকে আমি কোনো জন্মেই বিয়ে করবো না। তার কারণও আপনি খুব ভালো করেই জানেন।”
“দেখো আমি জানি আমি নেশা করি, মেয়েদের প্রতি উইক। কিন্তু প্রমিস তুমি আমার জীবনে আসলে সব ছেড়ে দিবো আমি।”
“হাসালেন রামিম। শুনেছিলাম, আপনি নাকি আপনার মাকে ছুঁয়েও কথা দিয়েছিলেন এসব আর করবেন না? কিন্তু আপনি কথা রাখতে পেরেছেন কি? পারেননি তো! যেই ছেলে গর্ভধারিণী কে দেওয়া কথা রাখতে পারেনা, সে আমায় দেওয়া কথা রাখবে?”
“তুমি শোনো….”
“আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। আপনি এখনই আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাবেন প্লিজ। নয়তো আপনি থাকেন, আমিই চলে যাই।”
এরপর আর রামিম কিছু বলেনি। চলে যায়। কিন্তু দমে যায়নি তখনো। আমায় বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। আমার দুই ভাবীকেই বিষয়টা জানায়। ভাবীরা তাদের আদরের ভাইয়ের আবদার রাখতে গিয়ে আমার কথা ভাবা ভুলে যায়। ভাইয়াদের বিষয়টা বুঝায়। আমি রাজি ছিলাম না বিধায় ভাইয়ারাও কেউ রাজি হয়নি। কিন্তু ভাবীরা এমন কি বুঝিয়েছিল কে জানে! আর রামিমও এত ভালো মানুষ সাজার অভিনয় করলো যে ভাইয়ারাও রাজি হয়ে যায়। সবাই মিলে আমাকে বুঝাতে শুরু করে। আমার অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। আমি জেনেশুনে ওমন একটা লোককে কি করে বিয়ে করতাম বল? আমি রাজি হয়নি। একমাত্র মা’ই আমার পাশে ছিল। আমার সেই পরিচিত ভাই-ভাবীদের আবারও অচেনা মনে হতে শুরু করলো। একদিন ভাইয়ারা মাকে বললো,
“তুমি তোমার মেয়েকে বোঝাচ্ছো না কেন? আমরা কি ওর খারাপ চাই? যদি ওর খারাপ চাইতাম তাহলে কি ফিরে আসতাম আমরা? ওর প্রথম সেই ঘটনার পর বাবা মারা যায়। তখন কিন্তু আমরা দূরে সরে থাকতে পারিনি মা। সাপোর্ট হয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়েছি। আর আজ ওর কাছে আমাদের কথার কোনো মূল্যই নেই।”
“দেখ বাবা, সংসার তো ও করবে। তাহলে ও যখন রাজি না কেন বারবার এমন জোর করছিস?”
“বাহ্! তুমিও তো দেখছি এখন মেয়ের দলে।”
“এটা দলের কোনো বিষয় না রে বাবা। একটু ওর কথা ভাব।”
“ওর কথা ভেবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে রামিমের সাথেই ওর বিয়ে দিবো। তুমি দেখো মা, আমাদের বোন অনেক সুখী হবে।”
আড়াল থেকে সেদিন সবটা শুনেছিলাম আমি। পরিস্থিতি যে আমার অনুকূলে ছিল না সেটা আমি ঢের বুঝতে পেরেছিলাম। শুধুমাত্র মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজিও হয়ে গিয়েছিলাম। ঘরোয়াভাবে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এরপর….”
এতটুকু বলে হুহু করে কেঁদে দিলো প্রিয়া। ওপাশ থেকে নিঃশব্দে সব শুনছিল ফাহাদ। প্রিয়ার কান্নাগুলো তীরের মত বিঁধছিল ফাহাদের বুকে। মনে তখন এক অজানা ভয়। তবে কি সত্যিই ফাহাদ প্রিয়াকে হারিয়ে ফেললো!
পৃথা প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কাঁদিস না প্লিজ। এরপর কি হলো?”
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“এরপরই আমার পরিবারটা এলোমেলো হয়ে গেলো রে পৃথা। বিয়ের আগেরদিন রাতে রামিম ড্রিঙ্ক করে আমার রুমে আসে। রাত তখন এগারোটার মত বাজবে। আমি বসে বসে উপন্যাসের বই পড়ছিলাম। রামিম হুট করেই রুমে ঢুকে যায়। আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে। আমি ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু ও অনেক বেশি জোড়াজুড়ি শুরু করে দেয়। ওকে দেখে আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম ও মদ খেয়েছে। আমি বারবার বলেছিলাম,
“রুম থেকে বেড়িয়ে যান। প্লিজ বেড়িয়ে যান।”
“সরিয়ে দিচ্ছো কেন? কাল তো আমাদের বিয়ে হচ্ছেই।”
“আমি রুম থেকে বের হতে বলেছি আপনাকে।”
রামিম কিছুতেই আমার কথা শুনছিল না। তখন আমি সজোরে একটা থাপ্পড় দেই রামিমকে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চেঁচামেচি শুরু করি। তখন সবাই দৌঁড়ে আমার রুমে আসে। আমি কেঁদে কেঁদে সব বলি ওদের। কিন্তু জানিস পৃথা, আমার ভাইরা এর কোনো প্রতিবাদ করেনি। উল্টো বলেছে নেশা করেছে তো তাই এমন হয়ে গেছে। মাফ করে দে ওরে বোন। রামিমের ওমন ব্যবহারে যতটা না কষ্ট পেয়েছিলাম তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম ভাই-ভাবীর কথায়। তখন আর চুপ করে থাকতে পারিনি। রাগে বলেছিলাম,
“আমি এই বিয়ে করবো না। করবো না এমন চরিত্রহীন, নেশাখোর কোনো ছেলেকে বিয়ে। এতে যদি কখনো আমার বিয়ে না হয় তো না হোক। তবুও আমি এই বিয়ে করবো না। এখন যা খুশি করতে পারো তোমরা।”
তখন এক কথায়, দুই কথায় অনেক ঝামেলা হয়ে যায় বাড়িতে। এই বিয়ে না করলে ভাবীরা বাপের বাড়ি চলে যাবে সিদ্ধান্ত নেয়। ভাইয়ারাও চায় আমি এই বিয়েটা করি। মা শুধু মুখে আঁচল গুঁজে কাঁদতো। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে দৃঢ় ছিলাম। অন্যায়ের কাছে আমি মাথা নত কিছুতেই করবো না। ভাইয়া ঠান্ডা মাথায় বলেছিল,
“দেখ বোন, মানছি রামিম একটা ভুল করেই ফেলেছে। তাই বলে বিয়েটাই ভেঙ্গে দিবি? আগের কথাই ভাব? পরপর দুইটা অতীত তোর। তাছাড়া রামিম সব জেনেই তোকে বিয়ে করতে রাজি। আর তুই ওর একটা দোষ মাফ করতে পারবি না?”
“বাহ্ ভাইয়া বাহ্! কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায়না তেমনি খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়ালেই ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করা যায় না। আমায় বিয়ে দিতে চাচ্ছো নাকি কুরবানি দিতে চাইছো তোমরা? আমি মেয়ে বলে সবসময় স্যাক্রিফাইজ আমাকেই করতে হবে? কেন? সবসময় আমিই কেন? প্রয়োজনে সারাজীবন এভাবেই থাকবো তবুও এমন চরিত্রহীন কাউকে আমি বিয়ে করবো না।”
“তুই কি চাস আমরা আবার আগের মত আলাদা হয়ে যাই?”
“ভয় দেখাচ্ছো? আমি আর ভয় পাইনা ভাইয়া। বিয়ের প্রায় এক বছরের মাথায় দুই ভাই মিলে কৌশলে আলাদা হয়ে গিয়েছিলে। বলেছিলে অফিস থেকে ট্রান্সফার করা হয়েছে। মাসেও একটা খবর নিতে না। আমি বুঝতাম না ভেবেছো? তখন কি তোমাদের ছাড়া থাকিনি? থেকেছি তো! এরপর আব্বু মৃত্যুর পর আবার ফিরে এলে। মনে হয়েছিল পৃথিবী ফিরে পেয়েছি আমি। কিন্তু আমি তো ভুল ছিলাম। তোমরা শোধরাওনি ভাইয়া তোমরা শোধরাওনি।”
ভাবী রাগে গজগজ করতে বলেছিল,
“এইটুকুন একটা মেয়ের কাছে আমাদের এত কথা শুনতে হচ্ছে? তোমাদের কথায় ফিরে আসছিলাম আর এখন তোমারই বোন এসব কথা শুনাচ্ছে। নিজের ছোটবোনের মত ভালোবেসেছিলাম আর তোমার বোন এর প্রতিদান দিচ্ছে এখন।”
“ভাবী, আমার আপু কিন্তু কখনোই এই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতো না। এটা সত্যিই যে, যে কয়টা দিন একসাথে ছিলে সে কয়টা দিন শুধু আপুর মতই না মায়ের মতও ভালোবেসেছো। তাহলে এখন এমন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছো কেন ভাবী?”
ভাবীর আর কোনো উত্তর পাইনি। তারা চলে যাওয়ার জন্য রেডি। ভাইয়াদের বলেছিলাম,
“তোমরাও নিঃসঙ্কোচে চলে যেতে পারো। আটকাবো না। ছোট ছোট বাচ্চা আছে তোমাদের। আমাদের জন্য নিজেদের পরিবার নষ্ট করো না। মাকে নিয়ে আমি ভালো থাকবো।”
জানিস পৃথা, তখন মুখে এটা বললেও মনে মনে বলেছিলাম ভাইয়া প্লিজ যেয়ো না প্লিজ যেয়ো না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সবাই চলে গেলো। তখন থেকেই মাকে নিয়ে আমার একলা জীবন।”
প্রিয়া এবার জোরে জোরে শব্দ করে কাঁদছে। প্রিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে পৃথা। পৃথাও কাঁদছে। কি করে একটা মানুষ এত কষ্ট সহ্য করতে পারে। ক্যান্টিনে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। ফোনের ওপাশে ফাহাদও কাঁদছে। ভাবতেই পারছেনা মেয়েটার এত কষ্ট। ইচ্ছে করছে রামিম ছেলেটাকে খুন করে ফেলতে। ওপাশ থেকে মানুষের হৈচৈ শোনা যাচ্ছে। সবার চোখেমুখে কৌতুহল কি হয়েছে! এই মুহুর্তে পরিস্থিতি সামলাতে হবে। ফাহাদ ভালো করে চোখমুখ মুছে নিলো। এরপর ক্যান্টিনে গিয়ে বললো,
“কি হয়েছে কি এখানে? এত হৈচৈ কেন? আর ক্যান্টিনে কি সবার? লাঞ্চ টাইম যে পেড়িয়ে গেছে সে খেয়াল কি আছে আরো? যাও সবাই যে যার কাজে।”
ফাহাদের ধমকে সবাই চলে যায়। ক্যান্টিন এখন পুরোপুরি শান্ত। ফাহাদ ইশারায় পৃথাকে চলে যেতে বললো। পৃথা চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো। প্রিয়াও চোখ মুছতেছে। কিন্তু বারবার চোখে পানি এসে পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে। ফাহাদ গিয়ে প্রিয়ার পাশে বসলো। প্রিয়া ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো,
” স স স্য রি স্যার! আ..মি কাজে যাচ্ছি।”
প্রিয়া চলে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ফাহাদ হাত টেনে ধরে। প্রিয়া দাঁড়িয়ে পড়ে। ফাহাদ প্রিয়ার সামনে গিয়ে চোখের পানি মুছে বললো,
“এই মিষ্টি চোখে পানি মানায় না। কারা কাঁদে জানেন? যারা হেরে যায়। আপনি কি এত সহজেই হেরে যাবেন?”
প্রিয়ার কি হলো, কে জানে! দুম করে কাঁদতে কাঁদতে ফাহাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
“কেন সবসময় আমার সাথেই এমন হতে হবে কেন!”
ফাহাদ প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কাম ডাউন প্রিয়া।”
প্রিয়া ফাহাদকে ছেড়ে দিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়।…
চলবে…