পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ২৯+৩০

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ২৯

রায়হান হাতে তুলে নিল রড। শরীরের সব শক্তি দিয়ে পেটাতে পেটাতে দু’পা থেতলে দিতে লাগল ইকবালের। হাঁর গুলো ভেঙে গুরিয়ে যাচ্ছে রডের বাড়িতে যার আওয়াজ রায়হানের কানে আসছে। ইকবালের চিৎকার কারো কান পর্যন্ত পৌঁচাচ্ছেন কি-না তা জানা নেই রায়হানের।

সাদিয়া বহু কষ্টে হেঁটে হেঁটে উপরে উঠল রায়হানের এই হীংস্র রূপ দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। মুখ ফুটে রায়হানকে একবার ডাকতে চাইলো কিন্তু কিছুতেই পারল না। ভয়ে হাত পা কাঁপছে, শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর।

রায়হান ইকবাল হাসানের একাধারে মারতেই থাকলো। ইকবালের পা দুটো মেঝেতে পিশে ফেলল সে। ইকবাল হাসান হাত দুটো জোরে করে রায়হানের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে বলল, “আমাকে ছেড়ে দে ভাই। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর জীবনেও এসব কাজে জরাবো না। আল্লাহর কসম।”

রায়হান এবার থামলো পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল, “ভুল করার আগে ভাবতে হয় এর পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে। তুই একটা ভুল করলেও আমি এ ব্যাপারে ভেবে দেখতাম। কিন্তু তুই শত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস। কাউকে বিক্রি করে দিয়েছিস, কাউকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলেছিস, আবার কাউকে ধর্ষণ করে ছেড়ে দিয়েছিস সমাজের নিম্ন মস্তিষ্কের মানুষের ভিড়ে। ভেবে দেখ আজ পর্যন্ত কত অন্যায়, অপরাধ করেছিস।”

রায়হানের কথাগুলো শুনলো সাদিয়া। কতটা খারাপ হলে মানুষ এত জঘন্য কাজগুলো করে থাকে? আর ভাবতে পারছে না সাদিয়া।

রায়হান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “একটা মেয়ে যার কিছুদিন পর বিয়ে হওয়ার কথা এবং এটা জানা সত্ত্বেও সেই মেয়েটির জীবন তেরা জানোয়াররা মিলে শেষ করে দিলি। একবারও কি ভেবেছিলি মেয়েটির কথা। ভাবিসনি উল্টো শকুনের মতো ছিঁড়ে খোয়েছিলি তাকে। ভালোবাসার মানুষটার বিষয়ে এসব জানার পর কি অবস্থা হয়েছিল আমার জানিস? জানবিই বা কি করে কাউকে ভালোই তো বাসিস-নি কখনো।”

ভালোবাসার কথাটা শুনতেই ইকবাল হাসানের স্ত্রী আর মেয়ের কথা মনে পরল। জীবনে তো কোন কাজে আসেনি ইলা আর ওর মেয়ে তবে আজ কাজে আসতে পারে। ওদেরকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করে রায়হানের কাছ থেকে বাঁচা যেতে পারে। ভাবল ইকবাল। বলল, “আমার জন্য না হয় আমার স্ত্রী আর মেয়ের জন্য হলেও আমাকে মাফ করো, ছেড়ে দাও আমায়।”

সাদিয়ার এতক্ষণ রায়হানের মুখে ইকাবালের সব কু-কর্মের কথা শুনছিল। কিন্তু ইকবালের শেষ বারের মত বলা কথাটা শুনে কষ্ট লাগছে খুব। “ঠিকই তো বলছেন উনি। সে অনেক খরাপ আমি মানছি তবে উনার পরিবার তো কোন পাপ করেনি। উনাকে আজ আপনি কিছু একটা করে দিলে উনার স্ত্রী বিধবা হবে, মেয়েটা বাবা হারা হবে। তারা ইকবালের দোষের শাস্তি কেন পাবে?” ভেবেই রায়হানের কাছে গেল সাদিয়া। রায়হান মুখের মধ্যে আঘাত করতেই মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আসল। সাদিয়া রায়হান হাত দুটো ধরে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “ছেড়ে দিন উনাকে প্লিজ। একবার ভাবুন, উনার দোষের শাস্তি আপনি উনার পরিবরকে দিতে চলেছেন? তাছাড়া উনাকে মেরে কী আপনি জেলে যেতে চান না? আমাদের সবার কথা একবার ভাবুন। আমার কথাও কি একবার ভাববেন না আপনি? প্লিজ ছেড়ে দিন উনাকে। প্লিজ।”

রায়হান সাদিয়ার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরল। বলল, “এত ভালো কেন তুমি? বলো সাদিয়ার? তোমার সাথে আজ পর্যন্ত যা যা হয়েছে সবকিছুর জন্য এই জানোয়ারটা দায়ি এটা জানার পরও তুমি ওকে ছেড়ে দিতে বলছ কিভাবে? আমি এতোটাও ভালো না সাদিয়া। সরো সামনে থেকে।”

সাদিয়া হাত জোর করে বলল, “প্লিজ।” রায়হান এবার রেগে গেল। ওর হাতটা ঝারি মেরে বলল, “বলেছি সরে যেতে?”

সাদিয়ার উপর এই প্রথম এত খারাপ ব্যাবহার করলো রায়হান। রায়হান এত জোরে চেপে ধরেছে যে, হাতে খুব ব্যাথা করছে সাদিয়ার। কিন্তু সেদিকে কোন খেয়াল নেই রায়হানের।

সড়ো? ” বলে সাদিয়াকে দূরে ঠেলে দিল। সাদিয়া বসে পরল মেঝেতে। রাডটা আবারো হাতে তুলে নিল রায়হান। ইকবালের কাছে গিয়ে ওর বুকে আঘাতের পর আঘাত করে বলল, ” কোন স্ত্রী আর মেরের কথা বলছিস? যে স্ত্রী’কে দুইদিন আগে মেরে রক্তাক্ত করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে এসেছিল সেই স্ত্রীর কথা? নাকি যে ক্ষুদার্ত মেয়েকে বাথরুম বন্দি করে এসেছিলি তার কথা বলছিস? আরে তুই মরে গেলে ওরা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারবে পৃথিবীতে। নতুনভাবে নিজেদের জীবন শুরু করতে পারবে।” বলে থামলো রায়হান। দেখল,

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ইকবালের। রডের বারিতে বুকের হার ভেঙে গেছে তার। রডোর মাথা বুকের সাথে বারি খেয়ে কয়েক জায়গা দিয়ে ছিদ্র হয়ে গেছে বুকের কিছু অংশ। প্রচন্ড বেগে রক্ত বেরিয়ে চলছে সেদিক থেকে। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ইকবাল।

এসব দেখে ভয় পেয়ে গেল সাদিয়া । আঁচলে মুখ লুকালো। তবে শব্দ ঠিকই কানে আসছে। রায়হানের কথা শুনে এবার নিজের ভুল বুঝতে পারল। “যে নিজের বউকে মেরে রক্তাক্ত করে, নিজের ক্ষুদার্থ মেয়েকে মরার জন্য বাথরুমে লক করে রাখে সেই কি-না স্ত্রী আর মেয়ের দোহাই দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইছিল! ঠিকই বলছেন উনি এই জনোয়ার মারা গেলে তারা শান্তিতে বাঁচতে পারবে। আর দেশের আট-পাঁচটা মেয়েও শান্তিতে থাকতে পারবে। এদের মত নরপশু, ধর্ষকদের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। কত শত মেয়ের জীবন নিমিষেই শেষ করে দেয় এরা। আজ সারা দেশের মা-বোন কেউই এদের কারণে সুরক্ষিত না। এদের কঠোরতম শান্তি দেয়া প্রয়োজন।” ভাবলো সাদিয়া তবে মূহুর্তেই মাথায় আসল, ” রায়হান খুনের কারনে যদি জেলে যায়?” আর কিছু মাথায় আনতে চাইছে না সাদিয়া।

রায়হান একবার তাকালো সাদিয়ার দিকে। অফ হোয়াইট শার্টা রক্তে লাল হয়ে গেছে সাদিয়ার। দেখতেই মনে পড়ল সাদিয়া পেটে ব্লেড দিয়ে ইকবালের দেয়া আচরের কথা। ভেবেই ইকবালের পেটের মধ্যে আঘাত করতে লাগল। আঘাতের চোটে পেট ফেটে রক্ত এসে লাগল রায়হানের শারা শরীরে। তবুও রায়হান থাকছে না একের পর এক আঘাত করেই থাকলো ওর পেটে। রডের আঘাতের সাথে পেটের উপরের চামড়া ছিড়ে নাড়িভুড়ি বিরেয়ে আসলো সব। অতিমাত্রায় রক্ত বেরিয়ে তা চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে লাগল। এ যেন এক রক্তের স্রোতধারা। “এতদিন তোর কারণে সকলের চোখের পানির স্রোতধারা বেয়ে নামত এখন তোর রক্তের স্রোত বয়ে চলছে। যেমন কর্ম তেমন ফল। “, বলে রায়হান ইকবালের দিকে তাকালো দেখলো ইকবাল মারা গেছে এতক্ষণে। রায়হান ওর মাথার পাশে দাঁড়ালো, তার খোলা চোখগুলো রায়হানে দিকে কেমন তাকিয়ে আছে। দেখেই রায়হান রড দিয়ে গুঁতো দিয়ে পরপর দুটো চোখ গেলে দিল তার। একটু পিছিয়ে সব রাগের কারণগুলো একত্রিত করে শরীরের সব শক্তি দিয়ে ইকবালের মাথায় বারি মারল। একটা অদ্ভুত শব্দ হলো তারপর ইকবালের মাথার খুলি-টা ভেঙ্গে কিছুটা অংশ ছুটে ছাদ থেকে নীচে পরে গেল।


রডটা হাত থেকে ফেলে দিল রায়হান। আওয়াজে কেঁপে উঠল সাদিয়া। আঁচলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে একবার ইকবালের ভয়ংকর দেহটা দেখলো। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল। রায়হান এগিয়ে আসল সাদিয়ার দিকে। সাদিয়ার দু কাঁধে আলতো হাত রাখতেই ভয় পেয়ে গেল সাদিয়া। রায়হানের রক্তমাখা হাত দুটো সরিয়ে কিছুটা দূরে এসে দাঁড়াল।

রায়হান যা ভয় পাচ্ছিল তাই হলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সাদিয়ার দিকে তাকাতেই দেখল। রায়হানের হাত থেকে ওর হাতে রক্ত লেগেছে বলে তা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘষে উঠালে লাগল। তা দেখে রায়হান নিজের শরীরের দিকে তকাল। দেখল সারা শরীরে রক্তের মাখামাখি। আসেপাশে কোথাওপানি নেই তাই রক্তমাখা শরীরেই সাদিয়ার দিকে এগোল। রায়হানকে এগোতে দেখে সাদিয়া চেঁচিয়ে বলল, ” খবরদার, আমার কাছে আসবেন না আর আমাকে ছোঁবেনও না।”

রায়হান ভয় আরো তিব্র হলো। কাতর স্বরে বলল, “কি বলছো সাদিয়া এসব? কেন বলছো?”
—“এই প্রশ্নের একটা উত্তরই হয়। আপনি একজন খুনি। ”
—“হ্যাঁ আমি একজন খুনি। তবে জানো একটা না এ নিয়ে পাঁচ পাঁচটা খুন করেছি আমি। শুধু তোমার জন্য। কারণ সব-কয়টা তোমার ধর্ষক ছিল।”

পাঁচ পাঁচটা খুনের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল সাদিয়া।এতগুলো খুন রায়হান করতে পারে? নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না সাদিয়া। সব এক দুস্বপ্ন মনে হচ্ছে ঘুম ভাঙলই সব আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সাদিয়া নিজেকে সামলে নিলো কিছুক্ষণ পর বলল, “পাঁচ পাঁচটা খুন? তাও আমার জন্য? আমি বলেছিমাম আপনাকে খুন করতে? বলেছিলাম আমার অপরাধীদের শাস্তি দিতে? উত্তর দিন? উত্তর দিন? ”

বলে রায়হানের বুকে ঘুষি মারতে লাগল। রায়হান ওর হাত দুটো ধরে ফেলল। বলল, “মনে আছে, হস্পিটালে বসে তামাকে কথা দিয়েছিলাম? তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিয়ে বলেছিলাম তোমার অপরাধীদের ধরে নিজ হতে শাস্তি দিব?”

সাদিয়া মনে করে দেখল, রায়হান বলা কথাটা। সত্যি তো। রায়হান সেদিন কথা দিয়েছিল।”

রায়হান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমি মুনাফিক নই সাদিয়া। আমি তেমাকে দেয়া কথা রেখেছি। আর এই খুন শুধু তোমার জন্য করিনি সাদিয়া। আমি আমার ভালোবাসার জন্য করেছি। তাছাড়া দেশের প্রতিটি মা-বোনদের জন্য করেছি। এই খুনের নিউজ খবরে টিভিতে যখন ধর্ষকরা দেখবে তখন ধর্ষণের আগে ওরা এই খুনলোর কথা ভাববে। ধর্ষণের পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা ভাববে। বর্তমান যুবকরা এি নিউজ দেখার পর প্রথম থেকেই নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখবে যাতে ভবিষ্যতে এমন ভুল না করে।”

বলে একটা দীর্ঘশ্বাস নিল রায়হান। রায়হানের প্রতিটি কথা মন দিয়ে শুনলো সাদিয়া। একটা কথাও ফেলে দেবার মতো না। বরং এর ফলেই সমাজের নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। মনে মনে বলল সাদিয়া। রায়হানের কাছে গিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বলল, “এই খুনের কারণে যদি পুলিশ আপনাকে ধরে নিয়ে যায়? আমার যে খুব ভয় করছে! আপনাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবো আমি? আমি যে খুব ভালোবাসি আপনাকে।” বলেই চোখের পানিগুলো ছেড়ে দিল সাদিয়া।

—“আমি বুঝতে পারছি সাদিয়া তোমার মনের অবস্থাটা। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় যে খুবই ভয়ংকর। যা তিলেতিলে শেষ করে দেয় একটা মানুষকে। তবে ভরসা রাখো আমার কিছুই হবে না। আগেরবারের খুনগুলোর মতই পুলিশ আমাকে ধরতে পারবে না। আর তারাও চায় ধর্ষকদের শাস্তি দিতে তাই তো তদন্ত করে বের করছে না খুনিকে। কিন্তু কোনদিন যদি এমন হয় যে, আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে তখন ভেবো তোমার স্বামী কোন অপরাধ নয় ভালো কাজ করেই জেলে যাচ্ছে। ”

সাদিয়া মুখ চেপে ধরলো রায়হানের। বলল, “এমনদিন যেন আল্লাহ কখনো না দেখায়। আমার ভয় লাগছে এখানে আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন।”

রায়হান “হুম”, বলে সাদিয়া হাত দরে এগলো। মুহূর্তে কিছু একটা ভেবে ফিরে আসলো ইকবালের লাশের কাছে। বসে রক্ত দিয়ে লিখতে লাগলো কিছু। সাদিয়া রায়হানের জন্য কিছু দিখতে পারলো না। রায়হান লেখা শেষে উঠে আসতেই সাদিয়া তাকালো সেদিকে দেখলো, লাশের পাশে লিখা, ” আমি ধর্ষক। শত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি আমি। তাই আজ আমার এই পরিণতি। ”


চলবে……
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ৩০

নিঝুম রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে রায়হান। বাড়ির রাস্তা দিয়ে না গিয়ে বা’দিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছি আমারা? জিজ্ঞেস করল সাদিয়া। রায়হান বলল, “এই রক্তমাখা শরীর নিয়ে বাড়ি যাবো? বাড়ি ভর্তি যে লোকজন।”
সাদিয়া আবারও জিজ্ঞেস করল, “হুম, বাড়িতে যাওয়া যাবে না। তাহলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এখন?” রায়হান সান্তভাবে উত্তর দিল। বলল,”ইকবালের বাড়ি।” সাদিয়া বিস্মিত হয়ে তাকালো রায়হানের দিকে। জিজ্ঞেস করল, “ইকবালের বাড়ি?”

রায়হান উত্তরে কিছু বলল না। সাদিয়াও আর জিজ্ঞেস করল না। ব্লেডের কাঁটা জায়গাগুলো খুব বেশি জ্বালাপোড়া করছে তাও সেই কখন থেকে। এখন রায়হান যদি টের পায় ওর জ্বালাপোড়া করছে তাহলে আবার ওকে নিয়েই পরবে। মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বসে থাকবে তখন আবার নতুন কোন বিপদে পরবে। তাই রায়হানকে কিছু বুঝতে দিতে চাইছে না সাদিয়া। একমনে বাহিরে তাকিয়ে আছে আর জ্বালাপোড়া সহ্য করে যাচ্ছে।

সাদিয়া মুখ ফুটে কিছু না বললেও রায়হান ওর পেটের জ্বালাতন-টা ঠিকই বুঝতে পারছে। ব্লেড দিয়ে কোন যায়গা কেঁটে গেলে যে খুব জ্বালাপোড়া করে তা ভালো ভাবেই জানে রায়হান। তাই যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালাচ্ছে।


ইকবালের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামাল রায়হান। গাড়ি থেকে নামতে কেমন অসস্তি হচ্ছে তার। ইকবাল নামের ধর্ষককে খুন করে কোন অপরাধ না করলেও ইলা এবং ওর মেয়ের প্রতি অন্যায় করেছে সে।

ইলা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো গেইটের বাইরে। ভাবলো, “ইকবাল এসেছে হয়তো। আসলে, আবার শুরু হবে ওর উপর অত্যাচার। ইকবাল আসছে বাসায় তার মানে কি রায়হান পারেনি ওর ভালোবাসার মানুষটাকে বাঁচাতে? ” ভাবতেই ভালোভাবে গাড়ির দিকে তাকালো। “এটা তো ইকবালের গাড়ি না।” কথাটা মনেমনে বলতেই দেখল একটা চেনা পরিচিত মুখ। যার সাথে আজই পরিচয় হয়েছে তার। সে আর কেউ না রায়হান। “কিন্তু ওর শরীরে কিসের রং? না-কি রক্ত? তারমানে রায়হান যাওয়ার সময় যা বলে গিয়েছিল তাই করেছে? ইকবালকে মেরে দিয়েছে ও?” ভাবতেই ভয়ে কেঁপে উঠল ইলা।

সাদিয়াকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো রায়হান। গেটে ধাক্কা দিতেই দেখল তা ভিতর থেকে লাগানো। এখন কি করবো? ভাবতেই চিন্তায় পরে গেল রায়হান।

রায়হান সাদিয়াকে কেউ এই অবস্থায় দেখলে ওরা বিপদে পড়তে পারে। ভাবে দৌড়ে সেখানে গিয়ে গেট খুলে দিল ইলা। রায়হান সাদিয়ার হাত ধরে টেনে ভিতরে এনে গেট লাগিয়ে দিল। সবকিছু বুঝতে পেরেও জিজ্ঞেস করল, ” তুমি এখানে? এটা তোমার স্ত্রী? আর তোমাদের এই অবস্থা কেন?”

রায়হান বলল, “ভাইকে ভিতরে নিয়ে যাবে না?”
ইলা মাথা নেড়ে দু’জনকে ভিতরে নিয়ে গেল। রায়হান ভিতরে গিয়েই রায়হান ইলার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। হাত জোর করে বলল, “আমি কোন ধর্ষকের কাছে অপরাধ না করলেও তোমাদের কাছে করেছি। আজ তোমাকে বিধবা আর তোমার মেয়েকে বাবা হারা করেছি আমি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।”

বুকটা কেঁপে উঠল ইলার। তাহলে সত্যি সত্যিই রায়হান মেরে দিয়েছে ইকবালকে। ইকবালের দেয়া অত্যাচার গুলোর কথা ভেবে চোখ জোরা ভিজে আসল। ভাঙা গলার বলল, ” যতই খারাপ হোক সে আমার স্বামী ছিল ভাই।”

ইলা ছলছলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তা দেখে রায়হানেরও কষ্ট হতে লাগল। তবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “এতটা স্বার্থপর হয়ো না তুমি। শুধু নিজের কথাই ভাববে? সমাজের আট-দশটা মেয়ের কথা ভাববে না? ওই ইকবাল যে একের পর এক কত মেয়ের জীবন নষ্ট করে যাচ্ছিল সেটা একবার ভেবে দেখো।”

“আমার মেয়েটা?” অস্ফুটে বলল ইলা। উত্তরে রায়হান বলল, “কোন মেয়ের কথা বলছ? যে ক্ষুধার্থ মেয়েটাকে বাথরুমে আঁটকে রেখে চলে গিয়েছিল ইকবাল? তুমি তো নিজেই বলেছিলে আজ। ভুলে গেলে?”

ইলা আর কোন কথা বলল না। উঠে চলে গেল রুমে। রায়হান সাদিয়া এখনো ডাইনিং রুমে বসে আছে। ইলা এসে ওদের একটা রুমে নিয়ে গেল। রায়হানের হাতে শার্ট-প্যান্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল, “ফ্রেশ হয়ে এটা পরে নিও। ভেবো না আবার এটা ইকবালের। এটা আমার বড় ভাইয়ের জন্য কিনেছিলাম।”

রায়হান মনে মনে বলল,’ ইকবালের হলেই বা কি? এখন তো ইকবালের বাড়িই আছি।’
ইলা সাদিয়ার হাতে থ্রিপিস ধরিয়ে দিয়ে বলল, “তুমি এটা পড়ে নাও। আসছি। ” বলে চলে যেতে পা বাড়ালো সে। রায়হান পেছন থেকে ডেকে বলল, “ফাস্ট এইড বক্স আছে বাসায়। ইলা মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলল। রায়হান তাকে বলল, “একটু এনে দেয়া যাবে?”

ইলা কিছু না বলে ফাস্ট এইড বক্সটা আনতে চলে গেল। রায়হান খুব সাবধানে সাদিয়ার পরনে থাকা শার্টটা খুলে দিল। সাদিয়ার পেটের দিকে তাকিয়ে হাত কাঁপতে লাগল ওর। কতক্ষণ এই যন্ত্রনা সহ্য করে আসছে সাদিয়া। ভাবতেই বুকে চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো রায়হানের। রায়হান অস্ফুটে বলল, “খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? এতক্ষণ এই কষ্ট সহ্য করে কিভাবে ছিলে?”

রায়হান তাকিয়ে আছে সাদিয়া দিকে সাদিয়া অস্ফুটে বলল, “আপনি পাশে থাকলে সব কষ্ট সহ্য করে নিব আমি।”
“আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে দিলে তো কষ্ট সহ্য করবে?”, বলল রায়হান।

ইলা ফিরে এসে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কথা বলতে দেখে আর ডাকে-নি। কিন্তু দুজনের কথাগুলো সবই শুনল সে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আমার জীবনেও যদি আজ এমন কেউ থাকতো! ভেবেই দরজার কড়া নাড়ল। রায়হান ভেজানো দরজা খুলে দিতেই ইলার চোখ পড়ল সাদিয়ার উপর। সাদিয়ার পেটের অবস্থা দেখে দু’হাতে চোখ ঢাকলেন। রায়হান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইলাকে বলল, ” এসব তোমার স্বামী করেছে আপু।”

ইলা একবার রায়হানের দিকে তাকালো কিন্তু মুহূর্তেই চোখ সরিয়ে নিল। স্বামীর করা কুকর্মের কারণে আজ কারো সাথে চোখ তুলে কথা বলার সাহস কিংবা ইচ্ছে কোনটাই নেই। কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে আসলো সে। বিছানা পরে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল। “কেন আজ আমার জীবনে এই পরিণতি? ইকবালের মত একটা জঘন্য লোক যদি সেদিন আমাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব নিয় না যেত তাহলে আমার জীবনটা হয়তো অন্যরকম হতো। আজ আমি কারো সাথে চোখ তুলে কথা বলতে পারছি না কারণ আমি একজন ধর্ষকের বউ। আর কিছুদিন পর যখন সবাই ইকবালের সবকিছু জানতে পারবে তখন সবাই আমাকে আর আমার মেয়েকে নিয়ে হাসি তামাশা করবে। আমাদের বদনাম রটিয়ে বেড়াবে। তখন কি করবো আমি আমার এই ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে?” মনে মনে কথাটা বলে উঠে বসল ইলা। দু’হাতে চোখের পানি মুছে নিজে নিজে বলল, “বলে বেড়াক কিছু আসে যায় না আমাদের। তবুও তো ইকবাল নামের ধর্ষকটার হাত থেকে সমাজের দশ-বারোটা মেয়ে রক্ষা পাবে। যেখানে সমাজের মেয়েদের সুরক্ষিত না সেখানে আমি আমাদের নিজেদের কথা ভাবতে পারি না। তাও আবার সমাজের কিছু নোংরা মানুষদের জন্যে। প্রয়োজনে থাকবো না আমি এই ধর্ষকের দেষে। থাকবো না এই সমাজের নোংরা মানুষদের মাঝে। মেয়েকে নিয়ে চলে যাবো দূর দূরান্তের কোন এক দেশে। তবুও ইকবালের মত ধর্ষকের কুকর্মের কথা জানিয়ে যাব এই সারা দেশকে।

” হে, আল্লাহ তুমি আমার ডাক শুনেছ ওই ইকবাল নামের নরপিশাচ থেকে বহু মেয়ের জীবন তুমও রক্ষা করেছ। আজ আমি শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারছি। ইকবাল নামে মানুষটার হাত থেকে আজ আমি মুক্ত। এখন আমার একমাত্র লক্ষ আমার মেয়েটাকে মানুষের মত মানুষ করা। তুমি আমাকে শক্তি দাও আল্লাহ যেন আমি আমার মেয়েটিকে মানুষ করতে পারি।”


রায়হান খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল। কাঁটা-ছেঁড়ার ক্রিমটা হাতে নিয়ে বলল, ” আমি আস্তে আস্তে লাগিয়ে দিব। ভায় পেয়ো না, ব্যাথা দিব না।”

রায়হানের কথা শুনে সাদিয়া বলল, “ওই নোংরা মানুষটার স্পর্শ লেগে আছে আমার শরীরে আমি আগে গোসল করবো।”

রায়হান বিস্মিত হয়ে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, ক্ষত স্থানে পানি লাগলে জ্বালাতন করবে তো। গোসলের প্রয়োজন নেই। ” করুক তাও এখন গোসল করবো আমি। আপনিও গোসল করে আসুন। শরীরে রক্ত শুকিয়ে যাচ্ছে।”

রায়হান ভাবলো ওর জন্যই হয়তো সাদিয়া এমনটা বলছে তাই বলল, “আমার কথা ভাবতে হবে না তোমাকে। গোসল করা যাবে না এখন তোমার। খুব জ্বলবে ক্ষত স্থান তুমি বোঝতে পারছ না। তাছাড়া তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। রাত কটা বাজে খেয়াল আছে? তবে চাইলে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রশ হতে পারো।”

“না আমি গোসলই করবো। আমার অসস্তি হচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, দম আটকে আসতে চাইছে। গোসল না করলে থাকতে পারবো না।”, বলল সাদিয়া।

রায়হান করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখ দিয়ে শুধু এতটুকুই বলল, ” আমার কথা শুনবে না?”

সাদিয়া আর কিছু বলল না। বাধ্য মেয়ের মত মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। রায়হান বলল, “তুমি এই বাথরুমটা ব্যাবহার করো আমি বাইরের-টাতে যাই। পাঁচ মিনিট লাগবে গোসল সাড়তে।” সাদিয়া “আচ্ছা বলতেই রায়হান দরজার দিকে পা বাড়ালো। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল, সাদিয়ার নমতে যাওয়ার সময় ওর ক্ষত জায়গাগুলো পেটে হওয়ার কারনে তাতে ভাজ পরছে যার কারণে সাদিয়া প্রচন্ড ব্যাথ্যা পাচ্ছে এবং ওর নামতে কষ্ট হচ্ছে।

দৌড়ে সাদিয়া কাছে গিয়ে সাদিয়াকে কোলে তুলে নিল রায়হান। আচমকা রায়হানের এরুপ কাজে কিছুটা অবাক হলো সাদিয়া। রায়হান হেঁটে বাথরুমে নিয়ে গেয়ে সতর্কতার সাথে কোল থেকে নামিয়ে দিল সাদিয়াকে। বলল, ” কষ্ট হচ্ছিল যে তারপরও আমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করলে না?”

“আমি না চাইতেও যে আপনি আমার সব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বুঝে যান তাই আর বলার প্রয়োজন মনে করি না বুঝলেন?”, বলল সাদিয়া। রায়হান ওর কাথায় হেসে ফেলল। বলল, ” তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে বের হও নয়তো ঠান্ডা লাগবে আমি যাবো আার আসবো।” বলে চলে গেল রায়হান। সাদিয়া রায়হানের কথা ভেবে হাসতে লাগল।

রায়হান যত তাড়াতাড়ি পারল গোসল করার চেষ্টা করল কিন্তু শরীরে রক্ত শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সেগুলো ঘষে ঘষে তুলতে একটু সময় লেগে গেল। ভেজা জামাকাপড় পাল্টে ইলার দেয়া শার্ট জিন্স প্যান্ট পরে সাদিয়ার রুমের দিকে চলল।

সাদিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসল। জ্বালাপোড়া আর সহ্য করতে না পরে ক্রিম-টা হাতে নিত। ক্ষত স্থানগুলোতে লাগাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু ক্ষত জায়গাগুলোতে ওর হাতে স্পর্শ লাগলেই মনে হয় আত্না বেরিয়ে যায় এমন অবস্থা তাই আর ক্রিম লাগিয়ে উঠতে পারল না।

রায়হান সাদিয়া অবস্থা দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসল। কাঁধ থেকে তোয়ালিয়াটা ফেলে ওর হাত থেকে ক্রিমটা নিয়ে বলল, “মাফ করে দাও সাদিয়া আমার আসতে দেড়ি হয়ে গেল। খুব কষ্ট হচ্ছে? আমি তখন বলেছিলাম তোমায় ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে তারপর গোসলে যাই তুমি শুনলে না আমার কথা। আমারই দোষ তোমার কথা শুনে গোসলে যাওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে।” বলে নিজের পায়ে আঘাত করল রায়হান।

সাদিয়া কিছুটা রেগে তাকাল রায়হানের দিকে। রায়হান নিশ্চুপ হয়ে খুব ধীরে ধীরে সাদিয়ার পেটে ক্রিম লাগিয়ে দিতে লাগল।
ক্রিম লাগানো শেষ হতেই সাদিয়া বলে উঠল, “ছাঁদে নিয়ে যাবেন?” রায়হান আড়চোখে সাদিয়ার দিকে তাকালো বলল, “একটু পর তো বাসায় চলে যাবো। এখন ছাঁদে যাবে? আচ্ছা চলো।” বলে রায়হান বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। সাদিয়া ওর কাঁটা স্থানে তাকিয়ে রায়হানের দিকে তাকাতেই রায়হান হাসলো। হেসে সাদিয়াকে কোলে তুলে নিল। সাদিয়াকে কোলে নিয়ে দোতলা বেয়ে উপড়ে উঠতে রায়হানের তেমন কষ্ট হলো না। উপড়ে উঠতেই ওদের নাকে কিছু একটা পোড়া গন্ধ আসলো। ছাঁদের এক কোনে তাকাতেই দুজন দেখল, ইলা কি যেন পোড়াচ্ছে। রায়হান সাদিয়াকে কোলে নিয়েই সেদিকে গেল। ইলা ওদের দুজনকে দেখে ভুত দেখার মত ভয় পেল। রায়হান ওর রক্তমাখা শার্ট-প্যান্ট জলন্ত অবস্থায় দেখে বলল, “এগুলা তো আমার।”

—“হুম, এগুলো পুড়িয়ে দিচ্ছি যাতে তোমাদের বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না থাকে। আমি চাই না আমার স্বামী যে পাপ এতদিন করে এসেছে তার শাস্তি তোমরা পাও।”

সাদিয়া রায়হানকে কখন থেকে ইশারায় বলার চেষ্টা করছে ওকে কোল থেকে নামানোর জন্য। কিন্তু রায়হান একবারও ওর দিকে তাকায়নি বিধায় বাধ্য হয়ে রায়হানের বুকে চিমটি কাঁটল। রায়হান “উফফ” বলে একটা শব্দ করতেই সাদিয়া রায়হানকে ইশারা দিয়ে বলল,”আমাকে নামান উনি কি ভাবছে।” রায়হান বুঝতে পেরে সাদিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে দিল।

রায়হানের চেঁচিয়ে উঠা আর সাদিয়া ইশারা দেখে ইলা একটু ইতস্তত বোধ করতে লাগল। তা দেখে রায়হান শান্তভাবেই বলল, “ওর হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল তো তাই কোলে করে নিয়ে আসা।” ইলা “হুম” বলে আবার কাপড় পোড়ানোয় মনযোগ দিল। ভাবতে লাগল, “স্বামী স্ত্রী এর মানেই তো সবসময় একে অপরের পাশে থাকা। সকল বিপদাপদে একে অপরেকে সাহায্য করা। এই কথাগুলো তো ভুলেই গিয়েছিলাম আজ তোমাদের দুজনকে দেখে মনে পরে গেল। তোমার খুব সৌভাগ্যবান যে একে অপরের মত জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছ। একটা ছেলে কতটা ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটা দুঃখ মোচন করতে একটা মানুষকে খুন পর্যন্ত করতে পারে? একটা মেয়ে কতটা ভালোবাসলে তার স্বামী তার জন্য সবকিছু করতে পারে? সত্যি তোমাদের দেখে খুব ভালো লাগে। তোমাদের এই ভালোবাসা যেন একে অপরের জন্য সারাজীবন এমনই থাকে। তোমাদের এই #পবিত্র_সম্পর্ক যেন আরো গভীর থেকে গভীরতর হয়। তোমাদের #পবিত্র_সম্পর্ক যেন এমনি পবিত্র থাকে সারাজীবন।” ভাবতেই নিজের স্বামীর কথা মনে পড়ল ইলার। চোখ জোরা ভিজে আসল মুহূর্তেই।

রায়হানের কাছে একটা ফোনকল আসলো। রিসিভার চেপে ফোন কানে ঠেকাতেই বাড়ির লোকজন একেরপর এক বকা দিতে লাগল। আজ ওদের অনুষ্ঠান কিন্তু ওরাই শেষপর্যন্ত ছিল না। অতিথিরা অনেকে অনেক কথা শুনিয়ে চলে গেছে। হৃদয় বড় ভাইকে না দেখে মুখ ভাড় করে বসে আছে হৃদয়। মা-বাবার অবর্তমানে যাকে বোনের মর্যাদা দিয়ে এসেছে সেই সাদিয়াকে না দেখে বেশ কিছুক্ষণ কান্না করেছে মিম। বাড়ির সবাই চিন্তিত ওদের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়াতে। সবকিছু শুনে রায়হান সাদিয়াকে সবটা খুলে বলল। এক্ষুণি বাড়ি যাওয়া উচিৎ ভেবে রায়হান ইলার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার উদ্দেশ্য করে বলল, “আমাদের এক্ষুনি বাড়িতে যেতে হবে আপু। ”

ইলা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল, ” এক্ষুণি যেতে হবে? আজকে রাতটা বোনের বাসায় থেকে গেলে হতো না। ”

“ভাই যখন ডেকেছ আর বোনের মর্যাদা যেহেতু দিয়েছি আসা যাওয়া চলতেই থাকবে এখন থেকে। আর কাল সকালে ইকবাল হাসানের খবরটাও হয়তো জানাজানি হয়ে যাবে আমরা তোমার অপরিচিত হয়ে এখানে থাকাটা সন্দেহজনক মনে হবে পুলিশের কাছে। তারচেয়ে ভালো হবে আমরা চলেই যাই।”

“হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।”

“আমার মোবাইল নাম্বার এটা। যে কোন প্রয়োজন একটা ফোনকল দিবে। এই ভাইটা সবসময় তোমার পাশে থাকবে। আজ তোমার কারণে আমার সাদিয়াকে ফিরিয়ে আনতে পরেছি। আমি তোমার কাছে চিরো কৃতজ্ঞ।”

“কৃতজ্ঞতা থেকেই এসব শুধু?”, ইলা জিজ্ঞেস করল।

“না না কৃতজ্ঞতা থেকে হতে যাবে কেন। তুমি আমাকে ভাই ডেকেছ না? আমার মা বাবারও কোন মেয়ে নেই ভাবেছিলাম আজই তোমাকে নিয়ে গিয়ে বাবা মায়ের মেয়ের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিব কিন্তু কাল সব জানাজানির পর তোমাকে বাসায় না পেলে পুলিশ তোমাকেই সন্দেহ করে বসবে বিধায় তোমাকে আজ আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি না। তবে আরেকদিন এসে ঠিকই নিয়ে যাবো তোমাকে আর আমার ভাগ্নীকে।”

রায়হানের কথা শুনে কেঁদে দিল ইলা। রায়হান বোনকে সান্ত্বনা দিলো। ইলা সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার ভাইটা খুব ভালোবাসে তোমাকে কখনো ওকে কষ্ট দিও না। আর যদি শুনি দিয়েছ তাহলে খবর আছে। ” বলে সাদিয়াকে জরিয়ে ধরল।

সাদিয়া বলল দোয়স করবেন আপু আমাদের জন্য। ইলা বলল, “দোয়া করি তোমাদের #পবিত্র_#সম্পর্ক যে অটুট থাকে সবসময়। যে সম্পর্কে পবিত্রতা রয়েছে তা ভাঙবার নয়।”

রায়হান সাদিয়া এবার বিদায় নিয়ে চলে গেল ইলার কাছ থেকে।


আজ দশ দিন পার হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছে ওদের মধ্য। সাদিয়া আর মিম টেবিলে খাবার গুছাচ্ছে। রায়হান আর হৃদয় খেয়েদেয়ে অফিসে যাবে এখন। আমজাদ চৌধুরী আর রেহানা বেগম টেবিলে বসেছেন ছেলেরা আসলেই একসাথে বসবেন তারা।

এদিকে রায়হান অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। ঘড়িটা হাতে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে লাগল। হঠাৎ মিমের চিৎকার শুনে দৌড়ে ডাইনিং রুমে যেতেই দেখল, সাদিয়া ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রেহানা বেগম ওর মাথাটা কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here