পবিত্র সম্পর্ক পর্ব ২৭+২৮

#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্র : ২৭

নামাজের বিছানায় বসে ইলা স্বামীর মৃত্যু কামনা করলো। কাল রাতে স্বামী ইকবাল হাসানের লাথি খাওয়ার কারণে তলপেটে এখনো প্রচুর ব্যাথা করছে তার। বেল্টের বারিতে শারা শরীর নীল হয়ে আছে। কিছু কিছু জায়গায় দিয়ে কেটে রক্ত ও বের হয়েছে।

অতিরিক্ত ব্যাথা নিয়ে কোনমতে ফজরের নামাজ পড়ল সে। নামাজ শেষে মোনজাতে বসে চোখের পানিগুলো ছেড়ে দিল। দু’হাত বাড়িয়ে নিশ্বব্দে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহ তায়ালার কাছে বলল, “হে, আল্লাহ। কি পাপ করেছি আমি যার শাস্তি তুমি এভাবে আমাকে দিচ্ছো। আমার আর সহ্য হচ্ছে না উনার প্রতিদিনের এই অত্যাচার। আমি তো তোমার কাছে তেমন কিছুই চাইনি সুধু চেয়েছিলাম স্বামী সন্তান নিয়ে একটা সুখের সংসার। কিন্তু পেলাম কি? হে, আল্লাহ উনি যদি মারাও যেতো তাহলে আমি আমার মেয়েটা-কে নিয়ে একা সুন্দরভাবে সারজীবন কাঁটিয়ে দিতে পারতাম। তাহলে আর যাই হোক বাবা মায়ের বাসায় পরে থকে লোকের কথা তো শুনতে হতো না। কিন্তু উনি তো আর আমাকে না মেরে নিজে মরবেন না। আল্লাহ তুমি এমন কিছু একটা করতে পারো না যে, হঠাৎ শুনতে হলো উনি গাড়ি এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে বা নারী পাচারকারী প্রমাণিত হওয়ার পর উনাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলেছে। এমনটা হলে-ও আমি শান্তিতে বাঁচতে পারতাম আল্লাহ। আজ আমার দোয়া তুমি কবুল না করো, শত নিরীহ মেয়ের দোয়া তো তুমি কবুল করব? ”

মোনাজাতের মধ্যেই পিছন থেকে তার ছোট্ট মেয়েটি ডাক দিয়ে বলল, “মা ওমা, আমার খুব খিদে পাইছে।”

মোনাজাত শেষ করে মেয়ের দিকে তাকাতেই মনে পরল তার মেয়েটি তো কাল রাতেও কিছু খেতে পারেনি ওই পশু টার কারণে। মেয়েটির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে তার এখন। কোন সময় রান্না করবে তারপর মেয়ের মুখে খাবার তুলনে সে? মেয়ে যে এখন খিদেতে কাঁদছে।


ইকবাল হাসান বলল, বউকে বাঁচাতে হলে এখুনি রুমে যা দরজাটা বন্ধ করে সিলিং এ দড়ি বেঁধে ফাঁসিতে ঝুলে পর। তোর মৃত্যুর খবর শোনার আগ পর্যন্ত ওকে ছাড়ছি না।” ফোন কেটে গেল।

নিরুপায় রায়হান ইকবালের কথা মত ফাঁসিতে ঝুলে পরল। ইকবাল হাসানের কাছে ফোন আসতেই খুশিতে সে বারান্দা থেকে রুম রুমে ঢুকল। শার্ট খুলে ছুড়ে মারল বেঁধে রাখা সাদিয়ার মুখের উপর। প্যান্টের বেল্ট খুলে সমনে এগলো।

আর কিছু দেখতে পেল না রায়হান। ঝাপসা হয়ে গেল সব। “সাদিয়া” বলে চেঁচিয়ে ঘুমের মধ্য থেকে উঠে বসল। রায়হানের চেঁচানো শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠলো সাদিয়া। রায়হানের কাধে হাত রেখে বলল, “কি হয়েছে? চেঁচালেন যে? ”

সাদিয়া আর কিছু বলার সুযোগ পেল না রায়হান জরিয়ে ধরল ওকে। মনে মনে আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করলো এমন দিন যেন ওদের জীবনে কখনো না আসে।
কিন্তু এমন স্বপ্ন কেন আসলো হঠাৎ?

সাদিয়া কিছু একটা আন্দাজ করতে পরে জিজ্ঞেস করল, “কোন খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন কোন?” রায়হান ওকে জরিয়ে ধরে রেখেই বলল, “হুম।”

সাদিয়া রায়হানের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল, “খারাপ স্বপ্নগুলো আমাদের শয়তান দেখায় আর খারাপ স্বপ্ন দেখলে বাঁদিক তিনবার থুথু ফেলতে হয়। আপনি এটা জানেন নিশ্চিই।”
রায়হান “হুম” বলে ঘড়ির দিকে তাকাল। নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আজান হবে।

দুজনের গোসল সেরে পাক-পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করে নিল। নামাজের বিছানায় বসে দুজন আল্লাহর কাছে একটা সুস্থ সন্তান চাইলো।” নামাজ শেষে রায়হান ঘুমাতে চলে গেল। সাদিয়া কোরআন শরিফ নিয়ে, পাঠ করতে লাগল।


রায়হান সকাল ন’টায় ঘুম থেকে উঠলো। বসে চোখ ডলতে ডলতে সাদিয়াকে একবার ডাকল। সাদিয়ার সারা না পেয়ে এবার চোখ মেলে তাকাল কিন্তু সারা ঘরের কোথাও সাদিয়াকে দেখতে পেল না। মনে পরল সকলের সেই দুস্বপ্নের কথা। চিন্তিত হয়ে বাথরুম বারান্দায় খুঁজলো। কিন্তু না পেয়ে ঘর থেকে বেরোতেই শুনল ড্রয়িং রুম থেকে সাদিয়া সহ সবার গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে এসে ফ্রেশ হলো। ওয়ারড্রব থেকে একটা টি-শার্ট নিয়ে। সেটা পরতে পরতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসল। ড্রয়িং রুমে রায়হানকে দেখেই হৃদয় বলে উঠল, “কি-রে ভাইয়া এতক্ষণে ঘুম ভাঙলো তোর? রাতে ঘুমাস-নি? নাকি রাত্রে কোথাও মুরগী চুরি করতে গিয়েছিলি যে কারণে সকালে এভাবে পরে পরে ঘুমাচ্ছিলি?”

হৃদয়ের কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠল। “সবসময় তোর ফাজলামো?”, রায়হান বললো। উত্তরে হৃদয় হাসল। বলল, ” তো কি করবো? সকালে এতবার করে ডাকলাম তোকে কিন্তু তুই তো উঠবি দূরে থাক একটু সারাও দিলি না।”

“তোর থেকে কমই ঘুমাই। দুপুর একটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকিস আবার আমাকে নিয়ে পরেছিস। আজ বিয়ের আনন্দে কেমনে কেমনে জানি উঠে গেছিস।” বলল রায়হান। রায়হানের কথা শুনে আবারও হাসলো সবাই। আমজাদ চৌধুরী বড় ছেলের সাপোর্ট নিয়ে বলল, “একদম ঠিক বলেছিস।”

বাবার কথায় রায়হান বলল, “বাবা তোমার ছেলে সবসময় ঠিকই বলে।” আমজাদ চৌধুরী হেসে বলল, “বলতে হবে না ছেলে টা কার?”
বাবার কথা শুনে রায়হান হাসল। হৃদয় ভ্রু কুঁচকে তাকালো বাবা-ভাইয়ের দিকে।

তাদের বাপ ছেলের কথা শেষ হতেই রেহানা বেগম ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, “বাবা তুই এখন নাস্তা করবি? আয় আমি খাবার গরম করে দিচ্ছি?”
রায়হান মায়ের কথার উত্তরে বলল, “না মা। এখন নাস্তা করতে ইচ্ছে করছে না। তুমি, বাবা, তোমরা সবাই নাস্তা করেছ?”
রেহানা বেগমের বলল, “আমি আর তোর বাবা নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে নিয়েছি। মিম আর হৃদয় করেনি। ওদের নাকি খিদে নেই কারো। আর তোর বউ তোকে রেখে খাবে? ”

“মা, একটু পর একসাথে খেয়ে নেব আমরা। চিন্তা করো না “, বলে রায়হান সাদিয়ার পাশে গিয়ে বসল। ওর হাতে খাতা কলম দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি করছো?”
সাদিয়া উত্তরে বলল, “বাবার কথা মত যাদেরর যাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে, যাদের দেয়া বাকি আছে, যারা যারা বিয়েতে আসবে এইসবের লিস্ট করছি।”

সাদিয়ার কথা সম্পূর্ণ শেষ হতেই হৃদয় অনলাইনের কিছু পাঞ্জাবি দেখে রায়হানকে দেখানোর জন্য বলে উঠল, “ভাইয়া, সারাক্ষণ কি বউয়ের পাশে বসেই থাকবি নাকি? এদিকে আয়। দেখ তো এখানকার , কোন পাঞ্জাবিটা ভালো লাগে।”

বলেই মোবাইলটা বারিয়ে ধরল। বাবা-মায়ের সামনে হৃদয়ের এমন কথা বলাতে সাদিয়া লজ্জা পেয়ে গেল। রায়হান এগিয়ে গিয়ে হৃদয়ের পেটে আস্তে করে একটা ঘুষি মেরে বলল, “বাবা-মাকে কি চোখে দেখছিস না? দু’দিন পর বিয়ে করবি কোথায় কি বলতে হয় সেটাও এখন শিখিয়ে দিতে হবে?”

হৃদয় হেসে বলল, “শিখাতে হবে না বিয়ে পর বড় হয়ে যাবো না এমনিতেই শিখে যাবো সব।” রায়হান হৃদয় পিঠে চাপর মেরে হাসলো। সাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “সাদিয়া এক কাপ চা বানিয়ে দিতে পারবে? ”

সাদিয়া বাবার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তিনি বলল, “আমি লিস্টের এ কয়জনকে ফোনকলে দাওয়াত দিতে থাকি তুই যা মা। পারলে আমার জন্যও এক কাপ নিয়ে আসিস। ”

সাদিয়া বাবাকে “আচ্ছা” বলে আর কেউ ‘চা’ খাবে কি-না জিজ্ঞেস করে রান্নাঘরে চলে গেল। সাদিয়া রান্নাঘরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রায়হানও রান্নাঘরে গিয়ে পৌঁছাল।

সিং এ সাদিকে চায়ের কাপ ধোতে দেখে রায়হান। চুপিচুপি সাদিয়ার কাছে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে। সাদিয়া ভয়ে কেঁপে উঠে, চিৎকার করতে যাবে তখনি রায়হান মুখ চেপে ধরে বলে, ” আরে বাবা আমি তো?”

সাদিয়া বলে, “ভয় পায়িয়ে দিচ্ছিলেন তো।” রায়হান হাসলো। বলল, পায়িয়ে দিচ্ছিলাম মানে? তুমি তো ভায় পেয়েছোই। তবে আমার ভয় দেখানোর কোন ইচ্ছে ছিল না।”

সাদিয়া কিছু একটা ভেবে বলল, “আমাকে ছাড়ুন। যে কেউ এসে পরতে পারে। ”
—” আসুক তাতে কী?”
—“আমাদের এভাবে দেখলে কি ভাববে?”
—“যা ভাবার ভাববে। আমার বউয়ের সাথে আমি রোমান্স করো তাতে কার কি?”

সাদিয়া ঘুড়ে দাঁড়াল। রায়হানকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল, “ছাড়ুন বলছি প্লিজ।”
সাদিয়ার কথা শুনে রায়হান এক হাতে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। অপর হতে ওর মাথায় হাত দিয়ে কাছে নিয়ে আসল। ঠোঁট জোড়া সাদিয়া ঠোঁটে স্পর্শ করতেই কেপে উঠল সাদিয়া। নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো কিন্তু রায়হান নাছোড় বান্দা কিছুই ছাড়ছে না। সাদিয়ার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রায়হানের ছাড়ার কোন নাম নেই। রায়হান হাতের বাঁধন আলগা করতেই সাদিয়া রায়হানকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিল। রায়হান দেখলো সাদিয়া হাঁপাচ্ছে। তা দেখে বলল, “হাঁপালে চলবে? এখন থেকে রোজ মিনিমাম একবার হলেও এমন একটা কিস হবে তাছাড়া দুই, তিন, চার, পাঁচ আবার দশের অধিকও হতে পারে। ”

সাদিয়া চোখ বড় বড় করে তাকাল রায়হানের দিকে। রায়হান হেসে বলল, “এতদিন কিছু করিনি দেখে আবার আমাকে আন-রোমান্টিক ভাবো না। আর ভাবলেও ভাবা বাদ দাও।” বলে রায়হান ওর গালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে চলে গেল।

সাদিয়া যেন আকাশ থেকে পরল এবার, ” কি বলে গেল উনি?” ভাবতে লাগল সাদিয়া। চুলোর মধ্যে চা পরার শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসল। দ্রুত চা নিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে চলল সাদিয়া। যেতেই শুনল, আমজাদ চৌধুরী ছোট ছেলেকে বলেছে, “হৃদয় তোর অফিসের বস ইকবাল হাসানকে দাওয়াত দিয়েছি।”

শুনেই মাথাটা নষ্ট হয়ে গেল রায়হানের। জিজ্ঞেস করল, “ইকবাল হাসানকে কেন?”

পেছন থেকে সাদিয়া বলল, “আমি বলেছিলাম বাবাকে তাকে যেন ইনভাইট করে। কাল রাতে আপনার সেই ভুল বোঝাবুঝির কারণে। ”

আমজাদ চৌধুরী বলল, “কিসে ভুল বোঝাবুঝি?”
রায়হান কিছু বলল না রাগে, দুঃখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।



আজ দুইদিন পেয়িছে গেছে। আজ ওদের বিয়ে। আজ চারটা ভালোবাসার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। মিম আর হৃদয় সারাজীবনের জন্য একে অপরকে নিজের করে পাচ্ছে। রায়হান এবং সাদিয়ার পূরণ না হওয়া ছোট্ট একটা স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। সারাবাড়ি হৈ-হুল্লোড়ে মেতে আছে। আত্নীয় পরিজন সবাই একে একে আসছে।

সাদিয়া আজ খুব খুশি আজ না চাইতেও সব পেয়ে গেছে। সৎ মা, যে মা কোনদিন দুচোখ দেখতে পরত না সে আজ দুইদিন ধরে মেয়ে বাড়িতে এসে পরে আছে। মেয়ের কি লাগবে কি না লাগবে সব খেয়াল রাখছে। বাবা যে কি-না পৃথিবীর সবচাইতে বেশি ওকে ভালোবাসে সে আজ দাঁড়িয়ে থেকে ওর বিয়ে দিবে। ছোট বোন যে কি-না ওর খাবার, জামাকাপড় থেকে শুরু করে সুখ পর্যন্ত কেড়ে নিত সে আজ বোনেকে একবুক ভালোবাসা দিতে এসেছে।


রায়হান আর হৃদয় একসাথে বসে আছে নিচতলায় । সাদিয়া আর মিম উপরতলায়, সেখেই প্রায় সবাই আছে। এখানে রায়হান, হৃদয় আর চার পাঁচজন ছাড়া কেউই নেই। একা একা বসে থাকতে বোরিং লাগছে রায়হানের। হৃদয় সেই কখন থেকে কথা বলে যাচ্ছে মিমের সাথে। কিন্তু সাদিয়া নিজের সাথে করে মোবাইল না নিয়ে যাওয়ার কারণে রায়হান কথা বলতে পারছে না। সাদিয়াকে একটু দেখার জন্য মনটা কেমন ছটফট করছে।বিয়ের কনে সাঁজে কেমন দেখতে লাগছে সাদিয়াকে? নিশ্চই খুব সুন্দর লাগছে। ভাবছে রায়হান।

হঠাৎ কিছু একটা ভেবে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল ওদের হলুদের ছবি। এইটা ছবিতে দু’জন একসাথে বসে আছে। হলুদ পাঞ্জাবিতে রায়হান আর হলুদ লেহেঙ্গায় সাদিয়া। সাদিয়ার কথায় জীবনে প্রথম হলুদ পাঞ্জাবি পরেছিল রায়হান। হলুদ লেহেঙ্গায় সাদিয়াকে খুব সুন্দর লাগছিল কাল। লাল টুকটুকে গোলাপ ফুলের গহনা ওকে খুব বেশি মানিয়েছিল। ওর সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বেরিয়ে দিয়েছিল। সাদিয়ার হাসি ভরা মুখটার দেখে রায়হান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল, “সারাজীবন যেন এবাবেই সাদিয়ার মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতে পারি।”

এমন সময় ইকবাল হাসান আসলো। রায়হানের দিকে হাতটা বারিয়ে দিয়ে বলল, “কংগ্রাচুলেশনস মি. রায়হান।” রায়হান লোকজেনের মাঝে থাকার নিজেও হাতটা বারিয়ে ধরল।


কাজি সাহেব বিয়ে পরানো শেষ করলো হৃদয় আর মিমের। সাদিয়া মিমের পাশে বসা। হঠাৎ একটা পিচ্ছি এসে ডাকল সাদিয়াকে। বলল, “রায়হান নামে কেউ একজন নীচতলায় ডাকছে আপনাকে। সাদিয়া মনে মনে ভাবলো, “এখন তো সবাই উপরতলায় নীচতলায় তো কেউ নেই উনি ওইখানে কি করে এখন? আমাকেই বা ডাকছে কেন?” চারিদিকে তাকালো সাদিয়া কিন্তু রায়হানকে দেখতে পেল না কোথাও। বাধ্য হয়ে নীচে যেতে হলো।

নীচে নেমে সাদিয়ার কাউকে দেখতে পেল না। রুমে গিয়ে মোবাইল নিল রায়হানের ফোনে কল দিল রুম থেকে বেরিয়ে আসল। আসতেই ইকবাল হাসানকে রুমের বাইরে দেখতে পেল। ইকবাল হাসান ওকে দেখে হাসলো। সাদিয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই সাদিয়া বলল, -“আপনি এখানে কেন ভাইয়া? উপরে চলুন।”

ইকবাল হাসান শব্দ করে হাসলো বলল, “আমি তোর ভাইয়া না। আমি তোর ধর্ষক।” কথাটা শুনে প্রচন্ড রকমের ভয় পেল সাদিয়া মূহুর্তে মনে হলো সে ওইদিনের মত মজা করছে।

“ভাইয়া আপনি আজও ওইদিনের মত মজা করছেন? উপরে গেলে আসুন। নয়তো আমি গেলাম।”

“যাচ্ছিস কোথায়?” বলে সাদিয়াকে নিজের কাছে টেনে নিল সে। সাদিয়া বলল, “কি অসভ্যতামো হচ্ছে ছাড়ুন বলছি। “, বলে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। দৌড়ে দেয়ার চেষ্টা করল কিন্তু ভারি শাড়ী আর গহনার কারণে পারল না। ইকবাল হাসান এক হাতে ওর মুখ চেপে ধরলো। আরেক হাতে সাদিয়া এক হাত মুচড়ে ধরল। সাদিয়া ব্যাথায় কাঁদতে লাগল। ইকবাল ওকে টেনে বাইরে আনলো। দেখল এতক্ষণে সাদিয়া জ্ঞান হারিয়েছে। গাড়িতে তুলে গাড়ি স্টার্ট দিল সে।

সাদিয়ার ফোনকল আসতেই রিসিভ করলো রায়হান কিন্তু সাদিয়ার কোন কথা শুনতে পেল না। তাই ফোন দেওয়ার কারণ জানতে খুজতে লাগল সাদিয়াকে।



বাঁধা অবস্থায় জ্ঞানহীন ভাবে খাটে শুয়ে আছে সাদিয়া। ইকবাল হাসান একে একে শরীরের সব গহনা খুলছে। সাদিয়ার জ্ঞান ফিরতেই ইকবাল হাসানকে দেখতে পেয়ে চেঁচাতে লাগল কিন্তু মুখ বেঁধে রাখার কারণে গোঙানির শব্দ ছারা কোন শব্দ হলো না। ইমরান হাসান সাদিয়াকে দেখে হাসলো। ওর গালে দুটো চড় মেরে খাট থেকে নামল। শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলল মেঝেতে।

চলবে……
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ২৮

বাঁধা অবস্থায় জ্ঞানহীন ভাবে খাটে শুয়ে আছে সাদিয়া। ইকবাল হাসান একে একে শরীরের সব গহনা খুলছে। সাদিয়ার জ্ঞান ফিরতেই ইকবাল হাসানকে দেখতে পেয়ে চেঁচাতে লাগল কিন্তু মুখ বেঁধে রাখার কারণে গোঙানির শব্দ ছারা কোন শব্দ হলো না। ইমরান হাসান সাদিয়াকে দেখে হাসলো। ওর গালে দুটো চড় মেরে খাট থেকে নামল। শার্টটা খুলে ছুড়ে ফেলল মেঝেতে।

সাদিয়া প্রচন্ড ভয়ে দু’চোখ বন্ধ করল। মুখ বাঁধা থাকার কারণে চিৎকারও দিতে পারছে না। হাত-পা এমনভাবে বেঁধেছে শয়তানটা মনে হচ্ছে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। নিরুপায় সাদিয়া কেবল আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল, “হে আল্লাহ তুমি এই বিপদ থেকে আমাকে রক্ষা করো। আর কতবার এমনটা হবে আমার সাথে? এর জন্যই কি তুমি আমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলে? এরচেয়ে ভালো তুমি আমাকে এই পৃথিবী থেকে নিয়ে যাও। আমার আর সহ্য হচ্ছে না এই নোংরামি। আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে থাকি, রোজা রেখে থাকি, তোমার বীধাণমতো চলে থাকি তাহলে তুমি আমাকে এই বিপদের হাত থেকে রক্ষা করো। ”

সাদিয়া কাঁদছে। তা দেখে, ইকবাল হাসান হাসলো। ওর পাশে এসে বসলো। বলল, “আরে আরে, আমি এক্ষুনি কিছু করছি না। খুব গরম লাগছে তো তাই শার্ট খুলেছি আরকি। ভয় পাচ্ছ কেন? আসলে আমি তো আগে তোমাকে খুব কষ্ট দিব তবে ভয় নেই মেরে ফেলবো না। তিলেতিলে শেষ করবো তোমায়। সারাদিন হবে তোমার সাথে শারীরিক নির্যাতন আর রাতে যৌন নির্যাতন। “বলে হা হা হা করে হাসল ইকবাল হাসান। কিছু একটা ভেবে বলল, “নির্যাতনের কথাটা থেকেই মনে পড়ল ব্লেড-টা যেন কোথায় রেখেছিলাম?”

বলে খাট থেকে উঠেঁ দাঁড়ালো। খুঁজতেই ব্লেড পেয়ে গেল। “এইতো পেয়ে গেছি।”, বলে আবার সাদিয়ার পাশে এসে বসলো। ডান হাতে একটানে সাদিয়ার বুকের উপর থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে ফেলল। সাদিয়ার ফর্সা কোমরের দিকে তাকিয়ে বলল, ” বাহ্ তুই তো সেই লেভেলের হ্ট মাইরি। সেইদিন রাতের অন্ধকারে তাই তেমন ভালোভাবে দেখা হয়নি তোকে। উফফ ইচ্ছে তো করছে এখুনি….” বলেই সাদিয়ার নাভীর মধ্যে ঠোঁট স্পর্শ করল। সাদিয়া বাঁধা অবস্থায় থেকেই ছটফট করতে লাগল। ইকবাল হাসান রেগে ওর গালে কষিয়ে চড় মারল।


সাদিয়া একবার ফোনকল দিয়েছিল রায়হানকে। তারপর থেকে রায়হান খুঁজে চলেছে ওকে কিন্তু কোথাও না পেয়ে ফোনকল দিল সাদিয়াকে তবে সাদিয়ার ফোনে ঢুকছে না। রায়হান এবার কিছুটা চিন্তিত হয়েই খুঁজতে লাগল সাদিয়াকে। “সাদিয়া এখানে কোথাও নেই! আর ও ফোনই বা কেন দিয়েছিল? এখনই বা ফোন রিসিভ করছে না কেন?”
ভেবেই নিচতলায় চলে গেল সে।

রুমে ঘুকতে যাবে ঠিক তখনি কিছুতে স্লিপ খেয়ে মেঝেতে পরে যাচ্ছিল প্রায়। রায়হান নীচে তাকাতেই দেখল একটা মোবাইল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফ্লাস অন করতেই দেখল ওর নিজেরই একটা ছবি। “এটা তো সাদিয়ার মোবাইল! এটা এখানে পরে আছে কেন? ” ভাবতেই চারিদিক অন্ধকার হয়ে উঠল রায়হানের তার মানে কি সাদিয়াকে কেউ….। আর ভাবতে পারছে না রায়হান। তবুও নিচতলাটা একবার খুঁজে দেখল রায়হান কিন্তু সাদিয়া কোথাও নেই। আলমিরা থেকে ম্যানি বেগ বের করে বেরিয়ে আসল রুম থেকে মূহুর্তেই মনে পড়ল ইকবাল হাসানের কথা। বাইরে বেরোতেই দেখল ইকবাল হাসানের কালো মাইক্রো গাড়িটা কোথাও নেই। বুঝতে বাকি রইলো না কিছু।

মনে মনে ভেবে নিল ইকবালের বাড়ির কাউকে তুলে নিয়ে ইকবালকে ভয় দেখালে নিশ্চয়ই সে সাদিয়াকে রায়হানের কাছে ফিরিয়ে দেবে। যেই ভাবা সেই কাজ। গাড়ি নিয়ে ছুটল ইকবাল হাসানের বাড়ি।


ইকবাল হাসান এক বিশ্রী গালি দিল সাদিয়া বলল, ” এখনো তোর তেজ কমেনি? ” সাদিয়ার গলা চেপে ধরলো সে। সাদিয়া আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করছে যে, আল্লাহ এই উছিলায় ওর প্রাণটা যেন নিয়ে নেয়। তাহলে এই পশুটার হাত থেকে রক্ষা পাবে সে।”

কিন্তু তা হলো না। ইকবাল হাসান ছেড়ে দিল সাদিয়াকে। নিজের মাথায় চাপর মেরে নিজেকেই নিজে বলল, ” না, না ইকবাল এভাবে রাগের বশে সাদিয়াকে মেরে ফেললে তো চলবে না। তুমি তো তিলেতিলে, কষ্ট দিয়ে শেষ করবে ওকে। ”

ব্লেডটা হাতে নিল সে, সাদিয়ার পাশে বসে ওর কোমরে আলতো চুমু এঁকে দিল সে। তারপর ব্লেড দিয়ে আস্তে আস্তে সাদিয়ার সারা কোমর জুড়ে আঁচড় কাটতে লাগল সে। সাদিয়া যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। তা দেখে ইকবাল হাসান ওর দু’পায়ের উপর উঠে বসল যাতে করে সাদিয়া নড়াচড়া করতে না পারে। সাদিয়ার ফর্সা কোমর বেয়ে রক্ত বিছানার সাদা চাদরের কিছু কিছু অংশ ভিজে যাচ্ছে। ইকবাল হাসান এবার ওর মুখের উপর ব্লেডটা ধরল। সাদিয়া চোখ বড়বড় করে রক্তমাখা ব্লেডের দিকে তাকালো। ইকবাল হাসান কিছু একটা ভেবে বলল,
“মুখে আঁচড় কাটবো? নাহ, তাহলে তো হবে না। তোমার পেটের আঁচড় দেখে তো উত্তেজনা বাড়বে তাই কেটেছি কিন্তু মুখে আঁচড় কাটলে তোমার প্রতি ইন্টারেস্ট হারাবো। যা আমার জন্য ভালো হবে না। তাই মুখে আঁচড় কাটবো না। আচ্ছা তুমি দেখতে এত সুন্দর কেন বলো তো? কি দিয়ে বানাইছে তামারে আহা। আগে জানলে ইলাকে ছেড়ে তোমাকেই বিয়ে করে ঘরবন্দী করতাম। আর যাই হোক তোমার এই সৌন্দর্যের মজা তো প্রতিদিন নিতে পারতাম।”

বলে বাঁকা হাসি দিয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালো। সাদিয়া চোখমুখের বিকৃতি দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারল। সাদিয়া কোমড়ে হাত দিয়ে রক্ত জরিয়ে নিল হাতে। সে রক্তমাখা হাত সাদিকে দেখেয়ে বলল, “খুব যন্ত্রনা হচ্ছে তাই না? এই দেখো রক্ত! এমন রক্ত তোমার শরীরের একেক অঙ্গ দিয়ে বইবে প্রতিদিন।


রায়হান কলিং বেল বাজাতেই একটা পিচ্চি মেয়ে দরজা খুলে দিল। পিছন থকে একটা ভদ্রমহিলা দৌড়ে এসে মোয়েকে ধরলেন। আর বললেন, ” মা, তোমাকে না বলেছি কেউ আসলে হুটহাট দরজা খুলবে না। আগে আম্মুকে দেখতে দিবে কে এসেছে। ” বলতেই রায়হান দিকে চোখ পড়ল তার। নিজের ওড়না দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমার স্বামী বাসায় নেই।”

রায়হানের কছে ইলাকে দেখে ভালো মানুষই মনে হলো। অন্তত একজন পর্দানশীন নারী আর যাই হোক খারাপ হতে পারে না। রায়হান সালামের উত্তর দিয়ে বলল, “উনি কোথায় আছে সেটা জানতেই এখানে এসেছি।” কথাটা বলতেই গলার শোর ভারি হয়ে গেল রায়হানের। অজান্তেই চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরল। এখানে যে কাজে এসেছিল সেটা কোনমতেই সম্ভব নয় রায়হানের দ্বারা। ভেবেছিলো, “ইকবালের বাড়ির কাউকে তুলে নিয়ে ইকবালকে ভয় দেখাআে তখন ইকবাল সাদিয়াকে ফিরিয়ে দেবে।” কিন্তু একজন পর্দানশীন নারী আর একটা অবুঝ বাচ্চার সাথে এটা কোনভাবেই করতে পারবে না রায়হান।

ইলা রায়হান ভাঙা গলার আওয়াজ শুনে তাকলো রায়হানের দিকে। তখনি রায়হানে চোখে পানি দেখতে পেল, কিছুটা আন্দাজ করে বলল, “ভাইয়া আপনি কাঁদছেন? প্লিজ ভিতরে আসুন।”

রায়হান তার কথা শুনে চোখের জ্বল মুছে নিল তবে চোখ পানি যেন কোন বাঁধাই আজ মানছে না। স্রোতস্বিনী নদীর মত বেয়েই চলেছে। ইলার কথায় বিতরে গিয়ে বসল রায়হান। ইলা পানি আনতে চলে গেল। রায়হান নিজেকে নিজে বলতে লাগল, “ওইদিকে তোমার অর্ধাঙ্গিনী কোন অবস্থায় আছে জানো না আর এখানে তুমি বসে আছ কিভাবে?” নিজেকে নিজেই উত্তর দিল, “কিই বা করার আছে আমার উনিই যা করার কতে পারবে এই মুহূর্তে।”

ইলা গ্লাসটা বাড়িয়ে ধরতেই রায়হান সেটা নিয়ে গ্লাসের পানি ঢকঢক করে পুরোটা শেষ করল। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল, “আমি এখন আপনার স্বামীর সম্পর্কে যা বলতে চলেছি তা শুনে আপনি বিশ্বাস করবেন কি করবেন না তা জানা নেই আমার। আপনার স্বামী…”

রায়হানের কথা শেষ হতেই ইলা বলে উঠল, “একজন মেয়ে পাচারকারী। তাই তো? ”

ইলার মুখে এমন কথা মোটেও আশা করেনি রায়হান। মহিলা এসব জানার পরও এই লোকটার কাছে এখনো আছে? হয়তো মহিলাটি অমায়িক ভালো একজন নয়তো খুব জঘন্য একজন। রায়হান বলল, “সুদু তাই নয় একজন খুনী এবং ধর্ষকও।”

রায়হানের কথা শুনে ইলার মাথায় বজ্রপাত ঘটলো। চারিদিক অন্দকার মনে হতে লাগল তবে মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ” কি বলছো ভাই? এসবের কিছুই আমি জানি না। ধর্ষণের মত কাজ উনার ধারা সম্ভব কেননা যে নারী পাচার করতে পারে সে নরীকে ধর্ষণও করতে পারে কিন্তু খুনী?”

রায়হান অস্ফুটে বলল, “হুম। কি করে বলবো আপনাকে, উনি আজ আমাদের বাড়ি থেকে আমার স্তীকে অপহরণ করেছেন।”

ইলা চমকাল। ভাবল রায়হানের মনের অবস্থাটা। বলল, “তুমি এখনো এখানে বসে আছো? উনি যা কিছু করে দিতে পারে। পুলিশ কেস করো জলদি। ” ইলা উত্তেজিত কন্ঠে বলল।

রায়হান বলল, “আমি এখানে এসেছিলাম ইকবালের পরিবারের কাউকে কিডন্যাপ করে, ইমরানকে ভয় দেখিয়ে সাদিয়াকে ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু আমার দ্বারা এটা অসম্ভব। তাছাড়া আপনি আমাকে ভাই ডেকেছেন, একটা ভাই কী করে তার বোন ভাগ্নীকে কিডন্যাপ করতে পারে বলুন? ”

ইলা বিস্ময় নিয়ে রায়হানের দিকে তাকালো। নিজের স্ত্রীকে এতটা ভালোবাসার পরও আমি একবার ভাই ডেকেছিলাম সেই জন্য উনি আমাদের কিডন্যাপ করলো না?, ভাবলো ইলা।

রায়হান কিছু একটা ভেবে আশার আলো দেখতে পেল। বলল, “বোন ভাই ডেকেছ না আমাকে। আমার একটু উপকার করো তুমি। আমি তোমাদের কিছু করার কথা ভাবছি না। আমি ফোন দিলে ইকবাল হাসান ধরছে না। তোমার ফোন দিয়ে যদি আমি তাকে ফোনকল দিয়ে বলি তোমরা আমার হেফাজতে আছো তাহলে নিশ্চই সে সাদিয়াকে ছেড়ে দিবে।”

রায়হানের কতা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন তিনি। বলল, “আমাদের যদি কেউ মেরে তাকে ফোনকল দিত তাহলেও সে আসতো না ভাই বরং আরো খুশি হতো। তিনদিন আগে আমাকে বেধমভাবে মেরে বাসা থেকে বেরিয়েছে, সারারাত জ্ঞান ছিল না আমার। আজ পর্যন্ত বাসায় আসবে তো দূরে থাক খবর নেয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি, আমি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি।”

রায়হান শেষ আশাটাও হারালো। ইলা বলেই চলল, “এইতো আজ মাত্র ডাক্তার দেখিয়ে বাসয় ফেরার সময় উনাকে গাড়ি করে যেতে দেখলাম।”

রায়হান তাকালো তার দিকে। জিজ্ঞেস করল, “কখন? আর কোথাও? ”

ঘন্টাখানিক আগে উনার নতুন বাড়ির দিকেই যেতে দেখলাম। মীরপুর *

“উনি সেখানেই সাদিয়াকে নিয়ে গেছে হয়তো।” বলেই উঠে দাঁড়ল রায়হান। বোরোবার জন্য পা বাড়ালো। ইলা বলল, “ঠিক বলেছ ভাই। ওই বাড়িটা একদম নতুন আর কোন ভাড়াটিয়াও নেই ওইখনে উনি সেখানেই নিয়ে গেছেন তোমার বউকে।”

রায়হান ধন্যবাদ জানিয়ে বোনেকে বলল, “তুমি অনেক উপকার করলে বোন। কিন্তু আমাকে ক্ষমা করে দিও আজই ওই ইকবালের এই পৃথিবীতে শেষ দিন। ও বেঁচে থাকলে বহু মেয়ের জীবন নষ্ট করবে আমি তা হতে দিব না।” বলে রায়হান চলে গেল। ইলা ফ্লোরে বসে পরল। ওর ছোট্ট মেয়েটি এসে জরিয়ে ধরে বলল, “মা, আংকেলটা কি বাবাইকে মেরে ফেলবে?”


এত দ্রুত গাড়ি রায়হান জীবনে কখনো চালায়-নি। এমনিতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে আর দেরি করতে চায় না। ওই জানোয়ার ইকবাল কি করছে ওর সাদিয়ার সাথে তা জানা নেই? যত দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছাতে হবে।


ইকবাল হাসান ডনহাতে সাদিয়া চুলগুলো মুঠো করে ধরে আছে। ওর শরীরের উপর নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে গলায় চুম্বন করতে থাকে। সাদিয়ার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ইকবাল হাসান এর শরীরের ভারের কারণে নিশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে ওর। ইকবাল হাসান এবার আর পারলো না নিজেকে বাঁধা দিল না। খাট থেকে নেমে পরল। বেল্ট খুলে এগতে লাগল সাদিয়ার দিকে। ঠিক তখনি রায়হান ওকে পিছনে ঘুরিয়ে স্বজোরে নাকে বরাবর ঘুষি মারতেই ইকবাল হাসান বসে পরল। রায়হান পা দিয়ে বুকে লাথি মারতেই ইকবালের মাথাটা গিয়ে বাড়ি খায় বেড সাইড টেবিলের মধ্যে মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে তার।

রায়হান সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে ভয়ে কেঁপে উঠে। কি ভয়ঙ্কর অবস্থা ওর পেট থেকে কোমড় পর্যন্ত কেউ যেন ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে ব্লেড দিয়ে কেচেছে। রায়হান “সাদিয়া” বলে কেঁদে উঠে। রায়হানকে দেখে যেন জ্ঞান ফিরে পেল সাদিয়া। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল ওর প্রার্থনা কবুল করার জন্য। ন্বিশব্দে কাঁদতে লাগল সাদিয়া। রায়হান তাড়াতাড়ি সাদিয়ার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিল। সাদিয়াকে জরিয়ে ধরে ওর কপালে চুমু খেলো। বলল, “আমি এসে গেছি আর কোন ভয় নেই তোমার সাদিয়া।” বলে পরনে শার্টটা খুলে সাদিয়াকে সযত্নে পরিয়ে দিল। সাদিয়া শার্টের উপরও শাড়ীর আঁচল দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে নিলো।

এতক্ষণে ইকবাল হাসান উঠে দাঁড়িয়েছে। রায়হান হঠাৎ ওইভাবে আক্রমণ না করলে হয়তো রায়হানের সাথে হাতাহাতি-তে পেরে উঠত কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতিতে নেই সে। তাই রায়হানের হাত থেকে বাঁচার জন্য পলাতে চেষ্টা করল সে। আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে একটা দৌড় দিল সে কিন্তু বাড়ির গেটে যে বড় এক তালা লাগানো আর চাবিও যে সেই রুমে কিভাবে বেরোবে এখন? বাসা থেকে অন্য কোন রুমের চাবিও আনেনি যে সেখানে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে নিজেকে রায়হানের কাছ থেকে বাঁচাবে। “ছাঁদ তো খোলা সেখানে গিয়ে ছাদের দরজায় লাগিয়ে দিলেই তো পারি। আর ছাঁদ থেকে কাউকে ডেকে সাহায্যও চাইতে পারবো।”, ভেবেই দৌড়ে ছুটলো সে তখনি পিছনে কারো পায়ের শব্দ শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখল পিছনে রায়হান আসছে। ব্যাথায় ঠিকমতো দৌড়াতেও পারছে না ইকবাল। বহু কষ্টে পাঁচতলার ছাদে বেয়ে উপড়ে উঠে দরজা লাগাতে যাবে তখনি রায়হান দরজায় লাথি মারে। ঝোঁক সমলাতে না পেরে মেঝেতে পরে যায় ইকবাল। উঠে দৌড় দিতেই রায়হান ছোট একটি রড হাতে নিয়ে ছুড়ে মারতেই ইকবালের পিঠ দেয়ে ডুকে যায়। ইকবাল ফের পরে যায় মেঝেতে আর পরতেই খাঁড়া একটি রড উনার পা-এর এক পাশ দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বিরেয়ে এলো।

রায়হান হাতে তুলে নিল রড। শরীরের সব শক্তি দিয়ে পেটাতে পেটাতে দু’পা থেতলে দিতে লাগল ইকবালের। হাঁর গুলো ভেঙে গুরিয়ে যাচ্ছে রডের বাড়িতে যার আওয়াজ রায়হানের কানে আসছে। ইকবালের চিৎকার কারো কান পর্যন্ত পৌঁচাচ্ছেন কি-না তা জানা নেই রায়হানের।

সাদিয়া বহু কষ্টে হেঁটে হেঁটে উপরে উঠল রায়হানের এই হীংস্র রূপ দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here