#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৭
আমি ভয়ে ভয়ে কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে আয়ান বলে উঠল…
– আয়রা.. আরশি মনে হয় তোমাদের বাসায় যাবে। তুমি তাকে একটু সামলে নিও। দয়াকরে এমন কিছুই করো না যাতে আমার আর আরশির মধ্যে সমস্যা হয়।
আয়ান আরও কিছু বলতে নিবে এর মধ্যেই আমি বলে উঠলাম
– আরশি আমার পাশে বসে আছে ভাইয়া। আর আমি এমন কী করব ভাইয়া যাতে আপনার আর আরশির মাঝে সমস্যা হবে? আমি তো আপনার কথার মানে বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে বলুন দয়াকরে।
আয়ান এবার বুঝতে পেরেছে আরশি আমার পাশেই বসে আছে। আয়ান এবার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল
– আরশি তো একটু বাচ্চা মানুষের মতো তাই বললাম আরশিকে একটু সাবধানে রেখো। ওর জন্য তো অনেক চিন্তা হয় আমার। কখন কী করে বসে। তুমি তো তার বান্ধবী তাই বললাম এমন কিছুই ওকে বলো না যাতে ওর কষ্ট হয়। এই আর কী।
– ওহ আচ্ছা তাই বলুন। আপনি চিন্তা করবেন না আমি এমন কিছুই বলব না যাতে করে আরশির সমস্যা হয়। আপনি নিশ্চিন্তায় থাকতে পারেন।
বলেই কলটা কেটে দিলাম। আরশি একটু ভাবুক চোখে আমার দিকে তাকাল। মনে হচ্ছে তার মনে অনেক সংশয় আর প্রশ্ন জেগেছে তবে সেটা সে জিজ্ঞেস করতে পারছে না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– আয়ানের কথাগুলো কেমন এলোমেলো মনে হলো না তোর কাছে?
আমি একটু চুপ হয়ে রইলাম। তারপর হালকা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম
– আমার কাছে তো তেমন এলোমেলো লাগেনি। ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে তো তাই এমনটা করছে। সারাক্ষণ তোর চিন্তায় থাকে। দেখিস না ভাইয়া অফিসে থেকেও তোর খুঁজ নেওয়ার জন্য এসময় কল দিয়েছে।
– আয়রা আমাকে কী তোর বাচ্চা মনে হয়? আমি এতটা বাচ্চাও না যে কথার মানে বুঝব না। আয়ানের নম্বরটা তোর ফোনে হার্ট লিখে সেভ কেন? আমি তো আয়ানের নম্বর দেখে চিনেছি যে আয়ান কল দিয়েছে। কিন্তু তুই ওর নম্বর এ নামে কেন সেভ করলি? এর তো অবশ্যই কোনো কারন আছে। আয়ানের কথাগুলোও কেমন জানি অগোছালো এলোমেলো। অবশ্যই তোরা দুজন আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস। প্রথম দিন থেকেই তোর আর আয়ানের মধ্যে আমি কিছু একটা লক্ষ্য করছি। আমার কাছে সবটা বল কী হয়েছে। আমাকে লুকাস না দয়াকরে। আমি এসব নিতে পারব না।
– আরশি তুই একটু বেশিই ভাবছিস। নম্বরটা এ নামে কীভাবে সেভ হলো বুঝতেছি না। কিছু একটা ঝামেলা তো আছে। তুই দয়াকরে সন্দেহ বাদ দে। আয়ানের সাথে আমার কী এমন থাকবে?
– আমাকে তুই একটু বেশিই বোকা ভাবছিস। নম্বর তো আর ভূত এসে তোর ফোনে সেভ করে যাবে না।
– আরশি তোর বুঝার ভুল হচ্ছে কোথাও।
আরশি আমার কথার জবাব না দিয়ে সরাসরি আয়ানকে কল দিল। আয়ানকে কল দিয়ে কলটা লাউডে দিল। আরশির কল পেয়েই আয়ান কলটা ধরে হ্যালো বলতেই আরশি বলে উঠল
– আয়ান আমাকে একটা সত্যি কথা বলো তুমি। আশা করি আমাকে সত্যিটা বলবে।
– কী সত্যি বলব বলো।
– আয়রার সাথে তোমার কী? আয়রার ফোনে তোমার নম্বরটায় বা কেন হার্ট লিখে সেভ করা? তোমার আর আয়রার মাঝে কী চলছে আমাকে খুলে বলো।আমি সবটা জানতে চাই।
আমি ভয়ে ঢুক গিলতে লাগলাম। আয়ান ওপাশ থেকে জবাব দেওয়া শুরু করলো। কিন্তু আয়ানের জবাব শোনে আমার মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। কারণ আয়ান বলে উঠল
– আরশি তোমাকে যদিও বিষয়টা লুকানো উচিত হয়নি। তবে বিষয়টা লুকিয়েছিলাম তোমার শোনলে কষ্ট হবে তাই। আর আমি চাইনি তোমার বান্ধবী আর তোমার মধ্যে কোনো সমস্যা হোক।
– তোমার কথার মানে বুঝতে পারছি না। তুমি ভুমিকা রেখে সরাসরি বলো।
– শোনো আরশি তোমার বান্ধবী আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বোন ছিল। সেই থেকে তোমার বান্ধবীর সাথে আমার পরিচয়। আমি যখন মেডিকেলে পরতাম তখন থেকেই তোমার বান্ধবী আমাকে পছন্দ করত আর প্রেম করার জন্য জ্বালাত। বন্ধুর বোন ছিল তাই প্রথমেই না করে দিয়েছিলাম। না করার পরও জ্বালাচ্ছে আর এখন পর্যন্তও জ্বালানো অব্যহত রেখেছে। তাকে আমি বহুবার বলেছি যে আমার পছন্দ অন্য। তবে সে হার মানার পাত্রী না। আজকে তিন বছর যাবত সে আমাকে জ্বালিয়ে আসছে। তোমার সাথে রিলেশন হওয়ার পর ওর জ্বালানো টা কমে একটু। তবে ইদানিং আমাকে দেখে আবার জ্বালানো শুরু করেছে। আমি ভয়ে ওকে বলেছিলাম যেন তোমার আর আমার মধ্যে কোনো ঝামেলা তৈরী না করে। কিন্তু আয়রার মতিগতি মোটেও ভালো না। সে এ পর্যন্ত বলে আসছে যে আমি যদি ওর সাথে কথা না বলি তাহলে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক যা তা বলে নষ্ট করিয়ে ছাড়বে । আমি তোমাকে ভালোবাসি আরশি। তোমাকে যেন হারাতে না হয় তাই ওকে কল দেই। এছাড়া কী করার ছিল বলো? তুমিও তো একটু বাচ্চা স্বভাবের। ভেবেছি আয়রা যা বলবে সেটা বিশ্বাস করে আমাকে ছেড়ে যাবে। তাই তোমাকে সবটা বলার সাহস পাইনি। এখন যদি মনে হয় এতে আমার কোনো দোষ আছে তাহলে আমাকে যা শাস্তি দাও মেনে নিব। সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তোমার।
– তুমি কলটা রাখো আমি বাকিটা বুঝতেছি।
বলেই আরশি কলটা কেটে দিল। আমি স্তব্ধ হয়ে শোনতে লাগলাম। এবার আরশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– এত নির্লজ্জ কী করে হলি তুই। তোকে আমি অনেক বিশ্বাস করতাম। একটা ছেলে তোকে পছন্দ করে না আর তুই তার পেছনে আঠার মতো দৌঁড়াচ্ছিস। তুই কী ভেবেছিলে আমাকে যা তা বুঝিয়ে আয়ান আর আমাদের মধ্যে ঝামেলা করবি? ভাগ্যিস আয়ান আমাকে সবটা খুলে বলেছে। তোর মতো বেহায়া নির্লজ্জ বান্ধবীর আমার দরকার নেই। আজকের পর থেকে তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই।
কথাগুলো বলেই আরশি চলে গেল। আরশিকে পাল্টা কিছু বলার সুযোগ আরশি দিল না। আমি দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এত অপমান আমি কেন সহ্য করছি। কেন অন্যের মিথ্যার দায় আমার মাথায় নিচ্ছি। একের পর এক চিন্তা করতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম আমার কী করা উচিত৷ ভাবনার যেন কূল কিনারা পাচ্ছিলাম না। নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে যাচ্ছিল। তীব্র থেকে তীব্র মাথা ব্যাথা শুরু হলো। নিজেকে সামলে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল।হুট করেই ব্যথায় চিল্লানো শুরু করলাম। চুল টেনে ধরেও যেন ব্যথা থেকে মুক্তি পাচ্ছিলাম না। ব্যথায় কাতরাতে লাগলাম।মা এসে ব্যথার ঔষধ দিল।তবুও ব্যথা কমছিল না। চুল টানতে লাগলাম পাগলের মতো। শরীরটা জ্বরে পুড়ে গেল। কখন যে জ্ঞান হারালাম বুঝতে পারেনি। জ্ঞান ফেরার পর একটা বিষয় লক্ষ্য করে বেশ অবাক হলাম।
#তবুও ভালোবাসি তোমায়
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৮
জ্ঞান ফেরার পর একটা বিষয় লক্ষ্য করে বেশ অবাক হলাম। খেয়াল করলাম সবাই মনমরা হয়ে আছে। জ্ঞান হারিয়েছিলাম গত পরশুদিন। এর মধ্যে দুটো দিন কীভাবে চলে গেল বুঝতে পারিনি। মা,বাবা,ভাইবোন সবাই বিমর্ষ হয়ে আছে। মা এসে পাশে বসে কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে চোখে আসা জলটা লুকাতে চলে গেল। ভাই এসে একটা আইসক্রিমের বক্স আর কিটকাট চকলেট এনে বলল
– কী রে তোর তো এগুলো পছন্দ। মন ভরে খা।
আমি আইসক্রিম আর কিটকাট পেয়ে মহাখুশি। দেওয়ার সাথে সাথেই খেতে লাগলাম। এর মধ্যে আবার মাথা ব্যথাটা চড়াও দিয়ে বসল। মাথায় হাত দিয়ে হাত বুলাতে লাগলাম। মা আমার ঘরে উঁকি দিয়ে বুঝল আমার মাথায় ব্যথা করছে। আমার অবস্থা দেখে মা কিছু ঔষধ দিয়ে বলল
– এগুলো খা। ব্যথা কমে যাবে।
আমি ভাবুক চোখে তাকিয়ে বিমর্ষ গলায় বললাম
– এত ঔষধ খাব? কে দিয়েছে এত ঔষধ?
– ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম। তুই তো টানা দুদিন অজ্ঞান ছিলি। তারা তোকে দেখে এ ঔষধ দিয়েছে। এবার খেয়ে একটু রেস্ট নে। পায়ের অবস্থাও তো তোর ভালো না। বেশি নড়াচড়া করিস না। ডাক্তার এসে আবার দেখে যাবে। একজন মানসিক ডাক্তারের সাথেও কথা বলেছি সে এসে তোর মেডিটেশন করবে। নিজের উপর আস্থা রাখ। জীবনে চড়াই উতরাই আসেই। জীবনের এসব রীতি মেনেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখিস দুনিয়ার সবাই ঠকালেও তোর সামনে যে বসে আছে তোর মা সে কখনো তোকে ঠকাবে না। উপরে যিনি বসে আছেন তোর পালনকর্তা সে কখনো তোর জন্য এমন কিছু বরাদ্দ রাখবে না যেটা তোর জন্য ক্ষতিকর আর কষ্টকর। সাময়িক কষ্টগুলো হয়তো তোর বেশি হচ্ছে তবে মনে রাখিস এ কষ্টই তোকে আত্নবিশ্বাসী করে তুলবে। নিজেকে ছোট করে কখনো ভালো কিছু আশা করা যায় না। আগে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে হবে। কারও জন্য কারও অস্তিত্ব বিলীন করে দেওয়া ঠিক না। পৃথিবী একটা মরিচীকা। এখানে সবাই ছুটে তাদের স্বার্থের জন্য।তোকেও স্বার্থপর হতে হবে। কারণ ভালো থাকতে হলে স্বার্থপর হওয়া জরুরী। কারও ভালো চাইতে গিয়ে নিজের খারাপ ডেকে আনা ঠিক না। যে আমার ভালো চায় না তার ভালো কখনো চাওয়ার দরকার নেই। তবেই তুই ভালো থাকবি। জীবন অনেক কঠিন রে মা। তাকে জয় করে নিতে হবে। এবার ঔষধ টা খেয়ে রেস্ট নে একটু।
মায়ের কথাগুলোই অনেকটা স্বস্তি পেলাম। মায়ের হাত থেকে ঔষধ টা নিয়ে খেয়ে নিলাম। তবে হুট করে সবার এমন পরিবর্তনটা দেখে কেমন জানি অচেনা লাগছে সবাইকে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটাও টেবিলের উপরে। ডাক্তার কী এমন কিছু বলেছে যাতে করে সবার মনে কড়া নড়েছে? পায়ের অবস্থা নিয়ে প্রেসক্রিপশন আনা সম্ভব না। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ছোট বোনটাকে হালকা করে ডাক দিয়ে বললাম প্রেসক্রিপশনটা দিতে। আমি প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়ে কিছু ছবি তুলে নিলাম। তারপর আমার পরিচিত এক ডাক্তার ভাইয়াকে ছবিগুলো পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? এরপর উনি যা বলল তা শোনে গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। জানতে পারলাম আমার ব্রেন টিউমার এবং সেটা প্রথম ধাপে আছে। বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। খানিকক্ষণের জন্য মনে হলো আমার জীবনের শেষ সময়ে চলে এসেছি এখন চাইলেও হয়তো বেশিদিন বাঁচব না।
সাধারণত বড় কোনো রোগ মানুষকে আরও দুর্বল করে দেয় তবে আমাকে কেন জানি না এ রোগটা আরও বেশি আত্নবিশ্বাসী করে তুলল। মনে হলো এ অল্প সময়ের দুনিয়ায় কার জন্য জীবন শেষ করতে যাচ্ছি? আমার ভালো থাকার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। আমাকে অনেক ভালো থাকতে হবে। আমার জন্য না হোক আমার পরিবারের জন্য হলেও আমাকে ভালো থাকতে হবে। আয়ান নামক যন্ত্রণাটা আমার মন থেকে পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করতে লাগলাম। নিজের অগোছালো জীবনকে গোছানোর অংক কষতেছিলাম। হালকা ঘুমে তখন চোখ ছেয়ে গেল। ঘুমটা প্রবল হতে লাগল। একটা সময় ঘুমিয়েও গেলাম।
ঘুম থেকে উঠলাম কিছুক্ষণ পর। নিজেকে সামলে নিলাম। মাকে ডাক দিয়ে বললাম আমাকে একটু ধরে কাপড়টা পাল্টে দিতে। মা আমার কাপড় পাল্টে দিল৷ তারপর হালকা পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে একটু পাউডার দিলাম। চোখে হালকা কাজল দিলাম। আজকে সাজতে বেশ মন চাচ্ছে। তাই নিজেকে বেশ পরিপাটি করে নিলাম। তারপর হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। খাওয়ার পর আরশিকে কল দিলাম। আরশিকে কল দিতেই আরশি ওপাশ থেকে ধরে বলল
– এখন কী নাটক সাজাতে কল দিয়েছিস বল?
আমিও কন্ঠটা কর্কশ করে বললাম
– আগে তুই অনলাইনে এসে সব নিজের চোখে দেখ তারপর কথা বল। আর শোন আয়ানকে পাওয়ার আমার কোনো ইচ্ছা নেই। ওর মতো ছেলেকে আমি না পেয়েই খুশি। আমার সাথে আয়ানের সম্পর্কটা ছিল ছয় বছরের। দুর্বল থাকায় আয়ানের সব মেনে নিতাম। কত ভুল সে করেছে ক্ষমা করে দিয়েছি। একবার তো এক মেয়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে দেখে আমি। কারণ সে তো জানত না সে মেয়েটা আমি ছিলাম। তবুও সেদিন আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তাকে শুধরানোর সময় দিয়েছিলাম। জানি না সে শুধরেছিল কিনা। তবে এমন ভাবে ছিল যে তাকে পুনরায় বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমাকে আয়ান কেন বাদ দিয়েছে জানিস? আমার বাবার টাকা নেই, আমি মেডিকেলে পড়ি না, আমার নাকি কোনো ফিউচার নেই। আমি তাকে চাকুরী করে টাকা দিতে পারব না তাই। আয়ানকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসতাম। তাকে ভালোবেসে কত কষ্ট পেয়েছি সেটা শুধু আমি জানি। দিনের পর দিন অপমান অবহেলা সহ্য করে চিৎকার দিয়ে কাঁদতাম। আর সে হাসত। আমার কথা তার বিরক্ত লাগত। আয়ান আমাকে চায় না আমাকে বাদ দিয়ে দিলেও কিছু করার ছিল না। কিন্তু কষ্টটা কী হয়েছিল জানিস? আমার পরিবারের সবার সাথে কথা বলে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে সে আমাকে বাদ দিয়েছে। আমি কতটা বিশ্বাস আর রঙিন স্বপ্ন বুনেছিলাম সেটা কী তুই জানিস? আমি না পেরে ওর সাথে পাগলামি করতাম। সারাদিন কাঁদতাম। শেষমেষ কিছু না পেয়ে তার কাছে ছুটে গেলাম। এতকিছু করলাম তারজন্য সে কী পারত না আমাকে মেনে নিতে। উল্টা সবার সামনে আমাকে অপমান করেছে। আঘাত করেছে। আমার এ পাগলামির জন্যও সে দায়ী। একটা মানুষকে দিনের পর দিন মানসিক অত্যাচার করলে তার মানসিক বিকৃতি ঘটবে না সেটা কী সম্ভব? আমাকে কতটা কষ্ট সে দিয়েছে সেটা আয়ান নিজেও জানে। তুই আয়ানকে নিয়ে ভালো থাক আমার তাতে কিছু যায় আসে না। তবে মিথ্যা নিয়ে ভালো থাকার চেয়ে সত্যি নিয়ে ভালো থাক। সবটা বলার ইচ্ছা ছিল না তবে কেন বলেছি জানিস? কারণ আয়ানকে পুরোপুরি তোরও চেনা দরকার। ভালো থাক দোআ করি।
ওপাশ থেকে আরশিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কলটা কেটে দিলাম। মেসেন্জারে আরশিকে সকল প্রমাণ দিয়ে ব্লক করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আয়ান কল দিল। আয়ানের কলটা ধরতেই সে বলে উঠল
– আমার জীবনটা নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছ তাই না?
আমি কর্কশ গলায় বলে উঠলাম
– আমি কেন তোমার জীবন নষ্ট করতে যাব? তোমার জীবনে তুমি সুখে থাকবে কিনা দুঃখে থাকবে সেটা আমার দেখার বিষয় না। কিন্তু তোমার জীবনের সুখ চাইতে গিয়ে আমি তো আমার জীবনের কষ্ট ডেকে আনতে পারব না। তোমার মিথ্যার দায় আমি কেন নিব? শোনো আজকের পর আমাকে আর কল দিবে না। তোমার জায়গায় তুমি যা ইচ্ছা করো এটা একান্তই তোমার ইচ্ছা।
বলেই কলটা কেটে নম্বরটা ব্লক করে দিলাম।আমার ফোনে থাকা আয়ানের সকল ছবি আমি ডিলেট করে দিলাম।নিজে নিজে বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। মনে মনে ভাবলাম জীবনের যতটা দিন বাঁচব ততটা দিন নিজের জন্য ভাববো। আমার ভাবনায় শুধু আমি থাকব আর কেউ না।
কেটে গেল একমাস। আজকে পায়ের প্লাস্টার খুলবে। নিজেকে এর মধ্যে বেশ সামলে নিলাম। আয়ানের কথাও খুব একটা মনে পড়ে না। মনে পড়লেও এতটা কষ্ট লাগে না। আজকে আমি একটু হাঁটতে পারব ভেবেই মনটা খুশি লাগছে। পায়ের প্লাস্টার খুলার জন্য হাসপাতালে গিয়েই চোখ গেল…
(
(