#জাল(রহস্য গল্প)
পর্ব-৩
এভাবে কেটে গেল আরও ১৫ দিনের মতো। পুলিশ কোনো প্রমাণ খুঁজে পেল না সহদের ব্যাপারে। অন্যদের ব্যাপারেও কিছু জানা গেল না। এদিকে পর্নার অবস্থা আগের মতোই। শুধু তাকিয়ে ছাড়া আর কোনো ইম্প্রুভ হয় নি। অথচ ডাক্তারের ভাষ্যমতে পর্না এখন অনেক টাই সুস্থ। পুলিশও অপেক্ষা করে আছে পর্নার স্টেটমেন্টের জন্য। কিন্তু মোটামুটি একটা ধারণা করা গেল যে সহদ ছেলেটা নির্দোষ। কারণ সহদের ফোন রেকর্ড ও একদম ক্লিয়ার ছিলো। পর্নাকে আমি ভালোভাবে অবজারভেশনে রাখলাম। পর্নার ফোনটা অনেক খুঁজেও পাওয়া গেল না। তাই সবার জন্যই এই কেস টা রহস্য হয়ে দাঁড়ালো। সবারই এরকম ধারণা হলো যে রেপিস্ট পর্নার পরিচিত এবং খুব কাছের কেউ।
আমি পর্নার ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নিলাম। মেয়েটার একাডেমিক রেজাল্ট দুর্দান্ত। কিন্তু ঘাপলা হলো ওর লাইফস্টাইলে। ওর বাবার ছোট একটা কাপড়ের দোকান। তাতে করে ওর মেডিকেলে পড়ার খরচ জুগিয়ে ওরকম লাইফস্টাইল মেইনটেইন করা কোনোভাবেই সম্ভব না। অথচ পর্না ব্র্যান্ডের জিনিস ছাড়া কোনো কিছু ব্যবহার ই করতো না। হতে পারে সবকিছু সহদের দেয়া। তাই আমি সহদ কে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম কিন্তু সহদ বলল, পর্না নাকি আগে থেকেই এরকম। তাছাড়া ও নিজের পকেটমানি থেকে এতোটা দেয়া সম্ভব হতো না, আর সেটা নিয়ে পর্নার কোনো অভিযোগ ও ছিলো না।
এই ব্যাপার টা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। আরও একটা ব্যাপার সেই প্রথম দিন থেকে আমাকে ভাবিয়েছে, সেটা হলো বিয়ের ব্যাপার টা। ঠিক কি এমন কারণ হতে পারে যে মেয়েটা এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেড়ে নিলো।
আমি পর্নার ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। আমি যেমন ভেবেছিলাম ঘটনা ঘটেছিল ঠিক তার উল্টো। আমি ভেবেছিলাম পর্না হয়তো প্রেগন্যান্ট ছিলো কিন্তু ডাক্তার বলল, রিসেন্টলি পর্না এবোর্শন করেছে এবং ফিজিক্যালি একটিভ ও ছিলো।
আমি স্বাভাবিক ভাবেই ভেবে নিলাম যে এটা সহদের সাথে। তাই সহদ কে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম। কিন্তু সহদ যেন আকাশ থেকে পড়লো প্রেগন্যান্সির খবর টা শুনে এবং জোর গলায় বলল যে, ওরা কখনও ফিজিকালি ইনভলব ই হয়নি।
আমি সহদের কথা বিশ্বাস করলাম। আমার কাছে এবার পরিষ্কার হলো যে কিন্তু টা পর্নার মধ্যে। সহদ সত্যিই নির্দোষ, এবং নিতান্ত ভালোমানুষ টাইপ এই ছেলেটাকে কোনো একটা জালে আটকে ফেলা হচ্ছে।
আমি এই ব্যাপারে আর কাউকে কিছু জানালাম না। সহদ কেও বললাম যেন কাউকে কিছু না জানায়। একে একে সব গুটিগুলো সাজাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু মিলছে না। পর্না দুই নৌকায় পা দিয়ে হাটছিলো এটা সত্যি। তাহলে সেই ছেলেটা কি প্রতিশোধ নিতে এটা করেছে!
আর পর্না যেহেতু সেই ছেলেটার টাচে বেশী ছিলো তাহলে সহদ কে কেন বিয়ে করলো!
আমি নিজের মতো করে একটা যুক্তি দাঁড় করালাম। হতে পারে পর্না আগে থেকেই সম্পর্কে ছিলো। তারপর সহদের সাথেও প্রেমটা হয়ে গেছে। প্রথম জনকে আস্তে আস্তে কাটিয়ে সহদ কে বিয়ে করে নেবে কিন্তু তার আগেই প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় এবং এবোর্শন করার পর দেরি না করে দ্রুত বিয়ে করে নেয়।
আমার দাঁড় করা লজিক আমার মোটেও মনঃপুত হলো না। ভিতরে ভিতরে অস্থির হতে লাগলাম। যে করেই হোক এই রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
পর্নার চাচাতো ভাই হিমেল ছেলেটার সাথে কথা বললাম। বখাটে ছেলেটার উদ্ভট কথাবার্তায়ও কোনো হিন্টস পেলাম না। ছেলেটার ভিত্তিহীন কথাবার্তার একটাই মানে যে, পর্না সুস্থ হয়ে গেলে পাগল হয়ে যাবে। তার চেয়ে যেমন আছে তেমন ই থাক।
আমি এবার ভালোভাবে পর্নাকে খেয়াল করতে লাগলাম। সারাদিন বিছানায় শুয়ে, বসে সময় কাটায়। যখনই দেখতে যাই তখনই এমন। এরকমই একদিন দেখলাম পর্নার মা পিঠা জাতীয় কিছু একটা খাওয়াচ্ছে। আমাকে দেখে মহিলা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, আসলে মেয়েটা হঠাৎই মুখ ফুটে খাবারের কথা বলল। আমি চমকে উঠলাম কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে হেসে বললাম, বাহ! পর্না কথা বলছে বুঝি?
ভদ্রমহিলা চমকে উঠে বলল, না না ইশারায় বলেছে।
আমি এবার হেসে পর্নার দিকে তাকালাম। মেয়েটার চক্ষু স্থীর! কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম!
আমি স্মিত হেসে মনে মনে বললাম আহা বেচারি! নিজের জালে নিজেই আটকে গেছে!
চলবে…..