#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_47
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
🍁
আমি রিয়ানের ঘাড়ে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। রিয়ান এক হাত দিয়ে আমায় আগলে রেখেছে। আমি বেশ নিশ্চিন্তেই শুয়ে আছি ঠিক তখনই গাড়িতে এক বিকট শব্দ হয় আর গাড়ি সাইডে ইলেক্ট্রিক পোলের সাথে গিয়ে বারি খায়। সাথে সাথে গাড়ির হেডলাইট ভেঙ্গে গিয়ে সাইলেন বাজা শুরু হয়ে যায়।
গাড়িটি বেশ জোরে ধাক্কা খাওয়ায় আমি আর রিয়ান সামনে দিকে হেলে পড়ি। কিন্তু রিয়ান আমায় আগলে রাখায় আমি তেমন ব্যথা পাই নি। কিন্তু আমাকে ঠিক রাখতে গিয়ে রিয়ান সিটের এককোনে মাথায় হাল্কা বারি খায়। কিন্তু রিয়ান সেইসব তোক্কোয়া না করে দ্রুত নিজে ও আমাকে গাড়ি থেকে বের করে। তারপর আমাকে একবার ভালো মত দেখে নেয় কোথাও আমার লেগেছে কিনা। তখনই আমার চোখ যায় ড্রাইভার কাকার দিকে। আকস্মিক এমন একটি দূর্ঘটনা হওয়ায় সেও প্রস্তুত ছিল না। গাড়িটি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গাড়িটি গিয়ে ইলেক্ট্রিক পোলের সাথে বারি খায় আর তিনি স্টেয়ারিং এর কোনে বারি খায়। যার ফলে তার মাথার কোনে বেয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে। কিন্তু তাও সে কোন মতে তা চেঁপে ধরে রেখে চোখ বন্ধ করে ব্যথাটা সহ্য করার চেষ্টা করছেন। তা দেখে আমি দ্রুত রিয়ানকে ফাস্টএইড বক্স আনতে বলি। রিয়ানও ইতিমধ্যে ড্রাইভার কাকার অবস্থাটা লক্ষ্য করেছে। রিয়ান এইবার দ্রুত গাড়ির পিছন থেকে ফাস্টএইড বক্স বের করে এনে আমায় দেয় এবং আমি তার চিকিৎসা শুরু করে দেই।
রিয়ান এইবার পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে এইসব হলো কিভাবে। তারপর সে লক্ষ্য করে গাড়ির টায়ার পাঙ্কচার হয়ে আছে। রিয়ান এইবার পিছনের দিকে এগিয়ে যায়। আর রাস্তার মাঝে একটি কাঠ পড়ে আছে যার মধ্যে অজস্র পেরেকঠোকা। এইটা থেকে একটা জিনিস খুব ভালোভাবেই পরিষ্কার হচ্ছে যে, কেউ গাড়িটির এক্সিডেন্ট করানোর জন্যই এমনটা করেছে। গাড়িটি সঠিক সময়ে সাইড হয়ে গিয়েছিল বলে তেমন একটা ক্ষতি হয় নি। এমনটা না হলে হয়তো বা অনেক বড় কোন দূর্ঘটনা হয়ে যেতে পারতো।
এইসব দেখে রিয়ানের চোখ দুটো লাল হয়ে উঠে। পায়ের রক্ত মাথায় টগবগ করতে থাকে। কপালের রগটা ফুলে উঠে। যদি সেই ব্যক্তিকে এখন সামনে পেত তাহলে হয়তো বা জিন্দাই তার শ’খানে টুকরো করে কুকুরদের খায়িয়ে দিত। রিয়ান এইবার কোন মতে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে আর পকেট থেকে একটা ঔষধ বের করে মুখে দিয়ে নেয়। অতঃপর গাড়ির কাছে গিয়ে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে নেয়।
তারপর কাকে যেন ফোন করে আরেকটি গাড়ির ব্যবস্থা করে আর দ্রুত সেটিকে আসতে বলে। রিয়ান একবার রিয়ানার দিকে তাকায়। সে খুব সুন্দর করে ড্রাইভার কাকার মাথার বেন্ডেজটা করে দিয়েছে আর কিছু মেডিসিন লিখে দিয়েছে। আপাতত সে এখন সেই ড্রাইভার কাকার সাথে কুশল বিনিময় করতে ব্যস্ত। তাই রিয়ান এইবার একটু দূরে গিয়ে একজনকে ফোন দেয়। কথা শেষে রিয়ান ফিরার পথে একটা সিএনজি নিয়ে আসে আর তাতে ড্রাইভারটিকে বসিয়ে দিয়ে তার হাতে ৩০০০ টাকা ধরিয়ে দেয়। আর বলে,
.
— আপনি বাসায় চলে যান। আর এই কিছু টাকা রাখেন আপনার কাজে লাগবে। নিজের খেয়াল রেখেন আর ঔষধগুলো ঠিক মত খেয়েন।
.
এই কথাটা শুনে ড্রাইভারটির চোখ ছলছল করে উঠে। সে খুশি মনে আমার আর রিয়ানের জন্য দোয়া করে দিয়ে গেলেন এবং আশির্বাদ করে গেলেন।
রিয়ান এইবার আমার পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,
.
— এমন এক দূর্ঘটনা ঘটে গেল তোমার কি তাকে ভয় করছে?
.
আমি রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলি,
— কিছুটা। আজ যদি আমার বা আপনার কিছু হয়ে যেত তখন? ভেবেই শরীরটা কেঁপে উঠছে।
.
— চিন্তা করো না সব ঠিক আছে। আমি থাকতে তোমার কিছু হবে না। আই প্রমিসড ইউ দ্যাট। শান্ত চোখে।
.
রিয়ানের সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার রিয়ানের কপালের দিকে দিকে চোখ যায়। ডান সাইডটা কিছুটা নীলচে হয়ে ফুলে উঠেছে। তা দেখে আমি দ্রুত এন্টিসেপ্টিক বের করে রিয়ানের কপালে আলতো করে লাগিয়ে দিতে থাকি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য গাড়ি চলে আসে আর আমরা সেটিতে উঠে রওনা দেই বাসার উদ্দেশ্যে।
.
.
🍁
.
বাসায় এসেছি প্রায় ঘন্টা খানিক আগে। ঘরে প্রবেশ করতে না করতেই রিংকি আর আরিশা ঝাপিয়ে পড়ে দেরি হওয়ার কারণ জানার জন্য। অতঃপর সব শুনার পর সকলের মধ্যে যেন এক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। আমাদের দুইজনকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে শুরু করে। ভালো মত যাচাই বাছাই করার পর যখন তারা নিশ্চিত হলো আমরা দুইজন ঠিক আছি তখন গিয়ে তারা এক স্বস্তির নিশ্বাস নিল। তারপর আমাদের ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দেয় আর রিংকির আম্মু আরিশার হাতে গরম দুই গ্লাস দুধ আমাদের জন্য পাঠিয়ে দেয়। ফ্রেশ হয়ে এসে দুধটুকু খেয়ে আমি আর রিয়ান ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়ি।
বেশ কিছুক্ষন পার হতেই রিংকি আর আরিশা এসে হাজির হয় আড্ডা দিতে। অতঃপর সকলেই মিলে আড্ডার আসর জমিয়ে দেই।
.
রাতের খাবার শেষে আমি আর রিয়ান ছাদে একটু হাটতে যাই। আকাশে আজ অজস্র তারার মেলা। মেঘগুলো ছুটে চলেছে ধীর গতিতে। শা শা শব্দ করে বয়ে চলেছে বাতাস। গাছের পাতারাও মচমচ শব্দ করে দোল খাচ্ছে বাতাসের স্রোতের সাথে। একদম মনোরম পরিবেশ। শুধু মাত্র একটি জিনিসের কমতি। আর তা হলো চাঁদ মামারটি। তার দেখা মিলছে না প্রায় বেশ কিছুদিন ধরে।
হয়তো রাগ করে কোন এক কোনে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
ছাদের এক কিনারে একটি দোলনা রাখা আছে। আমার কোলে রিয়ানের মাথা। আমি তার চুলগুলো আলতো হাতে টেনে দিচ্ছি। রিয়ান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করেই আমি বলে উঠি,
.
— আজ না আপনার কণ্ঠে গান শুনতে বড্ড ইচ্ছে করছে। প্লিজ শুনান না একটা গান।
.
রিয়ান কিছুটা অপ্রস্তুত সুরে বলে,
— এখনই!
.
— হ্যাঁ, প্লিজ মানা করবেন না। প্লিজ রিয়ান। কিউট একটা চেহারা করে।
.
রিয়ান আর আমার মুখের পানে তাকিয়ে মানা করতে পারলো না। বাধ্য হয়ে সে গানের সুর ধরলো।
.
.
🌹
সে কি জানে আজও তুই কথা বলিস
আমার সাথে মনে মনে প্রতিদিন, বেরঙিন
সে কি তোর কথা ভাবে আমার মতন করে?
তোর চিঠি কি সে পড়ে? এক মনে মাঝরাতে?
একটু মুচকি হেসে!
তার কাছে চলে যাওয়া সে তো যাওয়া নয়
দেখা হবে স্মৃতির গভীরে
সে কি জানে, অভিমানে তোকে হাসাতে?
সে কি পারে, বুকে ধরে তোকে ভোলাতে?
তোর প্রিয় গান কে গেয়ে শোনাবে?
বল আমার থেকে কে তোকে ভালো জানে!
[ বাকিটা নিজ দ্বায়িত্বে শুনে নিবেন। আমার খুব পছন্দের একটি গান। ]
🌹
.
.
🍁
.
আরিশা আর রিংকি এতক্ষণ ধরে রিয়ানার রুম সাজাচ্ছিল। কিছুক্ষণ আগেই রুম সাজিয়ে নিজের রুমে এসে স্বস্তির নিশ্বাস নেয়। ঠিক তখনই আরিশার ফোনটা বেজে উঠে। আরিশা ফোন তুলতেই ওপাশ হতে একজন মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠে,
.
— আমার বউটা কি করছে?
.
আরিশার আর বুঝতে দেরি নেই এইটা ড. সিয়াম। আরিশা এভাবেই ক্লান্ত তার উপর এমন প্রশ্নে কিছুটা চটে যায় সে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— তাল গাছে না অনেক সুন্দর নারিকেল হয়েছে তাই সেই গাছে উঠেছি নারিকেল গুলো পারতে।
.
সিয়াম এইবার হেসে বলে,
— তাল গাছে নারিকেল! লাইক সিরিয়াসলি আরু?
.
— ওই মিয়া হাসবেন না তো। এইভাবে মেজাজ গরম আছে।
.
— আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম। আচ্ছা শুনো আমি কিছুদিনের জন্য নিউইয়র্ক যাচ্ছি।
.
— কেন?
.
— মেডিক্যালের কিছু কাজে।
.
— কবে যাচ্ছেন?
.
— কালকে রাতে ফ্লাইট। তো কালকে যাওয়ার আগে তোমার সাথে দেখা করে যেতে চাই। করবে দেখা কালকে?
.
— এইটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয়। অবশ্যই আসবো।
.
.
🍁
.
রিংকি বেলকনিতে দাড়িয়ে কানে ইয়ারফোন গুজে মনের সুখে কফি খাচ্ছে আর ফাটা গলায় গান গাইছে,
.
— স্টেটাস আমার সিঙ্গেল দেখে,প্রেমের ছড়াছড়ি ।হায়রে কী যে করি,হায়রে কী যে করি,আমি ডানাকাটা পরী, আমি ডানাকাটা পরী।
.
তখনই রিংকির ফোন বেজে উঠে। রিংকি মোবাইল স্ক্রিনে অচেনা নাম্বার দেখে বলে,
.
— আমার সিঙ্গেল স্টেটাস ওয়ালা গান শুনে আমার কেউ লাইন মারতে ফোন দিল নাকি?
.
এই বলতে বলতে ফোন ও রিসিভ করে নেয়। তারপর বলে,
— আসসালামু আলাইকুম। আপনি কে? কোথা থেকে বলছেন? কেন ফোন করেছেন? কোন কাজে ফোন দিয়েছেন? কাকে চাচ্ছেন? এক নাগাড়ে বলে দম নেয়।
.
— আরেহ মিস বকবক স্টোপ ইউর বকবক। একটা মানুষ যে ঠিক এতটা বকবক করতে তা তোমাকে না দেখলে জানতাম এই না।
.
— কে বলছেন! লন্ডন থেকে আশা ওই ইশান দ্যা ব্রিটিশ বান্দর। সন্দেহভরা কণ্ঠে।
.
— Unfortunately yess!
.
— এত রাতে ফোন দিয়েছো কেন? আমার সিঙ্গেল স্টেটাস ওয়ালা গান শুনে দিয়েছো নিশ্চয়ই।
.
— মানে! অবাক হয়ে।
.
— থাক থাক বুঝা লাগবে না। এমনেই তোমার ঘিলু কম তুমি বুঝতা না।
.
— হোয়াট ইজ ঘিলু?
.
— ঘিলু মিন্স মগজ। মানে তোমার ব্রিটিশ স্টাইলে ব্রেইন যাকে বলে। ভেংচি কেটে।
.
— এলিয়েন একটা। বিরবির করে।
.
— কেন ফোন করেছেন তা বলেন?
.
— কালকে বিকালে একটু বের হবো তোমাকে আমার সাথে বের হতে হবে।
.
— হ্যাভ আই ঠেকা? আপনার সাথে আমি কোন দুঃখে মরতে যাব।
.
— মরতে বলি নি আমার সাথে বের হতে বলেছি। আর তুমি ভুলে যাচ্ছ তুমি প্রমিস করেছো যে আমায় ঢাকা শহর ঘুরাবে।
.
— কবে বলেছিলাম? আদো কি এমন কোন কথা বলেছিলাম? আমার তো মনে পড়ছে না।
.
— তোমার টিকটোক গুলো কিন্তু এখনো আমার কাছে আর আমি কিন্তু সেই গুলো দেই নি। তো এখন যদি আমি সেগুলো ডিলিট করে দেই তাহলে তোমার এত সুন্দর সুন্দর টিকটোক গুলার কি হবে?
.
— এই না না। মনে পড়েছে,মনে পড়েছে! একটু মজা করছিলাম আরকি। হেহে! কালকে কখন বের হতে হবে বলেন। আমি এক পায়ে রাজী।
.
— গুড, টুমোরো শার্প ফোর ও’ক্লোক। গোট ইট।
.
— হুহ! [ শালা ব্রিটিশ বান্দর! আমাকে ব্ল্যাকমেইল করোস। তোর উপর টিকটিকি পায়খানা করুক, তেলাপোকা ডিম পারুক, পিঁপড়া তোকে খোঁচা মেরে মেরে বর্তা বানাক, হাতি তোকে উস্টা দিয়ে উগান্ডা পাঠাক। তোর জীবনেও ভালো হয়তো না। এইটা আমার মত নিরিহ সিঙ্গেল কিউট ইনোসেন্ট মাসুম বাচ্চা মেয়ের অভিশাপ। মনে মনে।]
.
.
🍁
.
ছাদে প্রায় অনেকক্ষণ সময় কাটানোর পর আমরা দুইজন নিচে নেমে আসি। নিচে রুমে ঢুকতে যাব তখন দেখি দরজা বন্ধ। আর দরজার উপর একটা লাল কাগজ লাগানো। আমি সেটি হাতে নিয়ে পড়া শুরু করি,
.
” আমাদের পক্ষ থেকে ছোট একটি সাপ্রাইস তোর আর ভাইয়ার জন্য । আশা করি ভালো লাগবে।
ইতি
আরিশা এন্ড রিংকি ❤”
.
কথাটা আমি ঠিকমত বুঝতে পারলাম না। কিছুক্ষণ অবাক চোখে চিঠিটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। তখন পাশ থেকে রিয়ান বলে উঠে,
.
— মনে হচ্ছে যে আমার শালিকারা কিছু একটা সাপ্রাইস প্লেন করেছেন।
.
— তাই তো মনে হচ্ছে।
.
— তাহলে রুমে চল দেখা যাক কি সাপ্রাইস প্লেন করেছে ওরা আমাদের জন্য।
.
— হুহ!
অতঃপর আমি দরজা ঠেলে খুলে ভিতরে প্রবেশ করি। আমি পিছু পিছু ভিতরে চলে আসে। রুমে ভিতরে এসে আমি যা দেখি তাতে হা হয়ে থাকি।
.#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_48
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
🍁
অতঃপর আমি দরজা ঠেলে খুলে ভিতরে প্রবেশ করি। আমি পিছু পিছু ভিতরে চলে আসে। রুমে ভিতরে এসে আমি যা দেখি তাতে হা হয়ে থাকি।
পুরো রুম সাদা আর গোলাপি রঙের ছোট ছোট ফেরি লাইট (মরিচবাতি) দিয়ে সাজানো। ফ্লোরে কাঠগোলাপ আর বেলি ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে রাখানো হয়েছে। রুমটা ইতিমধ্যে ফুলের ঘ্রাণে মো মো করছে। রুমের মধ্যে থাকা টি-টেবিলে একটা ছোট কেক রাখা সাথে কোকের বোতল। রুমের এক কিনারে সাউন্ড বক্স রাখা। সব কিছু মিলিয়ে এক আবেগময় পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
হুট করেই দরজাটা বিকট শব্দ করে বন্ধ হয়ে যায়। দরজার এমন বিকট শব্দে আমি আর রিয়ান চমকে উঠি। পিছনে ফিরে দেখি দরজাটা বন্ধ। আর দরজার ওপাশ হতে আরিশা বলে উঠে,
.
— আজকের জন্য এই দরজাটি বন্ধ করা হলো। সকাল ব্যতীত এই দরজাটি আজ আর খুলা হবে না ধন্যবাদ।
.
তখন রিংকি পাশ থেকে বলে,
— তোদের এমন অবস্থা দেখে এক গান মনে পড়ছে রে। ” হাম তুম এক কামরে বান্দ হো ওর চাবি খো যায়ে।”
তো রিয়ানু বেবি ইজ বান্দ কামরেকা আচ্ছা ইসতেমাল কারনা হ্যাঁ।
.
আরিশাও তাল মিলিয়ে বলে,
— আমাদেরকে খালামনি ডাকার জন্য কাউকে কিন্তু খুব দরকার। তো যত তারাতারি পারিস আমাদের সেই ডাকার জন্য একটা মানুষকে নিয়ে আসিস।
.
তখন রিংকি আরিশার পেটে কুনোই দিয়ে গুতা দিয়ে বলে,
— খালামনি বলা মানুষটা তো তখনই আসবো যখন তুই কাবাব ম্যায় হাড্ডি হওয়ায় অফ করবি। এখন চল এইখান থেকে! এদের টাইম স্পেন্ড করতে দে।
.
আরিশা এক ভেংচি কেটে বলে,
— হুহ! বাই গাইস ইঞ্জয় ইউর নাইট আই মিন সাপ্রাইস। হেহে!
.
এই বলে দুইজনে এক দৌড়ে নিজ রুমে চলে আসে। রিয়ানা বেচারি আর কি বলবে? সে তো দুইজনের কথা শুনে লজ্জায় শেষ।
দুইজনের কথায় আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন মাটি ফাঁক করে তার ভিতরে ঢুকে পড়ি। রিয়ানের দিকেও তাকাতে পারছি না লজ্জায়। তাও কোনমতে সাহস জুগিয়ে রিয়ানের দিকে আড়চোখে তাকাই। সে এখনো নিরব দাড়িয়ে আছে। মুখ ভঙ্গিতে তেমন পরিবর্তন না হলে তাকে কিছুটা অপ্রস্তুতই লাগছে। মনে হচ্ছে যে সেও বোধহয় এক দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে।
তখনই হুট করে সাউন্ড বক্সটি বেজে উঠে আর আরমান মালিকের ” জাব তাক” গানটি বেজে উঠে। হঠাৎ করে গান বেজে উঠায় আমি চমকে উঠি আর রিয়ানের গা ঘেষে দাড়িয়ে পড়ি। রিয়ান এইবার আমার দিকে তাকায়। আমি রিয়ানের দিকে তাকাতেই আমাদের দুইজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।
রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
.
— গান শুনে ভয় করছে নাকি আমার থেকে? যদি আমার থেকে ভয় করে থাকে তাহলে তো দেখছি তুমি সেই ভয়ের কাছেই ছুটে আসছো।
.
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত সুরে বলি,
— না মানে!
.
— থাক বলতে হবে না। আমি শুধু মজা করছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে আমার শালিকারা কিন্তু অনেক সুন্দর করেই রুমটা সাজিয়েছে।
.
— হুম। লজ্জা মাখা কণ্ঠে।
.
— তারা যখন এত কষ্ট করেছে তাহলে তাদের কষ্টটা সার্থক করা হক। কেকটা কেটে আর একটা কাপল ডান্সের মাধ্যমে। কি বল!
.
আমি মুচকি হেসে সম্মতি জানাই। তারপর রিয়ানের পিছে পিছে যাই। দুইজন মিলে কেকটা কাটি। রিয়ান আমাকে খায়িয়ে দেয় আর আমিও তাকে খায়িয়ে দেই। অতঃপর রিয়ান আমার সামনে তার হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
.
— মে আই!
.
আমি মুচকি হেসে তার হাতের উপর হাত রাখি। তারপর রুমের মাঝে এসে দাড়াই। রিয়ান তার এক হাত আমার কোমরে রাখে আরেক হাত আমার হাতের ভাজে। আমি আমার আরেক হাত তার কাঁধে। গানের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা নাচতে শুরু করি। আমি রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি আর রিয়ান আমার দিকে। দুইজনই ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। রিয়ান এইবার আমাকে ঘুরিয়ে তার বুকের সাথে আমার পিঠ ঠেকিয়ে দেয়। আবার আমাকে ঘুরিয়ে নিচের সামনে নিয়ে আসে।
এইভাবে নাচের তালে তালে কখন আমরা একদম কাছে এসে পড়ি বুঝতে পারি না। রিয়ান এইবার আমাকে তার একদম কাছে টেনে নেয়। আলতোভাবে আমার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
.
— তোমার যখন সম্মতি হবে ঠিক তখনই সব হবে। এর আগে কিছু নয়। আমি চাই না তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করতে। আমার কাছে তুমি আছো এইটা আমার জন্য যথেষ্ট। মুচকি হেসে।
.
আমি এইবার ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। রিয়ান আমায় ছেড়ে দিতে নিলে আমি তাকে আকঁড়ে ধরি। তারপর কিছু না বলে তার ওষ্ঠদ্বয়ে নিজের ওষ্ঠ দুটো মিলিয়ে দেই। বেশ কিছুক্ষণ স্বরে এসে তার বুকে মাথা রেখে বলি,
.
— আমি আপনারই রিয়ান। আপনাকে আমার কাছে আসতে অনুমতি নিতে হবে না। আপনাকে ভালবাসি রিয়ান খুব ভালবাসি। চোখ বন্ধ করে।
.
রিয়ান এইবার মুচকি হেসে আমায় জড়িয়ে ধরে।
.
.
🍁
.
সকাল ৮ বেজে ৩১ মিনিট,
আকাশে হাল্কা মেঘ জমে আছে আর তার পিছেই সূর্য মামা বসে বসে ঝিমুচ্ছে। মাঝে মধ্যে মেঘ দুষ্টুমির ছলে সরে যাচ্ছে আর সূর্য মামার ঝিমুনিতে ব্যাঘাত ঘটছে। শা শা শব্দ করে বাতাস বয়ে চলে। যান্ত্রিক শহরটি ধীরে ধীরে তার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। পাখিরা আকাশে ছুটোছুটি করে চলেছে। মাঝে মধ্যে দুই এক জোড়া পাখি বারান্দায় এসে বসে গুন গুন করছে।
আমি আয়নার সামনে চুল গুলো মুচছি তখনই বারান্দায় থাকা এক জোড়া চড়ুই পাখির দিকে নজর যায়। দুইজনই খুনশুটিতে মেতে উঠেছে। আবার একটু পর ভাব করে এক সাথেই উড়ে চলে যায়। তা দেখে আমি মুচকি হেসে আয়নার মধ্যে দিয়ে রিয়ানের দিকে তাকাই। রিয়ান চ্যাপ্টা হয়ে শুয়ে আছে। গায়ে তার চাদর জড়ানো। উপরে দিয়ে তার উদোম পিঠটা দেখা যাচ্ছে।
তা দেখে আমার কালকের রাতের কথা মনে পড়ে যায়। সাথে সাথে আমার গাল দুটো লাল হয়ে উঠে। আয়নায় নিজের তাকাতেও যেন লজ্জা লাগছিল। হঠাৎ আমার মনের মধ্যে শয়তানি বুদ্ধি এসে হানা বনে।
আমি পা টিপে টিপে রিয়ানের কাছে যাই তারপর তার সামনে গিয়ে চুলটা ঝাড়া দিতে থাকি। চুলের পানি গুলো পানির ঝাপ্টায় পরিনত হয়ে রিয়ানের মুখের উপর গিয়ে পড়ে। এইটা করার মূল উদ্দেশ্য রিয়ানকে বিরক্ত করার।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো যেখানে রিয়ানের এক বিরক্তিকর ভাব প্রকাশ করা সেখানে রিয়ান তার বদলে মুচকি এক হাসি হাসছে। তা দেখে রীতিমতো আমি অবাকই হই। তখনই রিয়ান আমার হাত ধরে আমায় তার বুকের উপর ফেলে চোখ খুলে বলে,
.
— এমন এক সকালের আশা যে বহুত আগে থেকেই আমি করে রেখেছিলাম রিয়ুপাখি। অবশেষে আজকে গিয়ে এমন একটি সকাল আমি পেলাম। আজ মনে হচ্ছে আমি আমার জীবনের সকল প্রাপ্তি পেয়ে গিয়েছি। থ্যাংকস টু ইউ।
.
আমি শুধু মুচকি হাসি দেই।
.
.
আজ রিয়ানকে জামাই বাজার করতে হবে। যার জন্য সে সকল প্রস্তুতি নিয়ে চলে গিয়েছে বাজারে। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে সে ২ ব্যাগ ভরে বাজার করে এনেছে। এক ব্যাগে হরেক রকমের মাছ তো আরেক ব্যাগে নানান রকমের সবজি। এত বাজার দেখে সকলেই প্রায় বিষ্ময়কর চোখে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল। অবশেষে সব পেরিয়ে আন্টিরা লেগে পড়ে রান্নার কাজে। এইদিকে রিংকি আর আরিশা পিছে লেগে পড়ে আমার। দুষ্টুমি আর খুনসুটিতে পাড় করে ফেলি কয়েক ঘন্টা।
দুপুরের খাবার শেষে আমি আর রিয়ান রুমে চলে যাই৷ আরিশা আর রিংকি চলে যায় বাইরে।
.
.
🍁
.
রিক্সার মধ্যে ইশান আর রিংকি বসে আছে। রিংকি মূলত ইশানকে বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখাছে। রিংকি হুট করে বলে উঠে,
— ওই ব্রিটিশ বান্দর।
.
— বলুন।
.
— চলেন আজকে আপনাকে এইখানকার বেস্ট ফুচকা খাওয়াবা।
.
— হোয়াট ইজ পুচকা? কৌতূহলি চোখে।
.
— আরেহ ভাই ওইটা পুচকা না ফুচকা। আপনি তো দেখি পুরো ফুচকা জাতিকেই অপমান করে দিলেন। এর জন্য আপনাকে এক বস্তা শাস্তি দেওয়া উচিৎ। কঠোর হতে কঠোর শাস্তি।
.
— কি এমন জিনিস এইটা যে নাম বিকৃতি এর জন্য আমাকে শাস্তি পেতে হবে?
.
— খেলেই বুঝবেন। এই মামা সাইডে ওইখানে রিক্সা থামিয়েন তো।
.
রিক্সা এসে থামে এক ফুচকার দোকানের সামনে। রিংকি রিক্সা থেকে নেমে তিন প্লেট ফুচকা ওর্ডার করে। কিছুক্ষণ বাদেই তিন ফুচকা নিয়ে এসে একটা ইশানকে দেয় আরেকটা রিক্সাওয়ালা মামাকে। ফুচকার প্লেট দিয়ে রিংকি বলে,
— মামা আমরা যখন খাব আপনিও খান। খিদা কিন্তু সবার এই লাগে।
.
রিক্সাওয়ালা মামাটা এইবার ছলছল চোখে রিংকির দিকে তাকায়। বুঝাই যাচ্ছে যে আগে কেউ হয়তো বা তার জন্য এমনটা করে নি।
রিংকি এইবার ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
.
— খেয়ে দেখেন। অনেক মজা। ইয়াম ইয়াম! একবার খাইলে বার বার খাইতে চাইবেন।
.
ইশান এইবার উৎসুক্যের নিয়ে এক পিস ফুচকা মুখে দেয়। সাথে সাথে তার চেহারাটা বিকৃতি ধারণ করে। তারপর বলে,
.
— এইটা এমন কেন? এত ঝাল আর টক। কেমন যেন লাগছে। ইয়াক! এইটা মানুষ কিভাবে খায়।
.
— আপনাকে না কচু গাছের সাথে ফাসি দেওয়ার দরকার। ফুচকার বদনাম করেন। ওই মিয়া আর কয়েকবার খান দেখবেন ঠিক লাগবে।
.
ইশান কিছু না বলে আরও কয়েকবার খায়। কিন্তু এইবার ঝালে ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মুখ একদম লাল হয়ে যায়। সে রিক্সা থেকে নেমে লাফায়ে শুরু করে। তা দেখে রিংকি হাসতে হাসতে বলে,
.
— নাও ইউ আর লুকিং লাইক এ লাল বান্দর। হেহে!
.
ইশান এইবার দৌড়ে এক দোকানে গিয়ে পানি কিনে আনে আর গটগট করে খেয়ে। এখনো যেন ওর কান দিয়ে ধুয়ো বের হচ্ছে আর রিংকি তা দেখে হাসতে থাকে।
.
.
🍁
.
দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে যায়। রিয়ান আর আমি এখন একাই রিয়ানের ফ্লেটেই থাকি। সকলেই ফিরে গিয়েছে তাদের গন্তব্যে।
আমি আর রিয়াম এক সাথেই মেডিক্যালে যাওয়া আসা করি। রিয়ান আমার মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খেয়াল রাখে। কোন কিছুতে কোন কমিতি থাকতে দেয় না। এমন কি সে আমার পড়ালেখা নিয়েও বেশ সিরিয়াস। প্রতিদিন বাসায় এসে আমাকে বিভিন্ন জিনিস বুঝিয়ে দেয়। আমাকে যে সে অনেক ভালবাসে তার প্রতি কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু মাঝে মধ্যে এই রিয়ানকে আমার বড্ড অচেনা লাগে। হুট করেই এত রেগে যায় যেন সবকিছু শেষ করে দিবে। খানিকটা হিংস্র হয়ে উঠে সে। বেশির ভাগ যখন আসে আমার কথাটা। আমার দিকে কেউ বাজে দৃষ্টিতে তাকালেই তার অবস্থা নাজেহাল করে দেয় সে। এইতো কয়েকদিন আগের কথা, রিয়ানের সাথে শপিং করতে গিয়েছিলাম। তখন একটা লোক আমায় ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছিল বলে রিয়ান তাকে সকলের সামনে তাকে এবড়োথেবড়ো ভাবে পিটায়। প্রায় জান দিয়ে নিবে এমন অবস্থা। খুব কষ্টে তাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছিলাম। সে যে কতটা হিংস্র হয়ে উঠেছিল তা শুধু আমিই জানি। সেইদিন প্রথম আমার রিয়ানের থেকে ভয় লেগেছিল।
মাঝে মধ্যে রিয়ানের কাছ থেকে অতি এক পরিচিত ঘ্রাণ পাই। কিন্তু প্রতিবারই সনাক্ত করতে ব্যর্থ হই। কেন যেন মনে হয় ঘ্রাণটি আমার খুব চেনা। কিন্তু সেই চেনা ঘ্রাণটি আর আসলে সনাক্ত রুপে চেনা হয় না।
রিয়ান মাঝে মধ্যে বেশ অদ্ভুত আচারণ করে। অদ্ভুত বলতে পাগলামো করে। আমার সামান্য হাত কাটাতেও সে এমন রিয়েক্ট করে যেন কি না কি হয়ে গিয়েছে। অনেক সময় তো নিজেকেই আঘাত করে বসে এই বলে যে, ” তোমার প্রত্যেকটা আঘাতও আমার হতে হবে।”
আমি তখন শুধু নির্বাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। অনেক সময় ভাবি, “ঠিক কতটা ভালবাসতে পারলে মানুষ এমন করতে পারে?” কিন্তু প্রতিউত্তরে শুধু “রিয়ানের” নামটি এই আসে।
.
.
আজ আমি মেডিক্যাল যাই নি। কিছু এসাইনমেন্ট বাকি ছিল যার জন্য বাসায় বসেই তা শেষ করার উদ্যোগ নেই। তাই রিয়ান সকাল সকালই চলে যায় মেডিক্যালের উদ্দেশ্যে।
এসাইনমেন্ট করতে গিয়ে দেখি আমি আমার একটা বই আমার বাসায় রেখে এসেছি। সেই বইটির এতদিন দরকার না পড়ায় জিনিসটি চোখে পড়ে নি। তাই বাধ্য হয় বাসায় যাব বলে ঠিক করি।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন যখন নিজের বাসার চাবিটি খুঁজে উঠতে ব্যর্থ হই। হুট করেই মনে পড়ে যায় যে আমি ওই বাসার চাবিটি ওই বাসাই রেখে এসেছি। মন খারাপ করে বসতেই আমার মনে পড়ে যে রিয়ানের কাছে তো আমার বাসার ডুপ্লিকেট চাবি আছে। ভেবেই মনটা খুশিতে নেচে উঠে।
আমি দ্রুত হাতে সেই চাবিটি খুঁজতে থাকি। একসময় পেয়েও যাই। চাবিতে আমার ফ্ল্যাট নাম্বার “৫০৬” লিখা ছিল বিধায় খুঁজতে তেমন বেগ পেতে হয় নি।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো যে আমি বাসার দুইটা চাবি পাই। মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগ্রত হতে থাকে যে,”রিয়ানের কাছে আমার বাসার দুইটো চাবি কিভাবে আসলো? ”
তখনই নজর যায় আমার কিনারে পড়ে থাকা একটির চাবির দিকে। আমি চাবিটি হাতে নিয়ে দেখি তাতে “৫০৫” লিখা। যা দেখে আমি রীতিমতো অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে যাই। আবার মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন এসে উঁকি মারে যে,” আমার পাশের ফ্ল্যাটের চাবি রিয়ানের কাছে কেন? সে কি সেখানে থাকতো? যদি থাকতো তাহলে জানতাম না কেন? ”
এমন হাজারো প্রশ্ন আমার মাথায় এসে ভীড় জমায়। তখনই ভাবলাম হয়তো রিয়ান আমার জন্য কোন সাপ্রাইস প্লেন করছে। তাই আমি উৎসুক ভাব নিয়ে পরিকল্পনা করি যে রিয়ানের সাপ্রাইস দেওয়ার আগেই আমি সেটি দেখবো। যে ভাবা সেই কাজ! রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ি “৫০৫” নাম্বার ফ্ল্যাটের সাপ্রাইস নামক রহস্যটি উদঘাটনের উদ্দেশ্যে।
.
.
#চলবে