আমার আসক্তি যে তুমি পর্ব ৪৯+৫০

#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_49
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
🍁
‘৫০৫’ নাম্বার ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে আছি। মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে। বুকের বা পাশটাও বার বার ধুকধুক করে উঠছে। হুট করেই এমন কেন হচ্ছে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি এইসব উপেক্ষা করে উৎসুক চোখে দরজার লকের মধ্যে চাবিটা ঘুরাই সাথে সাথে ঘ্যাঁচ করে দরজাটা খুলে যায়। আমি এইবার ভিতরের দিকে অগ্রসর হই।
ভিতরটা বেশ অন্ধকার। সকল জানালায় কালো পর্দা জরানো এমনকি বারান্দার দরজায়ও। যার ফলস্বরূপ বাইরের তীক্ষ্ণ রশ্মি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারছে না। নাকে কেমন এক আবছা গন্ধ আসছে। আমি এইবার জানালার কাছে গিয়ে পর্দাগুলো মেলে দেই। সাথে সাথে পুরো ঘরের কোনে কোনে তীক্ষ্ণ রশ্মিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। আমি এইবার চারদিকটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকি৷ আর যা দেখি তাতে আমি অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যাই।
ডাইনিং এর পুরো কালো দেয়াল জুড়ে শুধু আমারই ছবি। এমন কোন ফাঁকা জায়গা নেই যেখানে আমার ছবিটি ঘাপটি মেরে বসে নেই।ডাইনিং এ কোন আসবাবপত্র না থাকায় ছবিগুলো খুব সহজেই আমার চোখের সামনে ভাসছে। এইখানে সবচেয়ে বেশি অবাক করার বিষয়টি হচ্ছে যে এইখানে থাকা সকল ছবি এই আমার অজানতে তুলা হয়ে।
আমি এইবার ছবিগুলো কাছে গিয়ে ছবিগুলো ছুঁয়ে দেই। ছবিগুলো যে বেশ যত্ন করে লাগানো হয়েছে বুঝাই যাচ্ছে। ছবিগুলোর দিকে চোখ বুলাছি ঠিক তখনই ছবির এক কিনারে থাকা কালো কালি দিয়ে লিখা তারিখটির উপর আমার নজর পড়ে। আমি তারিখটা দেখতেই শিউরে উঠি। তারিখটা হচ্ছে “২০.০২.২০১৬”। আমি এইবার ভ্রু দুটো কুচকিয়ে সকল ছবিগুলোতে চোখ বুলাতে থাকি। সকল ছবির নিচে ডান দিকে তারিখ লিখা আছে। আমি এইবার উপর থেকে তারিখ গুলো দেখতে থাকি। “১২.০৮.২০১৫” থেকে ছবির তারিখ গুলো শুরু হয়েছে। এই দিন থেকে শুরু করে প্রত্যেকদিনেরই ছবি আছে আমার।আমি এইবার আস্তে আস্তে সামনে যেতে থাকি। তিনটি দেয়ালে পড়ে ছবির ধারা শেষ হয় এবং শেষ তারিখটি হচ্ছে “৯.০৫.২০১৭”।
আমি এইবার বিরবির করে বলি,
.
— এইটা কিভাবে সম্ভব! রিয়ান আর আমার পরিচয়ই হয়েছে ৪-৫ মাস আগে। আর এইখানে আমার ছবি লাগানো আরিও ৩-৪ বছর আগের। ছবিগুলো যে মিথ্যা তাও না। এইগুলা বেশ পুরানো ছবি এই।
তার মানে কি রিয়ান আমাকে আরও ৩-৪ বছর আগে থেকেই চিনে। উফফ কিছু বুঝতে পারছি না।
.
আমি এইবার কৌতূহল বসতো অন্যসব রুম দেখতে যাই। রুমের সামনে যেতেই অবাক হয়ে যাই, একেকটা রুমে ১,২,৩ নাম্বার দেওয়া। আমি এইবার নাম্বার অনুযায়ী সব রুম দেখতে থাকি।সকল রুমেই আমার ছবি লাগানো। শেষের একটি ছবিতে “২৪.০২.২০২০” লিখা। এইটি সেইদিন যেইদিন রিয়ানের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। এর পরে আর ছবি নেই।
আমি এইবার এর পরের রুমটিতে যাই। রুমের গায়ে ৪ নাম্বার লিখা। আমি এইবার আস্তে দরজাটা খুলি।
দরজা খুলতেই আবছা শুকনো ফুলের ঘ্রাণ নাকে আসে। আমি এইবার রুমের মধ্যে প্রবেশ করি। রুমটির দেয়ালের মধ্যে কস্টিপ দিয়ে অজস্র শুকনো ফুলের লাগানো। আর তার নিচেই একটা ছোট কাগজ লাগানো আর তাতে কিছু একটা লিখা। আমি এইবার কাছে গিয়ে সেটি পড়তে শুরু করি। আর পড়তে গিয়ে চমকে উঠি। এইগুলো সেই ছন্দগুলো যেগুলো আমাকে সেই অচেনা ফুল পেরকটি পাঠাতো। আমি এইবার একে একে সকল ছন্দগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। সকল ছন্দ একই। আমাকে যে ফুলের সাথে যে ছন্দটি দেওয়া হয়েছিল ঠিক সেই ফুলের একটু টুকরো দেয়ালের সাথে লাগানো আর তার উপরে সেই ছন্দটি লাগানো। এইসব দেখে এইবার আমার ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে। রিয়ানই যে সেই ফুল পেরক ছিল তা বুঝতে আমার আর বেশি বেগ পেতে হয় নি।
কিন্তু তাও আমার মনের মধ্যে চলছিল হাজারো প্রশ্ন। তার মধ্যে একটি প্রশ্ন এখন বার বার উঁকি দিচ্ছে আর তা হলো,
” রিয়ানই যদি সেই ফুল পেরক হয় তাহলে কেন আমাকে এই ব্যাপারে জানালো না? কেন আমাকে ভালবাসার পরও ভালবাসার দাবী নিয়ে সামনে আসে নি? কেন সে আমার হতে আড়াল ছিল। ”
কিন্তু উত্তরে আমি কিছুই পাই না। তখনই আমার নজর যায় পাশে থাকা টেবিলের দিকে। সেখানে মোটা একটা ডাইরি রাখা সাথে আরও কিছু ফাইলের মত কাগজ। আমি সেইগুলা হাতে নিয়ে নেরে চেড়ে দেখতে থাকি। তখনই আরও একটি চিকন ডাইরি চোখে পড়ে। এতকিছু একসাথে এখন দেখা সম্ভব নয় বলে আমি দুইটো ডাইরি এই আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে নেই। পরবর্তী সময়ে যাতে ধীরে সুস্থে পড়তে পারি তার জন্য।

এইবার আমি একদম কিনারের রুমটিতে যাই। রুমটিতে ৫ নাম্বার লিখা।
আমি এইবার সেই রুমে প্রবেশ করি। সেই রুমটি ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছে না তাই আমি হাতরে হাতরে লাইট সুইচটি খুঁজে বের করি। সুইচটি অন করতেই সামনের দেওয়ালে আমার অনেক বড় একটি হাসউজ্জ্বল ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমি খিলখিলিয়ে হাসছি আর বাতাসে আমার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছুটে চলেছে। ছবিটি আরও ৩ বছর আগের। সেইদিন আমার জন্মদিন ছিল। সেইদিন আরিশা আর রিংকি মিলে আমায় ওদের বাসার ছাদে সাপ্রাইস দিয়েছিল। সেখানেই ওদের সাথে খুনসুটি করার সময় আমি এইভাবে খিলখিল করে হাসছিল। ঠিক তখনই এই ছবিটি তুলা হয়েছে। বেশ শভ্রময়ই লাগছে এই ছবিটিতে। আমি কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকি।
আমি এইবার সেখান থেকে চোখ সরিয়ে চারদিকে চোখ বুলাতে থাকি। রুমের এক পাশে একটা টেবিল রাখা। তার উপরে একটি বোর্ড আর তার মধ্যে কতকিছু পয়েন্ট করে রাখা। তারই অন্য পাশে একটি টিভি। আমি এইবার ধীর পায়ে আমার ছবিটির দিকে তাকিয়ে রুমে প্রবেশ করি। হাটতে গিয়ে পায়ের মধ্যে কিছু বাজে। নিজে তাকাতেই দেখি রক্ত মাখা এক ছুড়ি।
সাথে সাথে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠি। একটুপর কিছুটা শান্ত হয়ে চোখ খুলি আর নিচে তাকাই। তাকাতেই আমি শিউরে উঠি। ছোপা ছোপা রক্তের ছাপ। তা দেখে আমি কয়েক কদম পিছে চলে যাই। পিছে যেতেই আমি পাশে রাখা টেবিলের সাথে বারি খাই। তাল সামলানোর জন্য আমি টেবিলে হাত রেখে ভর দেই। তখনই হাতের নিচে একটি রিমোট এসে পড়ে। আমি এইবার পাশে তাকিয়ে রিমোটটা হাতে নেই। হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে থাকি। হঠাৎ অন করা বাটনে আমি চাপ দিয়ে বসি। আর সাথে সাথে টিভি অন হয়ে যায়। আর টিভিতে ভেসে উঠে আমার বাসার কোনার কোনার চিত্র। আমি সেই দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। আমার বুঝতে আর বেগ পেতে হলো না যে আমার বাসায় সিসিসিটিভি লাগানো। আমার ডাইনিং থেকে শুরু করে সকল জায়গায় সিসিটিভি লাগানো। ওয়াশরুম বাদে।
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মনের মধ্যে ক্ষপ সৃষ্টি হতে থাকে। বার বার মাথায় শুধু এই প্রশ্নটা ঘুরঘুর করতে থাকে যে,
“রিয়ান এইটা কিভাবে পারলো? কিভাবে?”
.
আমি এইবার রাগে ক্ষোপে পিছে ঘুরে দাড়াতেই চমকে উঠি। একটা বোর্ডে রকি, আবির, আরিয়ানের ছবি লাগানো। তার সাথেই আছে আরও অসংখ্য জনের ছবি। যাদের মুখ মন্ডল কিছুটা হলেও আমার চিনা। এরা এক সময় আমাকে ডিস্টার্ব করেছিল এবং আমার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
সকলের ছবিতেই লাল কালি দিয়ে আড়া-আড়িভাবে দাগ কেটে রাখা হয়েছে। এই ছবিগুলোর পাশেই তাদের লাশের ছবি দেওয়া। আর তাতে সেই একই লাল কালি দিয়ে টিক চিহ্ন দেওয়া।
এইসব এর কিছুই আমার মাথায় ঢুকছিল না। এইসবের মানে কি তা যে আমার অজানা। আর এই অজানাকে জানার আগ্রহ আমার বেরেই চলেছে। তাই আমি একটু খুঁজাখুঁজি শুরু করি। তখন হাতের ধাক্কার ফলে রিমোটটা পড়ে যায়। আর সাথে সাথে টিভিতে একটা ভিডিও শুরু হয়ে যায়। ভিডিওতে কেউ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেই চলে। আমি এইবার পিছে তাকিয়ে চমকে যাই। কেন না টিভির স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে রকির চেহেরাটি। আর তার সামনেই আছে রিয়ান। রিয়ান চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে,
.
— হাও ডেয়ার ইউ! আমার জান আমার রিয়ুপাখি র দিকে নজর দেওয়ার সাহস পায় কিভাবে হয় তোর? বড্ড ভুল করেছিস আমার জানের দিকে কুনজর দিয়ে। তার দিকে হাত বাড়ানোর সাহস কিভাবে হয় তোর? তাকে কাঁদিয়ে ঠিক করিস নি তুই! এর শাস্তি তোকে পেতেই হবে। তাও খুব ভয়ংকর শাস্তি।
.
এই বলে রিয়ান রকির এক হাত কেটে দেয়। আর রকি চিল্লিয়ে উঠে। রিয়ান এইবার ওর জিহ্বা কেটে দেয়।
এইসব দেখে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে চেঁচাতে থাকি। এইসব যে আমার সহ্য হচ্ছে না। ভয় যেন এইবার আমায় ঘিরে ধরে ফেলে। মাথা একদম ফাঁকা হতে শুরু করে। বার বার চোখের সামনেই সেই ভয়াবহ দৃশ্য ভেসে আসতে থাকে। আমি এইবার ভয়ে কাঁপতে থাকি। সেখানে দাড়িয়ে থাকাটাও আমার জন্য দায়ভার হয়ে উঠছিল।এরই মধ্যে মস্তিষ্ক বার বার একটা সতর্কবার্তা দিতে শুরু করে দেয় যে,
” রিয়ান খুনি! সে একজন খুনি। সে সবাইকে খুন করেছে। সে একজন নরপশু।”
.
আমি এইবার ফ্লোরে বসে পড়ি। ভয়ে চিৎকার করে কান্না করতে থাকি। রিয়ানের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে খুব। কানে এখনো ভিডিওতে চলা রকির আর্তনাদের ধ্বনিগুলো এসে বারি খাচ্ছে। সহ্য হচ্ছে না আমার এইসব কিছু। আমি এইবার সহ্য করতে না পেরে রিমোটটা টিভি মধ্যে ছুড়ে মারি। টিভিতে আঘাত লাগতেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাও বার বার সেই আর্তনাদটি আমার কানে ভাসছে এবং সেই দৃশ্যটি চোখে। আমি কোন কিছুতেই নিজেকে সংযত রাখতে পারছি না। আমি আমার কান দুটো চেপে ধরে কান্না করতে থাকি। তখনই কেউ আতঙ্ক মাখা কণ্ঠে আমার নাম ধরে ডেকে উঠে,
.
— রিয়ুপাখি!!
.
.#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_50
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
🍁
বার বার সেই আর্তনাদটি আমার কানে ভাসছে এবং সেই দৃশ্যটি চোখে। আমি কোন কিছুতেই নিজেকে সংযত রাখতে পারছি না। আমি আমার কান দুটো চেপে ধরে কান্না করতে থাকি। তখনই কেউ আতঙ্ক মাখা কণ্ঠে আমার নাম ধরে ডেকে উঠে,
.
— রিয়ুপাখি!!
.
কিন্তু সেই ডাকটি আমার কান পর্যন্ত আর পৌঁছালো না। কেন না আমি আমার কান দুটো চেপে ধরে বসেছিলাম। সাথেই ভয়ে একদম কুঁকড়ে ছিলাম। যার জন্য আমার আশেপাশেরই ঠিক কি হচ্ছে তার কোন জ্ঞানই আমার ছিল না। রিয়ান এইবার কিছুটা সাহস জুগিয়ে আবার আমায় ডাক দেয়। এইবার একটু জোরেই ডাক দেয়।
.
— রিয়ুপাখি!!
.
এইবার তার ডাকটি আমার কান পর্যন্ত পৌঁছায়। আমি এইবার চোখ তুলে দরজার দিকে তাকাই। এইবার আমি তাকে দেখে ভয়ে জমে যাই। কথা যেন মুখ দিয়ে বেরুচ্ছেই না। আমি ভয়ে একটু পিছে চেঁপে বসি।
রিয়ান এইবার আমার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে আমি চেঁচিয়ে উঠি,
— আমার কাছে আসবেন না। একদম আমার কাছে আসবেন না। আপনি একজন খুনি। আপনি আমাকেও খুন করে দিবেন।
.
এই শুনার সাথে সাথে রিয়ান থমকে দাড়ায় আর করুণ চোখে আমার দিকে তাকায়। রিয়ান বলতে থাকি,
— রিয়ুপাখি আমার কথ.. এই বলে এককদম এগুতে নিলেই আমি আবার চেঁচিয়ে পিছে চলে যাই,
.
— বলছি না আপনি আমার কাছে আসবেন না। আপনি রকিকে খুন করেছেন! খুনি আপনি! এই বলে আরও পিছিয়ে যাই।
তখনই হাতের সামনে সেই ধারালো ছুরিটি পড়ে। আমি একনজর সেই দিকে তাকিয়ে রিয়ানের দিকে তাকাই। রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলছে,
.
— রিয়ুপাখি আমার কথাটা তো শুন। বলেই এক কদম এগিয়ে আসে।
.
তা দেখে আমি সাথে সাথে সেই ছুরিটি হাতে নিয়ে নেই আর দাড়িয়ে পড়ি। আমি এইবার কাঁপা কাঁপা হাতে ছুরিটি নিজের বা হাতের কব্জিতে ধরে অস্পষ্ট সুরে বলি,
— আআপনি যযদি আর এক ককদমও সামনে আসেন ততাহলে আআমি আমার জজান দিয়ে দিব। একদম ককাছে আসবেন ননা আমার।
.
এই শুনেই রিয়ান থমকে দাড়ায়। আর অবাক চেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। রিয়ান এইবার করুন কণ্ঠে বলে,
— তুমি আমায় ভুল বুঝচ্ছো। আমি যা করে.. রিয়ানকে আর বলতে না দিয়ে আমি চেঁচিয়ে উঠি,
.
— আআপনাকে আআমি ককোন ভভুল ববুঝছি ননা। ববরং এএত দদিন ববুঝেছি। আআপনি এএকজন ননরপশু। খখুনি আআপনি। আআমি আআপনাকে ঘঘৃণা ককরি ররিয়ান। ঘঘৃণা কক! আর বলতে পারলাম না। আমার মাথা ঘুরে গেল। চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসেম আমি ঢলে পড়লাম মেঝেতে। হাতে ছুড়িটি ধরে রাখার কারনে হাতের সাইডে হাল্কা লেগে যায়। যার ফলে এক ফিনিক রক্ত ছিটকে পড়ে মেঝেতে।
.
রিয়ান তা দেখে আমার কাছে দৌড়ে আসে। তারপর আমার মাথা তার কোলে দিয়ে গালে চাপড় মেরে ডাকতে থাকে। কিন্তু আমি তখন জ্ঞানহীনভাবেই পড়ে থাকি। এত বড় শোকড আমি নিতে পারি নি বিধায় এমনটা হয়েছে।
.
.
🍁
.
পশ্চিম আকাশে সূর্যটি প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থা। দেখতেই দেখতে সূর্যটি অদৃশ্য হয়ে গেল সকলের চোখের ধুলো দিয়ে। পাখিরা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলেছে তাদের নীড়ের দিকে। আধার ঘনিয়ে আসছে। সাথেই যেন কোলাহল দ্বিগুণ বেড়ে উঠেছে। ঘরে ঘরে জ্বলে উঠেছে কৃত্রিম আলোগুলো।
বিছানায় অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছি আমি। রুমটা হিম শীতল হয়ে আছে। মাঝে মধ্যেই বয়ে চলেছে দমকা হাওয়া। বেশ কিছুক্ষনের মাঝেই আমার জ্ঞান ফিরে আসতে শুরু করে। আমি এইবার ধীরে ধীরে চোখ খুলতে শুরু করি।ঝাপসা ঝাপসা চোখে চারদিকে তাকাই। অতঃপর ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করি। মাথাটা বেশ ভারি হয়ে আছে। আমি এইবার ভালো মত তাকানোর চেষ্টা করি। হাত নারাতেই ব্যথা অনুভব করি। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি হাতে বেন্ডেজ করা। এইটি দেখে সাথে সাথে আমার ভ্রু কুচকিয়ে আসে। আমি এইবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে শুরু করি আমি কোথায় আর এইখানে কিভাবে আসলাম।
তখনই সামনে তাকাতেই আমি চমকে উঠি। রিয়ান পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে। চোখ তার রক্তিম লাল হয়ে আছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। মুখটা একদম মলিন হয়ে আছে। আমি তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব তখনই আমার সকালের কথা গুলো মনে পড়ে যায়।
সাথে সাথে আমি ভয়ে কুঁকড়ে যায়। বিছানা চেঁপে বসে পড়ি। চোখে মুখে ফুটে উঠে একরাশ আতঙ্ক। রিয়ান তা দেখে স্মিত হেসে বলে,
.
— খুব বেশি কি ভয় পাচ্ছ আমায় দেখে?
.
তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমি পাল্টা প্রশ্ন করি,
— আআমি এএখানে ককিভাবে? কাঁপা কাঁপা গলায়।
.
— আমি এনেছি তোমায়। এই বকে রিয়ান দাঁড়িয়ে যায় আর ধীর পায়ে আমার কাছে আসতে থাকে।
.
তাকে আসতে দেখে আমি চেঁচিয়ে উঠি।
— একদম কাছে আসবেন না আমার। আপনাকে আমার সহ্য হয় না৷ দূরে যান আপনি। খুনি আপনি।
.
রিয়ান এইবার আমার সামনে এসে আমার পাশে বসে। আমার হাত তার হাতের ভাজে নিয়ে বলে,
.
— হ্যাঁ আমি খুনি! তোমার ভালবাসায় আমি খুনি হয়েছি। তোমাতে আসক্ত হয়ে আসক্তির সকল সীমা পেরিয়ে গিয়েছি। আর তাতে আমার আফসোস নেই। কেন না এইটাই আমার আসক্তিময় ভালবাসা। শান্ত গলায়।
.
আমি এইবার এক ঝাটকায় নিজের হাত সরিয়ে ফেলি আর দূরে সরে এসে বসি। তারপর চেঁচিয়ে বলি,
— এইটা ভালবাসা না পাগলামি। চাই না আমি এমন ভালবাসা। চাই না কোন খুনিকে ভালবাসতে। আপনি একজন মিথ্যাবাদী। আপনি আমায় পদে পদে শুধু মিথ্যাই বলে গিয়েছেন। ধোঁয়াশায় রেখেছেন আমায়। প্রতারক আপনি। তার চেয়েও বড় কথা আপনি খুনি। আপনার হাত রক্তে রঞ্জিত। আর যত যাই হোক আমি একজন খুনিকে ভালবাসি না রিয়ান। ভালবাসি না আমি! শুধু ঘৃণা করি। আই জাস্ট হেট ইউ রিয়ান। আই জাস্ট হেট ইউ!
.
রিয়ান তখন আমার চুলের মুঠি ধরে ধরে আমাকে একদম তার কাছে নিয়ে আসে। তারপর গর্জন করে বলে,
— তুই আমাকে ভালবাস আর নাই বাস তাতে আমার কিছু যায় আসে না। কেন না আমার একার ভালবাসাই যথেষ্ট দুইজনের জন্য। আগেও বলেছিলাম আমার ভালবাসা সাধারণ নয়। সকল হতে ভিন্ন। আলাদা! আমি যেমন ভালবাসার জন্য মরতেও পারি তেমনেই অন্যকেও মারতে পারি। নিজের ভালবাসার জন্য সকল ত্রিসীমানাও পার দিতে পারি। আমার ভালবাসা যেমন অমৃত ঠিক তেমনই বিষাক্তও। এইটাই হচ্ছে রিয়ানের আসক্তিময় ভালবাসা।
.
আমি এইবার রিয়ানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলি,
— আপনি একটা নরপশু। অমানুষ! আপনার মত মানুষ কখনোই ভালবাসার মানে বুঝতে পারে না। কেন না আপনার মধ্যে না আছে মানুষত্ব, না আছে দয়া। কিভাবে পারলেন এত নিষ্ঠুর ভাবে সকলকে মারতে? কি দোষ ছিল ওদের হ্যাঁ? কি দোষ ছিল! কেন মারলেন সেই নিষ্পাপ মানুষদের?
.
— ওরা নিষ্পাপ নয় ওরা পাপী। তোমাদের দিকে তাকানোর ও হাত বাড়ানোর দুঃসাহস করেছে ওরা। এর শাস্তি তো ওদেরকে পেতেই হতো। ওরা ওর প্রাপ্য শাস্তিই পেয়েছে। শান্ত ভাবে।
.
— তাই বলে তাদের খুন করার অধিকার আপনার নেই। আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আপনি একজন ডাক্তার। আর ডাক্তারের ধর্ম জীবন রক্ষা করা জীবন নেওয়া নয়। আপনি কিভাবে পারলেন এত নিষ্ঠুর ভাবে তাদের খুন করতে? বাকিদের কথা না হয় বাদ এই দিলাম। তারা হয়তো বা দোষী। কিন্তু আবির! আবিরের কি দোষ ছিল? ওর বর্তমান অবস্থার পিছনে যে আপনি দায়ী তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। ওকে কোন দোষের শাস্তি দিয়েছেন আপনি? আমার কাছে এসেছে বলে? আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিল বলে?
নিজের ভাইয়ের এমন অবস্থা কিভাবে করতে পারলেন আপনি? কেন দিয়েছেন শাস্তি?
.
রিয়ান কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলে,
— ও ওর কর্মের ফলই পেয়েছে। তা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।
.
— বাহ রিয়ান বাহ! এতটা পাষাণ আমি জানতাম না। নিজেকে এখন ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে যে আপনার মত এক অমানুষকে আমি ভালবেসেছিলাম। নিজের প্রতি এখন ঘৃণা হচ্ছে। আপনার মত অমানুষের সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। কোনভাবেই না।
এই বলে আমি উঠে দরজার দিকে পা বাড়াতেই রিয়ান হুংকার দিয়ে উঠে। এতক্ষণ খুব কষ্টে নিজের রাগ সংযত করে রেখেছিল। কিন্তু রিয়ানার কথাগুলো রিয়ানের ধৈর্যের সকল বাঁধ ভেঙ্গে দেয়। রিয়ান আমার সামনে এসে আমার বাহু দুটো চেপে ধরে বলে,
.
— আমি অমানুষ হই আর যাই হয় তোকে এই অমানুষের সাথেই থাকতে হবে। তোকে ভালবেসেছি তোর থেকে দূরে যাওয়ার জন্য নয়। ভালবাসাকে ছাড়া যায় কিন্তু আসক্তিকে না। মনে রাখবি আমার আসক্তি যে তুই। আরআমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোকে শুধু আমার আসক্তি হয়েই সাথে থাকতে হবে। আর সেটা তোর স্বেচ্ছায় হোক অথবা অনিচ্ছায়। থাকতে তোকে আমার সাথেই হবে। তুই আমাকে ভালবাস বা ঘৃণা যাই করোস না কেন তোর সব কিছুতেই শুধু আমার অধিকার। বুঝেছিস।
.
আমি এইবার মোচড়ামুচড়ি করতে শুরু করি। আর চেঁচাতে থাকি,
— আমি থাকব না আপনার সাথে। ছাড়েন আমাকে। ছাড়েন! আমি চলে যাব। থাকব না আপনার সাথে।
.
এইবার রিয়ান আরও রেগে উঠে। রিয়ান এইবার আমাকে একদম কাছে টেনে নিয়ে এসে ওর ঠোঁট দুটো চেপে ধরে। সাথে সাথে আমি স্থির হয়ে যাই। নড়ার শক্তিটুকুও পাই না। বেশ কিছুক্ষণ পর রিয়ান আমায় ছেড়ে দিয়ে ওর কপালের সাথে জোর করে আমার কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

— আমার হিংস্রতা দেখতে এসো না। জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবে। আমার হিংস্রতা যে ঠিক কোন পর্যন্ত যেতে পারে তা তোমার ধারণার বাইরে। আমি যা হতে দিতে চাই না তা হতে দিও না।
আমার ভালবাসার রুপ থেকে পরিচিত হলেও আমার হিংস্রতা থেকে সম্পূর্ণ অপরিচিত। তাই বলছি এত জেদ করো না। ভালবাসি তোমায়! আমাকে ভুল বুঝো আর যাই করো দূরে তুমি যেতে পারবে না। তাই নিজের জিদ ছেড়ে দাও রিয়ুপাখি।
.
রিয়ানের কথায় আমার হোস এবং আমি এইবার রেগে যাই। তারপর চেঁচিয়ে বলতে থাকি,
— কি করবেন আপনি হ্যাঁ? কি করবেন! মেরে ফেল.. আর বলতে পারলাম না। রিয়ান আমার ঠোঁটে তার আঙ্গুল চেপে ধরে বলে,
.
— হুসস! যা প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছি না তা আনতে বাধ্য করো না। তা না হলে তোমারই ক্ষতি হবে। যা বলছি তা শুনো। তা না হলে আমি নিজেও জানি না আমি কি করবো। শান্ত ভাবে বললেও এতে ছিল এক ভয়ংকর হিংস্রতা।

রিয়ান এইবার আমাকে বলতে না দিয়ে গটগট করে রুম থেকে চলে যায় আর বাইরে দরজা লাগিয়ে দিয়ে যায়। আমি দ্রুত দরজার সামনে গিয়ে ধাক্কাতে থাকি। আর চেঁচাতে থাকি। কিন্তু এতে কোন প্রতি ক্রিয়া হলো না। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে নিচে বসে পড়ি। চোখ বেয়ে অজস্র অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে।
.
.
🍁
.
মেঝেতে বসে আছে রিয়ান। চোখ দুটো একদম রক্তিম বর্ন ধারণ করে আছে। চোখের নিচটা একটু ফোলা। পাশেই তার পরে আছে একটি ঔষধের কোটা। তার আশেপাশে ছিটিয়ে ঔষধগুলো। বা হাত দিয়ে টুপ টুপ করে রক্ত পড়ে চলেছে মেঝেতে। ফলস্বরূপ মেঝেতে সৃষ্টি হয়েছে রক্তের সুরু রেখা। যা একটু একটু করে প্রসারিত হয়েই চলেছে।
কিন্তু রিয়ানের সেইদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। রিয়ান এইবার বলতে শুরু করে।
.
.
.
#চলবে
কালকে গল্প পোস্ট করার সময় আমার এমবি ফুরিয়ে আসে যার জন্য কালকে গল্পটা ফরমেট হয়ে যায় আর গল্পটা ডিলিট হয়ে যায়। তাই আজকে আবার নতুন করে লিখতে হয়। আশা করি কালকে গল্প না দেওয়ার কারণ বুঝতে পেরেছেন।
.
.
.
🍁🍁🍁
.
— আমি তোকে ভালবাসি না এইকথা কি তোর মাথায় ঢুকে না? আগেও বলেছি এখন আবারও শেষ বারের মত বলছি আমি যা করেছি শুধু মাত্র প্রতিশোধ নিতে। তোর জন্য আমার মনে বিন্দু মাত্র জায়গা নেই বুঝলি। তুই যাই কর না কেন কোনদিন আমার মনে জায়গা করতে পারবি না। বিকোজ আই জাস্ট হেট ইউ।
.
কথাটি বলেই ইহান রুম থেকে চলে যায়। আরিহা ইহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দেয়। সেই রহস্যময় হাসি মুখের মধ্যে বিরাজমান রেখেই বলে,
.
— কথায় আছে, ” ভালবাসা দিয়ে ভালবাসতে শিখাতে হয়।” কিন্তু আমি ঘৃণা দিয়ে ভালবাসার সেই বিষাক্ত বীজটি বুনবো। মুচকি হেসে।
.
আরিহা এইবার রকিং চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে। চোখে তার এক অন্য রকম চাহনি। সেই চাহনিটি বুঝা বড় দায়। ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি।আরিহা সেই হাসি ঠোঁটে বিরাজ রেখে বলতে থাকে,

– আমি তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়াই নি বরং তুমি স্বেচ্ছায় এসে আমার জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়েছ। আমার মনে ভালবাসা নামক বিষাক্ত বীজটি বোপন করেছ। আমার #অন্তরালে_তুমি নামক বস্তুটিকে বসিয়েছ। যেই তুমি এত কিছু করেছ এখন সেই তুমি আমার থেকে দূরে যেতে চাচ্ছো?
নাহ! এইটা তো আমি হতে দিতে পারি না। কেন না যে তোমার সাথে যে আমার আরও অনেক হিসাব বাকি আছে। তুমি যা করেছ তার শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে ইহান। তাও আবার আমার স্টাইলে। সেই শাস্তিতে না পাবে তুমি আমার ক্ষমা, না পাবে আমার ভালবাসা, না পাবে আমার ঘৃণা। শূন্যহীন অনুভূতি নিয়ে বাঁচবে তুমি।
তখন তোমার অন্তরালে ঠিকই আমি রয়ে যাব। কিন্তু আমার #অন্তরালে_তুমি আর থাকবে না। গেট বি রেডি মি. ইহান মাহমুদ এক ঘৃণাময় বিষাক্ত ভালবাসার জন্য।
এই বলে আরিহা অট্টহাসিতে মেতে উঠে। আরিহা হাসতে থাকলেও এই হাসির পিছে লুকিয়ে আছে না বলা শত শত কষ্ট। যেই কষ্টের কোন তীরসীমানা নেই।
.
.
#

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here