ভালোবেসে মরেছি পর্ব ১৬

#পর্ব_১৬
গল্পঃ #ভালোবেসে_মরেছি🍂❣
writer: #Ashura_Akter_Anu
__________________________
কানের কাছে এসে ডেভিল কন্ঠে বললো,
“আমায় ছেড়ে বান্দরবান যাওয়ার প্লান করছিলেন মিস!?

মিহু পেছনে ফিরে দেখে অর্নব।খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দেয়,

‘এক্সকিউজ মি?আপনাকে সাথে করে বান্দরবান যাওয়ার প্লান আগে করেছিলাম বুঝি?’

“নাহ সেটা নয়,তবে তুমি না করলেও আমি করেছিলাম,আমাদের বিয়ের পর বান্দরবান ঘুরতে যাব একসাথে,আহ ভাবতেই লজ্জা লাগে’
(অর্নব কিছুটা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলে)

‘আপনার লজ্জা আছে?’ওমা, আমি তো ভেবেছিলাম আপনার লজ্জাই নেই’

কথাটি অর্নবকে খানিকটা আঘাত করে। এরপরও হাসি মুখে মিহুকে উত্তর দেয়,

” লজ্জা আছে কি নেই সেটা না হয় বিয়ের পর বুঝবে(চোখে মেরে)”

মিহু মনে মনে ভাবছে,এই পাগলটার আসলেই কোন লজ্জা নেই,কেন যে আমার পেছনে লাগে ধুর। ভাল্লাগে না।

ওর ভাবনার মাঝে এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে অর্নব বলে,

“ভালোলাগুক আর না লাগুক এই পাগলকেই তোমায় মেনে নিতে হবে”

একটা হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল অর্নব।

মিহু ওখানেই দাড়িয়ে আছে। মনে মনে একটা কিছুর পরিকল্পনা করছে সে। যাই হোক একে একটা শাস্তি দিতেই হবে। কারন অন্যদের থেকে এর শাস্তিটা একটু কম হয়ে গেছে। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে নিজের কারে গিয়ে ওঠে মিহু।

[ভার্সিটির সবাই জানে মিহু একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।তাই ওদের পক্ষে নিশ্চয়ই এমন দামী কার এফোর্ড করা অসম্ভব,ওর এত দামী গাড়িতে ওঠা দেখলে ভার্সিটির যে কেউ সন্দেহ করবে এটা স্বাভাবিক। আর এখন ঠিক তেমন কিছুই হবে]

গেইটের বাইরে মিহুকে কিছু বলার জন্য অপেক্ষা করছিল চৈতি। তবে সে দেখে মিহু নিজের মুখ ঢেকে সবার থেকে নিজেকে আড়াল করে গিয়ে সেই কারে ওঠে।মিহু চৈতিকে না দেখলেও চৈতি ঠিকই বুঝতে পারে ওটা মিহু। ব্যাপারটা চৈতিকে অনেকটা নাড়া দেয়।
তাই একটা সিএনজি নিয়ে কারটিকে ফলো করতে থাকে।
সে দেখতে পায়,মিহু যে কারটিতে উঠেছিল সেটা একটা বড় শপিং মলের সামনে গিয়ে থামে।

চৈতি ভালো করে খেয়াল করে,

গাড়ি থেকে প্রথমে ড্রাইভার নামে, এরপর সে গাড়ির পেছনের দরজাটা খুলে দেয়। কিন্তু???????

গাড়ি থেকে একটা ছেলে নামে, হয়তো বয়স ২১ কি ২২ হবে।এরপর ওনারা দুজনেই শপিং মলের ভেতরে চলে যায়। চৈতি সিএনজি থেকে নেমে যায়। এবং গাড়ির কাছে গিয়ে ভালো করে দেখে। কিন্তু ভেতরে তো আর কেউই নেই।

চৈতি ভাবে,এটা কি করে সম্ভব, তাহলে মিহু কোথায় গেল?ও তো এ গাড়িতেই উঠেছিল৷

দূর থেকে একটা গাছের আড়াল থেকে দাড়িয়ে চৈতিকে পরখ করছে মিহু।আজ ধরা পড়তে পড়তে বেচে গেছে সে।

আর যাই হোক এমন ভুল কখনো করবেনা।
🍂
_______________
বাসের জানালার ধার ঘেসে বসে আছে মিহু। ওকে দেখে মনে হবে একটু হলেই বাসের জানালা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এভাবে বসার কারনটা খুব সিম্পল। পাশেই বসে আছে শায়েখ অর্নব। অর্নব এবার নিজের ইচ্ছেতে মিহুর কাছে বসার প্লান করেনি। আসলে সব লটারি+ভাগ্যের খেল।সবাই মিলে সিটে বসার ব্যাপারে লটারি অ্যারেন্জ করেছিল। আর ভাগ্যক্রমে অর্নবের কাছেই মিহুকে বসতে হয়েছে।

বান্দরবান এর পথে বাস চলছে। মাঝে মধ্যে বাস একটু আধটু ধাক্কা খাচ্ছে।সেসব সময় না চাইতেও অর্নবের অনেকটা কাছাকাছি যেতে হচ্ছে।

মিহুর অমনভাবে বসা দেখে অর্নব ওকে জোড়ে একটা ধমক দিয়ে দেয় ও রাগী গলায় বলে,

-হোয়াট ইজ ইওর প্রবলেম?সবসময় নাক ছিটকাও কেন তুমি,বলোতো? ঠিকভাবে বসে থাকতে পারছোনা,ওদিকে চেপে বসার কি দরকার?আমি কি তোমায় টিজ করছি?

মিহু ভাবে,উনি কথাটি তো ঠিকই বলছে। আমিই শুধু শুধু এমন করছি।

অর্নব এবার শান্ত গলায় বলে,

‘আমার সাথে বসে যেতে যদি সমস্যা হয় তাহলে বল,আমি সিট চেইন্জ করে নিচ্ছি’

‘না না, সমস্যা নেই, আপনি বসুন।’
..
গভীর রাত্রে ফাকা রাস্তায় বান্দরবানের পথে গাড়ি অনেকটা জোড়ে ছুটেছে।
রাত বারোটার দিকে চট্টগ্রামের লাওগং বাজারের, বাইখোরাতে একটা বড়সর মার্কেটের পাশেই বাস থামলো। একনও প্রায় তিন চার ঘন্টার পথ পেরোতে হবে। কারন যেহেতু পাহাড়ি রাস্তা।পাহাড়ি এলাকায় একটা সমস্যা। এখানে কাছের পথও অনেক সময়ের ব্যবধানে পৌঁছোতে হয়। নইলে বড় কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই ফাকা হলেও খুব সাবধানে যেতে হবে ওদের।

সবাইকে আধা ঘন্টার মত সময় দেওয়া হয় এখানে,কিছু হালকা খাওয়া দাওয়া ও ছোট বড় বাথরুমের কাজ সারার জন্য।তাই সবাই নেমে পড়ে। জায়গাটা দেখে মনে হবে এখন হয়ত মানুষের সমাগম শুরু হবে। কারন রাত বারোটা হলেও এখানে লোকজনের কমতি নেই। যে যার মতো জিনিসপত্র কেনাকাটা করছেন।জায়গাটা এমন একটা ভাব জাগাবে মনে যেন,চাওয়াপাওয়ার যত কিছু আছে সব না দিলেও খুশিটা দিবে।

এখানকার মানুষজন এমন,গাড়ির অনেক স্টুডেন্টই সেখানে গিয়ে কেনাকাটা ও হাবিজাবি করছে এবং ওনাদের ব্যবহার এতটা অতিথি পরায়ন ও বন্ধু সুলভ যেন না আসলে বোঝার উপায় নেই।
..
বাস থেকে সবাই নেমেছ কিন্তু মিহু নামছেনা। বাসে একা একা বসে আছে। ওদিকে অর্নব বেরোলেও বাসের দরজার সামনে হাতের ওপর হাত রেখে একটা পা পেছনে বাকিয়ে বাসের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। দুপুরের দিকে বাস ছেড়েছে৷ এবং এতক্ষণ পর বাস এখানে এসে থামলো।মিহু নামছেনা দেখে অর্নবের রাগে শরীর জ্বলছে। কারন এতক্ষণ একজায়গায় বসে থাকলে যে কারও হাত পায়ের সমস্যা হবে। সেখানে মিহু নিজেকে আরও চেপে বসেছিল। অর্নব আর থাকতে পারলো না।শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোছাতে গোছাতে বাসের ভেতর প্রবেশ করলো। মিহু যেখানে বসে আছে সেখানে গিয়ে দুপাশে হাত ঠেকিয়ে মিহুর দিকে ঝুকে পড়লো।

মিহু কপাল কুচকে অর্নবের দিকে তাকালো। আর ভাবলো,
এখন আবার কিছু করবেনা তো?

রাগী চোখে মিহুকে প্রশ্ন করলো,

“পায়ে হেঁটে বাইরে যাবে? নাকি কোলে তুলে নিয়ে যাব,বলো কোনটা?”

প্রশ্ন শুনে মিহুর চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল। মানে টা কি?চুপচাপ বসে থাকতেও দিবে না নাকি?

“সাইলেন্ট কেন?আন্সার মি ড্যাম ইট?”(অনেকটা জোরে)

এবার মিহু খানিকটা ভয় পেল। মিহুর চোখেমুখে ভয়ের ছাপ দেখে অর্নবের বেশ ভালোলাগলো। মনে মনে খানিকটা হেসেও নিলো সে। যাই হোক, পাগলীটা কিছুটা হলেও ভীতু আছে।

মিহু ভীতু স্বরে জবাব দিলো,

” না না, আমি নিজেই যেতে পারবো, কোলে তুলতে হবে না”
‘হুম দ্যাটস লাইক অ্যা গুড গার্ল’
_________
ভোরে যখন ঘুম ভাঙলো মিহু দেখলো অর্নবের মুখটা ওর কপাল বারবর। যে কেউ দেখে মনে করবে মিহুর কপালে ও খুব যত্নে চুমু দিচ্ছে।

এটা মিহুর কাছে খানিকটা আজব লাগে,তবে বেশ ভালোলাগার মতো আজব কিছু।
নিজেকে অর্নবের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে মিহুর মুখটা অর্নব নিজের বুকে চেপে ধরে।

আসলে অর্নব জেগেই ছিলো যখন মিহুর কপালে চুমু দিচ্ছিল। কিন্তু মিহু জেগে যাওয়ায় এখন ঘুমের ভান করছে।

মিহুর মুখটা ইচ্ছে করেই নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়েছে সে। মুচকি হাসলেও মিহু টের পাচ্ছেনা।
বাসের বাকি সবাই ঘুমে কাত হয়ে আছে। আর কিছুক্ষণ বাদেই ওদের বাস গন্তব্যে পৌঁছোবে।

.
.
.
#চলবে___
.
.

.
★ভালোলাগেনা😞আপনারা একজনও একটাও সুন্দর করে কমেন্ট করেন না😒★
হ্যাপি রিডিং☺

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here