তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-১৮
___________
বরযাত্রীরা যেখানে বসেছে তার একটু তফাতে আচমকা দাঁড়িয়ে গেল অরূণী।সূর্য, সাহেদ আহমেদ প্রায় সবাই সেখানে। এভাবে উন্মাদের মত রুদ্রর কাছে দৌড়ে যাবে? সূর্যের চেহারার দিকে তাকিয়ে অরূণী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লো। সামনে পা বাড়ানোর সাহস হলো না।অরূণী আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে রইল।রুদ্রের চোখাচোখি হওয়া দরকার। কিন্তু রুদ্রের দৃষ্টির নাগাল পাচ্ছে না।অরূণী অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল।এক পর্যায়ে রুদ্রের দৃষ্টি বুঝি সদয় হলো।অরূণীর দিকে তাকালো। রুদ্রের মুখে এক ঝলক হাসি। রুদ্রের হাসিতে নিবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে আছে আরূণী।ওষ্ঠ কোণে আপনাআপনি ফুঁটে রয়েছে এক চিলতে হাসি।বিমগ্নের তীব্রতা এতই ছিলো যে রুদ্র কখন চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে সে খেয়াল নেই। উঁচু গলায় পিছন থেকে ডাক আসলো, “এই অরূণী।”
অন্যমনষ্ক থাকার কারণে এইটুকু কথায় হকচকিয়ে ওঠে অরূণী।অপ্রস্তুত ভাবে পিছনে তাকায়। চেহারায় অপ্রতিভ ভাব। সূর্য’কে দেখে অপ্রতিভ ভাব’টা আরো প্রগাঢ় হলো।
– “কী দেখছিস ওদিকে?কী অবস্থা তোর?নতুন ড্রেসও পরিস নি? এগুলো কী গায়ে দিয়ে আছিস?”
অরূণীর গলায় বিহ্বলতা, “দাদা বর দেখছিলাম।”
– “তোর এমন আড়ালে আবডালে লুকিয়ে বর দেখতে হবে কেন? আজকাল হয়েছে কী তোর?”
সূর্য একটু থেমে কঠিন গলায় বলল, “কেমন অদ্ভুত আচরণ করিস।কী হয়েছে তোর? তুই গায়ের জামা’টা পর্যন্ত বদলাস নি।এত আনন্দ আমেজের ভিতর রুমের কোণে বসে থাকিস।কেউ তোকে কিছু বলেছে?”
এই পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে অরূণী তড়িঘড়ি করে বলল, “দাদা আমি সেজেগুজে আসছি এক্ষুনি।”
অরূণী দ্রুত পায়ে সূর্যের সামনে থেকে চলে গেল। সেলিনা আহমেদ আর সাহেদ আহমেদ অরূণীর হাবভাবে চরম বিরক্ত।
_______
অরূণী রুমে গিয়ে খাটের ওপর বসে পড়লো। রুদ্রের হাসি’টা চোখের সামনে ভাসছে এখনো। রুদ্র ম্যাসেজ দিয়েছে ভাবতেই অরূণীর মনে হিমশীতল শিহরণ জাগে।অরূণী কালো একটা ড্রেস পড়লো,চুল গুলো আঁচড়ালো। প্রসাধনী বলতে কিছুই ব্যবহার করে নি।রুম থেকে বের হয়ে দেখে শুভ্রা,সায়মা ওঁরা সবাই বরের কাছে বসা। রুদ্রও সেখানে।অরূণীর হঠাৎ অস্বস্তি লাগলো সেখানে যেতে। কিঞ্চিৎ লজ্জাও পাচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লজ্জা, অস্বস্তি গিলে সেখানে গেল। গিয়েই রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল, “আরে রুদ্র বেহাই যে।”
রুদ্র তাকায় চোখ ফিরিয়ে। কপালে ভাঁজ পড়লো। ভ্রু খানিক কুঁচকালো। শুভ্রা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “অরূ আপা, আগে থেকে চিনিস না-কি? আমাদের সাথে তো মাত্র পরিচয় হলো।”
অরূণী রুদ্রের একটু কাছাকাছি বসলো।ট্রেনে দেখা হওয়া,গায়ে হলুদে দেখা,বিয়েতে দেখা সব যেন এখনো স্বপ্ন মনে হয় অরূণীর। ভালোলাগা কিংবা অবাক হওয়ার রেশ এখনো কাটাতে পারছে না। রুদ্র প্রত্যুত্তরে একটু হাসলো। একটু ভয় পাচ্ছে মনে মনে। তানভীরের সামনে অরূণী উল্টাপাল্টা কিছু বলে ফেলে না-কি আবার।বড় ভাই’কে সমীহ করে চলে রুদ্র।অরূণী শুভ্রার কথার প্রত্ত্যুতরে বলল, “হ্যাঁ আগে থেকেই চিনি। কালকেই তো পরিচয় হলো হলুদে।”
সায়মা বলে ওঠল, “কই,কই? আমাদের সাথে তো পরিচয় হলো না।”
অরূণী ওঁদের কথার প্রত্ত্যুতর না করে তানভীরের দিকে তাকালো। মাথা নিচু করে বরবেশে বসে আছে তানভীর। চেহারায় একটু লজ্জা লজ্জা ভাব আছে। অরূণী তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল, “দুলাভাই লজ্জা কী বেশি পাচ্ছেন?আমাদের সামনেই এত লজ্জা। আপার সামনে তো কাত হয়ে যাবেন।”
রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরূণীর দিকে।অরূণী আবার বলল, “তা দুলাভাই শরীর স্বাস্থ্য ঠিক আছে?”
তানভীর নিচু গলায় বলল, “হ্যাঁ ভালো।তোমরা কেমন আছো?”
তানভীরের নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে রুদ্র মনে মনে হাসছে।অরূণী রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, “রুদ্র বেহাই বউ নিয়ে আসেন নি?”
তানভীর মাথা নিচু অবস্থায়ই বলল, “ও আমার ছোট ভাই এখনো বিয়ে করেনি।”
অরূণী অবাক হওয়ার ভান করে বলল, “কী বলেন আপনার ছোট?আমি তো ভেবেছি আপনি ছোট।এত বয়স হয়েছে এখনো বিয়ে করেনি?”
রুদ্র অরূণীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।অরূণীর কথা গুলো শুনছে তাকিয়ে তাকিয়ে। অরূণী চাচ্ছে এই বিয়েটা কখনো শেষ না হোক।এই ভালো লাগার মুহূর্ত’টা থেমে থাকুক। থমকে যাক পৃথিবী। কিন্তু তা কী হয়? বিয়ে পর্ব ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অরূণী রুদ্রের আশেপাশে থেকেছে। অদ্ভুত এক ভালোলাগায় অরূণীর মন প্রাণ ছেয়ে যাচ্ছে। রুদ্রের সাথে তেমন কথা বলার সুযোগ হলো না।এক পর্যায়ে সুযোগ হলে অরূণী জিজ্ঞেস করল, “ম্যাসেজ কেন দিয়েছিলেন?”
রুদ্র বলল, “এখানে এসে তোমায় দেখছিলাম না তাই।”
– “মিস করেছেন?”
রুদ্র হাসলো, “মিস-টিস এমন কিছু না।এই ধরো আমি কোথায়ও গেলাম।সেখানে আমার পরিচিত কেউ আছে। তাঁর খোঁজ নেওয়া কিন্তু মিস করা না।”
রুদ্রের এমন উদাহরণ টানা দেখে অরূণীর মন বিষণ্ন হয়ে গেল। কিন্তু অরূণী মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে আজ কিছুতেই মন খারাপ করবে না। মনের বিষণ্ণতা দূর করে হাসার চেষ্টা করলো খানিক। সূর্য আশেপাশেই আছে তাই বেশিক্ষণ দাঁড়ালো না।
বউ সাজে চমৎকার লাগছে নিম্মিকে। হালকা পাতলা গড়নের চেহেরা। নাকটা টিকালো,চোখ দুটো উজ্জ্বল।গায়ের রং ফর্সা।সব মিলিয়ে সুন্দরী। অরূণীর মনে প্রশ্ন জাগে অরূণী যদি অমন সুন্দরী হতো তাহলে কী রুদ্র প্রেমে পড়ত? বর-বউ কে নিয়ে সবাই হাসিঠাট্টা মশকরায় মশগুল। কেউ কেউ ছবি তুলছে। অরূণীর তীব্র একাকিত্ব অনুভূত হচ্ছে। একসময় অরূণীর এক চাচাতো মামাতো বোন মাইশা’কে দিয়ে অরূণীকে গোপনে ডেকে পাঠালো নিম্মি। অরূণী স্টেজের কাছে গেল। রুদ্রও সেখানে ছিলো। সায়মা ক্যামেরা হাতে নিয়ে রুদ্র আর অরূণী’কে উদ্দেশ্য করে বলল, “তোমরা দুইজন বর বউয়ের পাশে বসো।”
অরূণীর মনে তখন উথালপাতাল আনন্দ। নিম্মি কী সায়মা’কে শিখিয়ে দিয়েছে এসব? অরূণী সেটা বুঝতে তাকালো নিম্মির দিকে। লম্বা ঘোমটা টেনে বসে থাকার কারণে কিছুই বুঝা গেল না।সায়মা দুই-তিন’টা ছবি তুলল।এর ভিতর সেলিনা আহমেদ ডাকলো অরূণী’কে।আড়ালে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই কী নিম্মির সাথে ওঁর শ্বশুর বাড়ি যাবি?সায়মা, শুভ্রা নিম্মির নানু যাবে।”
অরূণীর মনে উপচে পড়া খুশি।কখনো এমনটা ভাবে নি যে রুদ্রের সাথে দেখা হবে।তাও এভাবে।অরূণী আনন্দ চাপিয়ে রাখতে পারছে না। আনন্দ আর উত্তেজনা নিয়ে এক শব্দেই বলল, “যাবো।”
সেলিনা আহমেদ যাওয়ার পর অরূণী বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে আছে। রুদ্রের বাসায় গিয়ে থাকবে?অরূণীর শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা রোমাঞ্চিত হচ্ছে যেন। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ। এত আনন্দ দাবিয়ে রাখতে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে অরূণীর। জোরে জোরে কয়’টা শ্বাস ফেলল।
কনে বিদায়ের আগে রুদ্র দাঁড়িয়ে ছিলো মানুষের ভিড়ে।অরূণীও আস্তে আস্তে সেখানে গেল। আশেপাশের মানুষ জন উপেক্ষা করে চাপা গলায় বলল, “আচ্ছা আমি যদি দেখতে নিম্মি আপুর মত সুন্দর হতাম তাহলে আমায় ভালোবাসতেন?”
রুদ্র চারপাশে তাকায়।এই মেয়ের কী কাণ্ড জ্ঞান নেই কোথায় বসে কী জিজ্ঞেস করে? রুদ্র চোখ রাঙালো।অরূণী অনুরোধ করে বলল, “বলেন না?”
রুদ্র আবারো চোখ রাঙালো। রুদ্র যখন জানতে পারলো অরূণী নিম্মির সাথে যাবে তখন যেন আতঙ্কিত হয়ে গেল।অরূণী’কে বলল, “অরূণী কোনো উল্টাপাল্টা কাণ্ড ঘটিয়ো না প্লীজ।”
– “সব রকম কাণ্ডই ঘটাবো। আচ্ছা আমার আর আপনার সাথে এভাবে দেখা হয়েছে এটা কী আপনার রুমমেট জানে?”
রুদ্র হেসে ফেলল।বলল, “এসব শুনে ওঁর প্রেসার বেড়ে গেছে।অবশ্য তোমায় ট্রেনে,আমাদের বাসায় দেখেও আমার প্রেসার বেড়ে গিয়েছিলো।”
রুদ্র একটু থেমে আক্ষেপ করে বলল, “তুমি যে আমায় আমজাদ হোসেনের তাড়া খাইয়েছো এটা এখনো ভুলি নি। এসব কু-বুদ্ধি কোথায় পাও?”
অরূণী খুশিতে দিশেহারা। রুদ্র ওঁর সাথে এত সুন্দর করে কথা বলছে?কনে বিদায়ের সময় সাহেদ আহমেদ অরূণী’কে বার বার সাবধান করেছে কোনো উল্টাপাল্টা কাণ্ড যেন না করে। অরূণী আর রুদ্র দুইজনই ভিন্ন ভিন্ন গাড়িতে গেল। বাসায় যাওয়ার পর রুদ্রের আর দেখা পাওয়া গেল না। অরূণী চুপচাপ নিম্মির পাশে বসে আছে। বউ দেখতে উপচে পড়া ভিড়। শুভ্রা,সায়মাও অরূণীর পাশে। অরূণী বার বার আশেপাশে রুদ্র’কে খুঁজছে। রাতে খাওয়ার সময়ও রুদ্র’কে দেখা গেলো না। অরূণী ভদ্রতা বজায় রেখে চুপচাপ বসে আছে। কোথায়ও নড়চড় করছে না। রুদ্র’কে না দেখে অরূণীর মেজাজ চড়ে গেছে। অরূণী এসেছে বলে বাসা ছেড়ে চলে গেল? কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারলো না।
অরূণীদের দুই তলার একটা রুমে শুতে দেওয়া হয়েছে। বর-বউ কে তাঁদের রুমে রাখা হলো।শুতে শুতে রাত অনেক হয়ে গেছে।অরূণীরা যে রুমে শুয়েছে তার পরের রুম’টা খালি। তৃতীয় নম্বর রুমে বর-বউ।ঘুমানোর উদ্দেশ্যে রুমে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর অরূণী শুভ্রা আর সায়মার কানে কানে বলল, “এদিকে আয়।”
শুভ্রা আর সায়মা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, “কোথায় যাবো?কী কু-বুদ্ধি করেছো তুমি আবার?”
অরূণী ধমক দিয়ে বলল, “আরে আয় তো।”
অরূণী আশেপাশে তাকালো রুম থেকে বের হয়ে।নিম্মিদের রুমের সামনে এসে নিচু গলায় বলল, “একটু উঁকি দিয়ে দেখি তাঁরা কী করছে?এক পলক দেখবো শুধু। ”
শুভ্রার চোখ বড় হয়ে গেল।বলল, “ছিঃ,ছিঃ।”
সায়মা শুভ্রার মুখ চেপে ধরে। অরূণীর সাথে তাল মিলিয়ে বলল, “কীভাবে উঁকি দিবি?”
অরূণী বলল, “ দেয়ালের ওপরে ছোট একটা জানালা আছে।চেয়ার হলে উঁকি দেওয়া যেত।”
সায়মা পরক্ষণে মত বদলে বলল, “অরূণী চল রুমে যাই। রিস্কি ব্যাপার।”
অরূণী অভয় দিয়ে বলল, “আমার ওপর ভরসা রাখ।”
রুমের পাশে চেয়ার রাখা ছিলো।অরূণী দুই’টা চেয়ার একাত্র করে চেয়ারের উপরে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো। তানভীর নিম্মির চুলের জট খুলে দিচ্ছে।নিম্মি চেয়ারে বসে আছে। অরূণী ঠোঁট কামড়ে হাসি চাপিয়ে রাখছে। হঠাৎ কি হলো অরূণী ঠিক বুঝতে পারলো না। চেয়ার দুইটা নড়ে ধুপ করে ফ্লোরে পড়ে গেল।অরূণী হতভম্ব হয়ে গেল, যেন এখনো বুঝতে পারছে না ও পড়ে গেছে। যখন বুঝতে পারলো তখন অনুভূত হলো পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছে। দাঁতে দাঁত কামড়ে ব্যথা সহ্য করছে। কিছুতেই শব্দ করা যাবে না। সায়মা,শুভ্রা হাঁ করে তাকিয়ে আছে। রুদ্র সবে মাত্র নিচ তলা থেকে ওপর তলায় সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলো। রুদ্র অরূণীর কাণ্ড দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে। দ্রুত সেখানে গেলো। চাপা গলায় বলল, “লুকিয়ে অন্যের বাসর ঘর দেখলে গেলে এই অবস্থাই হবে। ফাজিল কোথাকার।ছিঃ।”
অরূণীর লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। রুদ্রের চেহেরার দিকেও তাকালো না। কোনো উত্তর দিলো না। পায়ে ব্যথা উপেক্ষা করে দ্রুত রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলো। লজ্জায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সায়মা,শুভ্রাও অরূণীর পিছনে পিছনে রুমে চলে গেল।দ্রুত দরজা আটকে দিলো। রুদ্র যাতে কিছু বলার সুযোগ না পায়। ঘটনা’টা শুধু রুদ্র দেখেছে। বাসার সবাই দেখলে কী অবস্থা হতো? রুদ্রের সামনে কীভাবে পড়বে? একদিকে পায়ে ব্যথা। অন্যদিকে এত লজ্জা! লজ্জা রাখার জায়গা নেই।সায়মা জিজ্ঞেস করল, “অরূ পায়ে ব্যথা বেশি করছে? ওষুধ কোথায় পাবো?”
অরূণী চোয়াল শক্ত করে বলল, “ওষুধের দরকার নেই। আমায় একটু লজ্জা থেকে মুক্তি দে।”
শুভ্রা বললো, “আমার কথা তো তখন ভালো লাগে নি।”
সায়মা শুভ্রা’কে ধমক দিয়ে ওঠে।সারা রাত ব্যথায় আর লজ্জায় ঘুম হলো না অরূণীর। সকালে ওঠে দেখে ব্যথায় পা নাড়াতে পারছে না। রুম থেকে বের হলো না।সায়মা’কে বলল, “একটা ব্যথার ওষুধ জোগাড় করে দে।”
রুদ্রের সামনেও যেতে পারছে না। রুদ্রের কাছে কাগজে কিছু লিখে দিলে কেমন হয়?বাসার এক পিচ্চি’কে জানালা দিয়ে ডেকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলো। রুদ্র কে দিতে বলেছে।এর ভিতর মেহমান দের নাস্তার জন্য ডাকলো। অরূণী পায়ে ব্যথায় হাঁটতে পারছে না।
রুদ্র সবে মাত্র ঘুম থেকে ওঠেছে। পিচ্চি কাগজটা নিয়ে রুদ্রের কাছে দিলো। রুদ্র জিজ্ঞেস করল, “কী এটা?কে দিয়েছে?”
– “নতুন মেহমান।”
রুদ্রের বুঝতে বাকি রইল না। কালকে রাতের ঘটনাটায় অনেকক্ষণ ধরে একা একা হেসেছে রুদ্র। অরূণী কী লজ্জা পেয়ে সামনে আসছে না? এসব ভাবতে ভাবতে রুদ্র কাগজ’টা খুলল।একটা কবিতা লেখা-
“যদি নিষ্কলুষ প্রেমিক হও,
জগদ্বাসীর সবচেয়ে অগ্নিমূল্যের প্রণয়ীনী হবো।
ষদুষ্ণ প্রেমোতাপ রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে যাবো।
যদি মধ্যাহ্নের রৌদ্রতাপে হিমশীতল দখিনা সমীরণ হও,
মাখিয়ে দিবো তোমার অন্তরতম অঁচল,গোধূলির রক্তিম সূর্যের সমস্ত রঙে।
তমসাবৃত যামিনীতে পূর্ণ চন্দ্রমা হবো,
চন্দ্রসুধা ছড়িয়ে দিবো তোমার হৃদ চরাচরে।
যদি নিষ্কলুষ প্রেমিক হও,
হবো দু চিলতে কাঠের তরী, ভালোবাসার উত্তল মহাতরঙ্গে।
দাঁড়বিহীন তরী জীবনের শেষ অপরাহ্নেও ভাসতে থাকবে প্রেম সায়রে।”
.
বিঃদ্রঃ- কার্টেসী দিয়েও গল্প কেউ কপি করবেন না। কবিতাটা আমার লেখা। নিজের নামে চালাবেন না। আর গল্প রি-চেক করি নি। একশ ভুল থাকতে পারে।