গল্প ঃপুনম
শেষ পর্ব
পুনম চিঠির শুরু তে কোনো সম্বোধন করেনি।
স্ট্রেইট লিখে গেছে,
“***অাপনার সাথে যখন অামার বিয়ে হয় তখন অামি অন্তঃসত্ত্বা। তেরো সপ্তাহ চলছিলো। থারটিন উইকস!অামি ভীষণ অাপসেট ছিলাম। অাপনার বাবাকে অামি পুরো ব্যাপারটা বলার পরও তিনি অনড় ছিলেন। এমনকি অামার বাবাও উনাকে খুব বুঝিয়েছিলেন। অামি অাজও জানি না,
তিনি কেনো অামাকেই বেছে নিলেন??
***অামার সন্তান ধারণের ব্যাপারটা কোনো সুন্দর ঘটনার মধ্য দিয়ে হয়নি।
গল্পটি অসুন্দর বলেই ব্যাখ্যাটা অাপনাকে লিখছি না।
তবু যখন জানতে পারি, অামার ভেতরে অন্য কেউ অাছে তখন অামি একটু অালাদাভাবে চিন্তা করি। কোনোধরনের মাতৃস্নেহের তাড়ণা থেকে নয়, বরং সে কমপ্লিট একজন মানুষ হিসেবে বাঁচার অধিকার রাখে এইজন্য অামি অামার যুদ্ধটা এভাবে ঠিক করেছি……
***সে মানে অামার মেয়ে
‘অনয়া’ এবছর সাতে পা দেবে! অামি তাঁকে কথা দিয়েছি, সেভেনথ বার্থডেতে তাঁকে অামি বাংলাদেশে বেড়াতে নিয়ে অাসবো।
এবং তার বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।
সেভেনথ বার্থডে অাসতে এখনো চারমাস বাকী। এই চারমাসে অামি অাপনাকে তাঁর সবধরনের পছন্দ অপছন্দের তথ্য, তাঁর বিভিন্ন সময়ের ছবি ও ভিডিও পাঠাতে চাই। সে খুব কৌতূহলী স্বভাবের মেয়ে। অাপনার সাথে তাঁর একটি চমৎকার মিলও অাছে।এটা অামি অাপনাকে বলবো না, অনয়া বলবে…
***অামার বিশেষ কোনো মানুষ নেই, যাকে অামি অনয়ার বাবা হিসেবে পরিচয় করাতে পারি। তাই রিকোয়েস্ট করছিলাম…..
***অাপনার বাবা এই এতটা বছর ধরে প্রতি মাসে মাসে অামায় টাকা পাঠাতেন।সেই টাকা খরচ করার অামার কোনো জায়গা ছিলোনা, দরকার ও হয়নি।তবু তিনি পাঠাতেন বলে অামি মানা করতে পারিনি।
সেই টাকা জমে গিয়ে একটা বিশাল অাকার ধারণ করেছে। অামি টাকাটা অাপনার একাউন্টে রাখতে চাই।ওখানে এত টাকা মানে অনেক জবাবদিহিতা… বুঝতেই পারছেন????
*** অাপনি অন্য কাউকে খোলামনে যাতে বিয়ে করতে পারেন, তাই নোটিশটা অামি পাঠিয়েছিলাম। তবু কেনো অাপনি অামাতেই অাটকে অাছেন?? হোয়াই??? এতবছর ধরে কেউ অন্য কারো কাপড় চোপড় নিজের কাবার্ডে এমন সুন্দর ভাঁজ করে কেনো রেখে দেয়??? এর নাম কি ভালোবাসা??
নাকি এর নাম অপেক্ষা??? ”
পুনমের চিঠি শেষ।
তারপরের গল্পটা হলো, কানাডাতে এসে অামি যখন পুনমের বাসায় পৌঁছি, পুনম অফিসে। অনয়া বাসায়!
ও’র ন্যানি ছিলো সাথে। বললো অনয়া ঘুমে। অামি অস্থির হয়ে গিয়ে বিছানায় অনয়ার পাশে বসলাম।
অনয়ার সাথে অামার কি মিল অাছে, অামি ব্যাকুল হয়ে খুঁজতে থাকলাম। চেহারায় মিল, নাক-চোখের মিল?? নাকি অন্য কিছু??
অনয়া ঘুম ভেঙ্গে প্রথম অামার দিকে তাঁকিয়েই চমৎকার বাংলায় বললো,
——–অাপনার নাম হিমেল অাশরাফ। অাপনি অামার বাবা হোন। নেক্সট বার্থডেতে বাংলাদেশে গিয়ে অামি অাপনার কাছে ছয়মাস থাকবো।
বলেই সে অাড়মোড়া ভাঙলো।
অামি তক্ষুনি অবাক হলাম। অনয়ার বা ঠোঁটের উপরের দিকে একটা কাটা দাঁগ অাছে, হুবুহু অামার মত। অার দা্গটা শুধু কথা বলতে গেলেই চোখে পড়ে।
অনয়ার চুল গুছিয়ে দিতে দিতে বললাম,
——–শুধু ছয়মাস কেনো?? তুমি তো এর বেশিও থাকতে পারো?
——–নো ওয়ে। ছয়মাস অামি অাপনার কাছে থাকবো, অার বাকী ছয়মাস মায়ের কাছে। অামি ইনজাস্টিস করতে পারবোনা।
——-কিন্তু এই এত বছর যে তুমি শুধু তোমারয় মায়ের কাছেই থাকলে সেটা কি তাহলে অামার প্রতি অবিচার হলো না???
——–মোটেও না। অামি তো মায়ের মত হবো, তাই অামার গ্রুমিং এর জন্য এতদিন মায়ের কাছে থাকতে হয়েছে। এখন অামি মায়ের মত হয়ে গেছি, এখন অার কোথাও গিয়ে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। কোচিং হয়ে গেছে অামার।
অনয়া হ্যান্ডশ্যাক করার জন্য এবার অামার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
——-অামি জানতাম অাপনি অামার বার্থডের অাগেই চলে অাসবেন। অামি সব জানি তো……
অামি ও হাত বাড়ালাম। অনয়া সত্যিই পুনমের মত হয়েছে।অামি বিড়বিড় করে বললাম,
এখন থেকে তাহলে দুটো পুনমকে নিয়েই অামার সময় কাটবে। এই এতদিন পর সৃষ্টিকর্তা অামায় সব সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিলেন ….. .. এতদিনের শূন্যতা এবার দ্বিগুণ করে পূরণ হলো!
অামি ভীষণ অাগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। পুনম অফিস থেকে ফিরলেই, তাঁকে বলতে হবে, বাবা কেনো তাঁকে পছন্দ করেছিলেন……..
সে যে একদম অামার মায়ের মত সাহসী মেয়ে….
পরিশিষ্ট ঃ এখন আমাদের তিন সন্তান। অনয়া, দৃশ্য অার স্বচ্ছ! তাঁদের তিনজনকেই যদি বলা হয়, বাবা ভালো না মা ভালো?? তা্রা তিনজনই একসঙ্গে বলবে, বাবা বেশি ভালো।
কিন্তু অনয়ার যখন প্রথম মেয়ে হলো,
দৃশ্য অার স্বচ্ছ জেদ ধরলো, তারা দুজনে তাদের ভাগ্নীর নাম রাখবে “পুনম”।
অনয়ার হাজবেন্ড কাঁচুমাচু হয়ে এসে বললো,
———বাবা এ কেমন কথা?? অামি সারাক্ষণ শাশুড়ির নাম মুখে নিই কিভাবে?? অাপনারা না হয় ডাকলেন পুনম; অামি কি করে???
পুনম পাশেই ছিলো অামার; বিরক্ত মুখ করে বললো,
——–হিমেল, তোমরা কি শুরু করেছো বলোতো?? সবাই গৎবাঁধা নাম রাখছো পুনম। এর মানে কি হিমেল??? “পুনম” শুধু তুমি ডাকবে অামায়।খবরদার অার কেউ যাতে না ডাকে……
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, দৃশ্য অার স্বচ্ছরও যখন মেয়ে হলো, ওরাও নাম রাখলো পুনম।৷
ওদেরও এক কথা, বাবার মত অামাদের সবার এখন একটা করে পুনম অাছে।
এখন বাসায় যখন অামি অামার পুনমকে ডাকি, চারজনে একসাথে ছুটে অাসে।
অামি তখন বিব্রত হয়ে পড়ি। পুনম তখন চোখ রাঙিয়ে ইশারা করে অামায়, উফ্ হিমেল, লুকিয়ে ডেকো তো… সবগুলা ধাড়ি বাঁদরের দল চলে এসেছে দেখো……! এতো দেখি মহা যন্ত্রণা হলো…..
(সমাপ্ত)